#তুমি_ছিলে_বলেই২
#পর্বঃ১৪
#দিশা_মনি
দীপ্র ও স্নেহাকে চৌধুরী বাড়িতে থাকার পারমিশন দিয়ে দিলেন আলতাফ চৌধুরী। অতঃপর তিনি আর কিছু না বলেই নিজের স্ত্রী দিলারা চৌধুরীকে নিয়ে নিজের রুমের দিকে রওনা দিলেন। তবে যাওয়ার আগে আবারো দৃঢ় কণ্ঠে বললেন,
‘এই বিয়ে আমি মানি না এবং আমৃত্যু মানব না।’
তিনি চলে যাওয়ার পর রাহেলা চৌধুরীও স্নেহার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে যান। খোদেজা চৌধুরী এগিয়ে আসেন। স্নেহার উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
‘তোমাকে তো আমার খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না। ভালোই তো বড়লোকের ছেলে পটিয়ে বিয়ে করে নিলে।’
স্নেহা কিছু বলল না। সে যেই উদ্দ্যেশ্যে এখানে এসেছে সেই উদ্দ্যেশ্য পূরণের লক্ষ্যে তাকে চুপ করে সবটা সহ্য করতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে। তবেই এখানে টিকতে পারবে সে। তাছাড়া চৌধুরীদের অহংকার তো সে একসময় ভাঙবেই। সেটা যে করেই হোক। স্নেহার থেকে কোন উত্তর না পেয়ে খোদেজা চৌধুরী আরো রেগে যান। বলেন,
‘চৌধুরী পরিবারের ঐতিহ্য সম্পর্কে তুমি কিছু জানো না মেয়ে। এই বাড়িতে তোমার মতো চুনোপুঁটি টিকবে না। তোমার মতো মেয়েকে তো এই বাড়ির কাজের লোক..’
খোদেজা চৌধুরী আর কিছু বলার আগেই দীপ্র বলে ওঠে,
‘আমি তোমায় অনুরোধ করছি ফুফু। এসব কথা বলা বন্ধ করো। আমার এসব ভালো লাগছে না।’
‘এই মেয়ে নিশ্চয়ই তোকে তাবিজ কবজ করেছে। আমার তো এখন এই মেয়েটাকেই সন্দেহ হচ্ছে। এই নিশ্চয়ই চক্রান্ত করে তোকে বিয়ে করেছে। এসব মেয়েদের আমি ভালো করেই চিনি। আজ থেকে ২৫ বছর আগেও তো এরকম একটা মেয়ে আমার ছোট ভাইয়ের উপর পড়েছিল। এসব রাস্তার মেয়ে তো…’
স্নেহার ধৈর্যের বাধ ভেঙে যেতে থাকে। নিজের সম্পর্কে বলা কথাগুলো নিয়ে তার কোন মাথাব্যথা নেই কিন্তু নিজের মায়ের সম্পর্কে কিছু সে শুনবে না। তাই সে প্রতিবাদ করে বলে,
‘আপনি না জেনে কিছু বলবেন না। আমি মোটেই রাস্তার মেয়ে নই..আর না তো…’
বলতে গিয়ে সে থেমে যায়। দীপ্র স্নেহাকে বলে,
‘তুমি আমার সাথে চলো। এখানে থাকলে তোমায় আরো অনেক কথা শুনতে হবে।’
দীপ্র স্নেহাকে নিজের সাথে নিয়ে চলে যায়। খোদেজা চৌধুরী তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলেন,
‘এটা আমার বাপের বাড়ি। তাই এখানে আমি কোন এলেবেলে ফালতু মেয়েকে থাকতে দেব না। বউ হিসেবে তো একদমই না। এই স্নেহাকেও আমি যে করেই হোক তাড়াবোই।’
✨
খোদেজা চৌধুরী এসেছেন আলতাফ চৌধুরীর সাথে কথা বলতে। আলতাফ চৌধুরীকে দেখতে পেয়েই তিনি বললেন,
‘ভাইজান তুমি কিছু করো, নাহলে তো ঐ মেয়েটা এই বাড়িতে জেকে বসবে। এমন একটা চালচুলোহীন মেয়েকে তো আমরা চৌধুরী বাড়ির বউ হিসেবে মানতে পারি না। তার উপর তুমি ঐ মেয়ের সাজসজ্জা দেখেছ? কেমন ছেলেদের মতো সাজ। ওকে দেখেই তো উশৃংখল মনে হয়। আমাদের কিন্তু কিছু করতেই হবে।’
আলতাফ চৌধুরী ভাবুক ভঙ্গিতে বলেন,
‘আমিও সেটাই ভাবছি। নিপুণ যদি দীপ্রকে বিয়ে করতে না চায় কোন ব্যাপার না। আলতাফ চৌধুরীর একমাত্র ছেলের জন্য ভালো মেয়ের কোন অভাব হবে না। ঐ মেয়ে এই বাড়ির যোগ্য বউ নয়। এর আগেও আমি আব্বাসের প্রথম বউকে এই বাড়ির বউয়ের মর্যাদা দেইনি এবারও ঐ মেয়েকে মর্যাদা দেব না।’
খোদেজা চৌধুরী ব্যাকুল হয়ে বলেন,
‘কিন্তু ভাইজান এখন সময় অনেক এগিয়েছে। এখন কত নারী অধিকার সংস্থা গড়ে উঠেছে। আমার তো ভয় করছে ঐ মেয়েটা যদি আমাদের দীপ্রকে বশ করে নেয় তাহলে কি হবে? তাছাড়া আজ তো ওরা একরুমে আছে। হিসাব মতো আজ ওদের বাসর রাত। যদি ওদের মধ্যে কিছু হয়ে যায়।’
আলতাফ চৌধুরী হুংকার দিয়ে বলেন,
‘এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না।’
খোদেজা চৌধুরী কিছুক্ষণ ভাবেন৷ হঠাৎ করেই তার মাথায় কুমতলব চলে আসে। তিনি নিয়মিত সিরিয়াল দেখেন। তাই সেখান থেকেই অনেক কূটনীতি শিখেছেন। এসব ভেবেই তিনি বলেন,
‘তুমি কোন চিন্তা করো না ভাইজান। কিভাবে ওদের বাসর রাত নষ্ট করতে হবে সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।’
বলেই তিনি কুটিল হাসি দিয়ে দীপ্রর রুমের দিকে পা বাড়ান। আলতাফ চৌধুরী ভাবতে থাকেন তার সামনের পদক্ষেপ কি হবে।
✨
দীপ্র ও স্নেহা একইরুমে অবস্থান করছে। দীপ্র স্নেহার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘তুমি বিছানায় থাকো। আমি ডিভানে থাকি।’
‘এটা তো আপনার রুম। আপনি ডিভানে থাকবেন কেন?’
‘আমার অভ্যাস আছে। এমনিতে আমাকে অনেক রাত জেগে কোম্পানির কাজ করতে হয়। তোমাকে যখন আমি বিয়ে করেছি তখন তো তোমায় কষ্টে থাকতে দিতে পারি না।’
স্নেহা আর কথা বাড়ায় না। তার নিজেরও অনেক ক্লান্ত লাগছে। তাই সে বিছানায় শুয়ে পড়ে। দীপ্রও ডিভানে শুয়ে পড়ে। এমন সময় হঠাৎ কেউ দীপ্রর দরজায় নক করে। দীপ্র উঠে গিয়ে দরজা খুলে অবাক হয়ে যায়। কারণ খোদেজা চৌধুরী বাইরে দাঁড়িয়ে৷ দীপ্র অবাক গলায় বলে,
‘ফুফু তুমি!’
খোদেজা চৌধুরী কোন উত্তর দেন না৷ দীপ্রকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে স্নেহার পাশে বিছানায় শুয়ে পড়েন। অতঃপর দীপ্রকে বলেন,
‘এই মেয়ের সাথে তুই রাত কাটাতে পারবি না৷ এটা ভাইজানের আদেশ। তাই তোদের এক রুমে থাকা যাবে না। আজকের মতো তুই গিয়ে অন্য রুমে থাক। কাল আমি এই মেয়েকে গেস্টরুমে পাঠানোর ব্যবস্থা করব।’
‘কিন্তু ফুফু এটা কি করে হয়? ও আমার স্ত্রী ও কেন অন্য রুমে থাকবে।’
‘এই মেয়ে তোর স্ত্রী নয়, এটা কোন বিয়েও নয়। এখন তুই আমার কথা শোন। ভাইজান কিন্তু শুধু ভাবির কথায় তোদের এখানে থাকতে দিয়েছে। তাই ভালো চাইলে আমার কথা শোন।’
দীপ্র আর কোন উপায় খুঁজে পায় না। তাই সে বলে,
‘ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি এই রুম থেকে।’
✨
নিপুণ তার মামার বাড়িতেই আছে। তার একটুও ভালো লাগছে না। দীপ্রর কথা খুব মনে পড়ছে। কান্না পাচ্ছে খুব। কিন্তু নিপুণ নিজেকে সামলাচ্ছে। নিজেকে বুঝ দিচ্ছে দীপ্রর জন্য এক ফোটা অশ্রুও ব্যয় করবে না। এরমধ্যে হঠাৎ করে ইসমাইল হোসেন তাকে ফোন করে। নিপুণ ধাতস্থ হয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই ইসমাইল হোসেন বলে ওঠেন,
‘নিপুণ জানো কি হয়েছে? ‘
‘কি হয়েছে স্যার?’
‘রুদ্র চৌধুরীকে আবার পুলিশ এরেস্ট করেছে?’
‘কেন?’
‘উনি নাকি কোন একটা লোককে গিয়ে পিটাচ্ছিলেন আর বলছিলেন তার বাবা-মায়ের খু**নির নাম বলতে।’
‘তার মানে এইজন্য উনি আমাদের অবজ্ঞা করছিলেন? কারণ উনি আইনের সহায়তা চান না৷ নিজে থেকেই নিজের মা-বাবার খু**নিদের শাস্তি দিতে চান।’
‘এক্সাকলি। আমার মনে হয়, এতদিন বিনা অপরাধে জেল খাটার জন্য আইনে উপর থেকে ওনার ভরসা উঠে গেছে৷ এতে কিন্তু উনি লাভবান হবেন না।’
নিপুণ বলে,
‘আপনি ঠিক বলেছেন স্যার, আমাদের ওনাকে বোঝাতে হবে যে আইনের উপর ভরসা রাখা উচিৎ। আমাদের সাথে কো ওপারেট করলেই উনি নিজের মা-বাবার খু**নিকে খুঁজে পাবে।’
‘তোমার উপর আমার ভরসা আছে নিপুণ। আমি জানি তুমিই এটা পারবে?’
‘আমি?’
‘হ্যা, তুমি।’
নিপুণ কিছু না বলেই ফোনটা রেখে দেয়। সে কিছুটা চিন্তা করে বলে,
‘দীপ্র ভাইয়ার চিন্তা মাথা থেকে বের করার এখন এটাই একমাত্র উপায়। আমায় এখন কাজে ডুবে থাকতে হবে।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨