#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ২১
—স্যার আপনার কোথাও ভু’ল হচ্ছে নাতো? না মানে ম্যাম কেন এমন করতে যাবেন? পুরো ব্যাপারটা একবার যাচাই করে নিলে…
জুবায়েরের ধীর কন্ঠের রেশ কানের লতিতে প্রবেশ করে গেলে পুরো কথাটা শেষ হওয়ার আগেই সাফিনের বি’ষি’য়ে যাওয়া মন কেমন আরও বি’ষি’য়ে উঠলো ক্রো’ধে। রাগে মাথার তার ছিঁ’ড়ে যাচ্ছে যেন তাঁর। চোখ গুলো ক্রমশ র’ক্তিম বর্ন ধারন করতে ব্যাস্ত। জুবায়েরের দিকে তাকিয়ে কন্ঠে একরাশ হীনতা প্রকাশ করে বাঁ’ধ সেধে বললো।
— আজ হয়ে যাক একটা অঘ’টন। কালো রাঙা আসমানে ঘনিয়ে আশা এই ঝরের সহিত ভে’ঙে যাক সম্পর্কের এই গহীনতা। আমার জীবনে ইয়াংম্যানই সবকিছু। এভরিথিং। অন্য কারো জন্য আমার কি’ঞ্চিৎ পরিমান মাথাব্য’থা পর্যন্ত নেই জুবায়ের।
সাফিনের থ’ম>থ’মে রাগান্বিত মুখশ্রী থেকে উপছে পরছে যেন একরাশ ক্রো’ধে। থেমে-থেমে আকাশ ছেঁয়ে গ’র্জে ওঠাটাও সর্বাঙ্গ কাঁ’পি’য়ে তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে আজ। সাফিনের দিকে তাঁকাতেও পর্যন্ত ভয়ে শিউরে উঠছে জুবায়ের।
কি’ঞ্চিৎ পরিমান গাঢ় ভাবে নিশ্বাস টে’নে দুইহাত দিয়ে নিজের ঘেমে উঠা মুখশ্রীতে হা’লকা ভাবে চে’পে ধরাতে রাগে শরীরের প্রতিটা শিরা উপশিরা টনটন করছে যেন সাফিনের। সাফিনের এভাবে চুপ হয়ে যাওয়াটা যেন ঝরের আগাম পূর্বাভাস জানান দিচ্ছে জুবায়েরের বিচক্ষণ মস্তি’ষ্কে। কিছু বলতে যাওয়ার আগেই সাফিন হুট করে উঠে দাঁড়ালে জানালা ভেদ করে হীমেল স্রোতে শরীরে স্পর্শ করে গেলে শান্ত স্বরে দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে বললো।
— জুবায়ের?
—জ্বী স্যার?
— রাজবাড়ির পেছনটাতে কব’র খো’রা শুরু করে দেও। আজ নাহয় সিরাত থাকবে নাহয় এই শাহনেওয়াজ সাফিন। ঘোর প’শ্চাতে হবে তাঁকে। বড় রকমের ভুল করে ফেলেছে সে, বড় রকমের। আমার ভালোবাসাটা যেমন প্রগর, প্রতি’শোধের আগু’নটাও তেমনি তী’ব্র।
সাফিনের কথা শেষ হলে রুহু কেঁ’পে উঠলো জুবায়েরের ভয়ে। কিছু বলতে যাওয়ার আগেই হনহন করে সাফিন রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে তাঁর চলে যাওয়ার দিকে ভ্যা’বলা শহিন ভাবে তাকিয়ে রইলো জুবায়ের। হেলাল কয়েকটা ঢোক গি’লে নিয়ে রয়েসয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— এটা ঠিক হচ্ছে না। স্যার সামান্য একটা সিসিটিভি ফুটেজর উপর ডিপেন্ট করে ম্যামকে ভু’ল বুঝছেন নাতো আবার? আগেতো একশো বার খোঁজ নিয়ে বুঝেশুনে কাজ করতেন। আর আজ!
জুবায়েরের ঘেমে ওঠা চোখমুখ যেন কো’টর থেকে বেড়িয়ে আশার উপদ্রব। টি টেবিলের উপর থেকে পানিভর্তি গ্লাসটা হাতে নিয়ে একটানে ঢকঢক করে শেষ করলো পানিটুকু। পরপর নিশ্বাস ছেড়ে ধরা গলায় বললো।
— সময় বড়ই অদ্ভুত এক বস্তু বুঝলে হেলাল? আজ স্যারও নিজের নানুর মৃ’ত্যুতে তাঁর এত দিনের শক্তপোক্ত করে বেঁ’ধে রাখা সম্পর্কটাও নড়বড়ে করতে চলেছেন। নানুজানের মৃ’ত্যুতে বি’ব্ভল হয়ে পরেছেন তিনি। তপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো হেলাল।
.
আষাঢ়ের তী’ব্রতাময় সো-সো শব্দে ছুটে চলা ঝড়বৃষ্টি মাথায় করে শাহনেওয়াজ ভিলার সামনে গাড়ি এসে থামলে সিকিউরিটি গার্ডরা দরজা খুলে দিলে মোস্তফা সাহেব আর দাঁড়ালেন না, বি’ষি’য়ে যাওয়া মুখবিব্ভর নিয়ে হনহন করে নিজের কামরায় চলে গেলেন তিনি।সরোয়ার সাহেবও তাঁর পাঁ’ছ ধরে চলে গেলেন। আমেনা বেগমের পা যেন চলতে চাইছে না আজ। ক্লান্ত মুখশ্রীতে একরাশ দীর্ঘশ্বাস টেনে গাড়ি থেকে নেমে পরলো সিরাতও। রাহেলা বেগম ঠায় বসে থাকলে সিরাত মৃদু স্বরে তাঁর উদ্দেশ্যে বললো।
— বুড়ো আম্মা, ভিতরে যাবেন না?
রাহেলা বেগমের কানের লতিতে সিরাতের করা প্রশ্নটা ছুটে গেলে মৃদু নড়েচড়ে উঠলেন তিনি। আমেনা বেগম দাঁড়িয়ে গিয়ে পিছুঘুরে তাঁদের দিকে ধীর চাহনিতে তাকালে সিরাত তাঁকে আস্থা দিয়ে বললো।
—আমি নিয়ে আসছি আম্মা। আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।
আমেনা বেগম জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে চোখের পানি লুকিয়ে চলে গেলে রাহেলা বেগমের হাত ধরে ধীরেসুস্থে গাড়ি থেকে নামালো তাঁকে। একদিনেই ছেলের শোকে কেমন মি’য়িয়ে গেছেন তিনি। কালো রাঙা মোটা ফ্রেমের চশমাটা নাকের ডগায় উঠিয়ে ঝাঁ’পসা চোখে সিরাতের দিকে তাকিয়ে ধ’রা গলায় বললেন।
—কে’ডা তুই, সকিনা?
রাহেলা বেগমের ধ’রে যাওয়া কন্ঠস্বর শুনে উৎকন্ঠিত হলো যেন সিরাত। কান্নাটুকু আড়াল করে মৃদুস্বরে বললো।
—বুড়ো আম্মা আমি সিরাত।
—ওহ তুই।
— হ্যা আপনি আমার সাথে ভিতরে চলুন।
—আইচ্ছা ল দেহি।
রাহেলা বেগম নেমে পরলে সিরাত তাঁকে সাবধানে নিয়ে যেতে থাকলে গাড়িতে থাকা জিনিসপত্র নিয়ে সকিনাও গাড়ি থেকে নেমে পরে ছুটলো তাঁদের পিছুপিছু।
.
শাহনেওয়াজ ভিলা জুড়ে যেন আজ নিস্তব্ধ প্রহর ঠেকিয়ে নির্জনমূর্তি ধারন করতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে। আমেনা বেগম ফ্রেশ হয়ে সকিনার সাথে কাজে হাত লাগাতে তি’ব্র অনিহা থাকা সর্তেও রান্নাঘরে ছুটলেন। নয়তো আজ কারও পেটে ভাত পরবে না। মেডদের রান্না কারো মুখে যায় না এ বাড়িতে। মোস্তফা সাহেব সেই যে নিজের রুমে গিয়ে দাঁড় বন্ধ করেছেন আর এমুখো হননি। সিরাত রাহেলা বেগমকে তাঁর রুমে নিয়ে আসলে অন্ধকার রুমটাতে শ্রাবন সন্ধ্যাময় পরিবেশে জানালা ভেদ করে আকাশ ছেঁয়ে ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকালে তার নিভু-নিভু করে থেমে গিয়ে আবার জ্ব’লে ওঠাটা যেন বেশ অদ্ভুত লাগলো সিরাতের। লাইটের সুইচটা খুঁজে লাইট অন করতে গেলে রাহেলা বেগম তেঁতে উঠলেন যেন। তী’ব্রভাবে বাঁ’ধ সেধে আনমনা কন্ঠে বললেন।
—থাউক লাইট-ফাইট আর জ্বা’লাইন্না লাগবে না। রাহেলা বেগমের কথায় আর সেদিকে এগোলো না সিরাত। মনটা কেমন শ্রাবন মেঘে ছেঁয়ে আছে আজ তাঁর। কখন দেখা গেল টুপ করে মেঘের বাঁ’ধ ছুটে গিয়ে ঝমঝম করে ঝরে পরবে তাঁর চোখের কোনে। খানিক নিশ্বাস টে’নে মৃদুস্বরে রাহেলা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো।
—বুড়ো আম্মা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি আপনি একটু বসুন আমি এসে পা টি’পে দেব আনে আপনার। কথাটা বলে পিছু ফিরে যেতে নিতে রাহেলা বেগম তাঁর বিছানায় পা উঠিয়ে বসে পরে গলা খাঁ’কারি দিয়ে বললেন।
— ওই ছেমরি জানালাডা বন্ধ কইরা যা তাইলে। বাহিরের বর্ষনপাত ভিতরে আইতাছেনি। আইজগো আর তোর পা টেঁ’পা লাগব নানে।
রাহেলা বেগমের কন্ঠের রেশ কানের কাছে এসে পৌঁছাতে থ’মকে দাঁড়াল সিরাত। পিছু ফিরে মৃদু হাসার চেষ্টা করে জানালার কাছে এগিয়ে যেতে বাহিরের ঝরো হাওয়াময় ঝিরিঝিরি বৃষ্টির রেশ চোখেমুখে এসে উপসে পরছে যেন নিমিষেই। জানালার গ্রিলের সাথে হাত ঠেকিয়ে দিলে অদ্ভুত এক অনুভুতিতে ঝেঁ’কে বসেছে যেন সিরাতকে। বুকের ভেতরকার তো’লপারের কোনো ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছে না সে। অস’য্য যন্ত্র’ণায় বুকের ভিতরে জ্ব’লেপু’ড়ে ছাই হতে ব্যাস্ত যেন আজ। হিমেল হাওয়ায় সমস্ত শরীরে কাঁ’পুনি ধরিয়ে দিলেও কপালের উপরে মৃদু ঘামের রেশ দেখা গেলে পরপর কয়েকটা ঢোক গি’লে নিল সিরাত। চোখদ্বয় বন্ধ করে নিল দ্রুত।
— এই য’ন্ত্রণার সূএ হয়তো আমি জানি সাফিন। আপনি কি সত্যিই আমাকে ছুঁ’ড়ে ফেলে দিবেন সাফিন? এক আকাশ ঝুম বৃষ্টি নিয়ে জমে রয়েছে সিরাতের অভিমানের পেয়ালা। এর কি কোনো মানে হয় সাফিন? আজকে মনের কথাটা না বলতে পারলে হয়তো সত্যিই আপনি হাঁড়িয়ে….
— ওই ছেমরি, পুরা ঘর ভিইজ্জা যাওয়ার পর জানলা আঁ’টকাবি তুই?
মনে-মনে বলা কথাটুকু পুরো শেষ হওয়ার আগেই রাহেলা বেগমের কন্ঠ কানের কাছে এসে পৌঁছাতে চটজলদি চোখ খুলল সিরাত। দ্রুত জানালাটা আঁ’ট’কাতে-আঁ’টকাতে বললো।
— না-না আঁ’টকাচ্ছি বুড়ো আম্মা।
—হ তাত্তারি বিদায় হ রুমেরতোন।
হ্যা সূচক মাথা নাড়াল সিরাত। যাওয়ার সময় বাহির থেকে রাহেলা বেগমের রুমের দরজাটা মৃদু টে’নে দিয়ে বসার ঘরে পা পরলে আমেনা বেগমকে রান্না ঘরে দেখলে তাঁর দিকে এগিয়ে গিয়ে আমেনা বেগমের কাঁধে হাত রাখলে সিরাতের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন আমেনা বেগম। বললেন।
— যা আম্মাজান ফ্রেশ হয়ে খেতে বসে পর আমি পাঁচ মিনিটে খাবার রেডি করছি।
—আমি করে দিচ্ছি আপনি চলুন-চলুন সোফায় বসবেন।কথাগুলো বলতে-বলতে সিরাত আমেনা বেগমকে এক রকম টে’নে নিয়েই সোফায় বসিয়ে দিলে আমেনা বেগম বাঁ’ধ সেধে বললেন।
—আহা আম্মাজান তুই বোস এখানে,তোর আব্বাজানের মন মানসিকতা ভালো নাই এমনেতেই। সাফিন রুমে আছে মনে হয় যা উপরে যা সারাদিন অনেক ধ’কল গেছে তোর উপর দিয়েও।
—কিন্তু আম্মা,
—কোনো কিন্তু নয়, এখনই উপরে যাবি তুই।
— আপাজান খাবার প্রায় হইয়া গ্যাছে। ভাবিজান আপনার দুধটা খাইয়া নেন। রান্না ঘর থেকে সকিনা সকিনা দুধ হাতে এগিয়ে আসলে সিরাত না করতে যেতে আমেনা বেগম মৃদু রাগ নিয়েই বললেন।
— আম্মাজান বাড়িতে এখন কারো মনের ঠিক নেই। এখন না খেলে অসু’স্থ হয়ে পরলে তখন কি হবে?
আমেনা বেগমের কথা আর ফেলতে পারলো না সিরাত। একঢোকে দুধটুকু শেষ করে আঁচল দিয়ে মুখ মুছে বললো।
—এবার খুশিতো?
হাসলেন আমেনা বেগম। বললেন।
—দাঁড়া সাফিন আর তোর খাবারটা উপরে নিয়ে যা আজ। মনে হয় না আজ কেউ এমুখো হবে বলে।
ঝিম মেরে গেল সিরাত। মুখের হাসিটা কেমন মিলিয়ে গেল নিমিষেই। আমেনা বেগম আঁচলে চোখ মুছে রান্নাঘরে চলে গেলে ফাঁকা টেবিলটার দিকে তাকিয়ে রইলো সিরাত। আজাদ সাহেবের অনুপস্থিতি যেন হাহাকার করে যাচ্ছে আজ। একদিন আগেও কত হৈ হুল্লোড় হত ডাইনিংএ। আর আজ শুধু শুন্যতাময় টেবিলটা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই।
দীর্ঘ’শ্বাস ছারল সিরাত। সকিনা খাবারের ট্রেটা সিরাতের দিকে এগিয়ে দিলে ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল সিরাত।
আমেনা বেগম আরেকটা ট্রে এগিয়ে দিতে সকিনা হেসে বললো।
—খালাম্মার ঘরে যাইতাম নি প্লেট নিয়া?
—হুম সেখানেই যাও এখানে সাফিনের চাচ্চুর প্লেটও রাখছি নিয়ে যেও জুবায়ের আর হেলালরা স্টোর রুমে থাকছে নাকি আজকে, ওদেরকে ডেকে খাবার দিয়ে দিও। আর তোমরা সবাই সময় করে খেয়ে নিও কিন্তু, আমি যাই দেখি, তোমাদের মন্ত্রী সাহেব দরজা খুলেন কিনা?
সকিনা মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে খাবারের প্লেটটা নিয়ে রাহেলা বেগমের রুমের দিক হাঁটা ধরলে আমেনা বেগম দীর্ঘ নিশ্বাস টে’নে তিনিও মোস্তফা সাহেবের উদ্দেশ্যে খাবার হাতে ছুটলেন।
.
সাফিনের রুমের কাছাকাছি আসতে লাইটারটা কেমন নিভু-নিভু হয়ে আসলে ধীর চাহনিতে সেদিকে তাকাল সিরাত। বুকের ভেতরকার উথাল-পাতাল ঢেউটা যেন প্রব’ল বেগে ছুটে চলেছে তাঁর।
—শেষ বারের মতোও আপনি নানুকে দেখলেন না সাফিন? আপনি এতটা পা’ষান হয়েও কি আমার হৃদয়ের ব্যা’কুলতা বুঝতে পারবেন? হয়তো আশা করাও বোকামি। কিন্তু আমিতো না চাইতেও আপনার হৃদয়হীনা মন গহীনের প্রেমে পরে গেছি। এটা হয়তো নিজ ইচ্ছেতে ঢেউয়ের সাগরে ঝাঁ’পিয়ে পরার সমান। যেখানে আমি সাঁতার জানিনা। কথাগুলো হৃদয়ের মাঝে তো’লপা’র করে গেলে নিশ্বাশ ছাড়লো সিরাত। অজানা ভয়ে পা দুটো কেমন সামনের দিকে অগ্রসর হতে চাইছে না,যেখানে সিরাতের ঠিকানাই সাফিনকে ঘিরে।
জোড় পূর্বক বড়ো-বড়ো পা টে’নে দরজার সামনে এসে দাঁড়াতে দরজা মৃদু চাঁ’পানো দেখে খানিকটা অবাক হলো সিরাত। একহাতে ট্রেটা নিয়ে অন্য হাতে দরজায় হাত লাগাতেই লাইটারটা নিভু-নিভু করতে-করতে চিরতরে বিদায় নিলে ভ’রকে গেল সিরাত। কানের কাছে দিগন্তের গ’র্জে ওঠা ব’জ্রপাতের ঝ’লসা’নি ছাড়া কিছুই পৌঁছাচ্ছে না যেন সিরাতের। ভ্রুযুগল কুঁ’চকে ফেলে ফিতরে পা দেওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে হ্যাঁ’চকা টা’নে হাতে থাকা ট্রেটা ভে’ঙে গু’ড়িয়ে গেলে খাবারগুলো ছড়িয়ে পরলো ফ্লোরে। হুট করেই আক্র’মণে হত’বি’হ্বল হলো যেন সিরাত। দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেলে কারো নিশ্বাসের স্পর্শ চোখেমুখে উপচে পরতে থাকলে চেখের পাপড়িগুলো কি’ঞ্চিৎ কেঁ’পে উঠলো সিরাতের। নাকের কাছে এসে বা’রি খেয়ে গেল সিগারেট সহ আরও কিছু উদ্ভট গন্ধ। অন্ধকার রুমটাতে কারো হাতে আধখাওয়া সিগারেটের জ্ব’লন্ত স্ফু’লিঙ্গ ছাড়া কিছুই চোখে পরছে না যেন। মুহুর্ত খানিক বুঝতে সময় লাগেনি সিরাতের যে,এটা আর কেউ না সয়ং সাফিন। কিন্তু এই মুহুর্তে ল’জ্জা, ভয়, কোনোটাই যেন উপলব্ধি করতে পারছে না সিরাত। বুক চি’রে আসছে শুধু আত’ঙ্ক। খানিক নিশ্বাস টে’নে কাঁ’পা>কাঁ’পা কন্ঠে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই পেটের কাছে ধা’ড়া’লো কিছু অনুভব করে চম’কে উঠলো সিরাত।
তী’ব্র ব্যা’থায় চেখের কোন বেয়ে এতক্ষণের ঝিমিয়ে থাকা বর্ষনপাতের ছুটি মেললে ঝরঝর করে পরতে থাকলে বুক ভিজে উঠলো সিরাতের।
সিরাতের হাতদুটো দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে সাফিনের ঠোঁটের স্পর্শ সিরাতের ঘাড়ের কাছে স্পর্শ করে গেলে প্রগর কাঁ’ম’রে আর্ত’নাদ করে উঠলো সিরাত।
—আহ্,সাফিন লাগছে আমার। কি করছেন আপনি? আপনি এখন নিজের মধ্যে নেই ছাড়ুন আমাকে!কথাটা বলে সাফিনকে নিজ থেকে সরানোর বৃথা চেষ্টা করতে থাকলে গ’র্জে উঠলো যেন সাফিন। সিরাতকে এখন তাঁর কাছে বি’ষের মতো লাগছে যেন। চোখ বন্ধ করতে সিসিটিভি ফুটেজ আর আজাদ সাহেবের হাস্যজ্বল মুখশ্রী ভেসে উঠলে রাগে র’ক্ত উঠে গেল যেন সাফিনের। দাঁতে দাঁত চে’পে ধা’ড়া’লো কন্ঠে বললো।
— তোমার সাথে আমার কোনো শত্রু’তা ছিল না সিরাত। তুমি হয়তো খুব ভালো করেই জানতে এই শাহনেওয়াজ সাফিন ভালোয় ভালো আর খা’রাপে গন্ডির বাহিরে। যে বি’ষ তুমি নিজে ঢেলেছো? সে বি’ষই আজ তোমার জীবনের ইতি ঘটাতে প্রস্তুত।
সাফিনের কথার রেশ কান ঘেঁষে পৌঁছাতে কেঁ’পে উঠলো যেন সিরাত। সাফিনের কথার অর্থ বোঝার সাধ্য হয়তো তাঁর কোনোদিনও হবে না, আজ কেন। লাল রাঙা ওষ্ঠ যুগল মৃদু ফাঁ’ক হয়ে আসলে বারান্দা ভেদ করে হীমেল হাওয়া ভিতরে প্রবেশ করতে সমস্ত শরীরে কাঁ’পুনি ধরিয়ে দিলে পেটের দিকটাতে ভেজা ভাবে শাড়ির আঁচল লে’প্টে পরে থাকলে য’ন্ত্রণায় চোখমুখ খিঁ’চে রাখলো সিরাত। দাঁতে দাঁত চে’পে ব্যা’থাটা হ’জম করার চেষ্টা চালালো শুধু। সাফিনের হাতে থাকা আধ খাওয়া সিগারেটটা সিরাতের মুখোমুখি তাক করাতে ভয়ে দ্রুত কয়েকটা ঢোক গি’লল সিরাত। পিটপিট করে সিগারেটের জ্ব’লন্ত স্ফু’লিঙ্গের দিতে এক পলক তাকিয়ে ধীর চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকালে সিরাতের কান্নারত চোখদ্বয় দেখে দ্রুত চোখ নামিয়ে ফেলল সাফিন।
— আজকে তোমাকে নিজ হাতে খু’ন করার জন্য এসেছি সিরাত। কিন্তু অদ্ভুত, ডু’করে কান্না এসে জমা হচ্ছে আমার এই পাথর হয়ে যাওয়া চোখদুটিতে! এতদিন যখন একের পর এক খু’ন করেছো তুমি,হাত কাঁ’পেনি তোমার? ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে চেয়েছিলাম তোমাকে,আর তুমি র’ক্ত দিয়ে শুরু করলে বিচ্ছেদ? কথাগুলো ভাবতে থাকলে তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ল সাফিন। কষ্ট হচ্ছে তাঁর। বারান্দার জানালাগুলো ঝরো হাওয়ায় খোলা বন্ধ হওয়ায় ঝুপঝাপ আওয়াজ করতে থাকলে নিজের ঠোঁট নিজে কাঁ’ম’রে ধরলো সাফিন। বুক চি’রে বেড়িয়ে আসছে শুধু একরাশ দী’র্ঘশ্বাস।
— নানু আর নেই বলে চিরতরে বিদায় দিতে চাচ্ছেন সাফিন? যাতে মিডিয়ার সামনে আপনার ফেসল’স না হয় যে আপনি আপনার স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়েছেন? আমি তো বেঁ’চে থেকেও ম’রে গেলাম আজ সাফিন। আপনি এতটা ভ’য়ংক’র। হয়তো আজ আমি হৃদয়ের কথাগুলো বলতে চেয়েছিলাম আপনাকে,আর দেখুন,আপনি এক নি’মি’ষে’ই পা’য়ের সাথে পি’ষে দিলেন আমার এক টু’করো সুখের আলো। যেখানে এখন প্রবল বেগে ঝর-তুফানে ছেঁয়ে গেছে। কথাগুলো মনের কোনে উথাল-পাতাল করতে থাকলে সাফিনের চোখেমুখ থ’ম’থ’মে হয়ে গেলে দীর্ঘ নিশ্বাস টে’নে সিরাতের দিকে তাকিয়ে সিরাতের লালরাঙা ঠোঁটের দিকে দৃষ্টি স্থির করে অনেকটা ঝুঁ’কে গেল সিরাতের দিকে। মাথার পিছনটাতে চে’পে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডু’বিয়ে দিলে সাফিনের প্রতিটা স্পর্শ আজকে যেন হিং’স্রতার সহিত সিরাতের শরীরে আ’ঘাত হা’নছে। আগের তুলনায় আজ যেন ভিন্ন সিগারেট, ম’দের টেস্টও উপলব্ধি করতে পারছে সিরাত। পেট গু’লিয়ে উঠছে যেন সিরাতের। সাফিনের হাতের স্পর্শ আঁচল ভেদ করে গেলে বরাবরের মতো আজকেও কেঁ’পে উঠলো সিরাত। শরীরটা যেন দূর্বল হয়ে পরেছে আজ তাঁর। সারাদিনে এক গ্লাস দুধ খেয়েছে শুধু। তাঁর উপর সাফিনের দেওয়া প্রতিটা ট’র’চা’র আজ যেন হৃদয় গহীনে আঘা’ত হেনে চলেছে সিরাতের। দীর্ঘ সময় নিয়ে চুমু খেয়ে ঠোঁটটা আবারও ঘাড়ে এসে ঠেকে গেলে ব্যা’থা জায়গাটা যেন আরও ব্যা’থায় কু’করে উঠলো সিরাতের। সাফিন পকেট থেকে ব’ন্দুকটা বের করে কাঁ’পা>কাঁ’পা হাতে সিরাতের পেটের কাছে আনতে বন্ধ চোখদ্বয় শীতল চাহনিতে খুলে গেলে পেটের দিকে একপলক তাকিয়ে সাফিনের দিকে তাকালে সাফিন পকেট থেকে ম্যাচটা বের করে জ্বা’লিয়ে সিরাতের মুখের সামনে ধরতে সিরাতের গোলাপিরাঙা মুখশ্রী যেন হলদেটে রুপ ধারন করেছে। মৃদু বাতাসে ম্যাচের হলদেটে আগু’নের রেশ নিভু-নিভু হয়ে আসতে চাইছে যেন।
সাফিনের বুকের ভেতরকার ধুকপুক শব্দের রেশ খুব স্পষ্ট ভাবে শুনতে পারছে সিরাত। দুজনের নিশ্বাসের গরম উ’ষ্ণতা দুজনাতে ছেয়ে যেতে থাকলে সাফিনের চোখটা কেমন ফুলে লাল হয়ে আছে যেন। হাতটা কেমন কাঁ’পছে সাফিনের। রাগে হাতটা দেয়ালের সাথে ঘু’ষি মা’রতে হৃদয় কেঁ’পে উঠলো সিরাতের।
— তোমাকে দেখে আমার বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠছে কেন সিরাত বলতে পারো? আমিতো চাই তোমাকে শেষ করে দিতে।
—তো দিচ্ছেন না কেন?
সিরাতের সোজাসাপ্টা উত্তরে তাঁর দিকে ছলছল চাহনিতে তাকালো সাফিন। শীতল কন্ঠে বললো।
— কেন এমন হয়? উত্তর চাইছি আমি?
— বি’ষিয়ে যাওয়া মন নিয়ে একমুঠো আলো খুঁজতে চেয়েছিলাম আমি। বিনিময়ে আপনি আমার প্রা’নটাই নিয়ে নিলেন সাফিন?
সিরাতের কান্নারত কন্ঠে ঢোক গি’লল সাফিন। সিরাতের পেট থেকে ব’ন্দুকটা সরিয়ে নিয়ে পিছু ফিরে তাকিয়ে রাগ মিশ্রিত গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—চলে যাও তুমি। চলে যাও আমার সামনে থেকে। তোমার মুখ অব্দি দেখতে চাইছি না আমি। নানু তো আর নেই,আমাদের সম্পর্কের মোর এখানেই সমাপ্ত করে দেও। তোমার টাকা চাই এখন তাইনা? যার জন্য এতকিছু, এই রং তামাশা আর এক মুহুর্ত নিতে পারছি না আমি। কথাগুলো বলেই আলমারি খুলে টাকা ভর্তি লাগেজটা খুলে সিরাতের পায়ের কাছে ছুঁ’ড়ে দিলে চোখ বন্ধ করে নিল সিরাত। মুখ বুজে সবকিছু স’য্য করে ধীর কন্ঠে বললো।
— অনুমতি ব্যাতিত অন্যের জিনিস চু’রি করাও মহাপা’প সাফিন। আজকে আমার ঝগড়াগুলোও কেমন দ’লা পাকি’য়ে যাচ্ছে জানেন? যাঁর নিশ্বাসের স্পর্শে সর্বাঙ্গ কেঁ’পে উঠতো ল’জ্জায়, আজ তাঁর দেওয়া প্রতিটা হিং’স্রতাও কুন্ঠিত হয়নি। শুধু রয়ে গেল একটা গভীর ক্ষ’ত, যাঁর জন্য দায়ী আমি নিজেই।জানতাম বিদায়ের দাঁড় অনেক নীকটে এসে পৌঁছাছে। কিন্তু আজ আমি হয়েও আমি রয়ে গেলাম না আপনার সাথে। ভালো থাকবেন আপনার এই টাকা,এই অহং’কার,আর এই পা’ষান হৃদয় নিয়ে। যাঁর গহীনতা বোঝার সাধ্য কখনো আমার হয়ে উঠবে না। কথাগুলো বলেই চোখের পানি মুছে ব্যা’থিত হৃদয় নিয়ে এক প্রকার দৌঁড়েই নিচে নামলে অন্ধকার রুমটাতে ফ্লোরে বসে পরলো সাফিন। ক’ষ্ট হচ্ছে তাঁর প্রচুর। চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরতে থাকলে ফ্লোরে পরে থাকা ধা’ড়ালো চাকু’টার দিকে এক পলক তাকাতে সিরাতকে দেওয়া আ’ঘাতটা যেন নিজের হৃদয়ে অনুভব করতে পারছে সে। রাগে চা’কুটা হাতে নিয়ে হাতে কয়েকটা পো’চ দিয়ে দিলে র’ক্তে ভরে উঠলো ফ্লোর। চিৎ’কার করতে থাকলো সে।
—কেন করলে এমন সিরাত? আমাদের সম্পর্কটা তো অন্য রকমও হতে পারতো? যাকে খোঁজার জন্য দিনরাত ছুঁ’টে বেড়িয়েছি, একেরপর এক লা’শের সূএ খুঁজেছি,সেই মানুষটা তুমি জেনেও আজ তোমাকে নিজ হাতে খু’ন করতে যাওয়ায় আমার হাতটা পর্যন্ত কেঁ’পেছে সিরাত! অথচ তোমাকে মা’রার জন্যই ম’রিয়া হয়ে উঠেছিলাম আমি! সাফিনের কান্নার কন্ঠে চিৎ’কারগুলো চার দেয়ালের ভিতরেই আবদ্ধ হয়ে থাকলো যেন।
“সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলে কাউকে চোখে না পরাতে বুকটা কেমন হাহাকার করে উঠলো সিরাতের।” দী’র্ঘশ্বাস ছাড়া কিছুই আসছে না যেন এখন তাঁর। বি’ষন্ন পায়ে দরজা থেকে বেড়িয়ে পরলে আমেনা বেগম হাত ধরে টে’নে ধরলে পিছু ফিরে তাকালো সিরাত।চোখেমুখে বিষ্ম’য় নিয়ে আমেনা বেগম বললেন।
— এই রাতে কোথায় যাচ্ছিস তুই? ভাগ্যিস পানি নিতে নিচে আসছিলাম। সিরাতের মুখ যেন বন্ধ হয়ে গেল ভয়ে। বাড়ির সবাই তাঁদের কনট্রাক্টের কথা জানতে পারলে নিশ্চিত ভে’ঙে পরবেন। গলা শুকিয়ে আসলো সিরাতের। কিছু বলতেও পারছে না যেন সে।
—কিরে আম্মাজান কথা বলিসনা কেন?
সিরাতের কাঁধ ধরে ঝাঁ’কি দিলে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। কিছু বলার আগেই ধীর কন্ঠে উপর থেকে শোনা গেল।
— যেতে দেও ওকে।
সাফিনের কন্ঠস্বর শুনে ছলছল চোখে সিঁড়ির দিকে তাকালে সাফিনের থ’ম’থ’মে চোখমুখ দেখে নিশ্বাস ছাড়লো সিরাত। আমেনা বেগম ভ্রু জাগিয়ে ফেললেন। বললেন।
—মা’র খাবি সাফিন। এমনিতেই বাড়িতে কারো মন-মানসিকতা ঠিক নেই তুই আবার মেয়েটার সাথে এরমধারা ব্যাবহার করছিস কোন সাহসে? নিজের আম্মার দিকে তাকিয়ে শীতল কন্ঠে বললো।
— আম্মা এখন সবাই ঘুমোচ্ছে। আমি চাইনা সবাই জেগে যাক।
—আম্মা আমি আসছি। ভালো থাকবেন আপনারা সবাই।সিরাত যেতে নিতে আমেনা বেগম বাঁ’ধ সেধে বললেন।
—আরে কি শুরু করেছিস তোরা! এই ঝরবৃষ্টির ভিতরে কোথায় যাবে আম্মাজান।একদিন দেখবি তোদের আম্মা পা’গল হয়ে যাবে তোদের এইসব দেখে।
—বলছিতো যেতে দেও ওকে। কোনো বি’ষাক্ত সা’পের আমার হৃদয়ে ঠাই হবে না কোনোদিন।
সাফিনের কা’ঠ>কা’ঠ কন্ঠ শুনে এতক্ষণের মি’য়িয়ে যাওয়া চেহারাটাও রাগে লাল হয়ে উঠলো যেন সিরাতের। আমেনা বেগম বললেন।
—আর একটা বা’জে কথা বললে তোকে আমি সত্যি চ’র বসিয়ে দেব সাফিন। দাঁড়া তোর বাপকে ডাকছি তাহলেই তুই সোজা হয়ে যাবি।
—আম্মা আমার দিব্যি রইলো আপনাকে। আমাকে যেতে দিন। যদি একটুও ভালোবেসে থাকেন তাহলে যেতে দিন আমাকে।
সিরাতের কথা শুনে থ’মকে গেলেন আমেনা বেগম। মুখ থেকে চ-ও বের করতে পারলেন না।
আমেনা বেগমকে শ’ক্ত করে একবার জড়িয়ে ধরলে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে আমেনা বেগমের হাতের সাথে স্পর্শ করে গেলে আমেনা বেগম সাফিনের দিকে অ’সহায় ভাবে তাকালে সাফিন ধীর পায়ে সেখান থেকে চলে গেলে সিরাতও শাহনেওয়াজ ভিলার চৌকাঠ পেড়িয়ে গেলে শ্রাবনের ঝরো বৃষ্টি শরীর স্পর্শ করে গেলে আমেনা বেগমের ধারনা জাগলো রাগ কমে গেলে আবার সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে তাঁদের মধ্যে। দী’র্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি। বললেন।
— যাচ্ছিস যা,বাঁ’ধা দেব না। আমি বাঁ’ধা দেওয়ার কে তাইনা? কিন্তু একটা অনুরোধ তোর কাছে, বাড়ির গাড়িতে যা যেথায় যাওয়ার।
আমেনা বেগমের ধরা কন্ঠের রেশ শুনে কান্নাগুলো ঠেলে আসতে চাইছে যেন সিরাতের।
—মায়ের অনুরোধ কিন্তু?
—অনুরোধ নয়,আদেশ করুন আম্মা।
—তাহলে যাসনা কোথাও।
থ’ম মে’রে গেল সিরাত। ধীর কন্ঠে বললো।
— একটা মোমের পুতুলের ন্যায় বাঁ’ধ দেওয়া গন্ডি পেড়িয়ে দুঃশা’হস দেখেয়েছিলাম আমি। আর আজ সেই মোমটা গ’লে নিঃশ্বেস হয়ে গেছে। তাই আর এ মেরুতে আমার কোনো স্থান নেই। ভিন্ন মেরুর বাসিন্দা হয়ে গেলাম আমিও।
সিরাতের কথার গহীনতা বুঝে উঠতে পারলেন না আমেনা বেগম। মায়ের মন কেমন কাঁ’মর দিয়ে উঠছে শুধু। সিরাতকে পিছু ফিরে ডাকার শাহ’স আর দেখালেন না তিনি। আমেনা বেগমের মান রাখতে গাড়িতে উঠে বসলো সিরাত। পিছুঘুরে একপলক দেখে নিল তাঁর এতদিনের সৃতি বিজরিত সোনার সংসার। যেখানে সে কখনো স্ত্রীর ভূমিকায় ছিলই না। বরং ডিলের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিল চারিপাশ। চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো শুধু সিরাতের। বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সহিত বাতাসের ন্যায় শাহনেওয়াজ ভিলার গেট পেড়িয়ে গেলে আমেনা বেগম আঁচলে চোখ মুছলেন।
—একদিন বুঝবি তোরা দুটিতে, ঠিকই বুঝবি তোদের মায়ের ক’ষ্টটা। আজ নাহয় দিব্যি কেঁ’টে চলে গেলি মেয়ে, পরে যখন বুঝবি তখন আম্মার কথা মনে পরবে তোর। বলে রাখলাম আমি।
.
বৃষ্টির পানি ঠেলেঠুলে গাড়িটা সিরাতদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াতে ঘোর কাঁ’টলো সিরাতের। দরজা খুলে নেমে পড়াতে তুমুল বর্ষনে ভিজে উঠেছে সিরাতের শরীর। কোমরের কাঁ’টা জায়গাটাতে পানির স্পর্শে কেমন জ্ব’লে উঠলো যেন। দ্রুত চোখ বন্ধ করে নিলে গাড়ি থেকে ছাতা হাতে ড্রাইভার এগিয়ে আসলে বাঁ’ধ সাধলো সিরাত।
—কখন নিতে আসব ম্যাম আপনাকে?
ড্রাইভারের কন্ঠ শুনে মনে-মনে অট্টহাসিতে ভে’ঙে পরলো সিরাত। ধীর কন্ঠে বললো।
— বেলা ফুরাবার আগে। যেদিন আকাশ ছেঁয়ে নামবে তুষার বর্ষন। চারিপাশে থাকবে শুধু আর্ত’নাদের করুন উৎকন্ঠা। আর আমি থাকব ওই নীল আসমানে। সেদিন হয়তো আপনাদের স্যার আমাকে বুঝতে পারবেন।
সিরাতের কথার প্যাঁ’চটা ঠিক বোধগম্য হলো না তাঁর। বোকাভাবে দাঁড়িয়ে থাকাতে মৃদু হাসলো সিরাত। বললো।
— আপনি জান। আমার ফেরার হলে আমি নিজ দ্বায়িত্বে ফিরে যাব। কথাটুকু বাড়ির সম্মানের দিকে নজর রেখে বললো সিরাত। লেকটাও ঠিক আছে বলে গাড়ি নিয়ে বৃষ্টির আড়াল হয়ে গেলে সেদিকে তাকিয়ে রইলো শুধু সিরাত। হাত-পা শরীর কেমন অ’বশ হয়ে আসছে তাঁর। ক’ষ্ট হলেও ভেজা শরীরে সামনে এগিয়ে দরজায় করা নাঁড়লে বেশ সময় নিয়ে ঘুম-ঘুম চোখে দরজা খুলল তোহা। হুট করেই সিরাতকে দেখে ঘুম উড়ে গেল যেন তাঁর। খুশিতে ভেজা অবস্থাতেই জড়িয়ে ধরলো তাঁকে।
— আল্লাহ গো, আমি ঠিক দেখছিতো নাকি? আমার জানটা এসেছে। কিন্তু সিরাত এত রাতে তুই বৃষ্টিতে ভিজে আসতে গেলি কেন?
তোহার একেরপর এক পশ্ন শুনে শুকনো হাসি হাসলো সিরাত। মৃদুস্বরে বললো।
—ভিতরে যেতে বলবি না আমাকে?
— আরে এ আবার জিজ্ঞেস করছিস তুই। জলদি আয় তারাতাড়ি।
তোহা সিরাতের দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে তাঁকে ভালোভাবে পরখ করতে চোখ ফোলা- ফোলা দেখে মনের মাঝে কেমন সন্দেহ জাগল তোহার। চটজলদি বলে উঠলো।
—কি হয়েছে রে সিরাত তোর?
—পরে কথা বলছি। আগে ফ্রেশ হয়ে আসি।
সিরাত ফ্রেশ হতে চলে গেলে মনটা কেমন উশখু’শ করতে থাকলো তোহার।
—কি হলো ব্যাপারটা? সিরাতের কোনো প্রব’লেম হয়নিতো আবার ওই বাড়িতে? কথাগুলো মাথার মধ্যে ঘুরপা’ক খেয়ে গেল যেন তোহার।
.
প্র’বল বেগে ঝর্নাটা ছেড়ে দিয়ে পা ঢলে বসে পরলো ফ্লোরে সিরাত। ঝর্নার প্রতিটা শিশিরবিন্দু যেন তাঁর শরীর ছুয়ে স্পর্শ করে যাচ্ছে ক্রমশ। হাটু ভা’জ করে বসে দুইহাত দিয়ে পরনে থাকা শাড়িটা শক্ত হাতে খিঁ’চে ধরলো সিরাত।
এতক্ষণের ডু’করে ওঠা কান্নাগুলো উ’গরে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো যেন সে। শরীরের প্রতিটা বিন্দুতে কেঁ’পে>কেঁ’পে উঠছে যেন।
— বি’ষাদের বি’ষে প্রান হেড়েছে মোর।জানতাম এর কোনো দাঁড় আসবে না, তবুও সে বি’ষাক্ত বি’ষ পান করেছি সাফিন। চেয়েছি একঝুম বৃষ্টি, তুমি দিলে একরাশ হীনতা। একতরফা ভালোবাসা গুলো সত্যি খুব পিঁ’ড়াদায়ক। কখনো জানতেও পারলে তোমাতে ম’ত্ত হয়ে ঝ’লছে গেছে সিরাত।
ডু’করে কেঁদে উঠলো সিরাত। তাঁর রেশ বাহির পর্যন্ত অন্তর্নিহিত হতে তোহা ছুটে গেল দরজার কাছে৷
—এই সিরাত? কি হয়েছে তোর জান? সত্যি করে বলনা আমায়? প্লিজ কাঁদিসনা,কি হয়েছে তোর। সিরাত?
ভেতর থেকে কোনো সারা না পেয়ে বি’চলিত হয়ে পরলো তোহা। টেনশনে মাথা কাজ করতে চাইছে না তাঁর। বিছানার কাছে ছুটে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে একটা নম্বরে কল লাগালো শুধু।
.
সকাল-সকাল ঘুম মৃদু আলোয় ঘুম ভে’ঙে গেলে বিছানার দিকে সিরাতকে না দেখতে পেয়ে বিচলিত হয়ে পরলো সাফিন। দ্রুত ঘরটাতে সাই লাগিয়ে নিচে যেতে নিলে থ’মকে গেল সে। কালকের ঘটনাগুলো চোখে ভাসতে থাকলে ধীর পায়ে নিজের রুমে ফিরে এলো আবার। মনটা কেমন বি’ষিয়ে আছে তাঁর। হাতের কাঁ’টা জায়গাটাতেও কেমন জ্বল’লছে শুধু। খা’রাপ লাগাগুলো যেন ঝেঁ’কে বসেছে আজ তাঁকে। বারান্দায় এসে দাঁড়াতে মনটা কেমন কফি-কফি করছে। অন্যদিন হলে সিরাতই কাজটা করতো। কিন্তু আজ সকিনাকে ডাকতে হলো সাফিনের। সকিনার কোনো সারাশব্দ না পেলে ফ্রেশ হতে চলে গেল সে। কিছুক্ষণ পর ফোনটা বেজে উঠতে ফ্রেশ হয়ে ফোনটা রিসিভ করে ধীর কন্ঠে বললো।
—হ্যা মোহন বলো? মোহন ভ’রকে যাওয়া কন্ঠে বললো।
— স্যার সর্ব’নাশ হয়ে গেছে। রাজবাড়ীর পিছনে দু-দুটো লা’শ পাওয়া গেছে।
চম’কে উঠলো সাফিন। নিশ্বাস টেনে বললো।
—চেনাজানা নাকি খোঁজ করতে হবে?
থ’ম মে’রে গেল যেন হেলাল। দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে সাহস সঞ্চয় করে ধরা কন্ঠে বললো।
—খুব কাছের লোক স্যার।
সাফিনের মাথাটা কেমন ধরে যেতে চাইছে যেন। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—হেয়ালি না করে সোজাসাপটা উত্তর দেও।
কেঁ’পে উঠলো মোহন। ধীর কন্ঠে বললো।
— সকিনা আর বুড়ো আম্মা….
চলবে…..