#হৃদয়ের_আঙ্গিনায়_তুমি
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৯
১৬.
আজকে ওহি আর ইনহাজ ইনহাজের বেস্টফ্রেন্ডে ইনানের বিয়েতে যাবে।ওহি ইনহাজকে ভীষণ জ্বালিয়েছে এই ক’দিন।ইনহাজও হুটহাট মেরে দিয়েছে এতে অবশ্য ওহি রাগ করেনি।আরো মজা নিয়েছে ইনহাজের সাথে।ওরা রিসোর্টের উদ্দেশ্য রওনা হয়।ইনহাজ ড্রাইভ করছে আর ওহি পাশে বসে বাইরের দৃশ্য দেখছে।
ওরা রিসোর্টে পৌছে গিয়েছে।ইনান ওদের দেখে এগিয়ে আসে।ওহিকে দেখে হেসে বলে,,
-“আসসালামু আলাইকুম ভাবি।কেমন আছেন?”
ওহিও আলতো হেসে বলে,,
-“ওয়ালাইকুম আসসালাম ভাইয়া।আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন”
-“ভালোই আছি ভাবি।এই ইনহাজ যা ভাবিকে নিয়ে তোদের রুমে যা।অনেক জার্নি করে এসেছিস”
ইনহাজ ইনানের কথায় সায় দিয়ে ওদের রুমে চলে আসে।ওহি রুমে আসতেই ওর খুব ভালো লাগে।সবচেয়ে ভালো লেগেছে বেলকনিটা।ইনহাজ ফ্রেশ হতে গিয়েছে।ওহি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে হাওয়া খাচ্ছে।ইনহাজ বের হতেই ও ফ্রেশ হয়ে নেয়।ফ্রেশ হয়ে একটা নীল রঙের শাড়ি পরে।ইনহাজ ওর দিকে একপলক তাকিয়ে ফোনের দিকে তাকায়।
ওহি ইনহাজের কান্ডে বিরক্ত হয়।কই একটু হা করে তার দিকে তাকিয়ে থাকবে তা না ফোনের ভেতরে ঢুকে আছে।ওহি গিয়ে ইনহাজের কাছ থেকে ওর ফোন কেড়ে নেয়।ইনহাজ রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,,
-“কি সমস্যা তোমার ফোন নিলে কেনো?ফোনটা দাও”
ওহি ভেংচি কেটে বলে,,
-“দেবো না কি করবেন আপনি।কই আমি একটু শাড়ি পরেছি হা করে তাকিয়ে থাকবেন তা না ফোনের ভেতরে ঢুকে আছে”
ইনহাজ ভ্রু কুচকে বলে,,
-“তার মানে তুমি চাইছো আমি তোমার দিকে তাকাই”
-“হ্যা চাইছি তো তাকান আপনি আমার বর আপনি ছাড়া আর কে আমার দিকে তাকাবে”
ওহি কথাটা বলেই মুখে হাত দিলো।হুতাশে কি বলে ফেলেছে সে।এখন কি হবে।ইনহাজ তো সুবিধার মানুষ না।কখন কি করে বসে।ইনহাজ বাঁকা হাসে।ওহি ভয় পায়।ইনহাজ ওহির দিকে এগোতে এগোতে বলে,,
-“কি যেনো বলছিলে তুমি আমি তোমার বর তাই না বর হলে তো আরো অনেক কিছুই করে শুধু তাকায় না”
ওহি কত বড় ভুল করেছে বুঝতে পারছে।পেছাতে পেছাতে দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গিয়েছে।ইনহাজ তার ভীষণ কাছে দাঁড়িয়ে আছে।ওহি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।কেমন লাগছে তার।ওহি ভাঙা গলায় বলে,,
-“স..রি আ..মা.র ভু..ল হ..য়ে গিয়েছে আর কখনো হবে না এমন”
ইনহাজ ওহির কোমড় জড়িয়ে নিজের একদম কাছে এনে ফিসফিস করে ওর কানে বলে,,
-“এখন কি এসব বললে হয় আমি না তোমার বর।তো বরের তো শুধু তাকিয়ে থাকা না অন্য কিছু করার অধিকার ও আছে”
ইনহাজ ওহির গলায় একটা কামড় বসিয়ে দেয়।ওহি ঠকঠক করে কাঁপছে।শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম ইনহাজের কান্ডে।ইনহাজ ওহিকে ছেড়ে দিয়ে দূরে দাড়িয়ে বলে,,
-“ফারদার আমার সাথে লাগতে এসো না এর থেকেও খারাপ কিছু করে বসবো তখন ভালো হবে না”
ওহির তো ইনহাজের একটা কথাও কানে ঢোকেনি।ও এখনো কেঁপে যাচ্ছে।চোখ বুঝে শ্বাস নিচ্ছে।কি হলো ওর সাথে এতো সময় ভাবতেই লজ্জা ও লাগছে আবার ভয়ও করছে।সে আর জীবনেও ইনহাজকে ওই কথা বলবে না।ইনহাজ তাকিয়ে আছে ওহির দিকে।বেশ দেখতে মেয়েটা।হলুদ ফর্সা গায়ের রঙ।মিডিয়াম লম্বা দেখতে ভীষণ মায়াবতী।কখনো সেইভাবে তাকাইনি ইনহাজ ওহির দিকে।
সে দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নেয়।ইনানের কথাগুলো সে ভোলেনি এখনও।তাই সে ওহিকে ইগনোর করে।আরো একটা কারণ আছে যা সে কখনোই প্রকাশ করবে না।কখনোই না।সে কথাটা কাউকে বলেনি।আজকে ইনানের গায়ে হলুদ।ওহি ইনহাজের পেছন পেছন ছিলো সারাটা সকাল।কারণ ও কিছুই জানে না এখানকার।একটু আগে রুমে এসেছে গোসল করে রেডি হওয়ার জন্য।
ওহি একটা কালো হলুদ মিশ্রনের ভারি শাড়ি পরেছে।তার সাথে হালকা সাজ ভীষণ সুন্দর লাগছে।ওহি রেডি হয়ে বসে থাকে রুমে।তখনই দরজা খুলে ইনহাজ রুমে প্রবেশ করে।ওহি হা করে ইনহাজের দিকে তাকিয়ে থাকে।ইনহাজকে কালো পাঞ্জাবিতে অনেক সুন্দর লাগছে।ইনহাজ দেখার আগেই চোখ সরিয়ে নেয় ওহি।নাহলে আবার কথার জালে তাকে ফাঁসিয়ে দেবে।
ইনহাজ রুমে ঢুকে ওহির দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরে।সে ইনানের রুম থেকে পাঞ্জাবি পরলেও তার চুল ঠিক করা বাকি তাই সে রুমে এসেছে।নিজেকে রেডি করে বের হওয়ার সময় ওহি বলে,,,
-“শুনুন আমি কি এই রুমেই বসে থাকবো”
-“তোমার ইচ্ছা”
ওহি বিরক্ত হয়ে বলে,,
-“ইচ্ছা মানে!আমি কি এখানকার কিছু চিনি বা কাউকে চিনি।আপনি কেনো আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন মিস্টার খান।তার থেকে তো বাড়িতে বসে টিভি দেখাও ভালো।”
-“ঠিক আছে অনুষ্ঠান শুরু হলে আমি তোমায় নিতে আসবো।এখন রুমেই থাকো।”
ইনহাজ চলে যায়।ওহি বেলকনিতে চলে যায়।ওহি দাঁড়িয়ে বাতাস খাচ্ছে।ফোন বের করে কয়েকটা সেলফি তুলে নেয়।সেগুলো মাহির আর আহিয়াকে দেয়।তিনজন মিলে ভিডিও কলে কথা বলতে থাকে।আহিয়া আর ওহি ঝগড়া করছে মাহিরের সাথে।মাহির বেচারা চুপচাপ শুনছে সবকিছু।
ইনহাজ রুমে এসে দেখে ওহি রুমে নেই।বেলকনিতে এসে দেখে ওহি ভিডিও কলে কথা বলছে আর হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।ইনহাজ দেওয়ালে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজে ওহির দিকে তাকিয়ে থাকে।ওহি নিজের মতো কথা বলেই যাচ্ছে তার খেয়ালই নেই আশেপাশে কেউ আছে কিনা।কথা শেষ করে ফোন টিপতে টিপতে রুমে ঢুকতে গিয়ে কারো বুকের সাথে ধাক্কা খায় ওহি।মাথা ডলতে ডলতে সরে এসে তাকিয়ে ইনহাজকে দেখে অবাক হয়।
ইনহাজ কখন রুমে এসেছে সে তো জানেই না।ইনহাজ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,
-“হয়েছে তোমার কথা ইডিয়েট।আধা ঘন্টা যাবত দাঁড়িয়ে আছি।কেউ যে এখানে আছে তা তো টেরও পাওনি।বিশ্ব যুদ্ধ লাগলেও তো কিছু টের পাবে না”
ওহি ভেংচি কেটে বলে,,
-“উহু ভালো হইছে তাতে আপনার কি।আর আমি না আপনি একটা ইডিয়েট।”
-“বাজে না বকে চলো।অনুষ্ঠান এতো সময় শুরু হয়ে গিয়েছে মনে হয়।”
ইনহাজ আর ওহি নেমে আসে নিচে।প্রচুর লোক জন আশেপাশে।ওহির অস্বস্তি হচ্ছে।ইনহাজের হাতটা আকড়ে ধরতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কোথাও একটা কেমন লাগছে তাই ইনহসজের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করছে।হুট করে কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে ইনহাজকে জড়িয়ে ধরে।ওহির ভালো লাগে না বিষয়টা।ইনহাজ বিরক্তি নিয়ে মেয়েটাকে ছাড়িয়ে বলে,,
-“হোয়াট দ্যা হেল।কি সমস্যা তোমার জড়িয়ে ধরেছো কেনো রুহি?”
রুহি মেয়েটা নেকামি করে বলে,,
-“ইনহাজ বেবি।তুমি তো জানো কতো ভালোবাসি আমি তোমায়।আর ভালোবাসার মানুষকে তো জড়িয়ে ধরতেই পারি তাই না”
-“জাস্ট সাট আপ।ফালতু বকবক করে আমার মাথা খেয়ো না যাও এখান থেকে”
রুহির যেনো কথাটা গায়েই লাগলো না।সে ওহিকে দেখে বলল,,
-“এই মেয়েটা কে।তোমার সাথে এমন চিপকে আছে কেনো?”
ইনহাজ গম্ভীর কন্ঠে বলে,,
-“সি ইজ মাই ওয়াইফ।আর ও চিপকে থাকবে না তো কে থাকবে।দেখো তুমিও তোমার ফ্রেন্ডের বিয়েতে এসেছো আমিও।তাই এখানে সিনক্রিয়েট করতে বাধ্য করো না”
-“হোয়াট তুমি বিয়ে করেছো।তুমি কি করে পারলে আমাকে ছেড়ে এই ফালতু মেয়েটাকে বিয়ে করতে”
-“জাস্ট সাট আপ রুহি ও আমার বউ আর একটা ফালতু কথা বলবে না ওকে নিয়ে”
ইনহাজ ওহিকে নিয়ে চলে আসে।ও এখনো রাগে ফুঁসছে।মেয়েটাকে একটুও পছন্দ না ওর।বেশি বাড়াবাড়ি করে।বিদেশে থাকাকালীন ভীষণ জ্বালিয়েছে ওকে।ওহি শক্ত করে ধরে ইনহাজের হাত।আশেপাশে এতো ছেলে যা বলার বাইরে।ওহির ভীষণ খারাপ লাগছে।ওরা স্টেজের কাছে আসে।ইনান আর ওর হবু বউ নিশা বসে আছে স্টেজে।সবাই হলুদ দিচ্ছে ওদের।ইনহাজও ওহিকে নিয়ে যায়।
দুজন ওদের হলুদ লাগিয়ে চলে আসে।ওহি আর ইনহাজ বসে আছে দুজন পাশাপাশি চেয়ারে।ইনহাজ নিজের ফোনে ব্যাস্ত আর ওহি নাচ দেখছে।দেখতে দেখতে অনুষ্ঠানের শেষ অংশে চলে এসেছে।এখন সবাই ছবি তুলবে।ইনান ওহি আর ইনহাজকে ডাকে।ওরা ইনান আর নিশার সাথে কয়েকটা ছবি তোলে।তারপর চলে যেতে চাইলে ইনান ওদের আটকে দিয়ে বলে,,
-“কিরে ইনহাজ তোর ভাবির তো কাপল পিক দেখলাম না এখন তুলে নে।”
ইনানের বউ নিশা বলে,,
-“আপনাদের জুটি টা কিন্তু বেশ।মেড ফর ইচ আদার”
ওহি নিশার কথায় হাসলেও ইনহাজ আগের মতো গম্ভীর।ক্যামেরা ম্যান ওদের ক্লোজ হয়ে দাঁড়াতে বলে।ইনহাজ বিরক্ত হয়।ওহি কাঁপছে।ইনহাজ ওর কাঁধে হাত রাখতেই ওর কাঁপা-কাঁপি বন্ধ হয়ে যায়।বেশ কিছু ছবি তুলে ওহি আর ইনহাজ রুমে চলে আসে।ওহি ফ্রেশ হয়ে একটা শাড়ি পরে নেয়।
ইনহাজ খালি গায়ে ভেজা চুল মুছতে মুছতে বের হয় ওয়াশরুম থেকে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে মাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে।ওহি চোখ সরিয়ে নেয়।লজ্জা লাগছে ভীষণ।সে বেলকনিতে চলে আসে।কিছুক্ষন পর রুমে এসে দেখে ইনহাজ সোফায় বসে আছে।সে বিছানার একপাশে শুয়ে পরে।ইনহাজ ফোনে গেমস খেলছিলো।ওহি লাইট অফ করেই ঘুমিয়েছে।
ইনহাজ উঠে ঘুমাতে যায়।কিন্তু ওহিকে দেখে আর ওর পাশে ঘুমাতে ইচ্ছে হয় না।চাঁদের আলো এসে ওহির মুখে পরছে।দেখতে মায়াপরী লাগছে ইনহাজের কাছে।ইনহাজ ওহির দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে ওর শাড়ি ঠিক নেই।শুয়েছেও উল্টোপাল্টা।ইনহাজ ওহির শাড়ি করে ভালোভাবে শুইয়ে দিয়ে বেলকনিতে চলে আসে।
চলবে~