#তুমি_ছিলে_বলেই২
#পর্বঃ১৬(অন্তিম)
#দিশা_মনি
স্নেহা নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে নিজের ঘরের মাঝে। তার মনে নানান চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। অনেক অনিশ্চয়তা অনেক কষ্ট অনুভব করছে সে। তবুও নিজেকে শান্ত রাখার বৃথা চেষ্টা দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে।
স্নেহা বর্তমানে একটি রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এই রুমেই থাকেন আব্বাস চৌধুরী। যিনি স্নেহার জন্মদাতা পিতা। তবে আব্বাস চৌধুরীর বর্তমান অবস্থা বেশি ভালো না। কারণ তিনি অনেক দিন থেকে প্যারালাইজড হয়ে পড়ে আছেন। স্নেহা ধুপধাপ পা ফেলে এসে উপস্থিত হলো আব্বাস চৌধুরীর রুমে। আব্বাস চৌধুরী তখন গভীর ঘুমে আছন্ন। স্নেহা তার পাশে বসল। তার দিকে তাকিয়ে রইল অপলক। এই লোকটার চেহারার সাথে তার চেহারার অনেক সাদৃশ্য আছে। স্নেহা আব্বাস চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,
‘আপনি আমার মাকে কেন ঠকালেন? কি দোষ করেছিলেন উনি?’
আব্বাস চৌধুরী যেন জেগে বসলেন। স্নেহাকে দেখে কিছু বলার চেষ্টা করল কিন্তু স্নেহা তার কথার কিছুই বুঝল না। শুধু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল। এমন সময় রুমে চলে আসলো দীপ্র। স্নেহাকে আব্বাস চৌধুরীর রুমে দেখে সে জিজ্ঞেস করল,
‘তুমি চাচার রুমে কি করছ?’
স্নেহা উঠে বসে। বলে,
‘ভুল করে এখানে চলে এসেছিলাম।’
দীপ্র স্নেহার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়। এরপর বলে,
‘ভুল করে চলে এসেছিলে সেটা নাহয় মানলাম কিন্তু ওনার পাশে বসেছিলে কেন? সেটাও কি ভুল করে?’
স্নেহা কি বলবে সেটা বুঝতে পারে না। দীপ্র স্নেহার হাত শক্ত করে ধরে বলে,
‘তোমার আসল উদ্দ্যেশ্য করে সেটা আমায় বলো।’
‘আমার কোন উদ্দ্যেশ্য নেই।’
‘তুমি যাই বলো, আমি আর তোমায় বিশ্বাস করতে পারছি না। তোমার নিশ্চয়ই কোন বাজে মোটিভ আছে তাই না? এই জন্য তো তুমি গ্রাম বাসীদের ফুসলিয়ে আমায় বিয়ে করেছ।’
স্নেহা হতবাক নয়নে তাকায়। দীপ্র বলে,
‘তুমি নিশ্চয়ই এটাই ভাবছ যে আমি এতকিছু জানলাম কিভাবে। তোমার ভাবনার জবাব আমি দিচ্ছি,আমি সবকিছু জেনেছি একজন গ্রামবাসীর মাধ্যমে। এখন ভালোয় ভালোয় তোমার সব উদ্দ্যেশ্য সম্পর্কে আমায় বলো।’
স্নেহা বুঝল এখন আর চুপ থেকে কোন লাভ নেই। সে চুপ থেকে এখন আর কিছু হ্যান্ডেল করতে পারবে না। তাই সে বলল,
‘আমি সব কিছু করেছি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।’
‘ প্রতিশোধ? কিসের প্রতিশোধ?’
‘আমার মায়ের সাথে হয়ে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধ।’
‘কে অন্যায় করেছে তোমার মায়ের সাথে?’
‘আপনার পরিবার।’
দীপ্র স্নেহার দিকে ভালো করে দেখতে লাগল। এতদিন তার মনে হতো স্নেহার সাথে এই বাড়ির কারো চেহারার অনেক মিল। তবে আজ সে শতভাগ নিশ্চিত হয়েছে যে স্নেহার সাথে কার মিল। দীপ্র নিজের ধারণা মেলানোর জন্য আব্বাস চৌধুরীর কাছে গেল। একবার আব্বাস চৌধুরীকে দেখল তো একবার স্নেহাকে। অবাক হয়ে বললো,
‘তার মানে তুমি কি….’
‘আপনি যেটা ভাবছেন সেটাই ঠিক। আমি আব্বাস চৌধুরীর মেয়ে। তবে কোন অবৈধ সন্তান নই। আপনার চাচা আমার মাকে ইসলাম মতে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু আপনাদের পরিবারের লোকজন নিজেদের বংশ মর্যাদার কথা বলে এই বিয়েটাকে স্বীকৃতি দেয়নি। আমার মাকে বারবার অপমান করে তাড়িয়েছি। এমনকি আমার মাকে হ**ত্যাও করা হয়েছে আর এর পেছনে রয়েছে আপনার পরিবারের হাত।’
‘তুমি এসব কিছু কিভাবে এত নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছ? তোমার জানার মধ্যে কোন ভুলও তো থাকতে পারে। তাইনা?’
‘আমার জানায় কোন ভুল নেই। আমি যা জানি তা শতভাগ সঠিক।’
‘প্রমাণ কি?’
‘আপাতত আমার কাছে কোন প্রমাণ নেই। তবে আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি সব প্রমাণ করে দেব। আর যদি না পারি তাহলে আমার এই মুখ আর আপনাকে দেখাব না।’
‘ঠিক আছে, আগে সব প্রমাণ করো তারপর বড় বড় কথা বলিও। আর আমি তোমার উপর সব সময় নজর রাখবো। আমার পরিবারের কোন ক্ষতি করতে আমি তোমায় দেব না।’
স্নেহা দীপ্রকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘আপনার পরিবার আমার যে ক্ষতি করেছে তা অপূরণীয়। আর এর শাস্তি তো তাদের পেতেই হবে। আমি তাদের এর শাস্তি দেবোই।’
‘আমি ঢাল হয়ে দাড়াবো আমার পরিবারের সামনে। দেখি তুমি কি করতে পারো।’
‘আমি কি করতে পারি সেই সম্পর্কে আপনার কোন ধারণাই নেই মিস্টার দীপ্র চৌধুরী। আমার মায়ের উপর হওয়া অন্যায়ের বদলা নেওয়ার জন্য আমি অনেক নিচে নামতে পারি। যা আপনি ধারণাই করে উঠতে পারবেন না। কারণ এটা আপনার ধারণার বাইরে।’
‘তুমি কি আমাকে ভয় দেখাতে চাচ্ছ?’
‘মনে করুন তাই। আমি ভয় দেখাচ্ছি। কারণ এটা আমার মায়ের উপর হওয়া অন্যায়ের জন্য আমায় করতে হবে।’
‘ঠিক আছে। আমিও দেখি কার কত দম।’
দীপ্র বেরিয়ে যায়। স্নেহা দীপ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আমার মায়ের সাথে হওয়া সকল অন্যায়ের বদলাই আমি নেব। আমাকে আমার উদ্দ্যেশ্য থেকে কেউ পিছে ফেলতে পারবে না। আপনিও না। আমার উদ্দ্যেশ্য আমি যে করেই হোক সফল করব।’
✨
নিপুণের হুশ ফিরলে সে নিজের চোখের সামনে রুদ্রকে দেখতে পায়। দ্রুত উঠে বসে এবং বলে,
‘আপনি? আমি এটা কোথায়?’
‘আপনি এখন আমার রুমে রেস্ট নিচ্ছেন।’
‘আপনার রুমে?’
‘হ্যাঁ। আমার অফিসেই নিজের থাকার জন্য অন্য একটা রুম আমি বানিয়েছি। এই রুমে আমি থাকি।’
‘ও ঠিক আছে।’
সে উঠে বসতে নিতেই রুদ্র বলল,
‘আপনি অসুস্থ। বিশ্রাম নিন।’
নিপুণ তবুও উঠে বলে,
‘আমি এখন ঠিক আছি। ধন্যবাদ।’
জীবনের মোড় কোথায় নিয়ে যাবে নিপুণ রুদ্র আর দীপ্র-স্নেহাকে। জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে তৃতীয় সিজনের জন্য।
সমাপ্ত
[আমার খুব কাছের এক বন্ধুকে হারিয়ে ফেলেছি। আমি অনেক কষ্টে গল্পটা লিখলাম। আপাতত গল্পটা শেষ হলো তবে অসম্পূর্ণ কাহিনি তৃতীয় সিজনে শেষ করব ইনশাআল্লাহ। আমি বর্তমানে মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমার বন্ধুর জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাত বাসী করে ]