#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ১৯ (#স্পেশাল_পর্ব।)
গগনের বুকে আজ একরাশ বিষন্ন প্রহরে ছেঁয়ে আছে যেন। কালো মেঘের উ’ষ্ণতায় ঝরে চলেছে তাঁর তুমুল বেগে বর্ষনপাত। ঘড়ির কাঁটায়-কাঁটায় ১২ টা ছুঁইছুঁই। আজকেও সাফিনের দেখা নেই। একরাশ বিষন্নমাখা মুখদ্বয় নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতেভেজা গেটের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিরাত। সময়ের সাথে তালে-তাল মিলিয়ে প্রহরে প্রহর ঠেকিয়ে মাসের পর মাস পেরিয়ে গেছে সাফিনের সাথে সিরাতের অনিশ্চিত দম্পত্তি জীবনের। এই ক মাসেই সিরাত না চাইতেও একটু-একটু করে সাফিনের সাথে কেমন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে যেন৷ হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের সন্ধি মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে যেন তাঁদের৷ সাফিনের কেয়ার, কথাবলার ধরন, সাফিনের উষ্ণ’তাময় গভীর স্পর্শ,এগুলো যেন তাঁর সাথে এখন মানানসই হয়ে গেছে রীতিমতো। সিরাত নিজেও উপলব্ধি করতে পারে সাফিনও তাঁকে ভালোবাসে। কিন্তুহ, আর বেশি দিন নেই এক বছরের ডিলের গন্ডি পেড়িয়ে যাওয়াতে। খুব ভয় হচ্ছে এখন সিরাতের। সাফিন যদি সত্যি তাঁকে ছুঁ’ড়ে ফেলে দেয়। তখন তো এক নিমিষেই ভে’ঙে পরবে সিরাত৷ তাই নিজেকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে মনের জোর রেখে বুকে পাঁথ’র চা’পা দিয়ে আজ নিজেই তাঁর মনের কথাগুলো বলতে চেয়েছিল সাফিনকে। কিন্তু আজও সাফিন ঠিক টাইমে আসতে পারলো না। আফসোস হচ্ছে এখন সিরাতের।
— আজকেও আপনি ঠিক টাইমে আসলেন না সাফিন। আর আপনি কিনা বলেন আপনি টাইমের কাজ টাইমে করতে পছন্দ করেন!
কথাগুলো ভাবতেই কেমন হৃদয়ে এসে বা’রি খেয়ে যাচ্ছে সিরাতের। মাথাটাও প্রচন্ড বেগে ধরে আছে যেন তাঁর। সকিনা রাহেলা বেগমের নাম করে দুধের গ্লাস দিয়ে গেছিল সন্ধ্যাবেলা। এখন আর জোর করতে হয় না তাঁকে৷ দুধ খাওয়াটা বরং নেশা’য় পরিনত হয়ে গেছে সিরাতের৷ যেদিন খায়না বরং সেদিন নিজেকে পা’গল- পা’গল মনে হয় তাঁর।
কিছুক্ষণ পর ভিতর থেকে ফোনটা বেজে ওঠার রেশ কান ছুঁয়ে স্পর্শ করে গেলে বুকের ভিতরটা কেমন কেঁ’পে উঠলো সিরাতের।
—নিশ্চয়ই আপনি দিয়েছেন সাফিন।
খুশিতে উত্তে’জিত হয়ে একপ্রকার দৌঁড়েই রুমে এসে টি টেবিলের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে নাম না দেখেই কলব্যাক করে বলে উঠলো।
—আমি জানতাম আপনি টাইমে না আসলেও ফোন দিবেন সাফিন।
— শুভ জন্মদিন জানটা আমার৷ তোর প্রত্যেকটা দিন অনেক সুখের হোক৷ ইশ সিরাত, আমি ভেবেছিলাম এবার হয়তো আমরা একসাথে থাকব আর আমি তোকে ঘুম থেকে উঠিয়ে জড়িয়ে ধরে উইশ করব। কিন্তু হলো না। যাকগে, উইশ তো করেছি। অয়হোয়।
তোহা হেসে উঠলে সিরাতও মৃদু হাসার চেষ্টা করলো। তবে তোহার ফোন পেয়ে খুশি হলেও সাফিনের কথা ভেবে মনটা কেমন বি’ষিয়ে যেতে চাইছে সিরাতের। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে হেসে বললো।
— ধন্যবাদ জান৷ তাঁরপর বল, তোর কি খবর?
—আমার আবার কি খবর হবে? এইতো সকাল-বিকাল তোর সাথে কথা বলছি অফিস যাচ্ছি, খাচ্ছি-দাচ্ছি ব্যাস,চলে যাচ্ছে আমার। আচ্ছা এসব কথা রাখ, আগে বল তুই ঠিকঠাক ভাবে খেয়েছিসতো নাকি? নিজের যত্ন নিয়েছিস কিনা সেটা বল আগে?
হাসলো সিরাত। বললো।
—ওরে আম্মা আমার। আমার শাশুড়ী আমাকে খায়িয়ে-দায়িয়ে চুলটা পর্যন্ত খোঁপা করে দিয়ে তারপরে ঘুমাতে গিয়েছেন তিনি৷ আমাকে দেখার লোক আছে। তুই বল তুই খেয়েছিস কিনা?
তোহা বিছানা থেকে নেমে কানের কাছে ফোন হাতে নিয়ে ফ্রিজের কাছে গিয়ে ফ্রিজ খুলে আপেল বের করে খেতে-খেতে বললো।
— এই দেখ আমি এখনও খেতে-খেতে কথা বলছি তোর সাথে পাকনি।
—আচ্ছা হয়েছে-হয়েছে, এত রাত অব্দি আর জেগে থেকে শরীর খা’রাপ করতে হবে না তোকে। ফোন রাখ এখন। হেসে উঠলো তোহা। বললো।
—ইশরে,নানি আমার! আমাকেও জ্ঞান দিচ্ছে এখন।
—কানটা টেনে দেব বুঝলি। ঘুমা এখন।
—আচ্ছা জো হুকুম মহারানী। এখন আপনিও ঘুমান। তোহার কথা শুনে হেসে উঠলো সিরাত।
— তুই পারিসও বটে।
তোহা ফোন রেখে দিলে দীর্ঘশ্বাস ছারল সিরাত। বুকের ভিতর উথাল-পাতাল ঢেউ বইতে থাকলে চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো সিরাতের। কিচ্ছু ভালো লাগছে না তাঁর এখন। হুট করেই আবার ফোনটা বেজে উঠলে চোখে-মুখে খুশি এসে ভর করলে ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে নিতে সিম কম্পানি থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসলে রাগে মাথাটা কেমন ভার হয়ে উঠলো সিরাতের। পা ঢলে বিছানায় বসে পরে বিছানার চাঁদর শক্ত হাতে আঁ’কড়ে ধরালো। অনবরত চোখের পানি গাল বেয়ে ঝরে পরতে থাকলে রাগে দুঃখে হাতে থাকা ফোনটা ছুঁ’ড়ে ফেলে দিলে ফোনটা ভে’ঙে গু’ড়িয়ে টু’করো-টু’করো হয়ে গেলে তাঁর ভে’ঙে যাওয়ার শব্দ কানের কাছে সাজোরে এসে বা’রি খেয়ে গেল যেন।
ঘনঘন নিশ্বাস টানতে লাগলো সিরাত। এক অজানা অনুভুতি যেন ঝেঁ’কে বসেছে আজ তাঁকে৷
—আপনি সত্যিই খুব পাষাণ তাইনা সাফিন? স্বার্থপর মানুষ আপনি। আর আমিহ,আমি বড্ড বোকা যে কিনা আপনার মতো পাষাণ মানুষের সাথে না চাইতেও জড়িয়ে গেলাম।
সিরাতের কান্নাগুলো যেন দ’লা পাকিয়ে যেতে চাইছে আজ৷ তাঁর কান্নার আ’র্তনাদের স্বর এই অন্ধকার রুমটাতেই বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সহিত আঁ’টকা রয়ে গেল যেন।
.
বৃষ্টির পানি ঠেলেঠুলে ঝুম বৃষ্টি মাথায় করে সাফিনের গাড়ি শাহনেওয়াজ ভিলায় এসে দাঁড়িয়ে গেলে গার্ডরা গেট খুলে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরলে জুবায়ের সাফিনের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— স্যার আপনার শরীরে তো র’ক্ত লেগে আছে এখনও। ম্যাম এগুলো দেখে কিনাকি ভাবেন আবার৷ যাইহোক, লা’শটাকে মোহন আর হেলাল নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে এতক্ষণে।
জুবায়েরের কন্ঠ শুনে সাফিন মৃদু হাসলো। বললো।
— রাজনীতিতে এসব একটু-আধটু লাগবেই জুবায়ের। তোমার ম্যাম কোনো ফ্যাক্ট নয়। তাঁর কথা বাদ দেও। কিন্তু এই রাজবাড়ীর পিছনে একের পর এক লা’শ আসছে কিভাবে? কি রহস্য লুকিয়ে আছে এই রাজবাড়ির পিছনে। কি এমন আছে?
—স্যার এ ক মাসে মিনিমাম ১০ জন সয় কম লোকের লা’শ পাওয়া যায়নি রাজবাড়ির পদ্ম দিঘিতে। একেকজনের কাছে কমকরে হলেও দশটা করে ফোন ছিল। একেকবার একেক ফোন দিয়ে কথা বলেছে এক নম্বরে। কে কার সাথে কথা বলছে বা ম্যাসেজ করেছে, ফোনগুলো থেকে হয়তো কিছু তথ্য জানা যাবে। আমার তো ব্যাপারগুলো খুব একটা সহজ ঠেকছে না। একটা লেককেও আমাদের চেনা নেই!বেশ আশ্চর্য না ঘটনাগুলো। কেউ নিশ্চিত আপনার রাজবাড়ি পুলিশের রেটে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
—ফোনগুলো কোথায়?
—গাড়িতে আছে স্যার। ব্যাগে করে মোহন দিয়ে দিয়েছে৷ আপাদত বাড়িতে রাখি৷ বৃষ্টির ভিতরে আর জে’ম্মায় যাওয়া হবে না। মোহন আর হেলাল লা’শের ওখানে না গেলে ওরাই এতক্ষণে সব তদন্ত করতে পারত। বাকিদের খুব একটা বিশ্বাস হয়না৷ কথায় আছে ঘরের শ’ত্রু বিবিশন।
—হুম। আমার ব্যাক্তিগত রুমে রাখা যাবে। ওদিকটা খুব একটা যায়না কেউ। তুমি সারারাত বসে এগুলো ডিটেইলসএ বের করবে।
—আচ্ছা স্যার।
সাফিনের মাথা কেমন ঘোরপাক খেয়ে যাচ্ছে যেন। আর কিছু ভাবতে পারছে না আজ। গাড়ি থেকে নেমে পরলে গার্ডরা ছাতা হাতে দাঁড়ালে ছাতাটা সরিয়ে দিয়ে চোখদুটি বন্ধ করে বৃষ্টির উ’ষ্ণতা উপভোগ করতে থাকলো।
—স্যার ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যাবে। কিন্তু একটা কথা বলার ছিল।
জুবায়েরের কন্ঠ শুনে চোখ খুলল সাফিন। দীর্ঘ নিশ্বাস টেনে বললো।
— তুমি আবার কবে থেকে এসব পাতি ফর্মালিটি শুরু করেছো জুবায়ের। যাইহোক, বলো কি বলবে?
জুবায়ের গাড়ি থেকে ফোনের ব্যাগটা হাতে নিয়ে ফোনগুলো ভিজে না যায় তাঁরজন্য ছাতা হাতে নেমে পরলো গাড়ি থেকে। কিছুক্ষণ আমতা-আমতা করে বললো।
—আজ রাতে ম্যামের বার্থডে ছিল। এতক্ষণে ১২ টা ওভার হয়ে গেছে হয়তো।
মৃদু হাসলো সাফিন। আর চোখে জুবায়েরের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—তা তুমি জানলে কিভাবে শুনি?
—উম,না মানে তোহা ম্যাম বলছিলেন আরকি।
হাসলো সাফিন। বললো।
—বাহ,ইদানীং তোহার সাথে তোমার ভালোই কথা হয় দেখছি।
জুবায়ের মাথা চুলকালো। মাথা নিচু করে বললো।
—তেমন কিছু না স্যার৷ ওই জাস্ট…
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই সাফিন বাঁ’ধ সেধে বললো।
—হয়েছে-হয়েছে, আর এঞ্জাম্পল দিতে হবে না আমাকে। বাই দ্য ওয়ে,আমি অনেক আগে থেকেই জানি যে,আজকে আমার বউয়ের জন্মদিন।
জুবায়ের হা হয়ে গেলে সাফিন ভিতরে চলে গেলে জুবায়ের তাঁর যাওয়ার পানে তাকিয়ে একগাল হেসে উঠলো। তাঁরপর নিজেও চললো সাফিনের পিছুপিছু।
.
নিজের রুমের দরজাটা খোলা দেখে মৃদু হাসলো সাফিন।
—আমি জানি সিরাত, তুমি আমার উপর আজ বড্ড অভিমান করেছো। কিন্তু আমারও তো কিছু করার ছিল না সোনা। “কথাগুলো ভাবতে-ভাবতে অন্ধকার মিশ্রিত হলুদ রাঙা লাইটারের আলোয় ঘেরা রুমটাতে প্রবেশ করে ধীর চাহনিতে টি টেবিলের উপর মাথা ঠেকিয়ে বসে থাকা মেয়েটার দিকে তাকালো সাফিন৷” সামনে যেতে নিতে পায়ের কাছে কিছু একটা আঁচ করতে পেরে পকেট থেকে ফোনটা বের করে লাইট জ্বা’লিয়ে দেখতে নিতে ভা’ঙা ফোনের টু’করো গুলো দেখে হতাশ হলো সে। সাফিনের অ’স্তিত্ব টের পেয়ে সিরাত দ্রুত মাথা জাগিয়ে বিছানা হা’তরে বালিশ হাতে নিয়ে সাফিনের দিকে ছুঁ’ড়ে মারতে নিতে সাফিনের শরীরে র’ক্ত দেখে ভ’রকে গেল সিরাত। হুট করেই গলা শুঁকিয়ে আসতে চাইছে যেন সিরাতের। রাগও লাগছে প্রচুর। মনের কথা মনেই চা’পা রেখে পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে রাগ নিয়ে বালিশটা সাফিনের দিকে ছুঁ’ড়ে মারলে ক্যাঁ’চ করে নিল সাফিন। ভয় পাওয়ার সহিত লুক করে মৃদু হেসে বললো।
— ওরে বাপরে, বউ আমি তো আজকে বড্ড ভয় পেয়ে গেছি তোমাকে দেখে। লাইক শা’ক’চু’ন্নির মতো বসে ছিলে তুমি। এভাবে লাইট অফ করে রেখেছো কেন হুম?
সাফিনের কথা শুনে রাগ লাগলো সিরাতের। হাতের কাছে যা পেয়েছে সাফিনের দিকে ছুঁ’ড়ে মেরেছে আর সাফিন বারবার সরে গিয়ে তো কোনটা ধরে নিয়ে হাসিতে গ’ড়া>গ’ড়ি খাচ্ছে যেন।
— ব’জ্জা’ত লোক একটা। আবার কার সর্ব’নাশ করে এলেন হ্যা। এইসব রাজনীতি না কোন ক’ল্লা এগুলো না করলে কি হয়না আপনার?
—উফ সিরাত, এটাতো আমার কাজ তাইনা সোনা।
— বা’জে বকবেন না বলে রাখলো সিরাত। ভালো লাগছে না কিচ্ছু। ইচ্ছে করছে,ইচ্ছেতো করছে আপনাকে…
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই সাফিন সিরাতের দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বললো।
—বাসর করতে তাইতো? আহা কি রোমান্টিক বউ আমার।
—বাসর না আমার জু’তা৷ আপনি রাজনীতি ছেড়ে দিন।
সাফিন হেসে সিরাতের কাছে এসে হাতে থাকা বালিশটা বিছানার উপর রেখে বৃষ্টিতে ভেজা হাতে সিরাতের কপালে হাত রেখে বললো।
—শরীর খা’রাপ করছে তোমার তাইতো সোনা। চলো ঘুমিয়ে পরো।
রাগে ফুঁ’সতে থাকলো সিরাত। সাফিনের হাতটা সরিয়ে দিয়ে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললো।
— আমার শরীর ঠিকই আছে। আপনার ঠিক নেই। আম্মা কত আশা করে বসে আছেন আমার উপর যে, আমি আপনাকে এই রাজনীতির পথ থেকে সরিয়ে আনব আপনাকে। আপনি জানেন সেগুলো কিছু? বলছিতো রাজনীতি ছেড়ে দিন।
এতক্ষণে জুবায়ের রুমের কাছে এসে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলে সাফিন বললো।
—জুবায়ের ভিতরে আসো আর তোমার ম্যামকে হাসপাতালে এডমিট করার ব্যাসস্থা করো জলদি।
জুবায়ের মাথা নিচু করে মিটিমিটি করে হেসে ভিতরে এসে ফোনের ব্যাগটা এক সাইড করে রেখে দিয়ে চলে গেলে সিরাত রাগ নিয়ে বললো।
—কেন কি হয়েছে আমার? যে আমাকে হাসপাতালে এডমিট করতে বলছেন আপনি! হাসপাতালে তো পাঠানো উচিত আপনাকে।
হাসলো সাফিন। বললো।
—কিছুনা বেব্বি,জাস্ট মাথায় গ’ন্ডগোল আছে তোমার৷ তাঁরজন্য কিছুদিন হাসপাতালে থাকবে তাই আরকি।
সাফিনের কথা শুনে সিরাত সাফিনের দিকে তেড়ে আসতে নিতে শাড়িতে প্যাঁ’চ লেগে ফোনের ব্যাগটার সাথে ধা’ক্কা খেয়ে পরে যেতে নিতে সাফিন দ্রুত সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে নিলে ফোনগুলো ভে’ঙে যাওয়ার আওয়াজ শোনা গেলে সাফিনের মাথা হেট হয়ে গেল যেন৷ না পারছে সিরাতকে কিছু বলতে আর না পারছে সবটা গি’লতে।
— এখানে মিনিমাম ১০০ এর কাছাকাছি ফোন ছিল সিরাত। সবগুলো কাজের ছিল। আর তুমি তাঁদের মে’রে উপরে পাঠিয়ে দিলে। কাজটা কিন্তু ঠিক করোনি একদম।
—যা করেছি বেশ করেছি৷ আপনার কাজতো হবে ওই রাজনীতি-ফা’জনীতির। কথাটা বলেই সিরাত মুখ ভে’ঙালে সাফিন সিরাতের দিকে ধীর চোখে তাকিয়ে বললো।
— আজকে দিন বলে বেঁচে গেলে তুমি সিরাত। তুমি ১০০ টা কেন ২০০ ভা’ঙো ফোন তোমাকে কেউ না করত না। কিন্তু এগুলো কাজের ছিল। রাগ সামলাতে শেখো সিরাত। কথাগুলো বলে সাফিন ফোনের ব্যাগটা বের করে দেখতে নিলে প্রায় সবগুলেই ভেঙেছে কয়েকটা বাদে। কাঁ’থ হয়ে পরার কারনে এই দশা হলো ফোনগুলোর। সাফিন একটু জোরেই জুবায়েরকে ডাকতে থাকলে বেশ সময় নিয়ে জুবায়ের এসে ফোনগুলোর এই দশা দেখে চোখ বড়-বড় করে বললো।
—কিভাবে কি হলো? এটাই লাস্ট অপশান ছিল সূত্র খুঁজে বের করার।
সাফিন ব্যাগটাকে কোনোমতে উঠিয়ে সিরাতের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে বললো।
—রাতের বেলা শা’ক’চু’ন্নির উৎপাত হয়েছে আরকি। যাইহোক যে ফোনগুলো ঠিক আছে সেগুলো নিয়ে যাও আর যেগুলো মোটামুটি ভে’ঙেছে সেগুলো হেলালকে দিয়ে একটু ডাক্তার দেখিয়ে আনো। বাকিগুলো ফেলে দেও।
সাফিনের কথা শুনে হাসলো জুবায়ের। বললো।
—ওকেহ স্যার। ডাক্তার দেখিয়ে আনছি।
কথাটা বলে জুবায়ের চলে যেতে নিতে সাফিন বাঁধ সেধে বললো।
—দাঁড়াওতো জুবায়ের।
—জ্বী স্যার।
সাফিন গাঁয়ে থাকা সাদা রাঙা র’ক্তে লাল হয়ে যাওয়া শার্টটা খুলে জুবায়েরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো।
— এটাকে পু’রিয়ে দিও।
—আচ্ছা স্যার।
জুবায়ের চলে গেলে সাফিন দরজাটা ভেতর থেকে লক করে দিলে সিরাত রাগে চোখ নিচু করে রাখলো। বললো।
—ল’জ্জা করেনা একটা মেয়ের সামনে এভাবে শার্ট খুলে হিটলারের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে?
সিরাতের কথা শুনে হেসে উঠলো সাফিন।
দুষ্টুমির স্বরে বললো।
— আহা সোনা। তুমি মেয়ে কবে থেকে। অবশ্য মেয়েই বাট মহিলা। আমার বউ। আর আইন অনুযায়ী এখন আমি তোমার স্বামী। এসে জড়িয়ে ধরে চুমু খাবে, মাথায় বিলি কে’টে দিবে। মিষ্টি-মিষ্টি কথা বলবে, তা না খালি উল্টা-পাল্টা যত কথা আছে সব তোমার কাছেই পাব আমি। বড্ড বেরসিক তুমি সিরাত।
সাফিনের কথা শুনে রাগ নিয়ে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই সাফিন আলমারি থেকে টাওয়াল আর ট্রাউজার নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলে সিরাত রাগ নিয়ে সাফিনকে শুনিয়ে- শুনিয়ে বলতে লাগলো।
— আগে রাজনীতি ছেড়েছু’ড়ে তাঁরপর আমার কাছে আসুন। তাঁর আগে কিছু আশা করবেন না। আ’জা’ই’রা লোক যেন কোথাকার। আপনি সোফায় শুইয়েন আমি ঘুমাই গেলাম।
সিরাতের কথা শুনে হাসতে থাকলো সাফিন। বললো।
— আমার এত সুন্দর বউ আর এত সুন্দর খাট থাকতে আমি ওইসব সোফায়-টো’ফায় শুতে পারব না বাপু৷ সে তোমার ইচ্ছে হলেও তোমাকেও একলা শুতে দিচ্ছি না সিরাত। চুপচাপ আগের মতো মাঝখানে বালিশ দিয়ে ঘুমিয়ে পরো।
—হেহ আইসে।
—হুম আসতাছি ওয়েট।
— অস’য্যতো আপনি।
— হুম জানোইতো বিরক্তিকর লোক একজন আমিই।
সাফিনের কথার সাথে আর পেরে না উঠে মাঝখানে বালিশ দিয়ে শুয়ে পরলো সিরাত।
.
সকাল-সকাল পাখির কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভে’ঙে গেল সিরাতের। ঘড়ির দিকে তাকাতে ৫:৩০ ছুঁইছুঁই। বৃষ্টি শেষে সুন্দর এক সকালের শুরু হলো যেন। ঘাঁড় ঘুরিয়ে তাকাতে সাফিনের দিকে চোখ গেলে কেমন ঠোঁট উল্টে তাঁকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতন শুয়ে আছে যেন সাফিন৷ ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুঁটে উঠলো সিরাতের। শীতল হাতে সাফিনের এলোমেলো হওয়া ব্রাউন্ট রাঙা চুলগুলোতে বিলি কে’টে দিতে থাকলে হুট করেই হাতের দিকে চোখ যেতে সুন্দর একটা ডায়মন্ডের রিং অনামিকা আঙুলে চিকচিক করতে দেখে অবাক হলো সিরাত।
হাত দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে দেখে সাফিনের দিকে চোখ গেলে হাসলো সিরাত। সাফিনের নাকের ডগার উপরে থাকা লালচে রাঙা তিলটার দিকে তাকিয়ে রইলো অনেকক্ষণ।
—এ নিশ্চয়ই আপনার কাজ তাইনা সাফিন?
মৃদু হেসে সাফিনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে নিতে আঁচলে টান খেয়ে গেলে হাসলো সিরাত। পিছুফিরে সাফিনের দিকে তাকিয়ে নিজের আঁচলটা সাফিনের হাতে মুঠোবন্দি দেখে মৃদু হেসে সাফিনের দিকে খানিকটা ঝুঁ’কে ধীর কন্ঠে বললো।
— আপনি কখনো জানতেও পারবেন না সাফিন যে, আপনিও সিরাতের অ’স্তিত্বের সাথে গেঁ’থে গেছেন। #হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো সাফিন। উপস, সরি তুমি বলে ফেললাম আপনাকে। এটাকি খুব বেশি অপরা’ধের হয়ে গেল সাফিন?
কথাগুলো বলে নিজেই ল’জ্জা’য় পরে গেল সিরাত। শীতল হাতে সাফিনের হাত থেকে নিজের আঁচলটা ছাড়িয়ে যেতে নিতে টি টেবিলের উপরে নীল রাঙা খামের উপরে টকটকে লাল রাঙা একটা গোলাপ ফুল দেখে হাসলো সিরাত। ফুলটা হাতে নিলে তাজাই ঠেকছে সিরাতিতের। মনে হচ্ছে খুব সকালে সদ্য ফোঁটা ফুল গাছ থেকে ছিঁ’ড়ে তাঁরপর খুব যত্ন করে এনেছে কেউ।
খুশিতে চোখে পানি এসে ভর করলো যেন সিরাতের। ধীর চাহনিতে পিছু ফিরে একবার সাফিনের দিকে তাকিয়ে নীল রাঙা খামটা হাতে নিতে উপরে বড়-বড় অক্ষরে লেখা আছে
~জান। খামটা খুলে হলুদ রাঙা একটা কাগজ হাতে নিতে উপরে লেখা আছে শুভ জন্মদিন বউ। হাসলো সিরাত। খামটা হাতে নিয়ে বিছানা ছেড়ে আলমারি খুলে নিজের গোপন ডায়েরিতে ফুল সমেদ চা’পা দিয়ে রেখে আলমারির সাথে ঠে’স দিয়ে দাঁড়িয়ে ধীর কন্ঠে বলতে লাগল।
— আজকে আপনাকে হৃদয়ের কথাটা বলবোই সাফিন৷ কিন্তু স’ম’স্যা, আপনার সাথে কথা বলতে গেলেই তো ঝগ’ড়া লেগে যায় আমার। ধুর ভালো লাগে না।
.
ফ্রেশ হয়ে শাড়ি সামলে ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে গেলে সকাল-সকাল ডেকোরেশনের লোক গুলোকে ফুল দিয়ে পুরো বাড়ি সাজাতে দেখে অবাক হলো সিরাত। নিচে নামলে সকিনা টাইম অনুযায়ী দুধটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে একগাল হেসে রান্নাঘরে চলে গেলে ডাইনিংএ মোস্তাফা সাহেব আর আজাদ সাহেবকে বসে থাকতে দেখে হাসলো সিরাত। আজাদ সাহেব ফোনে সরোয়ার সাহেবের সাথে কথা বলছেন আর মোস্তফা সাহেবও তাতে তাল মেলাচ্ছেন। সেই জাবের এসে বাড়ি বয়ে খু’নের কেসটা নিয়ে আলোচনা করার পর সেদিনের ফ্লাইটটা মিস করলেও দুলালকে দেখিয়ে কেসটা ঘুড়িয়ে দেওয়ার কারনে পরের দিনই রাজবাড়ি হয়েই বিদেশে পারি জমিয়েছেন সরোয়ার সাহেব। কিন্তু রয়ে গেলেন রাহেলা বেগম। তিনি আর গ্রামে ফিরে গেলেন না।
সিরাতকে নিচে নামতে দেখে সকিনার সাথে হাতে হাত মিলিয়ে নাস্তা নিয়ে ডাইনিংএ রেখে সিরাতের দিকে এগিয়ে এসে মৃদু সাইডে নিয়ে মাথায় হাত বু’লি’য়ে দিয়ে বললেন।
— ঠিক লাগছে তো শরীর এখন?
অবাক হলো সিরাত। আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে সুধালেন।
—আমিতো অলওয়েজ ফিট। কিন্তু মাথা ভার হয়ে থাকে এই যা।তাছাড়া কি হবে?
আমেনা বেগম মুখ টি’পে হাসলেন। কন্ঠ ধীর করে বললেন।
— সকাল-সকাল তোর স্বামী আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে তাঁরপর পেইনকিলার নিয়ে গেছে আমার থেকে। আমার কাছে ল’জ্জা পেতে হবে না আম্মাজান। আমিতো মা নাকি? ডাইনিংএ বসে পর খাবার দিচ্ছি।
আমেনা বেগমের কথা শুনে আহা’ম্মক হয়ে গেল সিরাত।হা হয়ে তাকিয়ে থাকলে আমেনা বেগম চলে যেতে নিলে বাঁ’ধ সেধে বললো সিরাত।
— আম্মা বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান আছে নাকি? না মানে, এইযে এত সাজাচ্ছে!
— সন্ধ্যায় পার্টি আছে বাড়িতে। সকিনাকে দিয়ে শাড়ি পাঠিয়ে দেব সুন্দর করে পরে নিবি। আমি আজকে কাজে আছি রে আম্মাজান। অনেক গেস্টরাও আসবেন বুঝলি।
—কেন?
হাসলেন আমেনা বেগম। পিছুঘুরে সিরাতের দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে চুমু খেয়ে বললেন।
—অপেক্ষা কর নিজেই দেখতে পাবি।
মৃদু হাসার চেষ্টা করলো সিরাত।
“রাহেলা বেগম আজকে বেশ সময় নিয়ে ঘুম থেকে উঠলেন।” চোখগুলোও কেমন লাল টকটকে হয়ে তাঁর। মনে হয়না রাতে ঘুমিয়েছেন বলে। আমেনা বেগম বারবার করে বললেও এক্ষুনি খেতে বসলো না সিরাত। বরং তাঁদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে লেগে পরেছে। রাহেলা বেগম খাওয়ার পরে পান খাবেন বলে পান সেধে পাশে রাখলে রাহেলা বেগম তাঁর মোটা ফ্রেমের চশমাটা ঠিক করে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বললেন।
—ছেমরির সুবুদ্ধি হইছে তাইলে। আমেনা তোর পোলার বউর সুবুদ্ধি হইছেনি দেখতাছি।
আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললে হাসলেন আমেনা বেগম। সিরাতের দিকে তাকিয়ে বললেন।
—আলহামদুলিল্লাহ। আমার আম্মাজান।
সিরাত মাথা নিচু করে ফেললে উপর থেকে সাফিন তাঁর ব্রাউন্ট রাঙা চুলে সাই করতে-করতে নিচে নামলে আর চোখে সিরাতের দিকে তাকিয়ে থাকলে সিরাত সাফিনের দিকে চোখ করা করে তাকিয়ে চা’পা স্বরে বললো।
—এই পেইনকিলার দিয়ে কি করেছেন শুনি? নিশ্চই কালকে রাতে ওই রাজনীতি না কোন ক’ল্লা ওইসবে ব্যা’থা-ট্যা’থা পেয়েছেন? আর আম্মার কাছ থেকে আমার নাম করে নিয়েছেন যাতে আম্মার ঝা’ড়ি খেতে না হয়।
সিরাতের কথা শুনে ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি হাসলো সাফিন। সিরাতের কানের কাছে মুখ এনে শীতল কন্ঠে বললো।
— আহ্ বউ, আমিতো ওটা তোমাকেই খাওয়াতে চেয়েছিলাম। সাফিনের কথা শুনে বিরক্ত হলো সিরাত। বললো।
—আপনার ঢঙ্গে’র কথা শুনলে গা জ্ব’লে যায় বুঝলেন আপনি?
—উফ সিরাত,আমিতো তোমাকে আমার জন্য জ্ব’লতে দেখতেই চাই সুইটহার্ট।
— ম’রনদশা আমার। (কথাটা বলে সিরাত চলে গেলে হাসতে থাকলো সাফিন।) আমেনা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো।
—আম্মা নাস্তা দেও ঝটপট খাব আমি ফ’টাফ’ট।
সাফিনের কথা শুনে হেসে উঠলো সবাই। আমেনা বেগম বললেন।
— দিনকে দিন তুই কিন্তু বাচ্চাদের মতো হয়ে যাচ্ছিস সাফিন। ভুলে যাসনা এখন তোর বউও আছে। তুই এখন আর সেই বাচ্চাটি নেই।
—বাড়ির কোন কাজটায় আসেন শুনি আপনি? সারাদিন শুধু রাজনীতি আর রাজনীতি।
সিরাতের কথা শুনে সাফিন খানিক সিরাতের দিকে তাকিয়ে থেকে দুষ্টুমির স্বরে বললো।
— বাহরে বউ! তুমি এটা বলতে পরলা? এইযে তোমাকে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা চুমু খাই, আদর করি তোমার পিছনে পরে থাকি? এগুলোও কি কম কষ্টের কাজ?
সাফিনের কথা মাটিতে পরতে যতক্ষণ মোস্তফা সাহেবও সায় দিয়ে হেসে বললেন।
—কথায় যুক্তি আছে কিন্তু আমেনা। দেখছো একদম বাপকা বেটা।
— হ হবে না কেন, রতনে রতন চিনে আরকি।
আমেনা বেগমের কথা শুনে মোস্তফা সাহেব হাসলে রাহেলা বেগম বিরক্তি নিয়ে বললেন।
— ওই ছেমরা,কতা কম ক খাওয়ার সময়। এহিনে যে একজন বুড়ো মানুষ বইসা আছে হে’ডাকি চোহে পরতাছে না তোগো। পুরাই মাছ বাজার বানাই ফালাইছো বাড়িডা’রে।
রাহেলা বেগমের কথা শুনে হাসলো সাফিন। বললো।
— আরে মাই ডিয়ার জানেমন। তুমি বুড়ো হতে যাবে কেন? তুমিতো অনেক স্ট্রং তাইনা।
—সবগুলান বা’ন্দর বানাইছোত আজাদ। যেমন তুই হেমন তের পোলা আর নাতি।
আজাদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলতে থাকলে রাহেলা বেগম খাওয়া শেষ করে দ্রুত চলে গেলে সাফিনের কথা শুনে ল’জ্জায় পরে গেল সিরাত। কান থেকে যেন গরম ধোয়া বের হচ্ছে তাঁর।
—এই লোকের ল’জ্জা শ’রম যে কোনো কালেই নেই সেটা অনেক আগেই জানা ছিল সিরাতের। কিন্তু এতটাও বে’শরম ভাবেনি সিরাত। ল’জ্জায় মাথা হেট করে নিচু করে রাখলো সে।
.
নীলছে রাঙা আকাশে আজ কালো মেঘের আভাস। সন্ধ্যা নেমে পরে পাখিদের আপন নীরে ফিরে যেতে ব্যাস্ততা বাড়িয়ে দিয়েছে যেন। বাড়ি ভর্তি গেস্টরা একের পর এক চলে আসছে প্রায়। সকিনা নীল রাঙা শাড়ি বিছানার উপর রেখে গেছে অনেকক্ষণ। কালো রাঙা চাদর জড়িয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ধীর চাহনিতে আকাশের বিষন্নমাখা মুখদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে আছে সিরাত। হিমেল হাওয়ায় তাঁর কানের কাছে গুঁ’জে থাকা এলোমেলো চুলগুলো সমস্ত মুখশ্রী জুড়ে বারংবার বা’রি খেয়ে যাচ্ছে যেন। সাফিন ফ্রেশ হয়ে নীল-সাদা রাঙা শার্ট পরতে-পরতে সিরাতকে দেখার জন্য চোখ বো’লাতে থাকলে বারান্দায় গিয়ে চোখ আঁ’টকে গেলে ব্রাউন্ট রাঙা চুলগুলো পরিপাটি করে ধীর পায়ে সিরাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে সিরাতকে জড়িয়ে ধরে তাঁর উম্মুক্ত ঘাড়ের কাছে নাক ডুবিয়ে দিতে গরম উ’ষ্ণতা পেয়ে চোখ বন্ধ করে নিল সিরাত।
সাফিন ধীর কন্ঠে সিরাতের উদ্দেশ্যে বললো।
—রেডি হয়ে নিচে আসো সিরাত।
—আপনাকে কিছু বলার ছিল সাফিন।
দম বন্ধ করে কথাটা বলাতে সাফিন মৃদু হেসে বললো।
— পরে শুনছি। এখন নিচে আসো।
কথাটা বলেই সাফিন চলে গেলে চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো সিরাতের।
ধীর পায়ে রুমে আসাতে আমেনা বেগমও এসে হাজির হলেন। বললেন।
—কিরে আম্মাজান,তুই এখনও রেডিই হোসনি। তাঁরাতাড়ি রেডি হ আমি সাজিয়ে দিচ্ছি।
হাসলো সিরাত। শাড়ি হাতে ফ্রেশ হতে চলে গেলে আমেনা বেগম গোলাপ ফুল আর রজনীগন্ধা দিয়ে বানানো মালাটার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
” ভেজা চুল নিয়ে সিরাত ফ্রেশ হয়ে আসলে আমেনা বেগম একগাল হেসে সিরাতকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে হেয়ার ড্রয়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে দিয়ে সুন্দর করে খোঁপা করে দিয়ে একেরপর এক গহনা পরিয়ে দিতে থাকলে সিরাত বিষন্ন ভাবে মিররের দিকে তাঁকিয়ে রইলো শুধু। সিরাতের খোঁপায় গোলাপ আর রজনীগন্ধার মালাটা গেঁথে দিয়ে হাসলেন আমেনা বেগম। বললেন।”
—কি ভালো মানিয়েছেরে তোকে আম্মাজান।
আমেনা বেগমের কথা শুনে মৃদু হাসার চেষ্টা করলো সিরাত। আজকে মনটা কেমন যেন আনচা’ন-আনচা’ন করছে তাঁর সকাল থেকে।
অজানা ভয়ে যেন মিয়িয়ে যাচ্ছে সে। আমেনা বেগমের সাজানো হয়ে গেলে সিরাতের কাঁধে হাত রাখতে সিরাতের পা দুটো আপনা-আপনি চলতে শুরু করলে হাসলেন আমেনা বেগম। সিরাতের কাঁধে হাত রেখে তাঁকে নিয়ে সামনে আগাতে লাগলেন তিনিও।
.
~ কুছ খাছহে, কুছ পাছহে
কুছ আজনাভি এহ্সাছহে
কুছ দূরিয়া নাজদিকিয়া
কুছ হাসপারি তানহায়িয়া
কেয়া এ খুমারহে কেয়া আতবারহে
সায়াদ এ পেয়ারহে, পেয়ারহে সায়াদ
কেয়া এ বাহারহে কেয়া ইন্তেজারহে
সায়াদএ পেয়ারহে,পেয়ারহে সায়াদ…..
গিটারের টংটং আওয়াজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাফিনের মৃদু কন্ঠে গাওয়া গানের রেশটা যেন কাছের এসে বা’রি খেয়ে গেল সিরাতের। আর মাএ কয়েকটা ধাপ,তারপরই সিরাত সাফিনের মুখোমুখি হয়ে যাবে। সিরাত আর আমেনা বেগমের দিকে লাইটারের লাল-নীল আলো তাক করাতে সাফিনের শীতল চাহনিতে মা’তা’ল করাময় মুখশ্রী চোখ এড়াল না সিরাতের। নীল শাড়িতে ভাড়ি গহনায় হালকা সাজে সিরাতকে যেন মারা’ত্মক সুন্দর দেখতে লাগছে। সিরাতের গোলাপি রাঙা মুখশ্রী কেমন লাল বর্ন ধারন করে আছে যেন। এখন সাফিনের ভয় হচ্ছে। কেউ আবারনা তাঁর বউয়ের দিকে নজর দিয়ে ফেলে। কথাটা ভাবতেই নিজ মনেই হেসে উঠলো সাফিন।
—মাই কুয়িন।
” বাড়ি ভর্তি একগা’দা লোক সিরাতের দিকে গিফট হাতে এগিয়ে আসার আগেই সাফিন মনিটর অন করে দিলে সিরাতের সাথে সেই প্রথম দেখা থেখে প্রত্যেকটা পিক একেক করে সামনে ভেসে আসাতে অবাক হলো সিরাত।” সাফিনের দিকে বিষ্ময়মাখা মুখশ্রী নিয়ে তাকালে সাফিন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না দিয়ে সিরাতের হাত ডান্স করতে থাকলে সিরাতের ঘাড়ে তো কখনো গলায় সাফিনের স্পর্শ ছুয়ে গেলে দ্রুত চোখ বন্ধ করে নিল সিরাত। উপর থেকে গোলাপের পাপড়ি ঝড়ে পরতে থাকলে তাঁর মিষ্টি সুগন্ধ যেন নাকে এসে টান-টান ভাবে উষ্ণ’তা ছুঁয়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে।হুট করেই সাফিন সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে পাঁ’জাকোলা করে নিলে নিজেকে ভাসমান অনুভব করে পিটপিট করে তাঁরদিকে তাকাল সিরাত। সাফিন ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে গেলে তোহা সাফিনের কথা অনুযায়ী কেক নিয়ে হাজির হলে তোহাকে দেখে খুশিতে একরকম ভাবে সাফিনকে ছাড়িয়ে নিচে নামতে চাইলে হাসলো সাফিন।
সিরাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— সারপ্রাইজড সোনা। এত ছোটাছুটি করো কেন হুম!আমিই তো এনেছি নাকি তোহাকে? পালিয়ে তো আর যাচ্ছে না তোহা!
সাফিনের কথায় ভ্রুক্ষেপ না দিয়ে দ্রুত নিজেকে ছাড়িয়ে তোহাকে জড়িয়ে ধরলো খুশিতে।
— জান তুই এসেছিস।
হাসলো তোহা। সিরাতকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো।
— হুম জান। তোর জন্মদিন আর আমি আসব না। সেটিতো হচ্ছে না সোনা।
তোহার কথা শুনে হাসলো সিরাত। মিডিয়া এসে সিরাতকে ঘিড়ে ধরাতে সিরাত অপ্রস্তুত হয়ে গেলে সাফিন এসে শক্ত হাতে সিরাতের হাত নিজের হাতের সাথে আষ্টেপৃষ্টে ভাবে চে’পে রাখলে ধীর চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকাল সিরাত। সাফিন হাসলো শুধু। “একে-একে সবাই এগিয়ে এসে সিরাতকে উইশ করতে থাকলে গিফটগুলো জুবায়ের একটা টেবিলের উপর কারি করতে থাকলে তাঁকে দেখে হাসলো সাফিন।” দুষ্টমির স্বরপ বললো।
—বাহ,এই কাজটা তো দেখছি ভালোই পারো জুবায়ের। তা কে দিল এই কাজের দ্বায়িত্ব তোমাকে?
জুবায়ের ল’জ্জা পেয়ে গেলে সাফিন হাসলো। জুবায়েরের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে একটা বের করে মুখে দিলে জুবায়ের ম্যাচ দিয়ে জ্বা’লিয়ে দিতে-দিতে বললো।
— না মানে তোহা ম্যাম বলছিলেন তাই আরকি…
পুরো কথাটা শেষ করার আগেই সাফিন হেসে উঠলো। সিগারেটের ধোঁয়া অন্ধকারে উপরের দিকে উড়িয়ে দিয়ে বললো।
—থাক-থাক আর বলতে হবে না কন্টিনিউ করো আমি আমার বউকে দেখছি।
সাফিন চলে গেলে হাসলো জুবায়ের।
“অনেকক্ষণ পরে সিরাত একলা হয়ে গেলে তোহা সিরাতের হাত ধরে নিয়ে গিয়ে একটা কোনায় চেয়ার পেতে বসে গেলে হাসলো সিরাত। সিরাতের চোখে-মুখে হাসি দেখে তোহার মনটাও খুশি হয়ে গেল যেন। আবারও সিরাতকে জড়িয়ে ধরে সিরাতের কপালে চুমু খেয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— আজ তোকে খুশি দেখে খুব ভালো লাগছে সিরাত। বিশ্বাস কর জান।
তোহার কথা শুনে মৃদু হাসলো সিরাত। তোহাকে দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে রেখে দীর্ঘশ্বাস ছারলে তোহা সিরাতের কাঁধে থুত’নি ঠেকিয়ে শীতল কন্ঠে বললো।
—খুব ভালোবাসিস সাফিনকে তাইনা?
তোহার প্রশ্ন শুনে থ’মকে গেল সিরাত। এর কোনো উত্তর হয়না। কিন্তু বুকের ভেতরকার উথাল-পাতাল ঢেউ কিভাবে সংবরন করবে সে। হয়তোবা এই কথাটাই সত্যি যে, সিরাত সাফিনকে ভালোবাসে।
কি’ঞ্চিৎ পরিমান নিশ্চুপ থেকে মৃদুস্বরে উওর দিল।
—হুম। অনেক।
হাসলো তোহা।
—তাঁকে জানিয়েছিসতো নাকি?
সিরাতের চোখের কোনে পানি এসে ভর করলো যেন। সাফিনের সাথে তাঁর কেমন সম্পর্ক সেটা শুধু তাঁর আর সাফিনের মধ্যেই বরাদ্দ। এমনকি তোহাকেও পর্যন্ত জানতে দেয়নি সিরাত। কিন্তু আজ বড্ড উতলা লাগছে নিজেকে। হয়তো কোনো বি’পদের আগের পূর্বাভাস হবে এটা।
—খুব শিঘ্রই।
সিরাতের কথা শুনে তোহা হাসলো শুধু…..
চলবে….