#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ১২
(❌ ভিতরে কিছু অশালীন ওয়ার্ড ব্যাবহার করা হয়েছে গল্পের প্রয়োজনে। তারজন্য ক্ষমাপ্রার্থী❌)
শাহনেওয়াজ ভিলার পিছন দিকের গেটের সামনে এসে সাফিন গাড়ি দাঁড় করালে সিরাত শীতে কাঁ’পতে-কাঁ’পতে পিটপিট করে সাফিনের দিকে তাকাল।
সাফিন সিরাতের দিকে ভ্রুক্ষেপ না দিয়ে বৃষ্টি ভেজা রাস্তার দিকে দৃষ্টি স্থির করলো। যেখানে অসময়ে ঝড়ে যাওয়া লালচে রাঙা পাতাগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পুরো রাস্তাজুরে।
পকেট হাতরে ফোনটা বের করে হেলালের ফোনে ফোন লাগিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—হেলাল বাড়ির পেছনের গেটটা খুলে দেও তো।
অবাক হলো হেলাল৷ বললো।
—স্যার আপনি এখনো আসছেন না কেন? গেস্টরা সবাই এসে পরেছে। আর পিছন থেকে কেন আসতে গেলেন! আচ্ছা এক্ষুনি আসছি আমি।
—আর শোনো,আমি যে বাড়ির পেছন থেকে আসছি এটা এক্ষুনি কাউকে বলার দরকার নেই বাড়িতে।
—আচ্ছা স্যার।
ঝমঝমিয়ে মুশল ধারা বৃষ্টির মধ্যে সাফিন গাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে পরে নিজের মাথাটা খানিকটা চে’পে রাখলো তাঁর। ঝিম ধরে গেছে যেন। সিরাত ধীর পায়ে নামতে নিতে পায়ে ব্যা’থা অনুভব করলে সেদিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকাতে পায়ের মোটা নুপুর বেয়ে র’ক্ত জমা’ট বেঁ’ধে গেছে দেখে খেয়াল করলো পা টা অনেকটা সেঁ’চে গেছে তাঁর। চলন্ত গাড়ি থেকে পরে সাফিনকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরলে এসব খেয়ালেই আসেনি সিরাতের।
সন্ধ্যা নামো-নামো অবস্থা। দিগন্তের কোন ঘেঁষে ভেসে যাওয়া কালো রাঙা মেঘদ্বয় যেন আজ ক্ষনে-ক্ষনে গর্জ’নপাত হওয়ার খেলায় মে’তে উঠেছে। ভয়ে চোখদ্বয় বন্ধ করে রেখেছে সিরাত।
” বাড়ির পেছনের দিকটাতে তেমন একটা আশা হয়না সাফিনের৷” মোটা-মোটা আমরুল গাছ দেখে সেদিকে ধীর দৃষ্টিতে তাকাল শুধু। গাছের প্রত্যেকটা পাতা বেয়ে ঝমঝমে বৃষ্টির উ’ষ্ণতা যেন ছেঁয়ে পরেছে শহরে।
পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে ম্যাচ দিয়ে জ্বা’লিয়ে মুখে দিয়ে ধোঁয়া উড়াতে থাকলে সিরাত সাফিনের দিকে ধীর চাহনিতে তাকালো শুধু। উঠতে ক’ষ্ট হচ্ছে তাঁর। এতক্ষণ বসে থাকাতে যেন ব্যা’থাটা আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তাঁর।
হুট করে হেলাল মৃদু আওয়াজে গেট খুলে দিতে সাফিন সিরাতের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে মৃদু হেসে তাঁর দিকে এগিয়ে গিয়ে পাঁ’জাকোলা করে নিল সিরাতকে। বৃষ্টির রিমঝিমে উ’ষ্ণতা তাঁর চোখেমুখে অনুভব করে বন্ধ চোখদ্বয় খুলে পিটপিট করে তাকাল সিরাত। সাফিন হেলালের দিকে চাবি ছুঁ’ড়ে দিলে হেলাল সাফিনের বিদ্ধ’স্ত মুখদ্বয় পরখ করে ভয়ের কন্ঠে বললো।
—আপনাদের এ অবস্থা হলো কি করে স্যার? এমন দেখাচ্ছে কেন আপনাদের? জুবায়ের কোথায়? আমি এক্ষুনি বড় সাহেবকে খবর দিচ্ছি।
হেলাল ব্যাস্ত হয়ে পরলে সাফিন ভ্রু জাগিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—ড্যাডকে এসব কিছু জানানোর দরকার নেই হেলাল। তোমাকে আমি পরে সব বোঝাব। আজকে বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে সিন’ক্রিয়েট হোক বা সবাই আমাদের নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরুক এটা আমি চাইছি না বলেই পেছন থেকে এসেছি। তুমিও স্বাভাবিক থাকো। গাড়িটা ওয়াশ করানোর ব্যাবস্থা করো আমি ভিতরে যাচ্ছি।
— আচ্ছা স্যার।
.
ঝর্ণার পানিটা ছেড়ে দিয়ে সাফিন সিরাতকে তাঁর নিচে দাঁড় করিয়ে দেয়ালের সাথে আঁ’টকে দিতে ঝর্ণার প্রত্যেকটা শিশিরকনা যেন সিরাতের সসস্ত শরীরে ছুঁয়িয়ে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে। সিরাতের ভেজা গোলাপি রাঙা চেহারাটা কেমন টকটকে লাল হয়ে রয়েছে ঠান্ডায়। লালচে ঠোঁটদ্বয় কাঁ’পতে থাকলে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল সিরাত।
বাঁকা হাসি হাসলো সাফিন। ধীর পায়ে সিরাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে আলতো হাতে সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে সিরাতের ভেজা চুলে নাক ডুবিয়ে দিতে হুট করেই সিরাতের বন্ধ চোখদ্বয় খুলে গেলে ক্লান্ত শরীরে নরতেও পারছে না সে। যথাসম্ভব সাফিনকে ঠেলে দিতে চাইলে সাফিন বাঁকা হাসি হেসে শীতল হাতে সিরাতের মাথার পেছনে চে’পে ধরে নাকের সাথে নাক ঠেকিয়ে সিরাতের লালরাঙা ওষ্ঠে ঠোঁট ডুবিয়ে দিতে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। চোখদ্বয় খিঁ’চে বন্ধ করে ফেললে নিশ্বাস ঘন হয়ে আসলো সিরাতের। সাফিনের হৃৎস্পন্দনের ধুকপুক শব্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিরাতের হার্টের গতি মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে যেন ক্রমশ। ঝর্ণার রিমঝিমে উ’ষ্ণতা সমস্ত শরীরে কাঁ’পুনি ধরিয়ে দিলেও সাফিনের নিশ্বাসের মৃদু তাপে যেন সিরাত নিজেও গাঁ’য়ের জোরে সাফিনের চুল আঁ’কড়ে ধরলো। দীর্ঘক্ষণ দুজনের নিশ্বাসের সঙ্গে নিশ্বাস স্পর্শ করে গেলে সাফিন সিরাতকে ছেড়ে দিয়ে উল্টোদিকে ঘুরে দাঁড়াল। কয়েকটা ঢোক গি’লে নিজেকে সামলে নিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
— এক মিনিটের ভিতরে ভেজা অবস্থা থেকে চেইঞ্জ করে বাহিরে বের হবে সিরাত। নয়তো আজকে একটা অঘ’টন ঘটে যাবে আমাদের মাঝে।
সাফিনের কথায় সিরাতের হুঁশ ফেরাতে নিজেই নিজের প্রতি বিরক্তি অনুভব করলো। ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজেই ছি’ড়ে ফেলতে। ল’জ্জা রাগ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলে সাফিন কালোরঙা শার্টটা খুলে ছু’ড়ে ফেলে দিয়ে টাওয়াল নিয়ে বেড়িয়ে গিয়ে সাজোরে দরজা আঁ’টকে দিলে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরতে থাকলো তাঁর।
.
কালো রাঙা সুট পরে চুলগুলো সুন্দরভাবে সাই করে রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে সাফিন। কিছুক্ষণ পর ধীর কন্ঠে রুমের ভিতরে থাকা সিরাতের উদ্দেশ্যে বললো।
—এখনও হয়নি তোমার? এত টাইম কেন লাগছে! নিচে সবাই ওয়েট করছে আমাদের জন্য৷ আর এক মিনিট দেখব তারপর তুমি যে অবস্থাতেই থাকোনা কেন আমি ভিতরে যেতে বাধ্য হব সিরাত।
লালরাঙা সিল্কি শাড়ি পরে চুলগুলো হাতখোঁপা করে খোঁপার উপরে রজনীগন্ধার মালাটা গেঁথে নিল সিরাত। সাফিনের কথার পাত্তা নিলে কিছুক্ষণ পর সাফিন বিরক্ত হয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে আসতে চেয়ার থেকে সিরাত উঠতে নিতে সাফিন হা হয়ে তাকিয়ে থাকলো শুধু সিরাতের দিকে। বাড়ি জুড়ে ঝাড়বাতির রঙবেরঙের আলো সিরাতের চোখমুখে উ’পছে পরাতে সিরাতের সাজহীন মা’য়াবী মুখশ্রী থেকে চোখ ফেরাতে পারলো না সাফিন। দীর্ঘক্ষণ দুটি চোখের মিলন হতে সাফিন ধীর পায়ে সিরাতের দিকে এগিয়ে আসতে নিতে সিরাতের গ’লা শুঁ’কিয়ে আসতে চাইছে যেন। আজকে সাফিনকে একটু বেশিই অন্য রকম ঠেকতে পারছে সে। বাঁকা হাসি হাসলো সাফিন। সিরাতের খুব কাছে গিয়ে তাঁর চোখে চোখ রেখে ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখা ভাড়ি-ভাড়ি গহনার ভিড়ে নরমাল একটা সেট সিরাতের গলায় জড়িয়ে ধরার সহিত পরিয়ে দিলে চোখ বন্ধ করে নিল সিরাত৷ সাফিন সরে যাওয়ার আগে সিরাতের ঘাড়ের কাছে গা’ঢ় করে কাম’ড়ে দিলে ব্যা’থায় আহ করে উঠলো সিরাত। হেসে উঠলো সাফিন। কাম’ড়ের জায়গাটাতে ঠোঁটের স্পর্শ ছুঁ’য়িয়ে দিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— তোমার এই রুপের আ’গুনে না চাইতেও প্রতিনিয়ত পু’রে ছার’খার হয়ে যাচ্ছে একজন। সে খবর থাকুক অজানা৷ অল্প সাজে গভী’র মা’য়ার ভিন্নতা জানা নেই এই শাহনেওয়াজ সাফিনের। কিন্তু তোমার চোখের ভাষা বোঝার সাধ্য কখনো হয়েও হয়ে উঠলো না আমার।
সিরাত সাফিনের কথার আ’গা>মা’থা কিছু না বুঝলে কিছু বলার আগেই সাফিন সিরাতকে পাঁ’জা কোলা করে নিলে সিরাত আর কিছু বলতে পারলো না সাফিনকে। ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে থাকলো শুধু তাঁর দিকে।
.
— শাহনেওয়াজ সাফিন আর তাঁর মিসেস শাহনেওয়াজ হাজির সবার সামনে।
সাফিনের হাসির কন্ঠের রেশ যেতে না যেতেই হেলাল লাইটারের আলো সিঁড়ির দিকে তাক করলে গেস্টরা সবাই তাঁদের দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো যেন। সাফিনের কোলে বসেই এভাবে সবার সামনে চলে আসাতে ল’জ্জায় ম’রে যেতে ইচ্ছে করছে সিরাতের। কিন্তু পায়ে ব্যা’থার কারনে নড়তেও পারছে না সে। সাফিনের বুকে মুখ লোকালে সাফিন হেসে ধীর কন্ঠে বললো।
—উফ সিরাত। তোমার এই লাজুক-লাজুক ভাবটা না জাস্ট ওয়াও। ইচ্ছে করছে সবার সামনে চুমু খেয়ে তোমার লাজুকতা আরও বাড়িয়ে দেই৷
সাফিনের কথা শুনে নিমিষেই যেন সিরাতের কান গরম হয়ে উঠতে থাকলো। দাঁ’তে দাঁ’ত চেঁ’পে রাগে ফুঁ’সতে-ফুঁ’সতে বললো।
— চুপ থাকবেন নাকি আমি এখান থেকে চলে যাব এখন।
বাঁকা হাসি হাসলো সাফিন। বললো।
—উপস জান, তুমি ভাবলে কিভাবে এভাবেই তোমাকে আমি চলে যেতে দেব। আমাকে যেন তুমি কয়টা চর মেরেছিলে? মনে পরে তোমার? আজকে তাঁর ঝা’লটা এমন ভাবে মে’টাব যে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না সেটা৷
ভয়ে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। সাফিনের হাস্যজ্বল মুখশ্রীর দিকে তাকাতেও যেন এখন ভয় হচ্ছে তাঁর। এই হাসির পেছনেও নিশ্চয়ই কিছু লুকিয়ে রয়েছে তাঁর।
.
সিরাতকে নিয়ে নিচে নামতে উপর থেকে লালরাঙা গোলাপের পাপড়ি ঝড়ে পরাতে ধীর চাহনিতে সেদিকে তাকালো সিরাত। পুরো বাড়িটা এতটা সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে যে এগুলো সিরাতের কল্পনার বাহিরের জগৎ মনে হচ্ছে এখন। সাফিন সিরাতকে শীতল হাতে কোল থেকে নামিয়ে দিলে ক্যামেরা ম্যান পিক তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে তাঁকে নিয়ে যেন। সিরাত ধীর চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকাতে সাফিন হেসে খাবারের দিকে চলে গেলে আমেনা বেগম সিরাতের দিকে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন সিরাতকে। একগাল হেসে বললেন।
—মাশাআল্লাহ। আমার মেয়ে না সাজলেও সবার সেরা। চল সবার সঙ্গে আলাপ করাই তোর৷ মৃদু হাসলো সিরাত। পায়ে ব্যা’থার কারনে নড়তেও পারছে না আবার না নড়ে থাকতেও পারছে না। ব্যা’থাটা চে’পে গিয়ে আমেনা বেগমের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে সামনে আগাল সিরাত৷
“ড্রিংসের গ্লাসটা মুখের সামনে ধরতে সরোয়ার সাহেব হেসে সাফিনের দিকে তাকিয়ে গ্লাসটা ধরে নিতে মৃদু হাসলো সাফিন।”বললো।
—ক্লা’ন্তি সারাবার ঔষধ আরকি। জীবনে আর যাই হই না কেন, ক্লা’ন্তির কাছে কখনো নিজেকে হা’র মানতে দেইনা চাচ্চু।
সরোয়ার সাহেব হেসে সাফিনের পিঠ চা’পরে বললেন।
—এটাই তো চাই সাফিন বেটা।
সাফিন হাসলো। সরোয়ার সাহেবের হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে এক ঢোকে শেষ করে ফেলতে সরোয়ার সাহেব হেসে যেতে নিতে সাফিন বাঁ’ধ সেধে বলে উঠলো।
—চাচ্চু তোমার সাথে যে ওই লোকটা এসেছিল না বিদেশ থেকে। তাঁকে তো দেখছি না? আমাদের গেস্ট বলে কথা, আর পার্টিতে না থাকলে হয়!
—দুলালের কথা বলছো? ওহ আচ্ছা, ও একটু বেড়িয়েছে সকালে। বলছিল স্যার আপনাদের শহরটা একটু ঘুরে দেখতে চাই। বিদেশ বিভূঁইয়ে তো এতকাল ঘুরলাম এখন একটু দেশে ঘোরা যাক৷ আমিও আর আঁ’টকালাম না।
হাসলো সাফিন। বললো।
—ওহ আচ্ছা। থাকো তাহলে, আমি আমার বউয়ের সাথে একটু ডুয়েট ডান্স করে আসি।
কথাটা বলে সাফিন বাঁকা হাসি হেসে সামনে আগালে সরোয়ার সাহেবও আর দাঁড়ালেন না সেখানে।
.
—আমার হাতের বন্দু’কটা দেখতে পাচ্ছো তো তুমি?
অন্ধকারে চেয়ারে বসা হুডি পরা লোকটার কথা শুনে সামনে থাকা লোকটা কেঁ’পে উঠলো যেন। কয়েকটা ঢোক গি’লে কান্নারত কন্ঠে বললো।
—হ্যা সাহেব, সরি সাহেব। আমি আপনার কথা মতো সাফিনের গাড়ির ব্রেকফে’ল করেছিলাম সাহেব। কিন্তু বুঝতে পারছি না এ জী’বিত কিভাবে ফিরলো এখানে। আমার হিসেবে ওর এখন সোজা উপরে থাকার কথা।
অন্ধকারের লোকটা হেসে উঠলো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—তুমি কি নিজে বো’কা হচ্ছো নাকি আমাকে বো’কা বানাচ্ছো কোনটা?
—না সাহেব। আর একটা সুযোগ দিন শুধু,এবার আর ভুল হবে না। অন্ধকারের লোকটা হেসে চেয়ার ছেড়ে উঠে লোকটার চারপাশে ঘুরতে-ঘুরতে বলতে লাগল।
—একটা ঘোড়া, দুইটা ঘোড়া, তিনটা ঘোড়া সই,চারটা ঘোড়া হয়ে গেলে তোমার ঠিকানা কই? হাহাহা। সাফিন যাইনি তো কি হয়েছে? তুমি নিজেই এখন উপরে চলে যাও৷
কথাটা বলার সঙ্গে- সঙ্গে ঝমঝমে বৃষ্টির সহিত গু’লির বি’কট শব্দে ছেঁয়ে গেলে অন্ধকারের লোকটা মাটিতে লু’টিয়ে পরলে সামনের লোকটা হেসে উঠলেন। পাশে থাকা আর একটা লোকের উদ্দেশ্যে বললেন।
— লা’শটাকে কেঁ’টে বস্তায় বেঁ’ধে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়ে আসো৷ যাতে এর অস্তি’ত্ব সমুদ্রের অতলে ত’লিয়ে যেতে পারে।
—জ্বী স্যার।
হেসে উঠলো লোকটা।
.
~ আজ ফের তুমপে পেয়ার আয়াহে
বে হাদ অর বে সুমায়ারাহে…..
গানের সাথে তালে তাল মিলিয়ে সাফিন সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে আনতে সিরাত চোখ বড়-বড় করে তাকাতে সাফিন বাঁকা হাসি হেসে সিরাতকে গাঁ’য়ের জোরে ঘুড়িয়ে আনতে গিয়ে সিরাত পরে যাওয়ার আগেই একহাতে সিরাতের আঁচল এড়িয়ে কোমরে স্পর্শ করে গেলে সিরাত ভয়ে চোখ খিঁ’চে রাখলে সাফিন খানিকটা সিরাতের দিকে ঝুঁ’কে সিরাতের কাঁ’পা>কাঁ’পা ওষ্ঠে কা’ম’ড়ে দিলে সিরাত চোখ বড়-বড় করে সাফিনের দিকে তাকালে সাফিন হেসে উঠলো। সিরাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে শীতল কন্ঠে বললো।
—সবে তো শুরু জানস। আগে-আগে দেখো হোতাহে কেয়া?
সিরাত সাফিনের দিকে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালে সাফিন সিরাতকে সোজা ভাবে দাঁড় করিয়ে দিলে সিরাত শাড়ি সামলে সাফিনের দিকে রাগ নিয়ে তাকিয়ে বললো।
— যা দেখাবার দেখান গিয়ে। এক হাতে তালি বাজে না মিস্টার শাহনেওয়াজ সাফিন।
—ওয়াহ, দেখা যাক বেব্বি। সাফিন হেসে উঠলে আজাদ সাহেব হেসে তাঁদের দিকে এগিয়ে আসলে সাফিন আজাদ সাহেবের হাত ধরে এগিয়ে আনলে মোস্তফা সাহেব তাঁর গেস্টদের সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত হয়ে পরলেন।
আদাজ সাহেব ধীর কন্ঠে পাশে থাকা মোহনের উদ্দেশ্যে বললেন।
—মোহন ফাইলটা দেওতো।
—জ্বী স্যার।
মোহন ফাইলটা এগিয়ে দিলে আজাদ সাহেব মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়ে বলতে লাগলেন।
—আমাদের পরিবারের ঐতিহ্য ৩০ বছরের পুরনো রাজবাড়ী। যার দাম এখনও অব্দি ৫০০ কোটি টাকা৷ আমি মো. আজাদ আজ থেকে ওই রাজবাড়ী আমার একমাত্র নাতী শাহনেওয়াজ সাফিনের নামে লিখিত করে দিলাম৷
আজাদ সাহেবের কথা শুনে সবাই তাঁর দিকে তাকিয়ে হাতহালি দিতে থাকলে হেলাল মনিটর অন করে পুরো রাজবাড়ীটা ঘুড়িয়ে-ঘুড়িয়ে দেখাতে থাকলে সবাই সেদিকে হা হয়ে তাকিয়ে থেকে বলাবলি করতে থাকতে আজাদ সাহেব হেসে ফাইলটা সাফিনের হাতে তুলে দিলে প্রশান্তির হাসি হাসলো সাফিন। সিরাত মনিটরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে সাফিন ভ্রু জাগিয়ে হেসে উঠলো।
—এত দিনের খেলাটা নাহয় এখন সামনা-সামনি খেলা যাক। দেখা যাক কে জিতে আর কে হারে। (কথাটা মনে-মনে বলে হেসে উঠলো সাফিন।)
এতক্ষণে জুবায়ের উইল চেয়ারে করে তোহাকে নিয়ে আসলে সিরাতের চোখেমুখে খুশিতে ভরে উঠলো যেন। দৌঁড়ে তোহার কাছে ছুটে গেলে হাসলো সাফিন। জুবায়ের সাফিনের দিকে এগিয়ে এসে পকেট থেকে বন্দু’কটা বের করে সাফিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে চাঁ’পা কন্ঠে বললো।
— স্যার লোকটা কে জানতে পারিনি। কিন্তু খবর আছে।
—কি খবর দ্রুত বলো?
জুবায়ের ধীর কন্ঠে বললো।
—মাএ নিউজে দেখলাম একটা লোককে কেঁ’টে বস্তায় বেঁ’ধে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে নাকি। লা’শ উদ্ধার করা যাইনি এখনও। তবে লা’শ ফেলার সময় সমুদ্রের ধারে পিক তুলতে ছিল একজন তখন তাঁর ক্যামেরায় ধরা পরেছে।
ভ্রু জাগিয়ে ফেলল সাফিন। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—কতজন ছিল মিনিমাম?
— চার-পাঁচজন হবে। একেতো ঝুম বৃষ্টি, তারউপর অন্ধকার আবহাওয়া, তাই চেহারাগুলো বোঝা যাচ্ছে না।
—লোকটা কোথায় এখন?
—কোন লোকটা স্যার?
—যার ক্যামেরাতে পিকগুলো উঠেছে?
জুবায়ের খানিকটা ভেবে বললো।
—সম্ভবত পুলিশের হেফাজতে আছে।
হাসলো সাফিন। জুবায়েরের কাঁধে হাত রেখে ধীর কন্ঠে বললো।
—লোকটাকে আমাদের জেম্মা’য় এনে আদর-আপ্যায়ন করো।
জুবায়ের হেসে উঠলো। বললো।
—কোন টাইপের আপ্যায়ন করব স্যার? না মানে ধোঁ’লাই নাকি জামাই আদর।
—আরে ধুর জুবায়ের। তুমিও না। লোকটা এত ভালো কাজ করেছে তো তাই ওর এখন জীবন সং’কট হতে পারে। লোকটাকে আমার প্রয়োজন।
—জ্বী স্যার।
.
তোহাকে জড়িয়ে ধরে সিরাত কেঁদে উঠলে তোহা রাগ নিয়ে বললো।
—একটা খাবি সিরাত। আমি একদম পারফেক্ট আছি। কাঁদিস না প্লিজ।
সিরাত তোহার একগালে হাত রেখে মৃদু হেসে বললো।
— কিচ্ছু ঠিক দেখতে পাচ্ছি না আমি। আমার জন্য তোর এই অবস্থা।
— এটা কোন ড্রামা সিরিয়াল হচ্ছে এখানে হুম। না মানে শাশুড়ী তো মাশাআল্লাহ পেয়েছো। তারজন্যতো এত ন্যা’কা কান্না করা লাগে না জানস।
সাফিনের কথা শুনে সিরাত বিরক্তি নিয়ে তাঁর দিকে চোখ গরম করে তাকালে সাফিন হেসে উঠলো। বললো।
—যাহ বাবাহ, তোমার বান্ধবীকে যে এত ক’ষ্ট করে উইল চেয়ারে করে হলেও তোমার কাছে নিয়ে এলাম শুধু তোমার চোখেমুখে খুশি দেখতে চাই বলে। আর তুমি উল্টো ন্যা’কা কান্না জুড়ে দিলে! তো জুবায়েরকে বলি তোহাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে। যদিও এক সপ্তাহ ওকে সেখানেই থাকতে হবে। এবার তোমার খুশি, কন্না করবে নাকি বান্ধবীকে পাশে রাখবে?
সিরাত সাফিনের দিকে রাগ নিয়ে তাকিয়েও আবার চু’পসে গেল।
—ব’জ্জা’ত লোক একটা৷ সবসময় খালি ওনার হুকুম আর হুকুম। যেন বিয়ে করে আমাকে উদ্ধার করে ফেলেছেন। জীবনটাই তেজপাতা হয়ে গেল আমার। ( মনে-মনে কথাটা বলে তোহার দিকে তাকাতে তোহা হেসে উঠলে সিরাতও হেসে দিল।)
—-যাক শান্তি। বউয়ের হাসি তো দিল খুশি। তবে হ্যা কথা হবে বাসর ঘরে। এখন টাটা।
কথাটা বলেই সাফিন চলে গেলে সিরাত রাগে ফুঁ’সতে- ফুঁ’সতে সাফিনের দিকে তাকালে আমেনা বেগমও হেসে তাঁদের দিকে এগিয়ে আসলেন। বললেন।
— আরে আম্মাজান তুই এখানে? কিছু খেয়েছিস এখনও? সাফিন বললো তুই নাকি ওয়াশরুমে পরে গেছিস। পায়ে কি খুব লেগেছে নাকি আবার?
সিরাত অবাক হলো।
—ওয়াশরুম!
— হ সাফিন বললো তো।
সিরাত রাগ নিয়ে দূরে সাফিনের দিকে তাকাল। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ব্যাস্ত সে। সিরাত রাগে ফুঁ’সতে থাকলো।
— শ’য়’তা’নের কারখানা৷ ব’জ্জা’ত লোক একটা৷ এই সিরাত বলে রাখলো এক বছর পর যখন সিরাত চলে যাবে তখন তোর বউ যেন একটা রা’ক্ষসী হয়। উঠতে বসতে ঝাঁ’ড়ি খাবি তুই৷ (মনে-মনে কথাটা বলে একশো একটা গা’লি দিল সাফিনকে সিরাত।)
.
রিমঝিমে বর্ষায় বর্ষিত শহরের নিস্তব্ধ প্রহরে অন্ধকার রুমটাতে খাটের উপরে গা’ট হয়ে বসে আছে সিরাত৷ ভয়ে নিজের হৃৎস্পন্দনের ধুকপুক কম্প’ম নিজেই খুব মনোযোগ সহকারে শুনতে ব্যাস্ত সে৷ দশ মিনিট হলো আমেনা বেগম সাফিনের রুমে বসিয়ে রেখে গেছেন তাঁকে। অন্ধকার রুমের ফুলের টানটান সুভ্রুতাও যেন নাকে এসে প্রগর ভাবে বা’রি খেয়ে যেতে ব্যাস্ত। হুট করে বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সহিত দরজা খোলার আওয়াজ ভেসে আসাতে দাঁতে দাঁত চে’পে রাগ নিয়ে কন্ঠে দৃঢ়তা এনে বললো।
— এক পা আগাবি না শ’য়’তান৷ আমাকে ছুঁ’বিনা শ’য়’তান। ছুঁ’বি তো কিল খাবি।
হঠাৎ লাইটটা অন হয়ে গেলে আমেনা বেগম দুধের গ্লাসটা টি টেবিলের উপরে রেখে ধীর চাহনিতে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বললেন।
— গ্লাসটা দিতে ভুলে গেছিলাম।
আমেনা বেগম চলে যেতে সিরাত ল’জ্জায় লাল হয়ে উঠলো যেন। ল’জ্জায় আজ তাঁর মাথা কাঁ’টা যাচ্ছে প্রায়।
কিছুক্ষণ পর সাফিন এসে দরজা আঁ’টকে দিতে সিরাত সেদিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে নিজের জায়গা থেকে উঠে পিছন থেকে সাফিনের গ’লা চে’পে ধরে মৃদু রাগ নিয়ে বলতে লাগল।
— আমাকে ছোঁয়ার একদম চেষ্টা করবেন না মিস্টার শাহনেওয়াজ সাফিন। আমাকে ছুঁবেন তো কারে’ন্ট খাবেন।
এমনিতেই ক্লা’ন্ত শরীর। তাঁর উপর এত রাতে সিরাতের পা’গলা’মি দেখে বিরক্ত হলো সাফিন। রাগ নিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
— আমাকে ছাড়ো নয়তো আই সয়ার কালকে সকালের মধ্যে তোমাকে পা’গ’লা গা’র’তে রেখে আসব৷ আর তুমিতো জানোই, শাহনেওয়াজ সাফিন কখনো কথার খেলাপ করে না…..
চলবে…….