#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ ২
রিসোর্টের ভিতরে প্রবেশ করাতে সিরাতের মাথার উপর লালরাঙা গোলাপের পাপড়ি ঝরে পরতে লাগল। সেদিকে ধীর চাহনিতে তাকাতে সাফিন হাসলো। বললো।
—খুশি হওয়ার কারন নেই বুঝলে সিরাত।এগুলো কিছুই তোমার জন্য নয়।
সাফিনের কথা শুনে সিরাত তেলে বেগুনে জ্ব’লে উঠলো যেন। আমার মুখের টেপটা খালি খুলে দে শ’য়’তা’ন। তারপর বোঝাব সিরাত কি জিনিস।(মনে-মনে)
ভিতর থেকে কয়েকজন কালো রাঙা কোর্ট পরা লোক এসে সাফিনের সাথে হ্যান্ডসেক করে কথা বলার সময় সাফিন সিরাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—তুই তুকারি কেন করছো নিজের স্বামীকে? লক্ষী বউয়ের মতো তুমি করে বলবে। নয়তো কি হবে সেটা তুমি খুব ভালোকরেই জানো সিরাত।
সিরাত সাফিনের দিকে চোখ বড়-বড় করে তাকিয়ে রাগে নাক লাল করে ফেলল।
—এ লোক জাদুটোনা জানেন নাকি? মনের কথা কিভাবে বুঝে যান!
সামনে থাকা কোর্ট পরা লোকগুলোর মধ্য থেকে একজন সিরাতের দিকে হেসে হাত বারিয়ে দিতে-দিতে বললেন,
—হ্যালো মিসেস শাহনেওয়াজ নাইস টু মিট ইউ। সাফিন হাতটা নিজের দিকে ঘুড়িয়ে আবারও হ্যান্ডসেক করে মৃদু হেসে বললো।
—উহুমম,এই ভু’ল করবেন না মি. সিকদার। ওই হাত শুধু এবং শুধুমাএই শাহনেওয়াজ সাফিনের জন্য লিখিত। আপনি আমার সাথে হ্যান্ডসেক করুন।
সিরাত সাফিনের দিকে নাক মুখের ভাবভঙ্গি অবাক হওয়ার মতো তাকাতে সাফিন মৃদু হেসে সামনে থাকা লোকগুলোর সাথে তাঁর পরিচয় করাতে লাগল।
—এইযে চারজনকে দেখছো? এরা আমার খুব কাছের লোক৷ মানে আমার কলিগ৷ মি. সিকদার, মি. চৌধুরী, মি. রুবেল, মি. সিংহানিয়া।
সিরাত সাফিনকে ভেঙিয়ে বললো।
—আমার কলিগ। হে আসছেন,কলিগ তো হবে ওই রাজনীতির। সবকয়টা শ’য়’তা’নের দলবল। আর তাঁর লিডার হলেন আপনি।(মনে-মনে কথটা বলেই হাসতে থাকলো সিরাত)
সাফিন সিরাতের দিকে শীতল চাহনিতে তাকিয়ে বললো।
—আর এই হলো মাই ডিয়ার, মাই ওয়াইফ মিসেস সিদ্রাতুল সিরাত।
—ওয়াইফ না ওয়াইফাই, এত বছর কই ছিল এত দর’দ? এখন আসছেন অধিকার খাটাতে?
কথাটা মনে-মনে বললেও প্রকাশ্যে সিরাত তাঁদের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করার মতো করে সালাম জানালে রুবেল বলে লোকটা সিরাতের দিকে তাকিয়ে তাকে পরখ করে বললো।
—আরে মি. শাহনেওয়াজ আপনার ওয়াইফের মুখে টেপ আঁটকে গেছে তো?
সাফিন সিরাতের দিকে তাকাতে সিরাত চোখ গরম করে তাকালে সাফিন হেসে বললো।
— আরে কি বলব ভাই বলুন? আমার বউ মানে সিরাত, আমাকে এতটা ভালোবাসে,এতটা ভালোসে, যে মুখ খুলে দিলেই কানের কাছে এসে আই লাভ ইউ জান, সোনা, কলিজা বলে-বলে কান ঝা’লা’পালা করে দেয়। তাই কি আর করার মুখে টেপ মেরে দিলাম। যতই হোক আমার বউয়ের এত প্রেম-প্রেম ভাবটা আমি একান্তই একা পেতে চাই লোকজন জানলে কেমন দেখায় না।
কথাগুলো এক নিশ্বাসের সঙ্গে বলেই সাফিন ফেসটাকে লাজুক-লাজুক করে ফেলল।
সাফিনের এতগুলো মি’থ্যা কথা এক সাথে শুনে তাও আবার যখন নিজের নামে। সিরাতের রাগে, দুঃখে ইচ্ছে করছে সাফিনের গ’লা’টা টি’পে দিতে৷
— ব’জ্জা’ত লোক একটা। মি’থ্যার একটা লিমিট থাকা দরকার। আমি নাকি ওনাকে আই লাভ ইউ, জান, সোনা বলেছি! ম’রে গেলেও বলব না।
সামনে থাকা লেকগুলো হেসে সিরাতের দিকে ল’জ্জার সহিত তাকিয়ে চলে গেলে সিরাত সঙ্গে- সঙ্গে তাঁর হাতের নখ দিয়ে গাঁয়ের জোরে সাফিনের হাতে খাঁ’ম’চি কেটে দিতে সাফিন আহ করে উঠলো৷ তবুও মুখে হাসি ঝুলিয়ে বললো।
—উফ সিরাত। তোমাকে রাগলে যা লাগে না কি বলব আমি৷ থাক বেশি বলে কাজ নেই ভিতরে চলো। আচ্ছা যাক তোমার মুখের টেপটা খুলে দিচ্ছি। বলেই টেপটা খুলে দিতে সিরাত রাগে ফুঁ’স’তে-ফুঁ’স’তে বললো।
—এতগুলো মি’থ্যা কথা কেন বললেন আমার নামে আপনি?
সাফিন সিরাতের কথা গাঁয়ে না লাগিয়ে তাঁর দিকে শীতল চাহনিতে তাকাতে সিরাত খানিকটা থ’মকে গেল৷ সাফিনের তৈলাক্তময় ফর্সা চেহারায় নাকের উপরে থাকা ছোট্ট কালো রাঙা তিলতায় চোখ যেতে শরীরের ভিতরে কেমন যেন মু’চ’ড়ে উঠলো সিরাতের। আর কিছু বলতে পারলো না সে।
সাফিন মৃদু হাসলো। ধীর কন্ঠে বললো।
—ভারি দু’ষ্টুতো তুমি সিরাত!
—কেন?
—কিছুনা চলো ভিতরে চলো।
.
গগনের বৃষ্টিভেজা শিহরনের শ্রাবন সন্ধ্যা ময় পরিবেশে রিসোর্টের সামনে তোহা গাড়িটা থামাতে বললে জুবায়ের একবার রিসোর্ট তো একবার তোহার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
—ম্যাম এখানে নামবেন নাকি?
তোহা বিরক্তির স্বরে বললো।
—তো না নামলে থামাতে বলেছি কেন? আজব!
জুবায়ের একটা ঢোক গি’লে মৃদু হাসলো। বললো। —আচ্ছা ঠিক আছে চলুন ভিতরে চলুন।
তোহা গাড়ি থেকে নামতে নিতে জুবায়ের ছাতা হাতে বেড়িয়ে পরলো। তোহার মাথার উপর ছাতা ধরাতে তেহা আর চোখে জুবায়েরের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বললো।— খা’ম্বা’র মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
জুবায়ের কেশে উঠলো। বললো।
—নাহ ঠিক আছে আপনি চলুন।
তোহা সামনে আগাতে নিতে হাইহিল শাড়ির সাথে পেঁ’চিয়ে পরে যেতে নিতে জুবায়ের একহাতে ছাতা সামলে তোহার কোমর জড়িয়ে ধরে ফেলল তাঁকে। শীতল দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো।
—ম্যাম কোলে নিতে হবে?
তোহা চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রাগ নিয়ে বললো।
—আমি বলেছি নিতে! হাত ছাড়ুন। সাফিনের চাম’চা আসছে হেহ।
—কিছু বললেন।
— না বলিনায়, এখন কথা না বাড়িয়ে ভিতরে গেলে চলুন না গেলে আপনি আপনার জায়গায় যান। মে’জা’জ এমনিতেই বি’গ’রে দিয়েছে আপনার ওই শাহনেওয়াজ না আনাচকপি।
জুবায়ের তোহার কথা শুনে চোখ বড়-বড় করে তাকিয়ে পিছু ফিরে নিজের চুল নিজে টেনে ধরে মনে-মনে বললো।
—মেয়ের সাহ’সটা কি। শাহনেওয়াজ সাফিনকে গা’লি গা’লা’জ করছে।একবার যদি স্যার এসব শুনতে পারে তো হবে এর।
.
হাই বলিয়মে মিউজিক আর বিভিন্ন কালারের লাইটার দিয়ে ভর্তি রুমটাতে প্রবেশ করতে সবাইকে ডান্স করতে দেখে সাফিন সিরাতের হাতটা নিজের হাতের সাথে জড়িয়ে নিতে সিরাত শীতল চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকালো। সাফিন মৃদু হেসে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—সামনে দেখো। স্টেজের দিকে আঙুল তাক করে দিতে সাদারাঙা লং ড্রেস পরিহিত সাওদাকে দেখে সিরাত চোখ বড়-বড় করে ফেলল। একবার সাফিনের দিকে তো আরেকবার সাওদার দিকে তাকাল।
সাওদা সিরাতকে দেখে হেসে ভির এড়িয়ে এগিয়ে আসলো তাঁর দিকে।
—আরে দোস্ত তুই এসে গেছিস। তোহা কোথায়?
তোহার কথা ওঠাতে সিরাত সাফিনের দিকে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাগে ফুঁ’স’তে থাকলো।
সাফিন সাওদার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো।
—আসছে এখনই এসে পরবে। তোমার বান্ধবীকে বলো এ রকম বাঘি’নীর মতো আমার দিতে না তাকাতে। শাহনেওয়াজ সাফিন ওসব ভয় পায় না। বরং ভয় পাওয়ায়।
সিরাত দাঁ’তে দাঁ’ত চেঁ’পে রাগে সাফিনের দিকে তেরে আসতে নিতে সাওদা হেসে উঠলো। বললো।
—ওহ গড সিরাত। কুল বেব্বি, জাস্ট চিল আমি দেখছি তোহার ব্যাপারটা। সাওদা চলে যেতে সাফিন সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে সিরাতকে আরও কাছে নিয়ে এসে মৃদু হেসে বললো।
—তোমার এই এত রাগনা যেটা তুমি দেখাও আমাকে এতে কাজ হবে না জড়িয়ে ধরে বলবা সোনা থামো দেখবে আমি অলরেডি থেমে যাব৷ এছারা বে’হুদা রাগ দেখাতে আসবে না।
—জড়িয়ে ধরা মাই ফুট। পারলে আপনাকে আমি আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিতাম মি. শেহজাদের সাফিন। কিন্তুহ আজ’ব সবকিছু, আপনি আমাকে আপনার কাজ শেষে নানু চলে যাওয়ার পর ছুঁ’ড়ে ফেলে দিয়েছেন জেনেও আমি আপনাকে ভালোবাসি! হৃদয়ের গহীনে গেঁথে গেছেন আপনি যেটার ক্ষ’ত প্রতিটা মুহুর্ত উপলব্ধি করতে পারি আমি। (মনে-মনে কথাটা ভাবতেই চোখের কোন ঘেঁষে পানি গড়িয়ে পরলো সিরাতের।)
—কি ভাবছো? আচ্ছা তুমি জানতে চাওনা আমি তোমাকে এত বছর পর আবার আমার কাছে ডেকেছি কেন?
সিরাত শীতল চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকাতে সাফিন সিরাতের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকালো। সিরাতের ঘন হয়ে আশা নিশ্বাসের স্পর্শ সাফিনের চোখেমুখে ছেয়ে যেতে সাফিন সিরাতের ঠোঁটে মৃদু কাম’রে দিল।
সিরাতের বন্ধ চোখদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো সাফিন। বললো।
—হাউ কিউট৷ ইট’স সিক্রেট। এটা তোমাকে পৌঁছে দেওয়ার সময় বলব ওকে।
সাফিন ড্রিংকসের দিকে চলে যেতে সিরাত ছলছল চাহনিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকলো।
.
—সিরাত, জানটা আমার। তুই এখানে?
তোহা দৌঁড়ে এসে সিরাতকে জড়িয়ে ধরতে জুবায়ের ভ্রু জাগিয়ে তাঁদের একপলক দেখে চারপাশে সাফিনকে খুঁজতে থাকলো। তারপর সেও সাফিনের কাছে চলে গেল।
—স্যার মেয়েটা তো এখানেই আসলো। বুঝলাম না কিছু!
সাফিন হাসলো। জুবায়েরের পকেট থেকে সিগারেট বের করে মুখে দিতে জুবায়ের সিগারেটটা দিয়াশলাই দিয়ে জ্বালিয়ে দিল।
—স্যার বড় সাহেবের ম্যাসেজ এসেছে সে নাকি আজকে রাতে দেশের বাহিরে যাবেন। নির্বাচন সামনেই। এই সময় বড় সাহেবের নিজের জায়গা ঠিক রাখা জরুরি৷
সাফিন হাসলো। সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে দূরপানে সিরাতের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বললো।
— হুমম, ড্যাড আর যাই করুক তার মন্ত্রীর পদ থেকে নরবর হবেন না কখনো। অন্ততপক্ষে যতদিন আমি বেঁচে আছি। আম্মাকে জানিয়ে দেও তাঁর ছেলে ঠিক আছে শাহনেওয়াজ সাফিনের কেউ টিকিটিও করতে পারবে না।
জুবায়ের হাসলো।
.
—হেই শালিকা কা শালি মেরি আথি ঘারওয়ালি। এসে পরেছো,বাহ সুন্দর।
সাফিন তোহার দিকে তাকিয়ে হাসলে তোহা বিরক্ত হলো। সিরাতের হাত শক্ত করে নিজের হাতের সাথে জড়িয়ে রাখলো।
সাফিন সিগারেটটা নিচে ফেলে পা দিয়ে পি’শে দিতে সিরাত সেদিকে খুব মনোযোগ সহকারে তাকালো।
হুট করে পাশ থেকে একটা ছেলে এসে সিরাতের দিকে ডান্সের জন্য হাত বাড়িয়ে দিতে সাফিন ছেলেটার দিকে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঠান্ডা কন্ঠে বললো।
—সিরাত সামনে গিয়ে বা দিকে একটা স্টোর রুম আছে৷ এখান থেকে এক পা ছেলেটার দিকে গেলে তোমার হাত পা বেঁ’ধে মুখে টেপ মেরে সাতদিন ওখানে বন্ধ করে রাখব। আর যে ছেলে তোমার দিকে হাত বাড়িয়েছে ডান্সের জন্য, তাঁর হাত পা বাঁ’ধা হবে না, ডিরেক্ট ভে’ঙ্গে দিয়ে এমন হাল করে ছারব যে সকালে প্রত্যেকটা নিউজে শুধু একটা সো ই হবে যে, শহরে রিসোর্টে কোন এক ছেলের হাত পা ভে’ঙে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে…..
চলবে……