#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ১১
কোকিলডাকা সকালের মৃদুমধুর আলো হীমেল হাওয়ার সহিত জানালা ঘেঁষে সিরাতের চোখে-মুখে এসে ছেঁয়ে পরাতে হাই তুলে পিটপিট করে তাকাল সিরাত। অস্পষ্ট ঝাপসা চোখে অচেনা রুমে নিজেকে আবিষ্কার করতে পেরে দ্রুত উঠে বসলো সে। গায়ে জড়িয়ে থাকা পাতল কাঁথাটা সরিয়ে পুরো রুমটাতে চোখ বোলা’ল সে। রুমটা যে কোনো নিখুঁত হাতের স্পর্শে খুব যত্ন সহকারে প্রচুর সময় নিয়ে গুজিয়েছে সেটা বুঝতে পারছে খুব সিরাত।
হুট করে বাম পাশের ওয়াশরুম থেকে টাওয়াল পরে ভেজা শরীরে সাফিন মৃদুস্বরে গান গাইতে-গাইতে বের হলে সিরাত সেদিকে চোখ বড়-বড় করে তাকাল৷ সাফিনের জিম করা বডির উপরে পানির আলতো স্পর্শ করে ঝরে যাওয়াটা চোখে পরাতে শরীরের ভিতরে ভয় জেঁকে বসলো সিরাতের। মাথা ঘোরপাক খেয়ে গেলে মনে পরলো যে কালকেই তো এই বজ্জা’ত লোকটার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে তাঁর। হুট করেই নিজের দিকে ভয়ের সহিত এক নজর পরখ করে সব ঠিকঠাক দেখে চোখ গরম করে তাকাল সাফিনের দিকে ।
—এর কি ল’জ্জা নেই নাকি! একটা মেয়ের সামনে কেউ এভাবে আসে?(মনে-মনে কথাটা বলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সাফিনের দিকে।)
সাফিন সিরাতকে খেয়াল না করে আলমারি থেকে কালো রাঙা শার্ট প্যান্ট বের করে ড্রেসিং টেবিলের পাশে তাকের উপর রেখে গান আওরাতে-আওরাতে টাওয়ালটা খুলতে নিতে সিরাত রাগে চোখ মুখ খিঁ’চে বিরক্তি নিয়ে বিছানার উপর থেকে সাদারাঙা বালিসটা সাফিনের গাঁয়ে ছু’রে মারতে নিতে মিরর থেকে ব্যাপারটা লক্ষ করে সাফিন টাওয়াল সামলে নিয়ে বালিসটা ক্যাঁ’চ করে নিল দ্রুত।
—শ’য়’তা’ন বে’ডা, একটা মেয়ের সামনে কেউ এভাবে আসে? ল’জ্জা নেই নাকি! খ’বি’শ লোক একটা৷
সাফিন সিরাতের দিকে খানিক স্টাচু হয়ে তাকিয়ে হেসে উঠতে সাফিনের হাসি দেখে সিরাত রাগে ফুঁ’সতে থাকলো। বিছানা ছেড়ে উঠে সাফিনের দিকে এগিয়ে আসতে-আসতে বলতে থাকলো।
—আপনাকে তো আমি আজ মজা দেখিয়েই ছাড়ব।
সাফিন সিরাতরকে চোখ মেরে সিরাতের বেখেয়ালে একটা পা তাঁর দিকে বাড়িয়ে দিতে সিরাত উ’ষ্ঠা খেয়ে পরে যাওয়ার আগে সাফিনই আবার সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে নিল সিরাতকে।
সিরাত রাগে সাফিনের দিকে তাকাতে সাফিন হেসে উঠলো। দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে বললো।
—আগে নিজেকেতো সামলাও বেব্বি। হাহাহা।
সিরাত মুখ বাঁকা করে সাফিনকে ঠেলে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচলটা কোমরে গুঁ’জে রাগের কন্ঠে বললো।
—আপনি পা দিয়েছেন কেন? ব’জ্জা’ত লোক একটা৷ কোনো মেয়ের সামনে এভাবে কেউ আসে৷ তাও আবার সিরাতের সামনেই আসতে হলো আপনার!
— বাহরে, বউ আমার বলে কি! বরের মুখতো এখন থেকে ২৪ ঘন্টাই দেখতে হবে তোমাকে। সে তুমি চাও আর না চাও।
সাফিন মিটমিট করে হেসে টাওয়ালটা খুলে সিরাতের দিকে ছুঁড়ে দিলে ক্যাঁ’চ করে নিল সিরাত৷ রাগে চোখ বন্ধ করে নিল সঙ্গে- সঙ্গে। দাঁতে দাঁত চে’পে বললো।
—ছিহ,
—কি ছিহ!
সিরাত এক চোখ খুলে পিটপিট করে তাকিয়ে সাফিনকে হাফ ট্যাউজার পরা দেখে নিজের জিহ্বায় নিজে কাঁ’মর কা’টাতে সাফিন হেয়ারড্রয়ার দিয়ে চুল শোকাতে-শোকাতে বললো।
— নেও সব দেখে নিয়েছো বরের। এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো৷
সিরাত কিছু বলতে যাওয়ার আগেই সাফিন কালোরঙা শার্টটা পরে বোতাম আঁ’টকাতে- আঁ’টকাতে সিরাতের দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বললো।
—পাঁচ মিনিটের ভিতরে যদি ফ্রেশ হতে না গেছো সিরাত, তো আই সয়ার এক্ষুনি সব কিছু খুলে নেব তোমার সামনেই। সিরাতকে রাগানোর জন্যই কথাটা বলেছে সাফিন৷ আর সিরাতও রাগে ফুঁ’সতে-ফুঁ’সতে ফ্রেশ হতে চলে গেলে হাসিতে গ’ড়া>গ’ড়ি খেল সাফিন। হাসির কন্ঠে বললো।
— আলমারিতে শাড়ি রাখা আছে পরে নিও। রাতেতো জ্বরে কাঁ’পছিলে তুমি। প্রথম রাতেই আমার বউ ভয়ে হুহু কাঁ’পা>কাঁ’পি করে অ’জ্ঞান। মাই ব্যা’ড লাক৷ যাইহোক, আমি নিচে যাচ্ছি দ্রুত এসো নয়তো আম্মাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
—ভালো হবে না বলে রাখলাম আপনার। বজ্জা’ত লোক একটা। কোনো ল’জ্জা শর’ম বলতে কিছুই নেই! আল্লাহ জানেন কোন পা’গলের খ’প্পরে পরেছি আমি।
—উফ সিরাত শাহনেওয়াজ সাফিনের কপালেই আছো তুমি। বাই দ্য ওয়ে বিছানার উপরে একটা জিনিস রেখে যাচ্ছি দেখে নিও সব ঠিকঠাক আছে কিনা।
সিরাত রাগে ফুঁ’সতে-ফুঁস’তে বললো।
—আমি কোনো জিনিস-ফিনিস দেখতে পারব না। আপনি যখন বলেছেন এখন তো আরও দেখব না।
সাফিন কালো রাঙা ঘড়িটা হাতে পরে নিয়ে মৃদু হেসে বললো।
—তোমার খুশি, আচ্ছা আমি নিচে যাচ্ছি। দশ মিনিটের ভিতরে তোমাকেও নিচে দেখতে চাই।
—বয়েই গেল সিরাতের। (মনে-মনে কথাটা বলে ঝর্নাটা ছেড়ে দিতে তাঁর ঝড়ে যাওয়া রিমঝিমে উ’ষ্ণতা শরীর ছুঁয়িয়ে গেলে হাঁটু ভা’জ করে দুই হাত দিয়ে শাড়ি খিঁ’চে চোখ বন্ধ করলো সিরাত। চোখের সামনে তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া একের পর এক অনিশ্চিত ঘটনাগুলো ভেসে উঠতে থাকলে আপনা-আপনি চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরতে থাকলো সিরাতের।
—আমিই হয়তো কোনো আনলাকি পারসোন,যার নিজের বলতে শুধু নামটা ছাড়া আর কিছুই নেই। এ বাড়ির সবাই কত ভালো। শুধু ওই লোকটা ছাড়া৷ কিন্তু কি অদ্ভুত, এটাও একটা কনট্রাক্ট। যার ইতি ঘটে যাবে এক বছর পরে।
“শাওয়ার নিয়ে বের হলে আমেনা বেগমকে দেখে মৃদু হাসলো সিরাত। ”
—আরে আম্মাজান কি সুন্দরটাই না লাগতাছে তোরে। সিরাত হাসলো। বললো।
— অতটাও সুন্দর নই আম্মা। আপনি সুন্দর আমার থেকে বেশি।
আমেনা বেগম হেসে সিরাতের হাত ধরে তাঁকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে চুল শুকিয়ে দিতে থাকলে সিরাত আমেনা বেগমের হাত ধরে বাঁধ সাধলো।
—কি করছেন আম্মা, আমি করছি আপনি বসুন এখানে। সিরাত উঠতে নিতে আমেনা বেগম চোখ রাঙালেন। বললেন।
—চুপচাপ বোস তুই এখানে। মায়ের কাছে আবার জড়তা কিসের মেয়ে হুম! আমি করছি তো আমাকেই করতে দে। ওইসব পার্লার- টার্লার দিয়ে লোক আনিনি আমি। তোর বাপতো বলতে ছিল আমাকে,কিন্তু আমার মেয়ে আমি নিজে হাতে সাজাব। কথাটা বলেই হাত দিয়ে সিরাতের গালে চুমু খেলেন আমেনা বেগম।
সিরাত হাসলো। চোখটা কেমন ছলছল করে উঠতে চাইছে তাঁর। মায়ের ভালোবাসা কখনো পায়নি সিরাত। দেখেইনি তাঁর মাকে কখনো৷ যখন স্কুলে যেত তখন সব মায়েদের দেখত তাঁদের ছেলে-মেয়েদের আদর করতে। আফসোস হত সিরাতের।
—ইস আমার মা বেঁচে থাকলে হয়তো আমাকে এমনটাই আদর করতেন।
চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরাতে আমেনা বেগম ব্যাপারটা খেয়াল করে সিরাতকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে শীতল হাতে সিরাতের চোখের পানি মুছে দিলেন। ধীর কন্ঠে বললেন।
—এই মাইয়া,কি হয়েছে রে তোর? কান্না করোছ কেন? সাফিন কিছু বলেছে নাকি তোকে? একবার শুধু বল ওরে আমি….
পুরো কথাটা শেষ হওয়ার আগেই সিরাত আমেনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলে আমেনা বেগম পুরো থ’ত’ম’ত খেয়ে গেলেন।
সিরাতের মাথায় হাত বু’লি’য়ে দিতে-দিতে শান্ত স্বরে বললেন।
—কি হয়েছে বলতো মায়ের কাছে?
—কিছু না আম্মা। তোহার পরে এক আপনিই আমাকে এভাবে যত্ন করছেন। আমার খেয়াল করছেন তো, তাই নিজেকে আজকে খুব সুখী মনে হচ্ছে জানেন।
আমেনা বেগম চোখের পানি আড়াল করে সিরাতের মাথায় বিলি কে’টে দিয়ে বললেন।
— আজ থেকে সব গোপন কথা এই আম্মার কাছে বলবি কেমন। আমার ছেলেটা খুব ভালো জানিসতো। বড্ড রাগি,তবে হ্যা, অভিমানি প্রচুর। ওকে নিজের করে গুছিয়ে নিবি বুঝলি। আমি ওর চোখে তোর জন্য ভালোবাসা দেখেছি। আমার বিশ্বাস ও তোকে ক’ষ্ট দেবে না কখনো৷ ওকে একমাএ তুইই পারলে পারবি রাজনীতি থেকে সরিয়ে আনতে। জানিসতো ভয় হয় খুব ওকে নিয়ে, কখন কি হয়ে গেল ওর। একদম আঁচলের সাথে বেঁধে রাখবি ওকে বুঝলি।
মিয়িয়ে গেল সিরাত।
—আপনার ছেলে আমাকে ভালোবাসেননা আম্মা। এটা শুধুই একটা কনট্রাক্ট। যার সীমানা পেড়িয়ে গেলে এই সিরাত নিজেই হারিয়ে যাবে এ বাড়ি থেকে। (মনে-মনে কথাটা বলতে থাকলে আমেনা বেগম সিরাতের কপালে চুমু খেয়ে গালে হাত রেখে বললেন৷)
—আজকে থেকে এই সংসার তোর কিন্তু। আমি এখন আর এই সংসারের হাল ধরে রাখতে পারব না।
মৃদু হাসলো সিরাত। বললো।
— উহুম আম্মা, সেটি হচ্ছে না৷ এই সংসার আপনার ছিল আপনারই থাকবে। তবে হ্যা আমিও আছি আপনার পাশে।
আমেনা বেগম সিরাতের মাথায় হাত রেখে প্রশান্তির হাসি হেসে বললেন।
—আচ্ছা নিচে আস আমি যাচ্ছি এখন। তোর বাপ দাদা মিলে নিচে কি কান্ড করছে আল্লাহ জানেন। সেই সক্কাল-সক্কাল ফুলের অর্ডার গরু কিনেছে ডেকোরেশনের লোককে ফোন করেছে। পুরো পা’গল বুঝলি। এককাপ চা করে সামনে নিয়ে যাবি, দেখবি তোকে ছাড়া আর কিছু বুঝবে না। (হাসলো সিরাত।)
আমেনা বেগম চলে যেতে ধীর চাহনিতে সেদিকে তাকিয়ে বিছানার উপর চোখ যেতে নিজের ব্যাগটা দেখে খুশিতে লুফে নিল ব্যাকটা। উত্তেজ’নার সহিত ব্যাগটা খুলে নিজের মায়ের রেখে যাওয়া শেষ সৃতিটুকু বুকে জড়িয়ে রাখলো সিরাত। (মনে-মনে বললো)
— দেখো মা৷ এখানে সবাই কত ভালো। তুমি দেখো যে কদিন এখানে আছি, আমি যাতে আম্মার কথার মান রাখতে পারি।
.
—নানু বিয়েতো করে নিলাম এবার আমার রাজবাড়ী আমাকে দিয়ে দেও।
আজাদ সাহেব হাসলেন। চায়ে চুমুক দিতে-দিতে সাফিনের কাঁধে হাত রেখে বললেন।
—তোর নানু কখনো কথার খেলাপ করে না বুঝলি সাফিন। ঠিক সময়মতো পেয়ে যাবি তুই। সরোয়ারকে বলেছি রাজবাড়ী পুরোটা নতুন করে রাঙিয়ে তুলতে। আমার নাতিবউ যখন নতুন রাজবাড়ীটাওতো নতুন হওয়া চাই।
সাফিন হেসে ডাইনিং টেবিলে চেয়ার টেনে বসে পরলে মোস্তফা সাহেব বাহির থেকে কপালের ঘাম মুছতে-মুছতে ভিতরে আসলেন৷ পিছনে থাকা জুবায়েরের উদ্দেশ্যে বললেন।
—জুবায়ের গাড়ি থেকে সব মিষ্টির প্যাকেটগুলো এই জায়গাটায় রাখবে৷ ডেকোরেশনের লোক এক্ষুনি চলে আসবে। গেটের সামনের ঝাড়বাতিগুলো সরিয়েছো তো? ওখানটাতে নতুন ঝাড়বাতি লাগানোর ব্যাবস্থা করো।
—জ্বি স্যার, সবাইকে ইনভাইট করতে পাঠিয়ে দিয়েছি হেলালকে৷ ওয়াসম্যান গুলো খাবারের দিকটা সামলাবে। সিঁড়ির দিকটাতে ফুল দিয়ে সাজাব তাইতো?
—হ্যা,হ্যা সবকিছু যেন নিখুঁত ভাবে হয়। ইনভাইটেশনের কার্ডাটা কিন্তু চকচকে হওয়া চাই। শাহনেওয়াজ সাফিনের বিয়ের পার্টি বলে কথা।
আমেনা বেগম ডাইনিং টেবিলের উপর গরম-গরম খিচুড়ি আর মাং’সের প্লেটগুলো সাজিয়ে দিতে-দিতে বললেন।
— হয়েছে-হয়েছে এবার বসো তুমি। কার্ড আমি সিলেক্ট করে দিয়েছি বুঝলে। যেমন তেমন কার্ড না।
আমেনা বেগমের কথা শুনে মোস্তফা সাহেব তাঁর দিকে ধীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে হেসে বললেন।
—হয়ে গেল।
—কি হয়ে গেল?
আমেনা বেগম তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালে মোস্তফা সাহেব বাঁকা হাসি হেসে ডাইনিং এর চেয়ার টেনে বসলেন। বললেন।
—আরে কিছু না।
—বেশি-বেশি। আমেনা বেগম মুখ ঝা’মটা মারতে সাফিন হেসে উঠলে মোস্তফা সাহেব সাফিনের দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বললেন।
— হিহি, বেশি হাসিস না সাফিন বুঝলি। তোরও সময় আসতে বেশি দেরি লাগবে না। তখন আমিও হাসব। বলে রাখলাম।
প্লেট থেকে এক চামিচ খিচুড়ি খেতে-খেতে সাফিন হেসে বললো।
— আমার বউ আমাকে কিচ্ছুই বলতে পারবে না ড্যাড। তাঁর আগেই চুমু খেয়ে মুডটা অন্য দিকে নিয়ে যাব বুঝলে।
মোস্তফা সাহেব কেশে উঠলে পানি খেতে থাকলে জুবায়ের মোস্তফা সাহেবের মাথায় ঝাঁ’কি দিতে থাকলে আজাদ সাহেব বললেন।
— তোরা জীবনে ভালো হইতি না মোস্তফা।
তোর ছেলে তোর আরও একঘাটি উপরেই চলে।
সাফিন হাসলে আমেনা বেগম সাফিনের প্লেটে মাং’স দিতে-দিতে সাফিনের কানটা টেনে ধরে বললেন।
— বড্ড পেকে গেছিস তাইনা। যেমন বাপ তাঁর তেমন ছেলে। চুপচাপ খা এখন, নয়তো এই বয়সে এসেও আমার হাতে মার খাবি।
সাফিন হেসে উঠলো। বললো।
— আম্মা আমার বউ এখনও উপরে কি করে? তোমাকে পাঠালাম নিয়ে আসতে আর তুমি নিজেই গল্প করে চলে আসলে। ইট’স নট ফেয়ার হুম।
আমেনা বেগম হাসলেন। বাটিতে করে মিষ্টি ঢেলে প্লেটটা নিয়ে সাফিনের পাশে রাখতে-রাখতে সাফিনের কানটা টেনে দিয়ে বললেন।
—ওরে পাঁ’জি ছেলে। আমার মেয়ে যাই করুক ওকে কিচ্ছু বললে তোর সেদিন খবর আছে।
সাফিন চামিচ দিয়ে একটা মিষ্টি ওঠাতে নিতে আজাদ সাহেবও চামিচ এগিয়ে দিলে সাফিন খপ করে হাতটা ধরে নিয়ে আমেনা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো।
—বাহরে,এখন মেয়েই সব হয়ে গেল? ছেলে এখন কেউ না। ভালো,ভালো, আমিও দেখব।
আমেনা বেগম হাসলেন।
—আরে একটা তো নিতে দে সাফিন।
সাফিন আজাদ সাহেবের দিকে রাগ নিয়ে তাকিয়ে আমেনা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো।
—আম্মা সুগার ছাড়া মিষ্টি দেওতো নানুকে ফ্রিজে আছে।
আজাদ সাহেব হ’তা’শ হওয়ার সহিত সাফিনের দিকে তাকিয়ে বললেন।
—তুইই খা ওই করলা মিষ্টি। শান্তি নাই একটু আমার। আমাকে নিয়ে কেউ ভাবে না।
—আহা সোনা, এত ক’ষ্ট রাখি কোথায় গাবলা পাতব আমি।
—একটা কানে খাবি সাফিন। নানুর সাথে মসকরা করিস।
আমেনা বেগমের কথা শুনে আজাদ সাহেব হাসলেন। বললেন।
—আহ আমেনা, আমরা তো মজা করি তাইনা সাফিন।
সাফিন হাসলে আমেনা বেগম আজাদ সাহেবের সামনে স্যুপের বাটিটা রাখতে আজাদ সাহেব চোখমুখ কুঁচ’কে ফেললেন। বললেন।
—জীবনটাই বেদনার হয়ে গেল এই স্যুপ খেতে-খেতে।
—আব্বা আজকে সন্ধ্যায় যা খাওয়ার খেও পার্টিতে। ডক্টররাও আসবে সো নো প্রবলেম।
মোস্তফা সাহেবের কথাটা শুনে আজাদ সাহেব খুশিতে গ’দ>গ’দ হয়ে গেলে সাফিন দাঁত কে’লি’য়ে বলে উঠলো।
—হাহা, খুশি হওয়ার রিজন নেই বুঝলে নানু, আমি থাকতে সেটা হতে দেব না। সে ড্যাড যতই পার্মিশন দেননা কেন?
—শা’লা শ’য়’তা’ন।
হেসে উঠলো সাফিন।
.
গোলাপ- রজনীগন্ধা দিয়ে সজ্জিত বাড়িটার দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে হেসে উঠলো সিরাত।
ধীর পায়ে নিচে নামতে আমেনা বেগম সিরাতের হাত ধরে নিয়ে এসে সাফিনের পাশে বসিয়ে দিলে আর চোখে সাফিনের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙা’লো সিরাত।
—উম আইসে, বিশ্ব ব্রিটিশ। আল্লাহ জানে এক বছর কবে শেষ হবে আর এই খ’বিশের থেকে মু’ক্তি পাব। (মনে-মনে কথাটা বলে শেষ করার আগেই সাফিন বলে উঠলো।)
—আম্মা আমার বউকে নিয়ে বের হব একটু। পার্টিতো সেই সন্ধ্যায়,তাঁর আগেই চলে আসবনে আমরা।
—কেন রে কই যাবি?
আজাদ সাহেবের কথা শুনে মোস্তফা সাহেব কেশে উঠলেন। ধীর চাহনিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন।
—আব্বা,নয়া-নয়া বুঝেন না। এগুলোও এই বয়সে বুঝিয়ে দিতে হবে আমার।
সিরাত ল’জ্জায় চোখ নিচু করে ফেললে আমেনা বেগম সিরাতের দিকে তাকিয়ে হাসলেন। বললেন।
—খাওয়ার সময় কথা কম বলো এখন। আম্মাজান খিচুড়ি দেই।
সিরাত আমেনা বেগমের দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে বললো।
—আপনার সঙ্গে একসাথে খাব আনে আম্মা। তাঁরা খেয়ে নিক আগে।
আমেনা বেগম হাসলেন। কিছু বলার আগেই সাফিন বলে উঠলো।
—তাঁরাতাড়ি খাও আমার সঙ্গে যেতে হবে তোমাকে।
সিরাত রাগ নিয়ে তাকালে সাফিন তাঁকে পাত্তা না দিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো।
— আজকে আশ্রমে জামা-কাপড়টা নাহয় আমরা দিয়ে আসি।
সরোয়ার সাহেব উপর থেকে শার্টের হাতা ভাজ করতে-করতে নিচে নামলেন। বললেন।
—ওয়াহ,নাইস। বাড়িটা তো পুরো আনন্দে ভরে উঠেছে দেখছি। তবে সাফিন ভালো বলেছো কিন্তু। আশ্রমে জামা-কাপড়ের দ্বায়িত্বটা নাহয় আজকে তুমি আর নতুন বৌ মিলে নাও।আলাদা সময়ও পাবে দুজনে, ঘোড়াও হবে।
— উফ চাচ্ছু, এইজন্য তোমাকে এত্ত ভালোবাসি।
সাফিনোর দিকে হেসে চোখ মারলেন সরোয়ার সাহেব।
.
— এতটা বে’শর’ম হওয়ার কি খুব দরকার ছিল আপনার? সবার সামনে থেকে কোলে করে নিয়ে আসলেন আমাকে! আমি যাবনা আপনার সাথে।
সিরাতের কথার উত্তর না দিয়ে সিরাতকে পাঁ’জা কোলা করে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে দরজা লক করে দিল সাফিন।নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে ধীর চাহনিতে বাঁকা হাসি হেসে সিরাতের দিকে তাকাতে নিতে সিরাত রাগে চোখ গরম করে সাফিনের দিকে তাকালো। বললো।
—আপনি একটা যাচ্ছে তাই।
—উফ সিরাত, এত রেগে যেওনা তো বেব্বি। এখন কিন্তু আমি আর চুপ থাকব না। আর একটা বারতি কথা বললে সোজা বাসর করে নেব। আফটারঅল তোমার একমাএ হাসবেন্ড কিনা। উম্মাহ।
সাফিন চোখ মারলে বিরক্ত হলো সিরাত। চোখ মুখ খিঁ’চে সাফিনের দিকে এগিয়ে আসতে নিলে সাফিন মৃদু হেসে সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে সিরাতকে কাছে টেনে এনে সিরাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো।
— তোমার এই রাগনা,যেটা তুমি দেখাও আমাকে? এতে শাহনেওয়াজ সাফিনের কিছুই যায় আসে না বুঝলে সিরাত? সিরাত রাগে ফুঁ’সতে থাকলে সাফিন গাড়ির পিছনে থাকা ফাইলটা থেকে একটা কাগজ বের করে সিরাতের দিকে তাক করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—সাইনটা করে দেও সিরাত।
—কি এটা?
সাফিন হাসলো। বললো।
—নিজেই দেখে নেও বেবস।
বিরক্ত হলো সিরাত। কাগজটা হাতে নিতে সাফিন বলতে থাকলো।
— এই এক বছর কোনো ছেলের আশেপাশেও ঘেঁ’ষা যাবে না। ডান্স করাতো দূরে থাক। আমাকে সেবাযত্ন করতে হবে। আমি যা বলব সেগুলো শুনতে হবে। আমাকে নিয়ে সারাক্ষণ ভাবতে হবে। আর নানুকে ভালোবাসতে হবে। ধরে নেও নানুর জন্য এসব কিছু করা, নানু যতদিন আছে ঠিক ততদিনই তোমার অস্তিত্ব থাকবে আমার কাছে তাঁরপর থেকে তুমি মুক্তি। ব্যাস, এটাই। কনট্রাক্ট পেপারে সাইনটা করে দেও এখন।
সিরাত ধীর চাহনিতে পেপারটার দিকে তাকালো শুধু। রাগ হচ্ছে প্রচুর সিরাতের। দাঁতে দাঁত চে’পে বললো।
—আপনাকে নিয়ে ভাবব মানে! আপনার মতো খ’বি’শ, ডে’ভিল লোককে নিয়ে ভাবার থেকে ম’রে যাওয়াও ঠের ভালো।
সিরাতের কন্ঠের রেশ শুনে রাগে সাফিন গাড়ির ড্রয়ার থেকে বন্দুকটা বের করে সিরাতের শারির আঁচল ভেদ করে কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে বন্দুকটা পেটের কাছে ধরে দাঁতে দাঁত চে’পে রাগের কন্ঠে বললো।
— তাহলে ম’রেই যাও তুমি। ভালো হবে না বলো? কি জানো তো সিরাত, আমি চাই না তোমাকে হার্ট করতে বাট তুমি বাধ্য করো আমাকে। আমি যেমন ভালো বাসতেও পারি ঠিক তেমন প্রয়োজনে ভয়ঙ্ক’রও হতে পারি।
ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিল সিরাত। গলা শুঁকিয়ে আসছে তাঁর। কয়েকটা ঢোক গি’লে কাঁ’পা>কাঁ>পা স্বরে বললো।
— ভালোবাসা শব্দটা আপনার মুখে বেমানান লাগছে মিস্টার শাহনেওয়াজ সাফিন। আপনি শুধু মানুষকে ক’ষ্ট দিতেই জানেন। ভালোবাসা এমনটা হয় না। তাঁর ভিতরটা প্রবল গাঢ় হয়। একরাশ বৃষ্টিতে ছেয়ে যায় শহরে। তাঁর তীব্রতা আপনার ভাবনার বাহিরে। আর আমরা তো মাএ এক বছরের কনট্রান্ট মাএ। তাই নয় কি?
সিরাতের বন্ধ চোখদ্বয়ের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলে সাফিন হাতটা মুঠ করে রাগে সিরাতকে ছুঁ’ড়ে ফেলে দিতে গাড়ির সাথে ধা’ক্কা খেল সিরাত।
—আম্মা আপনার ছেলে অভিমানী নয় ঠিক। রাগি এবং দাম্ভিক একজন মানুষ। যে কিনা নিজের আয়না নিজেই সঠিক জানেননা। (মনে-মনে কথাটা বলে ধীর চাহনিতে বাহিরে দৃষ্টিপাত করলে সাফিন হাই স্পিডে গাড়ি স্টার্ট দিতে হিমেল হাওয়ায় তাঁর শরীরে স্পর্শ করে গেল যেন। সিরাত বেশ বুঝতে পারছে সাফিন রেগে গিয়েই এমনটা করছে। তবুও চুপ রইলো সে৷)
.
— সাফিন ওর বউকে নিয়ে আশ্রমে গিয়েছে। ওখানেই ওর লা’স ফেলে দেও। এই সুযোগ পরে আর আসবে না। মেয়েটাকেও উড়িয়ে দেও পারলে।
মুশোখ পরা লোকটা পিছুফিরে দাঁড়ালে উল্টো দিকের মানষটা খাকিনটা হাসার চেষ্টা করে বললো।
— জ্বী সাহেব। কিন্তু এবারও কি আমি যাব? না মানে আগেরবার তুহিন ছিল ও দেখেছে। আমি পালাতে গিয়ে যে পায়ে ব্যা’থা পেয়েছি এখনও সারেনি।
লোকটা বিরক্ত হলো প্রচুর। রাগান্বিত কন্ঠে বললো।
— কালকের কথা নিমিষেই ভু’লে বসে আছো দেখছি! হয় সাফিনকে সরাবে নয়তো নিজে সরে যাবে। হিসাব বরাবর। কোনটাতে খুশি হবে সেটা তুমি ভালো বলতে পারবে।
পিছনে থাকা লোকটা ভয়ে ঢোক গি’লে দ্রুত বলে উঠলো।
— না সাহেব দেখছি আমি। আজকেই সরিয়ে দিচ্ছি সাফিনকে আর ওর বউকে।
—সোজা কথায় কথা না শুনলে আঙুলটা বাঁকাতে হয়। আর বাঁকা কথাটাই তুমি বোধহয় ভালো বুঝো। তাইনা?
অন্ধকারের লোকটা মিলিয়ে গেলে ভয়ে হাত-পা কাঁপতে থাকলো লোকটার।
.
তটিণীর বুকে আজ কালো আভাসে ছেঁয়ে আছে। কখন দেখা গেল কালো মেঘের কোল ঘেঁষে ঝুম বর্ষনে বর্ষিত হবে শহরে। মেঘেদের আপনমনে ভেসে চলার গতি দ্রুত থেকে দ্রুততম হতে থাকলে গুড়ুম- গুড়ুম করে গর্জ’নপাত শুরু হলো শহরজুড়ে।
আশ্রমের গেটের সামনে গাড়ি থামিয়ে দিলে পিছনে এক গাড়িতে করে জুবায়ের জামা-কাপড়গুলো এক-এক করে গুনে গার্ডদের সাথে হাতে হাত লাগিয়ে ভিতরে নিয়ে গেলে গাড়ি থেকে নেমে পরলো সাফিন।
সিরাতের জন্য দরজা খুলে দাঁড়াতে সিরাত এক নজর কালো রাঙামেঘে ছেঁয়ে যাওয়া দিগন্তের দিকে তাকিয়ে সাফিনের দিকে তাকাল। ধীর পায়ে গাড়ি থেকে নামলে হিমশীতল বাতাসে কেঁ’পে উঠলো তাঁর সমস্ত শরীর। সাফিন আর তাঁর দিকে তাকাল না। রাগ লাগছে প্রচুর সাফিনের।
আশ্রমের ভিতরে ঢুকলে বাচ্চারা দৌড়ে এসে সাফিনকে জড়িয়ে ধরতে সিরাত চোখ বড়-বড় করে ধীর চাহনিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকলে জুবয়ের জামা-কাপড়ের প্যাকেটগুলো এক-এক করে সাজিয়ে টেবিলের উপর রাখলো। সিরাতের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো।
— স্যার এ রকমই। খুব ভালো একজন মানুষ। সবার কথা ভাবেন তিনি। বাহিরে রুড দেখালেও ভিতরটা কিন্তু নরম ম্যাম। আপনি খুব ভাগ্যবতী।
জুবায়েরের কথা শুনে তাঁর দিকে ধীর চাহনিতে তাকালো সিরাত।
— আমি ঠিক যতবারই আপনাকে নিয়ে ভাবতে যাইনা সাফিন? কেমন যেন সবকিছু গু’লিয়ে যায়৷ আপনার এই টরচার, যেটা আমাকে করেন প্রতিনিয়ত, এটা সত্যি ভাবব নাকি আম্মা আর জুবায়ের যেগুলো এক্সপ্লেইন করছে আমাকে এগুলো? (কথাগুলো মনে-মনে বললেও প্রকাশ্যে সিরাত কিছুই বলতে পারলো না সাফিনকে।)
.
ঝমঝমিয়ে মুশল ধারে বৃষ্টি এসে সমস্ত শহর ভিজিয়ে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরলে বাচ্চাদের সাথে অনেকটা সময় কাটিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য নেমে পরলো সাফিন। সিরাতের দিকে তাকালোও না পর্যন্ত। মৃদু হাসলো সিরাত। হিমেল হাওয়ায় সিরাতের লালরাঙা শাড়ির আঁচল বেঘোরে উড়ে বেড়াচ্ছে। জুবায়ের ধীর কন্ঠে সিরাতের উদ্দেশ্যে বললো।
—ম্যাম আপনি চলুন আমি ছাতা ধরছি।
সিরাত শুঁকনো হাসি হেসে পা বাড়ালো সাফিনের দিকে।
“ড্রাইভিং সিটে সাফিনকে বসে থাকতে দেখে বুকটা কেঁ’পে উঠলো সিরাতের। হুট করে শাফিনের কথা না বলাটা কেন জানিনা তাঁকে খুব পো’ড়াচ্ছে।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গাড়িতে উঠে বসলে জুবায়েরও নিজের গাড়িতে বসে পরলো।
সাফিন গাড়ি স্টার্ট দিতে আমেনা বেগম ফোন দিতে কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে অন করে ড্রাইভ করতে-করতে বললো।
— হ্যা আম্মা বলো কি বলবে?
— আরে তোরা আসবি কখন। সন্ধ্যা হয়ে গেলে আসবি নাকি?
সাফিন মৃদু হেসে বললো।
— আসছি।
—হ তারাতাড়ি আস। গেস্টরা এসে পরছে আর যাদের জন্য এতকিছু তারাই নেই।
সাফিন ঠোঁট কাঁ’ম’রে ধরে ফোনটা কে’টে দিল।
ক্লা’ন্ত শরীরে গাড়ির সাথে মাথা এলিয়ে দিল সিরাত। চোখ বন্ধ করে ফেললে হুট করে গাড়িটা এলোমেলো ভাবে চলতে শুরু করলে সাফিন ভ’রকে গেল। দ্রুত ব্রেক করতে গিয়েও যখন দেখলো ব্রেক করছে না তখন গাড়ির দরজা খুলে সিরাতকে ধা’ক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে বের করলে সিরাত আকষ্মিক ঘটনায় পুরো চমকে গেল। চলন্ত গাড়ি থেকে রাস্তায় গড়ি’য়ে পরাতে প্রচন্ড পরিমানে আ’ঘাতও পেয়েছে সে৷ কিন্তু এখন ওসব কিছু মাথায় না নিয়ে মুশলধারা বৃষ্টির মধ্যেই সাফিনের গাড়ির দিকে তাকিয়ে ভয়ে দৌঁড় লাগাল গাড়ির পিছু-পিছু। সিরাতের পায়ের মোটা নুপুরের ঝম-ঝম আওয়াজ বৃষ্টির রিমঝিমে শব্দের সঙ্গে মিলে সাফিনের কানের কাছে যেন বা’রি খেয়ে গেল। মাথা কাজ করতে চাইছে না তাঁর। বেশ বুঝতে পারছে গাড়িটা কেউ ইচ্ছে করেই ব্রেক ফেল করে রেখেছে। কিছুক্ষণ পরে গাড়িটা একটা গাছের সাথে ধা’ক্কা খেতে সিরাত ভয়ে চিৎ’কার করে চোখ বন্ধ করে নিল। চোখ বেয়ে অজস্র নোনাজল গড়িয়ে পরলে কাঁ’পা-কাঁ’পা পায়ে সামনে এগিয়ে গেলে গাড়ির দরজা খুলে সাফিন বেড়িয়ে আসলে হুশ ফিরলো সিরাতের। একটুর জন্য প্রা’নটা উড়ে যেতে চেয়েছিল তাঁর।
পিছন থেকে জুবায়েরের গাড়িটাও মোর ঘুড়িয়ে চলে আসাতে তাঁদের এই অবস্থায় দেখে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পরলো সে। সিরাতের দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে ভয় কাটানোর জন্য বললো।
—কিচ্ছু হয়নি ম্যাম। আপনি গাড়িতে গিয়ে বসুন আমি স্যারকে দেখছি।
জুবায়ের সাফিনের দিকে এগিয়ে যেতে সাফিন মাথায় আলতো হাত রেখে চোখ খিঁ’চে সিরাতের কান্নারত মুখশ্রী দেখে মৃদু হাসলো।
সাফিন ইচ্ছে করেই গাড়িটা গাছের সাথে তাক করেছে। যাতে বের হতে পারে সে। নয়তো একবার খাদে পরে গেলে বাঁচা মুসকিল হয়ে পরতো তাঁর। মাথায় আর পিঠে ব্যা’থা পেয়েছে সে। জুবায়ের ভয়ের সহিত সাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো।
—কিভাবে হলো স্যার এমনটা? ঠিক আছেন তো আপনি? চলুন এক্ষুনি হাসপাতালে যাবেন আপনি, গাড়িতে উঠে বসুন।
সাফিন হাসলো। বললো।
— এসব ছোটখাটো বিষয়ে শাহনেওয়াজ সাফিনের কিচ্ছু হয়না বুঝলে জুবায়ের। কিন্তু কেউ যে ইচ্ছে করে ব্রেকফেল করেছে সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। ওই সু’য়ো’রটাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমার পায়ের নিচে দেখতে চাই। ও হয়তো জানেনা ও কার সাথে গুটি সাজাতে চাইছে। এর ফল আমি ওকে হারে-হারে বোঝাব। জুবায়ের,
—জ্বি স্যার?
—গাড়িটার ভিতরে কিছু ফাইল আছে নিয়ে নিও। গ্যারেজে নিয়ে যাও আমি এটা নিয়ে যাচ্ছি।
—জ্বী স্যার।
সাফিন হেসে সিরাতের দিকে আগাতে থাকলে সিরাত ধীর চাহনিতে তাঁর দিকে তাকালো। ঘন হয়ে আসা নিশ্বাসগুলো যেন দ’লা পাকিয়ে যাচ্ছে তাঁর। সাফিন সিরাতের দিকে তাকাতে বৃষ্টিভেজা পানির উষ্ণতা গুলো সিরাতের চুল বেয়ে কপাল ছেঁয়ে গিয়ে সমস্ত শরীরে ছুঁয়িয়ে দিতে থাকলে সাফিন সিরাতের লাল হয়ে ওঠা গালে হাত ছোঁয়াতে চোখদ্বয় বন্ধ করে নিল সিরাত। শিতে আর ভয়ে রীতিমতো কাঁপছে সে। সাফিন ঠোঁটের কোনে প্রশান্তির হাসি হেসে পাঁ’জাকোলা করে নিল সিরাতকে। সিরাত সাফিনের গলা জড়িয়ে ধরে চোখ খিঁচে বন্ধ করে রাখলো…
চলবে…