হ্যাকারের_লুকোচুরি পর্ব-৭
লেখা- sharix dhrubo
রাফি ডাইরেক্টর স্যারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এক নতুন টিম গঠন করলো যারা বিশেষভাবে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে পারদর্শী তা সে যতই ক্ষুদ্র ও সূক্ষ হোক না কেন।অনেকদিন হলো মাফিয়া গার্লের খোজ নেয়া হয় না। রাফি এখন তৈরী মাফিয়া গার্ল সম্পর্কে স্ট্যাডি করতে।
টিমকে উদ্দেশ্য করে,
রাফি – টিম, আজ তোমাদের একটি নতুন টাস্ক দেয়া হবে। কোডনেম মাফিয়া গার্ল। পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক আর যতবার হোক, মাফিয়া গার্ল রিলেটেড সকল তথ্য আমার চাই।তা যত পূরাতন হোক আর যতই সামান্য হোক With Date and time. I want each and every information related with Mafia Girl on my desk within 3 days.
টিম – (একসাথে উচ্চস্বরে) YES, LEADER.
রাফি – (কলমটা ঠোঁটের কোনায় ধরে মনে মনে কনফিডেন্টলি)Mafia girl, it’s time to know about you.
রাফির উৎসাহ আর অসাধারণ সুপারভাইজিং ক্ষমতার কারনে পুরো টিম রাফির মত ভাবতে ও কাজ করতে শুরু করলো। কয়েকটা ইনস্ট্রাকশন দেয়া নেয়াতেই রাফি ও টিম মেম্ববারদের মধ্যে অনেক সুন্দর একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং তৈরী হয়ে যায়। অনেকটা কলম ঘোরালেই তার কারন বলে দেয়ার মত।
৫ জনের ওই টিমের প্রতিটি মেম্বার রাতের ঘুম হারাম করে লেগে থাকলো মাফিয়া গার্ল নামক অধরা এক ভুতের পেছনে। খুজে খুজে বের করতে থাকলো এক একটি ক্লু। রাফি কোন ক্লু ই ইগনোর করতে নিষেধ করেছে তাই ছোট বড় সব ধরনের ঘটনাকেই প্রাধান্য দেয়া হলো। বিশেষ করে এনোনিমাস হ্যাকিং যার দায় কেউ স্বীকার করে নি, বা বড় কোন গ্যাং ধরিয়ে দেয়া যা এনোনিমাস গ্রুপ বা পার্সন করছে এমন ঘটনাকেও ইনক্লুড করতে বলা হলো।
৩ দিন পদ সব ফাইন্ডিংস এক করা হলো, শুরু হলো চুলচেরা বিশ্লেষণ। কালো টাকার মালিকদের স্বর্গ ওই ব্যাংক হ্যাকিং এর ঘটনা দিয়ে মাফিয়া গার্লের আত্বপ্রকাশ ঘটে এবং সেই টাকা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ডোনেট করে দিয়েছে। অবাক কান্ড একটা পয়শাও কোন পার্সোনাল একাউন্টে যায় নি। লিষ্ট ও চলে এসেছে সংস্থাাগুলোর নাম, ঠিকানা, ব্যাংকের নাম ও একাউন্ট নাম্বার, কোথায় কোথায় এদের কার্যক্রম চলে সবকিছু।
এছাড়াও আফ্রিকার কোন একটি দেশের চরমপন্থিদের সাথে হীরার বিনিময়ে অস্ত্র বিক্রয় করা এক বিশাল গ্যাংকে হাতেনাতে ধরেছিলো সেই দেশের পুলিশ, প্রেস ব্রিফিং এ পুলিশ প্রধান বলেছিলেন ওইদিন সকালে আননোন সোর্স থেকে একটি ফোন আসে আর একটি কম্পিউটার জেনারেটেড ভয়েস কিছু নির্দেশনা দেয় যেমন জিপিএস কোয়ার্ডিন্যান্স, কয়েকটি ফোন নাম্বার, একটি ওয়্যারলেন্স ফ্রিকোয়েন্সি ও কিছু স্যাটেলাইট ইমেজিং যাতে অস্ত্রভর্তি ট্রাকের ছবি, কিছু পাসপোর্ট ডিটেলস ও কিছু ডকুমেন্টস যা প্রিন্টার থেকে অটোমেটিক প্রিন্ট হয়েছিলো যার মাধ্যমে আমরা অনেক সহজে চরমপন্থীদের ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের এক বিশাল চালান জব্দ করি। রাফি জানতে চাইবে তার আগেই একজন টিমমেট বললো ওই এনোনিমাস কলারের কোন পরিচয় দেয়া নেই। রাফি কিছুটা মনক্ষুন্ন হলেও একটু খুশিও হলো, নাহ ওর টিম ওর সাইকোলজি বুঝতে পারতেছে। রাফি দুইটা ঘটনা ই নোট করলো।
রাফি – নেক্সট?
একজন টিমমেট রাফিকে একটু ইতস্তত ভাবে কিছু বলতে চাইলো, রাফি মনযোগী হওয়ায় বলতে শুরু করলো।
– যদিও এর কোন সত্যতা বা প্রমাণ নেই তবে রিউমার রয়েছে মাফিয়া গার্লের সবচেয়ে ভয়ংকর অস্ত্র হলো হাইড্রা।
রাফি – (চেয়ারের হেলান ছেড়ে টেবিলের দিকে ঝুকে) হাইড্রা! কি বলছো?
– এটা একটা রিউমার শুধু, মাফিয়া গার্ল যেভাবে ভুতের মত সাইবার দুনিয়া দাপিয়ে বেড়ায় তা একমাত্র হাইব্রীড হাইড্রার জন্যই পসিবল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। হয়তো অবাস্তব শোনাচ্ছে তবে অসম্ভব নয়।
রাফির মনে প্রশ্ন জাগে, এইজন্যই কি মাফিয়া গার্ল আনট্রেসেবল হয়ে আছে সাইবার রাডারে? আসলেই অসম্ভব নয়।
রাফি – তারপর?
– আপনার নির্দেশনা মত আমরা আমাদের সার্ভার একসেস লগ এর ফুল ডায়গনসিস করিয়েছি। একটা আইপি এড্রেস Unauthorized এক্সেস করে প্রায় ৪ মিনিট লগড ইন ছিলো। তারপর উধাও এমনকি আইপি এড্রেসটাও গায়েব, তবে সবচেয়ে মজার ব্যপার হচ্ছে ওই আইপি এড্রেসটি এই ৪ মিনিটে প্রায় ১২০ বার তার লোকেশন চেন্জ করেছে। অর্থাৎ প্রতি ২ সেকেন্ড অন্তর ১ বার করে ১২০ বার।
রাফি – বাহ দারুন পয়েন্ট ধরেছো তো। তারপর?
এরই মাঝে একজন টিমমেট ব্যাংক থেকে হ্যাক হয়ে ডোনেট করা সংস্থাগুলোর লিষ্ট নিয়ে বসে ঘাটতে ঘাটতে হাত তুললো।
রাফি – কি ব্যপার?
– এই লিষ্টে আমাদের দেশীয় একটি সংস্থা রয়েছে। xyz । এটা আমার পরিচিত একটি সংগঠন। এটা কলেজভিত্তিক সেচ্ছাসেবী সংগঠন যা তাদের কর্মকান্ড দেশের প্রতিটি এলাকার কলেজগুলোর সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
রাফি – হ্যাঁ, হতেই পারে। সারা দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে মানে তো বিশাল ব্যপার, বিখ্যাত হওয়াটা স্বাভাবিক।
– হয়তো আর ১০ টা সংগঠনের জন্য এটা স্বাভাবিক তবে এই সংগঠনের জন্য একদমই না।
রাফি – মানে?
– আমার কলেজে এই সংগঠনের কার্যক্রম ছিলো আর আমিও এই সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম। এই সংগঠনের মূল থীম ই হলো কোন গনসংযোগ বা মার্কেটিং করা যাবে না। কলেজেরই প্রেজেন্ট ও এক্স স্টুডেন্টসদের ডোনেশনের টাকায় চলবে এই সংগঠন।
রাফি – ওয়েট, তুমি কি বলতে চাচ্ছো তোমাদের এই সংগঠনটি কলেজের বর্তমান ও পূরাতন স্টুডেন্ট ছাড়া আর কেউ ডোনেট করে না।
– মাঝে মাঝে শিক্ষকেরা ও সাহায্য করতো কিন্তু মার্কেটিং না হওয়ায় অধিকাংশ সাহায্য আসতো এক্স স্টুডেনটসদের কাছ থেকে, এছাড়া আর কারো ত জানার উপায়ও নেই।
রাফির কপালের ভাঁজটা আরো একটু বড় হলো! তাহলে মাফিয়া গার্ল কিভাবে জানলো এই সংস্থার ব্যপারে!!
রাফি – তাহলে কি মাফিয়া গার্ল আমাদের দেশেরই কেউ! এই সংস্থার সাথে সম্পৃক্ত কোন বর্তমান বা পূরাতন স্টুডেন্ট?
– হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশী! কারন শুধুমাত্র বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী ছাড়া কেবলমাত্র সুবিধাভোগী লোকজনই শুধু এই সংস্থার অস্তিত্ব জানে। বিদেশী কোন হ্যাকারের পক্ষে এই সংস্থার ব্যাংক হিসাব নং ও সংস্থার নাম জানা সম্ভব না।
রাফি ভাবতে শুরু করলো, এই ক্লু টা সবচেয়ে দূর্বল ক্লু ভেবেছিল সে, কিন্তু এমন দাঁতভাঙ্গা ব্রেকথ্রু পাবে তা রাফি ভাবতেও পারে নি।
রাফি – Okay team, lets find out about this non-profit organization and give me details.
– একটা সমস্যা আছে, অনলাইন বা পত্রিকায় হয়তো কর্মকান্ড বা কিছু বিশেষ ঘটনাবলি আসতে পারে কিন্তু এই সংস্থার সিংহভাগ কাজই একটু পুরাতন ধাঁচের।
রাফি – (কপাল কুঁচকে বিরক্তিভরা কৌতুহল নিয়ে) সেটা কেমন?
– এই যেমন ধরুন, সারা পৃথিবী যখন ইমেইল দিয়ে দ্রুতগতিতে তথ্য আদানপ্রদান করে তখন এই সংস্থাটি এখনো চিঠি লিখে যোগাযোগ রক্ষা করে। প্রতিটা কলেজ থেকে হাতে লেখা চিঠি আসে সেন্ট্রালে আবার সেন্ট্রাল থেকেই প্রতিটা চিঠির উত্তর হাতে লেখে দেয়া হয় এমন। সবাই মোবাইলে যোগাযোগ করে সময় ঠিক করে যে কখন কোথায় দেখা করতে হবে, সময় পরিবর্তন হলে তাও মোববাইলে জানানো হয়, কিন্তু এই সংগঠন একটি মিটিং এ বসে পরবর্তী মিটিং এর টাইম এবং প্লেস ফিক্স করে। হতে পারে সেই মিটিং ১ ঘন্টা অথবা ১ মাস পর!!!
রাফির কপালে আর ভাঁজের জায়গা অবশিষ্ট থাকলো না। এ কেমন সংস্থা যা এখনো এই মাপের ওল্ডফ্যাশন?
তারপরও কিছু অনলাইন স্ট্যাডি করলো রাফির টিম। বেশ কিছু পেপার ফ্লাশিং ও নিউজ পোর্টালে তাদের সংস্থার নাম ও বিশেষ কিছু কার্যক্রম ছাড়া আর কিছুই নেই। অবাক করার মত হলেও এই সংস্থাটির ভেতরে না বসে কোন তথ্য পাওয়া তো সম্ভব না।
রাফি – আচ্ছা যে একাউন্ট থেকে টাকা পাঠানো হয়েছে তাকে ত অবশ্যই নতুন অথবা প্রাক্তন স্টুডেন্ট সেজে ডোনেট করতে হবে?
– একদম ঠিক বলেছেন স্যার, এনালগ শীটের মত একটা ডোনেশন ফাইল রাখা হয়। যদি কেউ ডোনেট করতে চায় তো তাকে আগে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এবং তাকে একটা টোকেন নাম্বার দেয়া হয়। প্রতিবার ডোনেট করার সময় নামের সাথে ওই নাম্বারটি উল্লেখ করে দিতে হয় যেন ডোনেশন রিসিভ করার পর সংস্থার লোকেরা বুঝতে পারে কোন কলেজের স্টুডেন্ট এই ডোনেশন করলো। যদি কোন রেগুলার ডোনার ভুল করে টোকেন নাম্বার ছাড়া ডোনেট করে দেন তো সেটা যত বড় এমাউন্ট ই হোক না কেন তা ফেরত দিয়ে দেয়া হয়।
রাফি – (অবাকের দরুন বিস্ফোরিত চোখে) এটা কেমন নিয়ম! আমার ইচ্ছা করলেও ডোনেট করতে পারবো না। আবার টোকেন ছাড়াও সম্ভব না! এ নিয়ম কে বানালো।
– সংস্থার ফান্ডামেন্টাল নলেজ থেকে জেনেছিলাম সংস্থার শুরুর দিকে এমন রুলস ছিলো না, কিছু অসাধু মানুষ সস্তা মার্কেটিং এর জন্য ১ টাকা ডোনেট করে ১০০ টাকা প্রচার করতো যে কারনে কার্যক্রমের ভয়ংকর ব্যাঘাত ঘটতো। যে কারনে প্রতিষ্ঠার ২ বছরের মাথায় এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় কমিটি।
রাফি – এই টোকেন মাইইনটেইন করা হয় কিভাবে?
– সেন্ট্রাল থেকা এটা মেইনটেইন করা হয়। যেমন এটা আমার টোকেন নাম্বার ১২৩*৫৬***. এই নাম্বারের প্রথম ১ ডিজিট কলেজ, পরের ২ ডিজিট ডিপার্টমেন্ট, পরের ২ ডিজিট ব্যাচ ও শেষের ৩ ডিজিট রোল নাম্বার। প্রতিটা বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা একাউন্ট নাম্বার খোলা যেন কোন ডোনেশন কোন একাউন্টে এসেছে তার ভিত্তিতে কলেজের কোন ডিপার্টমেন্টের কত ব্যাচের কোন স্টুডেন্ট ডোনেট করেছে তা জানা যায়।
রাফি -(চোখ চকচক করে) তাহলে ত মাফিয়া গার্ল ও নিশ্চই কোন টোকেন ব্যবহার করে ডোনেশন দিয়েছে। নাহলে সেই টাকা ফেরত যাওয়ার কথা। yess, it time to find out who is Mafia Girl. Team, contact with this organization and I want every financial details related with this.
Team – (একসাথে) consider it done.
রাফির টিমমেট সংস্থার সেন্ট্রাল অফিসে যোগাযোগ করলো। একটা এপয়েন্টমেন্ট নিলো একাউন্টস ডিপার্টমেন্টে। রাফির টিমে একজন প্রাক্তন সদস্য থাকায় কাজগুলো খুব সহজে হয়ে গেল।
কেমন লাগছে কমেন্টে জানাবেন। মন্তব্যে লেখকের লেখার স্পৃহা আরো বেড়ে যায়। ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
Very Creative. Try to post this kinda stories rather than spicy bulgur love stories. Thanks
Carry On……help lagle bolben.