#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ৭
—নানু আমাদের রাজবাড়ীটার কি খবর? ওটা কিন্তু জোস৷ ওইটা আমার চাইই চাই।
খাবার টেবিলে চেয়ার টেনে সাফিন আজাত সাহেবের পাশে বসতে-বসতে কথাটা বললে আজাদ সাহেব হাসলেন। সাফিনের পিঠ চা’প’রে বললেন।
— আমার সবকিছুই তো তোর দাদুভাই। কিন্তু এই রাজবাড়ীতো তোকে আমি এত সহজে দেব না। তাঁর জন্য আমারও কিছু শর্ত আছে।
সাফিন ভ্রু জাগিয়ে ফেললে আমেনা বেগম আচারের চাটনিটা এনে টেবিলে রাখতে-রাখতে হেসে বললেন।
—আমি বেশ বুঝতে পারছি আব্বা কি শর্ত দিবেন।
—বাহ তোমরাতো দেখছি আমাকে নিয়ে ইদানীং সলাপরামর্শ করছো তাঁরমানে?
সাফিনের কথা শুনে হেসে উঠলেন আজাদ সাহেব। বললেন।
—সে তো করতেই হচ্ছে সাফিন। তোর মতো দা’ম’ড়া একটা ছেলের বউ থাকবে না আর তোর বন্ধু- বান্ধবদের বিয়ে হয়ে বাচ্চা-কাচ্চা পর্যন্ত হয়ে যাবে এটাতো আমি বেঁচে থাকতে কখনো হতে দিচ্ছি না ডিয়ার।
সাফিন টেবিল থেকে আচারের চাটনিতে হাত দিতে গেলে আমেনা বেগম চোখ রাঙা’লেন৷ বললেন।
—ওই রাখ আগে ওটা৷ আগে ভাত খাবি তাঁরপর যা খুশি খাস। কোনটা কোন সময় খেতে হয় সেটাও ঠিক ভাবে জানিসনা এখনও। বাপের মতো খালি রাজনীতি করলেই বাঁচিস। আগে বউ ঘরে আসুক একবার তাঁরপর বোঝাব তোর মজা৷ আমি যেটা পারিনি তোর বাপকে দিয়ে, তোর বউকে দিয়ে সেটা করিয়ে ছারব।
হেসে উঠলো সাফিন। বললো।
— বিগ উপস আম্মা৷ তোমার ছেলে যদি বিয়েও করে না কখনো, তবুও রাজনীতি ছারবে না এতটুকু নিশ্চিত থাকো তুমি।
—একটা দেব পাঁ’জি ছেলে।
—যাইহোক নানু কাজের কথায় আসি। রাজবাড়ীটা আমার চাই৷ যেকোন মূল্যেই হোক আমার চাইই চাই।
আজাদ সাহেব ভাতে মাং’সের ডালটা নিয়ে সাফিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে সাফিনের কাঁথে হাত রেখে বললেন।
— এই তোকে ছুঁয়ে কথা দিচ্ছি, তুই যেদিন বিয়ে করে আমার নাতিবউ ঘরে নিয়ে আসবি,সেদিনই রাজবাড়ী তোর নামে লিখে দেব।
সাফিন বাঁকা হাসি হাসলো। বললো।
—তাহলে তো বিয়েটা করতেই হচ্ছে। তা পুরো বাড়ীটার দাম কত হবে বুঝো মিনিমাম। অনেক আগে দেখেছি মনে নাই ঠিক।
—৫০০ কোটি।
দরজা থেকে গম্ভীর কন্ঠের শব্দটা শুনে সাফিন ধীর চাহনিতে সেদিকে তাকালো।
সরোয়ার সাহেব হেসে সাফিনের দিকে তাকিয়ে বললেন।
—হে সাফিন বেটা। কেমন আছো তুমি? কেমন চলে দিনকাল তোমার?
এত দিন পর চাচ্চুকে দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে হেসে জড়িয়ে ধরলো তাঁকে। বললো।
—এইতো চকো’মকো আছি চাচ্চু। তোমার কি খবর?
—আমার খবরও এইতো ভালোই৷
হাসলো সাফিন৷ বললো।
—তো ফ্রেশ হয়ে আসো একসাথে খাওয়া যাবে।
আজাদ সাহেব প্লেট থেকে এক লোকমা সরোয়ার সাহেবের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন।
—নে এক লোকমা খেয়ে যা আব্বার হাতে। কতদিন পর দেশে আসলি আর এসেই তোর রাজ্যের কাজ শুরু করে দিলি। কি চাও বসে কথা বলবি আব্বার সাথে। তা নয়, সারাদিন কাজ তোর!
সরোয়ার সাহেব হাসলেন। এক লোকমা মুখে নিয়ে খেতে-খেতে বললেন।
—আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে আসছি দাঁড়াও। তুমি সাধলে তাই ফ্রেশ না হয়েই খেয়ে নিলাম আজ।
আজাদ সাহেব হাসলেন। বললেন।
—যা তুই তাইলে। তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আস।
সরোয়ার সাহেব উপরে চলে গেলে সাফিন নিজের জায়গায় এসে বসলো। খেতে-খেতে বললো।
—উফ আম্মা, তোমার হাতের রান্নায় জাদু আছে। একবার খেলে আঙুল চাট’তে ইচ্ছে করে।
আমেনা বেগম হাসলেন। বললেন।
—বেশি বলে ফেলছিস।
—কিচ্ছু বেশি বলছি না আমি সুইটহার্ট। আমেনা বেগম হাসলেন। বললেন।
—হয়েছে থাম, খা এখন।
হাসলো সাফিন।
.
শহর থেকে ৪৯৯ জন মেয়েকে কিডন্যাপ্ট করে গ্রামে নিয়ে গিয়ে অন্ধকার রুমে আঁটকে রেখে বিদেশে পাচারের চেষ্টা চালানো হয়েছিল।কিন্তু আমাদের প্রধান মন্ত্রী মো. মোস্তফা কামালের একমাএ ছেলে শাহনেওয়াজ সাফিন অজ্ঞ্যাত লোকগুলোর মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে ওই দলের ১৫ জনকে আটক করে নিরী’হ মেয়েগুলোকে সুস্থ ভাবে সেখান থেকে উদ্ধার করেছেন। উদ্ধার করতে গিয়ে শাহনেওয়াজ সাফিনের হাতে গু’লিও পর্যন্ত লেগেছে৷ জনগনের জন্য এতটা ভাবার জন্য সত্যিই শাহনেওয়াজ সাফিনকে ধন্যবাদ জানালেও কম পরে যাবে জনগনের।
শপিংমলের টিভির স্ক্রিনে নিউজটা দেখা মাএ সিরাতের চোখ বড়-বড় হয়ে গেল সাফিনকে দেখে৷ সিরাত এভাবে তাকিয়ে থাকলে তোহা বললো।
—জান চল ওদিকটাতে ভালো ড্রেস পাওয়া যাবে।
সিরাত তোহার দিকে এক নজর তাকিয়ে ধীর চাহনিতে আবারও নিউজের দিকে তাকলে তোহাও এবার তাঁর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে নিউজটা দেখে ধীর কন্ঠে বললো।
— ৪৯৯ জন মেয়ে! ভাবা যায়,ছেলেটার এলেম আছে বলতে হবে। আচ্ছা যাইহোক ড্রেস দেখবি চল। আমাদের এসব দেখে কাজ নেই।
সিরাতের গ’লা শুঁকিয়ে আসলো যেন।
—তাঁরমানে লোকটা আমাকে বাঁচিয়েছেন? আর আমি তাঁকে চর মেরেছি! উফ সিরাত,তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না৷ এবার কি আর করার, দেখলে সরি বলে দিবি সঙ্গে- সঙ্গে। কিন্তুহ আদৌও কি আর ওনার সাথে দেখা হবে? এত বড় মানুষ উনি আর আমি না জেনেই ওনাকে যাচ্ছে তাই বলে দিয়েছি। খার’প লাগল সিরাতের। আবার কিছুটা রাগও লাগল সাফিনের লিফ কিস আর হু’মকি দেওয়ার কথা মনে পরাতে।
.
শপিংমলের দোতালায় চলে আসাতে লাল-হলুদ লাইটারের আলো চোখেমুখে এসে ছেয়ে যেতে সিরাত ভ্রু কুঁ’চকে ফেললে তোহা হাসলো৷ বললো।
—এখানটাতে এমনটাই থাকে জান। সিরাত মৃদু হাসলো৷ পায়ের ব্যা’থাটাও এখনও কমেনি খুব একটা। তোহা জোর করার কারনে তাঁর সাথে এসেছে নয়তো জীবনেও এখানে আসার ইচ্ছে ছিল না তাঁর।
দোকানদার একের পর এক সালোয়ার কামিজ দেখাতে থাকলে তোহা একেকটা সিরাতের গাঁয়ের সাথে সুট করে কিনা দেখতে থাকলো। বললো।
—উফ দোস্ত। তোর এই কিউট লুকিংয়ে সব ড্রেসই সেই লাগতাছে৷ সিরাত হাসলে তোহা বললো।
—আরে ধুর মজা নিচ্ছি না সিরিয়াসলি বলছি।
সিরাতের দিকে গোলাপিরাঙা সালোয়ার কামিজটা এগিয়ে দিয়ে বললো।
—যা এটা চেঞ্জ রুমে গিয়ে পাল্টে আস ফটাফট। আমি এখানে আছি।
—ছারনা দোস্ত।
তোহা সিরাতের দিকে রাগ নিয়ে তাকাতে সিরাত হাসলো। বললো।
—আচ্ছা মা আমার যাচ্ছি আমি।
.
—স্যার মেয়েদুটো শপিংমলে এসেছে।
জুবায়েরের কথা শুনে সাফিন নীল রাঙা শার্টটা পরতে-পরতে কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে অন করে বললো।
—তুমি এখন কোথায়? ওদের পিছন-পিছন আছো তো নাকি?
জুবায়ের গাড়ির কাঁচটা নামিয়ে শপিং মলের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বললো।
—না স্যার বাহিরে আছি৷ ওরা ভিতরে আছে।
সাফিন রেগে উঠলো। রাগের কন্ঠে বললো।
—ড্যাম ইট । জুবায়ের মেয়েটার বি’পদ এখন। তোমাকে আমি বাহিরে বসে থাকার জন্য পাঠাইনি ওখানে! মেয়েটা কখন কি করছে না করছে? কোথায় যাচ্ছে? পাইটুপাই আমাকে জানাবে৷ দ্রুত ভিতরে যাও৷ আমার অনুমান যদি ভু’ল না হয় তাহলে আজকে সিরাতের উপর এ্যা’টাক হবে নিশ্চিত।
জুবায়ের চমকে উঠলো। ধীর কন্ঠে বললো।
—কিন্তু স্যার এটা লেডিস শপিংমল তো। আমি কিভাবে যাব?
—আরে রাখো তোমার লেডিস শপিংমল। তুমি নিজেই বা মেয়েদের থেকে কম কিসে? দ্রুত ভিতরে যাবে এখনই। দরকার পরলে ছদ্মবেশে যাও।
জুবায়ের কেশে উঠলো। বললো।
—আরও কি-কি যে করাবেন আমাকে দিয়ে আল্লাহই জানেন। এবার আমাকে মেয়ে সেজে যেতে বলছেন ভিতরে।
—কথা কম বলো তুমি। মেয়েটার জীবন বাঁচাতে হবে এখন৷
—ওকেহ স্যার। যাচ্ছি।
বিছানার উপরে থাকা ঘড়িটা হাতে নিয়ে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামাতে সরোয়ার সাহেব মোস্তফা সাহেবের সাথে কথা বলতে-বলতে সাফিনের দিকে এগিয়ে এসে বললেন।
—আরে সাফিন যাচ্ছো কোথায় এখন তুমি? কালকে আমাদের সঙ্গে বিয়েতে এটেন করতে হবে কিন্তু তোমাকে।
সাফিন ভ্রু জাগিয়ে ফেলল। বললো।
—কিসের বিয়ে? মানে কার বিয়ে?
মোস্তফা সাহেব হাসলেন। বললেন।
— আমাদের দলের লোক আছে না ওইযে তোর মিজান কাকা। ওর মেয়ের বিয়ে কালকে। বাড়ি বয়ে এসে ইনভাইট করে গেছে সবাইকে। নির্বাচন না হলে ওসব গাঁয়ে মাখাতাম না। যাইহোক তোকে আমাদের সাথে যেতে হবে কালকে।
বিরক্ত হলো সাফিন৷ বললো।
— আমি কোথাও যাচ্ছি না আপাদত। এখন ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে ড্যাড আসছি পরে কথা হবে এ ব্যাপারে। সাফিন ঘড়িটা হাতে পরতে-পরতে বেড়িয়ে গেলে মোহন সাফিনের দিকে গাড়ির চাবিটা দিতে সাফিন হেসে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো তাঁর।
.
—সাহেব মেয়েটা সাফিনের গার্লফ্রেন্ড মনে হচ্ছে। ৫০০ মেয়ের ভিতরে একজন মাইনাস হয়ে গিয়ে ৪৯৯ হয়ে গেছে। আর সাফিনের কথাবার্তা সেদিকেই ইঙ্গিত করছে আপাদত।
অপর প্রান্তের মানুষটা হেসে উঠলেন। গম্ভীর কণ্ঠে বললেন।
—গু’লি করে উড়িয়ে দেও মেয়েটাকে। সাফিনের সাথে এখন কোনো মেয়েকে মিশতে দেওয়া যাবে না৷ আমার এতদিনের সর্মাজ্য একদিনে শেষ করে দিবে ওই মেয়ে? সেটাতো হচ্ছে না। আজকের ভিতরে মেয়েটার লা’শ আমি নদীতে দেখতে চাই।
—আচ্ছা সাহেব৷ তাহলে আজকেই মেয়েটাকে জ’মের দুয়ারের ঠিকানা দেখিয়ে আসি। মেয়েটার ভাগ্য খারা’প যে শাহনেওয়াজ সাফিনের চোখে লেগেছে সে৷ এবার অনায়াসে অকালে প্রানটা যাবে।
ওপাশ থেকে গাম্ভীর্যপূর্ন হাসির স্বর ভেসে আসলো।
.
গোলাপি রাঙা সেলোয়ার-কামিজটা পরে সিরাত বের হলে তোহা হেসে ছুটে গিয়ে সিরাতকে জড়িয়ে ধরলো। বললো।
—ওয়াও দোস্ত। ইউ আর লুকিং সো হট৷ যে ছেলে তোকে দেখবে আর চোখই ফেরাতে পারবে না বেব্বি।
সিরাত হেসে উঠলো। বললো।
—ধুর, তোর বা’জে বকা থামা। আমি অতটাও সুন্দর নই, তুই বাড়িয়ে বলছিস।
তোহা সিরাতের নাকটা টেনে দিয়ে বললো।
—কলিজাটা আমার। কতদিন পর তোর সাথে এত মজা করছি। সত্যি খুব ভালো লাগছে৷ আচ্ছা তুই এখানে দাঁড়া আমি জাস্ট যাচ্ছি আর আসছি।
—ওকে বেব্বি। যা তুই আমি আছি এখানে।
তেহা চলে যেতে হুট করে কারো শক্ত হাতের বাঁধনে বাঁধা পরে গেলে পিটপিট করে সেদিকে তাকানোর আগেই পাশ থেকে গু’লিটা চলে গিয়ে বিক’ট শব্দ হতে কেঁ’পে উঠলো সিরাত৷ গলা শুকিয়ে আসলো তাঁর। সামনে থাকা মানুষটাকে না দেখেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাঁকে৷
সিরাতের হুট করে এভাবে জড়িয়ে ধরাতে থ’মকে গেল সাফিন। বুকের উপর সিরাতের ঘন হয়ে আশা নিশ্বাসের গরম স্পর্শে কয়েকটা ঢোক গিলল সাফিন। সিরাতের হৃৎস্পন্দনের গতি ক্রমশ বেড়ে যেতে সাফিন নিজেও একহাতে সিরাতকে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখে কানে থাকা ব্লুটুথ অন করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—জুবায়ের লোকটাকে ধরেছো তো নাকি?
—জ্বী স্যার ধরেছি৷ মোহন লোকটাকে গাড়িতে তুলে নিয়েছে অলরেডি। এবার আপনি বললেই গু’লি করে নদীতে ভাসিয়ে দেব।
হেসে উঠলো সাফিন। বললো।
—আপাদত ওকে বাঁচিয়ে রাখো। ওর হাত পা বেঁধে বাড়ীর পিছনে স্টোর রুমে আঁটকে রাখো। ওর পেট থেকে সব কথা বের হলেই নদীতে ভাসিয়ে দেব।
সাফিনের গাম্ভীর্যপূর্ন ভাড়ি-ভাড়ি কন্ঠের রেশ শুনে কেঁপে উঠলো সিরাত। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে তাঁর। দ্রুত সাফিনের বুক থেকে সরে যেতে মৃদু হাসলো সাফিন।
সিরাত কয়েকটা ঢোক গি’লে পিছনে থাকা দেয়ালের সাথে মিশে গেলে সাফিন বাঁকা হাসি হেসে সিরাতের দুইপাশে দেয়ালের সাথে হাত রেখে আঁটকে দিল সিরাতকে। সিরাত এক নজর সাফিনের হাতের দিকে তাকিয়ে তো আরেক নজর সাফিনের তৈলাক্তময় চেহারার দিকে তাকিয়ে রাগ নিয়ে বলতে লাগল।
—আপনাকে একটুর জন্য হলেও সরি বলতে চেয়েছিল সিরাত জানেনতো! কিন্তু নাহ, ভুল ছিল সিরাত ৷ আপনি কারো সরি তো দূরের কথা আপনি কারো ধন্যবাদেরও যোগ্য না এই মূহুর্তে। আপনি আবারও কারো খু’ন করতে চাইছেন!
সিরাতের কথায় সাফিন রাগ নিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস টেনে হাত দিয়ে দেয়ালের সাথে নিজের হাতটা বাড়ি দিতে দ্রুত চোখ বন্ধ করে ফেলল সিরাত। ভয়ে চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরতে থাকলো তাঁর।
সিরাতের বুকের ধুকপুক শব্দ সাফিনের কান ঘেঁষে অন্তর্নিহিত হতে সাফিন চোখ বন্ধ করে আবার খুলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সিরাতের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চে’পে বললো।
—গু’লিটা যদি তোমার বুকে এসে লাগত না সিরাত? তখন খুব ভালো হত তাইনা? আমি তোমাকে বাঁচালাম আর তোমার কোনো অনুতাপই নেই! বরং যে তোমাকে মার’তে চেয়েছে তাঁর জন্য এত দরদ!বাহ লা জাবাব। তো আমি তোমাকে মেরে দেই এখন? ভালো হবে না বলো?
সাফিনের উচ্চকণ্ঠের রেশ কানে এসে পৌঁছাতে ভয়ে কেঁদে উঠলো সিরাত।
বিরক্ত হলো সাফিন৷ রাগের কন্ঠে বললো।
—একটা কথা কতবার বলতে হবে তেমাকে হ্যা? আমার সামনে তোমার ন্যাকা কান্না দেখাতে আসবে না একদম। আমার সয্য হয়না ওসব ন্যাকামো৷ আর একটা ফোঁটা পানি যদি তোমার চোখ বেয়ে আমার শার্টে এসে পরে না সিরাত। তাহলে আমি তোমাকে বাঁচিয়েছি না মাএ? আমিই আবার নিজ হাতে গু’লি করে তোমাকে নদীতে ভাসিয়ে দেব।
শুকনো ওষ্ঠদ্বয় ভিজিয়ে ভয়ে কান্নায় ফোপাঁতে- ফোপাঁতে সিরাত সাফিনের দিকে পিটপিট করে তাকাতে সাফিন সিরাতের লাল হয়ে ওঠা গালের দিকে ধীর চাহনিতে সেদিকে তাকিয়ে দুইহাতে সিরাতের গালে হাত রেখে সিরাতের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে দিলে কেঁপে উঠলো সিরাত। দুজনের নিশ্বাস দুজনের চোখেমুখে ছেয়ে পরাতে সিরাত চোখ নিচু করে তাকাতে সাফিনের পকেট থেকে বন্দুকটা অর্থেক বের হওয়া দেখাতে ভয়ে ঢোক গিলল সে।
—এই বজ্জা’ত লোকটা সবসময় এই বন্দুকটা নিয়ে ঘোরাঘুরি করেন কেন! এনাকে আমি যতবার ভালো ভাবতে চাই ততবারই কোনো না কোনো ভাবে খা’রাপ হবেনই উনি আমার চোখে। বা’জে লোক একটা।
—আমাকে গা’লা>গা’লি করা বন্ধ করবে নাকি আবারও চুমু খাব তোমাকে হুম।
সিরাত চোখ বড়-বড় করে তাকাতে সাফিন সিরাতের কোমরে হাত ছোঁয়াতে নিতে সিরাত দ্রুত সাফিনকে ধা’ক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। রাগে ঘৃ’নায় ফুঁ’সতে-ফুঁ’সতে বললো।
— আপনার উদ্দেশ্যটা ঠিক কি আমাকে নিয়ে? শহরে পা দিতে না দিতেই আপনার ওই গো’মরা মুখো চেহারা দেখতে হয় কেন আমাকে। আর, আর কে বা কারা আমাকে মা’রতে চাইছে? আমিতো কারো কোনো ক্ষ’তি করিনি। কারো পাকা ধানে গিয়ে মইও দেইনি, তাহলে!
সিরাতের কথা শুনে সাফিন হাসলো।
ধীর পায়ে সিরাতের দিকে এগিয়ে আসতে নিতে সিরাত কয়েকপা পিছিয়ে গিয়ে রাগ নিয়ে বললো।
—ব্যাস, আর এক পা আমার দিকে এগোলে ভালো হবে না বলে রাখলাম।
সাফিন হেসে উঠলো। বললো।
—ওহ তাই বুঝি সিরাত। তো কি ভালো খারা’প দেখাবে তুমি আমাকে? আর তোমার মনে যে এই এত-এত প্রশ্ন নিয়ে ঘুরছো না তুমি? যেগুলোর উওর পাচ্ছো না এখনও? সেগুলো মন থেকে মুছে ফললে ভালো হবে বেব্বি। ওগুলো তোমার ওই মোটা মাথায় ঢুকবে না। আগে বাচ্চাদের মতো কান্না করা বন্ধ করো সোনা৷ বাই দ্য ওয়ে,ইউ আর সো প্রিটি বেব্বি। সাফিন সিরাতের দিকে ভ্রু জাগিয়ে তাকাতে সিরাত কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে লোকজনের পায়ের আওয়াজ শুনে সাফিন সেদিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে পিছনের সিঁড়ি থেকে যেতে-যেতে সিরাতের দিকে আঙুল তাক করে বললো।
—খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে আমাদের বেব্বি। রেডি থেকো। এই শাহনেওয়াজ সাফিনের চোখ আর তোমার ওই ঠোঁট। উম্মাহ,বাব্বাই সোনা।
ঠায় দাঁড়িয়ে গেল সিরাত। ক্লা’ন্ত লাগছে আজ তাঁর। শরীরে কোনো শুক্তিই যেন পাচ্ছে না আজ সে। বুক চি’রে একরাশ দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসতে চাইছে তাঁর। লোকজন ছুটে আসতে তোহা সিরাতের দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দৌঁড়ে এসে সিরাতকে জড়িয়ে ধরলো। দ্রুত গতিতে চিন্তার স্বরে বলে উঠলো।
—জান তুই ঠিক আছিস তো নাকি? তোর লাগেনি তো কোথাও। আল্লাহ চল দ্রুত এখান থেকে। এখানে এখন ইনভেস্টিকেশন হবে৷ তোর কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষ’মা করতে পারতাম না রে। তোহা কেঁদে উঠলে সিরাত হাসলো। বললো।
—ধুর ছাই৷ কিচ্ছু হইনি আমার। আমি একদম ঠিক আছি। তুই বল তুই ঠিক আছিস কিনা?
তোহা মৃদু হাসলো। সিরাতের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে সিরাতের কাঁধে হাত দুই হাত রেখে বললো।
— তুই থাকতে আমার কিছু হবে না জান।কলিজাটা আমার।
সিরাত হেসে উঠলো। বললো।
— আচ্ছা চল যাওয়া যাক তাহলে। মাথা ব্যা’থা করছে আজ প্রচন্ড।
— উফ,হুম তারাতাড়ি চল তাহলে এখান থেকে।
.
অন্ধকার রুমটাতে ক্যান্ডেলের নিভু-নিভু আলো এসে চেয়ারে হাত-পা বাঁধা লোকটার চেহারায় এসে ছেঁয়ে যেতে মুখটা স্পষ্টভাবে দেখা গেল তাঁর।
সাফিন ভ্রু জাগিয়ে ফেলল তাঁর দিকে তাকিয়ে। হেসেও উঠলো দৃঢ় ভাবে। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
— কি জানিস তো, এই শাহনেওয়াজ সাফিন কখনো কাঁচা খেলায় নামে না। আমি টোপ ফেললাম, আর তোরা সেই টোপে পা রেখে টোপটা গি’ললি৷ মাছতো জাল ফেললে সেই জালে ধরা পরবেই এটা স্বাভাবিক। ওহ নো, তুইতো জানিসই না টোপটা কি ছিল। হাহাহা।
সাফিনের হাসিতে কালো রাঙা জ্যাকেট পরিহিত মানবটি সাফিনের দিকে ভয়ের সহিত তাকাল।
সাফিন বললো।
— এক-এক করে বলি তাহলে তোকে। প্রথমে ৫০০ মেয়ে থেকে একজনকে সরিয়ে দিয়ে ৪৯৯ করলাম। কেন করেছি? শাহনেওয়াজ সাফিন কি এতটাই বোকা যে নিজের লাভ ছাড়া কাজ করবে। উপস, ওটার মাধ্যমে তোদের মাথাটা একটু নাড়ালাম আরকি, যাতে তোদের ফোকাসে চলে আসে মেয়েটি। তারপর মেয়েটাকে নিয়ে সিএনজিতে উঠে প্রমান করলাম মেয়েটার প্রেমে হা’বু’ডু’বু খাচ্ছি আমি। আমি খুব ভালো করেই জানতাম আসল মাথাটা ওখানে আসেইনি। বরং আমাদের বাসের পিছু নিয়েছিস তুই। অবশ্য শাহনেওয়াজ সাফিনের বাঘের চোখ। তাই বাসের মিরর থেকে কালো গাড়ি চোখ এরাইনি। খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছি তোর বসকে পায়ের ত’লায় এনে না ফললে আমার শান্তি হবে না। আর তুই যে তোর বসের খাশ চাক’র, তাই তোকেই আটকালাম। বাই দ্য ওয়ে, এখন নিশ্চয়ই ভাবছিস শাহনেওয়াজ সাফিন ফুল বোকা নয়তো তখনই তোকে ধরে ফেলতে পারতো।
আসলে কি জানিসতো, আমি খুব ভালোভাবে ঠান্ডা মাথায় তোদেরকে ধরতে চেয়েছি। এইসব দৌঁড়া দৌঁড়ি আমার পোশায় না আবার৷ আর তোরাও যে মেয়েটাকে আমার গার্লফ্রেন্ড ভেবে এ্যা’টাক করবি, এটা আমি খুব ভালোভাবেই জানতাম৷ আর হলোও তাই, আসলি তোরা৷ বাট বিগ উপস,ধরা খেয়ে গেলিতো সেই শাহনেওয়াজ সাফিনের হাতে! আসলে কি বলতো,পিপিলিকার পাখা গজে মরিবা’র পরে। তোর আর তোর বসের ঠিক একই অবস্থা হয়েছে।মেইন টপিকে আশা যাক তাহলে, এবার বল তোর বস কে? কোনো রকম চালাকি করার চেষ্টা করলে ওইযে জুবায়েরের হাতে বন্দুকটা দেখছিস, সোজা তোর মাথায় এসে মাথা ফু’টো হয়ে এফোর-ওফোর হয়ে যাবে।
সাফিনের কথা শুনে ভয়ে ঢোক গিলল লোকটি। ভয়ে জড়সড় হয়ে গেলে সাফিন দরজা ঠেলে বের হয়ে যেতে-যেতে জুবায়েরের উদ্দেশ্যে বললো।
—জুবায়ের ছেলেটাকে আচ্ছা মতো মালিশ করো দুই-তিন ঘন্টা। হয় ও মুখ খুলবে নয়তো ওকে উড়িয়ে দেবে৷ শাহনেওয়াজ সাফিন অন্য ভাবেও আসল কার্লপ্রিট ধরতে পারবে খুব।
জুবায়ের হেসে উঠলো। বললো।
—জ্বী স্যার।
.
—দোস্ত উঠ তারাতাড়ি। আজকে একটা অনুষ্ঠানে যাব তোকে নিয়ে।
সকাল-সকাল তেহার চেচামেচি শুনে প্রচন্ড মাথা ব্যা’থায় মাথার উপর বালিস চে’পে রাখলো সিরাত৷ ধীর কন্ঠে বললো।
—জান আমি কোথাও যাচ্ছি না আজকে। তুই যা প্লিজ।
তোহা রাগ নিয়ে মুখ ভার করে বললো।
—তুই যাবি তোর ঘাঁ’ড় যাবে। কথাটা বলেই সিরাতকে টেনে খাট থেকে নামিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে হাতে ব্রাশ ধরিয়ে দিয়ে বললো।
—প্লিজ বেব্বি ফ্রেশ হয়ে নে। আমার একটা কলিগের বিয়ে আজকে৷ আমি যাব আর তুই এখানে বাড়িতে বসে থাকবি, সেটাতো তোহা কিছুতেই হতে দিচ্ছে না জান। পাঁচ মিনিট ওয়েটিং এ থাকছি জলদি বের হ আমি শাড়ী বের করছি তোর জন্য।
তোহা চলে যেতে সিরাত আয়নায় নিজেকে দেখতে নিতে সাফিনের তৈলাক্তময় চেহারাটা ভেসে উঠতে নিজের গালে নিজে চর মেরে বিরবির করে বললো।
—এই শ’য়’তা’নটা আমার পিছু ছাড়ে না কেন? বাসাও শান্তি নেই! খোদা ওই বজ্জা’ত লোকটার সাথে যেন আমার আর জীবনে দেখা না হয়। কথাটা বলেই ব্রাশ করতে থাকলো সিরাত।
চলবে…..