হৃদপূর্ণিমা পর্ব-১৯+২০

0
1601

#হৃদপূর্ণিমা
লাবিবা_ওয়াহিদ
| পর্ব ১৯ |

নাফিসাদের বাড়ি এসেছে দুইদিন হয়েছে। রথির এই বাড়িতে দম বন্ধের মতো লাগছে। আরেকজনের ঘাড়ের ওপর বসে খাওয়াটা একদমই তার বিবেকে সাঁয় দিচ্ছে না। তার উপর নাশিদেরও দুইদিন ধরে দেখা নেই। কথা বলা তো দূর মহারাজা একদম গুম হয়ে গেছে। ঘুমানোর আগে মায়ের দেয়া কষ্টে কাঁদে আর নাশিদের দেয়া ব্যথার তীব্রতা তো আছেই। পরেরদিন নাশিদ ওর বাসা থেকে জামা-কাপড়সহ খুঁটিনাটি এনে দিয়েছে তাও দেখা করেনি। তবে রথি কোচিং ছাড়েনি। নাশিদদের বাসা থেকে দূর হলেও রোজ বাস ধরে তাকে কোচিং যেতে হয় আবার আসতেও হয়। ভেতরটা তার দুঃখে জর্জরিত হয়ে যাচ্ছে মাকে আর নাশিদকে ছাড়া। এমন কী করেছে যার জন্য নাশিদ তার সঙ্গে দেখাই করছে না?
নাফিসাকে জিজ্ঞেস করলে বলে নাশিদ অনেক রাত করে বাড়ি ফিরে। আর ও যখন বাসা থেকে বের হয় তার আগেই রথি কোচিং এর জন্য চলে যায়। রথি মাথা নিচু করে শুধু শুনতো। নাফিসা রথির মন খারাপ দেখে রথিকে একপাশ থেকে জড়িয়ে বলে,

-‘রাগারাগি হয়েছে বুঝি? আরেহ টেনশন নিস না। আমার ভাই মাঝেমধ্যে ক্ষ্যাপা হলেও ঠান্ডা হলে দেখবি তোকে চোখে হারাবে।’

-‘কেন রেগে আছে আমি তাইতো বুঝছি না নাফু। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না!’ কাঁদো কাঁদো গলায় বললো রথি।

-‘ঠিক আছে আজ জেগে থাকিস, কাল তো তোর কোচিং অফ?’

রথি মাথা নাড়ায়! নাফিসা রথির চোখ মুছে দিয়ে বলে,

-‘তাহলে তো হয়েই গেলো। কাঁদিস না রথি, তোর মতো স্ট্রং মেয়ে কেঁদে বুক ভাসালে চলে? এখন যা তো ফ্রেশ হয়ে রেস্ট কর। আমি নিচে যাই, মা ডাকছে!’

রথি মাথা নাড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। নাফিসা এদিকে নিচে নামতেই দেখলো তার মা কেমন দৌড়াদৌড়ি করছে৷ নাফিসা সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,

-‘কী ব্যাপার মা? এভাবে এতো দৌড়াদৌড়ি হচ্ছে কেন?’

মনিকা থেমে যায়। তার চোখে-মুখে খুশির আভাস। নাফিসা কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকালো। মনিকা নাফিসার সামনে এসে হাসিখুশি স্বরে বলে উঠলো,

-‘আমার চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে অর্পিতার কথা মনে আছে? অর্পি আজ আমাদের বাড়ি আসছে। থাকবেও কিছুদিন!’

নাফিসার হাসি মুখটা নিমিষেই ফুঁস। নাফিসা নরমালি বললো,
-‘হুট করে আসছে যে?’

-‘আমি বলেছি আসতে। এছাড়াও ভাইও একদিন বলেছিলো অর্পিতা আসার জন্য জেদ ধরেছে। আমি ভাবলাম আসুক কিছুদিন থেকে যাক!’

নাফিসা ছোট করে “ওহ” বললো। মনিকা থাকলো না দ্রুত রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো। নাফিসা কিছু বিস্কুট আর সরবত নিয়ে উপরে চলে এলো। এতক্ষণে রথিও ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে গেছে। নাফিসাকে দেখে বললো,

-‘এসেছিস? আন্টি কী বললো?’

নাফিসা কথা ঘুরিয়ে বললো, ‘ও কিছু না। জিজ্ঞেস করলো রথির খেয়াল রাখছি কি না। দেখ আমায় দিয়ে তোর জন্যে সরবতও পাঠালো।’ মিথ্যা বলার কারণ সে চায় না অর্পির কথা উঠিয়ে নিজের মেজাজ খারাপ করুক।

রথি মুচকি হেসে বিছানায় বসতে বসতে বললো,
-‘তোরা আমায় ঋনি করে দিচ্ছিস রে নাফু। আমি সত্যি আর এখানে থাকতে পারছি না। প্লিজ আমায় ছেড়ে দে!’

-‘ঠাটিয়ে এক চড় মারবো তোকে। তোর এসব ফর্মালিটি অন্যদের সাথে দেখা কিন্তু আমার বেলায় চলবে না। আমার কথা কী বলছি, ভাইয়ের সামনে একবার এ কথা উচ্চারণ করেই দেখা না। রামধোলাই খাবি!’
রথি মুখটা ছোট করে ফেললো। নাফিসা একপ্রকার জোর করেই সরবত খাইয়ে দিলো সাথে বিস্কুটও। এদিকে রথি প্রতিনিয়ত অস্বস্তিতে মরছে।
সন্ধ্যায় রথি নাফিসার সাথে নিচে আসে। সোফায় বসে টিভি দেখছিলো তখনই নাশিদ সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো। রথির সেদিকে চোখ যেতেই নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। দুইদিন পর দেখলো এই মানুষটাকে। দেখার তৃপ্তি যেন মিটে না। নাশিদকে সামনাসামনি দেখার জন্য কতো কিছুই না করেছিলো সে। দুইদিন তৃষ্ণার্ত হয়ে ছিলো একপলক দেখার জন্য অথচ সেই মানুষটাই তার সামনে৷ আর কী লাগে? নাশিদ রথির দিকে একপলক তাকিয়ে উপরে চলে যায়। রথি কিছুক্ষণ উপরের দিকে তাকিয়ে টিভি দেখায় মনোযোগী হয়।
রথিকে অবাক করে দিয়ে কিছুক্ষণ বাদেই নাশিদ চলে আসলো একটা এ্যাশ কালারের টিশার্ট আর সাদা টাউজার পরে। নাশিদকে দেখে রথির যেন হুঁশ উড়ে গেলো। এই ছেলে যাই পরে সেটাই তাকে স্যুট করে। এতো সুদর্শন ছেলে, রথির তো ইচ্ছে করছে কাজল এনে কানের পিছে টিপ লাগিয়ে দিতে যেভাবে তার মা ছোটবেলায় পরিয়ে দিতো। প্রতিবার টিপের সাথে বলে উঠলো,

-‘আমার রথিপরীর যাতে কারো নজর না লাগে। মাহশাল্লাহ, আমার মেয়েটা!’

রথির ইচ্ছে করছে নাশিদকে কালো টিপ দিয়ে আহ্লাদী কন্ঠে বলতে,

-‘আপনার উপর যেন কারো নজর না লাগে পুলিশম্যান! আপনি শুধু আপনার রথের মনপুরুষ।’

লিভিংরুমে এসে নাশিদ ঠিক রথির পাশে বসলো। রথির বাহুর সঙ্গে নাশিদের বাহু লাগতেই রথি খানিক কেঁপে উঠলো। কিন্তু নাশিদের কোনো পতিক্রিয়াই দেখা গেলো না। নাফিসা তো গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গান গাইছে আর এদিকে রথি অস্বস্তিতে ভুগছে। নাফিসা ডানপাশের সারির সোফাতে। খানিকটা দূরে ওদের থেকে। রথির অস্বস্তি লাগলেও একটা সৎ সুযোগ পেলো আর তা হলো নাশিদের সঙ্গে কথা বলার। রথি আধো আধো স্বরে বললো,

-‘দুইদিন কোথায় ছিলেন আপনি? বাসা অবধি পৌঁছে দিয়েই আপনার কাজ শেষ? আমি কেমন আছি কী করছি সেটা জানার ইচ্ছা হলো না? কী দোষ ছিলো আমার যার জন্য আমার সাথে এমন অবিচার করেছেন?’

-‘ওই থার্ডক্লাস ছেলেটার কথা আগে বলো নি, এটাই তোমার দোষ!’
নাশিদ মৃদু সুরে বললো। রথি আরও কিছু জিজ্ঞেস করতে নিবে তার আগেই নাশিদ উঠে অন্য সোফায় গিয়ে বসলো। ঠিক তখনই মনিকা আসলো। রথি গোল গোল চোখে একবার নাশিদের দিকে তো আরেকবার মনিকার দিকে তাকালো। মনিকা হাসিমুখে নাশিদকে বললো,

-‘নাশিদ বাবা এসেছিস তুই? আজ কে আসছে বল তো?’

নাশিদ মনিকার কথা বুঝতে না পেরে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করলো মনিকার পানে। রথি নিজেও একইভাবে অবাক। কার কথা বলছেন উনি? এদিকে মনিকার কথা শুনে নাফিসারও গান গাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এতে যেন রথির খটকা বেড়ে গেলো।

-‘বুঝিসনি তাইতো? অর্পি আসছে। এতক্ষণে চলে এসেছে মনে হচ্ছে!’

নাশিদ চট করে উঠে দাঁড়ালো। রথি নাশিদের দিকে চেয়েও তাকাতে পারলো না কারণ এই বজ্জাত মহিলা রথির দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করে আছে। মনিকা এবার মুখে কৃত্রিম হাসি নিয়ে রথিকে উদ্দেশ্য করেই বললো,

-‘আশা করছি রথি নিজের ঘরে যাবে। মেহমান আসছে তো, তোমার ভালো নাও লাগতে পারে!’

রথি প্রথমে উত্তর দিবে কিনা বুঝলো না। তবে রথি প্রথম থেকেই এই মহিলাকে সহ্য করতে পারে না। রথির কাছে কথাগুলো অপমানজনক লাগলেও সেটা উড়িয়ে দিয়ে ভাবলো কিছু মানুষের রোগই ব্যাঁকা করে কথা বলা। তাই বিষয়টিকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে হাসি দিয়ে বললো,

-‘সমস্যা নেই আন্টি। আপনার সমস্যা হলে আমি চলে যাচ্ছি!’

বলেই রথি উঠে দাঁড়ায় এবং কিছু না বলে সিঁড়ি বেয়ে উঠে চলে যায়। নাশিদ রথির যাওয়ার পানেই তাকিয়ে আছে কিন্তু তার মায়ের জন্য কিছুই বলতে পারছে না। মনিকাও নাশিদের দিকেই তাকিয়ে। সে নাশিদের দৃষ্টি বোঝার চেষ্টা করছে। মনিকা এবার রথিকে আরও কিছুটা শুনিয়ে বললো,

-‘বাবা নাশিদ! অর্পি তো চলেই আসছে। যাও গেটে গিয়ে দাঁড়াও, অর্পি খুশি হবে!’

-‘আমি টায়ার্ড মা!’

বলেই নাশিদ ডাইনিং টেবিলের সামনে গিয়ে জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে খেয়ে নেয়। রথি ততক্ষণে উপরে গিয়ে সবটা বোঝার চেষ্টা করতে লাগে। এই অর্পি কে সেটা সে দেখেই ক্ষান্ত হবে। নাশিদ পানি খাওয়া শেষ করে লিভিং এ যাওয়ার আগেই সদর দরজা থেকে একটি মেয়ে ছুটে নাশিদের কাছে গেলো এবং কোনো কথা ছাড়াই তাকে জড়িয়ে ধরে! নাশিদ আর মেয়েটিকে একসাথে এভাবে দেখে রথির পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেলো। মুহূর্তের জন্যে সে ভাবতে ভুলে গেলো। বুকের বা পাশটাও কেমন চিনচিন করছে তার। চোখের কোণও ভিঁজে গেছে মুহূর্তেই। এই দৃশ্য যেন তাকে প্রাণহীন করে তুলেছে। রথির ভাবনার মাঝেই মেয়েটি বলে উঠলো,

-‘ফাইনালি! ফাইনালি নাশিদ তোমায় আমি পেলাম। তোমার এই অর্পি কতদিন তোমার অপেক্ষায় ছিলো জানো? এবার আর কোথাও যেতে দিবো না তোমায়। দরকার হলে আমার সঙ্গে সারাজীবনের জন্য বেঁধে রাখবো বুঝলে?’

মেয়েটির কথাবার্তায় রথির বুঝতে বাকি রইলো না এটাই অর্পিতা। অর্পির কথায় রথির চোখ থেকে টুপ করে জল গড়িয়ে পরলো। প্রিয় মানুষের সঙ্গে অন্য একটা মেয়েকে দেখা বুঝি এতটাই কষ্টের? কেউ যেন বারংবার তীর মেরে তার ভেতরটাকে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলছে। নাশিদ তৎক্ষনাৎ নিজের থেকে অর্পিকে ছাড়িয়ে নিলো। নাশিদ রুদ্ধ কন্ঠে বললো,

-‘মাথা কী তোমার গেছে? এগুলা কোন ধরণের ফাইজলামি? কোথায় কী করতে হয় জানো না? তুমি কী নার্সারির বাচ্চা?’

-‘আহা! এতটুকুর জন্য এমন বিহেভ করছো কেন বলো তো? এই ফুপি! তোমার ছেলেকে কিছু বলবে?’

নাফিসার দৃ্ষ্টি তখনই উপরের দিকে গেলো। রথি নাশিদদের দিকে তাকিয়েই চোখের জল ফেলছে। নাফিসা একবার ওদের দিকে তাকিয়ে সিঁড়ির দিকে দৌড় দিলো। উপরে যেতে যেতে ততক্ষণে রথি রুমে চলে গেছে! নাফিসা সেখানেই রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে বসে পরলো। আপনমনে বলে উঠলো,

-‘তোকে যেটা থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলাম তুই সেটারই মুখোমুখি হলি! আল্লাহ জানে এই অর্পি স্নেক কোন ঝামেলা পাকায়। তোদের এই মান-অভিমান আমারই যে ভালো লাগছে না!’

রাত ৯ টার মধ্যেই ওদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া হলো। খাবার খেয়ে রথি নাফিসার ঘর থেকে বের হতেই অর্পির মুখোমুখি হলো সে। এক সুন্দরী মেয়েকে নাফিসার ঘর থেকে বের হতে দেখে অর্পিও খানিকটা অবাক হলো। রথির পা থেকে মাথা অবধি দেখে নিলো। রথি পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই অর্পি রথিকে থামিয়ে বললো,

-‘তুমি কে? নাফিসার ঘরে কী করছো?’

রথি কী বলবে বুঝে উঠতে পারলো না। তখনই নাফিসা এসে বললো,

-‘ও আমার বান্ধুবি আপু, রথি!’

-‘ও আচ্ছা।’

-‘তুমি এখানে যে?’

-‘হ্যাঁ। ফ্রেশ হয়ে তোমার ভাইয়ের রুমে যাচ্ছি, দেখি কী করছে মশাই! অফিসার তো সবসময়ই বিজি থাকেন!’ হেসেই বললো অর্পি! রথি একপলক অর্পির দিকে তাকিয়ে বুঝলো অর্পিও কম সুন্দরী না। পরমুহূর্তে নাশিদের ঘরের কথা শুনে রথির মাথা নিচু করে ফেললো।
অর্পি নাশিদের ঘরের সামনে গিয়ে দরজা কয়েকবার ধাক্কালেও নাশিদ দরজা না খুলে বললো,

-‘ডিস্টার্ব করো না অর্পি, কাজ করছি!’

নাশিদের রুদ্ধ কন্ঠস্বর শুনে অর্পি আর নাশিদকে বিরক্ত করার সাহস পেলো না। যতোই হোক, নাশিদ তার কাজ নিয়ে অনেকটা সেন্সেটিভ! সে তার কাজে কাউকেই চিনে না। অর্পি তাই কিছু না ভেবে আবার ক্যারিডোর পার হয়ে সিঁড়ির দিকে চলে গেলো। নাফিসা রথিকে কাঁধ দিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,

-‘সুযোগ তোর সামনে। যা গিয়ে কথা বল আমি এখানে দাঁড়িয়েছি।’

রথি প্রথমে যেতে না চাইলেও নাফিসা রথিকে ধাক্কিয়ে ধুক্কিয়ে পাঠালো। রথি কাঁপা কাঁপা পায়ে নাশিদের রুমের দিকে যেতে লাগলো। মনের ভেতরে হাজারো ভয়, অস্বস্তি তাকে ঘিরে ধরেছে।

~চলবে।
#হৃদপূর্ণিমা
লাবিবা_ওয়াহিদ
| পর্ব ২০ |

রথি নাশিদের ঘরের দরজায় নক করতেই নাশিদ বিরক্তির সুরে বলে উঠলো,

-‘ডোন্ট ক্রস ইওর লিমিট, অর্পি! এক কথা কয়বার বলবো?’

-‘আমি অর্পি নই, রথি!’

ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেলো না। হঠাৎ খট করে দরজা খুলে গেলো৷ নাশিদ কিছু না বলেই রথির হাত টান দিয়ে ভেতরে আনলো এবং দরজাটাও তৎক্ষণাৎ আটকে দিলো। রথি খানিকটা চমকে উঠলেও পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে নেয়। নাশিদ দরজা লাগিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো। আর রথি কাবার্ডের সাথে পিঠ লাগিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। নাশিদ শূন্য দৃষ্টিতে রথির দিকে তাকিয়ে বললো,

-‘কী বলতে এতো সাহস করে আমার রুমে এসেছো?’

রথি প্রথমে চুপ করে রইলো। অতঃপর মৃদু স্বরে বললো,

-‘দুইদিন কথা কেন বলেননি?’

-‘ওই শামুন ছেলেটার কেস নিয়ে বিজি ছিলাম তাই!’ নাশিদের সোজা জবাব!

-‘এই বলে সামান্য দেখা করা যায় না?’

-‘দেখা করে কী লাভ হতো? মেজাজ খারাপ ছিলো। মেজাজ খারাপ নিয়ে তো তোমার কাছে যেতে পারি না। আর তুমিও বা কেমন? একবারের জন্যেও ওই লম্পটটার কথা আমায় বলোনি! আগে বললে কী এমন হতো? আমি যদি সেদিন সেখানে না থাকতাম কী হতে পারতো বুঝতে পারছো তুমি, স্টুপিড!’

শেষোক্ত কথাটি নাশিদ ধমকের স্বরে বললো। রথি জানালার কাছে যেতে যেতে বলে,

-‘শামুন আমার জীবনের আরেক অভিশাপ। যেদিন থেকে আমি পথে নামি রোজগারের উদ্দেশ্যে তখন থেকেই আমার পিছু নিয়েছিলো। নানান ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, ইভেন চড় অবধি মেরেছি। তাও পিছে ছাড়েনি। শামুনটাকে কিছুতেই পারতাম না, দূরে সরাতে। কাউকে যে বলবো, সেখান দিয়েও নিরুপায় ছিলাম!’

-‘নিরুপায় কেন?’

রথি হাসলো। অদূর আকাশে নির্বাক চাহনি নিক্ষেপ করে থমথমে গলায় বললো,

-‘বাবা নামক ছায়াকে আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম। ভাই নামক ছায়াটি থেকেও ছিলো না। কাকে বলতাম? আপনি তো এসেছেন বেশি সময় হয়নি। মাঝেমধ্যে মনে আপনাকেও কবে যেন ওদের মতো হারিয়ে ফেললাম৷ আপনি থেকেও যেন নেই।’ শেষোক্ত কথাগুলো আঁটকে আঁটকে বললো রথি।
রথির কথাগুলো নাশিদের যেন তীরের মতো লাগলো।

নাফিসা তার রুমের দরজার সামনে মোবাইল গুতাচ্ছিলো তখনই দেখলো তার মা সিঁড়ি বেয়ে উঠছে। নাফিসা জলদি ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দেয় আর ভাবতে লাগে এখন সে কী করবে। মা যদি কোনো ভাবে টের পায় রথি নাশিদের ঘরে তাহলে তো সব শেষ। নাফিসা জলদি ওয়াশরুম গিয়ে শাওয়ার অন করে ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই নাফিসার ঘরে নক পরলো। নাফিসা গলায় ভালোভাবে ওড়না পেঁচিয়ে কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে দরজা খুললো। দরজার সামনে মনিকা দাঁড়িয়ে আছে নাফিসার দিকে সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। নাফিসা কৃত্রিম হাসি দিয়ে বললো,

-‘মা তুমি?’

-‘হু, এই অসময়ে দরজা লক করে রেখেছিস কেন?’

নাফিসা আশেপাশে তাকিয়ে আবারও হাসার চেষ্টা করে বললো,

-‘এ..এমনি মা!’

মনিকার সন্দেহ হলো। আবারও কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে বললো,

-‘রথি কোথায়?’

-‘কেন, ওয়াশরুমে?’

মনিকা নাফিসাকে ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো। ওয়াশরুমের দিকে যেতেই পানির শব্দ পেলো। মনিকা আর কিছু না বলে চলে গেলো। নাফিসা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। আবার কী মনে হতেই জলদি নাশিদকে টেক্সট করে দিলো মনিকার কথা।

নাশিদ রথির কাঁধে হাত রাখতে যাবে তখনই দরজায় নক পরলো সাথে তার পকেটের ফোনটাও ভাইব্রেশন করে উঠলো। নাশিদ পকেট থেকে ফোন বের করে নাফিসার টেক্সটি পড়লো। তখনই আবারও দরজায় টোকা পরলো সাথে মনিকার গলার স্বর শোনা গেলো।

রথি কিছু বলতে নিবে তার আগেই রথির মুখ চেপে ধরে চোখ বড় বড় করে ইশারা করলো যেন রথি শব্দ না করে। নাশিদ রথিকে ধরেই মনিকার উদ্দেশ্যে বললো,

-‘হ্যাঁ মা বলো?’

-‘দরজা বন্ধ কেন নাশিদ?’

-‘কাজ করছি মা। কাজ করলে সবসময় দরজা বন্ধ রাখি জানো না?’

-‘বুঝেছি বাবা।’

বলেই মনিকা থামলো। অতঃপর কী মনে করে বললো,

-‘রথি মেয়েটা তোর রুমে নয়তো?’

-‘এসব কী বলছো মা? ও কেন আমার রুমে থাকতে যাবে?’

নাশিদের বিরক্তিমাখা কন্ঠস্বরে মনিকা যেন ঠান্ডা হলো। অতঃপর চলে গেলো। মনিকা চলে গেছে বুঝে নাশিদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। অতঃপর রথির দিকে তাকালো। রথি তার অনেক কাছে। রথিও গোলগোল চোখে নাশিদকে দেখছে।

নাশিদ এতক্ষণে খেয়াল করলো তার একহাত রথির কোমড়ে আর আরেক হাত রথির মুখে। নাশিদ সঙ্গে সঙ্গে রথিকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ালো। আর রথি যেন এতক্ষণে শ্বাস নিতে পারলো। বারংবার সে কেঁপে উঠছে। ভারী ভারী নিঃশ্বাস ফেলছে অনবরত। রথি কিছু বলার পূর্বেই নাশিদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে উঠলো,

-‘আই থিংক তোমার এখন চলে যাওয়া উত্তম। কারণ, যে কেউ যখন তখন চলে আসতে পারে। মায়ের মনেও সন্দেহ হয়েছে তোমায় নিয়ে। তাই আমি তোমার থেকে দূরে দূরে থাকি যেন মায়ের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়! বুঝলে?’

রথি মাথা নাড়ায়। অতঃপর নাফিসাকে টেক্সট করে শিওর হয়ে নিলো সব ওকে কিনা। নাফিসা রুম থেকে বেরিয়ে ক্যারিডোর চেক করে সব ‘ওকে’ জানালো। নাশিদ তখনই দরজা খুলে রথিকে পাঠিয়ে দিলো। রথিও জলদি নাফিসার ঘরে চলে গেলো।

কিছুক্ষণ পর নাশিদের ধারণা অনুযায়ী মনিকা আবারও আসলো রথিকে চেক দিতে। রথি তখন ঘরেই কিছু স্টুডেন্টদের খাতা দেখছিলো। রথিকে এভাবে দেখে মনিকা আর কিছু না বলেই নাফিসাকে বললো,

-‘নাশিদকে খাওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে আয়!’

বলেই মনিকা চলে গেলো। নাফিসা মায়ের কথামতো নাশিদের ঘরে চলে গেলো নাশিদকে ডাকতে। নেওয়াজ আর তার বউ গেছে বান্দরবানে ঘুরতে। মাসে একবার হলেও ওরা নিজেদের সময় কাটানোর জন্য ট্যুরে যায়। বান্দরবান ট্যুরে আজ সকালেই ওরা রওনা হয়েছে। আসবে দুইদিন পর।
রথি যখন বুঝলো নাশিদ খেতে নিচে চলে গেছে তখন সে ক্যারিডোর এসে রেলিং এ দুই হাত প্রসারিত করে ওদের ডিনারের কাহীনি দেখতে শুরু করলো। নাশিদের পাশেই অর্পি বসেছে। অর্পি নানানভাবে নাশিদের সঙ্গে ঢলাঢলি করতে ব্যস্ত। অর্পিদের অপজিটে বসা মনিকা যেন দেখেও না দেখার ভান করছে। নাশিদ তার বাবার সাথে বিভিন্ন কথা বলতে ব্যস্ত। রথির পাশে নাফিসা দাঁড়িয়ে বললো,

-‘কী দেখছিস?’

-‘দেখছি তোর এই কাজিন কেমন ঢলাঢলিতে এক্সপার্ট। বরফকেও হার মানায়!’

-‘ওর কথা বলিস না। এই মেয়ে হলো জম্মগত লুচি পরোটা। শুনেছিলাম আগে দুটো রিলেশনে ছিলো। যবে থেকে আমার ভাইকে দেখেছে তবে থেকেই ওসব ফেলে আমার ভাইয়ের পিছে লেগেছে। ওর ওই লোভনীয় দৃ্ষ্টি গা জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।’

-‘তোর ভাই কিছু বলে না কেন?’

-‘ভাই না বলে আছে নাকি? আর বললেও অর্পি কী শোনার মানুষ? ওইযে প্রবাদ আছে না? কুকুরের লেজ যতোই সোজা করো ওটা বাঁকা থাকবেই!’

রথির রাগ হলো অর্পির প্রতি, তবে সে প্রকাশ করলো না। নাফিসা তো অর্পিকে নিয়ে বকবক করেই চলেছে।

-‘আমার মাকেও বলিহারি! এরকম বেহায়া, নির্লজ্জ মেয়ে ভাইয়ের চারপাশে ঘুরঘুর করে আর মা তাকে এমন লাই দিচ্ছে? মায়ের প্ল্যানটা আমি বুঝতে পারছি না। আচ্ছা এমন নয়তো মা ভাইয়ের সাথে অর্পির…’

নাফিসার কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই রথি ভেতরে চলে গেলো। এসব সে একদমই সহ্য করতে পারবে না। এসব না ভেবে আপাতত নিজের খাতা দেখা চালিয়ে যেতে হবে। ভেবেই সে আবারও বিছানায় বসে খাতা দেখায় মনোনিবেশ হলো।

পরেরদিনের মধ্যে সারাটাদিন রথির পার হলো নাশিদের সঙ্গে অর্পির চিপকে থাকা দেখতে দেখতে। রথির রাগ অর্পির সঙ্গে সঙ্গে নাশিদের প্রতিও তীব্রগতিতে বেড়ে গেলো। সারাদিন এ এই মেয়েটার জন্যে নাশিদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। ভাব ধরছে এমন নাশিদ তার বিয়ে করা বর। রথি ওদের কান্ড দেখছে আর হাতের লেক্সাস বিস্কিটের প্যাকেটটা মুঠিবদ্ধ করছে তো আবার মোঁচড়া মুঁচড়ি করছে। একসময় প্যাকেটের বিস্কিটগুলো গুঁড়ো হয়ে যায় তাও রথির মনের ঝাল মিটে না। এক পর্যায়ে সে হনহন করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়।

বিকালে নাশিদের কল আসতেই সে থানায় চলে যায়। সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরতেই দেখলো মনিকা আর অর্পি নেই। হয়তো শপিং এ গিয়েছে। নাশিদ উপরে না গিয়ে তার বাবার ঘরে গেলেন। বাবা তখন চোখে মোটা চশমা নিয়ে পত্রিকা পড়তে ব্যস্ত। নাশিদ দরজায় নক করে বলে,

-‘আসবো বাবা?’

বাবা পত্রিকা থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকায়। নাশিদকে দেখতে পেয়ে উনি পত্রিকা ভাঁজ করে চশমা খুলে রাখতে রাখতে বললো,

-‘আরে নাশিদ যে। এসো বাবা!’

নাশিদ হাতের কাগজটা নিয়ে তার বাবার দিকে এগিয়ে গিয়ে বাবার অপজিটের বেতের সোফায় বসলো। বাবা মুচকি হেসে বললো,

-‘হঠাৎ এই সময়ে? কিছু বলবে?’

নাশিদ চুপ থেকেই একটা কাগজ এগিয়ে দেয়। বাবা কাগজটি নিয়ে চোখে চশমা দিয়ে কাগজের লেখাগুলো পড়তে শুরু করে। এর মাঝেই তার মুখটা মলিন হয়ে গেলো। বাবা মুখটা গোমড়া করে নাশিদের পানে তাকালো।

-‘কোথায় জানলে?’

-‘মনে আছে সেদিন ফাইল খুঁজতে বলেছিলে? সেখানেই ডেথ সার্টিফিকেট পাই। তারপর…’

নাশিদ আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলো। বাবার মুহূর্তেই চোখের কোণ ভিঁজে যায়। সত্যটা নাশিদ জেনে গেছে। জেনেছে তার জীবনের বড় সত্যি। বাবা কিছু বলার মতো পেলো না। বাবা-ছেলের মাঝে নিরবতা চললো মিনিটখানেক। অতঃপর বাবা নিজেকে সামলে বলে উঠলো,

-‘বেশ! এইটুকু যেহেতু জেনেছো, বাকিটাও তোমার জানার জরুরি!’
বলেই বাবা নাশিদের অজানা অনেককিছুই খুলে বললো।

——————————-

রথি রাতে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। এর কারণ ওই অর্পি। রথি পারে না অর্পিকে গিলে হজম করে ফেলতে। বারংবার নাশিদের সাথে এতো চিপকানোর মানে কী তার মগজে ঢুকে না। ইচ্ছে তো করে ঢলাঢলি জম্মের মতো বুঝায় দিতে। তার পাশেই নাফিসা আবিরের সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পরেছে। এদিকে রথির রাগে, ক্ষোভে তাকে ঘুমই ধরা দিচ্ছে না। রথির জেগে থাকার মাঝেই তার ফোনে টেক্সট আসলো। রথি ফোন চেক করে দেখলো নাশিদের টেক্সট। রথি এবার নড়েচড়ে বসলো।

-‘ছাদে আসবে, রথ?’

এমন মেসেজ দেখে রথির মাঝে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। এক অদ্ভুত শিহরণ হলো তার। মুহূর্তেই মাথায় প্রশ্ন আসলো। নাশিদ এতো রাতে ছাদে কেন ডাকছে? প্রয়োজন ছাড়া তো নাশিদ এরকম আবদার করে না। রথি নাশিদের কথা ফেলতে পারলো না। সে ফোন রেখে খুবই সাবধানে বের হলো। পুরো ক্যারিডোরের মাঝে একটা হলুদ ড্রিমলাইট জ্বলছে। আলোও খানিক আবছা। এতো বড় ক্যারিডোরে এই ছোট ড্রিমলাইট কতটুকুই-বা আলোকিত করতে সক্ষম?

রথি ধীর-পায়ে খুবই সাবধানে ছাদে চলে গেলো। ছাদে গিয়ে নাশিদকে এদিক সেদিক খুঁজতে লাগলো। হঠাৎ তাকে কেউ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। রথি খানিক আঁতকে উঠলো। পরমুহূর্তেই পরিচিত পারফিউমের ঘ্রাণে তার বুঝতে বাকি রইলো না মানুষটি কে? রথি ওভাবেই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো এবং নাশিদের ছোঁয়াটা চোখ বুজে উপভোগ করতে লাগলো। কিছুক্ষণ ওভাবেই কেটে গেলো।

-‘কেন ডেকেছেন?’

-‘একান্ত সময় কাটানোর জন্য!’

রথি সামান্য কেঁপে উঠলো নাশিদের এই শীতল কন্ঠস্বর শুনে। রথি যেন জমে যাচ্ছে। সে অপ্রস্তুত হয়ে নাশিদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ায়।

-‘কী হলো?’

-‘কিছু না। মাঝরাতে ডাকাটা কী উচিত ছিলো তাও রাতে?’

-‘কেন ভয় পাচ্ছো?’

রথি থতমত খেয়ে গেলো। ড্যাবড্যাব করে নাশিদের পানে তাকিয়ে বললো,

-‘একদম না। হুট করে তো তাই!’

নাশিদ হেসে রথির কাছে গিয়ে রথির হাত ধরে দোলনায় পাশাপাশি বসলো। নাশিদ রথির দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বিরাট আকাশের মাঝে থালার ন্যায় চাঁদটার দিকে তাকিয়ে দুলতে দুলতে বললো,

-‘খেয়াল করেছো, আজ পূর্ণিমা? এই একটা চাঁদই কিন্তু অন্ধকারের মাঝে আবছা আলো ছড়ায়। অন্ধকারের অশুভকে সরিয়ে পবিত্ররূপে মানুষদের মনে সুখের আলো ছড়ায়। ঠিকই তেমনটাই তুমি। আমার কালো সময়ে তোমায় পবিত্র পূর্ণিমা হিসেবে পেলাম, তুমি যে আমারই একান্ত পূর্ণিমা, হৃদপূর্ণিমা। যেই সুখময় স্বাদ আমি ব্যতীত কেউ অনুভব করতে পারবে না।’

বলেই নাশিদ থামলো। রথি স্তব্ধ হয়ে নাশিদের দিকে তাকিয়ে আছে। নাশিদের প্রতি সারাদিনের রাগ, ক্ষোভ নিমিষেই কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। এই মানুষটার অনুভূতি এতটাই গহীন, রথির অজানা ছিলো। কখনো চিন্তাও করেনি কেউ তাকে চাঁদের সাথে তুলনা করবে। রথির ভাবনার মাঝেই নাশিদ আবারও বলতে লাগলো,

-‘অঢেল আকাশের বুকে ওই একটা পূর্ণিমা হলেও এই ভূপৃষ্ঠে তুমি একটি-ই আমার হৃদপূর্ণিমা। চাঁদের যেমন দাগ রয়েছে কথা দিলাম, সেইরকম দাগ তোমার গায়ে আমি কোনোদিন লাগতে দিবো না। আমার হৃদপূর্ণিমা এই চাঁদের চেয়েও অধিক ডিজার্ভ করে।’

রথি চোখ বেয়ে টুপ করে এক ফোটা জল পরলো। নাশিদ তাকে আগলে নেয়। রথি বুকে মাথা রেখেই কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠলো,

-‘এই হাত ছাড়বেন না তো?’

-‘কখনোই না!’

~চলবে।

বিঃদ্রঃ রিচেক দেয়া হয়নি তাই ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে