#হৃদমাঝারে – [১৬+১৭]
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা
নার্সিংহোমে নিজের কেবিনে বসে অতিতের কথা ভাবছিলো মুন। চোখ দিয়ে অনর্গল জল পড়ছে তার। সে মুখে যতই বলুক না অতীতকে ভুলে গেছে আসলে চাইলেই কি আর অতীত ভুলা যায়। তাছাড়া সেদিন রনি কেন ওর সাথে এমনটা করলো? শুধুই কি ফারহানের দুশমন বলে! নাকি অন্য কোন কারন আছে। কেন যে সেদিন,,,মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে মুন। কিছু ভাবতে ভালো লাগছে না মুনের। দু-হাতে মুখ চেপে ধরে বড় করে শ্বাস ত্যাগ করে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর ওর মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। মাথা তুলে মোবাইলের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো অর্ণার নাম জ্বলমল করছে। কলটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরতেই ওপাশ থেকে অর্ণা বলে উঠে,
– কিরে আজ কি নার্সিংহোমে রাত কাটানোর ইচ্ছে আছে নাকি? কটা বাজে সে খেয়াল আছে।
অর্ণার কথা শুনে হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত এগারোটা ছুঁইছুঁই। ঠোট দিয়ে জিহ্বা ভিজিয়ে বলে,
– উহ্, আমি ভুলেই গিয়েছি। আচ্ছা আমি আসছি।।
কল কেটে নিজের সমস্ত জিনিসপত্র গুছিয়ে নেয়। একটা নার্সকে ডেকে কয়েকজন পেশেন্টের খেয়াল রাখতে বলে মুন নার্সিংহোম থেকে বেড়িয়ে যায়।
পরেরদিন যথাসময়ে বাড়ি থেকে বের হয় মুন। গন্তব্য তার নার্সিংহোম। রাস্তায় এসে রিক্সার জন্যে দাঁড়াতেই কিছুক্ষণের মধ্যে সে একটা রিক্সা পেয়েও যায়। তারপর সে রিক্সা নিয়ে নার্সিংহোমের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথিমধ্যে আবার দেখা হয় মিষ্টির সাথে। তবে আজ ওর সাথে রনি কিংবা অনন্যা নেই। মিষ্টির সাথে আজ একটা অর্ধবয়স্ক মহিলা আছে। মুন রিক্সা থামিয়ে মিষ্টির কাছে যায়। মুনকে দেখে মিষ্টি ওকে জড়িয়ে ধরে। মুনও মিষ্টির গাল টেনে ওকে আদর করে। এমনি সময় সেই অর্ধবয়স্ক মহিলাটি ওদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
– এই মিষ্টি চল এবার আমরা বাড়ি ফিরে যাই। তোমার বাবা চিন্তা কিন্তু এবার বকবে।
– পাপা কিছু বলবে না। এই আন্টি তুমি চল না আমাদের বাসায়। পাপা মাম্মা অনেক হ্যাপি হবে।
– না সোনা। আজ হবে না। আমাকে হসপিটালে যেতে হবে। তুমি বরং তোমার পাপা আর মাম্মাকে নিয়ে আমার বাসায় চলে এসো। আমরা অনেক অনেক গল্প করবো।
– তুমি ডক্টর? অর্ধবয়স্ক মহিলাটি প্রশ্ন করে মুনকে।
– হ্যাঁ।
-কোথায় চেম্বার তোমার?
– এনআর নার্সিংহোম।
এনআর নার্সিংহোম নামটা শুনে মহিলাটি চমকে উঠে যেটা মুনের চোখ এড়ালো না। মুন এবার মহিলাটিকে আপাদমস্তক দেখে নিল। এতক্ষণ মিষ্টির সাথে কথা বলতে গিয়ে তার দিকে খেয়াল করে নি। অর্ধবয়স্ক এই মহিলাটির দিকে তাকিয়ে থাকে মুন। তাকে বেশ চেনা চেনা লাগছে কিন্তু কোথায় দেখেছে সেটাই মনে করতে পারছে না সে। তাকে সরাসরি জিগ্যেস ও করতে পারছে না যদি কিছু মনে করে।
– আপনি কে? আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না। মিষ্টির কি হোন আপনি?
– আমি মিষ্টির নানির মতো বলতে পারো। ছোট থেকে মিষ্টি আমার কাছেই বড় হয়েছে। আমার নাম আনোয়ারা শিকদার। আনোয়ারা শিকদার নামটা শুনেই চমকে উঠে মুন। এই কি সেই আনোয়ারা, এনআর নার্সিংহোমের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত যে ছিলো। তাকে চেনা চেনা লাগছে। কেন উনি? মাথার মধ্যে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রশ্নগুলো দমিয়ে রাখতে পারছে না মুন। ইনি যদি আনোয়ারা শিকদার হোন তাহলে তো ওনি সবটা জানেন। মুন প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,
– এনআর নার্সিংহোমের চেয়ারম্যান পদে যে আনোয়ারা শিকদার নিযুক্ত ছিলো সেই কি আপনি।
মুনের প্রশ্ন শুনে হচকচিয়ে উঠে মহিলাটি। আমতা আমতা করে বলে,
– আমি মানে, না আমি কেন এনআর নার্সিংহোমের চেয়ারম্যান হবো। আমি তো। আর কিছু বলল না সে। মুনের দিকে একপলক তাকিয়ে মিষ্টিকে জোড় করে চলে গেলো। তার চলে যাওয়া দেখে মনে হলো সে পালিয়ে গেলো। এই নিয়ে মুন বেশী মাথা ঘামালো না। আর কাউকে এই কেইসে ইনভল্ব করবে না মুন। কমিশনড আংকেল যখন দায়িত্ব নিয়েছে তখন সেই এই কেইসের ফয়সালা করবে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নার্সিংহোমের দিকে চলে যায়।
কেবিনে বসে নিজের কাজ করছে মুন।একের পর এক রোগী দেখছে তাদের সাথে কথা বলছে। যাওয়ার সময় তাদের হাতে একটা প্রেশকিপশন ধড়িয়ে দিচ্ছে। এভাবেই সকাল থেকে দুপুর অব্ধি চলে যাচ্ছে তার। এখন একটা রোগী দেখছে এরপর আর একটা রোগী তাই আজ তার রোগীদেখার কাজ শেষ। বিকালে দুটো ওটি আছে। তারপর আবার যেতে হবে কমিশনড স্যারের বাসায়। এই আকাশটাও না, কি দরকার ছিলো ওকে বাড়িতে ডাকার। এখন আবার যাও ওদের বাসায়।
শেষ পেশেন্ট এসে মুনের সামনে বসে। মুন নিচের দিকে তাকিয়ে একমনে একটা পেশেন্টের এক্সরে রিপোর্ট দেখছিলো। শেষের পেশেন্ট এসে মুনের সামনে বসতে মুন রিপোর্ট-টা রেখে প্রেশকিপশন করার জন্যে কাগজ হাতে নেয়। সামনের দিকে না তাকিয়েই জিগ্যেস করে,
– আপনার নাম?
– ফারহান সাদিক। সরি শিকদার ফারহান সাদিক।
নাম এবং কন্ঠশ্বর দুটোই বেশ চেনা মুনের। সামনে তাকিয়ে চমকে উঠে। এতো ফারহান। ভ্রু কুঁচকে উঠে মুনের।
– আপনি? আপনি এখানে কেন এসেছেন?
– মানুষ ডক্টরের কাছে কেন আসে!
– মানে। কি বলতে চাইছেন আপনি?
– তোমার সাথে আমার কথা আছে মেহরিমা। উঠে দাঁড়ায় ফারহান। মুনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে, উঠ আর চল আমার সাথে।
– মানে কি? আর কোথায় যাব? আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না। আপনি এখন আসতে পারেন। কথাটা বলেই আর এক্সরে রিপোর্ট হাতে নেয় মুন। ফারহান রিপোর্টের দিকে একপলক তাকিয়ে মুনের হাত ধরে ওকে দাঁড়া করিয়ে বলে, তুমি কখনোই ভালো কথা শুনার মানুষ নও। চল আমার সাথে। মুন কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারহান মুনের অধোরে নিজের আঙ্গুল চেপে ধরে আর বলে, স্টপ। মুনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে টেনে নার্সিংহোমের বাহিরে নিয়ে আসে।
পার্কিং লটে নিজের গাড়ির কাছে এসে মুনকে গাড়িতে বাসিয়ে দেয়। মুন চলে যেতে চাইলে ফারহান ওকে ধমক দিয়ে গাড়ির দরজা লক করে নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
গাড়ি চলছে তার নিজ গতিতে। গাড়ির ভিতরে দুজনেই চুপচাপ। একজন বাহিরের দিকে তাকিয়ে প্রকৃতি এই রং বদলের খেলা দেখতে ব্যাস্ত আর অপরজন সামনে দিতে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে ব্যাস্ত। কিছুক্ষণ পর গাড়ি এসে থামলো একটা রেস্টুরেন্টের সামনে। ফারহান গাড়ি থেকে নেমে মুনকেও বাহিরে বের করে ওর হাত ধরে টেনে রেস্টুরেন্টের ভিতরে নিয়ে গেলো।
দুজনেই মুখোমুখি বসে আছে। একজন মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে আর অপর তাকিয়ে আছে মুনের এই শান্ত মুখের দিকে। তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে হাজারো প্রশ্ন কিন্তু মনে চলছে মুনকে কাছে পাবার চির বাসনা। মাথা ও মনের সাথপ লড়াই চলছে ফারহানের। সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না মুনকে আগে কি প্রশ্ন করা উচিৎ। কিছুক্ষণ নিজের মাথা ও মনের ধন্ধ কাটিয়ে বলল,
– এনআর নার্সিংহোমের মালিক তোমার বাবা?
ফারহানের প্রশ্ন শুনে মাথা তুলে সামনে তাকায় মুন। উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক জবাব দেয়।
– তাহলে তুমি নিশ্চয় জানো কি কি হয় এই নার্সিংহোমে। প্লিজ মেহরিমা আমার থেকে কিছু লুকাবে না। আমরা সবটা জানা প্রয়োজন।
– কেন? এতদিন পর আবার এসব কেন? শেষের কথাগুলো বিরবির করে বলল মুন।
– তুমি কি চাওনা তোমার বাবা শাস্তি পাক। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে ফারহান। মুনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, উহ্ সরি। তুমি কেন চাইবে ডক্টর ইমরান খান শাস্তুি পাক। সে তো তোমার বাবা।
– আপনি ভুল ভাবছেন ক্যাপ্টেন ফারহান সাদিক। আমি চাই অপরাধী তার শাস্তুি পাক। আর সে যেই হোক না কেন? কিন্তু আপনি কেন এসব কথা আমাকে জিগ্যেস করছেন।
– দুটো কারনে।
– কি কারন?
– এক. আমি ও আমার টিম এই কেইসের দায়িত্ব নিয়েছি আর দুই. আজ থেকে চার বছর সাত মাস আগে এই কেইসের তদন্ত করতে গিয়ে আমার চাচা মারা যায়। সরি মারা যায় না সে খুন হয়। ফারহানের কথ শুনে আতঙ্কিত কন্ঠে ওর দিকে তাকায় মুন। অস্ফুটভাবে বলে,
-তা-তার মানে, সি-সিনিয়র পুলিশ ক-কমিশনার ফুয়াদ শিকদার আপনার চাচা।
– তুমি চেনো তাকে? প্রশ্ন করে ফারহান।
– হ্যাঁ। আমার কথা শুনে কমিশনড আংকেল তার বন্ধু সিনিয়র পুলিশ কমিশনার ফুয়াদ শিকদারের সাথে এনআর নার্সিংহোমের ব্যাপারে কথা বলে। আর সে এখানে শিফট করে। তারপর এনআর নার্সিংহোমের উপর তদন্ত শুরু করে। অনেক প্রমানও পেয়ে যায় সে আর তারপরেই তাকে খুন করা হয়। কথাগুলো বলেই মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো মুন।
#হৃদমাঝারে – [১৭]
১২,
অর্ণার বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে। আর মাত্র কয়েকটা দিন তারপরেই অর্ণার বিয়ে। শিকদার বাড়ি জুরে খুশির আমেজ। আজ রাতে রওনাক তার বন্ধুদের মিলে ডিনারপার্টির আয়োজন করেছে। কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে সবাই মিলে ডিনার করবে আজ। অর্ণা রেডি হচ্ছে, কিছুক্ষণ পর রওনাক ওকে নিতে আসবে। নীল কালারের শাড়ি, গলায় কানে সামান্য জুয়েলারি। মাথার চুলগুলো খোলা আর দু-হাতে নীল চুড়ি। চোখে গাঢ় কাজল আর ঠোঁটে পিংক কালারের লিপস্টিক। মাশাআল্লাহ বেশ লাগছে অর্ণাকে। আয়না নিজেকে আরো একটা পরিদর্শন করে বিছনা থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে রাওনাকের নাম্বারে কল করলো,
– হ্যাঁ রওনাক, কতদূর তুমি?
– এইতো পৌঁছে গেছি। তুমি বাসার সামনে এসো।
কল কেটে দেয় অর্ণা। তারপর মুনের নাম্বারে ডায়াল করে। পরপর দুইবার রিং হয়ে যাওয়ার পরেও যখন মুন কল রিসিভ করলো না তখন বিরক্ত হয়ে মুখ দিয়ে একটা বিরক্তিকর শব্দ বের করে। মোবাইলটা হ্যান্ড পার্সের ভিতরে রাখতে রাখতে বলে,
– এই মেয়েটার কোনদিনও কান্ডঞ্জান হবে না। আরে ভাই সারাক্ষণ কি শুধু পেশেন্ট আর নার্সিংহোম নিয়ে পরে থাকলে হবে। নিজেরও তো একটা লাইফ আছে। নিজের সখ আহ্লাদ বন্ধুই সব বাদ দিয়ে কি শুধু পেশেন্ট নিয়ে পরে থাকলে হবে। নিজের মনে বকবক করতে করতে চলে যায় অর্ণা।
বাসার সামনে এসে দাঁড়াতেই একটা রেড কালারের গাড়ি এসে থামে ওর সামনে। অর্ণা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গাড়িটার দিকে। গাড়ি থেকে একটা সুদর্শন যুবক বের হয়ে আসে। সাদা শার্টের উপর নীল কালারের কোট। মাথায় স্পাইক করা চুল হাতে ব্যান্ডের ঘড়ি। অর্ণা যুবকটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। যুবকটাও অর্ণার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। দুজন যেন দুজনের চোখে হাড়িয়ে যায়। ঘোরের মাঝে কখন যে যুবকটা অর্ণার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা বুঝতেই পারে নি। যুবকটা অর্ণার খুব কাছে এসে দাঁড়ায়। তার উত্তাপ নিঃশ্বাস পরছে অর্ণার মুখে। হুস ফিরে অর্ণার। পরপর কয়েকবার চোখের পাতা ফেলে আমতা আমতা করে বলে,
– ভিতরে যাবে না তুমি রওনাক?
– আজ নয়, একেবারে বর সেজে তোমার বাসায় যাব আর তোমাকে নিয়ে পালাবো। স্মিত হেসে বলে রওনাক।
রাওনাকের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যায় অর্ণার গালদুটো। লজ্জারাখা মুখ করে বলে, কি যে বলো না তুমি রওনাক।
– তোমাকে নিয়ে পালাতে চাইছি তাই এতো লজ্জা পাচ্ছো। অর্ণা, এখনি এত লজ্জা পেও না। কিছু তো রেখে দাও আমাদের বাসর রাতের জন্যে। অর্ণার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দেয় রওনাক। আর অর্ণা লজ্জায় নিজের মুখ লুকাতে ব্যাস্ত।
নিজেদের ব্রাঞ্চে বসে কাজ করছিলো ফারহান। আজকাল ওর কাজের প্রেশার একটু বেশী। এনআর নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে প্রায় সব প্রমান হাতে পেয়েগেছে। এখন শুধু ডক্টর ইমরান খানকে এরেস্ট করার পালা। পলাশ এসে দাঁড়ালো ফারহানের সামনে। ফারহান লেপটপে চোখ রেখে বলল,
– কিছু বলবে পলাশ?
– স্যার, এনআর নার্সিংহোমের চেয়ারম্যান ডঃ আনোয়ারা শিকদার বেচে আছে।
– হোয়াট?? পলাশের দিকে মুখ করে তাকায় ফারহান। তুমি কি বলছো জানো?
– জ্বি স্যার। আর এটাও জানি সে এখন কোথায়?
– ওকে। তাহলে তাকে নিয়ে এসো।
পলাশ চলে যাওয়ার জন্যে সামনের দিকে পা বাড়াতেই পিছন থেকে ফারহান ডেকে উঠে। পলাশ ফারহানের দিকে ঘুরে তাকাতেই ফারহান বলে,
– আমি একটু বাহিরে যাব, তুমি যাবে আমার সাথে?
– কোথায় স্যার?
– ডিনারে।
– স্যার আপনি যাবেন ডিনারে। একা? না মানে আপনি তো আবার মেয়েদের থেকে দূরে থাকেন তাই বলছি গার্লফেন্ড তো নাই তাই আমাকে নিয়ে যাবেন। সরি স্যার, আমরা তো সেইম লিঙ্গ, আমি কোম্পানি দিলে এটা আপনার ভালো লাগবে না।
– পলাশ। ধমকে উঠে ফারহান। তোমাকে যেটুকু বলেছি সেটাই করো। সব সময় এত বেশী বকো কেন? রওনাক ডিনারের আয়োজন করেছে।
– ওকে স্যার। চলুন তাহলে।
সবাই একটা রেস্টুরেন্টে এসে একত্রিত হয়। রওনাক ফারহান পলাশ ফারহানের দুই কাজিন। শুধু মুনই আসে নি। ফারহান এদিক ওদিক তাকাচ্ছে তো আবার আড় চোখে অর্ণার দিকে তাকাচ্ছে। আচ্ছা মুন আসছে না কেন? তাহলে কি ম্যাডাম আসবেন না। অর্ণাকে জিগ্যেস করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সরাসরি জিগ্যেস করতেও পারছে না। তখনি রওনাকে বলে উঠলো,
– এই তোমার বোনটা এখনো আসছে না কেন? মুনকে একটা কল করো তো?
রওনাকে কথামতো অর্ণা মুনের নাম্বারে কল করে। রিং হতেই ওপাশ থেকে মুন কলটা রিসিভ করে। অর্ণা বলে উঠে,
– তুই কখন আসছিস? দেখ আমরা সবাই কিন্তু পৌঁছে গেছি। শুধু তোর জন্যে খাবার অর্ডার করতে পারছি না।
– সরি বোন। আমি আসতে পারবো না রে। একটা জরুলি কাজে আটকে গেছি।
– আসতে পারবি না মানে কি? তুই তো বললি সময়মতো পৌঁছে যাবি।
– আমার একটা জরুলি কাজ পরেগেছে তাই আসতে পারবোনা।
অর্না আর কিছু না বলে কলটা কেটে দেয়। কলটা এতক্ষণ লাউডস্পিকারে ছিলো তাই সবাই সবটা শুনতে পেয়েছে। ফারহান নিজের মনে মনে বলে উঠে,কি এমন জরুলি কাজ ম্যাডামের যে আসতেই পারবে না। তাকে একপলক দেখার জন্যে আমি সব কাজ ফেলে চলে আসলাম আর সেই আসবে না।
রওনাক খাবার অর্ডার করলে ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে যায় তারপর সবাই মিলে একসাথে খাওয়া শুরু করে। খাওয়া প্রায় শেষ এমনি সময় পলাশের চোখ পরে রেস্টুরেন্টের গেটের দিকে। মুন আসছে সাথে আরো একটা মেয়ে। পলাশ খাওয়া বাদ দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। না মুনের দিকে নয় সে তাকিয়ে থাকে মুনের সাথে থাকা মেয়েটার দিকে। টপ আর জিন্স প্যান্ট পরা মেয়েটার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে। পলাশকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারহান ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকায়। তারপর ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে যায় ফারহান। অস্ফুটভাবে বলে, মেহরিমা।
– এভাবে কি দেখছো ফারহান? খাবারটা শেষ করো?
– মেয়েটা!
– হুম মেয়েটা সুন্দর স্মার্ট সেটা আমিও দেখতে পাচ্ছি। তাই বলে তুমি এভাবে তাকিয়ে থাকবে নাকি? আগে খাবারটা শেষ করো। চাপা গলায় বলল ফারহান।
– না স্যার। ফারহানের আরো কাছে গিয়ে বসলো পলাশ। তারপর ফিসফিস করে বলল, স্যার আমি ওই মেয়েটাকে দেখছিলাম। আপনি জানেন স্যার এটাই সেই মেয়ে! ডক্টর ইমরান খানের বাড়িতে যে আমাদের হেল্প করছিলো।
– তুমি তো বলেছিলে সে একটা কাজের লোক ছিলো।
– সেটাই তো আমিও ভাবছি। বাড়িতে কাজের লোক আর এখানে মালকিন! আশ্চর্য, স্যার আমার মাথায় কিছুই ডুকছে না।
– তোমার এই ছোট মাথায় এত চাপ নিপ না পলাশ। আমি দেখছি। তুমি খাও তো এবার।
পলাশ আবার খাওয়া শুরু করে। ফারহান রওনাককে উদ্দেশ্য করে বলে,
– হেই রওনাক তুই এখানে বসে ডিনার করবি আর তোর শালিকা ওখানে একা বসে থাকবে ব্যাপারটা খারাপ দেখায় না বল?
ফারহানের কথা শুনে সবাই মুনের দিকে তাকায়। অর্ণা তো রেগে একাকার। টিসু দিয়ে হাত পরিষ্কার করে মুনের সামনে গিয়ে গাল ফুলিয়ে বলে,
– এই তোর ইম্পরট্যান্ট কাজ।
অর্ণার কথা শুনে পাশ ফিরে তাকায় মুন। তারপর আমতা আমতা করে বলে, না আসলে, হয়েছে কি?
– কি হয়েছে বল। আমাকে কেন মিথ্যে বললি।
– অর্ণা আমি এখানে একটা কাজে এসেছি। তুই যা না তোর নিজের কাজ করো। প্লিজ অর্ণা এখানে সিনক্রিয়েট করিস না।
মুনের কথা শুনে অর্ণা রেগে সেখান থেকে চলে যায়। তারপর মুন দু-কাপ কফি অর্ডার করে মেয়েটার সাথে কথা বলতে থাকে। ফারহান ওর বন্ধুদের সাথে কথা বলার ফাঁকেফাঁকে আড় চোখে মুনের দিকে তাকাচ্ছিলো। এদিকে মুনের কথা বলা শেষ হলে মেয়েটা চলে যায় আর মুন এসে দাঁড়ায় অর্ণার সামনে। মুনকে দেখে অর্ণা অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে নেয়।
চলবে,,,,,,,