#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ১৫
গগনের তুমুল বর্ষনপাতের আওয়াজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হুট করে গেটের সামনে গাড়ির হর্ণের আওয়াজ কানের কার্নিশ ঘেঁষে পৌঁছাতে ভ্রুদ্বয় কিঞ্চিৎ ভা’জ করে ফেলল সিরাত। চোখে মুখে যেন বিরক্তির রেখা ফুটে উঠছে তাঁর।
— কোন আ’হা’ম্মক আবার এই রাতের বেলা ছা’গলে’র মতো বাড়ির সামনে হর্ন বাজাচ্ছে!আ’জব কান্ডকারখানা সব।
সেফা আলু ধুয়ে এনে একটা করাইতে পানি ঢেলে আলু দিয়ে সেদ্ধ করার জন্য চরিয়ে দিয়ে বললো।
—আমি দেখতেছি আপা।
সেফা যেতে নিতে সিরাত বাঁ’ধ সেধে বললো।
—না থাক,তুমি রান্নাঘরে থাকো আমি দেখছি।
সেফা হেসে সিরাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে ফ্রিজ থেকে ডিম বের করে আলুর সাথে দিয়ে কাজে মন দিল।
.
সিরাত গেট খুলতে না খুলতেই বাহিরের বর্ষনপাতের রেশ ভিতরে ঠেলে প্রবেশ করতে চাইছে যেন। গেটের দুইপাশে পানি জমে গেছে পুরো। দক্ষিণা উত্রা হাওয়া সো-সো শব্দ করে বাড়ির ভিতরে ঢু’কে যেতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে আজ।
সিরাতকে দরজা খুলতে দেখে হর্ন বাজানো থামিয়ে দিল সাফিন৷ গাড়িতে লাগানো লাইটারের হলুদরাঙা আলো সাফিনের চোখে-মুখে ছেঁ’য়ে পরাতে সাফিনের ফর্সা তৈলাক্তময় চেহারাটাতে যেন আরও দ্বীগুন সুন্দর দেখতে লাগছে তাঁকে। সাফিনকে দেখে সিরাতের এতক্ষণের বুকের মাঝে জ্ব’লতে থাকা অনুভবটাতে পানি পরলো যেন৷ মনের শহরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঢেউ উথালপাতাল করে উঠতে চাইছে তাঁর৷ কিছুক্ষণ আগের বিরক্তিটা যেন নিমেষহীন ভাবেই উবে গিয়ে ভর করে বসছে একরাশ অভিমানের পেয়ালা।
—মিস্টার ব’জ্জা’ত? তাহলে ইনিই এতক্ষণ ছা’গলে’র মতো হর্ণ বাজিয়েছেন গেটের
সামনে। মৃদুস্বরে কথাটা আওরাতে রাগ লাগলো প্রচুর।এতক্ষণে শ’য়’তা’নটার আসার সময় হলো তাহলে?
ইদানীং সাফিনকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবা পরছে সিরাতের। সাফিনের প্রত্যেকটা কর্মকান্ডেই রাগ দেখানোটা কেমন অধিকারে পরিনত হয়ে গেছে তাঁর। ধীর চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকাতে বাঁকা হাসি হাসলো সাফিন। গাড়িটা লক করে দিয়ে গাড়ি থেকে নামতে নিতে হুট করে ফোনটা বেজে উঠলে ফোনের স্ক্রিনে আম্মা লেখা দেখে মৃদু হেসে ফোনটা রিসিভ করলো সে।বললো।
— কি বেড়ানো হলো তোমাদের? একেতো আমাকে না জানিয়েই বেড়াতে গেলে,তাঁরউপর বাড়ির সব মেডগুলোকেও ভাগিয়ে দিয়ে গেলে। এ নিশ্চয়ই নানুর কাজ। ভালো হলে না তোমরা৷ মতলব কি এঁটেছিলে বেশ বুঝতে পেরেছি আমি।
সাফিনের কথা শুনে হেসে উঠলেন আমেনা বেগম। বললেন।
— আরে ওসব কথা রাখ এখন। এখন কই আছিস তোরা সেটা বল। তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয় বুঝলি। তোর বুড়ো আম্মা এসেছেন গ্রাম থেকে। আমার মেয়েকে নিয়ে আয় জলদি৷ দেখবেন বলে সেই তখন থেকে বাড়ি মাথায় করে ফেলেছেন তিনি। জানিসইতো তিনি পুরোনো দিনের লোক।এসব ঘোরাফেরা খুব একটা পছন্দ নয় তাঁর। যখন যেটা বলবেন তখন সেটাতেই অটুট থাকেন সে।
ভ্রু জাগিয়ে ফেলল সাফিন। হাসির স্বরে বললো।
— ব্যাস হয়ে গেল। আমরা তো এখন তোহার কাছে আছি। তিনি আসার আর সময় পেলেন না নাকি! বয়স তো কম হলো না। একশো তিন পেড়িয়ে গেল৷ আমার সুপার বুড়ির হায়াত আছে বলতে হবে।
সাফিনের কথাটা মজা হিসেবে হলেও আমেনা বেগম কড়া ভাবে শাসালো সাফিনকে৷ বললেন।
— মার খাবি এখন আমার হাতে সাফিন। বড় হয়েছিস বলে ভাবিসনা যে, পার পেয়ে যাবি আমার হাত থেকে। বড়দের নিয়ে এভাবে ঠাট্টা করতে শিখিয়েছি আমি তোকে? এই শিক্ষা দিয়েছি এতকাল আমি তোকে?
—উফ আম্মাজান,ভু’ল হয়ে গেছে আমার। আমিতো জাস্ট মজাই করছিলাম নাকি? তুমি সিরিয়াসলি নিয়ে নিচ্ছো। আচ্ছা আর বলবো না সরি। এই কানে ধরলাম। হেসে উঠলেন আমেনা বেগম। বললেন।
—মনে থাকে যেন। তারাতাড়ি বাড়িতে আয় আমার মেয়েকে নিয়ে এখন।
—হুম আসছি।
ফোনটা কেঁ’টে দিয়ে শীতল দৃষ্টিতে সিরাতের দিকে তাকালে ক্ষনে- ক্ষনে বিদ্যুৎ চমকালে কিছুক্ষণ পর-পর পরিবেশ সাদারাঙা রুপ ধারন করে আবার মিয়িয়ে যাওয়াতে হীমেল হাওয়ায় সিরাতের কানের পিছনে গুঁ’জে থাকা এলোমেলো চুলগুলো উড়ে বেড়ালে সেদিকে খুব মনোযোগ সহকারে তাকালো সাফিন। এতক্ষণের জমে থাকা রাগ অভিমানগুলো এখন যেন মাথায় উঠে যাচ্ছে সিরাতের৷ একেতো শীতে সমস্ত শরীর কেঁ’পে-কেঁ’পে উঠছে। তাঁরউপর এতক্ষণ দরজার সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকাতে ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে যেন পা। কন্ঠটা একটু জোড়ালো করেই বললো।
— আপনাকে কি এখন বরন করে ঘরে তুলতে হবে আমার! একেতো এলেন রাত করে। তাঁর উপর খা’ম্বার মতো করে এক জায়গাতেই এঁ’টে বসে আছেন। রাতটা কি শেয়াল-কু’কুরের সাথেই কাটানোর প্লান আটছেন নাকি?
সিরাতের কথা শুনে হেসে উঠলো সাফিন। গাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টি ঠেকাতে মাথার উপর হাত দিয়ে হালকা দৌঁড় দিয়ে সিরাতের ঠিক সামনে এসে থেমে গেলে তাঁর দিকে রাগ নিয়ে তাকাল সিরাত। হাত দিয়ে বৃষ্টি ঠেকালেও খুব একটা লাভ হলো না সাফিনের। ব্রাউন্ট রাঙা চুলে বৃষ্টির উ’ষ্ণতা ছেঁয়ে যাওয়াতে হাত দিয়ে চুলগুলোতে সাই করে সিরাতের কোমরে গুঁ’জে থাকা শাড়ির আঁচলটা নিয়ে বৃষ্টিতে ভেজা মুখশ্রী মুছতে-মুছতে সিরাতের দিকে মৃদু ঝুঁ’কে দুষ্টুমির স্বরে বললো।
— উফ বউ। বরন করে না হোক, জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে গাঢ় চুমু খেয়ে নিয়ে যেতে পারো আমাকে। ডোন্ট মাইন্ড। আফটারঅল আমার একমাএ বউয়ের ইচ্ছে বলে কথা। নাও তো করতে পারিনা তাইনা? আচ্ছা যাইহোক গাড়িতে উঠে বসো এখন। আম্মা ফোন করে এক্ষুনি জরুরি তলপ করেছে তোমাকে।
সাফিনের প্রথমে বলা কথাগুলো শুনে বিরক্ত হলেও শেষে আম্মার কথা শুনে শ্বাস ছেড়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—খিচুড়ি রান্না করেছি বাড়ির জন্য নিয়ে যাবনে ভিতরে আসুন।
—ওসব এখন নিতে-টিতে হবে না তোমার। গ্রাম থেকে বুড়ো আম্মা এসেছেন তোমাকে দেখতে৷ এক্ষুনি না গেলে গ’ন্ডগোল পাকাবেন তিনি৷ তিনি একটু অন্য ধাঁ’চের মানুষ এমনিতেই। পুরোনো দিনের মানুষতো তাঁরজন্য।এমনিতে খোলা মনের মানুষ আছেন। কিন্তু তবুও তাঁর সামনে একটু সাবধানে থাকবে৷ এখন আর তাঁর সার্টিফিকেট দিতে চাইছি না কদিন মিশলে নিজেই বুঝে যাবে তিনি কেমন। দ্রুত গাড়িতে উঠে বসো এখন। সাফিনের কথার আ’গামা’থা খুব একটা বুঝতে পারলো না সিরাত। বললো।
—আরে ধুর। নিতে আসছি বললেই হলো নাকি? এত কষ্ট করে রান্না করলাম আর না খেয়েই চলে যাবেন আপনি?
সাফিন সিরাতের আঁচলটা ছেড়ে দিয়ে সিরাতের দুই কাঁধের পাশে হাত দিয়ে আগলে রেখে একগাল হেসে বললো।
—বাহ,বউ তারমানে আমার জন্য রান্না করেছে বলতে হচ্ছে। এই সোনা নিশ্চয়ই আমার প্রেমে পরে গেছো হুম, বলোনা সিরাত? প্লিজ,প্লিজ।
সাফিনের কথা শুনে রাগ রাখলো সিরাতের। কান থেকে ধোয়া বের হচ্ছে যেন। চটজলদি কাঁধ থেকে সাফিনের হাতদুটো সরিয়ে দিয়ে রাগে মিশ্রিত কন্ঠে বললো।
—বয়েই গেল সিরাতের আপনার মতো গোব’র মুখো লোকের জন্য রান্না করতে! আমিতো রান্না করেছি আমার জানের জন্য।
সাফিন ভ্রু জাগিয়ে ফেলল। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
— ওহ তাই নাকি? মাই ব্যা’ড লাক বলতে হয় তাহলে। আচ্ছা দ্রুত চলো এখন। নাকি কোলে নিতে হবে সেটা বলো?
—আরে ব্যাগটা তো আনতে দিন। তোহাকেও বলতে হবে।
—ওসব দেখার টাইম নাই এখন। বউ আমার সাথে যাবে এটাই আমি জানি। বাকি কথা এক কান দিয়ে ঢু’কেছে তো আরেক কান দিয়ে বের হয়ে গেছে।(কথাগুলো বলেই সিরাতের কোনো কথায় কান না দিয়ে পাঁ’জাকোলা করে নিয়ে বৃষ্টি মাথায় করে গাড়ির দরজা খুলে গাড়িতে বসিয়ে দিল তাঁকে।)
—আরে ধুর, অদ্ভুত লোকতো আপনি! আমার ব্যাগটা তো রয়ে গেল ভিতরে। আপনাকে সাধে আমি মিস্টার ব’জ্জা’ত ডাকি।(কথাটা মুখ ফস’কে বের হয়ে গেলে সিরাত দুইহাত দিয়ে মুখটা চে’পে ধরলে সাফিন তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সিরাতের দিকে তাকালে চুপসে গেল সিরাত। একটু বেশিই বলে ফেলেছে বোধহয় সে।)
—ধুর বলার আর সময় হলো না। এবার নিশ্চয়ই হতচ্ছা’ড়াটা আমাকে হাত পা বেঁধে রুমে আঁ’টকে রাখার হুমকি দিবে।(মনে-মনে কথাগুলো বলে ভয়ের দৃষ্টিতে সাফিনের দিকে তাকালে সাফিন সাজোরে গাড়ির দরজাটা খুলে থ’ম>থ’মে চেহারায় ড্রাইভিং সিটে বসে পরলো।) দাঁতে দাঁত চে’পে চি’বিয়ে-চি’বিয়ে বললো।
— আমি তোমার সাথে ফ্রীলি কথা বলতে চাই সেটা ভালো লাগে না তাইনা সিরাত? আমার রাগান্বিত চেহারাটা খুব বেশি ভালো লাগে তাইতো? আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি, শাহনেওয়াজ সাফিন ভালোতে ভালো আর খা’রাপে তুমুল খা’রাপ। যেটা হয়তোবা তোমার ধারনার বাহিরের জগৎ হবে।
সাফিনের রাগান্বিত কন্ঠে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। ভয়ে কয়েকটা ঢোক বেশিই গি’লে নিল সে। বাহিরে যতই নিজেকে সাহসী বড়াই করে না কেন, আসলে তো ভিতরে-ভিতরে ঠিকই সাফিনকে ভয় পায় সে।
.
হাই স্পিডে গাড়ী চালিয়ে শাহনেওয়াজ ভিলার সামনে গাড়ি এসে থামাতে সিকিউরিটি গার্ডরা ছাতা মাথায় করে গেট খুলে দিতে সিরাত একবার তাঁদের দিকে তো আরেকবার সাফিনের দিকে আর চোখে তাকাচ্ছে। পুরোটা রাস্তা এতটা হাই স্পিডে চালিয়েছে সাফিন যে নিজের নিশ্বাসের শব্দটা পর্যন্ত শুনতে পায়নি সিরাত। সাফিনের চোখগুলো কেমন রাগে লাল হয়ে আছে। তাঁর দিকে তাকাতেও এখন ভয় লাগছে সিরাতের। তাই চুপচাপ বসে রইল সে।
সাফিন গাড়ি থেকে নামতে হেলাল ছাতা হাতে এগিয়ে আসলে সাফিন সিরাতের দিকে না তাকিয়েই চলে গেলে মন খা’রাপ করলো সিরাতের। আমেনা বেগম ছাতা নিয়ে সিরাতের কাছে ছুটে এসে গাড়ি থেকে নামালে মৃদু হাসলো সিরাত৷ বললো।
—কেমন আছেন আম্মা।
—আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আমি। তুই কেমন আছিস? আচ্ছা ওসব পরে হবে আগে আমি কি বলছি সেগুলো মনোযোগ দিয়ে শোন, বাড়িতে আমার দাদি শাশুড়ী আসছেন বুঝলি৷ বেশ কিছুদিন থাকবেন এখানে। উনি একটু অন্য ধাঁচের লোক বুঝলি। ওনার কথাগুলো সব মেনে চলবি। আর বাকিসব আমাকে বলবি আমি বুঝিয়ে দেব। ওনার কথায় কিছু মনে করবি না বুঝলি। উনি আগেকার যুগের মানুষতো, গ্রামে থেকেছেন, তাই একটু কথা বলার ধরনটা আলাদা। এমনিতে মানুষটা খা’রাপটা না। তুই একবার মিশতে পারলেই হলো। বুড়ো আম্মা বলে ডাকিস কিন্তু।
আমেনা বগমের কথা শুনে সিরাত হেসে মাথা ঝাঁকাল শুধু। খুব করে বুঝতে পারছে যে এসেছেন তিনি এই বাড়ির বড় কেউ হবেন। তাঁর কথা সব শুনতে হবে।
.
শাহনেওয়াজ ভিলার ভিতরে পা দিতে না দিতেই আজাদ সাহেবের আম্মা রাহেলা বেগম লাঠিতে ভর দিয়ে চশমা পরা তিরিক্ষি চোখদ্বয় জাগিয়ে সিরাতের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন।
—ওই ছেমরি৷ বাড়িতে ঢোকবার সময় যে হাত-পাও ধুইতে হয় এগুলান শিখায় নায় তোর মায়। নাকি গাঁয়ে গো’তরেই বড় হইছিস খালি। কিরে সাফিন, তোর বউর ঘ’টে বুদ্ধি কম নাকি? এত শুকনা কেঙ্গা’রু মাইরা চোখে পরলো কেমনে তোর! এতো ঝর বন্যায়ই উইয়া যাইব গা।
রাহেলা বেগমের কন্ঠ শুনে সাফিন মৃদু হেসে বললো।
— তুমি এসে পরেছো যখন এখন নিজে গড়ে পিঠে নেও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। কথাটা বলে সাফিন হেলালের হাতে গাড়ির চাবিটা দিয়ে উপরে চলে গেল।
বাড়িতে ঢোকা মাএ রাহেলা বেগমের এরুপ আচারনে ঘাবরে গেল সিরাত৷ শীতল দৃষ্টিতে বৃদ্ধাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করে নিল। পরনে ঢিলেঢালা সাদা কাপড় পরিহিত৷ মাএাতিরিক্ত ফর্সা চেহারায় গোল ফ্রেমের মোটা চশমা। ঠোঁটগুলো পান চিবোনোর কারনে লাল লিপস্টিকের মতো দেখাচ্ছে। বয়সের ছাপটা যেন তাঁকে বেশ একটা আঁচ করতে পারেনি। হাতে থাকা লাঠিটাতে ভর দিয়ে পিঠের পিছনে হাত ঠেকিয়ে কপালে ভা’জ ফেলে তাকিয়ে রয়েছেন সিরাতের দিকে। ভদ্রমহিলা বয়সের তুলনায় স্ট্রিট আছেন বলতে হবে। আমেনা বেগম থ’ত’ম’ত খেয়ে গেলেন কেমন৷ রান্নাঘরে থাকা নতুন কাজের মেয়ে সকিনার উদ্দেশ্যে বললেন।
—সকিনা পানি দিয়ে যাও তো এদিকে, তোমার ভাবিজানের পা ধুয়ে নিক একটু।
সকিনা গামলায় করে পানি নিয়ে আসলে সিরাত গামলার ভিতরে দুই পা রেখে পা ধুয়ে নিয়ে পাপসে পা মুছে গামলাটা হাতে নিতে গেলে রাহেলা বেগম গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন।
—থাউক, তোর ওমন ধারা শরীর লইয়া আর গামলা জাগাইতে হইব না৷ শাড়ি ছাইরা দক্ষিণ কূলের ঘরের দিকে আইও। আমার হাত পা টি’ইপ্যা দিবা৷ এত্তর ডাঙ্গ’র ছেমরি লইয়া বাড়ির বাইরে ঘোরাঘুরি আমার এক্কেরে পছন্দ না। খবরদার যদি বাড়ির বাইরে এক পাও দিতে দেখছি আর। কথাগুলো বলতে-বলতে রাহেলা বেগম ধীর পায়ে হেঁটে যেতে নিতে উপর থেকে আজাদ সাহেব একগাল হেসে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন।
—আরে আইসা পরছিস তুই। আমি কখন থেকে বসে আছি তোর জন্য। আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আস গল্প করা যাবে দুজন মিলে।
আজাদ সাহেবের কথা মাটিতে পরতে যতক্ষণ রাহেলা বেগম গম্ভীর কণ্ঠে পিছু ফিরে বললেন।
— কিয়ের গপ্প কবি আবার আজাদ৷ শহরে আইসা তোর মাথা ভো’গে খাইছে নাকি? ওই ছেমরি, আইজ থিকা আমার খাওন থিকা শুরু কইরা পা টে’পা পর্যন্ত সব কাইম তোর। তুই করবি। কোনো কামের মাইয়া যেন আমার ঘরে না আহে। আমি ওইসব আ’কামে যাইনা।
সিরাতের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললে আমেনা বেগম কিছু বলার আগেই আজাদ সাহেব বলে উঠলেন।
—আম্মা,বাড়িতে এত মেড থাকতে নাতি বউ কেন করবে? দরকার পরলে আপনার জন্য আলাদা কাজের মেয়ে ঠিক করে দিচ্ছি আমি।
—ওই ছেমরা, তোর কাছ থিকা এহন আমারে জিজ্ঞেস করা লাগবে? আমি যেই’ডা কই’ছি ওইডাই হুনতে হইব।
আজাদ সাহেব আবারও কিছু বলতে নিলে সিরাত বাঁ’ধ সেধে বললো।
—আচ্ছা বুড়ো আম্মা। আপনি রুমে জান আমি শাড়িটা ছেড়ে আসছি। রাহেলা বেগম সিরাতের কথা শুনে তৃপ্তির হাসি হেসে খোঁড়াতে -খোঁড়াতে নিজের রুমের দিকে চলে গেলেন।
.
কোমরে আঁচল গুঁ’জে শাড়িটা মৃদু জাগিয়ে উপরে এসে সাফিনের দরজায় ধুরি এখন তো এটা সিরাতেরও রুম। তাই উঁকিঝুঁ’কি দিতে নিতে সাফিন ফ্রেশ হয়ে পরনে টাওয়াল পেঁচিয়ে বের হলে সিরাতকে উঁকিঝুঁ’কি দিতে দেখে টেবিলের উপরে সদ্য সকিনার রেখে যাওয়া কফির মগে চুমুক দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো।
— চোরের মতো উঁকি দিচ্ছো কেন তুমি সিরাত? ভিতরে আসো গাঁ’ধি।
—আপনার বউ হবে গাঁ’ধি,সিরাত না।
সিরাতের কথা শুনে হেসে উঠলো সাফিন। দুষ্টমির স্বরে বললো।
— ঠিকই বলেছো তুমি। আমার বউ শুধু গাঁ’ধি নয়, এক নাম্বার ছা’গল ও।
—হ্যা তাই। (কথাটা বলে রুমে ঢুকতে নিতে সাফিনের কথাগুলো মাথাচাড়া দিয়ে গেলে নিজের কথার জালে নিজেই ফেঁ’সে গেলে রাগে শাড়ির আঁচল মুখে গুঁ’জে ফু’স’তে থাকলে শব্দ করে হেসে উঠলো সাফিন।)
— আপনাকে তো আমি!
সিরাত সাফিনের দিকে তেড়ে আসতে নিতে সাফিন কফির মগটা টি টেবিলের উপর রেখে পরনের টাওয়ালটা চে’পে ধরে হাসতে-হাসতে সিরাতকে রাগানোর জন্য বললো।
—এই টাওয়াল খুলে যাবে কিন্তু বলে রাখলাম আমি। পরে কিন্তু আমাকে কিছু বলতে পারবে না তখন। এখন ভালোয়-ভালোয় বলছি পরে কিন্তু অন্য কিছু হয়ে যাবে সোনা।
সিরাত রেগে গেলে নাকের ডগা লাল হয়ে উঠলো যেন তাঁর। রাগের নিশ্বাস ছেড়ে বললো।
—আপনাকে পরেই দেখছি। নেহাত বুড়ো আম্মার রুমে যেতে হবে তাঁরজন্য বেঁচে গেলেন আপনি।
হেসে উঠলো সাফিন। হাসির স্বরে বললো।
—রাতে দেখিও জানস৷ তুমি চাইলে ক্রিকেট টিম বানিয়ে ফেলতে পারব।
— বা’জে লোক একটা। বিরক্তিকর।
(কথাগুলো বলতে-বলতে আলমারি থেকে কালো রাঙা শাড়ি হাতে ফ্রেশ হতে চলে গেল সে।)
সাফিন হেসে ভেতর থেকে দরজাটা আঁ’টকে দিয়ে সাদা রাঙা টিশার্ট আর হাফ ট্রাউজার পরে কফির কাপটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেল।
ঝুম বৃষ্টি পরছে শহরে। বর্ষনের রেশটা এক বিন্দুও কমেনি যেন। টিভিতে নিউজ দেখাল তাপমাত্রা আরও বাড়বে বয়ি কমবে না কদিন। মুশলধারা ঝড় বৃষ্টির মধ্যে কিছুদিন ফ্রীতে শীত উপভোগ করা আরকি।
হুট করে ভিতর থেকে ফোনটা বেজে উঠলে ঘাড়ের পেছনটাতে হাত বো’লাতে-বো’লাতে রুমে এসে ফোনটা হাতে নিলে জুবায়েরের নাম দেখে ফোনটা লাউডে দিয়ে কফির মগটা টি টেবিলের উপর রেখে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ওপাশ থেকে জুবায়েরের কন্ঠ শোনা গেল।
—স্যার রাজবাড়ীর পিছনের দিঘিটাতে নাকি বস্তায় বাঁ’ধা ম’রা লা’শ পাওয়া গেছে। খবরটা এখনও পাঁচকান হতে দেইনি। মোহন মাএ খবরটা দিল আমাকে। আপনার ফোনে নাকি ওর নাম্বার ডায়াল হচ্ছিল না। লা’শের বিষয়টা কেমন গন্ডগোলের ঠেকছে।
জুবায়েরর কন্ঠ শুনে ভ্রু জাগিয়ে ফেলল সাফিন। একের পর এক লা’শ পরে যাচ্ছে শহরে। এর পিছনের হাতটা যে খুব গ’ভীরে সেটা ঢের বুঝতে পারছে সে। চিন্তিত স্বরে বললো।
— লা’শটাকে খুলে দেখো চেহারা চেনা যায় কিনা। আর হ্যা, চিনলে ভালো আর চিনলে আরও ভালো। নদীতে ভাসিয়ে দেবে যাতে খবরটা কোনোমতেই মিডিয়ার কানে না পৌঁছায়।
—জ্বী স্যার।
—বাড়িতে কখন আসছো?
—আমি গ্যারেজে আছি গাড়ি নিয়ে। দশ মিনিটের ভিতরে আসছি।
সাফিন ফোনটা কেঁ’টে দিয়ে গভীর ভাবনায় তলি’য়ে যেতে নিতে দরজার আড়াল থেকে কাউকে সরে যেতে দেখে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সেদিকে তাকাল শুধু। বাহিরের ঝরের গতির থেকে তাঁর ভিতরে এখন অজানা রহস্যের ঝর বয়ে চলেছে। কে হতে পারে এই অজানা শ’ত্রু?
“সিরাত ফ্রেশ হয়ে বের হতে ভেজা চুলগুলো টাওয়াল দিয়ে ঝাড়তে থাকলে চুলের পানির ঝিরিঝিরি উ’ষ্ণতা সাফিনের চোখেমুখে ছেঁ’য়ে পরতে মৃদু হাসলো সাফিন। সিরাত মিররের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝারতে থাকলে সাফিন লাইটটা অফ করে দিতে বিরক্ত হলো সিরাত। কিছু বলার আগেই শাড়ির আঁচল ভেদ করে কোমরে কারো শীতল স্পর্শ পেতে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। বিরক্তির স্বরে বললো।
—কি করছেন সাফিন? ছাড়ুন আমাকে। আমার ডিমান্ডের কথা ভুলে বসে আছেন নাকি! বুড়ো আম্মার রুমে যেতে হবে পা’গলা’মি বাদ দিন এখন।
সিরাতের কথা শুনে হেসে উঠলো সাফিন। সিরাতের ঘাঁ’ড়ের কাছে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে মৃদুস্বরে বললো।
—যাচ্ছো যাও,আঁ’টকাচ্ছি না আমি। কিন্তু এখন ঠিক ১২:৪৫ মিনিট বাজে। তোমাকে আমি ১ টার আগে রুমে দেখতে চাই।
সাফিনের নিশ্বাসের গরম উ’ষ্ণতা সিরাতের ঘাঁ’ড়ের কাছে আছড়ে পরতে থাকলে চোখ খিঁ’চে রাখলো সিরাত। কোমর থেকে সাফিনের শক্ত হাতের বাঁধনটা ছাড়িয়ে দিয়ে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললো।
—বয়েই গেল আমার। (কথাটা বলে দরজা ঠেলে চলে যেতে হাসতে থাকলো সাফিন।)
সিরাত চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরই দরজার কাছে কিছু ভে’ঙে যাওয়ার আওয়াজ কানের খুব কাছ থেকে অন্তর্নিহিত হতে সাফিনের তিরিক্ষি চোখদ্বয় হুঁশি’য়ারি ভাবে দরজার কাছে এসে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে ভ্রু কুঁ’চকে ফেলল নিমিষেই। গাম্ভীর্যের সহিত বললো।
—তুমি এখানে…..
চলবে……