হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-২০

0
451

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা
#২০ পর্ব। (#স্পেশাল_পর্ব_২)

“কেক কেঁ’টে সর্বপ্রথম রাহেলা বেগমকে খায়িয়ে দিয়ে এক-এক করে বাড়ির প্রতিটা সদস্যকে খায়িয়ে দেওয়া হয়ে গেলে আমেনা বেগম চোখ দিয়ে ইশারা করে সাফিনের দিকে দেখিয়ে দিলে হাতটা যেন কেঁ’পে উঠলো সিরাতের। আমেনা বেগম তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকায় নাও করতে পারছে না সিরাত। ধীর পায়ে সাফিনের দিকে এগিয়ে গেলে সাফিনের মুখের সামনে কেকের টুকরোটা ধরাতে সাফিন সিরাতের হাতটা টে’নে ধরে সিরাতকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে গেলে থ’মকে গেল সিরাত। কিছু বলার আগেই সাফিন সিরাতের হাত দিয়ে অল্প করে কেক খেয়ে বাকি এ’টো কেকটুকু সিরাতের গালে লাগিয়ে দিয়ে হাসতে থাকলে বিরক্ত হলো সিরাত। আবার ভালোও লাগছে। সাফিনের সামনে রাগটা দেখিয়ে মনে-মনে খুশিতে গ’দ>গ’দ হয়ে গেল যেন সে। আঁচল দিয়ে কেকটুকু মুছে ফেলে যেতে নিতে পিছুটান অনুভব করে পিছু ফিরে তাকাতে সাফিন সিরাতের আঁচল নিজের হাতের মুঠোয় নিতে-নিতে এক পর্যায়ে সিরাতের খুব কাছে এসে ঠেকে গেলে সাফিনের গরম নিশ্বাস সিরাতের ঘাড়ের কাছে এসে স্পর্শ করে গেলে সাফিনের ঠোঁটের স্পর্শে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। কাঁ’পা>কাঁ’পা কন্ঠে বললো।
—সাফিন প্লিজ… সবাই দেখছে এখানে।
সিরাতের কথা শুনে বাঁকা হাসি হাসলো সাফিন। শীতল হাতের স্পর্শে আঁচল ভেদ করে সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে পাঁ’জাকোলা করে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলে তাঁদেরকে দেখে প্রশান্তির হাসি হাসলেন আমেনা বেগম।
মোস্তফা সাহেব আর আজাদ সাহেবতো সেই তখন থেকে খাওয়াতেই লেগে আছেন যেন। আমেনা বেগম তাঁদের দিকে একপলক পরখ করে নিজেও তাঁর চেনাজানা কয়েকজন মহিলাদের সাথে কথা বলায় লেগে পরলেন।
.
আমেনা বেগমের সাথে দেখা করে তোহা বাড়ির উদ্দেশ্যে যেতে নিতে তাঁর পথ আঁ’টকে দাঁড়ালো জুবায়ের। বাহিরে আকাশ ছেঁয়ে ঝুম বৃষ্টিপাত হচ্ছে দেখে ধীর চাহনিতে তোহার দিকে তাকিয়ে বললো।
— এই বৃষ্টির ভিতরে কোথায় যাচ্ছেন ম্যাম।
—জাহান্না’মের চৌ রাস্তায়। যাবেন আপনি আমার সাথে?
তোহার বাঁকা কন্ঠের উত্তর শুনে ভ্যা’বাচ্যা’কা খেয়ে গেল যেন জুবায়ের। মৃদু হেসে বললো।
— সোজা কথা বলা যায় না। এত ঘোরপ্যাঁ’চ লাগান কেন?
—আপনিও বা ঢং করে খা’ম্বার মতো আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলেন কেন? দেখি সাইড দেন,রাত হচ্ছে বাসায় যাব।
—ওহ আচ্ছা। চলুন আপনাকে ড্রপ করে আসি তাহলে।
জুবায়েরের কথা শুনে ভ্রু জাগিয়ে ফেলল তোহা। বললো।
—এখানে লাইন না মেরে কলেজ, ইউনিভার্সিটি এসব জায়গায় ট্রাই করে দেখতে পারেন কাজে দিবে। এ ধানে চিড়ে ভিজবে না।
তোহার কথা শুনে জুবায়ের হা হয়ে গেল যেন।
— এ মেয়ে নাকি দ’জ্জা’ল, বলি কি আর বোঝে কি? আশ্চর্য!
তোহা পাশ কাঁ’টিয়ে যেতে নিতে জুবায়ের আবারও বললো।
— ট্রাই করার হলে অনেক আগেই করতাম বুঝলেন ম্যাডাম। স্যারের অর্ডার আছে আপনাকে ঠিকঠাক ভাবে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার। তাই জন্য বলেছি কথাটা।
জুবায়েরের কথা শুনে জিভ কাঁ’টলো তোহা।
—ইশ, যা-তা ব্যাপার হলো একটা।(মনে-মনে কথাটা ভেবে সামনা-সামনি জুবায়েরের উদ্দেশ্যে বললো।)
—তাহলে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? চলুন।
হাসলো জুবায়ের।
.
আকাশ ছেঁয়ে আজ ভরা বর্ষনে ঢেকে আছে যেন। হিমশীতল হাওয়া খোলা জানালা ভেদ করে বাহির থেকে ঠেলে ভিতরে আসতে চাইছে যেন। লাইটারের হলুদ রাঙা আবছা আলোয় সিরাতকে পাঁ’জাকোলা অবস্থায় এক পলক তাঁর মা’য়াময় মুখশ্রী দেখে নিয়ে সাফিন তাঁদের রুমের দরজাটা পা দিয়ে ঠেলে দিতে দরজাটা খুলে গেলে মৃদু শব্দে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। সাফিনের বুকে মুখ লুকিয়ে রেখেছে সে। সাফিনের শরীরের পারফিউমের মিষ্টি স্মেল নাকের কাছে এসে বারংবার হানা দিয়ে গেলে মাথাটা কেমন ভার হয়ে আসতে চাইছে তাঁর। সাফিনের এতটা কাছে থেকেও যেন মনের ভিতরটা কেমন ছা’রখা’র হয়ে যাচ্ছে অজানা ভয়ে। সাফিনকে হাঁড়িয়ে ফেলার ভয়।
সাফিন ধীর চাহনিতে সিরাতের দিকে তাকাতে- তাকাতে শীতল হাতের স্পর্শে সিরাতকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে তাঁর সামনে অনেকটা ঝুঁ’কে গেলে ভয়ে দ্রুত কয়েকটা ঢোক গি’লে নিল সিরাত। সাফিনের হাতটা এখনও সিরাতের শাড়ির আঁচল ভেদ করে স্পর্শ করে আছে। বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজটা যেন আরও গাঢ় ভাবে কানের কাছে এসে কড়া নেড়ে যাচ্ছে এখান থেকে। সাফিনের ঘন হয়ে আশা নিশ্বাসের গরম উ’ষ্ণতা সিরাতের চোখেমুখে আঁ’ছরে পরছে যেন৷ অন্যরকম প্রেমানুভূতি অনুভব করতে পারছে সিরাত। চোখ খিঁ’চে বন্ধ করে দুইহাত দিয়ে বিছানার চাঁদর খা’মচে ধরলে ঠোঁটের কোনে হাসির রেশ এসে জমা হলো সাফিনের। বেশ অনেকক্ষণ এভাবে থাকার পরও সাফিন ঠিক আগের মতোই থাকাতে চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো সিরাতের। হাসলো সাফিন। সিরাতের ধৈর্য শক্তির কাছে হার মেনে গেল সে। ধীরেধীরে সিরাতের খুব কাছে এসে বালিশের পাশ থেকে রিমোটটা নিয়ে লাইটারের আলো নিভিয়ে দিলে সিরাতের মাথার পিছনে হাত রেখে সিরাতের লালরাঙা ঠোঁটে ঠোঁট ডু’বিয়ে দিলে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। সাফিনকে কিছু বলতেও পারছে না যেন সে। ভালোবাসার মানুষটার প্রতিটা স্পর্শ খুব কাছ থেকে অনুভব করতে থাকলো সিরাত। কাঁ’পা-কাঁ’পা হাতদুটো বিছানা ছাড়িয়ে সাফিনের ব্রাউন্ট রাঙা চুল আঁ’কড়ে ধরলো যেন। সিরাতের থেকে রেসপন্স পেয়ে সিরাতের মাঝে পা’গল হয়ে উঠলো যেন সাফিন। সাফিনের প্রতিটা স্পর্শ গভীর থেকে গভীরে স্পর্শ করে গেলে বাহিরের ঝরো হাওয়া যেন সিরাতের মাঝেও বইতে থাকলো এখন। কান্না পাচ্ছে তাঁর এখন। সাফিনের থেকে হাত আলগা হয়ে আসলে সিরাতের চোখের কোন বেয়ে মোটা-মোটা জলরাশি বইতে থাকলে সেই কান্নার রেশ সাফিনের হাত ছুঁয়ে স্পর্শ করে গেলে থ’মকে গেল সাফিন। নিজেকে যথাসম্ভব সংযত করে সিরাতের কপালে গাঢ় চুমু খেয়ে শীতল কন্ঠে বললো।
— কোনো তারা নেই সোনা। তোমার যখন নিজ থেকে সম্মতি আসবে সেদিনই এই শাহনেওয়াজ সাফিন তোমাকে গভীর ভাবে স্পর্শ করবে। তাঁর আগে নয়। কথাগুলো বলে বিছানায় পরে থাকা সিরাতের আঁচলটা উঠিয়ে ভালোভাবে সিরাতের গাঁয়ে জড়িয়ে দিয়ে পকেট থেকে সিগারেট বের করে ম্যাচ দিয়ে জ্বা’লিয়ে তাঁর ধোঁয়া ওড়াতে-ওড়াতে বারান্দায় চলে যেতে কেঁদে উঠলো সিরাত। দ্রুত উঠে বসে পা দুটো খিঁ’চি’য়ে ধরে জো’রে-জো’রে কাঁদতে থাকল সে।
—আপনাকে আমি এভাবে পেতে চাইনা সাফিন। আমি আপনাকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে এই ডিলের গন্ডি পেড়িয়ে সহজ ভাবে পেতে চাই। আর আজ আপনি আমার জীবনটা আরও জটি’ল করে দিলেন। আমি ভালোবাসি আপনাকে সাফিন। আপনি আর কবে বুঝবেন আমাকে। নাকি এই সিরাত নিজেই আপনাকে বুঝতে ব্যা’র্থ? (কথাগুলো মাথার ভেতর ঘোরপাক খেয়ে গেলে কান্নাগুলো যেন দলা পাকিয়ে যাচ্ছে সিরাতের।)
সিরাতের কান্নার আওয়াজ বৃষ্টির রেশের সহিত সাফিনের কানের কাছে এসে পৌঁছাতে থাকলে নিজের প্রতি নিজেরই রাগ রাগলো সাফিনের।
রাগে নিজের হাতটা বারান্দায় জানালার গ্রিলের সাথে সাজোরে বা’রি দিলে ঝরঝর করে র’ক্তের বন্যা বইতে থাকলো সাফিনের হাত থেকে।
—এটা তুই কি করতে চলেছিলিস সাফিন? তোর মাথার ঠিক আছে! একটা মেয়ের পার্মিশন ছাড়াই… নাহ, আমি আর ভাবতে পারছি না। আমার সিরাতের কাছে এক্ষুনি মা’ফ চাইতে হবে।
কথাগুলো বলেই আঁধা খাওয়া সিগারেটটা পায়ের নিচে পি’শে দিয়ে দ্রুত পায়ে ভিতরে এসে সিরাতকে কান্না করতে দেখে পিটপিট করে তাকালো তাঁর দিকে। ধীর পায়ে সিরাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে শীতল হাতে সিরাতের কাঁধে হাত রাখলে চুপ হয়ে গেল যেন সিরাত। অন্ধকারের ভিতরেও সাফিনের ফর্সা তৈলাক্তময় মুখশ্রী যেন সিরাতের চোখের সামনে ভাসছে।
—সরি সোনা। প্লিজ কেঁদো না জান। তোমার কান্না স’য্য হয়না কেন আমার হুম? আচ্ছা এই কানে ধরছি আমি। এবার অন্তত কেঁদো না সিরাত।তুমি জানো, শাহনেওয়াজ সাফিন নিজের নানু ছাড়া কখনো কারো কাছে মাথা নত করেনি। এমনকি নিজের ড্যাডের কাছেও না। তাই তোমারও এটা খেয়াল রাখা উচিত। আর এরপরও যদি তুমি কাঁদো তাহলে আমার থেকে খা’রাপ কেউ হবে না। এই বলে রাখলো সাফিন।
—কি করবেন? ওইতো হাত-পা বেঁধে স্টোর রুমে অন্ধকারে বন্ধ করে রাখার হু’মকি তাইতো?
সিরাতের ভ্যা’বলাসহিন ভাবে উত্তরে বিরক্ত লাগলো এবার সাফিনের। সিরাতের দিকে খানিকটা ঝুঁ’কে সিরাতের বসে থাকার দুইপাশের ফাঁকা জায়গাটাতে দুই হাত দিয়ে আঁ’টকে দিয়ে দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে বললো।
—তোমার সাথে ভালো আচারনটা ঠিক মানানসই নয় তাইনা সিরাত? আমি বারবার তোমার সাথে ভালো ব্যাবহার করতে যাই আর তুমি সেটাতে ডান হাত বাম ঢু’কিয়ে দিয়ে প্যাঁ’চাল করো আমার সাথে। গাঁধি কোথাকার।
সাফিনের কথা শুনে রাগে ফুঁ’সতে-ফু’সতে সিরাত কিছু বলার আগেই নিচ থেকে সকিনার চিৎ’কার-চেচা’মেচি শুনে ভর’কে গেল সাফিন। সিরাতের মনেও কেমন কাঁ’ম’র দিয়ে উঠলো যেন। সাফিন দ্রুত গতিতে নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যেতে নিতে সিরাত সাফিনের শার্টের কলারটা টে’নে ধরে নিজের মুখোমুখি নিয়ে এসে ধীর কন্ঠে বললো।
—আপনাকে কিছু বলার ছিল সাফিন।
—পরে শুনছি। এখন নিচে যেতে হবে। তুমিও আসো। কথাটা বলেই সাফিন দরজা খুলে চলে গেলে দীর্ঘশ্বা’স ছারল সিরাত। অজানা ভয়ে মেয়েটা কেমন চু’পসে আছে যেন। সকাল থেকেই শরীরটা কেমন ভালো ঠেকছে না তাঁর। তাঁর উপর সাফিনকে তাঁর মনের কথাটা না বলা পর্যন্ত মনের শান্তিও পাচ্ছে না যেন।
—এত অস্থি’র হচ্ছি কেন আজ আমি? তবে কি আবার কোনো নতুন ঝর আসতে চলেছে আমার জীবনে?
.
দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো সাফিন৷ বাড়ি পুরো খালি বললেই চলে। হুট করে ঘড়ির কাঁ’টায়-কাঁ’টায় ১২ টার ঘন্টা বেজে উঠলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হলো সাফিন। গেস্টরা তাহলে এতক্ষণে চলে যাওয়ার কথাই।
—এতটা বেজে গেছে! কথাটা ভাবতেই আজাদ সাহেবের রুম থেকে কয়েকজন চেনা কন্ঠের উত্তে’জিত হওয়া কন্ঠস্বর শুনে ঘা’বরে গেল সাফিন।
—নানুর কিছু হয়নি তো আবার? কথাটা ভেবে একপ্রকার দৌঁড়েই আজাদ সাহেবের রুমে প্রবেশ করলে বাড়ির সবাইকে সেখানে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে অবাক হলো সাফিন।
—আব্বা চোখ খুলেন? আল্লাহ কি থেকে কি হয়ে গেল রে খোদা? আপনি কিছু করছেন না কেন? (আজাদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে।) আরে কেউ ডাক্তার ডাকো আমার আব্বা এভাবে শুইয়া আছে কেন? আব্বা,আব্বাজান চেখ খুলেন।একবারটি চোখ খুলেন, দেখেন আপনার মাইয়া আমেনা আসছে আপনার কাছে।
নিজের আম্মা আমেনা বেগমের কান্নারত কন্ঠ শুনে থ’মকে গেল সাফিন৷ দ্রুত ভিতরে এসে নিজের নানুকে নিস্তে’জ হয়ে শুয়ে থাকতে উ’ত্তিজিত কন্ঠে বললো।
—কি হয়েছে এখানে? এখানে এমন ম’রা কান্না জুড়ে দিয়েছো কেন তোমরা? ড্যাড কি হয়েছে নানুর। “মোস্তফা সাহেবের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললে মোস্তফা সাহেব একরকম পা’থর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন যেন। মোস্তফা সাহেবের থেকে আশানুরূপ উত্তর না পেয়ে হ’তাশ হলো সাফিন।বললো।
— জুবায়ের তুমি তো অন্তত বলবে নানুর কি হয়েছে? বুড়ো আম্মা তুমিও! (কেউ মুখ থেকে টু শব্দও বের না করলে সাফিনের অস’হায় লাগছে নিজেকে এখন।) বললো।
—আরে কেউ আমাকে কিছু বলবে তো নাকি? দেখি ডক্টরকে ফোন করছি আমি। কথাটা বলেই নিজের পার্মানেন্ট ডক্টর হায়াতকে ফোন করে আসতে বলে আমেনা বেগমকে সরতে বলে নিজে আজাদ সাহেবের মাথার কাছে এসে বসে পরে পালস চেক করতে নিতে কোনো রেসপন্স না পেলে রু’হু কেঁ’পে উঠলো যেন সাফিনের।পায়ের ত’লা থেকে শক্ত মাটি যেন ধীরেধীরে সরে যেতে থাকলো সাফিনের। আজাদ সাহেবের চেহারাটা কেমন মৃদু নীলছে রাঙা আর ফ্যা’কা’সে হয়ে আছে যেন। শরীর কেমন ঠান্ডা বরফের মতো নিস্তে’জ হয়ে আছে।
—নানা জানে আর নাই সাহেব।
সকিনার কন্ঠ শুনে চোখ লাল হয়ে উঠলো যেন সাফিনের। আজাদ সাহেবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সকিনার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বললো।
— মুখ সামলে কথা বলো তুমি। আমার ইয়াংম্যানের কিচ্ছু হয়নি। কিচ্ছুটি হতে দেব না আমি তাঁর। ডক্টর আসলেই ঠিক হয়ে যাবে আমার ইয়াংম্যান।
সাফিনের এক ধ’মক শুনে কেঁ’পে উঠলো সকিনা৷ একপ্রকার ভাবে ঠিক করলো মুখে কু’লুপ এঁ’টে বসে থাকবে কদিন।
কিছুক্ষণের মধ্যে সিরাতও নিচে নামলে প্রথমেই ডক্টরের মুখোমুখি হবে ভাবেনি সে। বেশ অবাক হলো সিরাত।
আজাদ সাহেবের রুমের দিকে যেতে দেখে সেও তাঁর পিছু-পিছু চলে গেলে সবার চোখে পানি দেখে ঘা’বরে গেল সে।সাফিনের দিকে চোখ গেলে রীতিমতো ভয় পেয়ে গেল সিরাত সাফিনের এমনধারা রুপ এর আগে দেখেছে বলে মনে করতে পারছে না সে। র’ক্তিম চোখগুলো কেমন থ’মথমে হয়ে আছে তাঁর।
হায়াতকে দেখে সাফিন দ্রুত গতিতে নিজের জায়গা ছেড়ে দিয়ে উঠে হায়াতের শার্টের কলার টে’নে ধরে হাতের মুঠোয় নিয়ে পাগ’লের মতো করতে থাকলো যেন।
— আমি আমার নানুকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখতে চাই না হায়াত। আজকের মধ্যে কিভাবে কি করবেন সেগুলো আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না। আমি শুধু চাই আমার নানুজানকে।
সাফিনের এমনধারা আচারনে এই ঠান্ডার মধ্যেও কেমন ঘেমে উঠেলো হায়াত। জুবায়ের দ্রুত সাফিনকে টে’নে এনে সরিয়ে নিজের দিকে নিয়ে গিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—শান্ত হন আপনি স্যার। এভাবে করলে এখন কোনো লাভ হবে না। ডক্টর এসেছে এখন সে দেখুক।
জুবায়েরের কথা শুনে সাফিন যেন আরও রেগে উঠলো। রাগান্বিত কন্ঠে বললো।
— কিভাবে শান্ত হতে বলছো তুমি আমাকে জুবায়ের? আমি কিভাবে শান্ত হব? আমার নানু, ইয়াংম্যান এভাবে নিস্তে’জ হয়ে শুয়ে আছে আর তুমি আমাকে শান্ত হতে বলছো!
সাফিনের পা’গলামো বাড়তে থাকলে মোস্তফা সাহেব ছেলেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন নিজের বুকে। শান্ত কান্নারিত কন্ঠে বললেন।
— সাফিন চুপ করো এখন। শান্ত হও তুমি। তুৃমি হায়াতকে এনেছো আমরা কেউ তোমাকে বাঁ’ধা দেইনি। আমাদের দিকটাও একবার ভেবে দেখো তুমি।
মোস্তফা সাহেবের কন্ঠ শুনে একরকম ভাবে ভে’ঙে পরলো সাফিন।
—স্যার আপনারা সবাই যদি একটু জায়গাটা ক্লিয়ার করতেন তাহলে আমি নানুজানকে একটু চেক করতে পারতাম আরকি।
হায়াতের থেমে-থেমে কথা বলা শুনে মোস্তফা সাহেব সবাইকে চোখ দিয়ে ইশারা করতে সবাই চলে গেলে সাফিন না যেতে চাইলে মোস্তফা সাহেব কোনোমতে বুঝিয়ে-শুনিয়ে নিয়ে গেলেন তাঁকে।
“ড্রয়িং রুমে সবাই কেমন নিশ্চুপ হয়ে বসে আছেন যেন।” মৃদু স্বরে শুধু ভেসে আসছে কান্নার স্বর।কিছু না বুঝতে পেরে সিরাত ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো শুধু। মনের মাঝে কেমন একটা উথাল-পাতাল ঢেউ বইছে যেন তাঁর। সজাগ মস্তি’স্ক বেশ বুঝতে পারছে যে আজাদ সাহেবের কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কিছু বলতেও পারছে না সে। “কিছুক্ষণ পর হায়াত ভয়ে-ভয়ে বের হলে সাফিন তাঁর দিকে ছুটে যেতে হায়াত যেন আরও ভয় পেয়ে গেল।” এমনিতেই মন্ত্রীর বাড়ি এসেছে তাই নিয়ে ভয়ের শেষ নেই। তাঁর উপর মন্তীর ছেলের এমনধারা আচারন। আগে থেকেই সাফিনকে একটু বেশিই ভয় পেত হায়াত। মোস্তফা সাহেব ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে হায়াতের কাঁধে হাত রেখে ধীর কন্ঠে বললেন।
—যা হয়েছে নিশ্চিন্তে বলো। ভয় নেই তোমার।
মোস্তফা সাহেবের কথায় আস্থা পেলে মৃদুস্বরে বললো।
—হি ইজ ডেথ স্যার। নানুজান আর নেই।
হায়াতের কথাটা কানের কাছে এসে পৌঁছাতে থ’মকে গেল সিরাত। চোখের কোন বেয়ে মোটা-মোটা পানির রেশ বইতে থাকলো তাঁর। হাত-পা কেমন অবশ হয়ে আসলে পা ঢলে ফ্লোরে বসে পরলে আমেনা বেগম কান্নারত চোখেমুখে সিরাতের দিকে এগিয়ে এসে সিরাতকে জা’প্টে জড়িয়ে ধরে বললেন।
— আম্মাজান আমার বাপ ছিল না। শশুরবাড়ি এসে শশুরের কাছ থেকে বাপের ভালোবাসা পেয়েছি। আর আজ তাঁকেও হাঁড়িয়ে ফেললাম।
রাহেলা বেগম নিশ্চুপ হয়ে সোফায় বসে থাকলে সকিনা গ্লাসে করে পানি এনে তাঁর সামনে ধরলেন। যতই হোক মা বেঁচে থাকাকালীন ছেলের মৃ’ত্যু নিজ চোখে দেখাটা খুবই ক’ষ্টদায়ক।
—স্যার আপনার সাথে একটু কথা বলার আছে।
হায়াতের ধীর কন্ঠ শুনে মোস্তফা সাহেব চোখের পানি মুছে সাইডে চলে গেলেন তাঁকে নিয়ে।
সাফিন ধীর পায়ে আজাদ সাহেবের রুমের দরজার কাছে গিয়ে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়ালে আজাদ সাহেবের বন্ধ চোখদ্বয় দেখে বুকটা চিঁ’ড়ে যাচ্ছে যেন তাঁর। আশ্চর্য!সবার চোখের কোন বেয়ে পানি ঝরলেও তাঁর চোখে বিন্দুমাত্র পানি নেই। বরং র’ক্তিম বর্ন ধারন করে আছে যেন। হুট করে কাঁধের কাছে কারো স্পর্শ পেয়ে পিছু ফিরে তাঁকাতে জুবায়ের চোখের পানি মুছে বললো।
—স্যার আমি, জুবায়ের।
.
—কি বলবে দ্রুত বলো কোনো স’মস্যা আছে নাকি হায়াত?
মোস্তফা সাহেবের উদ্বি’গ্ন কন্ঠ শুনে হায়াত তাঁর শুকনো ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—স্যার এটা কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। নানুজানকে মা’র্ডা’র করা হয়েছে।
হায়াতের কথা শুনে রীতিমতো শক খেয়ে গেছেন মোস্তফা সাহেব। চোখগুলো বড়সড় রুপ ধারন করলে হায়াত বললো।
— স্যারের চেহারায় নোটিশ করেছেন কেউ? হালকা নীলছে রাঙা আফা দেখা যাচ্ছে। সম্ভবত বি’ষক্রিয়ার প্রভাবে এসব দেখা দেয়। ব্যাপারটা ভালো ঠেকেনি বিধায় টেষ্ট করেছি আপনাদের না জানিয়ে। সকালে রিপোর্ট পেয়ে জাবেন। তবে আমি এই মূহুর্তে বলতে পারছি এটা মা’র্ডার কেস। তাই আপনাকে সাইডে এনে বললাম।
মোস্তফা সাহেবের চোখমুখ কেমন পান’সে হয়ে গেল যেন। ধীর কন্ঠে হায়াতের উদ্দেশ্যে বললেন।
— কথাটা যেন এই মূহুর্তে সাফিনের কানে না পৌঁছায়। এমনিতেই আব্বার মৃ’ত্যুর খবর শুনে কেমন পাগ’লের মতো করছে আমার ছেলেটা। বাহিরেও পাঁচকান যেন না হয়। অনেকদিনের বিশ্বস্ত লোক কিন্তু তুমি।
—না-না স্যার। আপনি একদম নিশ্চিন্তে থাকুন।
মোস্তফা সাহেবের চোখেমুখে দুশ্চি’ন্তার ছাপ ফুঁটে উঠেছে যেন। কে এতবড় সর্ব’নাশটা করতে পারে তাঁদের? কে হতে পারে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি? “কথাগুলো ভাবতে- ভাবতে পিছু ফিরে হাঁটতে নিতে থ’মকে গেলেন তিনি।” সাফিনের রাগান্বিত মুখশ্রীর দিকে তাঁকাতে হায়াত মোস্তফা সাহেবের পিছনে ভয়ে আড়াল হয়ে দাঁড়ালে মোস্তফা সাহেব শীতল কন্ঠে বললেন।
— সাফিন?
সাফিন কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সেখান থেকে চলে গেলে দীর্ঘ’শ্বাস ছারলেন মোস্তফা সাহেব।
“ভোর শুরু হওয়ার নব দিনের উল্লা’সে বৃষ্টির রেশ অনেকটা কমে এলো যেন।” সারারাতে কারো চোখে কোনো ঘুম নেই। বৃষ্টির রাতেই মোস্তফা সাহেব জুবায়েরকে দিয়ে সবকিছু গুছিয়ে রেখেছেন।সরোয়ার সাহেবকেও কাল রাতে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর আব্বার মৃ’ত্যুর কথা। তিনিও ফ্লাইটে উঠে পরেছেন তখনই। সকাল ৮ টায় জানাজা পরানো হবে। আমেনা বেগম নিশ্চুপ হয়ে গেলে সকিনার সাথে হাতে হাত লাগিয়ে রান্নার দিকটা সামলাচ্ছে সিরাত। একেরপর এক আত্মীয়- স্বজনরাও আসতে শুরু করে দিয়েছেন রাত থেকে। এ বাড়িতে আবার মেডদের রান্না কারো মুখে তুলে না যে,সেটা খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছে একমাসে সিরাত। সেই রাত থেকে সাফিনের দেখা নেই। বুকের ভিতর অযা’চিত ভয়টা যেন আরও প্রবল হয়ে গেল আজাদ সাহেবের মৃ’ত্যুতে সিরাতের। লোকটা সত্যি খুব রশিক ছিলেন। এতটা ভালোবাসা আগে কখনো পাইনি সিরাত কারো কাছে। খুব ক’ষ্ট লাগছে সিরাতের। আজাদ সাহেব যে আর নেই এটা ভাবতেই কেমন কান্না এসে জমা হচ্ছে চোখে।
সকিনা দুধ গরম করে সিরাতের সামনে দিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—ভাবিজান দুধটুকু খাইয়ালন তাত্তারি। রাইত থিকা কিছু খান নায় আপনে।
সকিনার কন্ঠে হুশ ফিরলে চোখের পানি মুছে ধীর কন্ঠে বললো।
—বাড়িতে এখনও কেউ দানাটি পর্যন্ত কাঁ’টেনি।আর তুমি আমাকে খেতে বলছো? সিরাতের কথা শুনে সকিনা চুপ হয়ে গেল যেন।সিরাত রান্নায় মনোযোগ দিল।
.
সকাল-সকাল জুবায়েরকে নিয়ে হাসপাতালে হাজির হলে ভর’কে গেল যেন হায়াত। সাফিন হায়াতের কাঁধে হাত রেখে বললো।
— কালকের জন্য সরি। রিপোর্টের কাগজটা নিতে এসেছি।
সাফিনের সরি বলাতে জুবায়ের হা হয়ে গেল যেন। যে শাহনেওয়াজ সাফিন কখনো কারো কাছে মাথা নত করতে ইচ্ছুক ছিল না সে কিনা তাঁর নানুজানের মৃ’ত্যুতে এতটা ভে’ঙে পরেছে যে এখন কাউকে সরি বলতেও দ্বি’ধাবোধ করছে না!
হায়াত সাফিনের এ রকম শান্ত আচারনে পিলে চ’মকে গেল যেন। আলমারিতে গুছিয়ে রাখা ফাইল থেকে রিপোর্টের কাগজটা বের করে সাফিনের হাতে দিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— আমি এক্ষুনি যেতাম আপনাদের বাড়িতে।কিন্তু আপনি এসে পরলেন।যাইহোক, আমি যা সন্দে’হ করেছিলাম সেটাই সত্যি স্যার।নানুজানের খাবারে বি’ষ পাওয়া গেছে। এককথায় বি’ষাক্ত কোনো ক্যা’মিকাল। এর প্রভাব পেটে যাওয়ার সঙ্গে- সঙ্গে শুরু হয় না। বরং ধীরেধীরে শরীরে প্রবেশ করে সময় নিয়ে মানুষকে শেষ করে দেয়। খু’নি খুব ধুর’ন্ধর মনে হচ্ছে। মুখ থেকে পয়’জন বের হওয়ার সময় খু’নি বড় স্যারের পাশেই ছিলেন হয়তো। নয়তো পয়জ’ন দেখা যেত। যার কারনে আপনারা বুঝতে পারেননি এটা খু’ন।
হায়াতের কথা শুনে মাথা কেমন ঘুরে গেল যেন সাফিনের। রিপোর্টটাতে একবার চোখ বু’লিয়ে বললো।
— ধন্যবাদ আপনাকে। কথাটা বলেই সাফিন চলে গেলে জুবায়েরও তাঁর পিছুপিছু ছুটলো।
“গাড়িতে বসে আমেনা বেগম বারংবার ফোন করতে থাকলে সাফিন ফোনটা সুইচঅফ করে রাখলে জুবায়ের বললো।
—স্যার হয়তো কোনো কাজে ফোন করছেন ম্যাম।
— এখন আমার ওগুলো দেখার টাইম নেই জুবায়ের। আমার মাথায় এখন একটাই শব্দ ঘুরছে,ইয়াংম্যানের মৃ’ত্যুর প্রতি’শোধ নেওয়া। ওই জা’নোয়া’রটাকে আমি এমন ক’ষ্ট দিয়ে পৃথিবী থেকে সরাব যে,এমন ভ’য়া’নক মৃ’ত্যু ও কখনো কল্পনাও করনি কখনো।
সাফিনের রাগ দেখে কেঁ’পে উঠলো জুবায়ের।
বললো।
— কালকে বাড়িতে পার্টি ছিল স্যার। এতগুলো লোকের মাঝেই যে খু’নি লুকিয়ে ছিল এটা আমি নিশ্চিত। কিন্তু এতগুলো লোকের ভিতরে খুঁজে বের করাটা অনেক টা’ফ ব্যাপার স্যার। আর বি’ষটা যদি খাবারের সাথে মেশানো থাকে তাহলে সেদিকটা তো সকিনা ভালো জানবে।
জুবায়েরের কথা শুনে মৃদু হাসলো সাফিন। বললো।
— যে করেই হোক খু’নিকে আমার খুঁ’জে বের করতেই হবে। ওকে পায়ের কাছে না আনতে পারলে আমার আ’ত্মা শান্তি পাবে না। আমার কেন জানিনা মনে হচ্ছে এইযে একের পর এক খু’ন গুলো হচ্ছে এগুলোর খু’নি একজনই। জুবায়ের।
—জ্বী স্যার?
— তোমার ফোনটা দেওতো?
সাফিনের কথা শুনে পকেট থেকে ফোনটা বের করে হেলালকে ফোন দিলে ওপাশ থেকে হেলাল বলে উঠলো।
—হ্যা বলো জুবায়ের। এদিকে জানাজা শেষ হতে চলেছে নানুজানকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর তোমাদের কোনো খবর নেই। স্যার কোথায়? তিনি শেষ বারের মতোও কি নানুজানকে দেখবেন না?
হেলালের কথা শুনে সাফিনের চোখমুখ কেমন থ’মথ’মে হয়ে গেল। ধীর কন্ঠে বললো।
—সাফিন বলছি।
সাফিনের কন্ঠ শুনে হেলাল গলা ঠিক করে দ্রুত বললো।
—জ্বী স্যার, বলুন।
— কালকের পার্টিতে যে-যে মেনুগুলো ছিল সেই প্রত্যেকটা খাবার চেক করো দ্রুত। আর তাছাড়া পার্টির প্রত্যেকটা ভিডিও, পিক, সিসিটিভি ফুটেজ আমার চাই। সবকিছু রেডি রাখো আমি আসছি।
—আচ্ছা স্যার।
সাফিন ফোনটা কেঁ’টে দিয়ে হাইস্পিডে গাড়িটা চালু করে দিলে জুবায়ের বললো।
— কি করতে চাইছেন আপনি স্যার?
—সময় হোক,নিজেই দেখতে পাবে তখন।
.
শাহনেওয়াজ ভিলার সামনে গাড়ি এসে দাঁড় করাতে পরিবেশ থ’ম>থ’মে দেখে বেশ অবাক হলো সাফিন। গার্ডদের কাছে জিজ্ঞেস করতে তাঁরা বললো নানুজানকে অনেকক্ষণ আগেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতক্ষণে শুকনো চোখদুটি দিয়েও পানি ঝরে পরলো সাফিনের।
— শেষ বারের মতোও তোমাকে দেখতে পারলাম না ইয়াংম্যান? তোমার এই অবা’ধ্য নাতিটা আজীবন এই বো’ঝা বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে নানু। সাফিনের চোখ বেয়ে পানি ঝরতে থাকলে জুবায়ের নিজের চোখের পানি মুছে সাফিনের কাঁধে হাত রাখলে সাফিন জুবায়েরকে জা’প্টে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে- কাঁদতে বললো।
—আমি এর শেষ দেখে ছারব জুবায়ের। আমার ইয়াংম্যানের খু’নিকে আমি নিজ হাতে খু’ন করে ওর শরীরের প্রত্যেকটা অংশ শে’য়াল-কু’কুরকে খাওয়াব।
.
হুট করেই গগনের বি’ষন্নে ঘেড়া এলোমেলো ভাবে ভেসে চলা মেঘদ্বয় কালো রঙে আচ্ছাদিত হয়ে হিমেল হাওয়ায় বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সহিত শহরে ঝরে পরতে থাকলে কারেন্ট চলে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ অফ হয়ে গেলে অন্ধকার রুমটাতে সাফিন জুবায়েরের দিকে তাকাতে হেলাল জেনারেটরের লাইন অন করে দিলে জুবায়ের বললো।
— স্যার এভাবে কিভাবে বোঝা যাবে? নানুজান তো আর কম খাবার খাননি। বড় সাহেবও তো ছিল তাঁর সাথে। এফে’ক্ট তো একজনের উপর হবে না? যেহেতু দুইজনই একই সাথে খাবার খেয়েছেন।
— না স্যার খাবার ঠিকই আছে। সবগুলো খাবার চেক করিয়েছি মোহনকে দিয়ে। আমার মনে হয় কেউ ইচ্ছে করে একান্তই নানুজানের খাবারেই বি’ষটা মিশিয়ে দিয়েছে।
হেলালের কথা শুনে সাফিন ভ্রু জাগিয়ে ফেলল। বললো।
—রাইট হেলাল। আমারও সেটাই মনে হচ্ছে।
—জ্বী স্যার।
বেশ অনেকক্ষণ ধরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখেও কোনো ক্লু না পেলে বিরক্ত হলো সাফিন৷ হাতটা টেবিলের সাথে বা’রি দিতে ক্ষ’ত জায়গাটা থেকে আবারও র’ক্ত পরতে থাকলে জুবায়ের ভ’রকে গেল।
— কি করছেন স্যার? এটা কখন হলো। হেলাল দ্রুত ফাস্টএইড বক্সটা দেওতো।
হেলাল নিচে থেকে ফাস্টএইড বক্সটা নিয়ে আসলে সাফিনের হাতে স্যা’ভলোন লাগাতে ব্যাস্ত হয়ে পরলে ক্ষ’ত হওয়া জায়গাটা কেমন কাঁ’ম’রে উঠলো যেন সাফিনের। চোখ খিঁ’চে ব্যা’থাটা হজ’ম করে হাতটা সরাতে যেতে সিসিটিভি ফুটেজটা হাত লেগে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলে। সিরাতকে দেখা গেল একটা প্রিজে করে হালকা নাস্তা নিয়ে গিয়ে আজাদ সাহেবের দিকে বাড়িয়ে দিতে আজাদ সাহেব হেসে বলছেন।
—আরে নাতিবউ আর কত খাব আজকে আমি। এত খাবার পেটে সইবে তো নাকি আমার? সিরাতকে কেমন অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে। আজাদ সাহেবের কথার উওর না দিয়ে ধীর পায়ে রোবটের মতো চলে গেলে আজদ সাহেব এক চামিচ মুখে দিলে কেশে উঠলেন যেন। টি টেবিলের উপর থেকে পানি খেয়ে নিলে মোস্তফা সাহেবকে তারপাশে বসতে দেখা গেল তারপরে।
সাফিনের তিরিক্ষি চোখদ্বয় আজাদ সাহেবের ঝিমিয়ে যাওয়া চেহারাটা চোখ এড়াল না যেন। আবারও জুম করে প্রিজের খাবারটা দেখতে নিলে ফের্নি জাতিয় কিছু দেখে হেলালের উদ্দেশ্যে বললো।
—হেলাল মেনুতে কি ফের্নি বা মিষ্টি জাতিয় কিছু ছিল এই খাবারটা দেখো।
সাফিনের কথা অনুযায়ী হেলাল খাবারটার দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে বললো।
— স্যার এটাতো সকিনা ভালো বলতে পারবে।
—ওকে নিয়ে আসো এখানে।
— ওতো বাড়িতে নেই এখন। তবে হ্যা মোহন বলতে পারবে। ও খাবারগুলো চেক করেছে।
সাফিন দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললো।
—ফোন করো ওকে।
— আচ্ছা স্যার।
সাফিনের কথা অনুযায়ী হেলাল মোহনকে ফোন লাগালে ফোনটা সাফিন নিজের কাছে নিয়ে মেহনকে কিছু বলাতে না দিয়েই নিজেই আগে বলে উঠলো।
—একটা পিক পাঠাচ্ছি মোহন তোমাকে। দেখে বলো এটা পার্টিতে মেনু হিসেবে ছিল কিনা?কথাটা বলেই পকেট করে ফোনটা বের করে অন করে নিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পিক তুলে মোহনকে পাঠিয়ে দিলে মোহন দীর্ঘ সময় নিয়ে বললো।
—স্যার পার্টিতে মিষ্টি জাতিয় বলতে কেকটাই ছিল শুধু। নানুজান সুগারের রো’গী হওয়ায় বড় সাহেব নিজেই পার্টিতে কোনো মিষ্টি আনতে দেন নি। আপনি যে পিকটা পাঠিয়েছেন।এটাও মেনুতে ছিল না।
মোহনের কথা শুনে থ’মকে গেল সাফিন। হাত থেকে ফোনটা পরে গেলে জানালা ভেদ করে হিমেল হাওয়া এসে তাঁর সর্বা’ঙ্গে স্পর্শ করে গেল যেন। শুকনো ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিলে কণ্ঠনালী কেমন অবশ হয়ে আসতে চাইছে তাঁর।
—তাঁরমানে সিরাত….

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে