#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_তুমি
#পর্ব_০৬
#জান্নাতুল_বিথী
ছাদের রেলিং ঘেসে দাড়িয়ে আছি আমি। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। যখন আমার মন খারাপ থাকতো তখন আমি এমন করতাম।কিন্তু এখন আমার মন খারাপ না বরং মন টা অনেক ভালো। তার পর ও আকাশ ফানে তাকিয়ে আছি।আকাশে মেঘের খেলা দেখছি। অয়নের সাথে ঘুরতে যাওয়া পর মন অনেকটা ভালো হইছে।হঠাৎ ঘাড়ে কারো স্পর্শে আমি কেপে উঠি।ওই দিকে তাকাতেই দেখি অয়ন এক হাত পকেটে আর অন্য হাত আমা্র ঘাড়ে দিয়ে দাড়িয়ে আছে।..
“কি হইছে মন খারাপ…????”(অয়ন)
আমি মাথা দুই দিকে দুলিয়ে না বলি। অয়ন একটা দীর্যশ্বাস ফেলে বলে..
“তো মন খারাপ কেনো…???”(অয়ন)
“ধন্যবাদ…”(আমি)
“কেনো..???”(ভ্রু কুচকে)
“সত্যিই আমার মন টা অনেক খারাপ ছিলো কিন্ত আজ যখন আপনি আমাকে নদীর পাড়ে নিয়ে গেছিলেন তখন থেকে মনে ভালো হয়ে গেছে।..”(অনেকটা খুশি হয়ে)
আমার কথা শুনে অয়নের মুখে হাসি ফুটে উঠে। আমি অয়নের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।আসলে আমি অয়ন কে যেমন ভেবেছিলাম অয়ন ঠিক তার উল্টো। অয়ন অনেক হাসি খুশি স্বভাবের ছেলে।আর তা আজই প্রমান ফেলাম।আমাকে এভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অয়ন আমাকে ভ্রু উছিয়ে কি জিজ্ঞেস করে।..
“কিছু না।আচ্ছা একটা কথা রাখবেন..????”
“হুমমম রাখার মতো হলে অবশ্যই রাখবো।…”(অয়ন)
“আমাকে প্রতিদিন ঘুরাতে নিয়ে যাবেন…????”
“খুশি হবে তাতে..?????(অয়ন)
“অনেক…!!!!!!!!!!!”(হেসে বলি)
অয়ন আমার চুলের মাঝে আলতো বিলি কেটে বলেন..
“তোমার মুখে হাসি ফুটানোর জন্য তোমার চোখে খারাপ হয়েছি। তোমার হাসি মাখা মুখ খানা দেখার জন্য যদি এতোটা দিন অপেক্ষা করতে পারি তাহলে এখন কেনো সামান্য এতোটুকু করতে পারবো না কেনো..????”
অয়নের কথা শুনে আমি হা করে তাকিয়ে আছি। উনার কথার আগা থে মাথা পর্যন্ত আমি কিছুই বুঝতে পারি নাই।
“মানে কিসের অপেক্ষা করেছেন আপনি।…???”(ভ্রু কুচকে)
“যদি বলি বিশ্বাস করবে…???”(অয়ন)
“বলেন….”
“আমি তোমাকে অনাক আগে থেকেই ভালোবাসি।প্রথম যেদিন তোমাকে দেখি সেদিনের কথা আমি আজও ভুলতে পারি নাই।সত্যি বলতে তুমি অনেক কিউট ছিলে তখন। প্রথম দেখাতেই তোমার প্রেমে পড়ে যাই আমি।সেদিনই আমাদের প্রথম দেখা। তারপর তুমি হঠাৎ হারিয়ে গেলে।যখন তোমায় খুজে পাই তখন আর কিছুই করার ছিলো না।প্রায় হারাতে বসি আমি তোমাকে।….”(অয়ন)
আমি অয়নের মুখের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি।বলে কি এই লোকটা। আমার তো এই কথা গুলো একদম বিশ্বাসই হচ্ছে না।আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অয়ন অনেক জোরে হেসে দেয়। উনাকে এভাবে হাসতে দেখে আমি ভাবছি আরও উনি পাগল হয়ে গেছে।…
“তোমাকে যে কেউ অনেক সহজেই বোকা বানিয়ে ফেলতে পারে বটে।আমি তো ভাবছি তুমি অনেক বুদ্ধিমান।এখন তো দেখছি পুরোই বোকা তুমি।আরে বাবা আমি তোমার সাথে মজা করছি।।।।”(অয়ন)
“ওই একদম আমাকে বোকা বলবেন না।আপনি যেভাবে বলছেন যে কেউ বলবে আপনি সত্যি সত্যি বলছেন।আর আমি কিভাবে বুঝবো যে আপনি মজা করছেন নাকি সিরিয়াসলি বলছেন।….”(ইনোসেন্ট ফেস করে)
আমার কথা শুনে অয়ন হেসে দেয়।তারপর আমরা দুজন আরও অনেক্ষন গল্প করি।অয়নের সাথে এখন কথা বলতে অনেক ভালো লাগে।এখন অনেক সুন্দর করে হেসে হেসে কথা বলেন।মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই উনার ব্যবহারে।
_____________________________
আমি রুমে এসে দেখি সিমি কান্না করছে।ওকে এভাবে কান্না করতে দেখে আমি অবাক হয়ে যাই।এতো হাসি খুশি মেয়েটার আবার কি হলো…..
“সিমি কি হইছে…????”
আমাকে দেখে ও দৌড়ে এসে জাপটে ধরে কান্না করতে থাকে।..
“কি হইছে..?????”
“আপু শিহাব ভাইয়া এসেছে।….(সিমি)
“তাতে কান্না করার কি আছে সেটাই তো বুঝতে পারচি না।..”
“বাবা আমার বিয়ে ঠিক করছে অন্য একটা ছেলের সাথে।ভেবেছিলাম আমার মনের কথা যেহেতু কেউ জানে না তাহলে কাউকেই জানাবো না।বাবার পছন্দ করা ছেলেই বিয়ে করবো।কিন্তু এখন উনাকে দেখে আমি আর নিজেকে সামলাতে পারচি না।”(সিমি)
ওর কথা শুনে আমার অনেক খারাপ লাগে..
“আচ্ছা আমি দেখছি।….”
বলেই আমি চলে আসি। নিচে এসে দাড়াতেই দেখি অয়নের বাবা অয়ন আর একটা ছেলে সোফায় বসে গল্প করে।আমাকে দেখেই অয়নের বাবা ডাকে। আমি গিয়ে একলা একটা সোফায় বসি।উনারা আবার কথা বলতে শুরু করে।..
“অয়ন তোমাকে যেটা বলছি কাল সিমিকে দেখতে আসবে আর আমাদের ছেলে পছন্দ হয়েছে।যদি ওরা সিমি কে পছন্দ করে তাহলে কালই আন্টি পরিয়ে যাবে।”(অয়নের বাবা)
আমি এতক্ষন শিহাব ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কথাটা শুনার পর উনার মুখ বিষন্নতায় চেয়ে যায়।এটা আমি খুব ভালো করেই খেয়াল করি।..
“ঠিক আছে বাবা।…(অয়ন)
অয়নের বাবা উঠে যেতেই আমি গিয়ে অয়নের কাছে গিয়ে বলি…
“আপনার সাথে আমার কথা আছে..”(আমি)
অয়ন আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে…
“আর ইউ সিউর…???”(অবাক চোখে)
“হুমমম…”(আমি)
“শিহাব তুমি একটু বসো আমি আসছি…”(অয়ন)
অয়ন আমার সাথে চলে আসে।…
“কি বলবে…???”(অয়ন)
“আমি যা বলবো শুনবেন..????”(আমি)
“আরে বাবা বলো..”(অয়ন)
“সিমি শিহাব ভাইয়াকে পছন্দ করে ওকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিবেন না প্লিজ।আপনার তো একমাত্র বোন ওর দিকে একটু নজর দিন.. “(আমি)
আমার কথা শুনে অয়ন অবাকের চরম সীমায়। মনে হচ্ছে আমার কথা উনি বিশ্বাস করছেন না।..
“তোমাকে কে বললো এ কথা।সিমি নিজে বলেছে..???”(অয়ন)
“জ্বি…”
“থ্যাংকইউ। আমি দেখছি কি করা যেতে পারে। আর হ্যা রেডি থাকবে দুই একদিনের মধ্যেই তুমি বাড়ি যাবে।আর কষ্ট দিতে চাই না তোমাকে।..(অয়ন)
অয়নের কথা শুনে আমি অনেক খুশি হয়ে যাই। ভাবতেই অবাক লাগছে যে আমি আবার বাড়ি যাবো।বাবা মা নিশ্চয় এখন ও আমার উপর রেগে নেই।এসব হাজারো জিনিষ আমি চিন্তা করচি…
চলবে কি…????????