#ধারাবাহিক গল্প
#হৃদ মাঝারে রেখেছে তারে।
শেষ পর্ব
মাহবুবা বিথী
সালেহা তোমার শাশুড়ির সাথে আমার সম্পর্কটা যেমনি ছিলো মায়ার তেমনি ছিলো মুগ্ধতার। আর ছিলো আমাদের দুজনার ভালোবাসার গভীরতা। আমার মনে হয় যতদিন আমার আয়ু আছে আমি তোমার শাশুড়ীকে একমুহুর্তের জন্য ভুলে থাকতে পারবো না। এটা একদিকে যেমন ভালোলাগে তেমনি স্মৃতিকাতরতার হোমানলে প্রতিদিন পুড়ে অঙ্গার হতে হয়।
সেদিন আমার শ্বশুরের কথাগুলো শুনে মনটা খুব খারাপ হয়েছিলো। কারণ আমরা ধরে নিয়েছিলাম আমার শ্বশুর মনে হয় শাশুড়ির মৃত্যুটাকে সামলে নিয়েছে কিন্তু বাস্তবে উনি এক মুহুর্তের জন্য আমার শাশুড়িকে ভুলতে পারেননি। বরং আমাদেরকে ভালো রাখার জন্য উনি আমাদের সাথে মিলে মিশে এতদিন ভালো থাকার অভিনয় করে গেছেন।
এদিকে সেজানের ডিভোর্সের তিনবছর সময় গড়িয়ে যায়। আমার শ্বশুর চাইছেন আমরা সবাই মিলে যেন সেজানের বিয়ের ব্যবস্থা করি। রোকাইয়া এখন বেশ বড় হয়েছে। ও এখন ক্লাস ফোর এ পড়ে। সেদিন আমি রোকাইয়াকে ডেকে ওর চুল আঁচড়ে দুটো বেনী করে দিয়ে বললাম,
—–রোকাইয়া তোমার একটা নতুন মা আনলে কেমন হয়? সে তোমাকে অনেক আদর করবে। মুখে তুলে ভাত খাইয়ে দিবে।
মেয়েটা আসলে মনের দিক থেকে অনেক বড় হয়ে গেছে। তাই একটু গম্ভীর হয়ে বড়দের মতো করে আমায় বললো,
—–আব্বুর তো আসলে একটা বউ দরকার। কারণ আমি মাঝে মাঝে দেখি আব্বু বারান্দায় বসে একের পর এক সিগারেট খেতে থাকে। মাঝে মাঝে অনেক রাত অবধি ঘুমায় না। অনেক সময় সকালে না খেয়ে অফিসে যায়। যদিও টেবিলে নাস্তা দেওয়া থাকে তারপরও আব্বু খায় না। আসলে আব্বুকে আদর করে বলার মতো কেউ নাই। দাদী বেঁচে থাকলে তাও হয়তো আব্বুর দিকে খেয়াল রাখতে পারতো। আমি মাঝে মাঝে আব্বুকে সিগারেট খেতে নিষেধ করি। আমার ওথা শুনে তখনকার মতো বন্ধ করে কিন্তু সকালে বারান্দায় গিয়ে দেখি পুরো বারান্দায় সিগারেটের অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এতে তো আব্বুর অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে তাই না? যে মেয়েটা আব্বুর বউ হবে সে তখন চব্বিশঘন্টা আব্বুর খেয়াল রাখতে পারবে।
—–তুমিও তখন তাকে নতুন মা বলে ডাকতে পারবে।
——তাকে কি নাম ধরে ডাকবো তা পরে দেখা যাবে। তবে আমার মা বলতে আমি তোমাকেই বুঝি। তুমি আমাকে কখনও দূরে ঠেলে দিও না।
ওর কথাশুনে আমার চোখ দুটো নোনা জলে সিক্ত হয়ে গেল। তারপর ওকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললাম,
——তোকে কিভাবে ভুলবো? তুইতো আমার শাশুড়ি মা।
ও যেন আমার বুকে লেপ্টে থাকলো। মাঝে মাঝে ওকে যখন বেশী আদর করি আমি ওকে তুই বলে ডাকি। রোকাইয়া বলে, তুই ডাকটা নাকি বেশী আপন মনে হয়। আমি বুঝি ছোটোবেলা থেকে মাকে কাছে না পাওয়াতে ও খুব আদরের কাঙ্গাল। যদিও সাদাফ মাঝে মাঝে আমার কাছে অভিযোগ করে বলে, আমি নাকি ওর থেকে রোকাইয়াকে বেশী আদর করি। ছেলেটা এত বড় হয়েও আমার ন্যাওটা থাকতে ভালোবাসে। এবার তো ক্লাস ফাইভে উঠেছে। ওর বাবা বলে “আর কতদিন ছেলেকে মামা,স বয় করে রাখবে। এখন তো অন্তত আঁচলের তলা থেকে বের করে ওর চোখে বাইরের কঠিন পৃথিবীটা দেখতে দাও”।
আসলে আমি সাদাফ আর রোকাইয়াকে আলাদা করতে পারি না। আমার মনে হয় ওরা দু,জন আমার দুচোখের মনি। বিশেষকরে রোকাইয়ার মানসিক অবস্থার দিকে আমার একটু বেশী খেয়াল রাখতে হয়। ওর মা এবার ডিভোর্স নিয়ে চলে যাওয়াতে বেশকিছুদিন মেয়েটা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। ওর মা দেশে আসার আগ পর্যন্ত আমাদের সবার মতো ও ভেবেছিলো ওর টানে হলেও রুহী আবার দেশে ফিরে আসবে। কিন্তু বাস্তবতা তো অনেক কঠিন। তাই আমি ওর বাবার বিয়ের ব্যাপারটা আগে বলে দেখলাম ওকি এটা পজেটিভভাবে নিবে নাকি নেগেটিভভাবে নিবে। অনেক সময় দেখা যায় এসব ব্যাপারগুলো বাচ্চাদের মানসিকতার উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।
অবশেষে সেজানের বিয়ে ঠিক হলো। এ ক্ষেত্রে আমার ফুফু শাশুড়ীর ভুমিকা আছে। উনি কুমিল্লা থেকে বিয়ের কনের সমন্ধ এনেছেন। মেয়ের বাবা শিক্ষক। সরকারী হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। মা প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ওরা একবোন একভাই। মেয়ের নাম জরি। জরি কুমিল্লার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাশ করেছে। আর ভাইটা ঢাকা ভার্সিটিতে বোটানীতে গ্রাজুয়েশন করছে। মেয়েটা অবশ্য সেজানের থেকে দশ বছরের ছোটো হবে। এরমাঝে একদিন সেজান এসে আমায় বললো,
——ভাবি, আবার বিয়ে করাতে রোকাইয়ার মনে উপর চাপ পড়বে নাতো?
——-তোমার মেয়ের বয়স কম হলেও মনের দিক থেকে অনেক ম্যাচিউর। ও জানে ওর পাপাকে ভালো রাখতে হলে একটা বউ আনা দরকার।
—–না ভাবি, আমার মনে হচ্ছে আমি বিয়ে করাতে মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে। বেশকিছুদিন সে আমার কাছে আসে না।
——-তোমার মেয়ে এখন বড় হচ্ছে। তাই হয়তো লজ্জা সঙ্কোচ এগুলো ওর ভিতরে কাজ করছে। তাছাড়া তুমি ওকে নিয়ে এতো ভেবো না। ওর দায়িত্ব তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও। এবার বিয়ে করে সুখী হওয়ার চেষ্টা করো।
——ভাবি, আমি জানি তুমি রোকাইয়াকে অনেক ভালোবাসো। ও তোমাকে নিজের মায়ের মতো ভালোবাসে। বিশেষ করে তুমি আছো বলেই আমি আমার জীবনের এতো বড় সিদ্ধান্তটা আবার নিলাম।
অনেকদিন পর বাড়ির মানুষগুলো আনন্দে মেতে উঠলো। আমার বড় ভাসুর জামান ভাই আর আয়েশা ভাবি এবং একমাত্র মেয়ে রাইমা কদিন এখানে থাকবে বলে আজ চলে এসেছে। আগামি কাল সেজানের বিয়ে। রাইমা ক্লাস টেন এ পড়ে। মাশাআল্পাহ মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দর। ওদিকে রায়ান আর ওর বউ আসেনি। কারণ ওদের মেয়েটা আবার বেশি হট্টগোলে থাকতে পারে না। অবশ্য আমার দেবর আর জা দুজনেই এ বছর মেজর হিসাবে প্রমোশন পেয়েছে। বাবা মা দুজনেই যেহেতু সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা তাই সন্তান হিসাবে জাইমার জীবনটাও আমাদের বাকি বাচ্চাদের থেকে একটু আলাদা। যাইহোক ওরা মিরপুর ডিওএইচ এ থাকে। ওখান থেকেই ওরা কল্যানপুরে আমার শ্বশুর বাড়িতে বিয়ের সব প্রোগ্রামে অংশ নিলো।
অবশেষে সেজানের বিয়েটা কাল হয়ে গেল। আমার ফুফু শাশুড়ী এবং চাচতো ননদরা কুমিল্লা থেকে এসেছিলো। ওরাও চলে গেল। বিয়েতে অবশ্য আমার যাওয়া হয়নি। আমি যাইনি বলে রোকাইয়াও
যায়নি। আসলে আমার শ্বশুরকে রেখে আমার যেতে ইচ্ছে করলো না। ইদানিং বেশ শুকিয়ে যাচ্ছেন। রিসেন্ট ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে। প্রেসার, হার্টের সমস্যা আগে থেকেই ছিলো। আরমান আর আমার বড় ভাসুর জা রাইমা সাদাফ গিয়েছে। রায়ানও ওর বউ বাচ্চাসহ বিয়েতে অংশ নিয়েছে।
আমি আজ খুব ভোরে উঠেছি। বাড়িতে এতোগুলো মানুষের ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা করা মিনারা খালার একার উপরে চাপ পড়ে যায়। যদিও আজ শুক্রবার। কারোও অফিসে যাওয়ার তেমন তাড়া নেই। তবে নতুন বউ বাড়িতে। আজ শ্বশুর বাড়িতে ওর প্রথম দিন। ওর সম্মানে একটা জমকালো নাস্তার আয়োজন করবো ভাবছি। সেজানের এটা দ্বিতীয় বিয়ে কিন্তু ওর তো প্রথম। নতুন বউ হিসাবে ওর তো শ্বশুরবাড়ির প্রতি অনেক চাওয়া পাওয়া আছে।
আমি কিচেনে গিয়ে মিনারা খালার সাথে নাস্তা বানানোর কাজে হাত লাগিয়েছি এমনসময় শাহেদ এসে আমায় বললো,
——ভাবি আপনারে চাচা ডাকে?
আমিও একটু অবাক হলাম। বাবাতো কখনও উপরে ডাকেন না। নিজেই নিচে নেমে আসেন। বিয়ের ঝামেলায় বাবার দিকে তেমন খেয়াল রাখতে পারিনি। শরীর কেমন আছে কে জানে?মিনারা খালাকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বাবার চা নিয়ে উপরে গেলাম। দরজায় নক করতে বাবা বললেন,
——সালেহা এসেছো মা? ভিতরে আসো।
আমি চা বাবার হাতে দিয়ে বললাম,
——বাবা, আপনার শরীর ঠিক আছে তো? বিয়ের ঝামেলায় আপনার দিকে তেমন খেয়াল রাখতে পারিনি।
——না, সমস্যা নাই। শাহেদটা আমার দিকে খেয়াল রেখেছে। তোমার শাশুড়ি মারা যাবার পর থেকে ওই তো আমার কাছে সবসময় থাকে। আমার শরীরের হাল হকিকত ওর ভালোই জানা আছে।
উনাকে কেমন অন্যমনস্ক লাগছে। তাই স্বাভাবিক করার জন্য বললাম,
——বাবা এর মাঝে মাকে আর স্বপ্নে দেখেননি?
——-অনেকদিন পর আজ রাতে ওকে দেখলাম। ওকে দেখার পর থেকে মনটা বিষাদে ভরে আছে।
——কেন বাবা? মা,কি ভালো নেই।
——- তোমার শাশুড়ী আল্লাহপাকের কাছে বেশ ভালো আছে। কিন্তু আমি ভালো নেই।
——আমি জানি বাবা , মায়ের জন্য আপনার অনেক কষ্ট হয়।
——কিন্তু আজ আমার কষ্ট হচ্ছে তোমাদের জন্য। তোমাদের সবাইকে ছেড়ে আমি মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি তোমার শাশুড়ীর কাছে চলে যাবো।
——না,বাবা এভাবে বলবেন না। আল্লাহ পাকের কাছে আমি সবসময় দোয়া করি আল্লাহ পাক যেন আপনার হায়াতে বরকত দান করেন।
——আমি জানি, আমার ছেলে বৌমা নাতি নাতনি সবাই আমাকে অনেক ভালোবাসে। সেদিক থেকে আমি অনেক ভাগ্যবান।
আমি কথা ঘুরিয়ে দিতে আমার শ্বশুরকে বললাম,
——মাকে কেমন দেখলেন বাবা?
—–অনেক ভালো। তবে আজকের স্বপ্নটা অন্যরকম ছিলো। আমি তাহাজ্জুদ পড়ে শুয়েছি। কেবল তন্দ্রাভাব এসেছে। স্বপ্নে আমি তোমার শাশুড়ীকে খুঁজে চলেছি। কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না। তারপর হাঁটতে হাঁটতে আমি খুব সুন্দর একটা বাড়ির সামনে দাঁড়ালাম। পুরো বাড়িটা নানা রকম ফুল আর ফলের গাছ দিয়ে সাজানো আছে। বাড়ির সামনে একটা বিশাল দিঘী রয়েছে। সেখানে শান বাধানো ঘাট রয়েছে। আমি গেট খুলে লন পেরিয়ে ঐ বাড়ির দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। দরজাটা ভেজানো ছিলো। নক করতেই তোমার শাশুড়ি মা দরজা খুলে হাসিমুখে আমায় ভিতরে ডাকলো। আমি ওকে দেখে এক রাশ অভিমান নিয়ে বললাম,
——তোমাকে আমি কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বুঝেছি এখন আর তুমি আমার কথা ভাবো না। আমায় ছেড়ে একলা থাকা শিখে গেছো।
ও এসে আমায় জড়িয়ে ধরে বললো,
——এতো অভিমান হয়েছে তোমার। আসলে তুমি আসবে বলে ঘরখানা পরিপাটি করছিলাম। তুমি তো আবার অগোছালো পছন্দ করো না।
এই কথা বলে আলমারি থেকে রেশমের পাঞ্জাবী আর একটা পাজামা বের করে আমার হাতে দিয়ে বললো,
——তোমার শরীরটা ঘেমে গেছে। পোশাকটা চেঞ্জ করে আসো।
আমি রেশমের পাঞ্জাবী দেখে বললাম,
——এতো দামী পোশাকতো আমি পরি না।
——আমার জন্য আজ না হয় একটু পরলে।
আমিও ওর কথা ফেলতে পারলাম না। ওয়াশরুমে গিয়ে পোশাকটা চেঞ্জ করে আসলাম। তারপর ও সুন্দর করে আমার চুল আঁচড়ে দিয়ে বললো,
——তোমার মনে আছে বিয়ের পর প্রায় তোমার চুল আঁচড়ে দিতাম।
——হু আমার সব মনে আছে।
তারপর ও আমার চোখে সুরমা লাগিয়ে দিলো। পাঞ্জাবীতে আতর লাগিয়ে দিলাে। আমার চোখের দিকে গভীর দৃষ্টি ফেলে বললো,
——আজ থেকে আমরা একসাথে থাকবো। দেখো না আমিও তোমার জন্য কতো সুন্দর করে সেজেছি। শুধু খোঁপায় বেলিফুলের মালাটা জড়ানো হয়নি। ওটা তুমি আমার খোঁপায় জড়িয়ে দিবে।
এরপর ও ফুলের মালাটা আমার হাতে তুলে দিলো। আমি ওর খোঁপায় মালাটা পরিয়ে দিলাম। ও সাদা রেশম সিল্কের শাড়ি পরেছে। কানে হাতে গলায় মনে হলো ডায়মন্ডের গয়না পরেছে। ওকে পরীর মতো সুন্দর লাগছে দেখে আমি তোমার শাশুড়ি মাকে বললাম,
——আজ এতো সুন্দর করে কেন সেজেছো?
——তুমি আসবে বলে। আজ থেকে আমরা একসাথে থাকবো। আমার এতোদিনের অপেক্ষার আজ অবসান হলো। আল্লাহপাক মেহেরবান। আমাদের দুজনার চাওয়া উনি কবুল করেছেন। তোমার মুখটা এমন বিমর্ষ দেখাচ্ছে কেন?
তারপর আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। এরপর ফজরের নামাজ পড়ে নিলাম। বৌমা আসলেই তোমাদের জন্য ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমার মনে হয় যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
এরপর আমার শ্বশুর চা খেতে গিয়ে বিষম খেলান। তারপর আমাকে ইশারায় বললেন,উনি চা খাবেন না। আমি শ্বশুরের কপালে হাত দিয়ে দেখলাম কপালটা ঘেমে উঠছে। আমি শাহেদকে বললাম,
——শাহেদ তোমার ভাইয়াদের খবর দাও। বাবা মনে হয় অসুস্থ যাচ্ছেন।
শাহেদ ওদেরকে খবর দিতে নিচে চলে গেল। আমি অনবরত কলেমা পড়তে থাকলাম। খবর পেয়ে জামান ভাই আরমান সেজান সবাই উপরে চলে আসলো। নতুন বউ সহ বাড়ির সবাই উপরে চলে আসলো। বড় ভাইয়া ভাবি ডাক্তার বিধায় উনারা বাবাকে হাসপাতালে নিতে চাইলেন। বাবা ইশারায় জানালেন, উনি হাসপাতালে যাবেন না। বাবা নতুন বউ জরিকে কাছে ডেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। ঠোঁটের কোণায় মুচকি হাসি জমা রেখে চোখ দুটো আস্তে আস্তে বন্ধ করলেন। একজন নামাজী মানুষ যাকে আমি কোনোদিন নামাজ ক্বাজা করতে দেখিনি আর শাহজাহান কিংবা সেলিমের চেয়ে অনেক বড় প্রেমিক ছিলেন আমার শ্বশুর। তাজমহলের মতো হয়তো দুনিয়াতে আমার শাশুড়ীর জন্য মহল গড়তে পারেননি কিন্তু মনের গহীনে অনেক বড় তাজমহল আমার শাশুড়ীর জন্য গড়েছেন। যতদিন আমার শ্বশুর বেঁচে ছিলেন শাশুড়ী মায়ের জন্য দোয়া করেছেন। এবং উনার দোয়া আল্লাহপাক কবুল করেছেন। হয়ত বেহেশ্তের বালাখানায় আল্লাহপাক উনাদের জন্য মহল গড়েছেন। সেই স্বপ্নটা আজ উনি দেখেছেন। দুনিয়ার সব মায়া কাটিয়ে আজ উনি পরপারে রওয়ানা দিলেন। আমার শ্বশুর শাশুড়ী দুজনেই অনেক বড় ভাগ্য নিয়ে এই পৃথিবীতে এসেছেন। সবার কপালে এসব জুটে না। বর্তমান যুগে স্বামী স্ত্রীর মাঝে এমন গভীর প্রেম দেখা যায় না। তবে মানুষ হিসাবে উনারা সৎ মানুষ ছিলেন। আল্লাহপাক আমার শ্বশুর শাশুড়িমায়ের জন্য বেহেশ্ত নসীব করুন। এই দোয়া করি। আমিন।
সমাপ্ত।