#হৃদয়ের_অন্তরা❤️
#part_8
#sarika_Islam
,
,
সকালে,,,
হৃদয় নিচে নামল ব্রেকফাস্ট করতে,,ডাইনিং টেবিলে খেতে বসল,,ডাইনিং টেবিলের বরাবর রান্না ঘর,,হৃদয় লক্ষ করল অন্তরাও তার মার সাথে রান্নায় সাহায্য করছে,,দেখে কিছুটা অবাক হলো,,পর মুহুর্তে ভাবলো কাল রাতের কথা,,,কিছুক্ষনের মধ্যে তার বাবাও আসল,, হেনা চৌধুরী তাদের জন্য খাবার নিয়ে আসল আর বলল,,
_দেখ হৃদয় সকাল থেকে অন্তরা আমাকে রান্নায় হেল্প করছে,,আমার কি মনে হয় মেয়েটা সুস্থ হয়ে গেছে,,(বলেই খুশি হয়ে গেল)
_সুস্থ হলে তো ভালোই,,(খুশি হয়ে তার বাবাও বলল)
সবাই একসাথে খাবার খাওয়ার জন্য বসল,হেনা চৌধুরী অন্তরাকে বলল,,
_অন্তরা তুইও বোস একসাথে খাই,,
অন্তরা মাথা নাড়িয়ে বসে পরল হেনা চৌধুরীর সাথের চেয়ারে,,হৃদয়ের বরাবর,,হৃদয় লক্ষ করল অন্তরা আজ খুব পরিপাটি ভাবে বসেছে,গায়ের ওড়নাটা খুব সুন্দর ভাবে জরিয়ে রেখেছে,মাথা নিচু করে চুপচাপ খেয়ে চলছে,,হৃদয় এক দৃষ্টিতে অন্তরার দিকে তাকিয়ে আছে,,কিন্তু অন্তরা একবারের জন্যও হৃদয়ের দিকে তাকায় নি, হৃদয় খুব কষ্ট পেল,,হেনা চৌধুরী হাসান চৌধুরীকে বলল,,
_শুনছ খালেদ মিয়াকে ফোন দিও তো অন্তরা নাকি চলে যাবে,,
অন্তরার চলে যাওয়ার কথা শুনে হৃদয়ের বুকের ভিতর ছেত করে উঠলো,তার মনে হচ্ছে তার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে,,তখন হাসান চৌধুরী অন্তরাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
_কেন মা? তুমি সবেই তো সুস্থ হয়েছ,ঢাকা শহর টা ঘুরে দেখ, ভালো লাগবে,,হৃদয় তুই ওকে ঘুরাবি আজ,,
হৃদয় যেন নিজের শ্বাস একটু হলেও ফিরে পেয়েছে,,সেতো এমনি একটা সুযোগ চেয়েছিল,,সে খুশি হয়ে হাসি মুখে অন্তরার দিকে তাকাল,কিন্তু অন্তরা তাকাল না সে মাথা নিচু করে খাচ্ছে,,হৃদয়ের কাছে অন্তরার এই বিহেভিয়ারটা অনেক কষ্ট লাগল, পুরো বুকে যেয়ে লাগল,,,
_আমার খাবার শেষ,,
বলেই নিশ্চুপে উঠে চলে গেল,,হৃদয় নিজের রুমে গিয়ে যিদ্দে বসে রইল,,এক সাইডে যিদও উঠছে আবার কষ্টও লাগছে,,
দুপুরে,,,
সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে নিল,,অন্তরা উপরে যেতে নিলে হেনা চৌধুরী বলে উঠল,,,
_অন্তরা তুই রেডি হয়ে নে,হৃদয় তোকে ঘুরতে নিয়ে যাবে,,
_আমি যাবো না আমার শরীরটা ভালো ঠেকছে না,,
পিছে না ফিরেই বলে চলে গেল,,হৃদয়ের তো এখন অনেক পরিমাণের রাগ লাগছে অন্তরা পেয়েছে টাকি?নিজেকে কি ভাবে হ্যা?রাগে যিদ্দে গটগট করে অন্তরার পিছু পিছু উপরে চলে গেল,,অন্তরা নিজের রুমে গিয়ে যেই দরজা আটকাতে নিবে অমনি খপ করে হৃদয় দরজা ধরে ফেলে,ঠেলেঠুলে ভিতরে ঢুকে,,
_কি হচ্ছে টাকি?(অন্তরা বলল)
_অন্তরা রেডি হও আমি তোমাকে বাহিরে নিয়ে যাবো,,(খুব শান্ত শুরে)
অন্তরা কিছু বলছে না চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,,হৃদয় রাগ যেন আরও বেড়ে গেল,
_আমি কি বলছি শুনছ না?(ধমকের শুরে)
হৃদয়ের ধমকে অন্তরা কেপে উঠলো,,আস্তে আস্তে বলল,,
_আমি তো বলেছি আমি যাবো না,,(মাথা নিচু করে)
হৃদয় এইবার আর নিজেকে কান্ট্রল করতে পারল না,অন্তরার হাত ধরে এক টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসল একদম কাছে,,দুইজন দুই জনের নিশ্বাসে বারি খাচ্ছে,,হৃদয় বলল,,
_তুই আমারে ইগ্নর করস কেন হ্যা?তুই আমারে ইগ্নর কেন করস?আমারে চিনিস না তুই হ্যা চিনিস না আমারে?(জোরে চিল্লিয়ে)
_নাহ আমি চিনি না আপনাকে,,(বলেই হাত মুচরামুচরি করতে লাগল)
এই কথা বলায় হৃদয়ের মাথায় যেন আকাশ ভেংগে পরল,,তার কানে যেন একটা কথাই বারি খাচ্ছে,,তার পুরো পৃথিবী ঘুরছে,,সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,, অন্তরা কাদো কাদো হয়ে আবার বলল,,
_আমি থাকবো না এখানে এক মুহুর্ত, আমি চলে যাবো আমি থাকবো না,,(বলেই ঝারা দিয়ে হাত ছারিয়ে নিল)
হাত ঝারা দেওয়ায় হৃদয়ের যেন হুশ ফিরে আসল,,সে অন্তরার কাছে গিয়ে অন্তরার দুই বাহু ধরে তার দিকে মুখ উঠিয়ে বলল,,
_তুই চলে যাবি মানি কি?তোর একদিনের ইগ্নর আমার সহ্য হয় না আবার তুই চলে যেতে চাস আমার কাছ থেকে তোর তো সাহস কম হয়নি,,তুই কোথাও যাবি না আমার কাছ থেকে আমার সাথেই থাকবি,আমার অভ্যাস তুই তোকে ছাড়া আমার এক মুহুর্ত চলবে না,,আমি ভালোবাসি তোকে ভালোবাসি বুঝেছিস তুই,,
অন্তরা হা করে হৃদয়েএ মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে সব শুনছে,,কি বলছে কি হৃদয়?হুশ আছে ও কি বলছে?
_আমি তো আপনাকে চিনিই না ভালোবাসেন কিভাবে?(অবাক হয়ে হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে)
_আচ্ছা ঠিক আছে তোর মনে নেই আমি মনে করিয়ে দিব,,
_নাহ আমি মনে করতে চাই না কিচ্ছু মনে করতে চাই না,,(বলেই হাত ঝারা দিল)
_কেন?(হৃদয় অবাক হয়ে বলল)
_আপনি একজন চরিত্রহহীন, প্রথম দেখাতেই আমারে আপনি কিস করেছেন আপনাকে আমি কিভাবে ভালোবাসবো?কখনও না,ভাবতেই আমার গা গুলিয়ে আসে ছিহহহহ,,আর আপনি আমাকে ভালোবাসেন কোন মুখে বলেন লজ্জা করে না?
চিল্লিয়ে কিথা গুলো বলে দৌড়ে ওয়াশ্রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিল,,দরজা আটকে দরজার সাথে হেলান দিয়ে কাদতে কাদতে বসে পরল,হাটুর মাঝে মুখ গুজে ইচ্ছেমতো কাদতে লাগল,,
আর এইদিকে হৃদয় তো অন্তরার থেকে এইসব কথা শুনে হা হয়ে রইল,,সে কখনও ভাবেনি অন্তরা এইভাবে এইসব বলবে তার ভালোবাসাকে এইভাবে অপমান করবে,,হৃদয় তারাহুরু করে ওয়াশ্রুমের দরজার কাছ্ব গেল,,দরজা পেটাতে পেটাতে বলল,,
_দেখ অন্তরা আমি তোকে সব খুলে বলব কেন আমি করেছি এইসব একবার আমাকে বলার সু্যোগ দে?
_নাহ আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না কিচ্ছু না,,আমি বাসায় যাবো বাসায় যাবো,,
বলেই আরও জোরে কান্না করতে লাগল,,হৃদয়ও ব্যার্থ হয়ে চলে গেল,,
রাতে হাসান চৌধুরী খালেদ মিয়াকে ফোন করল,,,
_তোমার জন্য সুখবর আছে,,
_কি?(আশ্চর্য হয়ে বলল)
_তোমার মেয়ে তো সুস্থ হয়ে গেছে,,
_সত্যি?
_হুম
_আমি কালকেই আসছি আমার পাখির কাছে,,
_আচ্ছা ঠিক আছে,,
ফোন রেখে দিল,,খালেদ মিয়ার চোখের থেকে নোনাজল পরছে,,তার বউ অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে কি বলেছে?সে তার বউকে সান্তনা দিয়ে বলল,,
_আমাদের অন্তরা ঠিক হয়ে গিয়েছে,,
অন্তরার মা খুশিতে কান্নাই করে দিল খালেদ মিয়া তার বউকে জরিয়ে ধরে সেও কান্না করে দিল,,কিন্তু এই কান্না খুশির কোন কিছু ফিরে পাওয়া খুশির,,
সকালে,,,
অন্তরা ঘুমের থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেল,,নিচে গিয়ে তার বাবাকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরল,,কতো শতো পর যেন দুইজনের দেখা,অন্তরা কান্না করে দিল,,তার বাবা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,,
_আজ আমি খুব খুশি মা,খুব খুশি,,চল আমি তোকে নিতে এসেছি,তোর মা তোর জন্য অপেক্ষা করছে,,
অন্তরা বাবাকে ছেরে মাথা নেড়ে সায় জানাল,,তারপর সে চলে গেল পেকিং করতে,,পেকিং করা শেষে নিচে নামল,,হৃদয়ও মাত্র ঘুম থেকে উঠলো, উঠে নিচে নামল ব্রেকফাস্টের জন্য,, দেখল অন্তরা হাতে লাকেস নিয়ে দাড়িয়ে আছে,,হৃদয় বুকে চিন চিন ব্যাথা হচ্ছে, কিন্তু কি আর করার যার জন্য এই মন কাদে সেতো আর বুঝে না,,ভেবেই একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো,,খালেদ মিয়া হৃদয়কে দেখে মুখে হাসি নিয়ে হৃদয়ের কাছে গেল,,বলল,,
_তুই আমাকে আজ অনেক বড় একটা উপহার দিয়েছ যার জন্য আমি সারাজিবনের ঋণি হয়ে গেলাম,,বলো বাবা তোমার কি চাই?
_আমি যা চাইবো দিবেন তো?
_জি জি অবশ্যই,
_ঠিক আছে যখন দরকার তখন চেয়ে নিবো,
_ঠিক আছে বাবা তুমি চেয়ে নিও আমার সাধ্যে থাকলে অবশ্যই দিব,
_ঠিক আছে,,
বলেই উপরে চলে গেল,,অন্তরা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল,,হৃদয় উপরে উঠছে আর মনে মনে বলল,,
_তোমার চলে জাওয়া আমি কখনই দেখতে পারবো না,,
অন্তরা তার বাবার সাথে চলে গেল,,হৃদয় নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে অনেক কান্না করল,,অনেক কষ্ট পেল সে,,সারাদিনও নিজের রুমের থেকে বের হয়নি,,
এইদিকে গ্রামে,,
অন্তরার আম্মু তার মেয়ের জন্য অনেক খাবারের আয়োজন করল,,গ্রামের অনেক মানুষ আসল তার মেয়েকে দেখতে,,পিংকুও আসল,,অন্তরা আসল সবার সাথে কথা বার্তা বলে খেয়ে নিল,,
পরের দিন সকালে,,
খালেদ মিয়া তার মেয়ের ভালো হওয়ার জন্য গ্রামের সবাইকে খাওয়ালো,,সেখানে জিসানের বাবও আসল,,জিসানের বাবা আর খালেদ মিয়া খুব ভালো বন্ধু,,হঠাৎ জিসানের বাবা খালেদ মিয়াকে বলল,,
_দোস্ত তোর মেয়েতো মাসাল্লাহ খুবি সুন্দর, আমার ছেলে জিসানের বউ করে নিতে চাই,,আর ছেলে আমার আরোদে বসে এখন তুই যদি চাস আমরা বন্ধু থেকে বিয়াই হয়ে যেতে পারি,,
_আচ্ছা দোস্ত আমাকে সময় দে আমি এখন কথা দিতে পারলাম না,, অন্তরা সবেই তো সুস্থ হয়েছে,,
_আচ্ছা তুই সময় নে,,
অন্তরা ঘরের এক কোনে বসে বসে সব দেখছে,,হঠাৎ পিছন থেকে পিংকু ডাক দিল,,
_কিরে অন্তরা আমাকে ভুলে গেছিস?
অন্তরা পিছে ফিরে দেখল পিংকু দাঁড়িয়ে আছে,,পিংকু তার সামনে এসে দাড়ালো,,অন্তরা বলল,
_নাহ ভুলি নি,,(বলেই হচকচিয়ে গেল)
_আমি বুঝেছি তুই আমাকেও ভুলে গেছিস,,(বলেই মুখ ফুলিয়ে নিল)
অন্তরা পিংকুর এভাবে মুখ ফুলানো দেখে মনে মনে ভাবলো,,
_হয়তো আমি ওর সাথে খেলতাম,থাক এভাবে পিচ্চিটাকে কষ্ট দেওয়া উচিত হবে না,,
সে পিংকুকে জরিয়ে ধরে বলল,,
_তোকে কি ভুলা যায় বল?
পিংকুও খুশি হয়ে গেল,সেও অন্তরাকে জরিয়ে ধরল,,পিংকু অন্তরাকে বলল,,
_চল আমরা ঘুরে আসি,,,
_আচ্ছা চল,,
বলেই তারা দুইজন ঘুরতে বের হলো,,পিংকু অন্তরাকে এক এক করে সব দেখাচ্ছে,,
_দেখ অন্তরা এইখানে আমরা খেলতাম,এইখানে ঝুলতাম,,
বলেই সব দেখাতে লাগল,,অন্তরা কিচ্ছু হলছে না চুপচাও দেখে যাচ্ছে,,হাটতে হাটতে হঠাৎ জিসানের সাথে দেখা হলো,,জিসানকে দেখে সাইড কেটে চলে যেতে নিলে জিসান অন্তরাকে ডাকতে লাগল,,,
_এই অন্তরা অন্তরা,,
অন্তরা পিছে ফিরে তাকালো,,অন্তরা চিনতে পারছে না কে সে যে তাকে চিনে,,পিংকু বলে উঠলো,,
_কিরে অন্তরা তুই জিসান ভাইয়াকে চিনিস না?
অন্তরা শুধু মাথা নাড়ালো,যে না সে চিনে না,,জিসান বলে উঠলো,,
_পিংকু কই হয়েছে অন্তরার?
_আমাদের অন্তরা ভালো হয়ে গেছে,,
ভালো হয়ে গেছে শুনে জিসান খুশি হয়ে গেল,সে অন্তরার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,,
_আমি জিসান,,
অন্তরা প্রথমে হাত দিতে চায়নি,, অনেকক্ষন ধরে হাত দিয়ে রাখায় ভদ্রতার খাতিরে হাত মিলিয়ে বলল,,
_আমি অন্তরা(বলেই মুচকি হাসল)
জিসানের সাথে হেসে হেসে টুকটাক কথা বলল,,
_আচ্ছা জিসান ভাইয়া আমাদের বাসায় আইসেন,,
_আচ্ছা
বলেই অন্তরা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল,,জিসান তো মহান খুশি, এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি,,,
চলবে🖤
(ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন🥰)