হৃদয়ে তুমি পর্ব-০৩

0
1792

#হৃদয়ে তুমি
#লেখিকাঃতানিমা_আক্তার_মিরা
#পার্টঃ৩

আর্দ্র আর আরুশ হা করে রয়ে যায়। আর্দ্র আর আরুশ একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো।ওদের হাসতে দেখে আরুশী অবাক হয়ে যায়।

আরুশী- তোরা হাসছিস কেন??
আরুশ- কিছুনা।একটা সেলফি তুলবো আয়( আর্দ্রের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে)
আরুশী- ওকে।

আরুশী আরুশের পাশে এসে দাঁড়ায়, আর্দ্র আরুশীর পেছনে দাঁড়িয়েছে,আরুশী নিজের মুখটা ফোনের স্ক্রিনে দেখে চেঁচিয়ে উঠলো।ততক্ষনে ছবি তুলে নিয়েছে আরুশ।আরুশীর গোটা মুখ ভূতের মতো লাগছে।আরুশ আর আর্দ্র হাসতে হাসতে শেষ।

আরুশী রেগে অদ্রি বলে চেঁচিয়ে উঠলো।ওর চেঁচামেচিতে বাড়ির সবাই একজায়গায় জড়ো হয়।সবাই আরুশকে দেখে হাসতে লাগলো।

নিরা- আরু তোর অবস্থা এমন কেন?
আরুশী- তোমার মেয়ে করেছে,ওকে তো আমি।
অদ্রি-আমি কিছু করিনি আমাকে সাজাতে বলেছিস আমি তোকে সাজিয়েছি আবার কী।
আরুশী- এটাকে সাজানো বলে ( রেগে)
আরুশ- হেভি লাগছে ছবিটা আমি সবাইকে দেখাবো।
আরুশী- ভালো হবে না দাদাভাই,
আর্দ্র-দেখা যাবে।

আরুশের চোখ পড়ে তরীর দিকে তরী ওদের কান্ড দেখে প্রাণ খুলে হাসছে।আরুশ ওর হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে- হাই মে মার যায়ি( বুকে হাত দিয়ে বিরবির করে বলে)

তরীর হাসতে হাসতে চোখ পড়ে আরুশের দিকে আরুশ ওর দিকে তাকিয়ে আছে এটা বুঝতে পেরে লজ্জা পেয়ে মাথা নীচু করে নেয়,আরুশ তরীর কান্ড দেখে হাসে।

মিলি- আরু সবটা ধুয়ে ফেলে তাড়াতাড়ি আয়,তোরা তো ঘুরতে বের হবি।

আরুশী – তোমরা যাও আমি যাবো না।
আর্দ্র-কেন?
আরুশী- আমি যাবো না।

আরুশী রেগে ওখান থেকে চলে গেলো।

আরুশ- নাও এবার ঘোরাটা লাটে উঠবে।
তরী- আমি দেখছি।

তরী আরুশীর পেছনে যায়‌।

তরী- আরু অদ্রি আপু তো মজা করেছে তুই মুখ ধুয়ে আয় আমি তোকে রেডি করে দিচ্ছি।

আরুশীকে তরী রেডি করে নীচে নিয়ে আসে আর ওরা ঘুরতে বের হয়।

আরুশ ড্রাইভ করছে, আর্দ্র আরুশের পাশে বসে আছে।আর পেছনে ওরা তিনজন।

আরুশ- কোথা যাওয়া যায়।
আরুশী- ওই নদীর ধারে চল না।
আরুশ- ওকে।

ওরা সবাই নদীর ধারে যায়।এদিক ওদিক ঘুরতে থাকে,সেলফি তোলে সবাই মিলে।ওদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে চলে যায়।

রাতে অদ্রির রুমে-

আসফাক- কালকে বিয়ের শপিং করতে যাওয়া হবে।
আরুশ- কখন যাবে।
আসফাক- সকালের দিকে কেন??
আরুশ- না মানে আমার বোন গুলো তো খুব তাড়াতাড়ি রেডি হয় তাই।
আরুশী- ওই কী বলছিস।
আরুশ- কিছু নয়।
আসফাক- রেডি থাকবি সবাই।

আসফাক চলে যায়।

অদ্রি-কী আমরা সাজি।
আর্দ্র-না ভূতে বলে দাভাই ৩ মিনিট, দাদাভাই ২ মিনিট।
আরুশী- এভাবে বলছিস কেন একটু না হয় সাজলাম।
আরুশ- ওটাকে একটু বলে।
আরুশী- তোকে আমি বলছি দ্যাখ তোর বউ হবে সাজ পাগলি,৪ঘন্টা ধরে সাজবে।
আরুশ- ওতো সহজ নয় আমার বউ সাজে না আর ওর সাজতে ৪ মিনিট ওহ লাগে না।

সবাই আরুশের দিকে অবাক হয়ে তাকায়।

আর্দ্র- আরুশ কী বলছিস।
আরুশ- কিছু না।

আরুশ চলে যায় ওখান থেকে। আর্দ্র ওহ ওর পেছনে চলে যায়।

পরেরদিন সকালে ওরা সবাই মিলে শপিং করতে যায়। শপিং মলে…সবাই সবার মতো কেনাকাটা করে আরুশ সবার আড়ালে কয়েকটা জিনিস কেনে।কেনাকাটা শেষে সবাই বাড়ি ফিরে আসে।

বিকালে-

আরুশী- দাদাভাই আমি আর তরী একজায়গায় যাবো নিয়ে যাবি।
আরুশ- কোথায় যাবি?
আরুশী- একটু ফ্রেন্ডদের সাথে মিট করবো।
আরুশ- আজকে
আরুশী- আসলে আমার একটা ফ্রেন্ড এর বার্থডে আছে সবাই আসবে আমাকেও যেতে বলছে।
আরুশ- ওকে যা তরী কে টানিস কেন??
আরুশী- আরে তরী না গেলে হবে না,তরীর ওতো ভালো বন্ধু।
আরুশ- আচ্ছা কখন যাবি।
আরুশী- ৬ টায়।

সন্ধ্যা বেলা-

আরুশ- কীরে আসবি তো
আরুশী- আসছি।

আরুশী তরী কে নিয়ে নীচে আসলো।

আরুশী- দাদাভাই

আরুশ ওদিকে তাকিয়ে শক খেয়ে যায়- তরী একটা ব্ল্যাক শাড়ি পড়েছে,মাথায় কালো হিজাব, হাতে কালো চুড়ি,কপালে একটা টিপ আর ঠোটে পিংক কালারের লিপস্টিক।অপরূপ লাগছে।

আরুশী- দাদাভাই চল।

আরুশীর ডাকে আরুশের ধ্যান ভাঙল।

আরুশ- চল।

আরুশ ওদের নিয়ে পার্টিতে গেলো।আরুশীরা আসতেই সবাই ওদের ঘিরে ধরলো।আরুশ খেয়াল করলো সবার নজর তরীর দিকে,ওর মাথা গরম হতে থাকলো।

আরুশ সুযোগ খুঁজছিলো তরী কে একা পাবার।সবাই নিজেদের কথায় ব্যস্ত হতেই,আরুশ তরীকে নিয়ে একটা ফাঁকা জায়গায় হলো।

তরী- কী হলো এভাবে টেনে আনলেন কেন?
আরুশ- তোমার এত সাজার কি আছে।
তরী- নিশ্চুপ
আরুশ- তরী উওর দাও কেন এতো সেজেছো।
তরী- আপনাকে উওর দিতে আমি বাধ্য না।

আরুশ কথাটা শুনে পুরো আগুন।আর নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে না পেরে তরীর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়,প্রথমে রাগটা ঝাড়লেও পরে সেটা ভালোবাসাই পরিনত হয়, কিছুক্ষণ পরে আরুশ তরী কে ছেড়ে দেয় ওরা দুজনেই হাঁপাচ্ছে।

তরী- এই আপনি এটা কী করলেন।
আরুশ- যা করেছি বেশ করেছি।
তরী- হূ বেশ করেছে আমার ঠোঁটের ত্যানাত্যানা বাজিয়ে দিলো( মনে মনে)
আরুশ- পরেরবার সাজতে দেখলে না।
তরী- আমি আবার সাজাবো তাতে আপনার কি আপনি কে আপনার কথা শুনবো।

আরুশ আবার রেগে যায় তরীর কথা শুনে।

আরুশ- আমি কে জানো না তাই না( রেগে)
তরী- না( ভাবলেশহীন ভাবে)
আরুশ- কি বললে আবার বলো( ধমক দিয়ে)
তরী- আপনার কোনো অধিকার নেয় আমাকে ধমক দেবার।

আরুশ এবার আরো রেগে তরীর হাতটা ধরে বলতে লাগলো- কী বললে অধিকার আমার অধিকার সবথেকে বেশি তোমার উপর আমি যখন ইচ্ছা তোমাকে মারবো,বকবো আবার আমিই আদর করবো ওকে।

তরী – হাতটা ছাড়ুন আমার লাগছে।

আরুশ রেগে হাতটা ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।তরী ওখানে বসে পড়ে কাঁদতে থাকে- শয়তান একটা যখন ইচ্ছা মারবে,বকবে, আদর করবে আর কিসের অধিকারে করবে সেটা বলতে গেলে গায়ে ফোস্কা পড়বে।

তরী নিজেকে সামলে নিয়ে, পার্টিতে সবার সাথে আনন্দ করতে থাকে,ওর হাতে প্রচুর ব্যথা করছে।
পার্টি শেষে ওরা বাড়ি চলে যায় আরুশী খেয়াল করে তরীর হাতটা লাল হয়ে আছে,ওহ বিষয়টা কিছুটা আন্দাজ করতে পারে।

বাড়িতে গিয়ে সবাই ফ্রেশ হয়ে নেয়।আরুশী আরুশের রুমে যায়- দাদাভাই।
আরুশ- হুম বল।।
আরুশী- তুই তরীর সাথে কী করেছিস আমি জানিনা,তবে কেন এমন করছিস নিজেও কস্ট পাচ্ছিস আর তরী ওহ।
আরুশ- জানিস আরু তরীর মনে হয়তো আমি এখনো জায়গা করে নিতে পারিনি।
আরুশি- কে বলেছে।
আরুশ- আমি বুঝলাম আমাকে ভালোবাসলে আমার অধিকার কি এটা জিজ্ঞাসা করতো না।
আরুশি- তুই বলেছিস ।
আরুশ- না।
আরুশি- পাগলা ও তোর মুখ থেকে শুনতে চাইছিলো।

আরুশ কিছু বলে না।

আরুশি- দাদাভাই যা রাগ ভাঙানোর ব্যবস্থা কর।
আরুশ- কোথায় ওহ‌।
আরুশি- আমার রুমে আছে।

আরুশ আরুশির রুমে নক করে।

তরী- দরজা খোলা আছে।

আরুশকে ভেতরে ঢুকতে দেখে তরী অবাক হয়।

তরী- আপনি।
আরুশ- দেখি হাতটা দেখি।
তরী- হাত দেখে কী করবেন।

আরুশ জোড় করে তরীর হাতটা টেনে নিয়ে তাতে মলম লাগিয়ে দেয়।

আরুশ- তরী সোনা সরি‌
তরী- কীসের জন্য।
আরুশ- পার্টিতে ওরকম করার জন্য।
তরী- ওহ
আরুশ- কস্ট দিয়েছি সেটা আদর দিয়ে পুষিয়ে দিব।

তরী আরুশের দিকে তাকায়।

আরুশ- একটা কথা বলবো।
তরী- কী।
আরুশ- আজকে তোমাকে না পুরো আগুন লাগছে মনে হচ্ছিল খেয়ে ফেলি।

তরী চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায়।

আরুশ- তখন পারিনি কিন্তু এখন খাবো।
তরী- পাগল হয়েছেন।
আরুশ তরী কে বলতে না দিয়ে ওর ঠোঁটে আঙ্গুল রাখে তারপর আঙ্গুল দিয়ে তরীর ঠোঁটে সাইট করতে থাকে তরী কেঁপে উঠল।

আরুশ তরীর কানের কাছে গিয়ে লো ভয়েজ এ বললো- তরী সোনা আমি তোমার কে হয়।

তরী রেগে গিয়ে আরুশকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়।
আরুশ তরীর কান্ড দেখে হাসতে থাকে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে