হূর part 3 (last Part)

1
4637

#হূর
#Roja_islam
#part 3

আদনান ওয়াশরুমে ঢুকে ঝড়না ছেড়ে দাড়িয়ে আছে৷ কান দিয়ে তার ধোঁয়া বের হচ্ছে। এমন লাগছে তার! লাগবে নাই বা কেনো? আজকের মতো লজ্জা সে আগে পায়নি। কোনদিন না। একটা বাচ্ছা মেয়ের উপর অনেক জুলুম করে ফেলেছে আদনান। সত্যি কোম হাত উঠায়নি। তার উপর আজ উল্টো কিছু বলেই ফেলছিলো!

আদনান আর কিছু ভাবতে পারলো না! ওয়াশরুমে প্রায় দু’ঘন্টার মতন দাড়িয়ে ভিজেছে! তারপর রুমে এসে দেখে হূর এই রুমে আসেনি৷ আদনানের আর ডাকতে ইচ্ছা হলো না। তবে হূর জরিয়ে ঘুমুলে ঘুম ভালো হয় আদনানের। কিন্তু আজ নিজেও ঐরুমে যেতে পারবেনা। আদনান মুখ লুকুচ্ছে যেমন হূরের থেকে৷ শুয়ে পড়ে আদনান আজ একাই৷

পাশের রুমে কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পড়ে হূরও। সকালে ঘুম ভাঙে হূরে আজ দেরিতেই। উঠে দেখে ১০ টার উপরে বাজে৷ হূর দ্রুত পাশের রুমে যায়। আদনান নেই হূর আবারও কান্না করে দেয়৷ কি আছে তার কপালে আল্লাহই জানে। হূর ভাবছে৷ সে কাল কেনো এতসব বলতে গেলো কেনো? এখন যদি আদনান সত্যি বাবাকে বলে দেয় তাকে নিয়ে যেতে৷

দিনটা পার হয়ে গেলো হূরের গলা দিয়ে কিছু নামলো না সারাদিন ভয়ে! ৫ টায়র দিকে আদনান বাসায় এসে চুপচাপ শুয়ে থাকে হূর কিছুক্ষণ আদনান এর দিকে তাকিয়ে বললো, ” আদনান? ”

আদনান আস্তে করে বললো, ” জ্বর এসেছে! ঔষধ থাকলে দাও! ”

হূর আর এক সেকেন্ড দেরি করলোনা। দ্রুত আদনানকে ধরে একটু ফ্রেস হয়ে চেঞ্জ করতে বলে৷ হূর সব এগিয়ে দেয়৷ আদনানকে বেডে শুইয়ে দিয়ে। হূর কিচেনে এসে খাবার প্লেট এ করে নিয়ে আদনানকে বহু কষ্টে একটু খাইয়ে দেয়৷ তারপর ঔষধ খাইয়ে দিতেই আদনান ঘুমিয়ে যায়! হূরের কোলে মাথা রেখেই। হূর শুধু শুধুই কেনো জেনো একটু হাসে!

দুদিন চলে যায় আদনানের জ্বর বেড়ে যায়৷ স্কুল থেকে ছুটি নিতে হয়৷ ডক্টর দেখাতে হয়৷ দুদিন হূর শুধু আদনানের জ্বর কমাতেই ব্যস্ত ছিলো৷

৫ দিনের দিন আদনান এর জ্বর কমে। সে এখন মোটামুটি সুস্থ। আদনানের মা বাবা ফোন করে হূরের প্রশংসার পঞ্চমুখ তাদের ছেলের খুব খেয়াল রাখে। হূর না থাকলে কে করতো তাদের ছেলেকে সুস্থ অচেনা শহরে?

এসব শুনে আদনান এর খুব রাগ হয় মা বাবার উপর। কারণ তাদের কথায় সে হূরকে বিয়ে করেছে হূরের বয়স কম তারাতো জানতো। কি করে পারলো এতো ছোট্ট একটা মেয়েকে নিজের ২৫ বছর এর ছেলের বৌ করতে! যদিও অনেক কিছু আদনান বলতে পারতো তার মা বাবাকে৷ কিন্তু বলেনি কষ্ট পাবে ভেবে। কিন্তু সে অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলো৷

পরদিন সকালে নাস্তার পর হূর রুমে আসতেই আদনান বললো, ” হূর?? ”

হূর আস্তে করে বলে, ” জ্বী কিছু করতে হবে? ”
“হ্যাঁ রেডি হয়ে নাও বাইরে যাবো তোমায় নিয়ে? ”

হূর এর আর সাহস হয়না আদনানকে প্রশ্ন করার! কই যাবে তাকে নিয়ে! শুধু ভয় হতে থাকে হূরের বাবার বাড়ীতে রেখে আসবেনা তো তাকে? চোখে পানি চলে আসে এটা ভেবেই হূরের!

সারেদশটার দিকে হূরে হাত ধরে বিল্ডিং থেকে বের হয় আদনান। হূর তো অবাক আদনান রাস্তায় তার হাত ধরেছে? কি করতে যাচ্ছে আদনান??

আদনান হূরকে নিয়ে তার কলেজে যায়। হূরকে ভর্তি করার সকল কথা পরিচিত স্যারের সাথে বলে আসে৷ যেহেতু বছরের মধ্যে ভর্তি। তাই একটু দৌড়া দৌড়ি করতে হবে তাও। আদনান সিধান্ত নিয়েছে সে পরাবে তার বৌকে৷

কলেজ থেকে বেরিয়ে আদনান তার খুব কাছের বন্ধুর বাড়ী যায়৷ আদনানের বন্ধুর বৌ হূরকে দেখে তার নাম দিয়েছে পুতুল৷ কারণ হূর পুতুলের মতোই দেখতে৷ সারাদিন বন্ধুর বাসায় থেকে হূরকে নিয়ে বাড়ী ফিরে আসে আদনান৷ হূর সারাদিন রোবট তাজ্জব বোনলে যেমন লাগবে সেরকমই দেখাচ্ছিলো। আজ হূর অন্য এক আদনানকে দেখেছে। আর দশটা স্বামী স্ত্রীর মতো আজ আদনান হূর ছিলো এ এক অন্য অনুভূতি হূরের৷ আদনান আজ খুব ভালো ব্যাবহার করেছে হূরের সাথে আজ যা এই ৫ মাসের মধ্যে করেনি৷ আর কলেজে ভর্তির ব্যাপারটার জন্য হূর একটুও প্রস্তুত ছিলো না। সে কিছুই বিশ্বাস করতে পারছেনা!

আদনান ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরুলে। হূর তাকিয়ে থাকে আদনান এর দিকে! চিন্তে পারছেনা যেমন আদনানকে হূর। আদনান হূরকে কিছুই বলেনা৷ শুধু কপালে চুমু এঁকে দিয়ে হূরকে জরিয়ে ধরে নিয়ে শুয়ে পড়ে বেডে। হূর কান্নায় ভেঙে পড়ে তাতে।

তারপর ৪টি বছর চলে যায় না। হূরকে ছাড়েনি আদনান। হূর ভালো আছে আদনানের সাথে এখন ঐদিনের পর আদনান নিজেকে চেঞ্জ করে নিয়েছে৷ অনেক ভালোবাসা দিয়ে নিজের করে রেখেছে সে হূরকে। কিন্তু ক্ষমা চায়নি কোনদিন হূরের কাছে কখনও। যদিও এখন আদনান মন বলে একটি বা হূরের কাছে ক্ষমা চাইতে ভালোবাসি বলতে কিন্তু পারেনা কই জানি সামান্য ইগো কাজ করে। আদনান বুঝে স্বামী স্ত্রীতে ইগো থাকা ঠিক না। তাও ইগো টাই যেনো জিতে যায় বারবার৷

হূর এখন অনার্স এর স্টুডেন্ট। পড়াশোনা স্বামী সংসার শ্বশুর শাশুড়ী সব সামলিয়েছে সে৷ খুব ভালোবাসা দিয়ে আদনানকে আগলে রেখেছে আগের পিচ্ছি আর পিচ্ছি নেই সবি বুঝে এখন। আর আদনান কে পাগলের মতো ভালোবাসে আগের সব কিছুই দূরস্বপ্ন ছাড়া কিছুই মনে হয়না তার৷ হূর সব ভুলে গিয়েছে৷

আজ হূরের জন্মদিন। আদনান তার মা বাবাকে নিয়ে ঘরে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করেছে! কিন্তু সকাল থেকে হূরের শরীল বেশি ভালো নয়৷ সন্ধ্যায় না পেরে ডক্টর এর কাছে গেলে আদনান হূর জানতে পারে তাদের ঘরে নতুন অতিথি আসতে যাচ্ছে। হূরকি খুশী হবে কি আদনান তার দিগুণ খুশী চেম্বার থেকে বেরিয়ে আদনান বললো, ” হূর কই আমি আজ তোমায় গিফট দিবো তুমিই আমায় দিয়ে দিলে?? ”

হূর লজ্জিত হেসে বললো, ” থ্যাংক ইউ আদনান সব চমৎকার ভাবে বদলে দেওয়ার জন্য! ”

আদনান কিছু বলতে পারেনা। সে আর তার মা বাবা এতো অন্যায় করেছে হূরের সাথে তাও হূর কিছু বছরে সব ভুলে আজ তাকে থ্যাংক ইউ বলছে আর সে তার মিস বিহেভিয়ার এর জন্য আজো একদিন সরি টুকু বলেনি? ছেলে মানুষ হলে এতো ইগো সম্পর্কে থাকাকি আধো ভালো। না আজ সে সরি বলবে। বলেই যাই হয়ে যাক মনের কথাটাও বলবে৷ আর কোন সংশয় মনে রাখবেনা আদনান। ভাবতে ভাবতেই বাড়ী ফিরে আদনান!

বাসায় ফিরে আদনান এর মা বাবা এই নিউজ দিলে তারা খুশীতে আটখানা হয়ে যায়। সাথে হূরের সেই আন্টি আর নানু। হূরের জন্মদিন এর খুশী দিগুণ হয়ে যায়৷ রাতে সবাই এক সাথে খাওয়া দাওয়া করে। কথাবার্তা চলে বেশ সময় ধরে। আন্টি নানু বিদায় নেয়। আদনান এর মা বাবাও ঘুমুতে যায়৷ সব গুছিয়ে হূর নিজের রুমে গিয়ে দেখে জানালার সামনে মন মরা হয়ে দাড়িয়ে আছে আদনান। হূর জরিয়ে ধরে আদনান কে পিছন থেকে। আদনান হূরে হাত ধরে থাকে। হূর কিছুক্ষণ পড় বলে উঠে, ” তুমি খুশী নও আদনান? আমাদের বেবির জন্য?”

আদনান দ্রুত হূরের দিকে ফিরে বলে উঠে, ” আমাকে তোমার খুব খারাপ মনে হয় না হূর? ”
হূর হেসে বলে, ” একদম না। আপনি খারাপ হলে ভালো কে? আপনি আমার লক্ষ্মী বর বুঝেছে! এখন বলুন আজকের দিনে মন খারাপ কেনো? ”

আদনান এবার হূরের চোখে চোখ রেখে বললো, ” আমি আজ অনেক খুশী হূর অনেক। তোমায় এতো অবহেলার পরেও তুমি আমায় পরিপূর্ণ করেছো সব সময়। তুমি ধৈর্য ধরেছো। খারাপ ভালো সময় আমার পাশে থেকেছো। তোমার মতো একজনকে পেয়ে আমি খুব খুশী। শুধু আমায় ক্ষমা করে দিও হূর আমার ভুল গুলোর জন্য।আই লাভ ইউ হূর। অনেক ভালোবাসি তোমায়! ”

হূর হতবিহ্বল হয়ে গেলো। কারণ এই তিন টা ম্যাজিকাল ওয়ার্ড জীবনের প্রথম কাউর মুখে শুনলো হূর আর সেটাও তার এই রাগী নরম মনের বরটার থেকে। হূর আজ সব পেয়ে গেলো মনে হচ্ছে। হূর আদনানকে জরিয়ে ধরে বললো, ” আই লাভ ইউ টু। কিন্তু ক্ষমা কেনো চাইছেন? আদনান যা হয় ভালোই হয়৷ যদি হুট করেই পেয়ে যেতাম সব হয় তো মূল্য বুঝতাম না সেগুলোর। কষ্ট করে ধৈর্য ধরে বুঝতে শিখেছি সব পেয়েছি৷ তাই জীবনের সব কিছু আমার কাছে এখন অনেক মূল্য বান। আল্লাহ ধৈর্যের পরিক্ষা নেন এক সময় ঠিকি সুখ দেন। আমাকেও দিয়েছে। অনেক ভালোবাসি আপনাকে। ”

অদের সম্পর্ক এর পড়ে আরো গাঢ় হয়! ভালোবাসা দিগুণ হয় ৷ ৯ মাস পর হূরের একটি মিষ্টি দেখতে মেয়ে হয়৷ আদনান নাম ও রাখে “মিষ্টি!”

……সমাপ্ত…..

1 মন্তব্য

Leave a Reply to Priya Banerjee উত্তর বাতিল

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে