#হৃদয়ে_তুমি
#লেখিকাঃতানিমা_আক্তার_মিরা
#পার্টঃ২৩
তরী চমকে উঠলো জানালার বাইরে মানুষটাকে দেখে অবাক হয়ে যায় ,তরী ভাবছে ওহ এখানে কিভাবে।
তরী- মিতালি এই একটা নাম সব জায়গায় আসছে। আরুশের অ্যাক্সিডেন্টের সাথে কোথাও না কোথাও ঠিক মিতালির একটাতো যোগসূত্র আছেই।( মনে মনে)
তরী মিতালিকে দেখেছে গ্রামে ঢোকার পথে, ওরা কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা ওদের গ্রামের বাড়িতে চলে আসে।
বাড়িটা খুব সুন্দর, অনেক দিনের পুরানো দোতলা বাড়ি। আরুশের দাদুর পূর্বপুরুষরা জমিদার ছিলেন, এখানে এটা জমিদারবাড়ি নামে পরিচিত আবার কেউ রাজবাড়ি ওহ বলেন। বিশাল এলাকা নিয়ে বাড়িটা আছে। আরুশের দাদু ব্যবসায়িক কাজের জন্যে এই বাড়িটা ছেড়ে শহরে চলে যান এখানের দেখাশোনা কেয়ারটেকারাই করেন।এই বাড়িতে একজন পুরানো লোক আছেন অনেক বিশ্বাসী লোক। আরুশের দাদুর ইচ্ছা ছিলো এই বাড়িটা ভেঙ্গে একটা অনাথ আশ্রম করবে।
আরু- এই খানে আসলে আমার নিজেকে রাজকন্যা রাজকন্যা লাগে।
তরী- আরে তুই তো রাজকন্যাই
আরুশ- ওহ আর রাজকন্যা এটা বলো না তাহলে রাজকন্যার অসসম্মান হবে।
আরুশের এই কথাটা শুনে সবাই ওরদিকে তাকিয়ে আছে। আরু দৌড়ে গিয়ে আরুশকে জড়িয়ে ধরলো আরুশ আরুর এমন কান্ডে অনেকটা অবাক হয় আরু আরুশকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
আরুশ- আরে কি হলো কাঁদছিস কেন
আরু- আজ তুই কতদিন পর আমাকে এভাবে রাগালি।
আরুশ- তার জন্য কাঁদতে হবে।
আরু- জানিস আমি সবসময় এটার জন্য ওয়েট করি কখন তুই আবার আগের মতো রাগাবি আমাকে।
আরুশ- হূম কান্না থামা চল ভেতরে।
ওরা সবাই ভেতরে গেলো বাড়ির ভেতরটা বাইরে টার থেকেও সুন্দর পুরো বাড়িটা আভিজাত্যে ভরা।
রিতা- বাড়িটা কিন্তু খুব সুন্দর
আর্দ্র- হুম আমার দাদু সবটা নিজের হাতে সাজিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যবসায়িক কাজে তিনি এখানে থাকতে পারেননি।
রিতা- ওহ, এই বাড়িটা কি হবে
আর্দ্র- বাড়িটাতে একটা অনাথ আশ্রম করা হবে।
রিতা- ভালো
আর্দ্র- আমরা এখানে আসার একটা কারন হলো আমরা এই বাড়িটা একটা সংস্থার হাতে তুলে দেবো তারাই আশ্রমটা পরিচালনা করবেন।
রিতা- ওহ
ওরা সবাই রেস্ট নেয় অনেকটা জানি করে সবাই ক্লান্ত।
বিকালে…..
ওরা সবাই ঠিক করে আশেপাশের জায়গাটা ঘুরে দেখবে।কথা মতো ওরা সবাই বের হয়।
আরুশ- গ্রামটাও খুব সুন্দর জানো মনে হচ্ছে স্বগপুরিতে আছি
আর্দ্র-গ্রামের মানুষ রাও খুব ভালো এবং আমাদের খুব ভালোবাসে, চলো তোমাদের একজনের সাথে দেখা করাই।
সবাই তরীর পেছন পেছন যায়। আর্দ্র একটা বাড়িতে আসে বাড়িটা ছোটো একতলা বাড়ি।
আর্দ্র- বুড়ি ওহ বুড়ি
আর্দ্রের এমন ডাক শুনে সবাই ওর দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো । আর্দ্রের ডাক শুনে একজন বৃদ্ধা মহিলা বেড়িয়ে আসলেন।আর্দ্রের দিকে তাকিয়ে থাকলেন অনেকক্ষন।
আর্দ্র- ওই বুড়ি চিনতে পারছো না আমাকে
বৃদ্ধা- আর্দ্র বাবা তুই
আর্দ্র গিয়ে মহিলাটিকে জড়িয়ে ধরলো মহিলাটি যেন আকাশের চাঁদকে নিজের হাতে পেলেন। আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে লাগলো আর্দ্রকে সবাই কৌতুহল হয়ে তাকিয়ে আছে ওদিকে।
মহিলা- আর্দ্র বাবা আমার আরুশ আসেনি
আরুশ চমকে তাকালো ,আরুশের কি হলো ওহ নিজেই জানেনা ওহ মহিলাটি কে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। মহিলাটি আরুশকে জড়িয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে কাঁদতে লাগলো। যেন উনি কোনো হারানো জিনিস ফিরে পেয়েছেন। ওনার কান্না দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওনার কান্নার মানে কেউ খুঁজে পাচ্ছে না।
মহিলা- কেমন আছিস আরুশ বাবা, এতদিন আমার কাছে আসিসনি কেন ভুলে গেছিস বুড়িটাকে, একবার ওহ মনে পড়ে না আমাকে আমি যে প্রতিদিন তোর পথ চেয়ে বসে থাকি কেউ আসলেই মনে হয় তুই এসেছিস কিন্তু বের হয়ে দেখি তুই আসিস নি। আমি কি কোন ভুল করেছি, আমি তো তোর সব কথা শুনি তাহলে কেন আসিসনি বল।
মহিলাটির এমন কথা শুনে সবাই অবাক, আরুশের পুরানো কথা মনে না থাকায় ওহ কিছু বুঝতে পারছে না। আর্দ্র ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললো- বুড়ি তোমার উপর আরুশ রাগ করবে কেন, ওতো কাজের চাপের জন্য আসে না অনেক কাজের চাপ তো তাই তুমি কিছু মনে করো না।
মহিলা- আচ্ছা ঠিক আছে, তোমরা সবাই ভেতরে এসো। আরুশ বাবা আয় আমি তোর পছন্দের আচার করেছি খাবি আয়, তোমরাও এসো।
সবাই বাড়িটার ভেতরে গেলো, বাড়ির ভেতরটাও খুব সুন্দর।
মহিলাটি- ওরা কারা ঠিক চিনলাম না তো
আর্দ্র- ও হলো আরু
মহিলাটি- কি ওহ আরু মা এতো বড়ো হয়ে গেছে সেই ছোটো বেলায় দেখে ছিলাম ওহ তো আমাকে চেনেই না। খুব মিস্টি দেখতে হয়েছে, বড়ো হো মা বড়ো হো।
আর্দ্র- আর ওটা হলো রিতা আমার বউ আর ওহ তরী আরুশের হবু বউ।
আর্দ্র এর কথা শুনে মহিলাটি ওদের দিকে তাকালো।
মহিলাটি- তোর বউ মানে??
আর্দ্র- হুম বিয়ে করে নিয়েছি ,আর কিছু দিন পর আরুশের বিয়ে।ওগুলো তোমার নাতবউমা
মহিলাটি- আগে বলবি তো,ওরা কতক্ষন দাড়িয়ে আছে, মা তোমরা বসো এই বুড়ির বাড়িতে এসে তোমাদের নিশ্চয় কস্ট হচ্ছে, একটু কস্ট করো আমি তোমাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছি।
মহিলাটি ভেতরে চলে গেলেন,
আর্দ্র- উনার ছেলে মেয়ে সবাই বাইরে থাকেন তাদের বিশাল সম্পত্তি আছে, কিন্তু ওনাকে দেখার মতো কেউ নেয় । উনি এখানে অবহেলিত হয়ে একা পড়ে থাকেন। একবার গ্রামে ঘুরতে এসে আরুশের সাথে ওনার দেখা হয় তারপর থেকে আরুশ ওখানে আসলেই ওনার কাছে আসে আরুশ আর ওনার মধ্যে অদ্ভুত একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। আরুশকে উনি নাতির মতো ভালোবাসতে লাগলেন, আর আরুশ ঠাকুমার মতো। ওদের সম্পর্ক টা এমন হয়ে গিয়েছে যে কেউ দেখলে বলবে ওদের মাঝে রক্তের সম্পর্ক আছে।
কথাগুলো শুনে আরুশ সহ সকলে অবাক হয়।
সত্যি আমাদের আশেপাশে এমন কিছু মানুষ থাকে যাদের সাথে আমাদের কোনো রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও সম্পর্ক টা এমন তৈরি হয়ে যায় যা কোনো রক্তের সম্পর্ক এর থেকে ওহ দামি হয়ে যায়। কি হবে এতো অর্থ সম্পদ নিয়ে যদি না কাছের মানুষটা আমাদের কাছে থাকে। মহিলাটির সব থেকেও নেয়, সন্তান এর কাছে তিনি অবহেলিত, কিন্তু একটা অজানা অচেনা ছেলের কাছে তিনি কত দামি। কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হয় । আরুশ ওনাকে ভালোবাসে বলেই কিন্তু তিনি আরুশকে এতো ভালোবাসেন।
আর্দ্র- আরুশ মন খারাপ করিস না একদিন তোর সবকিছু মনে পড়ে যাবে।
আরুশ- হুম
মহিলাটি চলে আসেন ওনার হাতে একটা থালা ছিলো আর তাতে ছিলো ওনার হাতের তৈরি নানা রকমের খাবার।
মহিলাটি- আরুশ বাবা খেয়ে বলতো কেমন হয়েছে, তোমরাও খাও।
সবাই খাবার গুলো খেতে লাগলো সত্যি অসাধারণ।
তরী- খুব সুন্দর হয়েছে আমার তো ওই আমের আচার টা দারুন লেগেছে।
সবাই ওনার খাবারের প্রশংসা করতে লাগলেন।কথা বলা শেষ করে ওরা চলে যাবে ঠিক করে, সবাই মহিলাটাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল তরী যেতে যাবে মহিলাটি ওকে আটকে দেয়।
মহিলা- মা দাঁড়া ও
তরী- হুম বলুন
মহিলা- এইটা রাখো মা
মহিলাটি কাপড়ের তলা থেকে একটা বালা বের করে দেন।তরী খুব অবাক হয় ওনার এমন কাজে
তরী- আপনি এটা আমাকে দিচ্ছেন কেন
মহিলা- এটা আমার ,আমার স্বামী এটা আমাকে বাসর রাতে উপহার দিয়েছিলো আজকে এটা আমি তোমাকে দিচ্ছি
তরী- কেন,আমি এটা নিতে পারবো না আপনি রেখে দিন আপনার কাজে লাগবে
মহিলা- আমার আর কি কাজে লাগবে, আমার তো সময় শেষ হয়ে গেছে আর কতদিন বা বাঁচবো। আমার এই শেষ সম্বল টুকু আমি তোমার হাতে দিতে যায় আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না।
তরী- আমাকে কেন দিচ্ছেন
মহিলা- তুমি যে আরুশের বউ হবে তাই,আরুশের সাথে আমার কোনো রক্তের সম্পর্ক নেয় তবে মনের দিকে আমাদের সম্পর্ক অনেক। আমি আমার আরুশের বউকে এই ছোট উপহারটা দিতে চাই এআ নাও মা তুমি।
তরী মহিলাটির কথা ফেলতে পারলো না হয়তো বালাটার দাম বেশি নয়,আরুশ বা তরী চাইলে ওরকম হাজার টা বালা কিনতে পারবে কিন্তু এই ভালো বাসাটা ওই একটার ওহ মধ্যে থাকবে না। সবকিছু টাকা দিয়ে বিচার করা যায় না। কিছু জিনিস মূল্য হীন হলেও আমাদের কাছে অনেক দামি হয়ে থাকে তার কারন ভালোবাসা।
তরী ওনার দেওয়া বালা দুটো তরীর হাতে পড়িয়ে দিতে বলে,উনি খুব খুশি হন যেটা ওনার চোখ দেখে মনে হচ্ছিল। মহিলাটি তরীর হাতে বালা দুটো পড়িয়ে দিয়ে তরীকে জড়িয়ে ধরে চুমু খান। তরী ওনাকে বিদায় জানিয়ে চলে আসে।
ওরা আবার হাঁটতে থাকে কিন্তু তরী আনমনা হয়ে মহিলাটির কথা ভাবছে।আরুশ তরীকে আনমনা হয়ে হাঁটতে দেখে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
আরুশ- কি হয়েছে কি ভাবছো
তরী- কিছু না
আরুশ- কি বলো
তরী- ভাবছি ওই মহিলাটির কথা
আরুশ- ওহ
তরী- জানো উনি আমাকে একটা জিনিস দিয়েছে
আরুশ- কি
তরী ওর হাতদুটো আরুশের সামনে তুলে ধরে।
তরী- বালা দুটো
আরুশ অবাক হয়ে তরীর দিকে তাকায়।
তরী- ওনার শেষ সম্বল এই দুটি বালা ছিল,আর সেগুলো আমাকে দিয়ে দিলেন কারন আমি তোমার বউ হবো বলে। তোমাকে খুব ভালোবাসেন উনি।
আরুশ- আমার তো কিছুই মনে নেয়( মন খারাপ করে)
তরী- কি করবে বলো ,দেখবে সবটা ঠিক হয়ে যাবে
আরুশ- হুম।
ওরা কিছুক্ষন ওদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে বাড়ি ফিরে যায়।
আরু- আজকে বেশ ভালো কাটলো সবথেকে ভালো লাগলো ওই বৃদ্ধা মহিলার বাড়িতে
রিতা- হুম ওনার খাবার গুলো ওহ খুব সুন্দর খেতে।
আর্দ্র- তোমরা প্রথম বার বলে ওতো ভালো লেগেছে আমরা তো প্রত্যেক বার খাই হেবি লাগে কিন্তু।
আরু- হুম সত্যি অসাধারণ।
তরী কিছু বলছে না চুপচাপ ফোন টিপছে,আরুর চোখ যায় তরীর হাতের দিকে।
আরু- তরী তোর হাতে বালা এলো কোথা থেকে
তরী কিছু বলেনা
রিতা- হ্যা তাই তো যাবার সময় তো কিছু ছিলো না
আরু- দাদাভাই গিফট করলো নাকি
তরী- না
আরু- তাহলে
আরুশ- ওই মহিলাটি তরীকে উপহার হিসাবে দিয়েছে
সবাই গোলগোল চোখ করে তাকায়।
আরু- সত্যি
তরী- হুম, অনেক অনুরোধ করলো তাই আর না করতে পারিনি।
রিতা- খুব ভালো মানুষ কিন্তু
তরী- হুম
আরুশের মা- কার কথা বলছিস বলতো তোরা।
আর্দ্র- আরে বড়মা সেই বুড়ো মহিলাটার কথা বলছি যার সাথে আমাদের আরুশের এতো ভালো সম্পর্ক তার কথা বলছি।
আরুশের মা- হুম তার কথা অনেক শুনেছি একবার নিয়ে আসবি দেখবো ওনাকে
আরুশ- তাহলে কালকে গিয়ে আনবো
আরুশের মা- ওকে।
তখন ওদের বাড়ির কেয়ারটেকার আসেন।
কেয়ারটেকার- কাকে নিয়ে আসবে আরুশ বাবা।
আর্দ্র- আমাদের গ্রামের শেষে একটা বুড়ি থাকে না তার কথা বলছি
কেয়ারটেকার- তাকে কিভাবে আনবে
আর্দ্র- কেন কি হয়েছে
কেয়ারটেকার-………..
কেয়ারটেকার যা বললো তাতে সবার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো এটা কিভাবে সম্ভব….
#চলবে…
#হৃদয়ে_তুমি
#লেখিকাঃতানিমা_আক্তার_মিরা
#পার্টঃ২৪
কেয়ারটেকার যা বললো তাতে সবাই আকাশ থেকে পড়লো, ওরা কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না কথাটা ।
আরুশ- এটা কিভাবে হয়
কেয়ারটেকার- আমি তো সেটাই বুঝতে পারছিনা তোমরা কিভাবে বলছো ওনাকে দেখেছো।
আর্দ্র- কাকু আপনার মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে। এটা পসিবল নয়, আমরা ওনার সাথে কথা বলেছি, ওনার হাতের বানানো জিনিস খেয়েছি আর আপনি বলছেন উনি মারা গেছেন প্রায় তিনমাস হলো এটা কিভাবে?
কেয়ারটেকার- আচ্ছা কাল সকালে তোমরা গিয়ে আমার কথাটা মিলিয়ে নিয়ো তাহলেই হলো।
আর্দ্র- ওকে তাহলে আমরা কালকে সকালে গিয়ে দেখবো।আরুশ ঠিক বলেছি তো।
আরুশ- হুম
সেদিন রাতে কেউই ভালো করে ঘুমাতে পারেনি ,সবার মাথায় ওই কথাগুলোই ঘুরছে। মহিলাটি যদি মৃত হয় তাহলে কিভাবে ওদের সাথে কথা বললো।
পরেরদিন সকালে…
অদ্রি আর ওর বর আসার কথা ছিলো তাই সে আসতেই ওরা মহিলাটির বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়। অদ্রিরা আসতে আরু ওকে ওর ঘর দেখিয়ে দিতে যায়।
অদ্রি বাড়িতে ঢোকা থেকেই সবাইকে রেডি হতে দেখছে তাই আরু কে জিজ্ঞেস করলো- কোথায় যাবি তোরা সব
আরু- …………. অদ্রিকে সবটা বললো অদ্রি ওহ ওর বর কথাগুলো শুনে ওদের মতোই অবিশ্বাস করতে থাকে।
অদ্রির বর- এটা কীভাবে সম্ভব
আরু- সেটাই তো আমরা দেখতে যাচ্ছি, তোমরা রেস্ট নাও, ফিরে এসে কথা হবে।
আরু কথাটা বলে চলে যেতে গেলে অদ্রি ডাক দেয়- আরু দাঁড়া আমরাও যাবো তোর সাথে।
আরু-কিন্তু তোরা তো অনেক দূর থেকে এসেছিস রেস্ট নে
অদ্রির বর- এসে রেস্ট নেবো এখন চলো
অদ্রি- চল আরু
আরু- ওকে।
অদ্রি , অদ্রির বর, আর আরু বসার ঘরে চলে আসে।
আরুশ- কিরে তোরাও চলে এলি , রেস্ট নিবি না
আরু- ওরাও যাবে আমাদের সাথে।
অদ্রি- কেউ না করবে না কিন্তু
আরুশ- ওকে
সকলে ওই মহিলার বাড়ির সামনে উপস্থিত হয়।
আরুশ- চল আমরা ওনাকে খুঁজে দেখি
আর্দ্র- হুম চল।
ওরা সবাই মিলছ সারা বাড়ি খুঁজেও মহিলাটি কে খুঁজে পাইনি।
আর্দ্র- এখানে তো কেউই নেয়
কেয়ারটেকার- তোমরা যাকে পারো তাকে জিজ্ঞেস করো দেখবে সবাই বলবে ওনি মারা গেছে। আজ থেকে প্রায় তিনমাস আগে, আর তোমরা ওনাকে দেখেছো বললে সবাই তোমাদের মাথা খারাপ বলবে।
আরুশ- কিন্তু আমরা এতজন একই ভুল কিভাবে করলাম।
অদ্রির বর- আমার মনে হয় তোমরা কোনো ভুল করো নি ,উনি সত্যি এসেছিলেন আর তোমাদের সাথে দেখা ও করেছেন।
অদ্রি- মানে আমরা যেমন হরর মুভি তে দেখি সেরকম কিছু
অদ্রির বর- হুম।
আরুশ- সত্যি এটা বিশ্বাস হচ্ছেনা এটা ওহ হতে পারে। একজন মৃত মানুষ আমাদের এতো ভালোবাসলো ( অবাক কন্ঠে)
আর্দ্র- এটা যদি হয়ে থাকে , এটা হয়েছে শুধু মাত্র তোর কারনে।
আর্দ্র এর কথা শুনে সকলে আর্দ্র এর দিকে তাকালো ,
আর্দ্র সকলের তাকানোর কারনটা বুঝতে পেরে বললো-
“এভাবে তাকাচ্ছো কেন আমার যেটা মনে হচ্ছে সেটাই বলছি। উনি আরুশকে খুব ভালোবাসতেন হয়তো মৃত্যুর সময় আরুশের দেখা পাইনি তাই আরুশের সাথে দেখা করে গেল আর তরীকে ওনার শেষ সম্বল টা দিয়ে গেলো”।
সবাই আর্দ্র এর কথাতে হ্যা দিলো কারন সবার ওটাই মনে হচ্ছে।
আর্দ্র- চলো সবাই বাড়ি ফিরে যায়। এখানে তো কিছুই পাবো না।
ওরা সবাই ওদের বাড়িতে চলে আসে।বাড়িতে শেষে আর্দ্র সকলকে সবটা জানায়।
আরুশের মা- আমি একটা কথা বলবো।
আর্দ্র- বলো
আরুশের মা- মহিলার জন্য কিছু মানুষকে খাইয়ে, ওনার জন্য দোয়া করে কিছু একটা করে দিলে হয় না।
আরুশ- এটাই ভাল হবে।
ওরা কথা বলে রে যার ঘরে চলে যায়, এখন দুপুরের রান্নার জোগাড় চলছে। অদ্রি আর ওর বর রেস্ট নিচ্ছে। তরী আর রিতা কাজ না থাকায় বসে বসে বকবক করছে।
তরী- আমার না সবটা বিশ্বাস হচ্ছে না, কিরকম অদ্ভুত অদ্ভুত লাগছে ,মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি ।
রিতা- সত্যি ব্যাপারটা হরর মুভির মতো লাগছে। তরী তুই তো নায়িকা হয়ে গেছিস রে।
তরী- সব জায়গায় ফাজলামি করা তাই না।
রিতা- আরে ফাজলামি নয় সত্যি।
তরী- থাক আর বলতে হবে না।
তরী আর রিতা দুজনে গল্প করতে লাগলো।ওদের কথার মাঝে আরু ওখানে আসে
আরু- তরী তোকে দাভাই ডাকছে।
তরী- কেন
আরু- আমি জানব কিভাবে তোকে ছাদে যেতে বললো, যা তাড়াতাড়ি।
তরী- ওকে
তরী ছাদে গিয়ে দেখে আরুশ ছাদের রেলিং ধরে একধ্যানে তাকিয়ে আছে তরী আরুশের পাশে দাঁড়িয়ে বললো- ডাকছিলে
আরুশ- হুম
তরী- কেন
আরুশ- প্রেম করবো তাই
তরী- বাবা তুমি প্রেম করতে পারো আমার তো জানা ছিলো না আমি তো জানি তুমি একটা নিরামিষ
আরুশ- আমি নিরামিষ না আমিষ সেটা তোমাকে পড়ে বোঝাবো একবার বিয়েটা হতে দাও
তরী- কে, কাকে বিয়ে করবে। ওহ তুমি বিয়ে করবে দাঁড়া আমি তোমার জন্য মেয়ে খুঁজে দিচ্ছি
আরুশ- মজা করছো আমার সাথে
তরী- না মজা করবো কেন সত্যি বলছি, আমি একটা মেয়ের ছবি দেখাচ্ছি দ্যাখো তো মেয়েটা কেমন
তরী ফোন থেকে একটা মেয়ের ছবি দেখালো আরুশকে। আরুশ তো রেগে বোম
আরুশ- তরী ভালো হচ্ছে না কিন্তু
তরী- খারাপ করলাম কি
আরুশ- দাঁড়া তোমার হচ্ছে
তরীকে ধরার জন্য আরুশ তরীর পেছনে যায় , তরী আরুশের থেকে পালাতে থাকে।
আরুশ- তরী দাঁড়া বলছি
তরী- না
আরুশ- ভালো হবে না কিন্তু
তরী- হিহি
হঠাৎ আরুশ মাথা চেপে ধরে তরী বলে ডেকে উঠে তরী ভাবে আরুশ মজা করছে কিন্তু আরুশ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।আরুশ পড়ে যেতেই তরী চেঁচিয়ে উঠলো
তরী- আরুশ
তরীর চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে আসে। এসে আরুশকে পড়ে থাকতে দেখে আরুশকে ধরাধরি করে নীচে নিয়ে যায় , তরী কাঁদতে থাকে খুব।
১ ঘন্টা পর…
আরুশের জ্ঞান ফেরে এবং সবথেকে অদ্ভুত জিনিস হলো আরুশের পুরানো সব কথা মনে পড়ে গেছে। সবাই খুব খুশি।
আরুশ- মা আমার সব কথা মনে পড়ে গেছে, আমি তোমাকে ,তোমাদের চিনতে পারছি , আমি ঠিক কতটা খুশি তোমাদের বোঝাতে পারবো না।
আরুশের বাবা- হুম বাবা আমরা সকলে খুব খুশি।
বিকালে….
আরুশ- এই এইভাবে বসে থাকবি চল ঘুরে আসি আমার তো সবটা মনে পড়ে গেছে।আমি তোমাদের সবটা ঘুরিয়ে দেখাবো
অদ্রি- হুম চল ঘুরে আসি ,বসে বসে ভালো লাগছে না।
আরু- চলো সকলে।
ওরা সকলে আবার ঘুরতে বের হয়, কথা মতো ওরা এবার অন্যদিকে যাচ্ছে।
রিতা- আর কতটা ভালো লাগে না হাঁটতে
তরী- তোর বরকে বল কোলে নিতে
রিতা- তুই বল
তরী- আমাকে বলেই নিয়ে নেবে
রিতা- আরুশ দা
রিতা ডেকে উঠতেই তরী রিতার দিকে তাকালো,রিতার ডাক শুনে আরুশ পেছনে তাকালো
রিতা- কত টা এখনো এতো হাঁটতে হাঁটতে শেষ
আরুশ- একটু খানি বাকি আছে আর তারপর দেখবে।
রিতা- হুম
ওরা আরেকটু হেঁটে একটা জায়গায় আসে
জায়গাটা নদীর পাশে একদম নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ, কাশফুল ফুটে আছে, সাদা সাদা চারিদিকে দেখা যাচ্ছে। আরেকটু গেলেই নদী ,জেলেরা মাছ ধরছে। একটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছে সবাই।
আরু- সবাই এদিকে এসো আমি ছবি তুলবো।
সবাই আরুর কাছে আসে।
আর্দ্র- রিতা কোথায় গেলো
তরী- আমার সাথেই তো ছিলো, কোথায় গেলো
আরু- এদিক ওদিক আবার গেলো কোথায়
ওরা রিতাকে খুঁজতে লাগলো। রিতাকে খুঁজতে খুঁজতে দেখলো….
#চলবে….