#হৃদয়ে তুমি
#লেখিকাঃতানিমা আক্তার মিরা
#পার্টঃ১
কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে নিজের বাড়ির বসার ঘরে আর্দ্রকে দেখে চমকে উঠলো তরী। এই মূহুর্তে আর্দ্রকে এখানে দেখবে সে কখনো ভাবেনি। দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিলো তরী, মার ডাকে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো সে।
*পরিচয়*
__________
(গল্পের নায়িকা তরীতা জাহান , সবাই ওকে তরী বলে ডাকে। তরী অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।বাবা মা ভাইকে নিয়ে তরীর পরিবার।বাবা একজন আধ্যাপক,মা হাউস ওয়াইফ।ছোটো ভাই ক্লাস নাইনে পড়ে। তরী দেখতে সুন্দরী, শান্তশিষ্ট মেয়ে,পড়াশোনায় মোটামুটি ভালো)
তরীর মা তরীকে দরজার বাইরে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো- কীরে ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?? ভেতরে আয় দ্যাখ আর্দ্র এসেছে।
মায়ের কথা শুনে মুখে মেকি হাসি দিয়ে ভেতরে ঢুকে আর্দ্রকে বললো।
তরী- কেমন আছো।
আর্দ্র তরীর দিকটা বুঝতে পেরে হালকা হেসে উওর দিলো- ভালো,তুমি।
তরী -ভালো।
মা- তোরা কথা বল,আমি খাবারের ব্যবস্থা করি।
মা রান্নাঘরে চলে গেলো তরী চুপচাপ বসে আছে। ওর মনে অনেক প্রশ্ন কিন্তু করতে পারছে না। আর্দ্র ওর মনের কথা বুঝতে পেরে বললো।
আর্দ্র- এই যে ম্যাম এতো বকবক করিস এখন চুপচাপ কেন??
তরীর মুখের লাগাম খুলো গেলো আর্দ্রের দিকে তাকিয়ে বলতে চালু করলো।
তরী- তুমি এখানে কেন? কী করতে এসেছো??
আর্দ্র শান্ত গলায় উওর দিলো
– তোকে নিতে এসেছি।
আর্দ্রের এমন কথা শুনে তরীর চোখ কপালে উঠে গেলো।
তরী- আমাকে নিতে এসেছো মানে আর কেনো নিতে এসেছো।
আর্দ্র- অদ্রির বিয়ে তাই তোকে নিতে এসেছি।
তরী- কী??
আর্দ্র- কানে কম শুনিস নাকি।
তরী- অদ্রি আপুর বিয়ে মানে,কবে , কার সাথে বিয়ে ??
আর্দ্র- অদ্রির কাছ থেকে শুনে নিবি এখন তাড়াতাড়ি ব্যাগ গোছা।
তরী- আমি যাবো না।
আর্দ্র- কেন??
তরী- আমার নতুন কিছু নেয়।
আর্দ্র- ওই বাহানা দিবিনা। তোদের তিনজনের জন্য সব কিছু কেনা হবে আর তোকে কোনো কিছু না নিয়ে গেলে ও চলবে। শুধু তুই তোর দরকার মতো জিনিস নিয়ে আয় তাতেই হবে।
আর্দ্রের কথা শুনে ওহ কি বলবে খুঁজে পায়না।
তরী – কবে বিয়ে অদ্রি আপুর?
আর্দ্র- রবিবার,কেন??
আর্দ্রের কথা শুনে তরী আকাশ থেকে পড়ে।
তরী- কী ?? আজ মোটে সোমবার এতদিন আগে থেকে গিয়ে আমি কী করবো??
আর্দ্র- আমি জানি না তুই আজ যাবি ব্যাস। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়। নাহলে এই ভাবেই নিয়ে যাবো,যা।
তরী রেগে চলে যায় নিজের রুমে।রুমে গিয়ে দরজাটা ধরাম করে বন্ধ করে বিছানায় বসে রাগ কন্টোল করতে থাকে।
তরী- এরা আমাকে সবাই পেয়েছে টা কী,আমি কিছুতেই ওর সামনে যাবো না,যাবো না।কী করা যায় ,কি করা যায়,আইডিয়া।
তরী ওর ফোন বের করে ওর বাবাকে ফোন দেয়।
তরী- হ্যালো বাবা।
তরীর বাবা- হ্যাঁ মামনি বল।
তরী- বাবা আর্দ্র ভাইয়া এসেছে আমাকে নিতে।
তরীর বাবা- হ্যাঁ আমি জানি তুই রেডি হয়ে চলে যা।
তরী ফোনটা কেটে বিছানায় বসে কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে- আমাকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না,বিদায় পৃথিবী।
তরী আরো কিছুক্ষণ গজগজ করে তারপর একপ্রকার বাধ্য হয়ে, রেডি হয়ে নীচে নামে।
ওর মা আর আর্দ্র কথা বলছে।
আর্দ্র- আন্টি আপনাদের কিন্তু যেতেই হবে।
তরীর মা- হুম যাবো,তরীটাকে একটু দেখে রেখো জানো তো কী রকম মেয়ে।
তরী- আমি যেনো ছোটো বাচ্চা আমাকে দেখে রাখবে।( মনে মনে)
তরী ওদের সামনে গিয়ে গম্ভীর গলায় বললো- আমি রেডি।
আর্দ্র আর তরীর মা ওর দিকে তাকালো তরী একটা ধূসর রঙের নেটের গাউন পড়েছে। মাথায় ম্যাচিং করে হিজাব বাঁধা মুখে কোন নেয় ।আর মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে।
তরীর মা- কীরে মুখ কেন এমন??
তরী- আমাকে জমের দুয়ারে পাঠাচ্ছো আর মুখ এমন হলেই দোষ( মনে মনে)
তরী- না কিছু নয়।ভাইয়া চলো।( মেকি হাসি দিয়ে)
আর্দ্র- চল।
তরী- মা আসছি।
তরীর মা- হুম ভালো ভাবে যাস।
তরীর মাকে বিদায় দিয়ে ওরা রওনা দিলো। তরী গাড়ির পেছনের সিটে বসতে গেলে আর্দ্র বলে উঠে- ওই তোর কী আমাকে তোর গাড়ির ড্রাইভার মনে হচ্ছে, সামনে এসে বোস।
তরী চুপচাপ সামনে এসে বসে,আর্দ্র গাড়ি চালাতে চালু করে।তরী অনেকক্ষন চুপচাপ থাকে কিন্তু আর পারে না ওহ মুখ খোলে।
তরী- আজ বাইক নিয়ে আসো নি কেন?
আর্দ্র- তোকে কেনো আমি আমার বাইকে উঠাবো।
তরী- থাক আর বলা লাগবেনা , আমি বুজতে পারছি ওই গোমড়া মুখোটা তোমাকে বলেছে না বাইক না আনতে।
আর্দ্র- ওই তুই কাকে গোমড়া মুখো বলছিস।
তরী- যাকে বুঝছো তাকে।
আর্দ্র- আচ্ছা তুই ওর সামনে বলতে পারবি তো কথাটা।
তরী চুপ করে যায়। আর্দ্র হাসে তরীর মুখ দেখে।
আর্দ্র- তোর গোমড়া মুখো জানে না এমনকি বাড়ির কেউ জানে না তুই আজ যাবি।
তরী- কী!তাহলে তুমি আমাকে নিয়ে যাচ্ছো কেনো??
আর্দ্র- বাবাই বললো তোকে নিয়ে যেতে তাই নিয়ে যাচ্ছি।
তরী- আঙ্কেল কেন বলেছে।
আর্দ্র-আরে আমি কীভাবে জানবো এখন চুপ করে থাক আমাকে গাড়ি চালাতে দে।
আর্দ্র হঠাৎ বলে উঠল- ওই আইসক্রিম খাবি।
তরী ভেবে বললো – হুম।
আর্দ্র- তুই বস আমি আসছি।
আর্দ্র চলে গেলো তরী কে বসিয়ে রেখে আইসক্রিম আনতে।
আর্দ্র আইসক্রিম এনে তরীর হাতে দেয়।তরী আইসক্রিম খেতে থাকে।আর বকবক করতে থাকে।
তরী- অদ্রি আপুর বরের নাম কী ??
আর্দ্র- রনিত।
তরী আর্দ্রের দিকে তাকালো।তরীর তাকানো দেখে আর্দ্র বললো- হুম লাভ ম্যারেজ।
তরী- কীভাবে হলো এসব??
আর্দ্র- তুই অদ্রিকে জিজ্ঞাসা করে নিবি এখন চুপ করে থাক।
তরী চুপ করে আইসক্রিম খেতে থাকে।
কিছুক্ষন পর ওরা চৌধুরী বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়।
আর্দ্র- ওই চলে এসেছি নেমে পর।
তরী বাইরে বেরিয়ে আসে। চারিদিকে তাকিয়ে থাকে বাড়িটা বিরাট বড়ো,আর সুন্দর ও।
আর্দ্র- তুই থাকবি নাকি এখানে??
তরী- না চলো।
আর্দ্র তরীকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে।তরী কে এখানে দেখে সবাই অবাক হয়।
নিরা চৌধুরী- তরী মামনি তুই??
তরী- কেমন আছো সবাই।
মিলি চৌধুরী- ভালো,তুই এসেছিস আমরা খুব খুশি হয়েছি,অদ্রি তরী কে নিয়ে যা তোর রুমে।
অদ্রি- হুম।
মিলি- যা মামণি ফ্রেশ হয়ে নে।
( আর্দ্র হলো চৌধুরী বাড়ির ছোটো ছেলে। নিরা চৌধুরী আর আসিফ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে। আর্দ্রের ছোটো বোন অদ্রিতা। আর্দ্র ওদের পারিবারিক বিজনেস দেখা শোনা করে। আর্দ্র দেখতে খুব সুন্দর অনেক মেয়ে আর্দ্রের জন্য পাগল কিন্তু এসবে ইন্টারেস্ট নেয়)
অদ্রি তরী কে নিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে গেলো।তরী বিছানায় বসে অদ্রিকে বললো- কেমন আছো।
অদ্রি- হুম ভালো।
তরী- ভালো তো থাকবেই,বিয়ে বলে কথা।
অদ্রি লজ্জা পেয়ে গেলো।
তরী- থাক লজ্জা পেতে হবে না।বলছি আরু কোথায় গো।
অদ্রি- জানিনা ঠিক বেড়িয়ে গেলো তো।
তরী- ওহ।তা তোমার বিয়ে আমাকে একবার ওহ বললে না।
অদ্রি- হঠাৎ করে ঠিক হয়েছিলো আমি ভাবলাম তোকে সারপ্রাইজ দেবো কিন্তু দাভাই বলে দিলো।
তরী- রাগ করো কেন, তোমার বিয়ে শুনে আমি খুব অবাক হয়েছিলাম।
অদ্রি- হুম,ফ্রেশ হয়ে নে নাহলে মা আমাকে বকবে।
তরী- হুম
তরী ফ্রেশ হয়ে জামা চেঞ্জ করে নেয়।তরী একটা পিংক কালারের সালোয়ার কামিজ পড়েছে।কামিজের ওড়নাটা মাথায় দেওয়া।
অদ্রি- তরী তুই বস আমি নিচে থেকে একবার আসি।
অদ্রি নীচে চলে যায় আর তরী বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে থাকে। হঠাৎ তরী কে পেছন থেকে একজন জড়িয়ে ধরে তরী চমকে উঠে…….
#চলবে….
( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আর কেমন হয়েছে জানাবেন)