হৃদয়ের অন্তরা পর্ব-১০

0
1318

#হৃদয়ের_অন্তরা❤️
#part_10
#sarika_Islam
,
,
হৃদয় অন্তরাকে নিজের বুক থেকে তুলে ঝাকিয়ে বলল,,,

_প্রেমটা কিন্তু তুমিই আমাকে শিখিয়েছ অন্তরা,,
_আমি?(অবাক হয়ে)
_হুম তুমিই,,
_আমি মানি না,আমি তো আপনাকে চিনিই না তাহলে কিভাবে?(ভ্রু কুচকে)
_দাড়াও,,

বলেই অন্তরাকে ছেড়ে তার পকেট থেকে ফোন বের করে তাদের সেদিনের সেল্ফিটা দেখলো,,

_দেখ,,

বলেই অন্তরার মুখের সামনে ধরেছে,,অন্তরা দেখে তো অবাক,, হ্যা সত্যি তো আমিই হৃদয়কে পিছন থেকে জরিয়ে রেখেছি,,এইসব ভাবতে লাগল,,হৃদঅয় অন্তরার চুপ্টি দেখে বলল,,

_তুমিই সারাদিন আমার সাথে থাকতা, আমার সাথে ঘুমাতা,আমার এত্ত কাছে এসে এখন চলে যাবা তাতো হবে না কখনো,,তোমার অভ্যাস বানিয়েছো তুমি আমাকে,এখন আমি এই অভ্যাস ছাড়তে পারবো না,,তুমি মনে করো সমস্যা নেই আমি সময় দিব,কিন্তু বিয়ে করে তারপর মনে করো,আমার তুমি আমার কাছেই থাকবে নাকি জিসানের কাছে,বুজেছ,,,

অন্তরা কিছু বলল না মাথা নিচু করে চুপ করে রইল,,হৃদয় বলল,,

_এখন রেডি হও ভালো মানুষের মতো আমি তোমার হ্যা বা না শুনতে চাই না,,,

বলেই অন্তরাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল,,,অন্তরা সেখানেই বসে রইল,,হৃদয়কে বের হতে দেখে অন্তরার মা তরিঘরি করে অন্তরার রুমে ঢুকলো,,ঢুকে দেখে অন্তরা এখনও সে রকম ভবেই বসে আছে,,সে তারাতারি অন্তরাকে তুলে নিল,,অন্তরা কোন কথা বলছে না মু্র্তির মতো হয়ে আছে তার মা তাকে যেভাবে নারাচ্ছে সে নরছে,যেভাবে ঘুরাচ্ছে সে ঘুরছে,,সাজগুজ শেষ করে তার মা তাকে আয়নার সামনে নিয়ে গেল,,

_মাসাল্লাহ,, আমার মেয়েকে তো পুরাই পরি পরি লাগছে,,তুই খুব লাকি হৃদয়ের মতো একজন জীবন সঙ্গি পেয়ে,,আল্লাহ তোদের সব সময় ভালো রাখুক,,

বলেই চলে গেল,,,অন্তরার এখন টনক নরল,,তার বিয়ে হয়ে জাচ্ছে সেও আবার ওই হৃদয়ের সাথে?সে এই বিয়ে করবে না কখনও না,,সে পালাবে হ্যা পালাবে জিসানের সাথে,,তারাতারি করে ফোন করল জিসানের নাম্বারে,,দেখল নাম্বার বিজি আসে,,অন্তরা বেশ কয়েক বার ট্রায় করল কিন্তু নাহ সেই একিই,,যিদ্দে রাগে ফোন্টা বিছানায় ছুরে মারল,,সে বারান্দায় গিয়ে দারালো,,এখান থেকে ঝাপ দিবে মরে যাবে তাও ওর কাছে বিয়ে বসবে না,,লেহেংগা উচু করে বারান্দায় রেলিংএ উঠতে যাবে ঠিক সেই মুহুর্তে কেউ তাকে পিছন থেকে ধরে ফেলল,,অন্তরার বুক কেপে উঠলো,,বুকটা ধুকধুক করতে লাগলো পিছে ফিরে তাকালো,,যাকে দেখলো সে মটেও তাকে আশা করেনি,,ঘুরে দেখে হৃদয় রক্ত চক্ষু নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে,,সেই চোখ যে কতোটা ভয়ানক লাগছে অন্তরার কাছে মনে হচ্ছে এখনি কাচা গিলে খাবে,,হৃদঅয় কিছু না বলে অন্তরাকে টেনে টেনে নিয়ে বারান্দার থেকে নিয়ে আসল,,অন্তরা চিল্লাতে লাগলো,,

_আমি বিয়ে করবো না আমি জিসানকেই বিয়ে করবো,,,

হৃদয় চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজের রাগটাকে কান্ট্রল করছে,,অন্তরার হাত ধরে হাটছে,,অন্তরার সেই একিই কথা আবারও বলল,,এইবার হৃদয়কে আর আটকায় কে?সে অন্তরার দিকে ঘুরে কষে দিল এক থাপ্পর,,অন্তরা থপ্পর খেয়ে কিছুটা দূরে সরে গেল,,গালে হাত দিয়ে ছল ছল চোখে হৃদয়ের দিকে তাকালো,,হৃদয় অন্তরার সামনে এসে তার বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলল,,

_জিসানের গার্লফ্রেন্ড আছে,,জিসান একটা কেরেক্টারলেস ছেলে,,ওর তোর মতো অনেকেই আসে যাকে পায় তাকেই চায়,,তোর প্রতি ওর চাওয়াটা সেই আগের থেকেই,,
_আপনি ওতো কেটেক্টারলেস,,(মাথা নিচু করে বলল)
_হ্যা আমি কেরেক্টারলেস আমি কেরেক্টারলেস শুধু মাত্র তোর জন্য অন্য কারো জন্য না তোর জিসানের মতো,,, আর শুনে রাখ লাস্টবারের মতো বলছি তোর মুখে যেন জিসানের নাম আমি আরেকবার না শুনি,,

অন্তরা এইবার কান্নাই করে দিল,,হৃদয় এত্ত করে তাকে ধমকাচ্ছে আবার বাহুটা এত্ত জোরে চেপে ধরে রেখেছে সব দলা পকিয়ে কান্না করে দিল,,হৃদয় অন্তরার কান্না দেখে বাহু ছেরে দিল,,অন্তরার হাতের আঙ্গুলের ভাজে ভাজে তার আঙ্গুল দিয়ে হাত চেপে ধরল,,তারপর হাটা দিল বাহিরে,,বাহিরে গিয়ে সবাইর উদ্দেশ্য হৃদয় বলল,,

_দ্রুত বিয়ে পরান,আমি আর এক মুহুর্তও দেরি করতে চাই না,,

বলেই দুইজন একসাথেই বসল,,অন্তরার হাত আর ছারলো না যদি আবার পালিয়ে যায় তার কোন ভরসা নেই,,কাজি বিয়ে পরানো শুরু করলো,,হৃদয় ঝটপট কবুল বলে ফেল্ল,কিন্তু অন্তরা বলছে না, সে তার হাত ছুটানো নিয়ে পরে আছে কিন্তু হৃদয়ের শক্তির সাথেকি আর পেরে উঠবে?তাই মোচড়ামুচড়ি করতে লাগল,,কাজি সাহেব আবার অন্তরার উদ্দেশ্যে বলল,,

_বলো মা কবুল,,

অন্তরার কানে যেন কথা পৌছাচ্ছেই না,,হৃদঅয় এইবার অন্তরার দিকে তাকালো,,অন্তরা হাতের দিক থেকে মাথা তুলে হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে আতকে উঠলো,, হৃদয় চোখ রাঙ্গিয়ে অন্তরা দিকে তাকিয়ে আছে,,অন্তরা হৃদয়ের এই চাহনি দেখে ভয়ে ঢোক গিলল,তারপর বলেই দিল কবুল,,,কাজি সাহেব বলল,,

_আলহামদুলিল্লাহ বিয়ে সম্পন্ন,, এখন থেকে আপনারা দুইজন স্বামী স্ত্রী,,

হৃয়ের মুখে হাসি ফুটে উঠলো,, অবশেষে অন্তরা তার হয়েছে,,খালেদ মিয়া হাসান চৌধুরী একে অন্যকে জরিয়ে ধরে বাধাই দিল,,হেনা চৌধুরী আর অন্তরার আম্মুও,,হৃদয় এখন আর এখানে থাকবে না সে তার বউকে নিয়ে তার বাসায় যাবে,,

_আমরা এখন চলি,,,

খালেদ মিয়া বলল,,

_একি বাবা এখনি চলে যাবে তাকি হলো?তুমি বরং কাল সকালে যেও,,এখন তো রাত হয়ে গেছে,,
_নাহ চাচা আমি এখনি যাবো,,চলো আব্বু,,

বলেই সেই একিইভাবে অন্তরার হাত ধরে উঠলো,, অন্তরার এবার বেশ বিরক্ত লাগছে তার হাত ছাড়ার নামই নিচ্ছে না হৃদয়,এখন তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে এখনওকি সে পালাবে নাকি,,অন্তরা বলল,,

_আমি রুমে যাবো হাত ছাড়েন,,

হৃদয় অন্তরার কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে বলল,,

_চলো,,

বলেই হাটা দিতে নিলে অন্তরা বলল,,

_আমি একা যেতে পারবো ছাড়েন,আমি কোন বাচ্চা না হারিয়ে যাবো,,(বেশ বিরক্ত হয়ে বলল)
_চলো বলেছি আমি নিয়ে যাবো চলো,,(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
_উফফফফফ,,

বলেই চলে গেল হৃদয়ের সাথে,,হৃদয় মুচকি হেসে হাটা দিল,,

অন্তরা আর হৃদয় রুমে গিয়ে দাড়ালো,,অন্তরা এইবার হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,

_ওয়াশ্রুমে যাবো সেখানেও কি আপনি সাথে যাবেন?(দাতে দাত চেপে বলল)
_তুমি চাইলে যেতে পারি জানেমান(বলেই এক চোখ টিপ মারল)
_উফফফফ,অসভ্য,,

হৃদয় হাতের বাধন ঢিলে করতেই হাত ছারিয়ে দর মারল অন্তরা,,ওয়াশ্রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিল,,ঘন ঘন শ্বাস ছাড়লো,,যেই হাতটা ধরা ছিল সেই হাতটা অন্য হাত দিয়ে ঘসছে মনে হচ্ছে এতক্ষন কি জানি ছিল হাতে আল্লাহ,,বেশ কিছুক্ষন পর অন্তরা বের হলো,,দেখলো হৃদয় বাহিরেই দারিয়ে দারিয়ে ফোন গুতাচ্ছে,,,অন্তরার বেশ বিরক্ত লাগল,,মনে হয় আমি পালিয়ে যাবো আমাকে পাহাড়া দেই যত্তসব,,বলেই হাটা দিতে নিলে হৃদয় আটকে দেয়,,,

_দারাও,,

অন্তরা দাঁড়িয়ে যায় হৃদয়ের দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়,,হৃদয় ডান হাতে ফোন নিয়ে বাম হাতে অন্তরার ডান হাত আবার ধরে নিল,,অন্তরা এইবার বলেই ফেল্ল,,

_কি হচ্ছে টাকি?আমি কি বাচ্চা যে সব সময় ধরে রাখতে হয়?
_তাহলে তুমি বড় চলো বাসর সেরে ফেলি,,কি বলো?(বলেই মুচকি হাসল)
_উফফ যত্তসব ফালতু,,,

বলেই হাটা ধরলো হৃদয়ও হাটা ধরলো,, বাহিরে গিয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে নিজের বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলো,,অন্তরা খুব কান্না করেছে তার মা বাবাকে ধরে,,গাড়িতে উঠে বসলো,,অন্তরা একদম জানালা ঘেষে বসেছে আর হৃদয় একদম অন্তরাকে ঘেষে বসেছে,,হাসান চৌধুরী ড্রাইভ করছে আর তার পাশে বসা তার বউ হেনা চৌধুরী,,,অন্তরা বাহিরে দৃশ্য দেখতে বেস্ত,,,আর হৃদয় অন্তরাকে দেখতে,, অন্তরা বাহিরের প্রকৃতি দেখছে হঠাৎ অনুভব হলো কেউ তার শাড়ি ভেদ করে পেট ধরে রেখেছে,,সে শাড়ির উপর দিয়ে সেই হাতের উপর হাত রাখলো,,তার পাশে তাকাতেই দেখল হৃদয় 32টা দাত বের করে তার দিকে তাকিয়ে আছে,হৃদয় তার পিছে আর সামনে দুই হাত দিয়ে তাকে একদম নিজের কাছে ঘিরে রেখেছে অন্তরা না পারছে নড়তে না পারছে কিছু বলতে,,সে হৃদয়ের দিকে চোখ রাঙ্গিয়এ তাকালো তাতেও হৃদয়ের কোন হেলদুল নেই সে তার মতোই অন্তরাকে ঝাপ্টে ধরে বসে আছে,,অনেক দূর পথ পার করে অবশেষে তারা বাসায় পৌছালো,,হৃদয় আর অন্তরা তাদের রুমে গেল,,রুমে গিয়ে হৃদয় বলল,,

_জাও তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো, অনেক জার্নি করেছ আমিও ফ্রেশ হই,,

অন্তরা কিছু না বলে নিজের একটা জামা হাতে নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল,,হৃদয়ও আরেক ওয়াশ্রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে,,,হৃদয় ফ্রেশ হয়ে এসে পরেছে,,অন্তরা কিছুক্ষন পর বেরিয়ে আসলো,,হৃদয় অন্তরার দিকে তাকিয়ে থমকে গেল,,হাল্কা মিষ্টি রঙ্গের একটি নাইটি পরেছে,,চুল থেকে পানি পরছে,,ভিজা চুলে অন্তরাকে আরও মায়াবি লাগছে,,অন্তরাও হৃদঅয়ের দিকে তাকিয়ে আছে,,হৃদয় শুধু টাওজার পরেছে,,শরীর এখনও বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে,,দুইজন দুইজনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,হৃদয় মুচকি মুচকি হাসছে তা দেখে অন্তরা তারাতারি চোখ নামিয়ে নিল,, এখন নিজের কাছেই নিজের কেমন যেন লাগছে কেন বেহায়ার মতো তাকিয়ে ছিল অন্তরা?লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছে,,নিজেকে হাজারটা গালি দিয়ে সামনে গেল,,দরজার সামনে আস্তেই হৃদঅয় অন্তরার পথ আটকায়,,অন্তরা ভ্রু কুচকে বলল,,

_কি হলো?যেতে দিন আমায় পথ আটকেছেন কেন?
_নাহ কোথাও যেতে দিব না,,এই রাতে কোথায় যাবে তুমি?আমার কাছেই থাকো আসো,,

বলেই অন্তরার হাত দেয়ালে চেপে ধরলো,,নেশা লেগে গেছে হৃদয়ের তার এখন অন্তরাকে চাই খুব করে চাই,,আস্তে আস্তে অন্তরার দিকে হৃদয়ের মাথা আনতে লাগলো,,অন্তরা বারে বারে তার মাথা এদিক অদিক সরাতে লাগলো,, হৃদয়ের এবার বেশ বিরক্ত লাগছে,,

_কি সমস্যা?এমন করছ কেন?
_আমাকে কি মেরে ফেলতে চান আপনি?

বলেই হৃদয়কে ধাক্কা মারলো,,হৃদয় ছিটকে কিছুটা দূরে সরে গেল,,অবাক হয়ে অন্তরার দিকে তাকিয়ে আছে,,

_কিস করলে কেউ মরে?(অবাক হয়ে)
_হ্যা,,কিস কিরলে প্রেগন্যান্ট হয় তারপর বাচ্চা হওয়ার সময় মেয়েরা মারা জায় আমি অকালে মরতে চাই না,,,

হৃদয় আরেকদফা অবাক হলো,,কি বলছে ও এগুলো?হৃদয় বলল,

_তোমাকে কে বলেছে এগুলো?
_আমি ছোট থেকেই যানি,,(বলেই মুখ ফুলালো)

হৃদয় ফিক করে হেসে দিল,,হৃদঅয় হাসি থামিয়ে বলল,,

_আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আজকে দেখো কিস করলে প্রেগন্যান্ট হয় নাকি,,যদি কালকে না হও তাহলে একটা শর্ত আছে তা মানতে হবে,,
_কি শর্ত?(ভ্রু কুচকে)
_প্রতিদিন তুমি আমাকে কিস করবা,,ঘুম থেকে উঠার পর কিস,আমি ক্লিনিকে জাওয়ার সময় কিস,,ক্লিনিক থেকে আসার সময় কিস,, রাতে তো আছেই,,(বলেই চোখ টিপ মারলো)
_আল্লাহ তাহলে তো আপনি প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবেন তাও এত্তগুলি বাচ্চা,,(অবাক হয়ে বলল)

হৃদঅয় বেচারা ভেবাচেকা খেয়ে গেল,,সে অন্তরাত থেকে এই কথা আশা করেনি,,সে এখন হাসবে না কাদবে সে নিজেও যানে না,,

চলবে🖤
(ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন🥰)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে