মনেরও গোপনে পর্ব-১৬+১৭

0
461

#মনেরও_গোপনে
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_১৬
( মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
” হ্যাঁ এজন্যই তো সকাল সকাল আপনার ছেলেকে বাজারে পাঠিয়ে দিয়েছি। রাহি বাড়িঘর সুন্দর করে পরিপাটি করে রেখেছে কালকেই। ”
” বুঝলে রিনা আমাদের সৌভাগ্য এই যুগে রাহির মতো একটা ছেলের বউ পেয়েছি। ”
” হ্যাঁ নিসন্দেহে ঠিক বলেছেন। আপনি চা শেষ করে ঘরে রেখে দিন, আমি রাহির সাথে কিছু আলোচনা করবো।”
” ঠিক আছে। ”
সালমান খুরশিদ আবারও চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে গাছগুলোর সাথে সময় কাটাচ্ছেন। রিনা বেগম সরাসরি রান্নাঘরে রাহির কাছে এসেছে। আদ্রিয়ান সবে বাজার থেকে ফিরলো। রাহি বাজারের ব্যাগ থেকে সবকিছু বের করতে ব্যস্ত। আদ্রিয়ান নিজের ঘরে চলে গেছে।
” মা দেখুন তো সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি-না? ”
” তুমি বরং বাজারের লিস্টের সাথে মিলিয়ে নাও সবকিছু, কোনো কিছু বাদ গেলে বলবে। ”
” আচ্ছা মা।”
রিনা বেগমের কথামতো রাহি সমস্ত বাজার লিস্ট অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ করে নিলো। মুরগির মাংস, গরুর মাংস, পোলাও এর চাল,ডিম, মাছ, শাকসবজি সবকিছুই আছে।
” কিছু লাগবে আর? মশলা আছে সব?”
” হ্যাঁ মা সবকিছু ঠিক আছে। আমি বরং এখুনি রান্না শুরু করে দিচ্ছি। বেলা তো কম হলোনা ন’টা বেজেছে। ”
” হ্যাঁ আমিও হাতে হাতে সাহায্য করছি। ওরা এসে যাবে ঘন্টাখানেকের মধ্যে। ”

কথামতো শ্বাশুড়ি বউমা একসাথে রান্নাবান্না শুরু করেছে। আদ্রিয়ান আজকে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে,বোন আর বোনের বরের সাথে সময় কাটানোর জন্য। সালমান খুরশিদ বসার ঘরে এসে টিভি অন করে খবর দেখতে বসলেন। কিন্তু ন’টার খবর একটু আগেই শুরু হয়ে গেছে। অগত্যা খবরের মাঝখান থেকে দেখতে শুরু করলেন তিনি। সামনে নির্বাচন সেই নিয়ে নানাজন নানারকম মতবাদ জানাচ্ছে আজকাল। সেই রকম একটা রাজনৈতিক টকশো দেখায় মনোনিবেশ করলেন তিনি।

” কী হলো রেডি হবে কখন? ”
মিহি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে। রুদ্র রেডি হয়ে এসে দাঁড়িয়ে শুধালো রাহিকে।
” চোখ কি গেছে? ”
মিহির কথায় রুদ্র একবার তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো মিহিকে। পিওর কটনের কালো রঙের একটা শাড়ি সাথে একইরকম রঙের ব্লাউজ। এমনিতেই সুন্দরী তার উপর কালো শাড়ীতে অসাধারণ লাগছিল তাকে। চুলগুলো পাশ থেকে সিধি করে কানে ছোটো একজোড়া কালো পাথরের দুল পড়েছে।
” সব ঠিক আছে কিন্তু মুখে কোনো মেকআপ ব্যবহার করবে না? ”
” না আমি ওসব পছন্দ করি না। আপনার হলে চলুন বের হই।”
” ন্যাচারাল মিহির দানা! ঠিক আছে চলো।”
” আবারও! ”
রুদ্র ও মিহি এভাবেই খুনসুটি করলো সারা রাস্তা। কলিংবেলের শব্দে নড়েচড়ে বসলেন আদ্রিয়ানের বাবা। রিনা বেগম রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে দিলেন। মেয়েকে দেখে আনন্দে দু-চোখ টলমল করছে উনার।
” আসসালামু আলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন? ”
” আলহামদুলিল্লাহ তোমরা ভেতরে এসো।”
রুদ্র ও মিহি বাসার ভিতরে প্রবেশ করলো। বাবা কেমন আছেন কুশলাদি বিনিময়ের পরে মায়ের সাথে রান্নাঘরে গিয়ে দাঁড়ালো মিহি। এদিকে রুদ্র শ্বশুরের সাথে বসে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে বসেছে।
” তোমার কী মনে হয় রুদ্র সুষ্ঠু নির্বাচন হবে? কোনো ঝামেলা হবে না? ”
” সেটা বলা মুশকিল। আচ্ছা আপনার শরীরের অবস্থা কেমন এখন?”
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তোমার দেওয়া ঔষধ ভালোই কাজ করেছে। ”
” আমার জন্য না সবকিছু উপরওয়ালার ইচ্ছে হয়েছে। ভাইয়াকে দেখছি না! উনি কি অফিসে? ”
” না না তোমরা আসবে বলে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে আজকে। মনে হয় ঘরে ঘুমিয়ে আছে! ”
” আচ্ছা আঙ্কেল। ”
মিহিকে দেখে রাহি বেশ খুশি হয়েছে। রাহি মাংস কষিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে মিহির সাথে কথা বলতে শুরু করলো।
” সবকিছু কেমন চলছে? সংসার, কলেজ? ”
” ভালোই চলছে। কিন্তু বাসায় তো আমাকে কোনো রান্নাবান্না করতে দেননা উনি। রহমান চাচা আছেন তিনি সবকিছু করেন।”
” তা থাক তবুও নিজের সংসারের রান্না নিজে করবি বুঝলি?”
” ঠিক আছে মা। ”
” মা ঠিক বলেছেন মিহি।”
মিহি ইশারায় রাহির কথায় সম্মতি জানায়। রিনা বেগম পোলাও রান্না করছেন। রাহি মুরগির মাংস চুলোয় রেখে গরুর মাংসের জন্য মশলা বাটছে শিলনোড়ায়। রেডিমেড মশলা দিয়ে রান্না করলে সেই স্বাদ আসে না যেটা বাটা মশলার তরকারির মাঝে থাকে।
” অনেকক্ষণ তো হলো ছেলেটা ড্রইং রুমে বসে আছে, তুই এবার ওকে তোর রুমে নিয়ে যা।”
” থাকুক বসে বদের হাড্ডি একটা! ”
” কী বললি মিহি?”
” কিছু না মা আমি যাচ্ছি। ”
মিহি আস্তে করে বললেও কিছু একটা শুনেছেন বলেই রিনা বেগম শুধিয়েছিলেন। মিহি বসার ঘরে গিয়ে ইশারায় রুদ্রকে তার পিছুপিছু আসতে বললো্ রুদ্রও মিহির সাথে দোতলায় চলে গেলো। সিড়ি দিয়ে উঠে কয়েক কদম এগিয়ে মিহির রুম। কয়েকদিন পরে নিজের রুমের মধ্যে ঢুকেছে বলে অন্য রকম একটা অনুভূতি অনুভব হচ্ছে। একদম গোছানো আছে সবকিছুই। এসব নিশ্চয়ই ভাবি করেছে ভেবে মুচকি হাসলো মিহি।
” কী হলো অহেতুক হাসছো কেনো?”
” আমি যে অকারণে হাসলাম সে কথা আপনাকে কে বললো শুনি?”
” সব সময় ত্যাড়া কথা! ”
” আপনি যে ভুলভাল বলেন তার বেলায় কিচ্ছু না?”
” মিহির দানা এক গ্লাস জল পাওয়া যাবে? ”
” হ্যাঁ জল,পানি,ওয়াটার সবকিছুই আছে। অপেক্ষা করুন আসছি।”
মিহি রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই রুদ্র ঘরটা ভালো করে দেখছে। খুব সুন্দর করে সাজানো গোছানো সবকিছু। দেয়ালের পেইন্টিংগুলো বেশি সুন্দর।
” এই নিন আপনার পানি।”
” হ্যাঁ দাও।”
” কী দেখছিলেন এত মনোযোগ সহকারে? ”
রুদ্র এক নিঃশ্বাসে পানিটুকু শেষ করে মিহির হাতে গ্লাস দিয়েছে।
” তোমার ঘরের দেয়াল দেখছিলাম। ”
” ওগুলো ভাবি পেইন্ট করেছে, খুব ভালো পেইন্ট করে। ”
” হ্যাঁ আসলেই খুব সুন্দর হয়েছে। ”
” আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন, আমি রান্নাঘরে যাচ্ছি। ”
” আমিও নিচে আঙ্কেলের কাছে যাবো।”
” ওকে।”
রুদ্র ব্যাগ থেকে নিজের পোশাক বের করে ওয়াশরুমে ঢুকেছে।

” ওঁরা কী এখনো আসেনি বাবা?”
আদ্রিয়ান বাবার পাশে বসে বললো। এরমধ্যেই মিহি দোতলা থেকে বসার ঘরে চলে এসেছে।
” না আসবো কীভাবে বলো? তুমি রুমে ঘুমিয়ে ছিলে বলেই তো মাত্র উপর থেকে ল্যান্ড করলাম আমরা।”
আদ্রিয়ানের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ঠাট্টা করে বললো। আদ্রিয়ান মিহির মাথায় আস্তে করে একটা গাট্টা মেরে দিলো।
” কেমন আছিস বোন? রুদ্র কি রুমে?”
” ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? উনি চেঞ্জ করে আসছেন। ”
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আমাকে ডাক দিলি না কেনো?”
” ভাবলাম আমরা তো আছিই তুমি না হয় ঘুমিয়ে নাও।”

দুই ভাইবোনের কথোপকথনের মধ্যে রুদ্র এসে হাজির হলো সেখানে। মিহি রান্নাঘরে গেলো আর রুদ্র আর আদ্রিয়ান গল্প জুড়ে বসেছে। সালমান খুরশিদ নিজের মতো করে এখনও টিভি দেখে চলছেন।
দুপুরের কড়া রোদের মধ্যে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে শরীফ। নীল আকাশে সাদা মেঘগুলো কেমন ছোপ ছোপ দাগের মতো লাগছে। রুদ্র ভাই বিয়ে করে নিয়েছে অথচ শরীফ বিয়ের কথা ভাবতে পারবেনা কখনো। রুদ্রর ভালোবাসার মানুষটা তে ঠকিয়েছিল তাকে, তাই হয়তো সবটা রেখে এগিয়ে যেত পেরেছে। কিন্তু শরীফের বেলায় প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিলো। সুমিও খুব ভালোবাসতো শরীফকে। কিন্তু বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে যেতে পারেনি। আপাতদৃষ্টিতে সুমিকে দোষী ভাবলেও আসলে কি সুমি দোষী? যে বাবা-মা ছোটো থেকে লালনপালন করে বড়ে করে তুলেছেন তাদের মনে কষ্ট দিয়ে ভালোবাসার মানুষের হাত ধরতে পারেনি সে। শরীফের কথা পরিবারকে জানিয়েছিল সুমি,কিন্তু তাতে আরো অত্যাচারীত হয়েছিল মেয়েটা। শেষমেশ বাধ্য হয়ে বিয়ে করলো অন্য একটা লোককে। সবকিছু শেষ!
আকাশের দিকে তাকিয়ে শরীফের বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। সুমি থাকলে আজ জীবনটা অন্য রকম হতো।
চলবে

#মনেরও_গোপনে
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_১৭
( মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

শেষমেশ বাধ্য হয়ে বিয়ে করলো অন্য একটা লোককে। সবকিছু শেষ! আকাশের দিকে তাকিয়ে শরীফের বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। সুমি থাকলে আজ জীবনটা অন্য রকম হতো। “কেমন আছে মেয়েটা! শেষ বার শুনেছিলাম মেয়ের মা হয়েছে সে। মনে হয় ভালোই আছে। ” আকাশ পানে তাকিয়ে নিজ মনে কথাগুলো বললো শরীফ।

রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে মিহি রাহিকে নিজের রুমে নিয়ে এসেছে। রুদ্র আগে থেকেই খেয়েদেয়ে রুমে এসে শুয়ে আছে। রাহিকে দেখে সোজা হয়ে উঠে বসলো রুদ্র।
” ভাবি বসুন।”
” আরে দেখো না মিহি নিয়ে এলো এখন,তুমি না-কি আমার পেইন্টিং এর খুব প্রশংসা করছিলে?”
” ভালো করেছে নিয়ে এসেছে, হ্যাঁ প্রশংসা তো করবোই। সত্যি খুব সুন্দর আঁকতে পারেন আপনি। ”
” হয়েছে হয়েছে স্বামী স্ত্রী প্রশংসা করে আমাকে মাথায় উঠাতে হবে না আর। তা কেমন চলছে দু’জনার সংসার? ”
রাহি একটা চেয়ার টেনে বিছানার পাশে বসেছে আর মিহি বিছানার এক পাশে। রুদ্র খাটের মাঝ বরাবর বসেছে।
” আর সংসার! ”
মিহি মুখ ভেংচি কেটে বললো। রুদ্র অবশ্য তাতে মুচকি হেসে বললো,
” ভাবি আপনার ননদ আমাকে দুচক্ষে দেখতে পারে না। ”
” দেখবে কী করে বলো? সব সময় আমার সুন্দর নামটাকে কীরকম করে ডাকবে।”
” কীরকম করে ডাকে আবার তোমাকে? ”
রাহি কৌতুহল প্রকাশ করে শুধালো মিহিকে। মিহি কিছু বলার আগেই রুদ্র বলে উঠে,
” মিহির দানা, দানাপানি। ”
মিহি এবার কপট রাগ করে চোখ পাকিয়ে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। রাহি দুজনের অবস্থা দেখে তো হেসে কুটিকুটি অবস্থা। এরমধ্যে রুমে আদ্রিয়ান এসে উপস্থিত হয়েছে। ভাইকে দেখে মিহি রাহির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
” দেখো ভাই আমার চোখে হারাচ্ছে তোমাকে। ”
” ধ্যাৎ! ”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বললো,
” রাহি আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ ফাইল খুঁজে পাচ্ছি না, তুমি একটু আসবে? ”
মিহি রাহিকে ইশারা দিয়ে মুখ টিপে মিটিমিটি হাসছে। রুদ্রর বুঝতে কিছুটা সময় লাগলেও পরে বুঝে মুচকি হেসে রাহিকে বললো,
” ভাবি কালকে কথা হবে শুভ রাত্রি। ”
” ঠিক আছে শুভ রাত্রি। ”
রাহি আদ্রিয়ানের পিছুপিছু মিহিদের রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। রাহি চুপচাপ রুমে ঢুকে ফাইল খুঁজতে শুরু করলো। আদ্রিয়ান আস্তে দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে পা টিপে টিপে পেছন দিক থেকে রাহিকে জড়িয়ে ধরলো।
” কী করছো! কোন ফাইলটা সেটা তো বললে না? আর আমিও বোকার মতো নাম না জেনেই খোঁজাখুঁজি শুরু করেছি।”
” সরি ম্যাম। আসলে তোমাকে মিহিদের রুম থেকে বের করে আনার জন্য মিথ্যে বলেছিলাম।”
” কী! ”
আদ্রিয়ান রাহির খোঁপা করা চুলগুলো হেঁচকা টানে খুলে দিলো। চুলের মধ্যে নাক ডুবিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে বললো,
” বাইরে দেখেছো কী সুন্দর রোমান্টিক ওয়েদার? এখন কি মিহিদের রুমে বসে থাকা উচিত ছিল তোমার? আফটার অল ওঁরা নতুন দম্পতি। ”
” হয়েছে হয়েছে ওদের কথা না বলে নিজের কথা বলো। ইচ্ছে করছে নিজের ঢং করতে বাহানা দিচ্ছে অন্য কারো।”
রাহি আদ্রিয়ানকে ছাড়িয়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকালো বৃষ্টির তোপখানা কতটুকু বুঝতে। সকাল থেকে অল্প অল্প বৃষ্টি থাকলেও এখন বেড়েছে আরো। জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত গলিয়ে বৃষ্টি স্পর্শ করে চোখ বন্ধ করে রইলো রাহি। অসময়ে কিংবা সময়ে সব সময় বৃষ্টি খুব প্রিয় রাহির। আদ্রিয়ান রুমের বাতি বন্ধ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়েছে।
” কী হলো ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিলে?”
রাহি বাইরের দিকে দৃষ্টি রেখেই শুধালো। আদ্রিয়ান কিছু বললো না। হুট করেই রাহিকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে শোয়ালো। ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় দু’জন দু’জনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ানের দৃষ্টি আলাদা এখন। রাহি জানে এই চাহনির অর্থ নেশা। তাই কোনো প্রকার বাঁধা না দিয়ে সেই নেশাতে বুদ হলো দু’জন।
বাইরে ঝুম বৃষ্টি। টিনের চালে বৃষ্টির ফোঁটায় আলাদা কোনো অনুভূতি টের পায়না সুমি। বিছানা থেকে নেমে আস্তে আস্তে নিজের ঘর পেরিয়ে পাশের ঘরে ঢুকলো সে। মিতু অঘোরে ঘুমাচ্ছে কিন্তু ঠাণ্ডায় কেমন গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে। কম্বল-খানা পায়ের কাছে ঠেকেছে গিয়ে। সুমি পরম মমতা সহকারে কম্বলটা আস্তে করে মেয়ের গায়ে দিয়ে দিলো। তারপর আবারও নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে সামনের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। ওই ঘরে নেশাগ্রস্ত সবুজ ঘুমাচ্ছে। আজ কোনো হুঁশ ছিলোনা বলেই সুমি মারধর আর মানসিক অত্যাচার থেকে বেঁচেছে। সুমির বিয়ের পরেই তার বাবা মারা গিয়েছিলেন,রইলো এক ভাই আর মা। কিন্তু তারা কখনো যোগাযোগ করেনি সুমির সাথে। যেখানে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়াতে সুমির রাগ করা উচিত ছিল সেখানে উনারা কেনো রেগে যোগাযোগ আছে করে আছেন বুঝতে পারেনা সুমি। বিয়ে হলো কত বছর! শরীরে অন্য কারো স্পর্শ পেলো,সন্তানের মা হলো কই সুমি তো শরীফকে ভুলতে পারলোনা। সব পুরুষ যেমন এক নয় তেমনই সব নারীও এক না। ভালো-মন্দ মিলিয়ে জগৎসংসার। হয়তো প্রাক্তনকে মনে রাখা অন্যায় কিছু স্মৃতি কি ভোলা সম্ভব কখনো? নিজের পেটে হাত রেখে বাইরে দৃষ্টিপাত করেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সুমি। সংসার নামক গাছটা অনেকটা ডালপালা মেলে ফেলেছে, সেই সাথে তার শিকড়ও পৌঁছে গেছে অনেকটা গভীরে। তাই কোনোভাবেই নিজের ভাগ্য পরিবর্তন হওয়া সম্ভব নয় বলেই মেনে নিয়েছে সুমি।

” তুমি তখন মিটমাট করে হাসছিলে কেনো?”
রুদ্রর প্রশ্ন শুনে মিহি ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
” আপনি যে কারণে হাসছিলেন আমিও সেই কারণে হেসেছিলাম। ”
রুদ্র ফোনের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মিহির দিকে তাকালো। মিহি ফ্লোরে বিছানা করে শুয়েছে আর রুদ্র বিছানায়।
” মানে! তুমি দেখলে কখন আমি হেসেছি?”
” চোখ থাকলে সব দেখা যায়। তা আপনার না-কি প্রাক্তন ছিল! আচার-আচরণে তো মনে হয় আমিই আপনার জীবনের একমাত্র মহীয়সী নারী। ”
মিহি ইচ্ছে করে রুদ্রকে কথাগুলো বললো যাতে রেগে গিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু রুদ্র মোটেই রাগ করলো না। উল্টো বিছানার পাশে এসে মিহির মাথার উপর উঁকি দিয়ে বললো,
” ছিল মানে অতীত কিন্তু তুমি আছো মানে বর্তমান। অতীতকে আঁকড়ে ধরে বর্তমান নষ্ট করা বোকামি মিহির দানা। তাছাড়া সেই মানুষটা আমাকে ঠকিয়ে চলে গেছিলো। সে যখন আমি থাকতে অন্য কারো হাত ধরে চলে গিয়ে সুখী হতে পেরেছে আমি কেনো সে না থাকতেও সুখী হওয়ার চেষ্টা করবো না? ”
রুদ্রর কথাগুলো বুকের ভেতর পর্যন্ত গিয়ে লাগলো মিহির। লোকটাকে এভাবে আঘাত করতে চায়নি সে। একটা মানুষকে না দেখে না জেনেই এতটা ভাবে মিহি তাহলে রুদ্র তো একটা মানুষের উপস্থিতিতে ভালোবেসেছিল!
” সরি আমি আপনাকে আঘাত করতে চাইনি।”
” আঘাতের কী আছে বোকা মেয়ে? বহু বছরের পুরনো ক্ষত এটা নতুন করে সেই রকম ব্যথা হয় না। তবে মাঝে মধ্যে চিনচিনে ব্যথা একটু হয় বটে। কিন্তু ব্যাপার না মানুষের মনতো যেকোনো সময় বদলে যায়। ”
” শোনাবেন আপনার সেই মানুষটার কথা? ”
” কী হবে ওইসব শুনে? শুধু এতটুকু শোনো,আমাকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে আমার বন্ধুর সাথে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল সে। ”
” তারা আমাদের ভালোবাসে না কেনো?”
” কারণ আমরা তাদের যোগ্য নই কিংবা তারা আমাদের যোগ্য না। অথবা আমরা একে অপরের জন্য তৈরি হইনি এজন্য তাদের সাথে আমাদের মিল হয় না।”
” একজীবনে সবকিছু পেয়ে গেলে জীবনকে কী আর দোষারোপ করতে পারতাম? এজন্যই হয়তো এমনটা হয়।”
” তা ঠিক। অনেক রাত হয়েছে মিহির দানা, ঘুমিয়ে পড়ো।”
” সেইম টু ইউ, গুড নাইট। ”
” গুড নাইট। ”
রুদ্র নিজের বালিশে গিয়ে অন্য দিকে ফিরে শুয়ে চোখ বন্ধ করলো। মিহি না চাইতেও আজ রুদ্রকে নবনীর কথা মনে করিয়ে বেশ আঘাত দিয়ে ফেলেছে। মিহিরও ইচ্ছে হচ্ছিল রুদ্রর কাছে তার কথা জানাতে কিন্তু এটা তো কোনো প্রেমের কাহিনি নয়, নয় কোনো যুক্তিসঙ্গত কথা। এরকম করে কাউকে ভালোবাসার কথা শুনলেও হয়তো রুদ্র হাসতো! কিছু কথা অজানা থাকাই ভালো, নিজের সব কথা বলতে নেই।
চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে