হৃদয়ে তুমি পর্ব-০২

0
1480

#হৃদয়ে_তুমি
লেখনীতে:waziha zainab (নিহা)
দ্বিতীয় পর্ব

বর্তমানে
বিয়ে বাড়িতে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও আমার নেই তবুও বিয়ে শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম বিয়ের দিন বিকেলে নিশি আপুর আম্মুকে বুঝিয়ে সুজিয়ে অসুস্থতার নাম করে বাসায় চলে এসেছি_
শুধু বার বার একটা কথাই মাথায় বাড়ি খাচ্ছিলো যে মানুষটা ছেড়ে চলে গিয়েছিলো নিজের ইচ্ছাতেই,,,সে আবার কেনো ফিরে আসতে চাচ্ছে

বাসায় এসে আমি নিজেই শকড
চারদিক ফুল দিয়ে ডেকোরেশন করানো,,,, বিয়ে বাড়ীর মতোই লাগছে
আমাদের বাসায় তো আমি আর নুযহাত (আমার ছোটো বোন) ছাড়া আর কোনো মেয়ে বা ছেলেও নেই তবে কার বিয়ে
আর আমার বোনের বয়স ১৪ এই বয়সে ওকে বিয়ে এসব ভাবতে আর ভাইয়ার চিন্তা করতে করতে আমার মাথা ঘুরছে,,,,
চারদিক একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম__
আমার উপস্থিতিতে অনেকের কানা ঘুসা শুরু হয়েছে
পাশ থেকে এক কাকীমার গলার আওয়াজ আমার কানে এলো
“কাল বিয়ে আর আজকে দেখো কোথায় থেকে এসেছে
আমি বিষ্ময় নিয়ে বিষয় টা বোঝার চেষ্টা করলাম
কিন্তু যা বুঝেছি এতে আমি হতাশ।
পর মুহুর্তে আম্মু এসে আমাকে ঝাড়ি মেরে বললো
“তোর এখন আসার সময় হলো?যা গিয়ে রেডি হয়ে নে
বলেই আম্মু রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালেন
আমি নিজের রুমে এসে দেখি আমার কাজিনরা সব ফুফাতো বোন কাকাতো বোন মামা তো বোন সবাই পুরো বিছানা দখল করে আছে
কেউ সাজ গোজ নিয়ে ব্যাস্ত
তো কেউ গল্প করা নিয়ে

আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আমার বোন নুযহাত বললো
“তোর এখন আসার সময় হলো আপু
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
” বেশী তাড়াতাড়ি চলে এসেছি নাকি
ও এবার বিরক্ত নিয়ে বললো
“ফ্রেশ হয়ে আম্মুর ঘরে আসিস
আম্মু তোকে ডেকে পাঠিয়েছে
আমি বিষ্ময় নিয়ে বললাম
” কেনো?
নুযহাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাহিরে থেকে ওকে কেউ ডাক দিলো আর ও চলে গেলো

আমি হাত মুখ ধুঁয়ে আম্মুর ঘরের দিকে উঁকি দিলাম
আম্মু ফুফি আর মামনি কি নিয়ে আলোচনা করছিলেন__
আমাকে দেখেই ফুফি আর মামনি মুচকি হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন
আমি ঘরের ভেতর প্রবেশ করলাম
আম্মু বললো
“দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে এখানে আয়
আমি বিষয়টা বুঝতে আম্মুর কথা মতোই ঘরের দরজা লাগিয়ে দিতেই বলে উঠলাম
” আম্মু এসব কি হচ্ছে
পুরো বাড়ী এমন সাজানো কেনো
বাই দা ওয়ে তুমি আর আব্বু কি আবার বিয়ে করছো?
তো আমাকে আগে বললেই পারতে,,,,আমি আসার সময় গিফট নিয়ে আসতাম
আমার কথায় আম্মু মুচকি হেসে আমার গাল টেনে বললেন
“কাল তোর বিয়ে
আম্মুর কথায় আমি আশ্চর্যের সবোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেলাম
” মানে কি এসব এর
আম্মু বললেন
“মেয়ে বড় হলে বিয়ে দিতে হয়
আর আমরা মনে করি এখন তোর বিয়ের সঠিক বয়স তাই তোর বাবা তোকে না জানিয়েই সব এরেঞ্জ করেছে_তোদের এখনকার জেনারেশনের ছেলে মেয়েদের বিশ্বাস করা মুশকিল_হয়তো আগে থেকে বিয়ের কথা জানলে অন্য ছেলের হাত ধরে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতি?তোদের তো বাবা -মায়ের উপর ভরসা নেই_নিজেদের চয়েজ নিজারাই ঠিক করিস

আম্মুর কথায় আমার অভিমান আরো বেড়ে গেলো
” ছেলে কি করে কোথায় থাকে ছেলে কেমন সেটা জানলামই না আর বিয়ে°ইম্পসিবল একজন অচেনা অজানা লোকের সাথে সারাজীবন কিভাবে থাকবো
আর সবথেকে বড় কথা হচ্ছে আমি বিয়ে করবো না আমি এখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত নই
আর তোমাদের কি একবার ও এতো কিছু করার আগে আমার মতামত টা জেনে নেওয়া উচিত ছিলো না?
আমার কথায় আম্মু শান্ত গলায় বললেন
“দেখ কোনো বাবা মা তার সন্তানের ক্ষতি চায় না-আমরা যা করছি তা তোর ভালোর জন্যই করছি_আর মতামতের কথা আসলে আমি বলবো যে তোর জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত তোর বাবা তোর কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখেনি_আমরা আশা করবো যে তুই ও আমাদের কথার বাহিরে কোনো কাজ করবি না
আমি আম্মুর কথা মেনে নিতে না পেরে বললাম
আমি পারবো না এটা করতে
আম্মু আমার হাত দুটো ধরে নরম গলায় বললেন
“তোর বাবার বিশ্বাস নষ্ট করিস না প্লিজ
আমি হতাশ দৃষ্টিতে আম্মুর দিকে তাকিয়ে ছোটো করে বললাম
ওকে তোমরা যেটাকে ভালো মনে করো
আমার কথায় আম্মু খুশিতে গদগদ করে উঠে বললেন
” যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে

সন্ধ্যায়_
সবাই আমাকে হলুদ লাগাতে ব্যাস্ত সবার আনন্দ উচলে পড়ছে
কিন্তু আমার মন যে কিছুতেই মানছে না আমি কি করবো কি হবে আমার_আয়ান ভাইয়াকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব না
আমি আবারো ডুব দিলাম অতীতে

ফ্ল্যাশব্যাক__
সেদিন আয়ান ভাইয়ার প্রোপজালের স্টাইল টা দেখে আমি অবাক হলাম
সাজিয়ে গুছিয়ে ও কিছু বলতে পারলো না মানুষটা
কিন্তু তার প্রতিটি কথা হৃদয়ে গেথেঁ গেছে_
বৃষ্টিতে ভেজার পর আসার সময় ভাইয়া আমার হাতে ২ টা ঔষধের প্যাকেট ধরিয়ে দিলেন
আমি বিষ্ময় নিয়ে বললাম
“এগুলো কেনো?
আয়ান ভাইয়া হেসে বললো
” তোর মতো গাধীর তো কোনো কমন্সেন্স নেই একে তো বৃষ্টিতে ভিজেছিস_তার উপর আবার তুই একটা শীত কাতুরে
গিয়ে নিশ্চই জ্বর বাধাবি
তখন কে দেখবে _তাই মনে করে ঔষুধ গুলো খেয়ে নিস
আমি আর কিছু না বলেই সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলাম

ঘরে এসেই জামাকাপড় চেঞ্জ করে মোবাইল হাতে নিতেই আয়ান ভাইয়ার টেক্সট আসলো
“ঔষধ খেয়েছিস?
আমি উত্তর দিলাম
” হ্যা
ভাইয়া আবার মেসেজ দিলো
“একটা থাপ্পড় দিবো
মিথ্যা কথা কেনো বলিস?
যা ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়

আমি ওষুধ খেয়ে টেবিলে বসলাম_ডাইরিটা হাতে নিয়েই ভাইয়ার বলা প্রতিটা কথা কাগজে বন্ধি করলাম

পরদিন থেকে ৪ দিন আর ভাইয়ার কোনো খোজ মেলে নি
আম্মুর কাছ থেকে জানতে পারলাম ভাইয়ার জ্বর হয়েছে বিছানা থেকে ও নড়তে পারছে না_এভাবেই কাটতে যায় আমাদের দিন

ভাইয়ার পাগলামি গুলো আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করে দিতো
প্রতিদিন একবার হলেও আমাদের দেখা হতো_
কিন্তু কখনো মুখ ফুটে বলা হয় নি ভালোবাসি তোমায়
কখনো বলা হয় নি আমার #হৃদয়ে_তুমি শুধুই তুমি

এভাবে কেটে যায় দিন
আমি যখন নাইনে পড়ি তখন আমার মডেল টেষ্ট পরিক্ষা চলছিলো_আর একমাস পরেই ফাইনাল পরিক্ষা
পরিক্ষা শেষে আসার সময় পার্কের দিকে দেখতে পাই একটা ছেলে আর একটা মেয়েকে_তাদের দেখেই আমার রাগ উঠলো_কারণ ছেলেটি আর কেউ না আয়ান ভাইয়া_উনাকে মেয়েটির এতোকাছাকাছি দেখে আমি সহ্য করতে পারলাম না
ভাইয়াকে বাড়ীতে ডেকে অনেক বাজে বিহেভ করি

পরে ভাইয়ার নাম্বার ব্লক করে দিই_ফেসবুক থেকেও ব্লক করি_ভাইয়া আমার সাথে যোগাযোগ না করতে পেরে বাধ্য হয়ে লুবাবা (আমার কাকাতো বোন) কে দিয়ে একটা চিঠি পাঠায়,,, লুবাবার বয়স ৯ বছর

ঘরে ভুকতেই লুবাবা আম্মুকে দেখে ভয় ভয় পেয়ে চিঠিটা আম্মুর হাতে তুলে দেয়__
তারপর আম্মু আমাকে অনেক মারে_অনেক ঝামেলা ও হয় এসব নিয়ে
আর আম্মু ভাইয়াকে বারণ করে দেয় যাতে আমাদের বাসায় আর না আসে।তারপর ভাইয়ার সাথে আমার আর যোগাযোগ হয় নি ৩ বছর।প্রথমে আমি যোগাযোগ করতে চাইলে ও ভাইয়া আমাকে ইগনোর করে।বাট পরে আমি চেয়েছিলাম সে যখন নিজের ইচ্ছাতে চলে গেছে আমার তার জীবন থেকে দূরে সরে আসা উচিত তাই আর উনার নাম্বার কখনো আনব্লক ও হয়নি যোগাযোগ ও ছিলো না

বর্তমান
ভাবনার সাগর পাড়ি দিতেই আমার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোটা নোনা জল_

আমি বিছানার মাঝ বরাবর চুপ করে বসে আছি।
পার্লার থেকে দু জন মহিলা এসেছে আমাকে সাজানোর জন্য_তারা আমাকে সাজিয়ে দিয়েছে।
আমি হলুদের মধ্যে লাল পাড়ের একটা শাড়ী পরেছি।দুই হাত ভরা কাঁচের চুড়ি,,,, চোখে গাঢ় কাজল,আর ঠোঁটে লাল টকটকে লিপষ্টিক,,,,

আমি চারদিক একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম
সবাই কতো আনন্দে আছে_ সবার মুখে হাসির ঝলক।

রাত তিনটা আমি এখনো হলদে পাখির সাজে_ভাবলাম শেষ বারের জন্য হলেও ভাইয়ার সাথে আমার একবার কথা বলে নেওয়া দরকার।
ছাদের দিকে রওনা দিতে নিশান (আয়ান ভাইয়ার বড় ভাই) ভাইয়াকে দেখে বললাম (ভাইয়া আমাদের ব্যাপার টা জানতো)
“ভাইয়া একটু শোনো
নিশান ভাইয়া ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল
” কি বলবি তাড়াতাড়ি বল তোর ভাবি আমাকে ডাকছে যেতে হবে
আমি কাচুমাচু হয়ে বললাম
“আয়ান ভাইয়াকে বলো যে আমি ছাদে আছি আর তার জন্য অপেক্ষা করছি
নিশান ভাইয়া বললো
” আয়ান তো ছাদেই আছে
আমি হালকা হেসে বললাম
“ঠিক আছে”

সিড়ির সামনেই দেখা হলো মামনির সাথে_মামনি বললেন
“কোথায় যাচ্ছিস এতো রাত্রে?
আমি বললাম
” অনিতা ছাদে আছে আমাকেও যেতে বলেছে
মামনি আমার কথায় জবাব দিলেন
“বিয়ের কনে কে এভাবে কোথাও যেতে নেই
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
” কেনো
মামনি হেসে আমার গাল টিপে বললেন
“ভুত পেত থাকে ছাদে
আর এখন তুই একদম যাবি না
আমি এবার বললাম
” যাবো আমি
মামনি বললেন
“তোর সাথে কথায় আমি পারবো না।এক মিনিট দাড়া আমি আসছি

মামনি একটু পর হাতে একটা দিয়াশলাই নিয়ে আমার শাড়ির এক কোণা হালকা পুড়িয়ে আমার কপালে আলতো একটা চুমু দিয়ে বললেন
” এভাবে ছাদে যাওয়া ঠিক না মা।জীন পরি অনেক কিছুই ছাদে থাকে
আমি আর কিছু বললাম না হালকা হেসে ছাদের দিকে আবার হাটা শুরু করলাম

ছাদে গিয়ে দেখলাম আয়ান ভাইয়া ছাদের এক কোণায় চুপটি করে দাড়িয়ে আছেন
আমার উপস্থিতি টের পেয়ে বললেন
“বিয়ের কনে কে এভাবে ছাদে আসতে নেই

এবার আমার রাগ চরম মাত্রায় পৌঁছে গেলো_আয়ান ভাইয়ার সামনে গিয়েই উনার বুকে কিল ঘুষি দিতে ফুফিয়ে কান্না করে দিলাম
আয়ান ভাইয়া আমাকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন_আমার কান্নার বেগ আরো বাড়তে লাগলো_উনি আমার চুলে হাত বুলালেন_শান্ত গলায় বললেন
” এভাবে কাঁদার কি আছে?
আমি কি মরে গেছি নাকি?
এবার আমি উনার বুক থেকে সরে গলা টিপে ধরে বললাম
“এমন বাজে কথা যদি আরেকবার শুনি তো একেবারে জানে মেরে পেলবো_
ভাইয়া মুচকি হাসলেন
তারপর সামনে থাকা হলুদের বাটি থেকে আমার মুখে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে নিজের মুখ আমার মুখের সাথে হালকা ঘসে নিজের মুখেও লাগিয়ে নিলেন

আমি সন্দেহ নিয়ে বললাম
” এখানে হলুদের বাটি এলো কিভাবে?
ভাইয়া হেসে বললেন
“আমি জানতাম যে আমার মিষ্টি পাখিটা আমার সাথে দেখা করতে আসবেই
আমি এবার ভাইয়াকে আবার জড়িয়ে ধরে বললাম”
“আমি পারবো না প্লিজ
এতোটুকু বলেই আমি দৌড়ে নিচে নেমে এলাম

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে