হৃদয়ের অন্তরা পর্ব-০৫

0
1614

#হৃদয়ের_অন্তরা❤️
#part_5
#sarika_Islam
,
,
অন্তরা আন্টি আন্টি করে বাহিরে যেতে লাগল,,পিছন থেকে হৃদয় বলল,,

_এই অন্তরা কি হয়েছে? আম্মুকে ডাকছ কেন?
_ভাইয়া আমার খিদে পেয়েছে,,(বলেই পেটে হাত রাখল)
_আচ্ছা তুমি বসো তোমার আন্টি তো বাসায় নেই আমিই নিয়ে আসি,,,
_আচ্ছা,,

বলেই বিছানায় বসে পরল,,হৃদয় নিচ থেকে খাবার নিয়ে আসল আর অন্তরার জামাটাও,,হৃদয় অন্তরার দিকে তার জামাটা এগিয়ে দিয়ে বলল,,

_এই নাও অন্তরা এইটা পরে নাও,ঠান্ডা লাগবে বাহিরে তো বৃষ্টিও হচ্ছে,,

অন্তরা হৃদয়ের হাত থেকে জামাটা নিয়ে পরে নিল,,,অন্তরা খাবার নিয়ে সামনে বসে আছে হৃদয় জিজ্ঞেস করল,

_কি হলো অন্তরা খাচ্ছ না যে?
_আমাকে খাইয়ে দাও আমি হাত দিয়ে খাবো না,,

হৃদয় আর কোন উপায় না পেয়ে অন্তরাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিল,,তারপর ঔষুধ খাইয়ে দিল,, তারপর বলল,,,,

_অন্তরা তুমি তোমার রুমে গিয়ে ঘুমাও যাও,
_আচ্ছা,,

বলেই অন্তরা চলে গেল,,হৃদয়ও খাওয়া দাওয়া সেরে কিছু কাজ করছে লেপ্টপে,,রাত প্রায় 2টা,, হৃদয়ের কাজ শেষ,

_অন্তরাকে জেয়ে দেখে আসি ঘুমিয়েছে নি,,(মনে মনে)

চলে গেল অন্তরার রুমে ওকে দেখার জন্য,, অন্তরা বিছানার এক কোনে গুটিশুটি মেরে বসে আছে ভয়ে কাপছে,,কিছুক্ষন পর পর বিদুৎ গর্জনের আওয়াজে কেপে উঠছে,,মুখে কিছু একটা বিরবির করছে,,অন্তরা তার ঘরের ভিতর ছায়া দেখতে পেয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে,,

_ভুততততত,,,

হৃদয় তড়িঘড়ি করে রুমের লাইট অন করে তারপর এক প্রকার দৌড়ে অন্তরার কাছে গিয়ে তার সামনে তার সাথে নিচে বসে,অন্তরা দুই হাটুর মাঝে মুখ গুজে রেখেছে,,হৃদয় ধীরে ধীরে অন্তরার মাথা উঠাল,,অন্তরা এখনও দুই চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে,,হৃদয় নরম শুরে বলল,,

_অন্তরা,,

হৃদয়ের কন্ঠ পেয়ে অন্তরা পিটপিট করে চোখ খুল্ল,হৃদয়কে দেখে এক মুহুর্ত নষ্ট না করে জোরে জরিয়ে ধরল,,আর বলল,,

_ভাইয়া আমার এইখানে ভয় করছে,,আমি এইখানে ঘুমাবো না,,
_আচ্ছা ঠিক আছে চল আমার সাথে ঘুমুবি,

বলে অন্তরাকে কোলে তুলে নিল হৃদয়,, অন্তরা হৃদয়ের বুকে মাথা রেখে গলা জরিয়ে রেখেছে,,হৃদয় তার রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ে দিল অন্তরাকে,,আর বলল,,

_ঘুমা আমি এইখানেই আছি,,
_নাহ আমি তুমি আমার সাথেই ঘুমাবে,,(বলেই হৃদয়ের হাত ধরে ফেলল)
_আচ্ছা,,

বলেই অন্তরার পাশে গিয়ে শুয়ে পরল,,অন্তরাকে ভালোভাবে ব্লান্ককেট জরিয়ে নিজে তার পাশে শুয়ে রইল,,অন্তরা হুট করে হৃদয়কে জরিয়ে ধরে তার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরল,,এত তারাতারি ঘটনা ঘটে জাওয়ায় হৃদয় হা হয়ে গেল,,বেশ কিচ্ছুক্ষন অন্তরার দিকে তাকিয়ে সেও তাকে জরিয়ে ধরল,,কপালে চুমু দিল আর অন্তরার মাথায় হাত বুলাতে লাগল,,অন্তরা ঘুমিয়ে পরল হৃদয় মনে মনে ভাবতে লাগল,,

_তুই কবে ভালো হবি অন্তরা?তোর এই বাচ্চামো তোর হাশিখুশি সব আমাকে তোর দিকে আকর্ষন করছে,বারে বারে তোর থেকে দূরে থাকতে চেয়েও পারি না,,তোকে একবার না দেখলে নিজেকে পাগল পাগল লাগে,,তুই কবে বুঝবি আমার এই ফিলিংস গুলো,, কবে আমাকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসবি,,,তোকে না দেখা তোর প্রতি কেয়ার করা এইগুলো কি আমার ভালোবাসা?নাকি সবিই আবেগ?নাহ আবেগ না আমি ভালোবাসি হ্যা আমি ভালোবাসি আমার অন্তরাকে আমার পাগলিটাকে,যাকে না দেখলে আমার দিন ভালো যায় না,,তোর দুষ্টুমি ভরা কথা তোর দুষ্টুমিগুল আমাকে খুব করে টানে তোর দিকে,,

বলেই অন্তরার কপালে একটি চুমু খেয়ে খুব ভালোভাবে অন্তরাকে জরিয়ে শুয়ে পরল,,

সকালে 10টা,,,

কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভাংগে হৃদয়ের,,,ভাবলো হয়তো আম্মু আব্বু এসেছে,,তার পাশে তাকিয়ে অন্তরাকে তার বাহুতে দেখে মুচকি হাসল,,অন্তরা পরম আবেশে হৃদয়ের বাহুতে ঘুমিয়ে আছে কি না সান্তির ঘুম,,হৃদয় অন্তরার কপালে ভালোবাসার পরশ একে উঠে গেল,,উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেল,,গিয়ে দরজা খুলে দেখল ডাক্তার চাচা এসেছে,হৃদয়ের মুখে হাসি ডাক্তার তার এই হাসির রহস্য খুজে পেল না,,হৃদয় তাকে ভিতরে ঢুকালো,,ডাক্তার চাচা জিজ্ঞেস করল,,

_অন্তরা কোথায়?
_আসেন চাচা আমার রুমেই,,

বলেই হৃদয় তার রুমে নিয়ে গেল,,ডাক্তার চাচা গিয়ে দেখল অন্তরা খুব সুন্দর ভাবে হৃদয়ের বিছানায় শুয়ে আছে,,ডাক্তার চাচা হৃদয়ের দিকে দুষ্টু ভরা চাহনি নিয়ে তাকাল,,আর বলল,,

_ভালোবাসতে বলেছিলাম কিন্তু বেশি ভালোবেসে ফেল না নাহলে কিন্তু বিপদ হবে,(বলেই চোখ টিপ মারল)
_ইয়ে মানে,,(বলেই নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মাথা চুলকাতে লাগল)
_আচ্ছা ঠিক আছে বুচ্ছি,,(বলেই হেসে দিল)

হৃদয় গিয়ে অন্তরাকে উঠালো,,

_অন্তরা এই অন্তরা দেখ কে আসছে,,

অন্তরা আড়মোড়া ভেংগে উঠে পাশ ফিরে দেখল ডাক্তার চাচা,,

_খোকা তুমি এসেছ,,(বলেই হাসি দিল)
_হ্যা মা আমি এসেছি,,,উঠ মা এখানে আসো,,

অন্তরা উঠে ডাক্তারের পাশে বসল,,কিছুক্ষন ডাক্তারের সাথে কথা বলল,তারপর ডাক্তার বলল,,

_দেখি মা তোমার হাত টা দাও,,

অন্তরা খুশি খুশি তার হাত ডাক্তার চাচার হাতে দিল,,ডাক্তার ইঞ্জেকশন টা দিতে যাবে তখন অন্তরার মুখটা একদম মলিন হয়ে গেল,,কাদো কাদো ফেস করে ডাক্তারের দিকে তাকাল আবার হৃদয়ের দিকে তাকাল,হৃদয় অন্তরার চাহনি দেখে বুঝতে পারল ও খুব ভয় পাচ্ছে,,তাই সে অন্তরার মুখ বরাবর হাটু গেড়ে বসল বসে বলল,,

_কিচ্ছু হবে না অন্তরা আমি আছি তো,,

বলেই অন্তরার হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে নিল,,অন্তরার দুই হাত হৃদয় দুই হাত দিয়ে খুব শক্ত ভাবে ধরে রেখেছে,,ডাক্তার চাচা যেই অন্তরার ইঞ্জেকশন দিবে অন্তরা খিচে চোখ বন্ধ করে ফেল্ল আর হৃদয়ের হাত টা আরও শক্ত করে ধরল,,হৃদয় বলল,

_অন্তরা দেখ শেষ, চোখ খুল,,

অন্তরা পিটপিট করে চোখ খুলল,দেখল সত্যি শেষ,,অন্তরা যেন হাফ ছেরে বাচল,,হৃদয় অন্তরার দুই হাত নিয়ে চুমু খেল,,ডাক্তার তাদের কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসছে,,হৃদয় ডাক্তারের হাসি দেখে অন্তরার হাত ছেরে দিয়ে উঠে দারাল,,নিজের চুলে হাত দিতে লাগল খুব অসস্তি ফিল হচ্ছে,,ডাক্তার চাচ তার অসস্তি বুঝে বলল,,

_হুম যা ভেবেছিলাম দেখছি তাই হয়েছে,,

বলেই হৃদয়ের পাশে গিয়ে দারাল,,হৃদয় কোন কথা বলছে না মাথা নিচু করে রেখেছে,,ডাক্তার হৃদয়ের পিঠে চাপর মারল,,হৃদয়ও মুচকি হাসল,,ডাক্তার নিচে গেল নিচে গিয়ে দেখল হেনা চৌধুরী আর হাসান চৌধুরী বাড়ির ভিতর ঢুকছে,হাসান চৌধুরী ডাক্তার কে দেখে মুচকি হেসে হেন্ডশেক করল,,তারপর ডাক্তার কে সফায় বসাল,,ডাক্তার তাদের কাছে অন্তরার কথা সব খুলে বলল,,,

_যদি এই সাত টা ইঞ্জেকশনে ঠিক হয়ে যায় তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ, আর যদি না হয় তাহলে ওকে ঠিক করা আমাদের পক্ষে আর পসিবল না,,
_হায় আল্লাহ তুমি বাচ্চাটাকে ঠিক করে দিও,,(হেনা চৌধুরী বলল)

ডাক্তারের সাথে আর টুকটাক কথা বলে ডাক্তার তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল,,

বিকালে,,,

হেনা চৌধুরীর রুমে অন্তরা বসে আছে,,আর হেনা চৌধুরী আলমারি ঠিক করছে,,অন্তরা বলল,,

_আন্টি আপনের এত্ত শাড়ি!আপনাকে শাড়ি পরলে খুবি সুন্দর লাগে,,
_হুম,,

অন্তরা হাতে একটি লাল শাড়ি নিয়ে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,,

_আন্টি এই শাড়িটা তোমাকে কে দিয়েছে?
_তোমার আংকেল দিয়েছে আমাকে ভালোবাসা দিবসে❤️
_ভালোবাসা দিবস কি আন্টি?

হেনা চৌধুরী অন্তরার দিকে তাকিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ছেরে বলল,,

_ভালোবাসা মানে যে তোমাকে আদর করে তোমাকে খাইয়ে দেয় তোমার খেয়াল রাখে তোমাকে চুমু দেয়,,তাকে বলে,,এখন বুঝেছ,,(বলেই মুচকি হাসি দিয়ে অন্তরার দিকে তাকাল)
_ওহহহহ,,আব্বু আমাকে অনেক আদর করে তাহলে আব্বু আমাকে অনেক ভালোবাসে?
_হুম,,
_তাহলে তো আরেকজনও,,
_আরেকজন কে?(ভ্রু কুচকে অন্তরার দিকে তাকাল)
_হৃদয় ভাইয়া,,(বলে হাসি দিল)

হেনা চৌধুরী অন্তরার দিকে কিছুক্ষন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তারপর বলল,,

_তাই বুঝি?তোমার হৃদয় ভাইয়া তোমাকে অনেক আদর করে?
_হুম আমাকে খাইয়ে দেয় চুমু ও দেয়,,

হেনা চৌধুরী আর কিছু বলল না,,আলমারির দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগল,,পিছে ফিরে দেখে অন্তরা লাল শাড়িটা নিজের গায়ে কোনরকম পেচিয়ে রেখেছে,,হেনা চৌধুরী অন্তরাকে দেখে হেসে দিল তারপর বলল,,

_তুমি পরবে এইটা?
_হুম আমি পরবো,,
_আচ্ছা ঠিক আছে আসো আমি পরিয়ে দেই,,

বলেই হেনা চৌধুরী অন্তরাকে শাড়ি টা খুব সুন্দর ভাবে পরিয়ে দেয় হাল্কা সাজিয়ে দেয়,তারপর হেনা চৌধুরী অন্তরাকে দেখে বলে,,

_তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে এই শাড়িতে পুরুই বউ বউ,,

অন্তরা তার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিল,,অন্তরা তার ডল নিয়ে খেলা করতে লাগল,,খেলতে খেলতে হৃদয়ের ঘরর চলে গেল,,হৃদয় লেপ্টপে কিছু কাজ করছিল,,অন্তরা গিয়ে হৃদয়কে পিছন থেকে ধাক্কা মারল,,পিছন থেকে ধাক্কা মারায় পিছন ফিরে তাকাল পিছন ফিরে তাকিয়ে হৃদয় হা হয়ে গেল অন্তরাকে দেখে,,এ যেন কোন লাল পরি এসে তার সামনে দারিয়ে আছে,,,লাল শাড়িতে অন্তরাকে কোন পরির থেকে কম কিছু লাগছে না,,হৃদয় তো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে তাকে পা থেমে মাথা পর্যন্ত দেখছে,,চোখে কাজল ঠোটে লাল লিপ্সটিক পুরুই স্টোবেরির মতো লাগছে,,হৃদয়ের চোখ অন্তরার ঠোটে গিয়ে আটকে গেল পুরুই স্টোবেরি,,, অন্তরা পটর পটর করছে হৃদয় অন্তরার ঠোটের দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে,,অন্তরা হঠাৎ বলে উঠল,,

_তুমি আমাকে ভালোবাস?

অন্তরার কথা শুনে হৃদয়ের ভিতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেল,,হৃদয় অবাক দৃষ্টিতে অন্তরার দিকে তাকিয়ে আছে,,,

চলবে🖤
(ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন🥰)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে