হ্যাকারের লুকোচুরি পর্ব- ৬

1
1647

হ্যাকারের লুকোচুরি পর্ব- ৬

লেখা- sharix dhrubo

Present নামের ফোল্ডারটির একদম শেষে একটা ফোল্ডার পেলো রাফি। confidential নামের ফোল্ডারটির ভেতরে রাফি যা পেলো তা দেখার জন্য সে তৈরী ছিলো না, বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা ঘুরে যে টাকাগুলো এই জংগী সংস্থাকে চালানোর জন্য সর্বরাহ করা হত তা আসে এক সময়কার নামকরা উদ্বাস্তুশিবির থেকে যা বর্তমানে এক সুপারজায়ান্ট দেশ হিসেবে পরিচিত। হাজারো নথিপত্র রয়েছে এখানে যা এই ঘটনার সত্যতা যাচাই করে! যার ভেতর ব্যাংক ডকুমেন্টস, ফোন রেকর্ডিংস, মিশন ডিটেইলস, অস্ত্রের কন্ট্রাক্ট, সহ আরো অনেক টপ সিক্রেট ডাটা এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সরাসরি যোগসাজশ।
রাফি তার চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ভাবে এই কাজ মাফিয়া গার্ল ছাড়া আর কারো হতে পারে না। একটা ডিজিটাল নোটস এ চোখ আটকালো রাফির। ফাইলটা মাফিয়া বয় নামের। ওপেন করলো রাফি।
গত ৬ মাসে মাফিয়া গার্ল এই ওয়েবসাইটটার তথ্য ব্যবহার করে মুল হোতাদের হুমকী দিয়ে সাইবার হামলা চালায়। আর মাফিয়া গার্ল একে একে সব হ্যাকারের ট্রেস করতে থাকে যারা আরো অনেক জংগী সংগঠনের সাথে জড়িত। এভাবে এক থেকে দুই করে বাড়তে বাড়তে পুরো ৫০ টি দেশে এদের কর্মকান্ড ট্রেস করে মাফিয়া গার্ল। আর জানতে পারে এদের মূল মদদ দাতা বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানি যারা সারা পৃথিবীতে বহাল তবিয়তে ব্যবসা করে আসছে এবং এদের সিংহভাগ শেয়ারহোল্ডার সেই উদ্বাস্তুশিবির আর হিটলারের দুই চোখের বিষ জাতীর নাগরিকগন। বিভিন্ন এনজিও ও সমাজকল্যান সংস্থার নাম করে এরা বিভিন্ন দেশের অভন্তরে নিজেদের ডেরা তৈরী করে এবং তাদের ওই লোকদেখানো সমাজসেবার আড়ালে এইই জংঙ্গী কর্মকান্ড পরিচালনা করে। পরবর্তীতে আরো ভেতরে ঘাটাঘাটি করে এই কোম্পানিগুলোরর সাথে সেই বিশেষ দেশেটির সরকারের যোগসাজশ পায় মাফিয়া গার্ল। সেই সব তথ্য প্রমানসহ সবকিছু এনে মাফিয়া বয়কে উপহার দেয় মাফিয়া গার্ল।
গত ৬ মাস ধরে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনার যোগসূত্র খুজে পায় রাফি, মাফিয়া বয় নামের ফাইলটিতে সম্পূর্ণ ঘটনার বর্ননা দিয়েছে মাফিয়া গার্ল।
রাফি ডাটাগুলো নিয়ে সোজা ডাইরেক্টর স্যারের রুমে চলে গেলো আর সবকিছু বুঝিয়ে বললো।
ডাটাগুলো নিয়ে ডাইরেক্ট স্যারকে দেখাতেই স্যারের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো।

ডাইরেক্টর – Well done Rafi. আমি জানতাম তুমি পারবে।

রাফি – দুঃখিত স্যার, আমি কিছুই করি নি, সব মাফিয়া গার্ল করেছে(নির্লিপ্ত ভাষায়)।
বলেই Mafia boy নামের নোটটা দেখাতে চাইলো। কিন্তু ফাইলটা হারিয়ে গিয়েছে। শত চেষ্টা করেও রাফি আর মাফিয়া বয় নোট টা খুজে পেলো না। One time readable file হওয়ায় একবার ওপেন করার পর নিজে থেকে ডিলিট হয়ে গেছে।
রাফি কিছুতেই ডাইরেক্টর স্যারকে বোঝাতে পারলো না যে এটা ওর কৃতিত্ব নয়।
ডাইরেক্টর স্যার ডকুমেন্টসগুলোর ব্যাপার জানাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করলেন এবং NSA সাইবার টিম এ নতুন সংযোজন রাফির ভূমিকা তুলে ধরলেন।
নাহ আর মাথায় কাজ করছে না রাফির। আজকের দিনটা ছুটি নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো রাফি।
এদিকে রাফির অফিস থেকে রাফির বাড়িতে খবর দেয়া হয়েছে যে আজ তার ছেলের ট্রেনিং সম্পূর্ন হয়েছে। আগামীকাল কোম্পানীর গাড়িতে করে রাফিকে পৌছে দেয়া হবে। ছেলে আজ বাড়ি আসবে তাই হরেক রকম রান্নার আয়োজন। কিন্তু রাফির আসার কথা সকালে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো। রাফির জন্য মা দরজা খুলে বসে আসে। ছেলেকে ছাড়া যে কখনো একা থাকেনি। সারাক্ষন শাসন করা বাবাও আজ বসে আছে ছেলের আগমনের আসায়।

গাড়ির আওয়াজ (ট্যাক্সি) শুনলেই বাবা মা দুইজনই বারান্দা দিয়ে উকি দিচ্ছে এই বুঝি রাফি এলো। অবশেষে রাফির চেনাপরিচিত পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেলো দরজায়। বাবা মা দুজনেই ছুটে যায় দরজার কাছে জড়িয়ে ধরে তাদের কলিজার ধনকে।
মা – এসেছিস বাবা! কখন থেকে তোর অপেক্ষায় বসে আছি।
বাবা- আহহা, সব কথা কি দরজায় বলবে। (রাফির মাথায় হাত ববুলিয়ে) আয় বাবা আয়
মা- কিরে তোর না সকালে আসার কথা। (জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিলেন) কেমন শুকায় গেছে ছেলেটা। এই অনেক কষ্ট হয়েছে?
বাবা- আরে ওকে ছেড়ে দাও ফ্রেস হয়ে আসুক। বাবা তুই যা। ফ্রেস হয়ে তারাতারি খেতে আয়।

রাফি- কেমন আছো তোমরা? আমাকে তো কথাই বলতে দিচ্ছ না।

মা- ভাল আছিরে বাবা এখন। তুই ছাড়া যে ঘর একদম ফাকা ফাকা লাগে। আমাকে বউমা এনে দে একটা, আর ফাঁকা লাগবে না। সারাদিন মা মেয়ে গল্প করে কাটিয়ে দেবো।

রাফি- হলো? এসে পারলাম না শুরু করে দিলে? মা, তুমি না পারো ও বটে (ব্যাগ নিয়ে উপরে চলে গেলো, অনেকটা রাগ দেখিয়ে)

রাফির মন মেজাস এমনিই একটু খারাপ ছিলো আজ। মাফিয়া গার্ল এর বিষয়টা নিয়ে। রাফি এই ক্রেডিট নিতে ভাল লাগছে না কারন সে এর হকদার না।

খাবার টেবিলে বাবা ছেলে মা মিলে অনেক রকম গল্প। হওয়াটাই স্বাভাবিক।

বাবা- তোর পোস্ট কি? বেতন কেমন। কিছুই তো বললি না। মেয়ে দেখতে গেলে তো বলতে হবে নাকি।

রাফি- বাবা তুমিও শুরু করলে? ICT ডিভিশনে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বেতন সঠিক জানি না তবে বেসিক ১৬০০০ টাকা।

মা- বাহ ছেলে আমার বড় অফিসার হয়ে গেছে। এখন মেয়ে পাওয়াও ঝামেলা হবে না। এই তোর কোন পছন্দ নাই তো? থাকলে বল। কথা বলে পাকা করে রাখি।

রাফি- মা আমি কিন্তু না খেয়ে উঠে চলে যাব। এই সব বাদ দিবে?

মা- আচ্ছা ঠিক আছে বাদ দিলাম। এই তোর আবার জয়েনিং কবে?

রাফি- ৬ দিন পর ঢাকায় জয়েনিং।

খাওয়া শেষ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে রাফি। প্রচন্ড ক্লান্তিতে মুহুর্তে তলিয়ে যায় রাফি।

সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙ্গে, উঠেই ফ্রেশ হয়ে রেখে যাওয়া ফোন টা খোজা শুরু করলো। কিন্তু খুজে পাচ্ছে না। পরে মায়ের কাছে যেয়ে পেলো ফোন।

মা- ফোন কেউ এভাবে রেখে যায়। রাস্তা যখন তখন দরকার পরতে পারতো তো। এত বেখেয়ালি কেনো তুই?

রাফি- আচ্ছা বুঝলাম, আমাকে এক কাপ কফি বানিয়ে দাও না মা।

মা- তুই ঘরে যা আমি নিয়ে আসছি।

রাফি নিজের ঘরে বারান্দায় দাড়িয়ে পড়ন্ত বিকেল দেখছে আর কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে আর মাফিয়া গার্লকে কিভাবে ট্রেস করা যায় সে কথা ভাবছে।
ভাবতে ভাবতে নিজের ল্যাপটপ বের করে নিজের টেবিলে বসে গেলো।

যে আইপি থেকে ফাইল গুলো পাঠানো হয়েছে সেই আইপি ডিজেবল দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন নিপুণ হাতে সাইবার এভাটরের মত সব মুছে দিয়েছে, কোন নাম নিশানাও নাই।

ভাবছে এটা তো একজনের কাজ হতে পারে না। আবার একজন বাদের কারো ফুটপ্রিন্টো নেই। তাও সে চাইছে তাই তার ফুটপ্রিন্ট ট্রেস করা যাচ্ছে। নাহলে তো সেটাও যেত না। এই মাফিয়া গার্লের সাইবার জগতে এত ক্ষমতা কিভাবে। নাহ কিছুই মাথায় আসছে না।

আজ এতদিন পর বাড়িতে এলো রাফি কিন্তু রাফির মনটা ঘরে টানছে না। মাফিয়া গার্ল রাফির মনের পুরোটা আটকে রেখেছে। মাফিয়া গার্লের উদ্দেশ্য আর কর্মকান্ড নিয়ে রাফি চিন্তাভাবনা প্রতি মুহুর্তে বেড়ে চলেছে।
নাহ, এভাবে আর ঘরে বসে থাকা যায় না। মফিয়া গার্লকে ট্রেস করতেই হবে। মাফিয়া গার্লের সাইকোলজি বুঝতে হবে। রাফি জানে যে মাফিয়ে গার্ল হয়তো ভালো কিছুই করছে কিন্তু সেটা সাইবার ক্রাইম আইনে পড়ে। তাই আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। আবার নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেকে বুঝালো যে সে নিজেও তো অনেক আইন ভেংগে ভালো কাজ করেছে, আজ আমি যেখানে সেটা তো মাফিয়া গার্লের জন্যই। হয়তো মাফিয়া গার্ল ও কোন সুযোগ খুঁজছে। কিন্তু কি হতে পারে তা। জানতেই হবে রাফিকে।
জয়েনিং ৬ দিন পর হলেও ৩ দিনের মাথায় রাফি ব্যগপত্র গুছিয়ে নিলো। বাসায় কি বলবে তা বুঝে উঠতে পারে না কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত হেডকোয়ার্টারে পৌঁছে ইনভেস্টিগেশন শুরু না করতে পারছে ততক্ষণ পর্যন্ত রাফি ঠিক থাকতে পারছে না।
ব্যগপত্র গোছাতে দেখে বাড়ির সবাই কারন জানতে চাইলেও রাফি কাউকেই তার আসল কারন না বলে ব্যপারটা এড়িয়ে গেল। রাফির বাবা শুধুমাত্র রাফির বাবাই নয়, অনেক ভালো বন্ধুও। ছেলের কপালের ভাঁজে তিনি ঠিকই বুঝে নিলেন কোন এক চাপা চিন্তায় রাফির ঘুম হারিয়ে গেছে; ছেলে তার বাড়ি এসেছে কিন্তু ছেলের মনটা আর বাড়ি ফেরে নি।
রাতে খাবার টেবিলে
বাবা – রাফি। আমার পাশে এসে বস।
রাফি কোন কথা না বলে বাবার বাম পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলো। রাফির বাবা রাফির খাবারের প্লেটটা নিজের কাছে টেনে নিয়ে রাফির গালে খাবার তুলে দিলেন। রাফি কিছুটা অবাক হলো কিন্তু মুখ খুলে খাবারটা নিয়ে নিলো।
বাবা – দেখ রাফি, জীবনের অনেকগুলো বসন্ত তোর মা আর আমি অনেক যুদ্ধ করে পার করেছি, আমি বুঝতাম তোর মায়ের অনেক কষ্ট হয়েছে সংসার সামলাতে কিন্তু কখনো সেটা আমাকে বুঝতে দেয় নি। তোর মায়ের এই সেক্রেফাইসের কারনে আমি কখনোই আমার কর্মজীবনের কোন দুঃখ কষ্ট তোর মা কে বুঝতে দেই নি । (বলতে বলতে আর এক লোকমা তুলে দেয়)
বাবা – কর্মজীবনের যাচ্ছিস, একটা জিনিস মাথায় রাখবি, জীবনের জন্য কাজ করছিস তুই, কাজের জন্য জীবন নয়। সব সমস্যার সমাধান আছে শুধু পথটা খুজে নিতে হবে। সমস্যায় বিচলিত হয়ে পড়লে কখনই সমাধানের সঠিক পথটা খুজে পাবি না। (আর এক লোকমা তুলে দিয়ে) আমার ছেলে আমার দেখা সবচেয়ে বিচক্ষণ ছেলে, আমার ছেলে শান্তভাবে চিন্তাভাবনা করলে সমাধান বের করতে পারবে না এমন কোন সমস্যা নেই।
রাফি অবাক হয়ে তার বাবার কথা শুনছিলো আর খাচ্ছিলো।
বাবা – আমি জানি না তুই কোন কারনে উতলা হয়ে আছিস কিন্তু পরের বার বাড়ি আসার সময় আমার ছেলের মনটা নিয়ে ফিরিস। (আর এক লোকমা তুলে দিয়ে)
রাফির মনটা অজান্তে মুচড়ে উঠলো, বকাঝকা আর গম্ভীর বাবাটা আজ হঠাৎ জীবনের এতবড় শিক্ষা কত অনায়াসেই দিয়ে দিলো।
চোখের পানি আটকাতে না পেরে বাবার গলাটা জড়িয়ে ধরলো রাফি।
বাবা – আরেহ পাগল ছেলে করছিস কি, ছাড়, পড়ে যাবে ত সব খাবার।
রাফি – বাবা তুমি আমার দেখা সেরা বাবা।
বাবা – (আবেগআপ্লুত হলেও সেটা চেপে কিছুটা গম্ভীর হয়ে) নে নে হয়েছে হয়েছে। অত সাফাই গাইতে হবে না। (ফিসফিস করে) তোর মা অনেক টেনশন করে, মা কে একটু বুঝিয়ে শুনিয়ে যাস, আমি আর কত।?
রাফি – (চোখ মুছতে মুছতে) আমি যাবো না বাবা, তোমাদের সাথে বাকী কয়েকটা দিন কাটিয়ে তারপর যাবো।
বাবা – ( রাগ আর গম্ভীরভাবে) বলেছি যেদিন মন টা নিয়ে বাড়ি আসতে পারবি সেদিন আসবি, আমার ছেলেটাকে মন ছাড়া মানুষের মত লাগে না। নে এবার তাড়াতাড়ি শেষ কর, খাবার ঠান্ডা হয়ে গেলো(আর এক লোকমা তুলে দিয়ে) ।
খাওয়া শেষে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বাবার বলা প্রতিটা কথা ভাবতে থাকলো রাফি। সত্যিই ত, বাবা মা যদি তাদের চেনা ছেলেটাকে আর চিনতে না পারে তো কষ্ট পাওয়া স্বাভাবিক। ভাবতে ভাবতে চোখটা লেগে এলো রাফির। হঠাৎ কপালে একটা স্পর্শে মৃদু কেপে ওঠে রাফি, চোখ মেলে দেখে মা বসে আছে আর আলতো ভাবে কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
রাফি – আরে মা তুমি আসতে গেলে কেন? ডাকলে তো আমিই চলে যেতাম তোমার ঘরে।
মা – কেন তোর রুমে আসা বারন নাকি?
রাফি – না তা কেন হবে।
মা – এলাম গল্প করতে। কতদিন তোর কপালে হাত বোলানো হয় না।
রাফি মাথাটা মায়ের কোলে তুলে দিলো। আর রাফির মা রাফির চুলে বিলি করে দিতে থাকলো।
মা – কতদিন পর ঘরে এলি, এখনই চলে যাবি? বলেছিলি যে আরো তিন দিন থাকবি?
রাফি – হ্যাঁ মা থাকবই তো। তিন দিন পরই যাবো। তোমাদের ছাড়া থাকতে আমার একদমই ভালো লাগে না। এই ৬ মাস সারা দিন রাত এক করে ট্রেনিং করেছি তো তাই একটু ক্লান্ত।
মা – আচ্ছা, আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, তুই ঘুমা।
তারপর বাদবাকি ৩ দিন রাফি সবকিছু ভূলে তার বাবা মা কে সময় দিলো, বাবা তার জীবনের অনেক উথ্থান পতনের গল্প শোনালেন আর মা তার সেরা আর রাফির পচ্ছন্দের খাবারগুলো রান্না করে খাওয়ালেন প্রতিবেলায়।
৩ দিন কিভাবে কেটে গেলো রাফি তা বুঝতেই পারলো না। ৬ দিন আগে একটা বিষন্নতায় ভরা মন নিয়ে এসেছিলো রাফি কিন্তু আজ রাফি চাকরীতে যোগদান করতে যাচ্ছে অনেক ফুঁরফুরে মেজাজে।

অফিসে ঠিক সময় এসে ঢুকলো রাফি। ডাইরেক্টর স্যারের কাছে গিয়ে রিপোর্টিং সেরে নিয়ে নিজের ডেস্কে গিয়ে বসলো, হালকা গোজগাছ করে আবার ডাইরেক্টর স্যারের রুমে গেলো।
ডাইরেক্টর – কি ব্যপার রাফি? কিছু বলতে চাও?
রাফি – জ্বী স্যার তবে আপনি যদি ব্যস্ত থাকেন তাহলে আমি পরে আসছি।
ডাইরেক্টর – জরুরী কিছু?
রাফি – জ্বী স্যার।
ডাইরেক্টর – (সব মনোযোগ রাফির দিকে দিয়ে) বসো। বসে বলো।
রাফি – (বসতে বসতে) স্যার, ৬ দিন আগে যখন আমি অফিসে এসেছিলাম তখন আমি কিছু সাইবার সিকিউরিটি প্রবলেম লক্ষ্য করেছি এবং কেউ একজন আমাদের সার্ভারে আনঅথরাইজ একসেস করেছিলো কিন্তু আমাদের ফায়ারওয়্যালের সিকিউরিটি কোন এ্যলার্ম রেইজ করে নি।
ডাইরেক্টর – What!! কি বলছো রাফি!!!
রাফি – জ্বী স্যার। তাই আমি চাই আপনি আমাদের পুরো সাইবার টিমকে আমাদের সার্ভারের ফায়ারওয়্যাল সিকিউরিটি আপগ্রেড করার জন্য নিযুক্ত করেন, কারন যে রাস্তা চিনে গেছে সে অন্য কাউকে রাস্তা চাইলেই চিনায় দিতে পারবে।
ডাইরেক্টর – বাহ রাফি। চমৎকার। তাহলে কিভাবে শুরু করতে চাও?
রাফি ডাইরেক্ট স্যারকে ফায়ারওয়্যাল সিকিউরিটির সমস্যাগুলো ভালোভাবে বুঝিয়ে বললো এবং কিভাবে এদ সমাধান হবে তাও বুঝিয়ে দিলো।
ডাইরেক্টর – Excellent Rafi, Mindblowing. I’m really impressed about your presentation. I’m calling a team meeting after lunch. Till then, prepare your presentation for all other team members.
রাফি – ME!!!
ডাইরেক্টর – Yes you. Now go. Prepare for your presentation.
রাফি একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে। এত বড় দায়িত্ব কি পারবে রাফি পালন করতে?
লাঞ্চের পর মিটিং এ রাফি তার সকল টিম মেম্বারদের কাছে তার আইডিয়াগুলো প্রেজেন্ট করলো। সবাই সার্ভারগুলোর সিকিউরিটির ব্যাপারে একমত হলো এবং রাফির আইডিয়াগুলো তারা অনেক সহজেই বুঝে নিলো। ডাইরেক্টর স্যার রাফিকে টিম লিডার করে NSA এর সকল সিস্টেম সফটওয়্যার ও ফায়ারওয়্যাল সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম আপগ্রেড করার দায়িত্ব দিলেন।
রাফির মনে কিছুটা ভয় কাজ করলেও দেশে স্বার্থে এই ভয়কে জয় করতেই হবে। রাফির নির্দেশনায় খুব দ্রুতগতিতে এগোচ্ছিলো কাজ। কাজ শেষ হওয়ার লক্ষ্যসীমা ৮ মাস হলেও ৬ মাসের ভেতর কাজ শেষ করার লক্ষ্য নেয় রাফির টিম।
এদিকে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সেই ৫০ টি দেশের সাথে কুটনৈতিক আলোচনা চালায় এবং যার যার দেশের সাথে সম্পৃক্ত ফাইল ও ডাটা ইভিডেন্স শেয়ার করে। প্রদত্ব তথ্য অনুযায়ী প্রতিটি দেশ তাদের অভন্তরীন জংঙ্গী সদস্যদের গ্রেফতার করতে ও জংঙ্গী কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ততার স্বীকারোক্তি নিতে সক্ষম হয়। তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে ৫০ টি দেশের মধ্যে ১০ টি দেশ আন্তর্জাতিক আদালতে জড়িত মদদদাতা কোম্পানী ও রাষ্ট্রের মামলা করতে রাজী হয় যেটা মোটামুটি যথেষ্ট।
এদিকে ফায়ারওয়্যালের কাজও মোটামুটি শেষ, ট্রায়াল এন্ড ইরর প্রোসেসে ধীরে ধীরে এক অজেয় দূর্গ বানিয়ে ফেলে NSA এর সার্ভারগুলোর ফায়ারওয়্যালকে। অবশেষে সফলভাবে ফায়ারওয়্যাল ও সিসটেম আপগ্রেড রান করা হলো। এখন হয়তো একটু হলেও মাফিয়া গার্লকে বেগ পেতে হবে এই দূর্গ জয় করতে।
ডাইরেক্ট স্যার রাফির লীডে টিমের এই দুর্দান্ত পার্ফর্মেন্সে যার পর নাই খুশি হন। যোগ্য লোককে যোগ্য স্থানে স্থাপন করতে পারলে শুরুর আগেই কাজ ৫০% কমপ্লিট হয়ে যায়। আজ নিজের চোখের সামনেই তার প্রমান পেলেন।
রাফি ডাইরেক্টর স্যারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এক নতুন টিম গঠন করলো যারা বিশেষভাবে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে পারদর্শী তা সে যতই ক্ষুদ্র ও সূক্ষ হোক না কেন।অনেকদিন হলো মাফিয়া গার্লের খোজ নেয়া হয় না। রাফি এখন তৈরী মাফিয়া গার্ল সম্পর্কে স্ট্যাডি করতে।
টিমকে উদ্দেশ্য করে,
রাফি – টিম, আজ তোমাদের একটি নতুন টাস্ক দেয়া হবে। কোডনেম মাফিয়া গার্ল। পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক আর যতবার হোক, মাফিয়া গার্ল রিলেটেড সকল তথ্য আমার চাই।তা যত পূরাতন হোক আর যতই সামান্য হোক With Date and time. I want each and every information related with Mafia Girl on my desk within 3 days.
টিম – (একসাথে উচ্চস্বরে) YES, LEADER.
রাফি – (কলমটা ঠোঁটের কোনায় ধরে মনে মনে কনফিডেন্টলি)Mafia girl, it’s time to know about you.

চলবে?

মন্তব্য করলে পরের পার্টের লিংক পাবেন। তাছাড়া পেতে কষ্ট হবে। তাই ভাল খারাপ যাই হোক মন্তব্য করবেন। ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে