হ্যাকারের_লুকোচুরি পর্ব-৩
লেখাঃ sharix dhrubo
সকাল ১০ টা
রাফি বসে আছে NSA এর হেডকোয়ার্টারের ওয়েটিং রুমে। সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আর ওর ল্যাপটপ। ছিমছাম একটা অফিস তবে মোটেই আর ১০ টা সরকারি অফিসের মত নয়।
একজন সুন্দরী ললনা এসিস্টেন্ট এসে দাড়ালো।
এসিস্টেন্ট – আপনি রাকিবুল ইসলাম?
রাফি – জ্বী, আমি।
এসিস্টেন্ট – ফলো মি প্লিজ।
রাফি এসিস্টেন্টের সাথে সাথে চলতে শুরু করলো। অফিসের বেশ কিছু আঁকাবাঁকা করিডোর পেরিয়ে একটি দরজার সামনে থামলো সেই এসিস্টেন্ট। দরজাটি কোড দিয়ে লক করা। এসিস্টেন্ট পাসওয়ার্ড দিয়ে দরজাটি ওপেন করে রাফিকে ভেতরে যেতে বললো।
এসিস্টেন্ট – আপনি এখানে ওয়েট করুন। ডাইরেক্ট স্যার কিছুক্ষনের ভেতর আপনার সাথে কথা বলবেন।
ভেতরে ঢুকলো রাফি, বেশ বড়সড় একটা রুম, কিন্তু আসবাবপত্র বলতে শুধু একটা টেবিল এবং দুইটা চেয়ার। রাফির কেমন যেন লাগলো , কিছু বলার জন্য পেছনে ঘুরতেই দেখে এসিস্টেন্ট রুম থেকে বের হয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
কিছুটা বিচলিত হলেও নিজেকে শান্ত রাখলো রাফি। দরজা সামনে রেখে চেয়ারে বসলো। রুমটা সাউন্ডপ্রুফ, সিলিং এ একটি ৩৬০° ক্যামেরা আর দুই দেয়ালে দুইটা সিসি ক্যামেরা বসানো। রুমের তিন দিকে দেয়াল থাকলেও একটা দিকে রিফ্লেক্টিং গ্লাস দেয়া। চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে রাফি। রিফ্লেক্টিং গ্লাসে আংগুল দিয়ে পরিক্ষা করে। নাহ রিফ্লেকশনে রাফির আংগুল এবং অরিজিনাল রাফির আংগুলের মাঝে কোন গ্যাপ নেই অর্থাৎ শুধুমাত্র সিসিটিভিতে নয়, নিশ্চয়ই কেউ গ্লাসের পেছন থেকেও সরাসরি রাফির উপর নজর রাখছে!!!
রাফি বুঝতে পারলো এটা তার জন্য একটা এক্সাম হল হতে চলেছে। মনে মনে আল্লাহর নাম জপতে জপতে চুপচাপ আবার চেয়ারে বসে পড়লো রাফি। ১০ মিনিট হয়ে গেলো কিন্তু কেউ রুমে এলো না আর এদিকে রাফির প্রেশার হাই হতেই থাকলো।
হঠাৎ রাফি টের পেলো কেউ একজন দরজা খুলছেন। দুইজন লোক রুমে আসল। ইয়াং, স্যুটেড বুটেড। রুমে ঢুকেই তারা রুমটা ভালোভাবে একনজর বুলিয়ে দরজার দুইপাশে দাড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষণের মধ্যেইই তৃতীয় ব্যক্তির আগমন ঘটলো। চেহারার গাম্ভীর্য আর রাশভারী ভাবই বলে দিচ্ছে ইনিই হবেন দেশের এতবড় প্রতিষ্ঠানেন প্রধান।
রাফি দাড়িয়ে গেলো।
আপনি রাকিবুল ইসলাম? ভারী গলায় রাশভারী লোকটার চেয়ারে বসতে বসতে প্রশ্ন করে।
রাফি – জ্বী আমিই রাকিবুল ইসলাম।
ডাইরেক্ট – আমার পরিচয়টা পরে দিচ্ছি। তার আগে এটা বলো তুমি নাকি নিজেকে মাফিয়া বয় দাবী করো, The Mafia Boy! ?
রাফি – স্যার ওটা আমার সাইবার নেম। মাফিয়া বয় নামে সাইবার জগতের সবাই আমাকে চেনে। তবে বাস্তব জীবনে মাফিয়া বয়কে কেউ চেনে না।
ডাইরেক্টর – I see. তোমার বয়সের সাথে তোমার সুনামটা একটু বেশীই অসামঞ্জস্যপূর্ন, যাইহোক (বলে রাফির সামনে একটা ফাইল রাখলো।) ফাইলটা পড়ো।
রাফি ফাইলটা তুলে নিয়ে খুলে দেখা শুরু করলো। একটি ওয়েবসাইটের নাম, কিছু ইমেইল আইডি। সাথে কিছু মানুষের ডিটেইলস।
ডাইরেক্টর- এটা একটি জঙ্গীবাদী সংগঠনের ওয়েবসাইট যার মাধ্যমে তারা দেশের যুব সমাজের কাছে ভুল তথ্য প্রচার করছে। আমাদের কাছে কিছু ইমেইল আইডিও রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে তারা দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীদের হুমকি প্রদান করেছে। আর সাথে কিছু সম্ভাব্য জঙ্গিদের ডিটেইলস। আমি চাই তুমি সিক্রেটলী এই ওয়েবসাইটটি হ্যাক করো এবং এর মূল হোতাদের খুজে বের করো। পাশাপাশি ইমেইল আইডিগুলোর ডিটেলস আমার চাই। তোমাকে সব ধরনের রিসোর্স দেয়া হবে। তোমার হাতে ৬ ঘন্টা সময়। দেখি মাফিয়া বয় তার রেপুটেশন ধরে রাখতে পারে কিনা।
রাফি কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলো। তবে এই রুমের পরিবেশ দেখে এমন চ্যালেন্জের অপেক্ষাই করছিলো রাফি।
রাফি – দেশের জন্য কিছু করতে পারলে আমিও নিজেকে কৃতজ্ঞ মনে করবো।
ডাইরেক্টর – Okay then, your clock is already ticking. Now you have less then 6 hours. (বলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন এবং বাকী দুইজনকে দেখিয়ে) এরা তোমার প্রয়োজনীয় রিসোর্স তোমাকে সর্বরাহ করবে। You name it, they will bring it. ৬ ঘন্টা পর দেখা হচ্ছে। (বলে হুমহাম করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো)
ডাইরেক্টরে সাথেই উঠে দাড়ালো রাফি। হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছিলো ডাইরেক্টরের দিকে কিন্তু সেদিকে খেয়াল না করেই চলে যায়।
নিজের ঘড়ির টাইমারে সময় সেট করে নিলো রাফি, ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট। রাফি জানে না কেমন ফায়ারওয়্যাল বা কোন লেভেলের সিকিউরিটি প্রোটেকশন দেয়া থাকতে পারে ওয়েবসাইটটিতে কিন্তু তারপরও সে নিজেকে চ্যালেঞ্জ জানায় ৬ ঘন্টার অপারেশন ২.৩০ ঘন্টায় সফল করতে হবে।
ব্যাগ থেকে ল্যাপটপটা বের করলো রাফি। মনে মনে মাফিয়া গার্লের উপর রাগের বৃষ্টি ঝরাতে ঝরাতে অফিসারদের বললো আমার ফাষ্টেষ্ঠ ল্যান কানেকশন চাই সাথে ডাটা সার্ভার একসেসও।
একজন রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, অন্যজন টেবিলের পাশের দেয়াল থেকে একটা ল্যান কানেকশন টেনে রাফির হাতে দিলো।
রাফি নিজের কাজ নিজের মত গুছিয়ে নিতে পচ্ছন্দ করে, তাই সে তার ব্যবহার করা নেটওয়ার্ককে মডিফাই করে মাল্টিপল একসেস নেটওয়ার্ক বানিয়ে নিলো অর্থাৎ রাফি এই একটা কানেকশন এবং সার্ভার একসেস দিয়ে একই সাথে ৭ টা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবে এবং প্রতি ৩ সেকেন্ড অন্তর রাফির আইপি এড্রেস জাম্প করতে করতে মোটামুটি সারা পৃথিবী ভ্রমন করে ফেলবে যাতে কেউ যদি বুঝতেও পারে যে ওয়েবসাইট হ্যাক হচ্ছে তবুও যেন মাফিয়া বয় কে ট্রেস করতে না পারে
দুইজন পর্যবেক্ষক গ্লাসের ওপাস থেকে রাফির কাজকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
পর্যবেক্ষক ১- কিরে? কি মনে হয়? এই পুঁচকে ছেলে কি পারবে? ডাইরেক্ট স্যারও বেছে বেছে সবচেয়ে ট্রেন্ডিং আর টাফ কেসটা দিলো ছেলেটাকে।
পর্যবেক্ষক ২- যদি এই ছেলেটাই সত্যিকারের মাফিয়া বয় হয়ে থাকে তাহলে এই কেস ওর কাছে দুধভাত।
পর্যবেক্ষক ১- তাহলে হয়ে যাক বাজী। ১০০০ টাকা। এই ছেলে পারবে না। আমাদের সাইবার ডিভিশনের সকল টিম প্রায় সপ্তাহখানেক লেগে আছে এই কেসটাতে যার প্রোগ্রেস ০ এর আশেপাশেই হবে। আর একটা ছেলে একটা ল্যাপটপ দিয়ে ৬ ঘন্টায় হ্যাক করবে ওই ওয়েবসাইট। impossible.
পর্যবেক্ষক ২- (ছেলেটার কীবোর্ডের ক্ষীপ্রতা দেখে একটা সুপ্ত বিশ্বাস জন্মালো। সাবলীলভাবে চালিয়ে যাচ্ছে তার ১০ আংগুল ওই কীবোর্ডে) যাহ বাজী। যদি কেউ পারে তো এই ছেলেই পারবে।
এসি রুমে বসে কীবোর্ডের উপর ঝড় তুলেছে রাফি। একের পর এক সিকিউরিটি এনক্রিপশন টপকে চলেছে ওয়েবসাইটটির। চেষ্টা করছে যেন ওয়েবসাইট ডেভলপার বা সিকিউরিটি ইন্জিনিয়ারদের এলার্ট না করে কাজটি সেরে ফেলতে।
৩০ মিনিট পার হয়ে গেছে, এসি রুমে বসেও কপালে কয়েকফোটা ঘাম জমিয়ে ফেলেছে রাফি। স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশীই উত্তেজিত রাফি। দেশের জন্য কিছু করার সুযোগ পেয়েছে আজ সে, তাও আবার দেশের সবচেয়ে বড় ন্যাশন্যাল সিকিউরিটি এজেন্সি হয়ে। উত্তেজনায় কাঁপছে রাফি।
নাহ, হচ্ছে না। তাঁলগাছের আড়াইহাত বলে যে প্রবাদবাক্য আছে তার প্র্যাকটিস একজাম্পল এখন রাফির চোখের সামনে। কোনভাবেই শেষ ফায়ারওয়ালটা টপকাতে পারছে না রাফি।
কিছুক্ষণের জন্য থামলো রাফি। চোখটা বন্ধ করে ভাবলো, মাফিয়া গার্ল যদি ২.৩০ ঘন্টার ভেতর আননোন সার্ভার খুজে বের করে ক্লাসিফাইড ইনফরমেশন ফেরত আনতে পারে তাহলে মাফিয়া বয় কেন পারবে না এই সামান্য ওয়েবসাইট হ্যাক করতে।
আবারো কীবোর্ডের উপর হাত রাখলো রাফী। মাফিয়া বয় এর রেপুটেশন নয় বরং দেশের জন্য হলেও এই মিশন রাফিকে সাকসেসফুল করতেই হবে।
আবারও ঝড় উঠলো কীবোর্ডে। নাহ আর কোন বাধাই মানবে না রাফি। জটিল বাইনারি এনক্রিপশন ক্রাক করে শেষ ফায়ারওয়্যালটাও টপকে যায় রাফি। সামনে চলে আসে ডেভলপার, এডমিন, অর্থর সহ ওয়েবসাইটের সাথে সম্পৃক্ত সকলের আইপি এড্রেস ও একসেস কোড।
লম্বা একটা স্বস্তির শ্বাস নেয় রাফি। স্টপওয়াচের দিকে তাকিয়ে দেখে ৪৯ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড। বাহ, নিজের টাইমিং দেখে নিজেই ইমপ্রেস হলো রাফি।
সব ডেটা ডাউনলোড করা শুরু করলো রাফি, আর অফিসারদের বললো যেন ডাইরেক্টর স্যারকে খবর দেয়া হয়, কাজ হয়ে গেছে।
অফিসারদের বডি ল্যাংগুয়েজ বলে না যে তারা অবাক হয়েছে কিন্তু তাদের চোখগুলো ছিলো দেখার মত।
অফিসার ১- Job done! You must be joking.
রাফি মুচকী হেসে নিজের ল্যাপটপটা ঘুরিয়ে দিলো অফিসারদের দিকে। দুইজনই খানিকটা ঝুকে পড়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে দেখলো কম্পিউটারের মনিটর। ঝোকা অবস্থায় চোখাচোখি হলো রাফির সাথে। রাফি বুঝতে পারলো দুইজনের চোখেই রাজ্যের বিষ্ময়। একজন অফিসার ছুটে বাইরে চলে গেল। অন্যজন কপাল কুচকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো তার নিজের জায়গায়।
অন্যদিকে ডাইরেক্টরের অফিসরুমে
অফিসার ১- Sir that kid has done it!! (বিস্ময় আর উত্তেজনা নিয়ে বললো)
ডাইরেক্টর – What! Impossible! ( রাজ্যের বিস্ময় কপালে গুজে জবাব দিলেন) এখনো ১ ঘন্টা ও হয় নি ( হাতঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে)। Are you sure officer?
অফিসার ১- Absolutely, sir.
Director – lets check that out, shall we? (চেয়ার থেকে উঠে স্যুটের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললেন)
একপ্রকার ছুটতে ছুটতে রুমে ঢুকলেন ডাইরেক্টর, ততক্ষণে রাফি প্রায় শেষ করে ফেলেছে ইমেইল আইডিগুলোর এক্সেস এর কাজ। ডাইরেক্টর টেবিলের উপর দুই হাতে ঝুকে বলে ওঠে
ডাইরেক্টর – Show me. ( এক্সাইটমেন্ট নিয়ে)
রাফি আবারো ল্যাপটপটি ঘুরিয়ে দেয় ডাইরেক্টরের দিকে। কিছুক্ষন ঘেঁটেঘুটে চোখ চকচক করে উঠলো ডাইরেক্টরের। টেবিলের উপর দুইহাত চাপড়ে সজোরে বলে উঠলেন YES, Yes, yes।।।।
Well Done, MAFIA BOY, well done. তোমার মত চৌকস তরুনদের জন্যই হয়তো আজও দেশের মাটি সুরক্ষিত। গর্ব আর উল্লাসভরা চোখে নিয়ে রাফির কাধে হাত রেখে বললেন ডাইরেক্টর। নিজেই হাত বাড়িয়ে দিলেন রাফির দিকে, My name is Brigadiar Ezaz Mamun, Director of NSA.
রাফীর বুকটা ভরে গেলো সম্মান আর উৎসাহে। হাতটা বাড়িয়ে কর্মর্দন করলো NSA এর সর্বোচ্চ কর্মকর্তার সাথে।
ডাইরেক্টর – Welcome to the Agency, Rafiul Islam aka Mafia boy.
রাফি – Thank you, Sir (আনন্দে আর উৎসাহে জবাব দিলো)
নিজের আত্ববিশ্বাস ফিরে পেলো রাফি। হতে পারে মাফিয়া গার্লের সাফল্যর কারনে NSA ওকে চাকরী অফার করেছে কিন্তু রাফি নিজের যোগ্যতার যথাযথ প্রমান দিয়েই এজেন্সিতে নিজের জায়গা করে নিয়েছে।
নিজের যোগ্যতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলার জন্য মাফিয়া গার্লের উপর বিরক্ত হলেও নিজের আত্ববিশ্বাস ফিরে আসায় আজ একটু বেশীই খুশি রাফি।
ডাইরেক্টর – তোমারকে কি বলে ডাকবো?
রাফি – আমার ডাকনাম রাফি। আপনি আমাকে রাফি বলেই ডাকতে পারেন।
Ok young man. If you finished here, meet me at my office. We have some topics to discuss with. বলেই হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন ডাইরেক্টর স্যার।
এদিকে প্রথম পর্যবেক্ষক তার ধরা বাজীকে নিছক ইয়ার্কি বলে চালিয়ে দিতে চাইলেও তার সহকর্মী বাজীর টাকা আদায় করার ব্যপারে তুলকালাম করার জন্য তৈরী।
রাফি মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো তার কর্মজীবনের সর্বপ্রথম চ্যালেঞ্জ ভালোভাবে পার করতে পারার জন্য। ইয়া আল্লাহ, এমনি ভাবে জীবনের সমস্ত বাধা বিপত্তিগুলো যেন এভাবেই দূর করতে পারি সেই তৈফিক দান করুন, আমিন।
সাইবার টিমের কাছে ওয়েবসাইট ও ইমেইল আইডির একসেস তুলে দিয়ে রাফি রওনা দেয়ে সেই দুই অফিসারের পেছন পেছন ডাইরেক্টর স্যারের অফিসের দিকে, নতুন কোন চ্যালেঞ্জ গ্রহন করতে।
চলবে??? নাকি থেমে যাবো???