#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ২২
পর-পর এতগুলো খু’ন হওয়াটা যেন সাফিনের ধৈর্যের বাঁ’ধ ভে’ঙে দিতে ব্যাস্ত। মাথাটা ব্যা’থায় ধরে গেছে যেন তাঁর। ক্লান্ত শরীর যেন এত কিছু মেনে নিতে পারছে না ঠিক। পা ঢলে বিছানায় বসে পরলে মোহন ফোন কেঁ’টে দিতে দরজায় কেউ কড়া নাঁড়লে ধীর চাহনিতে সেদিকে তাকালে হেলাল দরজায় দাঁড়িয়ে সাফিনের সম্মতির উদ্দেশ্যে বললো।
—ভিতরে আসব স্যার?
— আসো।
সাফিনের ধরা কন্ঠের সম্মতি শুনে হেলাল দরজাটা মৃদু চা’পিয়ে রেখে ভিতরে এসে থ’ম>থ’মে কন্ঠে বললো।
—খবর আছে স্যার।
হেলালের কন্ঠ শুনে ভ্রুযুগল কি’ঞ্চিৎ ভা’জ করে ফেলল সাফিন। মনটা যেন বি’ষিয়ে রয়েছে তাঁর। মৃদু রাগ নিয়েই বললো।
— ফর্মালিটি রাখো হেলাল। আসল কথা বলো? এমনিতেই মাথার প্রতিটা শিরা- উপশিরায় র’ক্ত বেঁ’ধে গেছে আজ।
সাফিনের কন্ঠে খানিকটা নড়েচড়ে দাঁড়াল হেলাল। গলা খাঁ’কারি দিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— স্যার প্রত্যেকটা খু’নের সাথে যে ফোনগুলো পাওয়া গেছে সেগুলো তো বেশিরভাগই ভে’ঙে গেছে, কিন্তু যেগুলো সারাই করা গেছে সেগুলো থেকে জানা গেছে…
—কি জানা গেছে দ্রুত বলো?
হেলালের পুরো কথাটা শেষ হওয়ার আগেই উৎকন্ঠার সহিত সাফিন বাঁ’ধ সেধে দিলে হেলাল খানিকটা থ’মকে গিয়ে আমতা-আমতা করে বললো।
— মৃ’ত্যুর আগ পর্যন্ত একটা নম্বরেই কল গেছে সবগুলো ফোন থেকে।
ভ্রুযুগল কি’ঞ্চিৎ ভা’জ করে ফেলল সাফিন। গম্ভীর কন্ঠে বললো।
— এই কথা আমি আগেই শুনেছি। নতুন কিছু শুনতে চাইছি।
হেলাল কয়েকটা ঢোক গি’লে মাথা নিচু করে থেমে-থেমে খানিকটা জ’ড়’তা নিয়ে বললো।
—স্যার লোকগুলো আপনার বুড়ো আম্মার নম্বরে কল করতেন।
হেলালের কথার রেশ সাফিনের কানের লতিতে প্রবেশ করার সঙ্গে-সঙ্গে ভ’রকে গেল সাফিন।
—বুড়ো আম্মা!
—জ্বী স্যার। টেক্সট গুলো দেখা যায়নি কারন লোকগুলো খুব ধুরন্ধ’র। টেক্সট করেই সবগুলো টেক্সট সঙ্গে- সঙ্গে আনসেড করে দিয়েছে।
— কি হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না হেলাল। মাথা কাজ করছে না কিছু। বুড়ো আম্মাকে ফোন করতে যাবে কেন লোকগুলো? আর বুড়ো আম্মাকে খু’নই বা করলো কে? নাকি এখানেও প্যাঁ’চ আছে কোনো?
হেলাল খানিক মাথা চুলকে ধীর গলায় বললো।
— স্যার লোকগুলো যদিওবা বুড়ো আম্মাকে ফোন করুক। কিন্তু এই সব খু’নের পেছনে যে আপনি ম্যামকে সন্দে’হ করছেন এটার তো কোনো মানে হয়না। তাইনা?
চুপ হয়ে গেল সাফিন। যতবার কোনো কিনারা খুঁজতে যায় ততবারই কোনো না কোনো স্রোতে সেটা এলোমেলো করে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরে যেন।
কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজ, হুট করে বুড়ো আম্মা আর সকিনা খু’ন, একের পর এক লা’শ, এগুলো কি হচ্ছে তারসাথে? সত্যিই তো সিরাতের কি লাভ ইয়াংম্যানকে খু’ন করে? আর সিসিটিভি ফুটেজও তো আর মি’থ্যে বলছে না। ফোনগুলো ন’ষ্ট হওয়ার পেছনেও সিরাত জড়িত। নাহলে হয়তো আরও কিছু গোপন তথ্য পাওয়া যেত। তাহলে কি সবকিছুই আগে থেকে প্লানকৃত? ঘুরেফিরে সিরাত না চাইতেও আমার মস্তিষ্কে গেঁ’থে আছে যেন। এই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর ওকে কড়ায়-গণ্ডায় আমাকে দিতে হবে। (মনে-মনে কথাগুলো ভাবতে থাকলে হেলাল শান্ত স্বরে বললো।)
— শহরের পরিস্থিতি ঠিক লাগছে না স্যার। কি যে হচ্ছে একের পর এক!
সাফিন হেলালের দিকে শীতল চাহনিতে তাকিয়ে ধীর গলায় বললো।
— তোমাদের ম্যাম কোনো কিছুতেই নেই আবার সবকিছুর সাথেই আ’ষ্টেপৃ’ষ্ঠে জড়িয়ে আছে। তাই তাঁকে এর জবাবদিহি করতে হবে। সবকিছুর উত্তর চাই আমার। জুবায়ের কোথায় আছে?
হেলাল খানিকটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো।
—কাল রাত থেকে দেখা যায়নি তাঁকে। মোহন সকিনা আর বুড়ো আম্মার লা’শের কাছে আছে। এবারের মতো শেষ রক্ষা হয়নি, এতক্ষণে মিডিয়ার কানে নিশ্চিত খবরটা পাঁচকান হয়ে গেছে।
— চোখ বন্ধ করে নিল সাফিন। এই শীতল পরিবেশেও কেমন ঘেমে উঠছে সে। তাঁর একমাএ বড় সম্বল ছিলেন আজাদ সাহেব। যাঁর কারনে এতদূর আসতে পেরেছে ও। নিজের ড্যাডকেও কখনো এতটা প্রায়োরিটি দেয়নি সে,যতটা আজাদ সাহেবকে সে দিয়েছে। আর আজ তাঁর অনুপস্থিতিতে কেমন কুসুমের ন্যায় কোমল হয়ে পরেছে সে। নিজের সেই তেজটা যেন ঠিক আয়ত্ত করতে পারছে না। ধীর পায়ে বসা থেকে উঠে পরলো সাফিন। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—ড্যাডকে এসব কিছু জানানোর দরকার নেই।বুড়ো আম্মা যে খু’ন হয়েছে এটা ড্যাড জানে?
— কি ভেবোছো তোমরা? যে,আমাকে না জানিয়েই নিজেরা একা-একা সব কাজ করে নিবে?
হেলালের দিকে প্রশ্নটা ছুঁ’ড়ে দিলে দরজার কাছ থেকে মোস্তফা সাহেবের কন্ঠ শুনে সেদিকে ধীর চাহনিতে তাকাল সাফিন।
—ড্যাড?
সাফিনের ওষ্ঠদয় মৃদু ফাঁ’ক হয়ে গেলে মোস্তফা সাহেব গম্ভীর দৃষ্টিতে সাফিনের দিকে তাক করে শান্ত স্বরে বললেন।
—মোহন রাতের ফ্লাইটের টিকিট দিয়ে যাবে তোমাকে। আজকে রাতের ভিতরে তুমি দেশের বাহিরে যাচ্ছো সাফিন। আর আজকে দিনটা তোমার বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ।
মোস্তফা সাহেবের কথা কানের কাছে দৃঢ় ভাবে এসে পৌঁছাতে চোখ-মুখের ভাবভঙ্গি নিমিষেই পাল্টে গেল সাফিনের। খানিকটা বাঁ’ধ সেধেই বললো।
—কিন্তু ড্যাড…
—হেলাল তোমার স্যারকে বাহির থেকে দরজা লক করে তারপর তুমি বাড়ির বাহিরে পা রাখবে। আর তোমার স্যারকে বলে দেও নিজের ড্যাডকে যদি জি’ন্দা দেখতে চায় তাহলে যা বলছি তাঁকে সব মেনে নিতে।
সাফিনের পুরো কথাটা শোনার কোনো আগ্রহ দেখালেন না মোস্তফা সাহেব। বরং নিজের কথাগুলো উগ’রে দিলেন।হেলাল ধীর চাহনিতে একবার বাপ-ছেলের মুখশ্রী দেখে নিয়ে কয়েকটা ঢোক গি’লে মাথা নিচু করে ফেললে মোস্তফা সাহেব স্থান ত্যা’গ করতে নিতে সাফিন দ্রুতগতিতে বলে উঠলো।
—কিন্তু ড্যাড আমি বুড়ো আম্মাকে তো দেখতে যাব নাকি? আর তুমি আমাকে ব্লাক’মেইল করছো রীতিমতো!
সাফিনের কথায় থেমে গেলেন মোস্তফা সাহেব ধীর চাহনিতে পিছুঘুরে গাম্ভীর্যের সহিত বললেন।
— যে ছেলে তাঁর জানের জান, প্রানের প্রান ইয়াংম্যানকেই শেষ বারের মতো দেখতে আসেনি,তাঁর কাছে বুড়ো আম্মা আর কতটুকু ইম্পর্ট্যান্ট হবে? আমি আব্বাজানকে হাঁড়িয়েছি। তোমাকে হাঁড়াতে চাইছি না সাফিন। আর ধরে নেও তাই, ব্লা’কমেইলই করছি তোমাকে।এছাড়া কোনো উপায় নেই তোমাকে থামানোর। এতদিন তোমার সব কথা মুখ বুজে ছেলেমানুষী ভেবে মেনে নিয়েছি। তুমি সিরাতকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছো সেটাও কারন সহিত মেনে নিয়েছি। তুমি কি ভাবো? আমি কিছু জানতে পারি না? এ রকম বুদ্ধি নিয়ে নিশ্চয়ই দেশের প্রধানমন্ত্রী হইনি আমি। কথাটুকু এক নিমিষে শেষ করে মোস্তফা সাহেব চলে গেলে হেলাল মাথা নিচু করে রাখলে দুইহাত মাথায় চে’পে ধরে বিছানায় বসে পরলো সাফিন। মোস্তফা সাহেব জীবনের প্রথম তাঁর সাথে এতটা রুড বিহেব করলেন। চোখ বন্ধ করে ফেলল সাফিন। বুকের ভেতরকার জ্বা’লার ভাবটা যেন কোনোমতেই থামানো যাচ্ছে না তাঁর। চোখদুটি লাল হয়ে গেলে মৃদু ঢোক গি’লে শীতল কন্ঠে হেলালের উদ্দেশ্যে বললো।
—ড্যাড যেটা বলে গেছে সেটা করে এখান থেকে বিদায় হও।
—কিন্তু স্যার…
পুরো কথাটা শেষ করার আগে সাফিন তাঁর র’ক্তিম চোখদ্বয় হেলালের দিকে তাক করতে ভয়ে মাথা নিচু করে ফেলল হেলাল। বললো।
—আচ্ছা স্যার।
.
দিগন্তের কোন ছুঁয়ে ঘনিয়ে আসছে একরাশ অঘোছালো মেঘদ্বয়। হিমশীতল হাওয়ায় হসপিটালের জানালা পেড়িয়ে তোহার ঘন চুলগুলো উড়িয়ে দিতে ব্যাস্ত। মুখে দুহাত গুঁ’জে চেয়ারে বসে আছে তোহা। টেনশনে মাথা টনটন করছে যেন তাঁর। কালকে রাতে সিরাত দরজা না খোলায় সাফিনের নম্বর না থাকায় জুবায়েরকে ফোন করেছিল তোহা৷ জুবায়ের তৎক্ষনাৎ তাঁদের বাড়িতে চলে আসলে দরজা ভে’ঙে সিরাতকে অ’জ্ঞান অবস্থায় পেয়ে পুরো ভর’কে গিয়েছিল দুজন। অনেক চেষ্টা চালিয়েও সঠিক ফল না পেলে হসপিটালে নিয়ে আসতে হয়েছে সিরাতকে শেষমেশ। কিন্তু এখনও জ্ঞান ফিরেনি সিরাতের। প্রবল বেগে জ্বর হয়েছে তাঁর অবেলার বৃষ্টিতে ভিজে। ডক্টর এখনও তেমন কিছু না বলাতে বুকটা কেমন ভয়ে কু’করে আছে তোহার। বারংবার উঠে পায়চারি করছে তো আবার বসছে। জুবায়েরকে বারংবার সাফিনকে ফোন করতে বললেও জুবায়ের বারাবর মাথা নিচু করে রাখলে তোহার কেমন জানি অদ্ভুত লাগছিল ব্যাপারটা। অনেক ক’ষ্টে জুবায়ের হতে সিরাত আর সাফিনের ব্যাপারে জানার পর যেন এখন আরও ভয় হচ্ছে তোহার। চোখদুটি দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরতে চাইছে যেন।সিরাতের মতো মেয়েও শেষমেষ ভু’ল মানুষের মা’য়ায় জড়ালো। কথাটা যেন হৃদয় চিঁ’ড়ে একরাশ দীর্ঘশ্বাস বের হওয়ার মতন। জুবায়ের কিছুক্ষণ হলো বাহিরে গেছে কি কাজ আছে নাকি তাঁর তাই বলে।
তোহা আবারও উঠে পায়চারি করতে নিলে পেছন থেকে কেউ হাত ধরে নিলে ভ্রুযুগল বিরক্তিতে নামিয়ে নিয়ে পিছু ফিরে তাকাতে সঙ্গে- সঙ্গে জুবায়ের তোহার হাতটা ছেড়ে দিয়ে শীতল কন্ঠে বললো।
—সরি, কাল রাত থেকে কিছু খাননি আপনি ম্যাম। এখন কিছু খেয়ে নিন। নয়তো আপনিও অসু’স্থ হয়ে পরবেন। আমি সামান্য কিছু খাবার এনেছি আপনার জন্য।
কথাটা বলে হাতে থাকা খাবারের ব্যাগটা তোহার দিকে এগিয়ে দিল জুবায়ের। তোহা কি’ঞ্চিৎ পরিমান চুপ থেকে রাগান্বিত কন্ঠে বললো।
—আপনার সাহস তো কম না!আপনি আমার জন্য খাবার এনেছেন? তোহার এরমধারা কথায় চ’মকে উঠলো জুবায়ের। কিছুক্ষণ হা হয়ে গিয়ে ধীর গলায় বললো।
—বুঝলাম না ঠিক? এখানে সাহসের কি আছে?
জুবায়েরের কথায় রাগ লাগলো তোহার। দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে ক’ট’ম’ট ভাবে বললো।
—যেখানে আপনার স্যার আমার জানের সাথে এরুপ আচরণ করেছে,সেখানে আপনি কিভাবে আশা করেন আপনার ওই স্যারের দেওয়া টাকায় কেনা খাবার আমার গ’লা দিয়ে নামবে?
—আশ্চর্য! এটা স্যারের টাকা কেন হতে যাবে? এটা আমার টাকায় কেনা। আমি ক’ষ্ট করে কাজ করি বলে স্যার আমাকে মাইনে দেয় বাকি সংগঠন থেকে পাই। এখানে স্যারকে টা’নছেন কেন?
—আগে কি বললেন সেটা বলুন? তোহার রাগের কন্ঠ শুনে জুবায়ের থ’ম>থ’মে মুখ করে বললো।
—সংগঠন থেকে টাকা পাই বলেছি।
—উহুম তাঁর আগে কি বলেছেন?
জুবায়ের খানিকটা ভেবে বললো।
—স্যার মাইনে দেয় সেটা?
তোহা এবার জুবায়েরের দিকে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাগ নিয়ে বললো।
—তাহলে হলো না এটা ওই শাহনেওয়াজ না আনাচকপির টাকা।
তোহার কথা শুনে জুবায়েরের চোখগুলো কেমন বড়সড় হয়ে গেল। শুকনো ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে নিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—আপনি একটা ডে’ঞ্জারাস মেয়ে আছেন। মা’ফ করেন ভাই।
—ভাই হব না বোন হব। আ’জা’ই’রা লোক।
জুবায়ের হাতদুটি তোহার সামনে ভাঁ’জ করে ধরে বললো।
—মাফ করেন।
এবার জুবায়েরের এরুপ আচরনে তোহা যেন খানিকটা ল’জ্জা পেল৷ চুপ হয়ে গিয়ে চেয়ারে বসতে নিতে ডক্টর এসে পরাতে দ্রুত তাঁর দিকে তাকালো তোহা। ভয়ের সহিত বললো।
—ডক্টর কি হয়েছে আমার সিরাতের?
—হায়াত কি হয়েছে ম্যামের?
জুবায়ের আর তোহার দিকে ধীর চাহনিতে তাকালো হায়াত। গলায় ঝোঁ’লানো স্টেথোস্কোপটা ঠিক করে খানিকটা নিশ্বাস নিল। সে খুব ভালো করেই জানে সিরাত শাহনেওয়াজ সাফিনের স্ত্রী। তাই সাফিনকে উপস্থিত না দেখাতে জুবায়ের আর তোহার দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—কাকে বলব এখানে।
— দুজনকেই বলুন।
জুবায়েরের কথায় হায়াত খানিকটা তাঁদের দিকে তাকিয়ে নামানো কন্ঠে বললো। আমার কেবিনে যেতে হবে তাহলে আপনাদের।
হায়াতের কথা শুনে ওপর প্রান্তের মানুষদুটি ধীর চাহনিতে হায়াতের যাওয়ার পানে তাঁকিয়ে নিজেদের মধ্যে একবার তাকিয়ে মনের মধ্যকার খুঁ’ত>খুঁ’ত ভাবটা নিয়ে সামনে অগ্রসর হলো হায়াতের কেবিনের দিকে।
” গগনের এতক্ষণের ঝিম ধরে থাকা আভাটা এড়িয়ে এবার নামলো একরাশ বি’ষন্নতায় জড়াতো ঝুম বৃষ্টি।” শহর ভিজিয়ে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে যেন তাঁরা। ক্ষনে- ক্ষনে গর্জ’ন পাত হওয়াটাও যেন আজ মন খারা’পের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজ কেবিনে এসে জানালার পর্দাটা একহাত বাড়িয়ে দিল হায়াত। জুবায়ের আর তোহা কেবিনে প্রবেশ করলে হায়াত তাঁদেরকে বসতে বললে জুবায়ের বললো।
—বসার জন্য আসেনি। কি বলবেন তারাতাড়ি বলুনহায়াত। আমাকে যেতে হবে। জুবায়েরের কথা শুনে তোহা ধীর চাহনিতে জুবায়েরের দিকে তাকালে দুজানার দুটি চোখে চোখ পড়াতে চোখ নিচু করে ফেলল তোহা। হায়াতও আর চেয়ারে বসলো না তাদের কারনে। কাঁ’চের টেবিলটার উপরে কলম দিয়ে চে’পে রাখা রিপোর্টের ফাইলটা এগিয়ে দিলে জুবায়ের নিতে গেলে জুবায়েরকে ভেং’চি কেঁ’টে তাঁর হাত থেকে তোহা রিপোর্টের ফাইলটা ছি’নিয়ে নিলে জুবায়ের মৃদু হাসলো শুধু।
— পা’গ’ল মেয়ে একটা। মনে-মনে কথাটা বলা শেষ হতে-হতে হায়াত বলে উঠলো।
—ম্যাম প্রতিদিন নিয়ম করে ড্রা’গস নিতেন। এমন কোনো দিন নেই যে তিনি ড্রা’গস নিতে মিস করেছেন। কালকে অব্দিও তিনি ড্রা’গস নিয়েছেন। আর আজকে মিস হয়ে যাওয়াতে তাঁর এই অবস্থা।
হায়াতের কথা শেষ হওয়ার সাথে-সাথে তোহার হাত থেকে রিপোর্টের ফাইলটা পরে গেলে থ’ম মে’রে গেল তোহা। চোখের কোন বেয়ে এতক্ষণে অবা’ধ্যের অশ্রুপাত ঝরে পরতে থাকলো তাঁর। ডু’করে কেঁদে উঠলো তোহা। জুবায়ের পুরো ত’ব্দা খেয়ে গেল হায়াতের কথা শুনে। এই মূহুর্তে ঠিক কি রিয়াক্ট করা উচিত মাথায় আসছে না তাঁর।
— এভাবে তাকিয়েন না স্যার। রিপোর্টের ফাইলটা দেখুন। ওনাকে পুরোপুরি ভাবে ড্রা’গস আ’স’ক্তি করে নিয়েছে। এটা কোনো সাধারন ড্রা’গস নয়। ম্যাম নিজের হুঁ’শে মিনিমাম ২৪ ঘন্টার ধরতে গেলে অর্ধেকটাই ঝি’মিয়ে ছিলেন। ওনার জ্ঞান ফিরেনি কিন্তু ওনার মস্তি’ষ্ক সজাগ। এটাকে বলে এককথায় কুয়েন্সিডেন্স। ওনার ইমিডিয়েটলি চিকিৎসা প্রয়োজন।
জুবায়েরের হুঁ’শ ফিরে এলে গভীর ভাবনায় তলিয়ে গেল যেন সে।
—তাঁরমানে ম্যাম এতদিন ধরে ড্রা’গস নিতেন? কোনো ভু’ল বোঝাবোঝি হচ্ছে নাতো স্যার আর ম্যামের মাঝে?
তোহা কান্নারত কন্ঠে বললো।
— এ আমি বিশ্বাস করিনা। আমার জান কখনো এমন কাজ করতেই পারে না।
—দেখুন উনি কি পারেন আর না পারেন সেটাতো আমি জানিনা, কিন্তু উনি যে নিয়মিত ড্রা’গস নিতেন এটা সত্যি। এমনও হতে পারে, কেউ হয়তো নিয়ম করে ওনাকে ড্রা’গস দিতেন। বলাতো যায়না।
হায়াতের কথা শুনে জুবায়েরের মস্তি’ষ্ক সজাগ হয়ে উঠলো যেন। কিছু বলতে যেতেও তোহাকে দেখে থেমে গেল সে। হায়াত ব্যাপারটা খেয়াল করে তোহার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো।
—আপনি চাইলে আপনার বান্ধবীর সাথে দেখা করতে পারেন মিস।
হায়াতের পার্মিশন পেয়ে গেলে খুশি হয়ে গেল তোহা৷ একছুটে চোখের পানি আড়াল করে সিরাতের কেবিনের দিকে চলে গেল।
— দেখুন এটা কোনো সাধারন ড্রা’গস নয়। এটার এফে’ক্ট ঠিক আপনার নানুজানের মৃ’ত্যুর মতো। বিদেশি মা’ল এগুলো। আমার মনে হয় আপনাদের আরও সচেতন হওয়া উচিত।
খানিকটা ঢোক গি’লে নিল জুবায়ের। ধীর কন্ঠে বললো।
— ম্যামের চিকিৎসা শুরু করে দিন হায়াত। আমি আসছি।
—খোদা হাফেজ।
.
ঝুম বৃষ্টিপাতের কারনে পরিবেশ কেমন থ’ম>থ’মে হয়ে আছে। হসপিটালের সিটে বন্ধ চোখদ্বয় নিয়ে সেলাইন রত অবস্থায় নিস্তে’জ ভাবে শুয়ে আছে সিরাত। চোখের নিচে একদিনেই কেমন কালসিটে দা’গ পরে গেছে। সিরাতকে এভাবে নিস্তে’জ হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে কান্নাগুলো কেমন দ’লা পা’কিয়ে বেড়িয়ে আসতে চাইছে সিরাতের। পা ঢলে ফ্লোলে বসে পরে সিরাতের শীলত হাতদুটি নিজের হাতের মুঠোবন্দি করে অশ্রু ঝরাতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো যেন সে।
— কি থেকে কি হয়ে গেল জান। আমার জানটা এভাবে নিস্তে’জ হয়ে শুয়ে আছে কেন? এই সিরাত? ওঠ, দেখ আমি এসেছি? তোর তোহা এসেছে? তুই চোখ খুলে দেখবি না আমাকে?
—পেসেন্টকে এভাবে মানসি’ক ভাবে প্রে’সার দিবেন না ম্যাম। এতে পেসেন্টের উল্টো ক্ষ’তি হতে পারে। প্লিজ আপনি বাহিরে যান এখন।
তোহা ধীর চাহনিতে সামনে থাকা নার্সটার দিকে তাকালে নার্সটা ঘুমের ইনজেকশন দেওয়ার জন্য সিরাতের দিকে এগিয়ে আসলে চোখের পানি ফেললে পানিটুকু সিরাতের হাত ঘেঁ’ষে স্পর্শ করে যেতে তোহা উঠতে নিতে হুট করেই সিরাত আলতো হাতে ক্যানু’লা লাগানো হাত দিয়ে তোহার হাতটা ধরে নিতে থ’মকে দাঁড়াল তোহা। একহাতে চোখের পানি আড়াল করে পিছু ফিরে তাকালে পিটপিট করে তাকাল সিরাত তাঁর দিকে।
তোহা মৃদু হেসে উঠলো তাঁকে দেখে। হাসিটা যেন এখন খুব ক’ষ্টদায়ক হয়ে পরেছে তাঁর কাছে। ভিতর থেকে আসতে চাইছে একরাশ দীর্ঘ’শ্বাস। তবুও হাসি-হাসি মুখ করে সিরাতের সামনে হাঁ’টু গেঁ’ড়ে বসে পরলো তোহা।
—কেমন আছিস সিরাত?
তোহার ফোলা-ফোলা চোখদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো সিরাত। একদম ধীর কন্ঠে বললো।
— ভালো আছি। তুই কেমন আছিস? খেয়েছিস?
কান্নার মাঝেও ঠোঁটের কোনে হাসি চলে আসলো তোহার ৷ ধরা গলায় বললো।
—এখনও আমার কথা ভাবছিস তুই? তোর কি কোনো আ’ক্ষেপ নেই সিরাত?
—নাতো! আক্ষে’প হতে হয় তাঁর প্রতি,যে আমাকে তাঁর হৃদয় গহীনে ঠাই দিবে।আমাকে মূল্য দিবে কিন্তু আমি তাঁকে পাইনি এমন। কিন্তু যে কিনা আমার নামটা শুনলেও ক্রো’ধে জিনিসপত্র ভে’ঙে গু’ড়িয়ে ফেলে,তাঁর কাছে আর আমি কতটা মূল্যবান হব? যে তাঁকে না পাওয়ার জন্য আ’ক্ষেপ করব? তবে হ্যা, ভালোবাসি তাঁকে। আর সারাজীবন হৃদয় গহীনে ঠাঁই দিয়ে রাখব।
সিরাতের শুকনো হাসির রেশ যেন ঠিক মেনে নিতে পারছে না তোহা। কান্না পাচ্ছে প্রচুর। তাঁর সামনেই তাঁর বেস্ট ফ্রেন্ড তিলে-তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে,আর সে কিছুই করতে পারছে না। চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলে নার্সটা ইনজেকশনটা দিয়ে দিলে ধীরেধীরে চোখ নিভু-নিভু হয়ে এলো সিরাতের। একপ্রকার ভাবে পুরোটা বন্ধ হয়ে গেলে দীর্ঘ’শ্বাস ছারলো তোহা। জুবায়ের রিপোর্টের ফাইলটা হাতে নিয়ে তোহাকে জানিয়ে হসপিটাল থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। আজকে তাঁকে যে করেই হোক এই ফাইলটা সাফিনের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। নাহলে স্যার আর ম্যামের ভু’ল বোঝাবোঝি কখনো শেষ হবে না। কথাগুলো ভাবতে-ভাবতে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টর্ট দিল জুবায়ের।
.
রাহেলা বেগম আর সকিনার মৃ’ত্যুটা যেন পুরো শহরে হৈরৈ করে ছড়িয়ে পরেছে। মস্তফা সাহেব কোনো মতে জানাজার ব্যাবস্থা করে সবটা সামলে ঘেমে-নেয়ে বিকেলের দিকে শাহনেওয়াজ ভিলায় ফিরেছেন।
বাড়িটা কেমন ম’রা মানুষের ঢি’বার মতো হয়ে গেছে। না আছে কারো কথা, না আছে কোনো সজীবতা। শুধু বাড়ি ভরে লোকজন তাঁদের গুনগুন স্বরে কান্নার গান গেয়ে যাচ্ছেন। থ’ম’থ’মে চেহারা নিয়ে উপরের দিকে উঠতে নিতে কিছু কাগজপত্র হাতে জুবায়েরকে সাফিনের রুমের দিকে যেতে দেখে মাঝপথে বাঁ’ধ সেধে দাঁড়ালেন তিনি। গম্ভীর কণ্ঠে জুবায়েরের উদ্দেশ্যে ডাকলেন।
—জুবায়ের?
মোস্তফা সাহেবের থ’ম>থ’মে কন্ঠের রেশ শুনে ভয়ে গাঁ’ট হয়ে দাঁড়িয়ে গেল জুবায়ের। সারাটাদিন সাফিনের রুমের চাবি না থাকায় কাগজগুলো সম্পর্কে কোনো কিছুই জানাতে পারেনি সে। এখন মাএ হেলাল বাহির থেকে ভিরেছে পর যেতে নিতেই বিপ’ত্তি এসে যেন হাজির। কয়েকটা ঢোক গি’লে পিছু ফিরে তাকালে মোস্তফা সাহেব ধীর পায়ে তাঁর দিকে এগিয়ে আসলেন। তিরিক্ষি চোখদ্বয় দিয়ে একনজর হাতে থাকা কাগজগুলোর দিকে পরখ করে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন।
—কোথায় যাচ্ছো তুমি?
— না মানে, বড় সাহেব স্যারের রুমে যাচ্ছিলাম ইম্পর্ট্যান্ট কিছু কাজ ছিল আরকি।।
—হাতের ফাইলগুলো দেওতো, দেখি? কথাটা বলেই জুবায়েরের হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে গেলে জুবায়ের ভয়ে খানিকটা চু’পসে গেল যেন।ধীর গলায় বললো শুধু।
—তেমন কিছু আহামরি ব্যাপার নয় স্যার। আপনি আমাকে দিন ফাইলগুলো?
মোস্তফা সাহেব ধীর চাহনিতে ফাইলগুলো পরখ করে নিয়ে শীতল কণ্ঠে বললো।
— সিরাতকে চিকিৎসার ব্যাবস্থা করো। ওর সব দ্বায়িত্ব আজ থেকে আমি নিলাম। আড়াল হয়ে ওর সব দ্বায়িত্ব বহন আমি করব। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু এসবে আর সাফিনকে জড়াতে চাইছি না আমি। আমার আব্বাকে হাড়িয়েছি এটাই অনেক কিছু। এখন আর নিজের ছেলেকে হাড়াতে চাইছি না। জুবায়ের মাথা নিচু করে রাখলে মোস্তফা সাহেব যেতে নিয়েও আবারও পিছু ঘুরে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললেন।
— তোমার একটা ভাগ্নি আছে না জুবায়ের? কি যেন নাম? ওহ হ্যা অর্পা।ওর দিব্যি রইলো তোমাকে,এই ফাইলের কোনো কাগজ যেন সাফিনের হাতে না পৌঁছোয়। আজ রাতের ফ্লাইটে সাফিন বিদেশে পারি জমাচ্ছে। আমি চাইছি না সেখানে কোনো রকম বাঁ’ধা পরুক বা সাফিন এই খু’নের সাথে জড়িয়ে যাক আর অকালে আমাকে আর তোমাদের ম্যামকে একলা করে ফেলুক। বাবার মন, বুঝোইতো। সারাক্ষণ ভ’য়ে থাকছি এখন। আব্বা খু’ন হয়ে গেলেন, পরপর দাদী আর সকিনা। যাইহোক যেটা বলছি মাথায় রেখো। কথাগুলো বলে মোস্তফা সাহেব নিজের রুমে চলে গেলে জুবায়ের সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। চোখ বেয়ে পরলো শুধু একফোঁটা নোনাজল।
.
সারাদিনের বৃষ্টি একএ হয়ে ভরসন্ধ্যা বেলা নামল এক আকাশ পরিমান বৃষ্টির রেশ। আমেনা বেগম অশ্রুসিক্ত নয়নে ছেলের জামাকাপড় গুছিয়ে ট্রলিতে রাখতে বাধ্য হলেন স্বামীর করা রকনের আদেশে। বারান্দা এড়িয়ে জানালার পর্দাগুলো দক্ষিণা উত্রা হাওয়ায় উড়িয়ে ভিতরে ভেসে আসছে প্রগর গতিতে হিমেল হাওয়া। ক্লান্ত মুখশ্রী নিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াল সাফিন।বৃষ্টির শীতল স্পর্শে চোখদুটো কেমন বুঁজে আসতে চাইছে তাঁর। বন্ধ চোখদ্বয়ের আড়ালে হৃদয় গহীনে ভেসে উঠছে শুধু সিরাতের হাস্যজ্বল মুখদ্বয়। হৃদয়টা কেমন ক্ষ’ত বিক্ষ’ত করে দিচ্ছে বারংবার। একরাশ বিষাদে ঘেড়া মন নিয়ে চোখের কোন ভিজে উঠলো অশ্রুতে।
— তোমার আমাতে প্রগরভাবে মিশে যাওয়াতে, আজ এই শক্তপো’ক্ত হৃদয়টাও কেমন অশ্রুতে ভিজে উঠেছে সিরাত?আমাদের এই অগোছালো গল্পটা কি ভিন্ন হতে পারত না সিরাত?বাহিরের গম্ভীরতা দেখিয়ে হয়তো সবাইকে বোঝানো যায় আমি ভালো আছি, কিন্তু হৃদয়ের ব্যাকুলতা বোঝানো দায় হয়ে পরেছে যে আজ।সে খবর হয়তো কখনো জানতেই পারবে না তুমি।কথাগুলো মনের কোনে উঁকি দিতে থাকলে দীর্ঘশ্বা’স ছারলো সাফিন। গোটা একটাদিন সিরাতকে না দেখেই হৃদয়টা কেমন ছট’ফট করছে তাঁর। তাহলে আজ বিদেশে পারি জমালে কিভাবে থাকবে সে সিরাত বীহিন একাকী?
— স্যার আপনার ব্যাগগুলো গাড়িতে তুলে দেই?
মোহনের ধীর কন্ঠে হুঁ’শ ফিরল যেন সাফিনের। খানিকটা চুপ থেকে গেলে আমেনা বেগম কান্নারত কন্ঠে বললেন।
— তোর বাপ আর তুই আমার জীবনটা পুরো টেনশনের মধ্যেই ঘিরে রেখেছিস। হুট করেই আমার গোছালো সংসার কেমন এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। আর এখন তোকেও তোর বাপ জীবনে না কালে না আজ বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আম্মাজানের কি দো’ষ? ওর সাথে কেন তুই এমন করলি সাফিন?
আমেনা বেগমের কন্ঠে উৎকন্ঠিত হলো সাফিন। কোনো উত্তর দিতে পারলো না যেন সে। ধীর চোখে বুকে পাথ’র চা’পা দিয়ে মোহনকে সায় দিলে জামাকাপড়ের ট্রলিটা মোহন নিয়ে গেলে ফ্রেশ হতে চলে গেল সাফিন। আমেনা বেগম রাগ নিয়ে কান্নারত কন্ঠে বললেন।
— হ তোরাতো আমাকে মানুষের মধ্যে গোনায়ই ধরিস না। আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজনই মনে করিস না।
আমেনা বেগম কিছুক্ষণ চো’ট’পা’ট করে চলে গেলে ঝর্ণাটা ছেড়ে দিয়ে দেয়ালের সাথে নিজের হাতে কয়েকটা ঘু’ষি মা’র’লো সাফিন।
— আমার হৃদয় জুড়ে তুমি না চাইতেও জড়িয়ে গেছো সিরাত। এই মোহের কালিমা হয়তো আমি চাইলেও কখনো কাঁ’টিয়ে নিতে পারব না। পরনে থাকা ধূসর রাঙা শার্টটা খুলে নিচে ফেলে দিলে সমস্ত শরীর জুড়ে ঝর্ণার পানির উষ্ণ’তা ছেঁ’য়ে পরতে থাকলো যেন সাফিনের।
.
শহরের বৃষ্টিতে ঝরে পরা বি’ষন্ন মেঘের মতো সাফিনের হৃদয়ের কোনেও যেন মেঘ জমে আছে। বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো সাফিন। মোস্তফা সাহেব আড়ালে বুকের ক’ষ্টটা লু’কিয়ে রেখে হাসি মুখে সাফিনকে বিদায় দিলে জুবায়ের গাড়িতে বসে পরলে মোস্তফা সাহেব তাঁর দিকে কড়া ভাবে তাকাতে জুবায়ের চেখের পানি মুখে তাঁকে আস্থা জুগিয়ে গাড়িতে উঠে বসলে বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজটা খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করতে পারছে সাফিন। চেহারায় একবিন্দু হাসির রেশও পর্যন্ত চেষ্টা করেও আনতে পারছে না যেন। জুবায়ের বারংবার চোখের পানি মুছেও আবার এসে জমা হলে শেষে হাল ছেড়ে দিল সে। সাফিন তাঁর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো।
—কাঁদছো জুবায়ের?
—এ্যা, না মানে স্যার আপনি চলে যাবেন তো তাঁরজন্য।
মৃদু হেসে উঠলো সাফিন।
—আমি যাচ্ছি শুধু আমার ছায়ায়, হৃদয়টাতো এখানেই রেখে যাচ্ছি জুবায়ের। কথাগুলো মনে-মনে বলতে থাকলে কান্না এসে জড়ো হলো সাফিনের চোখের কোনে।
“গাড়িটা এসে এয়ারপোর্টে দাঁড়াতে সাফিন৷ নেমে পরলে জুবায়েরও গাড়ি থেকে ছাতা হাতে নেমে পরলো।” ব্যাগগুলো গার্ডরা নিয়ে ভিতরে চলে গেলে ধীর চাহনিতে একটিবার পেছনফিরে তাকাল সাফিন। কিছুক্ষণ পরই বিমান ছেড়ে দিবে মাইকে জানিয়ে দিলে যাএীরা পুরো বৃষ্টির মাঝে একপ্রকার ভাবে দৌঁড়েই ভিতরে যেতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে যেন। তাদের দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে অন্ধকারের আড়াল হয়ে ল্যামপোস্টের হলদেটে আলোয় বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সহিত পুরো জায়গাটাতে এক পলক সাই দিয়ে জুবায়েরের দিকে তাকালো সাফিন। জুবায়ের মাথা নিচু করে আছে যেন। সাফিন তাঁর দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—একটা অনুরোধ রাখবে জুবায়ের?
সাফিনের ভেজা কন্ঠের রেশ জুবায়েরের কানের লতিতে প্রবেশ করে গেলে সাফিনের কথায় বাঁ’ধ সেধে সাফিনের হাত ধরে কান্নারত কন্ঠে বললো।
— আপনি আদেশ করুন স্যার। অনুরোধ বলে ল’জ্জা দিবেন না প্লিজ।
মৃদু হাসলো সাফিন। ধরা গলায় বললো।
—সিরাতের দিকে একটু নজর রেখো। কথাটা বলেই চোখের পানি আড়াল করে সাফিন এয়ারপোর্টের ভিতরে চলে গেলে জুবায়েরের চোখদুটি ভিজে উঠলো যেন। কান্নায় ভে’ঙে পরলো যেন সে।
— আমি না পারলাম আপনাকে সত্যিটা বলতে আর না পারলাম ম্যামকে এই জীবন থেকে সা’পমুক্ত করতে। আমি সত্যিই খুব অভাগা স্যার। আসল কার্লপিট হয়তো এটাই চায় আপনাদের বিচ্ছেদ……
চলবে…….