হৃদয়ের আঙ্গিনায় তুমি পর্ব-১২

0
980

#হৃদয়ের_আঙ্গিনায়_তুমি
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১২

আহিয়া মাহিরকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
-“আমিও তোকে ভালোবাসি হাদারাম”

-“এই যে এখানে আমি আছি।তোরা তো দেখি এখনই আমায় ভুলে গেছিস।পরে দেখা যাবে চিনতেও পারবি না”

মাহির আহিয়াকে ছেড়ে দিয়ে মাথা চুলকে হাসলো।ওহি হেসে বলল,,
-“তোদের তো আরেকটা ভালো খবর দেওয়া হয়নি”

আহিয়া বলে,,
-“কি ভালো খবর”

-“আহিয়ার বিয়েটা মাহিরের সাথেই ঠিক হইছে।শুক্রবার এনগেজমেন্ট হবে আর পরে তোদের বিয়ে হবে”

-“তুই সত্যি বলছিস ওহি।আম্মু আব্বু তো আমায় কিছু বললো না”

-“আমি মানা করেছি হিহিহি”

মাহির ওহির দিকে তেরে যায়।তারপর বলে,,
-“বেয়াদব মাইয়া খালি খালি কষ্ট দিলি কেনো আমাকে?”

-“কি যে কষ্ট পাইছো তুমি তা আমি জানি”

ওরা ক্লাস করে ঘুরতে বের হয়।আকাশে কালো মেঘ জমেছে।নদীর পারে এসেছে তিনজন।বাতাস হচ্ছে।আকাশের অবস্থা ভালো না।যখন তখন বৃষ্টি নামতে পারে।তিনজন বসে বসে গল্প করছে।ওহির ইনহাজের কথা মনে পরে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও।এইভাবে আর ক’দিন চলবে ভেবে পায় না।সারাজীবন তো আর এইভাবে থাকা যায় না।

বৃষ্টি পরা শুরু করেছে।তিনজন হাত ধরে হাঁটতে শুরু করেছে।হাঁটতে হাঁটতে একটা মাঠ ওদের সামনে পরে।মাঠে ছোট ছোট বাচ্চারা ফুটবল খেলছে।তা দেখে ওহি আর আহিয়া লাফিয়ে ওঠে।দৌড়ে চলে যায় ওদের কাছে।মাহির ও চলে আসে।তিনজন বাচ্চাদের মতো খেলছে।

ইনহাজ ফোনে কথা বলছিলো তখনই তার চোখ যায় মাঠে লাফালাফি করা ওহির উপর।গাড়ি থামাতে ড্রাইভারকে।ফোন রেখে নেমে পরে।ওহি আহিয়া আর মাহির তিনজন হাত ধরে লাফাচ্ছিল।ইনহাজ এসে ওদের সামনে দাড়ায়।ইনহাজকে দেখে তিনজনই থেমে যায়।

ওহি ইনহাজকে দেখে জোরপূর্বক হেসে বলে,,
-“আরে আপনি এখানে যে মিস্টার খান”

ইনহাজ তিনজনকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করে বলে,,

-“তোমরা কি এখনো ছোট যে বাচ্চাদের মতো লাফালাফি করছো।বাড়ি চলো সবাই নাহলে ঠান্ডা লাগবে”

তিনজন মাথা নাড়ায়।আসলেই ওরা অনেকক্ষণ যাবত বৃষ্টিতে ভিজছে।ইনহাজ ওহি আর আহিয়া পেছনে বসে।আর মাহির সামনে।ইনহাজ বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে।তিনজনের কথা বলার ঠেলায়।মাহির আর আহিয়াকে নামিয়ে দিয়ে যায়।ওহির ঠান্ডা লেগে গিয়েছে।বাড়িতে এসেই সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়।গোসল করে একটা শাড়ি পরে নেয়।

ইনহাজও পাশের রুম থেকে গোসল করে আসে।রুমে এসে চুল মুছচ্ছিল তখন বেলকনি থেকে রুমে আসে ওহি।ইনহাজ থমকে যায়।ভেজা চুল বেয়ে পানি পরে পিঠ ভিজে আছে।ঠোঁট দুটো কাঁপছে।আর হাঁচি দিচ্ছে।ওহি চুল মুছছে।তখনই পেটে কারো শীতল স্পর্শ পেয়ে থমকে যায়।পেছন ঘুরে দেখে ইনহাজ তাকে জড়িয়ে ধরেছে।ওহির ঠোটের দিকে এগোতে থাকে ইনহাজ।ওহি বুঝতে পেরেছে ইনহাজ ঘোরের ভেতর আছে।

তাই ও ইনহাজের কাছ থেকে সরে আসে।ইনহাজের ঘোর কাটে।নিজের প্রতি বিরক্ত হয়।ওহিকে বলে,,

-“আ’ম সরি”

ওহি কথা বলে না।চুল মুছতে থাকে।বাইরে এখনো বৃষ্টি হচ্ছে।আগের তুলনায় বৃষ্টি বেশি হচ্ছে।ইনহাজ ফোন নিয়ে বসেছে।ওহি চুল মোছা শেষ করে ইনহাজের দিকে তাকিয়ে বলে,,

-“এভাবে আর কতদিন চলবে মিস্টার খান।এভাবে কি সারাজীবন থাকা যায়।আপনি কি আমায় একটুও ভালোবাসেন না।একটুও মায়া হয় না আমার উপর।”

-“না হয় না”

ইনহাজের উত্তর শুনে ওহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে।সে আবারও বলে,,

-“আমায় একবার হারিয়ে ফেললে কিন্তু আমি আর ফিরবো না মিস্টার খান।শত চেষ্টা করলেও পারবেন না ফেরাতে আমায়”

ওহি বেলকনিতে চলে যায়।কান্না পাচ্ছে তার।লোকটা এমন কেনো একটুও বুঝতে চায় না ওকে।কখনো বোঝার চেষ্টা করেনি।যেদিন হারিয়ে যাবো সেদিন বুঝবেন মিস্টার খান।ওহি কথাগুলো বলতে বলতেই ওর চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি পরে।মুছে নেয় চোখের পানিগুলো।বৃষ্টির পানি এসে ওর গায়ে লাগছে।ভিজে যাচ্ছে তবুও আগের মতোই বসে আছে।

ওহি হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে থাকে।অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পর ইনহাজের মনে পরে ওহি বেলকনিতে।আর বাইরেও ঝড় হচ্ছে।ও দ্রুত বেলকনিতে আসে।বেলকনিতে এসে দেখে ওহিকে ওইভাবে বসে থাকতে।শাড়িটা বলতে গেলে পুরো ভিজে গিয়েছে।ইনহাজ ওহিকে কোলে তুলে নেয়।

ওহি হকচকিয়ে যায়।ইনহাজের কলার চেপে ধরে শক্ত করে।পিটপিট করে ইনহাজকে দেখতে থাকে।রুমে নিয়ে এসে ইনহাজ দ্রুত ওহির চুল মুছে দেয়।তারপর কাবার্ড থেকে একটা থ্রিপিচ বের করে ওহির হাতে দিয়ে বলে,,

-“এটা তাড়াতাড়ি পরে নেও।আমি বাইরে যাচ্ছি”

ইনহাজ রুমের বাইরে চলে আসে।অনেকক্ষণ পরও যখন ওহি ইনহাজকে ডাকে না তখন ইনহাজ রুমে ঢোকে।রুমে ঢুকে দেখে ওহি শাড়ি পাল্টে থ্রিপিচ পরে শুয়ে আছে।ইনহাজ শাড়িটা ওয়াশরুমে রেখে ওহির কাছে আসে।ওহির কপালে হাত দিতেই চমকে ওঠে।শরীর পুরে যাচ্ছে জ্বরে।ইনহাজ ওহিকে ডেকে তোলার চেষ্টা করলো।

-“আপনি ভীষণ পচা মিস্টার খান।আমায় একটুও ভালোবাসেন না।আপনিও আমায় ভালোবাসবেন।আমার কাছে ছুটে আসবেন কিন্তু আমায় পাবেন না।সেই দিনটা খুব তাড়াতাড়িই আসবে”

ওহি ঘুমের ঘোরে আবোলতাবোল বকছে।কিন্তু ইনহাজের মনে কথাগুলো দাগ কেটে ফেলেছে।ইনহাজ পানি নিয়ে এসে কাপালে রুমাল ভিজিয়ে দেয়।ওহি অস্পষ্ট কন্ঠে এখনো বলেই চলেছে।

ইনহাজের কেমন অদ্ভুত লাগছে।সে ওহিকে খাবার খাইয়ে ঔষুধ খাইয়ে দিলো।ওহি ঘুমিয়ে পরেছে।ইনহাজ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওহির শুকনো মুখের দিকে।সে না তাকিয়ে বাইরে চলে আসে।

২২.
আজকে মাহির আর আহিয়ার এনগেজমেন্ট।এনগেজমেন্টটা রাতে।ওহি সকাল সকাল এসে হাজির আহিয়াদের বাড়িতে।এটা নিয়ে অবশ্য একদফা ঝগড়া ও হয়েছে তিনজনের।ওহি কাদের বাড়ি যাবে।আহিয়া বলে আমার মাহির বলে।এই নিয়ে কালকে রাতে অনেক ঝগড়া শেষে মাহিরকেই হার মানতে হয়।

ওহি আসতেই আহিয়া এসে ওকে জড়িয়ে ধরে।দুজন রুমে আসে।আহিয়াকে ওর কাজিন মেহেদী পরিয়ে দেবে এখন।ওহি বসে বসে দেখছে।আহিয়ার মেহেদী পরা শেষ হলে আহিয়া ওকে জোড় করে মেহেদী পরতে বসিয়ে দেয়।হাতে ইনহাজ লেখে দেয়।আহিয়া জোর করে লেখিয়েছে।

সন্ধ্যায় হতেই সবাই আসতে থাকে।ওহি অপেক্ষা করছে ইনহাজ।ইনহাজ আর ওহির বাবাই আম্মু পরপর ঢোকে।ওহি তার বাবাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নেয়।ওহি সাদা রঙের একটা শাড়ি পরেছে।ইনহাজ তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।ওহির একটু মন খারাপ হয় তা দেখে।ওহি ইনহাজের কাছে এসে ওর এক হাত জড়িয়ে ধরে।

ইনহাজ বিরক্ত হয়ে বলে,,
-“কি সমস্যা হাত ধরেছো কেনো?এখানে অনেক লোক”

-“তো কি হইছে আমি কি পরপুরুষের হাত ধরছি।আমি তো আমার বর মানে আপনার হাত ধরেছি”

ইনহাজ কথা বাড়ায় না।ওহি মুচকি হাসে।দুজনে হাঁটতে হাঁটতে দুজন একটু দূরে চলে এসেছে।ওহি ইনহাজের সামনে দাঁড়িয়ে হাত বাড়ি খুশি হয়ে বলে,,

-‘নিন আপনার নাম খুঁজে বের করুন”

ইনহাজ বিরক্ত হয়ে বলে,,
-“এইসব ফালতু কাজ আমি করি না”

-“প্লিজ প্লিজ দেখুন না”

ইনহাজ বিরক্ত হয়ে ওহির হাতে নিজের নাম খুজতে থাকে।ইনহাজ খুজতে খুজতে বিরক্ত হয়ে পরে।শেষে না পেরে যখন বলতে যাবে তখনই চোখে পরে নিজের নামটা।নামটা ওহির হাতে দেখে বেশ ভালোই লাগলো ওহির।

চলবে~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে