হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-২৩

0
468

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ২৩ (#বোনাস_পার্ট)

#বর্তমান।
সারারাতের ঝুম বৃষ্টি শেষে শুভ্রতাময় এক মিষ্টি সকালের শুরু হলো যেন। জানালা ঘেঁ’ষে দক্ষিণা উত্রা হাওয়া বাহির থেকে ঠেলে সো-সো শব্দে পুরো রুম জুড়ে ছেঁ’য়ে গেলে সকালের হিমশীতল আবেশে কেঁ’পে উঠলো যেন সিরাত। পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালে বাহিরের মৃদু আলো চোখে এসে বা’রি খেয়ে গেলে কোমরটা কেমন টনটন করছে তাঁর ব্যা’থায়। সাফিনের কাঁধের উপর থেকে মাথাটা উঠিয়ে নিজের গলায় হাত বু’লিয়ে পাশফিরে উঠতে নিতে কারো শীতল হাতের স্পর্শ কোমড় জড়িয়ে ধরে ঘাড়ের কাছে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দিতে গরম নিশ্বাসের স্পর্শে কেঁ’পে উঠলো যেন সিরাত। ভয়ার্ত চাহনিতো পাশ ফিরে তাকাতে সাফিনের ফর্সা স্নিগ্ধময় মুখশ্রী দেখে চোখদুটি কেমন শীতল হয়ে আসলো সিরাতের। পরক্ষনে কালকে রাতের হওয়া ঘটনাগুলো চোখের সামনে ভাসতে থাকলো সিরাতের। রাতে ঘোরের ভিতর ফ্লোরে বসেই ঘুমিয়ে পরেছিল দুজন। পুরো আস্ত একটা রাত ফ্লোরে ঠান্ডায় কাঁ’টিয়েছে দুজন। সাফিনের পরনে নীল রাঙা জিন্স ছাড়া উম্মুক্ত বুকের দিকে চোখ গিয়ে ঠেকে গেলে বুকের মাঝে কেমন কাঁ’ম’রে উঠলো যেন সিরাতের। হুট করেই অবাধ্য এক ইচ্ছে পোষন করতে চাইছে যেন হৃদয়ে। সাফিনের বুকে মাথা রেখে খুব কাছ থেকে তাঁর হৃৎস্প’ন্দনের ধু’কপু’ক শব্দ শোনার জন্য প্রেয়সীর হৃদয়ে অসময়ে অবেলার বিতৃ’ষ্ণায় ছেঁ’য়ে পরলো যেন। সাফিনের ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে দীর্ঘ সময় হা করে তাকিয়ে থেকে হৃদয়ের ব্যাকুলতাগুলো আড়াল করতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো সিরাত।
—আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমোনোর সেই সপ্নটা যেন আমি অনেকদিন আগেই মা’টিচা’পা দিয়ে রেখেছিলাম সাফিন। কিন্তু আজ দেখুন, হুট করে আপনি আবারও আমার জীবনে ছুঁ’ড়ির আ’ঘাতের ন্যায় প্রবেশ করে আমার শক্ত হাতে গুছিয়ে নেওয়া হৃদয়টাকে আবারও অগোছালো করতে চলে এলেন। আচ্ছা আপনি আমার সাথে এতকিছু করার পরও এখনও যে আমার উপর তদারকি করতে চলে আসেন? এগুলো আমার খা’রাপ লাগা না হয়ে ভালোলাগায় পরিনত হয় কেন বলতে পারেন সাফিন? আজ এই অবা’ধ্য হৃদয় আবারও আপনার পিছুপিছুই পিছুটা’ন অনুভব করছে। আপনার বুকে মাথা রাখাটা কি খুব বেশি অপ’রাধের হয়ে যাবে সাফিন?
—আমি বলেছি তোমাকে সে কথা?
হুট করেই সাফিনের কন্ঠ কানের কাছে এসে সা’জোরে আ’ঘা’ত হানতে কেঁ’পে উঠলো যেন সিরাত।
—ব্যাপারটা কি হলো? তাঁরমানে এতক্ষণ সাফিন ঘোমানোর ভা’ন ধরে ছিলেন? ব’জ্জা’ত কি সাধে বলি ওনাকে! মনে-মনে কথাটা ভাবতেই ল’জ্জায় মি’য়িয়ে গেল যেন সিরাত। মাথা নিচু করে ফেললে ইচ্ছা মতো ছে’ড়ে দিল সাফিনকে।
সাফিন সিরাতের ব্যান্ডেজ করে দেওয়া নিজের আ’হত হাতটার দিকে ধীর চাহনিতে একটিবার তাকিয়ে সিরাতের দিকে খানিকটা ঝুঁ’কে কোমল স্বরে বললো।
— উফ সিরাত, তুমি আমার বুকে কেন দরকার পরলে আমার ঘাড়ের উপর উঠে বসে থাকো। তোমাকে আমি একটিবার ভু’ল করেও যদি কিছু বলেছি, তো তুমি আমাকে যা খুশি শা’স্তি দিবে আমি সবটা মাথা পেতে নেব বেব্বি। একটা কথা মনে রাখবে, এই শাহনেওয়াজ সাফিনের চোখ যার উপর গিয়ে একবার ঠেকে যায় তাঁকে সে মাথায় করে রাখে। আর আমার চোখে দেখা শ্রেষ্ঠ রমনী হলে তুমি। আর তুমি এখনও আমার বিয়ে করা একটি মাএ আহ্লাদের বউ। তাই চুমু খাও, বুকে মাথা রাখো, বা অন্য কিছু করো, শাহনেওয়াজ সাফিনের জান হাজির তোমার কাছে। কথাটা বলেই সাফিন সিরাতকে চোখ মারতে বিরক্ত হলো সিরাত। রাগে ফুঁ’সতে থাকলো সে। রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললো।
—সরুন বলছি আমার থেকে,দ্রুত সামনে থেকে হাঁটুন আপনি।
—যাহ বাব্বাহ, একটু আগেও তো ঠিক ছিলে, হুট করে আবার কি ভূ’ত চা’পলো তোমার মাথায়। এই সত্যি করে বলোতো সিরাত তোমার আশেপাশে শা’ক’চু’ন্নি ঘুরেফিরে তাইনা জান?
সাফিনের কথা শুনে সিরাতের মাথায় যেন র’ক্ত উঠে যাওয়ার উপক্রম। দুইহাত দিয়ে সাফিনের বুকে কিক করে উঠে দাঁড়িয়ে পরলে সাফিন পেছন থেকে সিরাতের কালো রাঙা ওড়নাটা হাতের মু’ঠোয় নিয়ে মৃদু হেসে শীতল কন্ঠে বললো।
—প্রেয়সীর রুপমাখা মা’য়াবী মুখটা আজ বড্ড বেশি পো’ড়াচ্চে আমাকে। তবেকি প্রেয়সীর থেকে এ অধমের জন্য কখনো ক্ষ’মা আসবে না?
সাফিনের শীতল কন্ঠের রেশ কানের লতিতে প্রবেশ করে গেলে থ’মকে দাঁড়াল সিরাত। কয়েকটা ঢো’ক গি’লে নিল সে। সাফিনের দিকে পিছুফিরে তাকানোর দুঃসা’হস আর দেখালো না সিরাত। পিছু না তাকিয়েই ধীর কন্ঠে বললো।
— ছাড়ুন আমাকে, ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি আপনার জন্য ব্রেক ফাস্টের ব্যাবস্থা করছি। গু’লি লেগেছে আপনার,মেডিসিনটাও তো টাইম মতো নিতে হবে নাকি?
— আর যদি না ছাড়ি?
—তাহলে আর কি করার? না খেয়ে মরু’ন আপনি।
সিরাতের এমনধারা কথা শুনে ফিক করে হেসে উঠলো সাফিন। বললো।
— অকালে বিধবা হলে তুমিই হবে তাহলে।
সাফিনের কথা শুনে বিরক্তি নিয়ে শেষমেশ আর চোখে পিছুঘুরে তাকিয়ে সাফিনের দিকে কি’ঞ্চিৎ রাগ দেখিয়ে ওড়নাটা ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে বললো সিরাত।
—পাঁচ মিনিটের ভেতরে ফ্রেশ হয়ে আসবেন আপনি। আমি এখানে ওয়েট করছি।
সাফিন খানিকটা দুষ্টু’মির সহিত সিরাতের দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বললো।
— চলোনা বউ একসাথে যাই।
সাফিনের কথা শুনে ল’জ্জায় কান গরম হয়ে আসলো যেন সিরাতের। চোখ পাকিয়ে সাফিনের দিকে তাকিয়ে কড়া ভাবে বললো।
—আপনি যাবেন নাকি কি’ল খাবেন? শ’য়’তা’নে’র হা’ড্ডি! পাখে একটা গু’লি লাগল তবুও ওনার শিক্ষা হয়নি।
সাফিন ভ্রু জাগিয়ে নিয়ে ভাবুক দৃষ্টিতে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বললো।
—এই পাখটা আবার কি বউ?
—আমার মাথা। আপনি যান এখন এখান থেকে।
— আচ্ছা যাচ্ছি, যাচ্ছি, কিন্তু একটা কিস করো আগে, তাহলেই চলে যাচ্ছি।
— লু’ই’চ্চা ব্যা’ডা, যাবি নাকি রান্নাঘর থেকে ঝাড়ু আনা লাগবে আমার?
— তুমি একটা যাচ্ছে তাই সিরাত। পে’ন্তির মতো ঘা’ড়ের উপর বসে আছো। কথাগুলো বলতে-বলতে সাফিন টাওয়াল নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলে সিরাত খানিকটা জোরেই সাফিনকে শোনানোর জন্য বলতে থাকলো।
—প্রয়োজনে ঘা’ড়ের উপর বসে কেন? উঠে নাচা>না’চিও আরম্ভ করে দেব। ব’জ্জা’ত লোক একটা।
সিরাতের কথা শুনে সাফিন ঝর্ণাটা ছেড়ে দিয়ে বললো।
—হ্যা এটা শোনাই বাকি ছিল আমার। খোদা বউতো একটা দিলা, কিন্তু মেয়ে আমাকে পা’ত্তাই দেয়না কোনো। সারাক্ষণ শুধু রাগ নিয়ে চোখ পা’কানো খালি।
—জলদি করুন আপনি।
—আসছি-আসছি,পাঁচ মিনিট ওয়েট করো।বললাম আসো দুজনে একসাথে গোসল করি? তাতো আসবেন না মহারানী। আর এখন যত চে’চা>মে’চিঁ শোনাবেন আমাকে। যত জ্বা’লা সব আমার।
— শুনতেছি কিন্তু সব।
সিরাতের কন্ঠ শুনে হাসলো সাফিন। পা’গলী বউ একটা আমার।
.
সকাল ১১ টা নাগাদ তোহার ফোনকল আসাতে ফোনটা যেন লুফে নিল সিরাত। উৎকন্ঠার সহিত বললো।
— কালকে রাতে ফোন ধরিসনি কেন তোহা? তুই জানিস আমি কত টেনশনে ছিলাম তোর জন্য? জান চিন্তা হয় তো নাকি?
সিরাতের ব্যাকুল কন্ঠ শুনে তোহা মৃদু হেসে ধীর কন্ঠে বললো।
— আরে কুল বেব্বি। জাস্ট চিল। আমি একদম ফিট এন্ড ফাইন আছি। আসলে কাল রাতে যা ঝড়বৃষ্টি গেল৷ নেটওয়ার্ক ছিল না ফোনে। আমি খুব সাবধানেই বাড়িতে এসে পৌঁছেছি, খেয়েছি,এখন আম্মার পাশে বসে আছি আমি আর জুলিয়া। ডক্টর কিছুক্ষণ বাদেই চলে আসবে। আমিও আম্মা একটু সুস্থ হলেই কালকে নয়তো পরশুর মধ্যে চলে আসব।
তোহার কথা শুনে সস্থির নিশ্বাস ছাড়ল সিরাত। বললো।
—ভালোয়-ভালোয় এখন কাকি ঠিক হয়ে গেলেই হলো।
—হুম দোস্ত দোয়া করিস।
—অলওয়েজ করি সেটা।
—আমি জানিতো জান।
হাসলো সিরাত। বললো।
—নিজের খেয়াল রাখবি কিন্তু তোহা। টাইমের কাজ টাইমে করবি কিন্তু।
—আচ্ছা আমার সোনা আমি সব বুঝে গেছি। এই সেইম কাজটা যেন নিজেরও করতে শুনি।
সিরাত হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় দিল শুধু তোহাকে।
সাফিন নাস্তা করে সিরাতের কথা অনুযায়ী মেডিসিন নিয়ে তারপর সোফায় বসে টিভি দেখছে এবং আর চোখে সিরাতের দিকে তাকাচ্ছে। সিরাত তোহার সাথে কথা শেষ করে তাঁর দিকে এগিয়ে এসে ধীর কন্ঠে বললো।
—কি দেখছিলেন এদিকে?
—তোমাকে।
সাফিনের সোজাসাপটা উত্তর শুনে ভ্রু জাগিয়ে ফেলল সিরাত। ভ্রুযুগল নামিয়ে ফেলে ধীর কন্ঠে বললো।
—হুম। কথা বলেই রান্না ঘরের জানালার কাছে এসে দূরে একটা মেয়েকে রুমের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটা ভেং’চি কেঁ’টে সা’জোরে জানালাটা আঁ’টকে দিতে সাফিন সিরাতের দিকে তাকালে সিরাত মুখ ঝাঁ’মটা দিতে সাফিন কি হলো বুঝতে না পেরে হা হয়ে গেল পুরো। শীতল কন্ঠে বললো।
—মাঝেমধ্যে কি যে হয়না তোমার সিরাত? আল্লাহই ভালো জানেন।
” দুপুরের দিকে সাইলেন্ট করা ফোনটা হাতে নিতে একটানা জুবায়ের, আমেনা বেগম, মোস্তফা সাহেবের ফোনকল দেখে মাথা চ’ক্ক’র দিয়ে গেল যেন সাফিনের।” রান্নাঘরে সিরাত দুপুরের জন্য রান্না করতে ব্যাস্ত। আকাশটা আবারও কেমন মেঘ-মেঘ করছে। হুট করে দেখা গেল অঝরে কান্না জুড়ে দিল শহরে।আর চোখে রান্নাঘরে সিরাতের দিকে সাফিনের চোখ পরে গেলে সিরাতের নাকের ডগা’য় কেমন ঘেমে উঠেছে দেখে হাসলো সাফিন। ছোটবেলায় নিজের আম্মা আমেনা বেগমের থেকে অনেক শুনেছে সে। যে, মেয়েদের নাক ঘামালে নাকি স্বামী আদর করে বেশি।
—আমিতো সত্যিই আদর করতে যাই,কিন্তু আমার বেরশিক বউ আদরের বদলে দেয় একঝাপ মুখ ঝাঁ’মটা। কথাটা ভাবতেই ঠোঁটের কোনে হাসি এসে জড়ো হলো যেন সাফিনের। সিরাতের থেকে চোখ সরিয়ে কালকে রাতের কাজের কথা মনে পরে গেল বিধায় জুবায়েরের ফোনটাই আগে ব্যাক করলো সাফিন।
—হ্যা বলো জুবায়ের? ওদিকের কি খবর?
—স্যার মোহন লোকটাকে ধরতে পেরেছে, আপনাকে গু’লি করে পার পেয়ে যাওয়া অতটাও সহজ নয়। লোকটা হলো ওই পার্টির ছেলেটার বাপের পাঠানো লোক। আমরা যে হাত-পা ভে’ঙে দিয়ে হাসপাতালে এডমিট করেছি ওই ছেলেটা সবকিছু তাঁর বাপকে জানিয়েছে। তো তাঁর জন্যই ম্যামকে মা’রার জন্য লোক পাঠিয়েছিল। কিন্তু আপনি মাঝপথে বাঁ’ধা হয়ে গেলেন আরকি। এখন এই লোকটাকে কি করব আমরা সেটা একবার বলুন শুধু?
—যে লোকটা মা’রতে এসেছে তাঁর পা ভে’ঙে হালকার মধ্যে ছেড়ে দেও। আর মেইন যে কাজটা করতে পাঠিয়েছে? তাকে উড়িয়ে দিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেও। ওরও বোঝা উচিত যে,ও কার লে’জে পা দিতে এসেছিল।
সাফিনের কথা শুনে মৃদু হেসে উঠলো জুবায়ের। ধীর কন্ঠে বললো।
—ওকেহ স্যার।
—আচ্ছা জুবায়ের শোনো?
জুবায়ের ফোনটা কেঁ’টে দিতে যাওয়ার আগেই সাফিন বাঁ’ধ সেধে দিলে মৃদু থ’মকালো জুবায়ের। বললো।
—জ্বী স্যার বলুন?
— রাতে রিসোর্টে একটা পার্টির ব্যাবস্থা করো। কাল আমার বউয়ের বিবাহ বার্ষিকী বলে কথা। একটা সারপ্রাইজড তো হতেই হয় তাইনা?
হাসলো জুবায়ের হাসির স্বরে বললো।
—এক্ষুনি ব্যাবস্থা করছি সব স্যার।
সাফিন হাসলো শুধু।
“জুবায়েরের ফোনটা কেঁ’টে দিয়ে রান্নাঘরে সিরাতের কাছে গিয়ে সিরাতের পাশ ঘেঁষে দাঁড়াতে বিরক্ত হলো সিরাত।” বললো।
—এভাবে দাঁড়িয়ে পরলেন যে হুট করে?
— আমি আমার বউয়ের পাশে দাঁড়িয়েছি তাতে তোমার কি সিরাত?
সাফিনের কথা শুনে হা হয়ে গিয়ে নাক ফোলাল সিরাত। বললো।
— এখান থেকে যান এক্ষুনি মাং’সটা হয়ে গেলে খাবার বেরে দিচ্ছি।
— উমম, ঘ্রা’নটা কিন্তু খিদেটা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে বউ।
—সারাক্ষণ কানের কাছে বউ-বউ করে ঘ্যা’ন>ঘ্যা’ন করবেন নাতো সাফিন? বিরক্ত লাগে ওগুলো।
সিরাত কথাগুলো বলতে-বলতে মাং’সের করাইটাতে সাল আর এলাচ দিয়ে ঢকনা দিয়ে সেদ্ধ হওয়ার জন্য ঢেকে দিয়ে সাফিনের দিকে ঘুরে তাকালে সাফিন হেসে উঠলো। বললো।
— উফ সিরাত,তোমাকে রাগাতেইতো আমার খুব বেশি ভালোলাগে জান। সেটা কি করব তাহলে, হুম?
সাফিনের কথা শুনে সিরাত রাগের চোখে সাফিনের দিকে তাকাতে সাফিন একটানে সিরাতের হাতটা চে’পে ধরে সিরাতকে নিজের কাছে টে’নে এনে সিরাতের ঘাড়ের কাছে মৃদু কাঁ’ম’রে দিলে দ্রুত চোখ বন্ধ করে নিল সিরাত। সাফিনের স্পর্শ অনুভব করে শরীরে কাঁ’পুনি ধরিয়ে দিচ্ছে যেন তাঁর। খানিকটা থেমে-থেমে বললো।
— এখানে অ’সভ্য’তামি না করে টেবিলে গিয়ে বসে পরুন খাবার দিচ্ছি। সিরাতের কথা শুনে হেসে উঠলো সাফিন। বললো।
— আমার বউ আমার খাওয়া নিয়ে কত ভাবে দেখছি।
— আপনার মাথা ভাবি। এবার ছারুন দেখি আমাকে? সাফিন ছারতে না নিতে হুট করে ফোনটা বেজে উঠলে আমেনা বেগমের নাম দেখে রিসিভ করতে সিরাতকে ছেড়ে দিলে হা’প ছেড়ে বাঁ’চল যেন সিরাত। ফোনের ওপাশ থেকে আমেনা বেগম এক প্রকার কেঁদেই ফেললেন যেন৷
—কতবার ফোন করেছি তোকে সাফিন? ফোনটা ধরার প্রয়োজনও মনে করিসনা তাইনা সাফিন?আমেনা বেগমের কান্নারত কন্ঠ শুনে সিরাতের মুখটা কেমন থ’ম>থ’মে হয়ে গেল যেন। কতদিন তাঁকে দেখেনি সিরাত,কথাও বলেনি,মনটা কেমন যেন উসখু’স করছে তাঁরসাথে কথা বলার জন্য। কিন্তু কিছু বললো না সিরাত। মাং’সটা হয়ে গেলে গ্যা’সটা অফ করে টেবিলে সবকিছু গুছিয়ে নিতে থাকলে এপাশ থেকে সাফিন আমেনা বেগমের প্রশ্নের উত্তরে খানিকটা থেমে গিয়ে আবার বললো।
— ধুর আম্মা,তুমিও না। আমি তোমার ছেলের বউয়ের সাথে আছি এখন। একসাথে খাওয়া হবে রাতে ঘুরতে যাওয়া হবে। তাই আরকি ফোনটা সাইলেন্ট রাখছিলাম। সরি আম্মা। এই কানে ধরছে তোমার ছেলে। সিরাতের কথা শুনে আমেনা বেগমের চোখমুখ কেমন খুশি- খুশি হয়ে গেল। খুশিতে বললেন।
—মেয়েটা কেমন আছেরে সাফিন?
—তোমার ছেলের সাথে যখন আছে, নিশ্চয়ই খা’রাপ থাকবে না সে? এখন তো সে আছে আদরে-আদরে তাইনা বেব্বি? কথাটা বলে সিরাতের দিকে প্রশ্ন ছুঁ’ড়ে দিলে রাগে- ল’জ্জায় সিরাত চোখ বড়-বড় করে সাফিনের দিকে তাকিয়ে ফু’সতে থাকলে সাফিন হাসিতে গ’ড়া>গ’ড়ি খেল যেন। ওপাশ থেকে আমেনা বেগম বললেন।
—সবসময় ফাই’জলামি তোর। মেয়েটা নিঘ্যা’ত ল’জ্জা পেয়েছে। যাইহোক, মেয়েটার খেয়াল রাখিস আব্বা। আমার আম্মাজানকে এইবার সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে ফিরবি কিন্তু। এটাই দেখতে চাই আমি সাফিন। আমেনা বেগমের ধরা কন্ঠের রেশ শুনে সাফিন মৃদু হেসে সিরাতের দিকে তাকাতে সিরাত টেবিলে খাবার গোছাতে থাকলে সাফিন মৃদু হেসে বললো।
— অবশ্যই আম্মা। এবার আর তোমার ছেলে ভু’ল করবে না।
হাসলেন আমেনা বেগম।
“আমেনা বেগমের সাথে কথা শেষ করে টেবিলে এসে বসে পরলো সাফিন।” সিরাত ভাতের প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে নীচু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো।
—আম্মা কেমন আছেন? সিরাতের কন্ঠ শুনে তাঁর দিকে শীতল দৃষ্টি তাক করলো সাফিন। মৃদু হেসে বললো।
— ভালো আছে হয়তো? তোমার অনুপস্থিতিতে আর কতইবা ভালো থাকবে ভাবো?
সাফিনের কথার রেশ শুনে আর কথা আগাল না সিরাত।
—যেখানে নিজেই তাড়িয়ে দিলেন সাফিন? সেখানে নিজেই আবার আফ’সোস করছেন? সত্যিই আপনার আয়না আপনি নিজেই হয়তো জানেননা। যার প্রগর প্রেক্ষাপট আমার কাছে স্পষ্ট হওয়াও কোনো কাম্যের নয়। (মনে-মনে কথাগুলো বলে দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ল সিরাত।)
.
সারাদিনের ঝিমিয়ে থাকা কালো রাঙা মেঘের কোন স্পর্শ করে সন্ধ্যা ছুঁই-ছুঁই হয়ে নামলো ঝুম বেগে বর্ষনপাত। এলেমেলো ভাবে বয়ে চলা হাওয়াগুলোও যেন গর্জ’নের সহিত ধরনীতে এসে প্রগরভাবে ভাঙ’নতা ধরিয়ে দিচ্ছে। টানা পাঁচমিনিট ধরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকার পর কালো রাঙা শাড়ি পরে সিরাত রুম থেকে বের হয়ে আসলে সাফিন তাঁর দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিল না যেন। সিরাত মাথা নিচু করে থাকলেও লাল আভায় মিশ্রিত মুখশ্রী চোখ এড়াল না সাফিনের। মুচকি হেসে সিরাতের খুব কাছে এসে কোমর স্পর্শ করে সিরাতের খোঁপায় মো’ড়ানো চুগুলো মুক্ত করে দিলে বৃষ্টির শিহরনে জানালা ভেদ করে ভিতরে আশা হাওয়ায় সিরাতের ঘনকালো চুলগুলো কেমন দুলছে যেন। সাফিন সিরাতের উম্মুক্ত চুলে নাক ডুবিয়ে দিতে সিরাত চোখ খিঁ’চে বন্ধ করে নিল দ্রুত। হুট করেই সাফিন সিরাতকে পাঁ’জাকোলা করে নিয়ে বাহিরের দিকে অগ্রসর হলে সিরাত সাফিনের গ’লা জড়িয়ে ধরে সাফিনের বুকে মুখ লোকাতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে যেন। সিরাতের এরুপ ল’জ্জা-ল’জ্জা ভাবটা দেখে সাফিনের ঠোঁটের কোনে হাসির রেশ যেন উপ’চে পরছে।
—আমার এই চোখদুটি তোমার রুপ দেখে নয়, বরং তোমার মোহে বিমোহিত হয়েছে সিরাত।যার গভীরতা হয়তো এই শাহনেওয়াজ সাফিনের নিজেরও সঠিক জানা নেই। কথাগুলো মৃদুস্বরে সিরাতের কানের কার্নিশ ঘেঁষে অন্তর্নিহিত হতে কেমন মি’য়িয়ে গেল যেন সিরাত। বুকের ভেতরটা কেমন ধুকপুক- ধুকপুক করছে। যার প্রতিটা শব্দ খুব কাছ থেকে অনুভব করতে পারছে সিরাত। দরজাটা বাহির থেকে লক করে দিয়ে বৃষ্টি মাথায় করে সিরাতকে গাড়িতে বসিয়ে দিলে খানিকটা ঝুঁ’কে সিরাতের কপালে প্রগর ভাবে চুমু খেল সাফিন। বাঁকা হাসি হেসে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিতে বৃষ্টির সহিত ঝিরিঝিরি উ’ষ্ণতা গাড়ির কাঁচের সাথে ছি’টকে এসে সিরাতের চোখেমুখে শিহরনের সৃষ্টি করতে সাফিন আর চোখে সিরাতের দিকে তাকিয়ে হাস্যাজ্বল মুখশ্রীতে রিসোর্টের উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে এগোলো। সিরাত সাফিনের দিকে পলক বীহিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে গাড়ির সাইড মিরর থেকে ব্যাপারটা লক্ষ করে সাফিন সিরাতের সামনে তুরি বাজাতে হুঁশ ফিরলো সিরাতের। সাফিন একগাল হাসি হেসে। দুষ্টু’মির সহিত বললো।
—প্রেমে পরে গেছো আমার তাইতো সোনা? এই বলোনা সিরাত? প্লিজ,প্লিজ? সিরাত সাফিনের কথার পা’ত্তা না দিয়ে বাহিরের দিকে তাকাতে হিমেল স্রোতে চোখদ্বয় বন্ধ হয়ে আসছে যেন তাঁর।
— আপনার এই হাসির প্রেমে পরেছি বহুদিন আগে সাফিন।একমুঠো রোদও তাঁর আলোকে মুঠোবন্দি করার জন্য একটিবার হলেও সুযোগ খুঁজে দেয়। আমিও নাহয় আর একটু নির্ল’জ্জ হয়েই আপনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিচ্ছি। পারলে এবার আমাকে বৃষ্টির শিহরনে হৃদয় গহীনে আগলে রেখে দেখান……

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে