হেমন্ত ধারার অশ্রু পর্ব-৫

0
1120

#পর্ব-৫
#হেমন্ত ধারার অশ্রু
#মারুফ হাসান সজীব

আমি সন্ধ্যায় আমার দেবরের জন্য হালকা নাস্তা তৈরি করছিলাম।সে অনেক দূরের পথ অতিক্রম করে এসেছে তাই তার জন্য নাস্তা তৈরি করছিলাম। আমি রান্নার দিকে মনোযোগ দিয়ে রয়েছি। এমন সময় আমার জা বর্ষা আমার কাছে দৌড়ে এসে বলল ভাবী রাফি ভাই একটা মেয়েকে সাথে করে নিয়ে এসেছে। আমি তাই তোমাকে খবর দিতে আসছি। তুমি তাড়াতাড়ি চলো ।

বর্ষার এরকম কথা শুনে আমার বুক ধুক করে উঠলো।রাফি আবার সেই মেয়েকে বিয়ে করে আনেনি তো। আমি মনে মনে বললাম আল্লাহ এটা যেন না হয়।ওই মেয়েটা যেন নদী না হয়ে অন্য কোনো মেয়ে হয়।

কিন্তু আল্লাহ আমার মনের আকুল আবেদন শুনেনি ‌আমি খুব ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলাম।

আমি তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখলাম রাফির সোফায় বসে রয়েছে।আর মোবাইলে কি যেন করছে। আমি খেয়াল করলাম মেয়েটা সোফার অপর সাইটে বসে রয়েছে।আর মেয়েটা নদী অন্য কোনো মেয়ে না।যখন দেখলাম মেয়েটা নদী তখন আমি সব আশা ছেড়ে দিলাম। মনে হলো আমার জীবন নদী এখানেই শেষ। আমি নৌকা নিয়ে চলার পথে মাঝ পথে আটকে গেলাম।আর কখনো আমার জীবনে সুখ আসবে না।

কিন্তু হঠাৎ পরক্ষনেই আমার মনে হলো মেয়েটা হয়তো অন্য কোনো কারণে আসতে পারে আমি আগেই এতো সন্দেহ করছি কেন? আমার জানার খুব কৌতুহল হলো মেয়েটা এখানে কেন এসেছে?
রাফি এমন ভাবে মোবাইল ব্যবহার করছে যেন রাফি এখনো আমাকে দেখতে পারেনি।

‘বর্ষা আমাকে খোঁচা দিয়ে বললো মেয়েটাকে চিনো আমি কিন্তু এই মেয়েকে চিনি’

আমি রাফিকে ভয়ে ভয়ে বললাম রাফি এই মেয়েটা কে?
যদিও আমি নদীকে চিনি কিন্তু যেন রাফি সন্দেহ না করে তাই বললাম।
রাফি যেন আমার কথায় বাস্তবে ফিরে এলো। আমার দিকে তাকিয়ে বলল ধারা তুমি কখন এলে?
এখানে বসে থাকো দাঁড়িয়ে আছো কেন? নাকি কোনো কাজ করছো বসে থাকো আর পারলে আমার জন্য এক কাপ চা পাঠানোর ব্যবস্থা করো।

ধারা বিভ্রান্ত হয়ে বলল তোমাকে আমি একটা প্রশ্ন করেছিলাম রাফি। আশা করি সেটার সঠিক উত্তর দেবে।তা না করে উল্টো আমাকে প্রশ্ন করে যাচ্ছো।

রাফি একটু কাশি দিয়ে বলল কি প্রশ্ন করেছিলে? আমি আসলে ভুলে গেছি আরেকবার একটু বলো।

ধারা নিজের মনকে শান্তনা দিয়ে বলল আমি বলেছিলাম এই মেয়েটা কে?আর এখানে কোনো দরকারে এসেছে কি?
রাফি কিছুটা বিচলিত হয়ে বলল আসলে মেয়েটার নাম
নীলাদ্রী নদী।
আমি মনে মনে বললাম তাহলে আমার আন্দাজ ঠিক হয়েছে। আসলে এই মেয়েটার নাম নদী।

আমি বললাম এখানে কেন এসেছে? আমি খেয়াল করলাম নদী মাথায় হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে না যে অন্য কারো বাড়িতে এসেছে।রাফি বলল মেয়েটা কয়েকদিন আমাদের বাড়ীতে থাকবে।
আমি দ্বিধা নিয়ে বললাম কেন এখানে থাকবে কেন?

রাফি বলল মেয়েটার বাবা মা মারা গেছে আজ মাস খানেক হলো একটা রোড এক্সিডেন্ট এ ‌।নদী বাবা আমাদের অফিসেই কাজ করতো। কিন্তু কিছুদিন আগে একটা দূর্ঘটনায় তার বাবা মা সবাই মারা যায়। বাড়িতে যেটুকু সম্পওি ছিল। তা নদীর কাকা সরোয়ার চুরি করে লিখে নিয়েছিল মৃত্যুর আগে।

তার কাকা সবাইকে বলছে এগুলো নাকি সব টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে। কিন্তু নদীর ভাষ্যমতে তার কাকা জমি বিক্রির কথা বলেছিল।আর তাই নদীর বাবা বিক্রি করে দেয়। কিন্তু জমি লিখে দেওয়ার পর নদীর কাকা বলল টাকা নাকি কিছুদিন পর দেবে।আর সেখানে অনেক মানুষ ছিল।তাই সবার কথা শুনে নদীর বাবা রাজি হয়ে যায়। তবে তার কিছুদিন পরই নদীর বাবা মা রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যায়।আর সম্পওির টাকা দিতে নদীর কাকা অস্বীকার করে।সে বলে নদীর বাবাকে নাকি সব টাকা দিয়ে দিয়েছে।আর সেদিন সেখানে যারা উপস্থিত ছিলো সবাইকে সরোয়ার টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে রেখেছে।আর এখন নদীদের বাড়ি ঘর কিছু নেই।তাই জীবন বাঁচানোর জন্য এখানে এসেছে।আর কিছুদিন চাকরি করে এখানেই আমাদের সাথে থাকবে।

বর্ষা বলল থাকবে তাহলে এখানে এখন থেকে।তা কতদিন এর জন্য এনেছেন রাফি ভাই নাকি সারাজীবন এর জন্য। আমি একটু জানতে চাই।

রাফি বর্ষার এরকম প্রশ্ন শুনে কিছুটা নড়ে চড়ে বসলো।

রাফি বলল এগুলো কিরকম কথা। একটা মেয়ে সাহায্য
এর জন্য এখানে এসেছে।আর তাকে উদ্দেশ্য করে তোমরা অপমান জনক কথা বলছো। এগুলো কি তোমাদের মনে হয় করা উচিত?

ধারা কিছু একটা বলতে চেয়েছিল কিন্তু তার আগেই বর্ষা বলল ওহ আমি ভাবছি অন্য কিছু আচ্ছা ঠিক আছে।যতদিন ইচ্ছা এখানে থাকুক।

নদী কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলল এটা কি ধরনের ফাজলামি রাফি। আমি এখানে এসে তখন থেকেই ওদের কথায় শুধু অপমানিত হচ্ছি। আমার মতো অন্য মেয়ে হলে এখান থেকে চলে যেত।

ধারা ঠোঁট কামড়ে আস্তে করে বলল চলে গেলেই ভালো

-কিন্তু পরক্ষনেই ধারা একটা অন্য ভাবনায় ডুবে গেল।

নাদিয়া বেগম সাদে তার প্রতিবেশী রাহেলার সাথে আলাপ জুড়ে দিয়েছিল। তখন তার ছোট ছেলে গিয়ে তাকে নিচে ঘটা সব ঘটনা জানালো।আর এতে নাদিয়া বেগম রেগে বলল আমার বাড়িতে আমার অনুমতি ছাড়া একটা মেয়েকে এনেছে এতো বড় সাহস।

নাদিয়া বেগম তীব্র রাগ নিয়ে নিচে ছুটে গেল।তার সাথে নিচে মজা দেখার জন্য তার প্রতিবেশী রাহেলা চলে আসলো‌। নাদিয়া বেগম নিচে এসেই সকলের সামনে চেঁচিয়ে বলল আমার বাড়িতে আমার অনুমতি ছাড়া কেউ থাকতে পারবে না।

রাফি সোফা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল মা বোঝার চেষ্টা করো তুমি।
নাদিয়া বেগম বলল আমার কিছু বুঝতে হবে না।

ধারা তখন বলল মা আমি একটা কথা বলতে চাই।

নাদিয়া বেগম বলল কি কথা?

ধারা সকলকে অবাক করে দিয়ে বলল নদী এই বাড়িতেই থাকবে মেয়েটা কিন্তু অসহায় তার কেউ নেই।

নদী রাগ করে চলে যাচ্ছিল।ধারা আটকে ধরলো।আর মনে মনে বলল আমার স্বামী তার প্রেমীকাকে এই বাড়িতে যখন নিয়ে এসেছে চলে যেতে দেওয়া যাবে না।

এইরকম ঘটনা দেখে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে বর্ষা। কারন সে সমস্ত ঘটনা জানে।আর বর্ষা জেনে গেছে যে ধারাও রাফির পরকীয়া করা সম্পর্কে জানে তাহলে এমন কাজ করলো কেন?
______________
চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে