হ্যাকারের_লুকোচুরি সিজন_২
পর্ব-১২
রুহী আর ড্রাইভার দুইজনে লোকাল ভাষায় খোসগল্পে মেতে ওঠে আর লোকাল ভাষার কিছুই বুঝতে না পারা রাফি বসে বসে জানালা দিয়ে প্রকৃতি দেখতে থাকে। আসলেই অনেককিছু জানা বাকী রাফির, অনেক কিছু করা বাকী।
রুহী আর ড্রাইভারের গল্প জমে উঠেছে এদিকে রাফি গাড়ির পেছনে বসে ভাবনার জগতে হারিয়ে যাচ্ছে। মা বাবাকে দেখা হয় না অনেকদিন, কথা বলা পর্যন্ত বন্ধ, কোথায় আছে কিভাবে আছে কোন খোঁজই জানে না রাফি, বিয়ের পর কতধরনের ঝাক্কি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে তোহা মেয়েটকে এমন আরো হাজারো প্রসংগ একের পর এক রাফির মনে কড়া নেড়ে চলেছে। ভাবনার ঘোর কাটতে না কাটতে গাড়িটা ব্রেক কষে।
রুহী – চলে এসেছি। নামতে হবে।
রাফি ঘোর কেটে যায়, আসেপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখতে থাকে।
রুহী – কি হলো? নামুন?
রাফি চট করে ব্যাগগুলো কাঁধে তুলে নিয়ে নেমে পড়ে।
মোটামুটি ঘিঞ্জি মফস্বল শহর বলতে যা বোঝায়, রাস্তা আর স্থাপনাগুলো দেখলে আন্দাজ করা যায় এই শহরটি অনেক পুরাতন, আধুনিক শহর থেকে বেশ দূরে। রাফির এই পুরাতন ধাঁচের শহরই বেশী পচ্ছন্দ। কিন্তু রহস্য হলো কম বেশী সবগুলো বাড়ি ৩ তলা আর দেখতে একই রকম, গলি, রাস্তার মুখ সবই একইরকম।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
রুহী – সাথে সাথে চলুন নাহলে হারিয়ে যাবেন আর এখানে হারালে খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে।
রাফি – সবকিছু একই রকম লাগছে কেন?
রুহী – কারন সবকিছু একই রকম। শহরটি যিনি গড়ে তুলেছিলেন তিনি ধাঁধা পচ্ছন্দ করতেন হয়তো খুব। তাই পুরো শহরটাকে একটা গোলকধাঁধার মত করেই তৈরী করেছিলেন।
রুহী হাঁটতে হাঁটতে কথাগুলো বলতে থাকে। রাফি রুহীর পেছন পেছন পেছন চলতে থাকলো। রাফি রুহীকে যতই দেখে ততই অবাক হয়। এত হালকা দুটো ব্যাগ যার একটাতে ল্যাপটপ আর নোটপ্যাড থাকবে হয়তো আর অন্যটিতে বাদবাকি এক্সেসরিজ যা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট ছোট। এত কম জিনিসপত্র নিয়ে কোন মেয়েকে এত লম্বা পথ সফর করতে এর আগে কখনই দেখে নি রাফি।
রুহী হয়তো এর আগে বেশ কয়েকবার এখানে এসেছে কারন যে গতিতে হাটছে তাতে বোঝাই যায় এই গোলকধাঁধার প্রতিটা ইট ওর চেনা। রাফির মাথা চক্কর দেয়ার উপক্রম হলো, একবার ডানদিকে একবার বাম দিকে একবার সার্কেল হয়ে কেমন চক্কর কাটছে সে নিজেও জানে না। সাধারনত মানুষ প্রথমবার যদি কোন পথে চলতে থাকে তাহলে চেষ্টা করে আশপাশটা একটু চিনে নিতে যেন ফিরতি পথে হারিয়ে না যায় কিন্তু এটা এমনই এক গোলকধাঁধা যে কোনভাবেই মনে রাখার কোন উপায় নেই।
অনেকক্ষণ ধরে গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খেতে খেতে অবশেষে রুহী থামলো একটা বাড়ির সামনে, অবিকল দেখতে আশপাশের আর ১৫-২০ টা বাড়ির মতনই, ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
বাড়ির প্রধান ফটকে সেই মান্ধাত্বার আমলের তালা ঝোলানে। রুহী তার ব্যাগ থেকে চাবি বের করে দরজা খুলে ফেললো। ভেতরে ঢুকে বাতি জ্বালালো রুহী আর রাফিকে ভেতরে আসতে বলে। রাফি ভেতরে আসলে রুহী দরজা লাগিয়ে দিয়ে রাফিকে ড্রয়িংরুমে নিয়ে যায়। রাফিকে সোফাতে বসতে দিয়ে রুহী ফায়ারপ্লেসে আগুন জ্বালাতে লেগে পড়ে। একদম পুরাত সিস্টেমে একের পর এক কাঠ সাজিয়ে আংগুল সমান লম্বা সাইজের দিয়াশলাইয়ের কাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলো। রুহীর কর্মপটু হাতের কাজ দেখে এটা বোঝা যায় যে এই কাজ রুহী আগেও অনেকবার করেছে। রুহী উঠে দাঁড়ায়, রাফির দিকে তাকিয়ে,
রুহী – এটা আপনার সেফহাউজ, এখানে কেউ আপনাকে খুঁজতে আসবে না। এখানে নিরাপদ আপনি।
রাফি – কিন্তু এটা আমার বাড়ি নয়। আমাকে বাড়ি যেতে হবে। আমি বাড়ি যাবো।
রুহী – (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) আগে নিজেকে নির্দোষ তো প্রমান করেন, তারপর বাড়ি যাওয়ার কথা মাথায় তুলে নিয়েন। আপাতত নিজের পিঠ বাঁচান। এখন আসেন আপনার রুম দেখিয়ে দেই।
বলে রাফিকে দোতলায় নিয়ে যায় রুহী। একটা রুমের দরজা খুলে দিয়ে আলো জ্বালিয়ে দেয় রুহী, রাফি রুমে প্রবেশ করলে রুহী বাইরে থেকেই বলতে থাকে,
রুহী – এটা আপনার রুম। ফ্রেস হয়ে নিন। ৩০ মিনিটের ভেতর নিচে চলে আসুন।
রাফি কোন কথা বলে না। একটা ছোট্টখাট্ট ট্রেডিশনাল বেডরুম। ঘরের ভেতর সব আসবাবপত্রই কাঠের, এমনকি মেঝেটাও।
রাফি ঘুরেফিরে রুমটা দেখতে দেখতে চোখ আটকায় বিছানার পাশে রাখা দুইটি ব্যাগ এর দিকে। ব্যাগদুইটি রাফিরই, বাড়ি থেকে নিয়ে যাচ্ছিলো ট্রেনিংয়ের উদ্দেশ্যে কিন্তু মাঝপথে ল্যান্ড করা বিমানের কার্গোতেই রয়ে গিয়েছিলো ব্যাগদুটো। মাফিয়া গার্ল বলেছিলো ব্যাগগুলো নিয়ে না ভাবতে কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে ব্যাগের আশা ছেড়েই দিয়েছিলো রাফি। কিন্তু ব্যাগগুলো এখানে এলো কিভাবে! তাহলে কি মাফিয়া গার্ল আগে থেকেই প্লান করে রেখেছিলো যে শেষমেশ রাফি এখানেই উঠবে! বিষয়গুলো ভাবতে ভাবতে জামাকাপড়ের ব্যাগটা খোলে রাফি। নিজের শরীরের কাপড়গুলো ঝেড়ে ফেলার দরকার। গত কয়েকদিন ধরে ব্যাকপ্যাকে থাকা জামাকাপড়গুলো রোটেশনে পড়তে পড়তে বেহাল অবস্থা হয়ে গেছে। ব্যাগের ভেতরে ভাঁজ করা কাপড়গুলো দেখে তোহার কথা মনে পড়ে রাফির। মেয়েটা পুরো রাত জেগে কাপড়গুলো গুছিয়ে দিয়েছিলো। একসেট কাপড় আর তোয়ালে নিয়ে ঝটপট চলে যায় ওয়াশরুমে। ফ্রেশ একটা গোসল দিয়ে বাইরে আসে রাফি। তোয়ালে বিছানায় ফেলতে গিয়েও না ফেলে স্ট্যান্ডের উপর ঝুলিয়ে দেয়। ততক্ষণে রুহী নীচ থেকে ডাক দেয়। রাফি নীচে নেমে আসে, ডায়নিং টেবিলে হালকাপাতলা নাস্তা সাজানো। রুহী ফ্রীজ থেকে খাবার বের করে ওভেনে গরম করে টেবিলে রাখছে। মেয়েটা তার কাপড় বদলে ফেলেছে। মেয়েটা কাপড়চোপড় পেলো কোথায়, যে ব্যাগ বয়ে এনেছে তাতে তো ওর শীতের কাপড়টাই ধরার কথা নয়, প্রশ্ন করতে যাবে আর তখনই,
রুহী – এটা আমার ২য় বাড়ি। এখানে আমার মাঝেমধ্যেই আসা পড়ে তাই এক্সট্রা ব্যাগেজ টানার দরকার পড়ে না।
রাফি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। এই মেয়ে কি মাইন্ড রীড করতে জানে নাকি? প্রশ্ন করার আগে উত্তর দিতে থাকে! তখন রুহী একটা হেয়ালী দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রাফির দিকে তাকায়,
রুহী – আমি মাইন্ড রীডার নই। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
রাফি পুরা তব্দা খেয়ে বসে পড়ে ডাইনিং টেবিলে পাতানো চেয়ারে, স্বাভাবিকতা রাখতে,
রাফি – আমি আপনাকে কোন প্রশ্ন করি নি, এমন অপ্রাসঙ্গিক কথা বলছেন কেন?
রুহী – (মুচকী হেসে) না, ভাবলাম হয়তো আপনার কিউরিয়সিটি জাগতে পারে, তাই আগে থেকে জবাব দিয়ে দিলাম। (খাবার দেখিয়ে) নিন শুরু করুন।
রাফি আর কথা না বাড়িয়ে গালের ভেতর রুটি গুজে দিয়ে চাবাতে থাকে। খাওয়াদাওয়া শেষ করে নিজের প্লেট ধুয়ে জায়গামত রেখে দিয়ে রাফি রুমের শিড়ি ধরলে রুহী বাঁধ সাধে,
রুহী – উপরে কোথায় যাচ্ছেন? উপরে শুধুমাত্র বেডরুম রয়েছে, আপনার অফিস নীচে।
রুহীর কথায় থমকে গেল রাফি,
রাফি – অফিস! কিসের অফিস।
রুহী রাফিকে অনুসরণ করতে বলে ষ্টোররুম বরাবর। ষ্টোররুমের দরজা খুলে নীচের পাপোশ সরিয়ে দেয়। রাফি পেছন থেকে পাপোশের নীচে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক লক দেখতে পায়। এত পুরাতন বাড়িতে এমন হাইটেক লক দেখে রাফির কপাল কুঁচকে যায়। রুহী পাসওয়ার্ড ও বায়োমেট্রিক থামসপ্রিন্ট দিয়ে লক ওপেন করে। স্টোররুমের পেছনে একটা খট করে আওয়াজ হয়। রুহী পাপোশটা আগের জায়গায় সরিয়ে রেখে ষ্টোররুমের পেছনে চলে যায় আর রাফিকেও আসতে বলে।
রাফি রুহীকে অনুসরণ করতে করতে ষ্টোররুমের পেছনে চলে যায়, একটা ট্যাপডোর খোলা রয়েছে আর একটা শিড়ি নেমে গেছে নীচে। রুহী একটা সুইচ অন করে আলো জ্বালিয়ে ফটাফট নেমে যেতে থাকে আর রাফির চোখ আসমানে উঠে যায়।
মান্ধাত্বার আমলের বাড়ির বেসমেন্ট মাঝারী আকারের কম্পিউটার ল্যাব। যে কোন কম্পিউটার গীকের জন্য এমন একটা ল্যাব স্বর্গের সমান। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পুরো রুম আর রুমে ঢুকলে কেউ বুঝবে না যে এটা কোন ধরনের বাড়ির নীচে অবস্থিত।
রুহী – পৃথিবীতে এমন ওয়েল ইকুপড ল্যাব আর ২য় টি নেই। MG এই ল্যাবটি আপনার জন্য সাজিয়ে রেখেছে। এখানে বসে আপনি আপনার সবব কাজ করতে পারবেন। MG আপনার ল্যাপটপ এ্যানালাইসিস করে ল্যাপটপের সকল কাষ্টমস সেটিংস ও সফটওয়্যার ক্লোন করে এই পিসির সিস্টেমে দিয়ে দিয়েছেন যেন এটা ব্যবহারে আপনার কোন সমস্যা না হয়। (হার্ডড্রাইভ এগিয়ে দিয়ে) নিন আপনার কাজ, শুরু করুন!
রাফি – (হার্ডড্রাইভটা নিয়ে) বাংকার থেকে এই ড্রাইভ নিয়ে ঘুরছি। কি আছে এতে?
রুহী – পিকাচু এর বেটা ভার্সন। একদম র ডেটা।
রাফি – পিকাচু! অস্ত্র ব্যবসায়ী পিকাচুকে দিয়ে দিলো! সাথে আনকাট ডায়মন্ড! সাথে কয়েক হাজার কিলোমিটার বিমান আর রোডট্রিপ! কেন করলো সে?
রুহী – সেটা MG বলতে পারবে। আমাকে বলা হয়েছে যতটুকু ততটুকুই আপনাকে জানালাম। আপনার কাজ এখন পিকাচুকে ডেভলপ করে আরো বেশী কর্মক্ষম করে তোলা। বেটা ভার্সনের পিকাচুর কি কি সমস্যা আছে তা হয়তো বাংকার ট্রায়ালেই বুঝতে পেরেছেন। এখন কাজে লেগে পড়েন। সিস্টেম ক্যাপাসিটি পিকাচুকে এডাপ্ট করার জন্য যথেষ্ট। এছাড়া নেটওয়ার্ক সিস্টেমও মডিফায়েড, চাইলে চেক করে কাজ শুরু করতে পারেন।
রাফি এতক্ষণ হার্ডড্রাইভটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রুহীর কথা শুনছিলো। কথা শেষ হলে রাফি জবাব না দিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে। সিস্টেম চালু করে নেটওয়ার্ক ডিসকানেক্ট করে ফেলে।
রাফি – এখন আমার নেটওয়ার্কের প্রয়োজন নেই। দেখি কি করতে পারি পিকাচু কে দিয়ে।
বলে হার্ডড্রাইভটা কানেক্ট করে দেয় কম্পিউটারে আর একসেস করতে থাকে একের পর এক সিষ্টেম ডাটা। রুহী চলে যাওয়ার আগে পাসওয়ার্ড রিসেট করে যায় আর রাফিকে বায়োমেট্রিক থাম্বসপ্রিন্ট দিয়ে দিতে বলে। রাফি মাথা দোলায় কিন্তু কম্পিউটার স্ক্রীন থেকে চোখ আর কীবোর্ড থেকে হাত সরায় না।
ডেভলপারদের থিম ছিলো একটা কম্প্লিট ডিজিটাল এসিস্টেন্ট তৈরী করা যার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স থাকবে, ইউনিক কোডিং আর বিভিন্ন টুলস একত্রিত করে একটা ডিজিটাল ব্রেন তৈরী করতে চেয়েছিলো। কিন্তু কাজটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মাফিয়া গার্লের কথা যদি ঠিক হয় তাহলে হয়তো এই অর্ধেক কাজের ক্ষমতা দেখে লোভে হয়তো মেরে দিয়েছে সব ডেভেলপারদের। রাফি দেখেছে পিকাচুর ক্ষমতা আর ওটা যদি বেটা ভার্সন বা ট্রায়াল ভার্সন হয়ে থাকে তাহলে এখনো অনেককিছুই বাকি।
রাফি হোমওয়ার্ক করতে বসে যায়, খুঁটে খুঁটে পিকাচুর ফল্ট আর প্রবলেমগুলো খুঁজে বের করতে থাকে। ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যেতে থাকে কিন্তু রাফির সেদিকে হুস নেই। কাজ করতে থাকে রাফি।
এদিকে রুহী ফিরে আসে আবার বেজমেন্টে। রাফিকে তখনো কাজ করতে দেখে অবাক হয়।
রুহী – এখনো লেগে আছেন!
রাফি – এখনো ঘুমান নি আপনি! ঘুমিয়ে পড়ুন। অনেক রাত হয়েছে!
রুহী – গুড মর্নিং, মি. রাফি। আপনার ঘড়ির হিসাবে গড়মিল আছে কিনা জানি না তবে সূর্যিমামা গড়মিল করে বলে মনে হয় না।
রাফির কাছে ঘড়ি না থাকায় আর কাজে এতবেশী মগ্ন হয়ে যাওয়ায় সময়ের খেয়ালই ছিলো না রাফির।
রাফি – গুড মর্নিং! সকাল হয়ে গেল এত জলদি! মাত্রই না বসলাম!
রুহী – একটা মানুষ এত লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে বিশ্রাম না নিয়ে রাত জেগে কাজ করতে পারে তা হয়তো আপনাকে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।
রাফি – কাজ করতে বসলে শেষ হওয়ার পর্যন্ত মানসিক শান্তি পাই না।
রুহী – তবে এখন আর কাজ করা যাবে না। MG আপনাকে লোকেশন ম্যাপ আর এক্সিট প্লান বুঝিয়ে দিতে বলেছে। আমি চলে গেলে যেন একা একা কাজ করতে পারেন, সেজন্য।
রাফি – মানে ! এমন অপরিচিত একটা দেশে আমাকে একা ফেলে চলে যাবেন মানে কি!
রুহী – তিন দিনের জন্য বান্ধবীর বাসায় আছি বলে বাসা থেকে বের হয়েছি। আপনার সমস্যা শেষ হওয়া পর্যন্ত থাকতে বললেও থাকা সম্ভব না। তাই ঝটপট উঠে পড়ুন। উপরে যান, ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে চলে আসুন। আর হ্যাঁ, বায়োমেট্রিক লকে আপনার থাম্বসপ্রিন্ট দিতে ভুলে যাবেন না যেন।
রাফি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, বায়োমেট্রিক লকে থাম্বসপ্রিন্ট দিয়ে রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংএ আসলে দেখে রুহী কয়েকটা বড় মোরানো কাগজ আর একটা জিপিএস নিয়ে অপেক্ষা করছে।
রাফি – বলুন কি বলবেন।
রুহী ড্রয়িং রুমের মেঝেতে একটা ম্যাপ ছড়িয়ে দেয়।
রুহী – এই শহরের অরিজিনাল ম্যাপ।
রাফি – স্যাটেলাইট ম্যাপেও তো এমনকিছুই দেখা যাবে। শুধুশুধু এতবড় ম্যাপ করার কি প্রয়োজন?
রুহী রাফীর দিকে খটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
রুহী – স্যাটেলাইট ম্যাপ কেন, (হাতের জিপিএস দেখিয়ে) এই জিপিএসটা ছাড়া অন্য কোন জিপিএস তোমাকে এই গোলকধাঁধা থেকে বের করতে পারবে না। স্যাটেলাইট ইমেজ টেম্পারিং করে দেয়া আছে আর জিপিএস কোয়ার্ডিনেন্স ও। যেন চাইলেই অপরিচিত কেউ এখানে প্রবেশের সাহস না করে। এই এলাকার বাসিন্দারগন সবাই জন্মসূত্রে এখানে বাস করে তাই তাদের কখনই জিপিএস এর সাহায্য প্রয়োজন পড়ে না।
রাফি – (অবাক হয়ে) এও সম্ভব নাকি! যাহ, এটা বাড়ায় বলা হয়ে গেছে আপনার।
#লেখা_sharix_dhrubo
রুহী – তা কিছুক্ষন পরে বুঝতে পারবেন। (অন্য একটা ম্যাপ ওপেন করে) এটা আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই দেশের সরকার সাধারণ জনগনের নিরাপত্তার জন্য এগুলো তৈরী করেছিলেন। কালের বিবর্তনে অনেকেই টানেলগুলোর কথা ভুলে গেলেও প্রয়োজনে তোমার কাজে লাগবে। (আরো একটা ম্যাপ খুলে দিয়ে) এটা এই বাড়ির কাছাকাছি কয়েকটা সেফহাউজের লোকেশন। প্রতিটা সেফহাউজের ডিজিটাল লকে তোমার থাম্বসপ্রিন্ট ইনস্টল করে দেয়া হয়েছে।
রাফি ম্যাপগুলো নিবিড়ভাবে দেখতে থাকলো। ম্যাপের বডিতে এক এক লোকেশনে এক এক কোড দেখতে পায় রাফি।
রাফি – (আংগুল দিয়ে দেখিয়ে) এই কোডগুলো কিসের?
রুহী – আশা করছিলাম এই প্রশ্নটির। (জিপিএস দেখিয়ে) এই সব ম্যাপ আর লোকেশন এই জিপিএস এ সেট করা আছে। লোকাল ভাষা ছাড়াও শুধু এই কোড বলেই জিপিএস আপনাকে পথ দেখিয়ে ওই কোডের লোকেশন পর্যন্ত এগিয়ে দেবে।
রাফি – মানে আমাকে ইঁদুরের গর্তে ঢুকিয়ে গর্তের মুখগুলো চেনাচ্ছেন? তো চলেন দেখি আপনার জিপিএস এর জাদু দেখা যাক।
রাফি তৈরী হয়ে আসে আর নিজের ফোনের স্যাটেলাইট ম্যাপিং সিস্টেম অন করে আর সাথে রুহীও।
রুহী – আপনার মিশন, আমাকে মেইন রাস্তায় পৌছে দেয়া।
রাফি ফোনের ম্যাপ আর জিপিএস এর দেখানো পথ ধরে এগোতে চায় কিন্তু শুরুতেই ধাক্কা খায়, রাফি তিন রাস্তার মোড়ে দাঁড়ানো থাকলেও ফোনে শো করছে একটা সিংগেল রাস্তার পাশে দাঁড়ানো সে। চোখের সামনে রাস্তা খোলা থাকলেও ফোনে শো করছে সামনে একটা বাড়ি।
রাফি কিছুক্ষণ ফোন ঝাঁকাঝাকি করে যখন কোন ফল পেল না তখন ফোনটা পকেটে চালান করে দিলো। রুহী মুখে হাত দিয়ে মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে জিপিএস আর এয়ারবট তুলে দেয় রাফির হাতে।
রুহী – আপনার জন্যই এত রংঢং করা, আমি তো আর দেশের ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল নই।
রাফি – (তাচ্ছিল্য করে) হা হা হা, ভেরী ফানি।
বলে ইয়ারবট টা কানে গুজে নেয়, মেইন রোড কমান্ড দেয়ার পর আর দশটা জিপিএসের মত স্বাভাবিকভাবেই রাফিকে ডিরেকশন দিতে থাকলো। এভাবে কয়েকটা জায়গা ঘুরে ফিরে দুইজনেই আবার ফিরে এলো সেফহাউজে।
রুহীর ফ্লাইট রাত ১০ টায়। রুহী ব্যাগ থেকে একটি পাসপোর্ট আর একটি ন্যাশনাল আইডি বের করে দেয়। রাফি পাসপোর্টটি হাতে নেয়, এই বৃহত্তম রাষ্ট্রের এক বন্ধু রাষ্ট্রের VVIP বা ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট, রাফির দাড়ি মোচওয়ালা ছবি ঠিক আছে কিন্তু নাম ভিন্ন, ন্যাশনাল আইডিতেও।
রুহী – যদি প্রয়োজন পড়ে বা কোন কারনে কোনঠাসা হয়ে পড়ো তাহলে এটা কাজে লাগবে। (ঘরের চাবি রাফিকে দিয়ে) কাল দুজন আসবে সবসময়ের জন্য তোমার দেখাশোনা করতে। তাদের ছবি ও ডিটেলস MG তোমাকে পাঠিয়ে দেবে।
রাতের খাবার শেষ করে রুহী পুরাতন ড্রেসটা পরে নিয়ে বের হয়ে যায় বাসা থেকে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। রাফি এগিয়ে দিতে চাইলেও রাতের বেলা পথ ভুললে রুহীকে আবার ফেরত এসে পথ দেখাতে হবে দেখে আটকে দিলো মেয়েটা। রুহী চলে গেলে দরজা লক করে সোজা চলে গেলো ষ্টোররুম দিয়ে বেজমেন্টে, অসম্পূর্ণ পিকাচুকে সম্পূর্ণ করতে হবে, নিজেকে নির্দোষ করা বাকী।