মনেরও গোপনে পর্ব-১৪+১৫

0
507

#মনেরও_গোপনে
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_১৪
( মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

“আরে না, তুই চিন্তা করিস না। একটু প্রেশার বেড়ে গেছিলো। নিজের খেয়াল রাখিস রাখছি।”
” বাবার খেয়াল রেখো আর নিজেরও টাটা।”

” শুনতে খারাপ লাগলেও মেয়েটা মরলেই ভালো হতো।”
মায়ের সাথে কথা বলা শেষে কিছুটা ক্ষোভের উদ্রেকই কথাটা বললো মিহি। তোশা সম্পর্কে বোন হলেও তার প্রতি চরম বিতৃষ্ণা তার। যে মেয়ে জেনেশুনে অন্য মেয়ের স্বামীর দিকে নজর দেয় সেরকম মেয়ের বেঁচে থাকার দরকার নেই।
” কে মরলে ভালো হতো তোমার? ”
” আপনার দরকার নেই তাতে, শুনুন সারাদিন আমার সাথে এরকম করবেন না। ”
রুদ্র আলমারি থেকে ফর্মাল পোশাক বের করে রেডি হচ্ছে।
” কী করলাম আমি! আমি তো খুব ভালো আচরণ করছি। ”
” ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করুন আগে, লাজ লজ্জা কিচ্ছু নেই। ”
” আমি তো সবকিছু খুলে চেঞ্জ করছি না। ”
“যান বলছিইই।”
“ঠিক আছে যাচ্ছি যাচ্ছি মিহির দানা। ”
মিহির চোখ পাকানোর জন্য রুদ্র আর কথা না বাড়িয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে রেডি হয়ে বের হলো।
” বিকেলে ভাবি আসবে বাসায়। ”
” সমস্যা নেই বাজার করা আছে শুধু রহমান চাচাকে বললেই সবকিছু তৈরি করে দিবেন। ”
” ওকে।”

রুদ্র কখনোই দুপুরে বাসায় খেতো না তাই বিয়ের পরেও আজকেও আসেনি। কিন্তু রহমান চাচা মিহির জন্য সবকিছু রান্নাবান্না করেছেন। যেহেতু রহমান চাচা উনার স্ত্রী’কে রেখে খাবার খাননা তাই দুপুরে একাই খাবার খেতে হলো মিহিকে। কোমরের ব্যথায় হাঁটতে অবশ্য একটু কষ্ট হচ্ছিল মেয়েটার। কিন্তু চলাফেরা তো করতেই হবে। খাওয়া শেষে নিজের রুমে গিয়ে সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করেছে মিহি। রুমের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে বুকশেলফ। অনেকগুলো বই রাখা আছে সেখানে। মিহি আস্তে আস্তে বইগুলো দেখতে শুরু করলো। বেশির ভাগ বই হুমায়ূন আহমেদ স্যারের তারপর কিছু সমসাময়িক লেখকের বই। তারমধ্যে হুমায়ূন আহমেদের “অপেক্ষা” নামক বইটা হাতে নিয়ে বিছানায় বসলো। বিকেলে ভাবি আসবে তাই তার আগ পর্যন্ত বই পড়ে সময় কাটাবে বলে সিন্ধান্ত নিলো মিহি।

” কী হলো হুট করে এই ভরদুপুরে ঘরের দোর দিলে কেনো?”
রাহি ঘরের দেয়ালে আঁকি ঝুকি করছিলো। রাহি ভালো আঁকতে পারে তাই দেয়ালে কিছু পেইন্ট করবে বলে ভাবছিল সকাল থেকে। আদ্রিয়ান খাওয়া শেষে ঘরে এসে দরজা আঁটকে রাহির পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
” তুমি কী ঠিক করেছো আমাকে এভাবে পোড়াবে?”
” মাথা ঠিক আছে তো! এসব কী বলতেছো?”
আদ্রিয়ানের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে না পেরে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে রাহি। আদ্রিয়ানের চোখমুখ লাল হয়ে আছে। কোনো প্রকার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে রাহির হাত ধরে টেনে বিছানায় বসালো।
” এতটা কষ্ট দিও না। ”
” আদ্রিয়ান! ”
” কী? আমি পুরুষ মানুষ তোমার মতো সহ্য শক্তি আমার নেই। এরকম তিলে তিলে কষ্ট না দিয়ে একেবারে মেরে ফেলো। একই বিছানায় আমার ভালোবাসার মানুষটা থাকে অথচ আমি তাকে জড়িয়ে ধরতে পর্যন্ত পারিনা। তুমি দূরে ছিলে এতটা উতলা ছিলাম না তখন কিন্তু পাশে শুয়ে এতটা দূরত্ব সত্যি আমার সহ্য হয় না। ”
সত্যি বলতে রাহিরও কষ্ট হয় ভীষণ। কতদিন প্রিয়তম স্বামীর বুকে মাথা রেখে ঘুমানো হয়নি তার! তোশার কথাগুলো কিছুতেই কেনো জানি মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। কিন্তু মানুষ মাত্রই তো ভুল করে। আদ্রিয়ান তার ব্যতিক্রম নয়।
” তাহলে কি আলাদা ঘরে থাকবো আজ থেকে?
” সেই সুযোগ পাবে না।”
রাহি কিছু বুঝে উঠার আগেই আদ্রিয়ান দু’হাতে আলতো ধাক্কা দিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো তাকে। রাহি অবাক হয়েছে আদ্রিয়ানের আচরণে। কতটা অধৈর্য হয়ে গেছে লোকটা?
” আদ্রিয়ান তুমি আমাকে এভাবে জোর করতে পারো না।”
আদ্রিয়ান কোনো উত্তর দিলো না। কোনো বাক্যব্যয় না করে রাহির ওষ্ঠ নিজের ওষ্ট যুগলে বন্দী করে নিলো। কেমন একটু কেঁপে উঠলো রাহি। কিন্তু ছাড়াতে চাইলো না আদ্রিয়ানকে। গভীর আলিঙ্গনে দু’হাতে আঁকড়ে ধরে নিজেও সাড়া দিলো। রাহির সাড়া পেয়ে আদ্রিয়ান আলতো করে গালে, কপালে চুম্বন এঁকে দিলো। রাহি দু-চোখ বন্ধ করে আছে।
” উঠে রেডি হয়ে নাও মিহিদের বাসায় যেতে হবে না?”
” একটু দেরি হলে কিচ্ছু হবে না। কন্টিনিউ করো।”
রাহির আশকারায় আদ্রিয়ান ভালোবাসার পরশে সিক্ত হলো।

সময় যেনো কিছুতেই কাটছে না আজ। বই পড়ায়ও মন দিতে পারেনি মিহি। রহমান চাচা ছিলেন কতক্ষণ কিন্তু মিহি নিজেই তাকে বাসায় ফিরে যেতে বলেছে। তবে যাওয়ার আগে অতিথিদের জন্য কিছু খাবার-দাবার প্রস্তুত করে ডাইনিং টেবিলে পরিবেশন করে রেখে গিয়েছেন। যেহেতু একা ভালো লাগছিল না তাই এরমধ্যে একবার কল করে অহনার সাথে কথা বলবে বলে ভাবলো মিহি। তাই দেরি না করে অহনার নম্বরে ডায়াল করলো।
” কী খবর নতুন বউয়ের?”
” আর বলিস না রে কোমরে লেগেছে খুব, ব্যথা হচ্ছে ভালোই। ”
” হায় হায় দুলাভাই দেখি পুরাই আগুন। ”
” নাউজুবিল্লাহ, অসভ্য মেয়ে। মুখ সামলে কথা বল, ফ্লোরে পড়ে গেছিলাম সকালে এজন্য লেগেছে। ”
” ওহ এই কথা আমি ভাবলাম রাতের ঘটনার জন্য হয়েছে। ”
” শোন বিয়ে হলেই কেউ বরের সাথে ওসব করার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে না। আমি ভাবতেই পারছিনা এসব অশালীন কথাবার্তা কীভাবে তুই বললি!”
” হয়েছে হয়েছে শালীনতার প্রতীক এসেছেন। দুপুরে খেয়েছিস?”
” হ্যাঁ, তুই? ”
” হ্যাঁ খেয়ে বের হলাম একটু। রাতে কথা হবে টেইক কেয়ার মিহি।”
” সেইম টু ইউ চুন্নি। ”
কথা শেষ হতেই কলিংবেলের শব্দ ভেসে এলো মিহির কর্ণকুহরে। ভাই-ভাবী এসেছে ভাবতেই মনটা ভালো হয়ে গেছে মেয়েটার। কিন্তু যতটা দ্রুত দরজা খোলার জন্য যেতে চাচ্ছিলো ততটা দ্রুত যেতে পারছিলো না। অগত্যা আস্তে আস্তে গিয়ে দরজা খুলে দিলো মিহি।
” কেমন আছিস মিহি?”
” ভালো আছি ভাইয়া,তোমরা আগে ভেতরে এসো।”
আদ্রিয়ান ও রাহি মিহির পিছুপিছু বাসায় প্রবেশ করে বসার ঘরে সোফায় বসলো।
” মিহি তোর কী হয়েছে! এরকম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিস কেনো?”
বোনের শরীর খারাপ ভেবে প্রশ্ন করলো আদ্রিয়ান। কিন্তু রাহি পাশে থেকে চিমটি কেটে বললো,
” তুমি চুপ করো,মিহি রুদ্র ভাই হসপিটালে?”
” হ্যাঁ উনি একেবারে রাতে ফিরবেন। ভাইয়া সকালে ফ্লোরে পড়ে গেছিলাম এজন্য কোমরে লেগেছে একটু।”
” সেকি পড়লে কীভাবে? ঔষধ খেয়েছো? ”
” হ্যাঁ ভাবি। বাবা এখন কেমন আছেন? ”
” চিন্তার কিছু নেই প্রেশার বেড়ে গেছিলো একটু।”
” আচ্ছা ডাইনিং টেবিলে বসবে চলো,নাস্তা খেতে খেতে আলাপ করবো।”
” আরে এখানেই বসো মিহি। মাত্র খেয়ে এলাম তো।”
” আচ্ছা তাহলে ঘরে চলো।”
সারা বিকেল ভাই ভাবীর সাথে কথাবার্তা বলতে বলতে খুব সুন্দরভাবেই কাটলো মিহির। কিন্তু সন্ধ্যার আগে আদ্রিয়ান ও রাহি চলে যাওয়াতে আবারও একাকীত্ব গ্রাস করলো মিহিকে। হুট করে এরকম একা থাকাতে খারাপ লাগছিল। বারবার চোখের সামনে মা-বাবা, ভাই-ভাবীর সাথে কাটানো সময়গুলো মিস করছে।
” এই যে মিহির দানা, ব্যথা কমেছে? ”
হঠাৎ ফোনের স্ক্রিনে অচেনা একটা নম্বর থেকে টেক্সট দেখলো মিহি। এটা যে ডক্টর রুদ্র চৌধুরী সে বিষয় কোনো সন্দেহ নেই মিহির। মেসেজের কোনো রিপ্লাই দিতে ইচ্ছে করছে না। সন্ধ্যা নেমেছে অনেকক্ষণ। মাগরিবের নামাজ পড়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আশেপাশের বিল্ডিং দেখছে মিহি। জায়গায়টা একেবারে নতুন মিহির জন্য। ডিসেম্বর মাসেও আকাশে কালো মেঘেরা আনাগোনা করছিলো বিকেলো। বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আকাশের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পাশের বাড়ির ছাঁদে নজর দিলো মিহি। সেখানে কিছু ছেলেরা ব্যাডমিন্টন খেলতে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তাদের খেলা দেখলো মেয়েটা। কাল থেকে ক্লাসে যাওয়ার কথা ছিল মিহির কিন্তু কোমরে চোট পেয়ে ঘরে বসে থাকতে হবে এখন। কেনো যে সকালবেলা ওরকম লাফিয়ে ফ্লোরে পড়তে গেলো ভেবে নিজেকে নিজেই গালি দিলো মিহি। যাতে ভবিষ্যতে এরকম পরিস্থিতিতে আর পড়তে না হয় এজন্য মিহি ভাবছে আজ থেকে আর এক বিছানায় শোবে না।
চলবে,

#মনেরও_গোপনে
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_১৫
( মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
কেনো যে সকালবেলা ওরকম লাফিয়ে ফ্লোরে পড়তে গেলো ভেবে নিজেকে নিজেই গালি দিলো মিহি। যাতে ভবিষ্যতে এরকম পরিস্থিতিতে আর পড়তে না হয় এজন্য মিহি ভাবছে আজ থেকে আর এক বিছানায় শোবে না। এশার আজানের ধ্বনিতে মিহির ভাবনার ছেদ ঘটলো। ছেলেগুলো সেই কখন ছাদ থেকে চলে গেছে অথচ অন্যমনস্ক থাকায় সেসব খেয়াল করেনি মিহি। ওজু করে এশার নামাজ আদায় করে নিলো সে। জায়নামাজে বসে আছে এখনও। মনটা খুব অস্থির লাগছে মিহির। মানুষটা কখনো না থেকেও মিহির মনের গোপনে বাসা বেঁধে বসে আছে। যদিও রুদ্র এখন তার স্বামী কিন্তু সেই মানুষটার কথা কখনো ভুলতে পারবে না মিহি। মোনাজাতে আল্লাহর কাছে নিজের মনকে শান্ত করার জন্য প্রার্থনা করেছে মেয়েটা। ফোনের রিংটোনের শব্দে জায়নামাজ থেকে উঠে বিছানায় গিয়ে বসলো মিহি। অচেনা নম্বর যদিও কিন্তু এই নম্বর থেকেই একটু আগে টেক্সট এসেছিল। তারমানে রুদ্র কল করেছে নিশ্চিত।
” এই মিহির দানা দরজা খুলো,আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। ”
” কলিংবেল বাজালেও তো হতো কলের কী দরকার ছিলো!”
” একা বাড়িতে দরজা কেউ নক করলেই খুলতে নেই। ”
” আচ্ছা আসছি।”
মিহি কল কেটে দিয়ে ধীরে ধীরে দোতলা থেকে নিচে বসার ঘরে গেলো। তারপর দরজা খুললো।
” আপনি এলেন কিন্তু চাচা তো আসলেন না?”
রুদ্র বাসায় ভেতরে প্রবেশ করলো, মিহি দরজা আঁটকে রুদ্রর পিছনে পিছনে আবারও রুমে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলো ।
” আজ চাচা আসবেন না,চাচীর শরীর হুট করে খারাপ হয়ে গেছে। ”
” ও আচ্ছা। রান্না তো করাই আছে, কিছু নাস্তাও আছে। ভাইয়া আর ভাবী একেবারেই খেতে চাচ্ছিলো না জোরাজোরি করে অল্প দিয়েছিলাম। ”
” ভালো করেছো। তোমার কোমরের ব্যথার কী খবর? ”
” কমেছে। ”
বসার ঘর পেরিয়ে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে দু’জন। রুদ্র একবার মিহির দিকে তাকিয়ে দেখলো। পরমুহূর্তে মিহিকে পাঁজা কোলা করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো।
” এই কী করছেন! ছাড়ুন আমাকে, আমি একাই চলে যাচ্ছি। ”
” হ্যাঁ বললে তো কমেছে ব্যথা, আমি তো দেখলাম দরজা আঁটকে আগের মতোই খুঁড়িয়ে হেঁটে আসছিলে।”
” আপনি আসলে যাচ্ছেতাই, এবার নামান ঘরের সামনে তো এসে গেছি। ”
রুদ্র সাবধানে মিহিকে কোল থেকে নামালো। মিহি রুমে ঢুকে জানালার পাশে একটা চেয়ারে বসেছে। রুদ্র তোয়ালে আর টি-শার্ট, লুঙ্গি নিয়ে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে ঢুকেছে। কেনো জানি কিচ্ছু ভালো লাগছে না মিহির। কেমন সবকিছু একঘেয়ে লাগছে একদিনেই।
” আনমনে কী ভাবছো এত?”
রুদ্র মাথার চুল মুছতে মুছতে মিহিকে শুধালো। মিহি ভাবলেশহীনভাবে বসেই আছে। কেনো জানি কথা বলতেই ইচ্ছে করছে না। মিহির নিস্তব্ধতা দেখে রুদ্র পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
” একা একা বোর হয়েছো সারাদিন? ”
” হ্যাঁ, আমি এখনো এরকম একা থাকিনি। ”
” সেটা বুঝতে পেরেছি। কাল থেকে কলেজে যাবে।”
” কিন্তু ব্যথা!”
” আমি হাই ডোজের ঔষধ নিয়ে এসেছি আর ব্যথা কমানোর জন্য স্প্রে আছে। ”
” ঠিক আছে। শুনুন! ”
” হ্যাঁ বলো।”
” আজ থেকে আমরা আলাদা ঘুমাবো।”
” আমি সোফায় শুতে পারবোনা এই শীতে, তোমার ইচ্ছে হলে শোবে।”
” আমি ফ্লোরে শোবো, আপনি বিছানায়। ”
” ভুলভাল বুঝে লাফিয়ে পড়ে ব্যথা পেলে নিজে আর আমার দোষ! ”
” হয়েছে হয়েছে কথা এটাই ফাইনাল। এখন চলুন ডিনার করে নিবো।”
” আসো। ”
” আরে আরে কোলে তুলতে হবে না আর।”
কিন্তু মিহির কথায় কর্ণপাত করেনি রুদ্র। কোলে তুলে নিয়ে সোজা ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসালো মিহিকে। এমনিতে মিহি শুকনো, ওজনের বালাই নেই। তার উপর রুদ্র সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ায় মিহিকে কোলে করে হাঁটা কোনো ব্যাপারই না তার জন্য। রাতের খাবারের তালিকায় আজকে আছে পাবদা মাছ ভাজা, মুসুরি ডাল, বাঁধাকপি ভাজা। মিহি খুব খাবারের বিষয় খুঁতখুঁতে স্বভাবের খুব। তাই শুধু মাছ দিয়ে খাওয়া শেষ করলো। রুদ্র অবশ্য ভোজনরসিক মানুষ। সব ধরনের খাবারই তার রোচে।

ঘড়ির কাঁটায় রাত এগোরাটা বেজেছে। কিন্তু এরমধ্যেই গ্রামের সব বাড়ির মানুষ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। চারদিকে শুনশান নীরবতা ছেয়ে আছে। শহুরে জীবনে রাত এগোরাটা সবে সন্ধ্যার মতো মনে হলেও গ্রামে সেটা মধ্যরাতের সমান। ছয় বছর বয়সী মিতু পাশের ঘরে ঘুমাচ্ছে। উত্তর দিকের ঘরে তার বাব-মা শোয়। টিনের দোতলা বাড়ি তাদের, গ্রামে এটাকে মাঁচা বলে। সুমি বিছানায় শুয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। সবুজ অন্য কাজে ব্যস্ত। সহবাস করার সময় স্ত্রীর কোনো ইচ্ছে আছে কিনা সেটা কখনো ভাবেনি এই লোকটা। কিছুক্ষণ পরে ক্লান্ত শরীরে সুমির শরীরের উপর থেকে নেমে পাশের বালিশে শুয়ে পড়লো সবুজ। সুমি জামাকাপড় ঠিক করে অন্য দিকে ফিরে শুয়ে নিরবে চোখের জল ফেলছে। একটা মানুষকে ভালোবেসে অন্য কাউকে বিয়ে করে সংসার করার মতো কঠিন কাজটা করতে হয়েছে সুমিকে। কিন্তু যে মানুষকে বিয়ে করেছে সে যে এরকম পশুর মতো হবে ভাবতেও পারেনি সে। প্রায় দিন গায়ে হাত তোলে সবুজ। কখনো কখনো প্রতিবাদ করে সুমি কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়। বাবা-মা তো সন্তানের অমঙ্গল চাননা কখনো কিন্তু মাঝে মধ্যে না চাইতেও সেটা হয়ে যায়। সুমির ভালোবাসার মানুষটাকে তখন তারা মানতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে সবুজের মতো একটা নেশাখোর পশুর সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। অবশ্য সবুজের এই খারাপ রূপ তো তারা জানতেন না তখন। এখন আর কিছু করার নেই! একটা মেয়ে আছে তার উপর আবারও গর্ভবতী হয়েছে সুমি। দীর্ঘশ্বাসে জীবন ফুরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু দুঃখ ফুরায় না।

” এই সুমি!”
সবুজের ডাকে সাড়া দিলো না সুমি। মানুষটা এত খারাপ যে দ্বিতীয় বার কাছাকাছি আসতেও পারে। সেই ভয়ে সুমি ঘুমের ভান করে শুয়ে আছে।
” সুমি? আমার তৃষ্ণা পেয়েছে আবারও। ”
সুমির কান্না পাচ্ছে খুব। এই শরীরে এসব সহ্য করতে খুব কষ্ট হয় মেয়েটার। কিন্তু সুমি জানে সবুজ আরেকবার মিলিত না হয়ে চুপ হবে না এখন। সবুজ হেঁচকা টানে সুমির শরীরের পোশাক খুলে আবারও পশুর মতো ঝাপিয়ে পড়লো। সুমি শুধু চোখ বন্ধ করে সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছে। অবিবাহিত মেয়ের কেউ ধর্ষণ করলে সমাজে বিচারব্যবস্থা আছে কিন্তু বিয়ের পরেও যে একটা মেয়ে ধর্ষণ হতে পারে কথাটা শুনলেও অধিকাংশ মানুষ হেসে উড়িয়ে দেয়। ইচ্ছের বিরুদ্ধে সহবাস করলে সেটাই যদি ধর্ষণ হয় তবে স্বামীর ক্ষেত্রেও তাই হওয়া উচিত। সুমির এসব ভাবনা কতটা যুক্তিসঙ্গত জানে না সে।
সকালের ম্লান রোদ্দুরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিক্ত হচ্ছেন সালমান খুরশিদ। আজকে শরীরটা বেশ ভালো লাগছে। বারান্দার এক পাশে কিছু পাতাবাহারের গাছ আছে। সেগুলোর দিকে তাকিয়ে গুনগুন করে গান গাইতে শুরু করলেন মিহির বাবা। এরমধ্যেই রিনা বেগম হাতে চা নিয়ে বারান্দায় প্রবেশ করলেন।
” কী ব্যাপার সকাল সকাল এত ফুরফুরে মেজাজে আছেন?”
” শরীরটা ভালো লাগছে আগের চেয়ে। আর গতকাল রাতে শাহআলম কল দিয়েছিলো।”
রিনা বেগমের হাত থেকে চায়ের কাপ নিজের হাতে নিলেন সালমান খুরশিদ। বারান্দার গ্রিল ধরে অন্য হাতে চায়ে চুমুক দিলেন।
” তা কী বললো তোশার বাবা? তোশার শরীর কেমন? ”
” তোশা ঠিক আছে। ওর বিয়ে নিয়ে আলোচনা করলো কিছুক্ষণ। বয়স তো কম হলোনা, পাগলামিও করলো অনেক। এবার সত্যি বিয়ে দিতে চাচ্ছে ওর বাবা-মা। এরমধ্যেই ছেলে ঠিক করে ফেলেছে তবুও ছেলের বিষয় আরকটু খোঁজ খবর নিতে বললো আমাকে। ”
” বাহ ভালোই হবে তাহলে। আপনি বরং আদ্রিয়ানকে ছেলের বয়ো ডাটা বলে দিন ও গিয়ে সব জেনেশুনে আসবে। ”
” হ্যাঁ তাই করবো। বুঝলে রিনা,এবার আমি মোটামুটি নিশ্চিন্ত। তোশার থেকে মুক্তি পাবে আদ্রিয়ান আর মিহিরও ভালো ঘর মিলেছে। ”
” ঠিক বলেছেন। সন্তানের জীবনে আনন্দ দেখে গেলে বাবামায়ের মরেও শান্তি। ”
” আজকে মিহি আর রুদ্রর আসার কথা না? যদিও রুদ্র একা এসে দেখা দিয়ে যাওয়ার নিয়ম কিন্তু রুদ্র বললো মিহিকেও নিয়ে আসবে।”
” হ্যাঁ এজন্যই তো সকাল সকাল আপনার ছেলেকে বাজারে পাঠিয়ে দিয়েছি। রাহি বাড়িঘর সুন্দর করে পরিপাটি করে রেখেছে কালকেই। ”
চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে