হৃদয়ের গহীনে পর্ব-০৩

0
2434

#হৃদয়ের_গহীনে🍁
part 3
#সারা_মেহেক
“আরে তুমি!!”অবাক হয়ে আফনান বললো।

আকাশ আফনানকে জিজ্ঞাসা করলো,

“তুই চিনিস ওকে??”

“নাহ,মানে চিনি না। দেখেছিলাম ওকে আরকি। তোকে বলেছিলাম না,সেদিন আমার গাড়ীর সামনে এক মেয়ে এসে পড়েছিলো। এই মেয়েই সেই মেয়ে।”

“ওওও,এই মেয়েই সেই মেয়ে।
আচ্ছা,আমরা কি এভাবে বাইরেই কথা বলতে থাকবো নাকি?ভিতরে চল।”

“হুম।”

মুসকানের কাছে সব শুনে আকাশ আর আফনানের খুব কষ্ট লাগে।একটা মেয়ে যে এ দুনিয়ায় এতোটা অসহায় আর একা হতে পারে তা হয়তো মুসকানের সাথে দেখা না হলে আকাশ আর আফনান জানতেই পারতো না।

আফনান বললো,

“তো মুসকান,তোমার তাহলে এখন থাকার জায়গা নেই।”

কিছুক্ষণ ভেবে আফনান বললো,

“তুমি আমাদের বাসায় থাকতে পারো।সেখানে অনেক ভালো সময় কাটবে তোমার।কারন আমার আম্মু অনেক মিশুক।”

মুসকানকে আফনানের বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে আকাশের বুকে ছ্যাঁত করে উঠলো।সে তৎক্ষণাৎ বললো,

“আরে মুসকান এখানেই থাকুক।এখানে তো কোনো সমস্যা নেই। শুধু শুধু আন্টীকে জ্বালানোর কি দরকার।”

মুসকান বললো,

“আমি দেশে ফিরে যাবো।আমি লন্ডনে থাকবো না।”

মুসকানের কথা শুনে আকাশ আর আফনান একসাথে বলে উঠলো,

“কেনো!!!”

মুসকান তখন বললো,

“আমি অযথা অন্য কারোর উপর বোঝা হতে চাই না।আমি দেশে গিয়ে কাজ করবো।নিজের ইনকামের টাকা দিয়ে নিজেই চলবো।
আপনারা শুধু আমাকে একটা বিষয়ে সাহায্য করুন।আমার পাসপোর্ট টা ফিরে পেতে সাহায্য করুন প্লিজ।”

আকাশ বললো,

“দেখো মুসকান,যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে। তুমি এখন থেকে এখানেই থাকবে।তোমার এখানে কোনো সমস্যা হবে না সেটার গ্যারিন্টি আমি দিচ্ছি।তুমি নিশ্চিন্তে এখানে থাকতে পারবে।”

“হুম,মুসকান। আকাশ ঠিক বলেছে। তুমি এখানে কোনো প্রকার টেনশন ছাড়া থাকতে পারো।”

মুসকান বললো,

“কতোদিন এভাবে এখানে থাকা যায় বলুন।আপনারা অপরিচিত মানুষ।আর আমি কোন অধিকারে এখানে থাকতে যাবো।আমি পারবো না এভাবে এখানে থাকতে। আমার পক্ষে সত্যিই সম্ভব না। আমি আগেও বলেছি,এখনও বলছি আমি চাই না কারোর উপর বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। এভাবে জীবনযাপন করা আমার পক্ষে সম্ভব না।আমি দেশে ফিরে যেতে চাই।”

এবার আকাশের প্রচুর রাগ উঠে যায়।সে রেগে জোরে ধমক দিয়ে বলে,

“এই মেয়ে,সমস্যাটা কি তোমার হুম?সেই কখন থেকে একটা কথা বলছি,কানের মধ্যে কি ঢুকে না?তুমি এখানে থাকবে মানে এখানে থাকবে। আর একবার ও যদি এখান থেকে যাওয়ার কথা বলেছো তো আমার চপয়ে খারাপ কেউ হবে না।”বলে আকাশ সেখান থেকে চলে যায়।

এদিকে মুসকানের তে ভয়ে কাঁপাকাঁপি অবস্থা।আকাশ যে এভাবে হুট করে এমন ধমক দিয়ে কথা বলবে সে আশা করেনি।
আবার আফনানও আকাশের এমন রেগে যাওয়া দেখে অবাক হয়ে যায়।মুসকানের অবস্থা দেখে সে বলে,

” তুমি ভয় পেয়ো না। ঐ একটু রেগে গিয়েছিলো তো তাই এমন হয়েছে।ওর পক্ষ থেকে আমি সরু বলছি। তুমি এখন রেস্ট নাও।ওকে?”

মুসকান জবাবে কিছুই না বলে শুধু মাথা নাড়ায়।
আফনান রুম থেকে চলে গেলে সে দরজা আটকিয়ে বারান্দায় এসে বসে।
কি থেকে কি হয়ে গেলো তার জীবনে।নিজের বাবা মার কথা মনে আসতেই চোখ দিয় অঝোর ধারায় পানি পরতে থাকে।খুব কষ্ট হচ্ছে খুব। এটা কাউকেউ বুঝানো যাবে না।

এদিকে আকাশের রুমে এসে আফনান হাজির হলো। সে আকাশের কাছে তেড়ে গিয়ে বললো,

“এটা কোন ধরনের ব্যবহার!!!একটা মেয়ের সাথে কেউ এমন বিহেইভ করে বুঝি!!তারপর আবার মুসকানের মতে মেয়ের সাথে।”

আকাশ জানালার দিকে তাকিয়ে ছিলো।আফনানের কথায় জানালা থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলে,

“কি করবো বল।ও বার বার যাওয়ার কথা বলছিলো।এতো বুঝালাম তাও বুঝলো না।তাই ওভাবে বলতে হয়েছে।”

“তুই শান্ত থেকেও কথাগুলো বলতে পারতি।রাগটাকে একটু কন্ট্রোল করার ট্রাই কর।”

“হুম ঠিক বলেছিস।আমি গিয়ে মুসকানকে সরি বলে আসি তাহলে।”

“আমিও যাই তের সাথে।বলা যায় না। আবার কি উল্টা পাল্টা করে বসিস।”

আকাশ আর আফনান দরজা নক করছে।
বারান্দা থেকে আওয়াজ শুনে চোখের পানি মুছে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দিলো মুসকান।

দরজা খুলার সাথেসাথে আকাশ বললো,

“আই এম রিয়েলি সরি মুসকান। আমি ইচ্ছা করে ওমন করিনি। আসলে রাগের মাথায় ওমন করেছিলাম। আই এম এক্সট্রেমলি সরি।”

মুসকান মুচকি হেসে জবাব দিলো,
“ইটস ওকে। ”

মুসকানের এ হাসিতে আকাশ, আফনান দুজনেই ফিদা হয়ে গেলো।

আকাশ আর আফনান রুমের মধ্যে ঢুকে সোফায় বসলো।
আকাশ বললো,

“আচ্ছা,তুমি এই জামাটা কয়দিন ধরে পরছো??”

মুসকান জবাব দিলো,

“যেদিন বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলো সেদিন থেকে।”

আফনান আর আকাশ চোখ বড় বড় করে বললো,

“এতোদিন!!”

মুসকান অবাক হয়ে গেলো। কারন সে খেয়াল করলো যে আকাশ আর আফনান বেশ কয়েকবার একই কথা একসাথে বলছে।মনে হচ্ছে তারা টুইনস। কিন্তু আসলে এমন কিছুই না।

আফনান বললো,

“এক জামা এতোদিন কেনো পরছো?”

মুসকান মাথা নিচু করে জবাব দিলো,

“এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।কারন কোনো জামা আমার কাছে নেই। লাগেজ তে সেদিনই ফেলে এসেছি।”

আকাশ বললো,

“আচ্ছা সমস্যা নেই।আমি তোমার জন্য মার্কেট থেকে জামাকাপড় আনিয়ে দিচ্ছি।কিছুক্ষণ এর মধ্যে পেয়ে যাবে।কারন মার্কেট কাছেই।”

মুসকান একটা বিনয়ি হাসি দিয়ে বললো,

“ঠিক আছে।”

আকাশ আর আফনান যেনো পাগল হয়ে যাচ্ছে। এ মেয়ের হাসি যেনো তাদের পুরো দুনিয়া উল্টে দিবে।দুজনের মনের মধ্যেই যে মুসকান একটু একটু করে জায়গা বানিয়ে নিচ্ছে তা দুজনের কেউই জানে না।মুসকানও না। এর পরিণতি যে কি হবে তা কেউই জানে না।

একজন সার্ভেন্ট এসে মুসকানকে কিছু ড্রেস দিয়ে গেলো।
ড্রেস এর প্যাকেট খুলে মুসকানের রাগ উঠে গেলো। রাগ উঠারই কথা। কারন একটা ড্রেসও তার পরার মতো না।সবই শর্টস। আকাশের উপর যে মুসকানের এখন চরম রাগ সেটা তার চেহারা দেখেই প্রকাশ পাচ্ছে।
সে তাড়াতাড়ি নিচে গিয়ে আকাশকে বললো,

“আপনাকে কি আমার ঐ ধরনের মেয়ে মনে হয়!!!!”

এভাবে হুট করে মুসকান আসায় আকাশ আর আফনান চমকে উঠে।আকাশ মুসকানের কথায় অবাক হয়ে বলে,

“কোন ধরনের মেয়ে??”

“ঐ ধরনের মেয়ে যারা এসব শর্টস পরে।আমাকে দেখে আপনার কোন এংগেলে মনে হয় যে আমি ঐধরনের মেয়ে??বলুন।”

মুসকানের এ কথায় আকাশ আর আফনান মুসকানকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করতে থাকে।
তাদের দুজনের এ কাজে মুসকান বেশ লজ্জায় পরে যায়।

আফনান বলে যে,

“কোনো এংগেল দিয়েই না।”
এতে আকাশ আর আফনান একসাথে হেসে উঠে।মুসকানের তো ইচ্ছা করছে দৌড়ে এখান থেকে পালিয়ে যেতে।

আকাশ বুঝতে পারে যে মুসকান লজ্জা পেয়েছে।সে বললো,

“আরে লজ্জা পেয়ো না। আমরা যাস্ট মজা করছিলাম। আসলে এখানে এসব ড্রেস ছাড়া অন্যকিছু পাওয়া যায় না। এখানে তে আর থ্রি পিছ পাবো না।সো তোমাকে এগুলোই পরতে হবে।”

মুসকান আঁতকে উঠে বলে,

“আমি এসব কখনোই পরতে পারবো না। দরকার হলে এই ড্রেসেই থাকবো কিন্তু এসব পরবো না।”

আফনান মুসকানের কথা শুনে বসা থেকে উঠে বলে,

“টেনশন করো না মুসকান। এখানে একটা ইন্ডিয়ান শপ আছে,সেখান থেকে কিছু শাড়ী এনে দিলেই তো হবে।শাড়ীতে তো আর কোনো সমস্যা নেই?”

“শাড়ী পরা ছাড়া তো আর কোনো উপায়ই নেই।”

আকাশ গিয়ে আফনানের পিঠে চাপড় বসিয়ে বলে,

“বাহ দোস্ত,তুই তো ব্রিলিয়ান্ট রে।কতো ইজিলি মুসকানের প্রবলেম সলভ করে দিলি।”

আফনান একটু ভাব নিয়ে বলে,

“এর জন্য বুদ্ধি থাকতে হয়।যা তোর নেই।”

আকাশ এটা শুনে আফনানকে মারার জন্য তার পিছে লাগে।আকাশ মারতে আসছে বুঝতে পেরে আফনান দৌড় লাগায়।
দুজন এদিক থেকে ওদিক দৌড়াচ্ছ।শেষ পর্যন্ত আকাশ আফনানকে ধরতে পেরে পিঠে এক কিল বসিয় দেয়।মারা পর দুজনেই একসাথে হেসে উঠে।
আর এদিকে এদের দুজনের এ কান্ড দেখে মুসকান খিলখিল করে হেসে উঠে।

মুসকানের হাসি আকাশ আর আফনানের কানে পৌঁছালে তারা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মুসকানের দিকে।

চলবে…..
(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।ধন্যবাদ)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে