হ্যাকারের_লুকোচুরি পর্ব-১৩

0
1330

হ্যাকারের_লুকোচুরি পর্ব-১৩

লেখা- sharix dhrubo

যেখানে সারা দুনিয়া জানতেছে ডাইরেক্টর স্যারের মৃত্যু এক্সিডেন্টের কারনে ঘটেছে সেখানে হয়তো রাফিই একমাত্র ব্যক্তি যে আন্দাজ করতে পারছে এটা একটা ঠান্ডা মাথার খুন ও হতে পারে। রাফি সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, কি করা যেতে পারে! প্রধানমন্ত্রীকে জানানো উচিৎ? প্রোটেকশনের জন্য! নাহ তাহলে কোন না কোন দূর্নীতিবাজ ঠিকই জেনে যাবে রাফির লোকেশন। যদি তাদের উদ্দেশ্য থাকে রাফিকে মারার তাহলে কাজটা সহজ করে দেয়া হবে। বিয়ে বাড়ি, ঘর ভর্তি মানুষজন।
রাফির চোখ চকচক করে উঠলো, এটাইই হয়তো কারন রাফির উপর কোন হামলা বা হুমকি না হওয়ার। কারন যতই স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাই হোক না কেন NSA, মন্ত্রনালয়ের সাথে কোওর্ডিনেশন করেই কাজ করতে হয় আর তাই যদি হয় তো রাফির ঠিকানা বের করা কোন ব্যাপারই না। হয়তো দুষ্কৃতিকারীরা দূর থেকে বাড়ির উপর নজর রাখছে, অনেক বেশী লোকজন বলে হয়তো সামনে এগোচ্ছে না। রাফি নিজেকে চেষ্টা করলো শান্ত করার। কিন্তু পরিস্থিতি কোনভাবেই রাফিকে শান্ত থাকতে দিচ্ছে না।
এমন সময় রাফি তার কাধে একটা হাতের স্পর্শ অনুভব করলো। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে তোহা দাড়িয়ে আছে।
তোহা রাফির সামনে এসে মেঝেতে হাটু গেড়ে বসলো। রাফির বিচলিত চোখদুটোতে চোখ মেলালো তোহা। সংকোচ নিয়ে হলেও রাফির দুই হাত চেপে ধরলো। তোহা অনুভব করতে পারলো রাফি কাঁপছে। তোহা শক্ত করে চেপে ধরলো রাফির হাত। এতক্ষণ পর রাফির নজরে এলো তোহার মুখখানা। শান্ত পুকুরের জলের মত চোখদুটো, যেন দুইকাপ দুধের ভেতর দুইফোটা কফি। এই মেয়েটাকে দেখলে রাফির মাথা খালি হয়ে যায়, একের পর এক উপমা তৈরী হতে থাকে মগজে। কিছুক্ষণ আগেও রাজ্যের চিন্তায় ডুবে ছিলো রাফি। কিন্তু তোহাকে দেখে সব চিন্তাগুলো যেন উধাও হয়ে গেলো।
তোহা – আজ সকালে এই রুম থেকে বের হওয়ার সময় তোমার চোখে যে উচ্ছলতা আর আনন্দভাব দেখেছিলাম খাবার টেবিলে পৌছাতে পৌছাতে তা উবে গেছে। এখন এই সংবাদ দেখে তোমাকে আরো বেশী বিচলিত লাগছে। কে এই ভদ্রলোক?
রাফির মগজ জমে গেছে পুরোটা। সে জানে তার ট্রু আইডেন্টিটি এক্সপোজ করা যাবে না কিন্তু তোহার দৃষ্টি আর শক্ত করে ধরা হাতটিতে কেমন যেন ভরসা খুজে পেলো রাফি।
রাফি – টিভিতে যার একসিডেন্টের কথা প্রচার হচ্ছে তিনি আমার রিপোর্টিং বস এবং NSA এর ডাইরেক্টর ব্রিগেডিয়ার এজাজ মামুন। আমি তার আন্ডারেই কাজ করি। রিসেন্টলী সরকারি রিজার্ভ চুরির একটা বড় লীড পেয়েছিলাম যেখানে অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যোগসাজশ পাওয়া গিয়েছে। বিয়ের জন্য বাড়িতে আসার আগের দিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে ব্রিফিং ও করে এসেছি কিন্তু এখনো কেস বা চার্জশিট কিছুই করা হয় নি, এমনকি ইভিডেন্স ও প্রাইমারি পর্যায় কালেক্ট করা হয়েছে। এই ম্যাটারটি আমি এবং ডাইরেক্টর স্যার মিলে হ্যান্ডেল করতেছিলাম। বিয়ের জন্য চলে আসায় আমার কাছে থাকা ইভিডেন্স আর ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট ডাইরেক্টর স্যারের কাছে দিয়ে এসেছিলাম।
তোহা – তাহলে তোমার ICT ডিভিশনে জব……!!!
রাফি – কাভারআপ। আন্ডারকভার হলে ২ য় আইডেন্টিটি থাকেই পারে।
তোহা – খুলে বলো আজ সকালে কি হয়েছে।
রাফি – তুমি খাবার জন্য ডাক দেয়ার পর আমার কাছে ডাইরেক্টর স্যারের ফোন আসে। কে বা কারা যেন তাকে হুমকি দিচ্ছিলো। এমনকি স্যারের ছেলেকে আধমরা করে পিটিয়ে শাসিয়েছে দুস্কৃতকারীরা।
তোহা – বলছো কি!!! তার মানে স্যারের এক্সিডেন্টের কিছুক্ষণ আগেও তোমার সাথে কথা বলেছেন! !
রাফি হ্যাঁ সূচক মাথা দোলায়।
রাফি – মৃত্যুর আগমুহূর্তেও স্যার আমাকে সাবধান হতে বলেছেন আর অর্ডার করেছেন যেন আমি পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যাই। অথচো স্যার নিজেই এক্সিডেন্টে জীবন দিয়ে দিলেন।
রাফির চোখ দিয়ে দুইফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে তোহার হাতের উপর। তোহার বুকের ভেতর মোচড় দেয়, যেন কলিজাটা ধরে কেউ টান দিয়েছে। তোহা আর সহ্য করতে পারে না। সব লজ্জা ভূলে রাফির মাথাটা বুকের মাঝে চেপে ধরলো তোহা। যেন দুনিয়ার সব বিপদ থেকে আগলে রাখতে চায় সে তার ভালোবাসাকে। রাফিও তোহাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে ওঠে।
কিছুক্ষন পর যখন রাফি আবেগ থেকে বাস্তবতায় ফিরলো তখন নিজেকে তোহার বুকে আবিস্কার করে মারাত্বক লজ্জা পেলো। ছাড়া পেতে চাইলো কিন্তু তোহা রাফিকে বুকেই জড়িয়ে রাখলো।
তোহা – তোমার কিচ্ছু হবে না। আমি এসে গেছি তো। তোমার কিচ্ছু হতে দিব না আমি।
বলে বুক থেকে আলগা করে চোখ মুছিয়ে দিতে চাইলো, তখন রাফির সাথে চখাচখিতে তোহা মাত্র ঘটে যাওয়া ঘটনার আন্দাজ পেলো। আবেগের বশে জড়িয়ে ধরেছিলো সে রাফি কে, কিন্তু রাফিকে কান্না ভূলে লজ্জা পেতে দেখে নিজেও ভয়ংকর লজ্জায় পড়ে গেলো। মনে মনে জিহ্বায় কামড় বসালো তোহা, ইসসসসস কি লজ্জা কি লজ্জা। হুট করে দুজন দুজনকে ছেড়ে স্বাভাবিক হওয়ার বৃথা চেষ্টা করলো।
তোহা – (লজ্জায় নিজের শাড়ীর আঁচলে কুচি দিতে দিতে) তো এখন কি করবে ভাবছো?
রাফি ততক্ষণে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক হয়ে কথা বলতে চাইলো কিন্তু ঘটে যাওয়া ঘটনার আকষ্মিকতায় গলা থেকে আওয়াজ বের হতে চাইলো না।
রাফি – (ইতস্তত করতে করতে) ইয়ে মানে কি করতে হবে, ও হ্যাঁ আমার (তোহার চোখের দিকে একপলক তাকিয়েই আবার চোখ সরিয়ে নিয়ে) কি যেন? ওহ হুমকি। (সব কথা জড়িয়ে যেতে থাকলো)
তোহা আবারো রাফির হাতদুটো শক্ত করে ধরে চোখের দিকে তাকালো।
তোহা – বলো কি করতে হবে?
রাফি – (তোহার চোখের দিকে তাকিয়ে শান্তভাবে) আমাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হবে। বাবা মা কে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে। আমার মনে হয় দুষ্কৃতিকারীরা আমাদের বাড়ির উপর নজর রাখছে। বিয়ে বাড়ি বলে অনেক লোকের আনাগোনা তাই হয়তো কিছু করার সাহস পাচ্ছে না।
তোহা – তাহলে এই বিয়েবাড়িটাই আমাদের এডভান্টেজ এবং ডিজএডভান্টেজ ও।
রাফি কপাল কুঁচকে দেখতে থাকলো তোহাকে।
তোহা – (অন্যদিকে চোখ রেখে) যদি অপরাধীরে এতটাই ক্ষমতাশালী হয়ে থাকে তো পুরো বাড়ি ধরে গুঁড়িয়ে দিয়ে এক্সিডেন্ট বলে চালিয়ে দেবে।
রাফি ভেবে দেখলো তোহার কথায় যুক্তি আছে, নিজেদেরকে বাঁচাতে তারা এতগুলো জীবন শেষ করে দিতেও পিছপা হবে না।
তোহা – অন্যদিকে আজ আমাদের বৌভাত। কিছুক্ষণের ভেতর সবাই তৈরী হয়ে কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যাবে। আমাদেরকে ও একই সাথে বের হয়ে যেতে হবে। তবে কোনরকম এলার্ট ছাড়াই।
রাফি – এলাকার মোটামুটি সবাইকে আমার বাবা চেনে। তাকে দিয়ে কি একটু ঘরের চারপাশটা দেখানো ঠিক হবে? যে নতুন কোন চেহারা দেখা যাচ্ছে কি না বাড়ির আসেপাশে?
তোহা – (কিছুটা অবাক হয়ে) তুমি কি আব্বুকে সব জানাতে চাচ্ছো? সেটা কি ঠিক হবে?
রাফি – আজ আমাদের বৌভাত। আর আজ যদি আমি অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হই তাহলে তার মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে। তাকে কিছু না কিছু ত জানাতেই হবে।
তোহা – তাহলে প্লান কি?
রাফি তোহার চোখের দিকে তাকায়। তোহাকে যতই দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে রাফি। মেয়েটার সবধরনের সিচুয়েশনের সাথে মানিয়ে নেয়া এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। যখন যেখানে যেমন দরকার তখন সেখানে তেমনই।
রাফি – বাবাকে ডাক দাও? কথা বলি।
তোহা চলে গেল বাবাকে খুঁজে আনতে। রাফি ততক্ষণে ভাবতে লাগলো কিভাবে কি করবে সে।
কিছুক্ষণের ভেতর লোকজন ছেড়ে ভেতরে ঢুকলেন রাফির বাবা। চোখদুটোতে ব্যস্ততা কাজ করছে, আজ ছেলের বৌভাত। পরিবারের সবাইকে স্বসম্মানে আদর আপ্যায়নে যেন কোন ত্রুটি না হয় সেই দিকে তার কড়া নজর। এমনই ব্যস্ততার ভেতর আলাদাভাবে কথা বলতে চাওয়ার জন্য তিনি কিছুটা বিরক্তই বৈকি।
বাবা – (ব্যস্ততা এবং বিরক্তি নিয়ে) কি ব্যপার রাফি? এখনো রেডি হোস নি? কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে? কখন রেডি হবি কখন সেন্টারে যাবি।
সেইমুহূর্তে তোহা রুমে আসে। রাফি তোহাকে ইশারা করে দরজা চাপিয়ে আসতে। রাফির ইশারা দেখে পেছনে তোহার দিকে তাকান রাফির বাবা। এতক্ষন পর দুইজনের চেহারার ভেতর কালো ভাব তার চোখে স্পষ্ট ফুটে ওঠে। তিনি ভাবতে শুরু করলেন হয়তো দুইজনের বনিবনা নিয়ে কিছু হয়েছে।
বাবা – (কৌতুহল নিয়ে) কি ব্যপার মা, তুমি এখনো পার্লারে যাও নি! (গম্ভীরভাবে) কি ব্যপার রাফি! আমার আম্মাজানের মুড অফ কেন? কি হয়েছে?
রাফি তার বাবার হাত ধরে সোফায় নিয়ে বসালো। রাফির বাবা কিছুটা আঁচ করতে পারলেন যে সমস্যা গুরুতর। গতকাল বিয়ে হয়ে পারলো না আর আজ সমস্যা বাধিয়ে নিলো। তোহা বাবার পাশে গিয়ে দাড়ালো। রাফি বাবার সামনে বসে বাবার হাতটা ধরলো। রাফির বাবা এবার পুরোপুরি নিশ্চিত যে বিশাল বড় গন্ডগোল পাকিয়েছে তার ছেলে।
বাবা – (গম্ভীর ও কৌতুহল) দেখ রাফি গতকাল তোদের দুইজনের বিয়ে হয়ে গেছে। মানিস আর না মানিস তোহাই এখন তোর স্ত্রী। এমন কিছু করিস না যেন আমার মান সম্মান ধুলোয় মিশে যায়।
রাফি এবং তোহা দুজন দুজনের দিকে তাকাতে থাকে। তোহা বুঝতে পারলো বাবা হয়তো আঁচ করার চেষ্টা করতেছে সমস্যাটি কিন্তু নীরবতার কারনে বাবার গেসিং গুলো এলোমেলো হয়ে গেছে।
তোহা – (হাসি হাসি মুখ নিয়ে) বাবা, তোমার ছেলেকে তোমার বাড়ি পর্যন্ত এসে বিয়ে করেছি, তোমার ছেলের কথা বলতে পারবো না কিন্তু আমি তো তোমাদের ছেড়ে কোথ্থাও যাবো না।
বলেই বাবার গলা জড়িয়ে ধরলো তোহা, রাফি কিছুটা ইতস্তত হয়ে বলতে লাগলো,
রাফি – তো আমি কখন বললাম আমার এই বিয়ে নিয়ে সমস্যা আছে! বিয়ের আগে তো নিজের হবু বৌ কে পর্যন্ত ………
এতটুকু বলার পর তোহা দাঁত কামড়ে ইশারা দেয় এই প্রসংগে কথা না বলতে। রাফির কথা থামাতে দেখে রাফির বাবার কপাল কুচকে গেলো।
বাবা – কি বলতে চাস রাফি সোজাসুজি বল।
রাফি – বাবা, এই বিয়েতে আমার পূর্ন মত ছিল সবসময়ই আর বিয়ের পর সেই বিশ্বাস আরো জোরালো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই বিয়ে নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই।
বাবা – তাহলে সমস্যা কিসে? কিছুক্ষণ পর বৌভাত আর এখনো তোরা ঘরে বসে কি করছিস?
রাফি – বাবা, অফিসের একটা বড় সমস্যা হয়তো আমাদের ঘর পর্যন্ত চলে এসেছে। ( টিভি চালিয়ে ব্রেকিং নিউজ দেখিয়ে) এই ভদ্রলোকের সাথে মিলে দেশের কিছু দুর্নীতিবাজ লোকদের করা কাজের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করতেছিলাম। বিয়ের কারনে আমি ছুটি নিয়ে চলে আসায় স্যার একাই কাজটা দেখছিলেন, কজ সকালে তিনি আমাকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য বলেছেন আর হয়তো তার কিছুক্ষণ পর তার এক্সিডেন্ট হয়, তবে আমি শিওর যে এটা এক্সিডেন্ট না, বরং ঠান্ডা মাথার খুন।
বাবা – (অবাক হয়ে) বলিস কি রে? এ তো সাংঘাতিক ঘটনা!
রাফি – যেহেতু ইনভেস্টিগেশন আমরা দুইজন পরিচালনা করতেছিলাম তাই স্যারের পর আমার উপর হামলা হবার চান্স আছে! হয়তো খুনিরা বাড়ির আশপাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করছে। হয়তো অতিরিক্ত জনসমাগমের জন্য অপেক্ষা করছে সুযোগের।
বাবা – (চিন্তিত) আচ্ছা, বুঝলাম। এখন কি করতে চাচ্ছিস?
রাফি – পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিরাপদ জায়গায় সরে পড়তে হবে। জনসমাগম থাকতে থাকতে। আপাতত এটাই প্লান।
বাবা – (কিছুক্ষণ ভেবে) হুমম, আমার এক বন্ধু থাকে দেশের বাইরে, তাদের একটা ফ্লাট আছে কাছাকাছিই, চাবি আমার কাছে দিয়ে গেছে মাঝে মাঝে গিয়ে দেখে আসার জন্য। ওখানে কেউ আমাদের আশা করবে না।
রাফি – (চট করে তুড়ি দিয়ে) তাহলে এখনই বের হয়ে যেতে হবে। তার আগে বাবা, তুমি মা কে বুঝিয়ে বের করে নাও। ফ্ল্যাটের ঠিকানাটা আমাকে লিখে দাও, আমি তোমাদের সাথে ওখানেই মিট করবো। তোহা তুমি মা বাবার সাথে চলে যাও। কাপড়চোপড় গুছিয়ে একটা ব্যাগে ভরে রেখে যাও, আমি সুযোগ বুঝে সেটা পিকআপ করে ফ্লাটে নিয়ে যাবো। আর হ্যাঁ, তোমরা তিনজনই বোরখা পরে বাসা থেকে বের হবে। আমরা জানি না তারা সবাইকে চেনে কি না। রিক্স নেয়া যাবে না।
রাফির বাবা ছেলের সব প্লান বুঝলেন কিন্তু ঘরভর্তি লোকজন আর বৌভাতের আয়জন নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলেন।
বাবা – রাফি, শোন বাবা? বৌভাতের সবকিছুই তো রেডি তাই না ? এত মানুষজন দূর থেকে এসেছে, তারা মনক্ষুন্ন হয়ে চলে গেলে ব্যপারটা মোটেই ভালো দেখাবে। আমি বলি কি, তাদেরকে সোজা কমিউনিটি সেন্টারে চলে যেতে বলে আমরা বেরিয়ে পড়ি। ওখানে সব ব্যবস্থা করাই আছে।
রাফি – যেটা ভালো মনে হয় করো বাবা তবে সময় হাতে নেই একদমই। আর হ্যাঁ কাউকে ফোন করতে যেও না বা সাথেও নিও না , ফোন ট্যাপ হতে পারে।
বাবা – হ্যাঁ হ্যাঁ জানি জানি, দুই এক পর্ব CID সিরিয়াল আমিও দেখি।
বলে বাবা রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। তোহার দিকে তাকিয়ে মনটা কেমন হয়ে গেল। আজ বৌভাতের অনুষ্ঠান হবার কথা অথচো মেয়েটাকে নিয়ে পালানোর প্লান করতে হচ্ছে রাফিকে। রাফি কিছু বলতে যাবে তখনই তোহা বলা শুরু করে,
তোহা – জানো রাফি, আমার কিন্তু ছোটবেলা থেকেই শখ ছিলো পালিয়ে বিয়ে করার। সেই সুযোগ তো আর হলো না, কিন্তু বিয়ের পর পালাতে পারবো ভেবে আমার কিন্তু দারুণ লাগছে।
রাফি তোহার চোখেমুখে এডভেঞ্চার ভাব দেখতে পেল। তোহার এই ফ্লেক্সিবিলিটির জন্য রাফির নিজেকে হালকা লাগলো।
রাফি – হয়েছে হয়েছে, জলদি জামাকাপড় গুছিয়ে একটা ব্যাগে ভরে নাও। ওগুলো পরে নেয়ার ব্যবস্থা করবো আমি।
তোহা – আমার ব্যাগ গোছানই আছে। এখনো কিছুই বার করি নি।
এরই মধ্যে বাবা দুটো বোরখা দিয়ে গেলেন রুমে এসে, তোহাকে চটপট বোরখা পরে বাবা মায়ের সাথে বের হয়ে যেতে বলে নিজেও বোরখা পরে রেডি হয়ে নিলাম। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে বাবা বোরখা পরে একটা চক্কর দিলেন বাড়ির আশেপাশে। ফিরে এসে বললেন ২-৫ জন নয়, প্রায় ১০-১২ জন অপরিচিত মানুষ আমাদের বাড়ির উপর নজর রাখছেন। বাবা ভেতরে এসে কয়েক প্যাকেট মিষ্টি ধরিয়ে দে কয়েকজন কাজিন কে যেন তারা বাইরে মিষ্টি বিলিয়ে আসে। কাজিনগুলো মিষ্টি বিলাতে শুরু করলে বাড়ির সামনে একটা মাঝারি সাইজের জটলা পাকিয়ে যায়, সেই সুযোগে বাবা মা আর তোহা বের হয়ে গেল বাবার বন্ধুর ফ্লাটের উদ্দেশ্যে আর আমি রওনা দিলাম ডিরেক্টর স্যারের দেয়া ঠিকানার উদ্দেশ্যে।
ঠিকানা অনুযায়ী বাড়িতে পৌছে যায় রাফি। বেশ বড়সড় বিল্ডিং। ফ্ল্যাটটি বিল্ডিংএর ৮ তলায়। ফ্ল্যাটটির দরজার সামনে গিয়ে নক করলো রাফি। কোন সাড়া শব্দ নাই। হয়তো কেউ ই নাই ফ্ল্যাটে। এখন ভেতরে ঢুকবে কিভাবে রাফি! কিছুক্ষণ মাথা চুলকিয়ে মেঝেতে থাকা জিনিসপত্র উল্টে দেখতে লাগলো রাফি। অবশেষে পাপোশের নীচে চাবি পেলো রাফি। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে লাইইট জ্বালালো রাফি। ছিমছাম পরিপাটি ড্রয়িংরুম।
ভেতরে গিয়ে সব রুম ঘুরে দেখতে লাগলো রাফি আর ভাবতে থাকে স্যার কেন তাকে এখানে আসতে বলেছে? এসব সাতপাচ ভাবতে ভাবতে শেষ রুমের দরজা খোলে রাফি। রুমের ভেতরটা দেখে রাফির চোখ কপালে উঠে যায়। ছোটখাটো একটা সার্ভার রুম। বেশ কিছু কম্পিউটার আর ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ভরপুর রুমটা। রাফি কম্পিউটারে বসে পড়ে। বেশ অবাক হয়। ডাইরেক্টর স্যার তার সকল কেস রিলেটেড ডকুমেন্টসের একটা অফলাইন ব্যাকআপ তৈরী করে রেখেছেন এখানে। মোটামুটি সব কেসেরই আপডেট ইনফরমেশন আছে এখানে। রাফি বুঝলো যে ডাইরেক্টর স্যার আঁচ করেছিলেন যে এই কেসের ইভিডেন্স মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হবে, তাই চোখের সামনের সব ইভিডেন্স কেউ নষ্ট করে ফেললেও যেন একটা ব্যাকআপ রাফির হাতে থাকে তাই হয়তো এখানে আসতে বলেছেন। কিন্তু এখন রাফিকে ফিরতে হবে। বাবা মা আর তোহার কাছে।
এমন সময় রাফি দরজা খোলার আওয়াজ পেল, রাফি দ্রুত রুমের লাইট বন্ধ করে আড়ালে লুকিয়ে পড়লো। আড়াল থেকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলো কে এসেছে। আগন্তুকের মুখখানা দেখে রাফি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। রাফির টিমমেট সূর্য ফ্ল্যাটে ঢুকলো। সূর্য ফ্ল্যাটে ঢুকেই বুঝতে পারলো ফ্ল্যাটে অন্য কেউ ও এসেছে। তাই ব্যাগ থেকে ছোট্ট একটা পিস্তল হাতে তুলে নেয় সে আর অনুপ্রবেশকারীকে খুজতে থাকে। রাফি দূর্ঘটনা এড়াতে জোরে সূর্যের নাম ধরে ডাক দেয়,
রাফি – সূর্য? আমি রাফি।
বলে রাফি হাত উচু করে বের হয়ে আসে, কিন্তু সূর্য পিস্তলটা নামায় না। সূর্যকে দেখে কনফিউজড লাগছে রাফির।
রাফি – ডাইরেক্ট স্যার আমাকে এখানকার ঠিকানা দিয়েছেন।
তবুও সূর্য তার পিস্তলটা তাক করেই থাকে রাফির দিকে। রাফি কিছুতেই বুঝতে পারে না সূর্যকে বলার পরও কেন সূর্য অস্ত্র নামাচ্ছে না। অবশেষে সূর্য মুখ খুললো
সূর্য – পাসওয়ার্ড?
রাফি তো এবার মহা বিপাকে। স্যার তো মেসেজে কোন পাসওয়ার্ড দেন নি, তাহলে এখন কি হবে।
রাফি – সূর্য? আমি রাফি, চিনতে পারছো না!
সূর্য – I’ll count to 3 . What is the password?
রাফি – সূর্য আমাকে ডাইরেক্ট স্যার……
সূর্য – ১
রাফি – আমার কাছে কোন ……..
সূর্য – ২
রাফি – সূর্য! I’m your boss you ***……..
সূর্য – ৩
রাফি – wait wait wait, trust no one.
বলে রাফি হাত উচু রেখে চোখ বন্ধ করে কলেমা পড়া শুরু করে কারন এই ছাড়া আর কিছুই রাফির কাছে নেই। কিছুক্ষণ পরও যখন কোন গুলির আওয়াজ পেল না রাফি তখন একচোখ খুলে দেখতে লাগলো। ততক্ষণে সূর্য অস্ত্র নামিয়ে ফেলেছে।
সূর্য – you can relax now, sir. I’m not gonna kill you.
রাফি – কি হচ্ছিলো কি এটা।
সূর্য – আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত কিন্তু এই সেফ হাউজ সবার জন্য নয়। শুধুমাত্র ডাইরেক্টর স্যারের ট্রাষ্টেড এজেন্টদের জন্যই এই সেফ হাউজ। তাই পাসওয়ার্ড ছাড়া কেউই এখানে এলাউড না।
রাফি – আর তুমি?
সূর্য – আমি এই সেফ হাউজের keeper.
রাফি – স্যার আমাকে এখানে আসতে বলার কারন কি হতে পারে?
সূর্য – প্রথমত স্যার আপনাকে বিশ্বাস করেন, দ্বিতীয়ত হয়তো তিনি তার অসমাপ্ত কাজ আপনাকে দিয়ে সমাপ্ত করতে চান।
রাফি – আমার কিছু সাপোর্ট লাগবে, হেল্প করতে পারবে?
সূর্য – বলেই দেখুন না।
রাফি – আমি জানি না আমার ফোন ট্যাপ হচ্ছে কি না। can you check that out?
সূর্য – give me 5 minutes.
সূর্য তার ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেলো, আর রাফি আবার কম্পিউটার রুমে গিয়ে ফাইল ঘাটতে লাগলো ।
কিছুক্ষণ পর সূর্য রুমে ঢুকলো।
সূর্য – Your phone is not tapped. You can use your phone.
রাফি ফোন ওপেন করতেই ১ টা মেসেজ এলো। আননোন সোর্স থেকে
“Where the hell are you? Contract killers are looking for you”
কিছুক্ষণের মধ্যে আরো একটি এসএমএস পেলো রাফি,
“I made your phone and network secure. Nobody can tap your number or locate you through your phone. I’ll be in touch”
রাফির মনে প্রশ্ন জাগে , এই মাফিয়া গার্ল কেন এতো রাফিকে সাহায্য করে। কি চায় সে?
সূর্যর কাছ থেকে বিদায় নেয় রাফি। সন্ধ্যাও নেমে এসেছে। গন্তব্য এখন বাবার বন্ধুর বাড়ি। সবাই যে রাফির পথ চেয়ে বসে আছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে