হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার
০৬.
“আমি হিমি নই। ওনার বোন। কিন্তু সোহিনী আপুর কি হয়েছে? আপনি কি করে চেনেন ওদের?”
তাহিরের অপর প্রান্ত থেকে দেয়া জবাব মিশ্মি শুনতে পায় না। তার ঠিক আগেই হিমি ফোন ছিনিয়ে নেয়। কানে ফোন ঠেকিয়ে বলে উঠে,
“আমি আপনার সাথে পরে কথা বলছি। একটু ব্যস্ত আছি।”
মিশ্মি প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকায় হিমির পানে। হিমি ফোন কেটে পকেটে ঢোকায়। চুল থেকে তোয়ালে খোলে চুল ঝাড়ে। বলে,
“সোহিনী সুইসাইড করতে চেয়েছিলো। আজ ওর সো কল্ড ভালোবাসার মানুষের বিয়ে। এখন ঠিক আছে। তবে খবরটা জানার পরই উদ্ভট খারাপ কাজটা করতে চেয়েছিলো।”
মিশ্মি বিস্মিত হয় নি। চোখ মুখ শান্ত রেখেই বললো,
“আত্মহত্যা করা পাপ কেনো আপু?”
হিমি তোয়ালে ছুড়ে মারে বিছানায়। চুলে হাত ডুবিয়ে নাড়তে থাকে। কেডস পরতে পরতে বলে,
“পাপ নয় মিশু মহাপাপ।”
“সেটাই বা কেনো?”
“আমাদের জীবনটা শুধু আমাদের নিজের নয়। এটা উপরওয়ালার দান। আমাদের জীবনের উপর আমাদের বাবা মায়ের হক আছে। আমাদের মা কতো কষ্ট সহ্য করেছেন আমাদেরকে জন্ম দিতে গিয়ে। সেই কষ্টের দাম দিতে হলেও এট লিস্ট জীবনটা শেষ করে দেয়া উচিত না। যে জীবনে আমরা ছাড়া আরো অনেকের হক, অধিকার থাকে সে জীবন নষ্ট করার অধিকার আমাদের কখনোই থাকবে না। তাই সেটা মহাপাপ। যতদূর আমার মনে হয়!”
মিশ্মি কাঠ কাঠ গলায় বললো,
“কিন্তু যখন সে জীবনটা বাঁচিয়ে রাখার কোনো উপায় না থাকে তখনও কেনো শেষ করা যাবে না?”
হিমি ভ্রু কুঁচকালো। সন্দিহান গলায় বললো,
“তুই কি সুইসাইড করার প্ল্যান করছিস না কি?”
মিশ্মি প্রাণহীন হাসি উপহার দিয়ে বললো,
“ধুর কি যে বলো না! এমনি জিজ্ঞেস করছি। বলো না।”
হিমি স্বস্তির নিশ্বাস টেনে নিয়ে বলে,
“জীবন দেয়ার মালিক যেমন আল্লাহ তেমনি জীবন নেয়ার মালিকও তিনি। যদি বেঁচে থাকার কোনো কারন থাকবেই না তবে আমিও এতোদিন বেঁচে থাকতাম না। আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি মানুষের বেঁচে থাকার পেছনে একটা কারন আছে। কিছু মানুষ সেই কারনটা খুঁজে পায়, কিছু মানুষ খুঁজে নেয় আর বাকিরা বুঝে উঠতে পারে না। তাই তারা ভেবে নেয় তাদের বেঁচে থেকে কোনো লাভ নেই। তারা জীবিত থেকে শুধু পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়াচ্ছে। অন্ন ধ্বংশ করছে। প্রকৃতপক্ষে এটা সত্যি নয়। তাদের প্রয়োজন হয়তো কোনো মহত কাজে পরবে না তবে ক্ষুদ্র কোনো না কোনো কাজে পরবে। ঠিক পরবে।”
মিশ্মি অবাক হয় হিমির কথায়। হিমির চোখের দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
“তার মানে যদি কেউ ভাবে তার মরে যাওয়া উচিত তবুও মরবে না? ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে জ্যান্ত লাশ হয়ে বেঁচে থাকবে?”
হিমি হাসলো। দাঁতে ঠোঁট চেপে ধরে অনেকক্ষন হাসলো সে। তারপর বললো,
“সবকিছুই কি নিজেদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে হয়? হয় না তো! তবুও করতে হয় আমাদের, থাকতে হয়, মেনে নিতে হয়। তাহলে বাঁচতে পারবো না কেনো? আর বলছিস, জ্যান্ত লাশ হয়ে! চাইলে জ্যান্ত লাশকে জীবিত করা যায়। জীবন থেকে একটা অতি প্রিয় জিনিস হারিয়ে গেলেই যে দুম করে মরে যেতে হবে তার তো কোনো মানে নেই। অন্য একটা জিনিসকে প্রিয় করা যায়। তা না পারলে নতুন কিছুতে সুখ খুঁজে নেয়া যায়। গাছ নামক জড়বস্তুকে যদি বন্ধু ভাবা যায় তাহলে মানুষের বন্ধুর অভাব হওয়ার তো কথা নয়! সামান্য চকোলেট খেয়ে যে মেয়েটা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় সে মরতে যাবে কেনো? মৃত্যুর পর তো এই স্বাদ পাবে না আর। সুখ যেখানে প্রতি পদে নিহিত সেখানে মানুষ দুঃখের ভারে নুইয়ে পরে কেনো? তাদের তো উচিত রোজ দু বেলা গাছের নিচে বসে থাকা। রাতে চাঁদের সাথে গল্প করা, বৃষ্টিতে ভেজা। যে নেই সে নেই। তার জন্য কেঁদে কেটে চোখ ফুলিয়ে নিজেকে শেষ করার কোনো মানে হয় না। যে বা যারা আছে তাদের জন্য বাঁচা উচিত। কেউ না থাকলে নিজের জন্য বাঁচো। তাও যদি না পারো তবে যে জীবন দিয়েছে তাঁর জন্য বাঁচো। সঠিক সময়ে তোমার প্রাণ ভোমরা তাঁর কাছে চলে যাবে। তখন চাইলেও বাঁচতে পারবে না। যে সময় পাচ্ছো বেঁচে থাকো।”
কয়েক সেকেন্ড থেমে মৃদু হেসে বললো,
“আর কোনো প্রশ্ন থাকলে শাহ রুক খানের ‘কাল হো না হো’ ছবিটা দেখ। বেস্ট ওয়ান। আমার সময় নেই। গেলাম।”
কথা শেষ করেই মিশ্মির গাল ধরে টেনে বেরিয়ে গেলো হিমি। মিশ্মি খাটে বসে আছে। নির্লিপ্ত হৃদয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে সে। হিমির বলা কথা গুলো মনে মনে আওড়াচ্ছে।
.
অতি সাধারন এক বিল্ডিংএর ওপর পাশের রাস্তায় বাইকে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হিমি। বিল্ডিংএর একটা ফ্ল্যাটে বিয়ে আজ। কোন ফ্ল্যাটে তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। রঙ বেরঙের লাইট জ্বলছে ফ্ল্যাট জুড়ে। বিল্ডিঙের নিচেও কিছু জায়গায় লাইটিং করা হয়েছে। হিমির মুখে চুইঙ্গাম। চোখের দৃষ্টি সেই ফ্ল্যাটের দিকে। হিমির ভেতরে যেতে ইচ্ছে করছে খুব। ইচ্ছে করছে সোজা বিয়ের প্যান্ডেলে ঢোকে বরের কলার ধরতে। তাকে কিছু কথা বলা উচিত। কথাগুলো হলো,
‘তোদের মতো খারাপ পুরুষদের জন্য পুরো পুরুষ জাতি কলুষিত। যাকে বিয়ে করছিস তাকে সারাজীবন বউয়ের মর্যাদা দিয়ে রাখবি? না কি সো কল্ড গার্লফ্রেন্ডের মতো ছুড়ে ফেলে দিবি।’
তারপর কনের মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়িয়ে বলা উচিত, ‘তুমি জানো যার সাথে বিয়ে হচ্ছে সেই মানুষটা কেমন? একটা মেয়েকে ধোকা দিয়েছে সে। শুধু ধোকাই না অপমান করেছে, অপবাদ দিয়েছে, বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তুমি বিশ্বাস করতে পারবে এই লোকটাকে? আজ তোমার যা রুপ তা কি সারাজীবন থাকবে? কাল যখন তোমাকে দেখতে অসুন্দর লাগবে তখন তোমাকেও ছেড়ে দেবে। না ছাড়বে না ছুড়ে দেবে। এরা কাপুরুষ, মিথ্যুক, সমাজের জঞ্জাল!’
কিন্তু বলবে না সে। যাবে না ভেতরে। সব সময় ইচ্ছানুযায়ি কাজ করা যায় না। না আর উচিত কথা বলা যায়। হিমিও তাই করতে পারছে না। সোহিনী কড়া গলায় বলে দিয়েছে কেউ যেনো ছেলেটার সাথে দেখা না করে বা কোনো ভাবে কথা বলার চেষ্টা না করে। তবু হিমি এসেছে। শুধু দেখতে চায় মেয়েটা কতোটা সুন্দরী! যার জন্য দেড় বছরের প্রেমিকাকে ছেড়ে দেয়া যায়।
সোহিনীও তো সুন্দর তবে কয়েকজনের চোখে। বিশেষ করে হিমির চোখে। হিমির মতে সোহিনীর মতো সুন্দরী পৃথিবীতে খুব কম। সোহিনীর গায়ের রঙ চাপা কিন্তু চেহারা উজ্জ্বল। কালো চেহারা উজ্জ্বল? হিমির তো তাই চোখে পরে। টানা টানা চোখ, মিষ্টি হাসি। থুতনির কাছে কুচকুচে কালো তিল। লম্বা চুল। ঝকঝকে ত্বক তার। খাটো, মাঝারি গঠনের স্লিম দেখতে মেয়েটা অতীব সুন্দরী। সাহিত্যের ভাষায় বললে, মায়াবতী! চরিত্রহীন পুরুষদের চোখে এই মায়া পরে না। তারা দুধের মতো চকচকে রঙে আসক্ত হয়। বলিউডের নায়িকাদের প্রতি আকৃষ্ট থাকে। মায়াবতীদের হাসির থেকে দুধে আলতা গায়ের রঙের মেয়েদের হাঁটাচলাই পছন্দ তাদের। সেডস দিয়ে আর্ট করা কৃতিম চোখ দেখেই মাতোয়ারা হয় চরিত্রহীনরা। গাঢ় কাজলে ঘেরা চোখে তারা তাকায়ও না। হিমির আফসোস হয়। কষ্টও হয়। সোহিনীর জন্য। মেয়েটা খুব কাঁদছে আজ। ফুল দিয়ে সাজানো গাড়ি বেরোয় গেইট থেকে। হিমি গাড়ির কাচের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। কনেকে দেখা যাচ্ছে। মুখে মেক আপের ঘন প্রলেপ। পাশে শ্যামলা বর্নের ছেলেটি কনের হাত ধরে আছে। ঘিনঘিন করে উঠে হিমির শরীর। নাক শিটকিয়ে বলে উঠে,
“সবে বিয়ে হলো এখনই ধরাধরির কি আছে? আগে ঘরে যা। বউয়ের মেক আপ ঘষে মেজে তোল। তারপর আসল রুপ দেখ শালা লুচ্চা। শ্যামলা রঙে এলার্জি হলে নিজেরে আয়নায় কিভাবে দেখিস তুই? বমি পায় না? সোহিনীরে দেখলেই ঘেন্না আসে? নিজেরে কেমনে রোজ দেখিস আমি বুঝিনা! তোর বউ তোরে ঠিকমতো দেখেছে? তুই আজই,,,,,”
রিংটোনের আওয়াজে থেমে যায় হিমি। নইলে এক্ষুনি বড়সড় কোনো অভিশাপ দিতো সে। ফোন করা ব্যক্তিটি বাঁচিয়ে নিলো তাকে। হিমি স্ক্রিনে না দেখেই ফোন রিসিভ করলো।
“হিমি মা? তুই বাড়ি আসবি না?”
হিমি ঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে বলে,
“না বড়মা। অনেক রাত হয়েগেছে। এখন ফিরলে তোমার শ্বশুর মশাই রেগে বোম হয়ে যাবে।”
আমিনা বেগম বিশ্বাসী গলায় বললেন,
“হবেন না।”
হিমি ভড়কে গিয়ে বললো,
“কেনো? দাদু বাড়ি নেই?”
“বাড়িতেই আছেন। সন্ধ্যায় অসুস্থ বোধ করছিলেন। এশার নামাজ পরেই ঘুমিয়ে গেছেন। ঔষধও নিয়েছেন। কাল সকালের আগে ঘুম ভাঙবে না। তুই চলে আয় আব্বা জানবেন না কিছু।”
হিমি ফোনে কানে রেখেই বাইকে চেপে বসলো। ফুঁক দিয়ে রাস্তার পাশে চুইঙ্গাম ফেলে দিয়ে বললো,
“তাকে জানানোর মানুষ তো কম নয় বাড়িতে। ছাড়ো। অথৈর বিয়ে সামনে। মামানি কদিন ওখানে থাকতে বলেছেন। ওনার কথা না রাখলে তেমন কিছু হবে না শুধু আমায় নিয়ে কথা বলা বেরে যাবে। কি দরকার সুযোগ দেয়ার!”
আমিনা বেগমের মুখ শুকনো হয়ে গেলো। আবেদনের স্বরে বললেন,
“আমি আলুর তরকারি করেছিলাম। মুরগী ভুনাও আছে। খেয়ে যা অন্তত!”
হিমি আক্ষেপের সুর তুললো। বললো,
“সেটা আগে বলবে না? একটু আগেই বন্ধুদের সাথে ভরপেট খেয়েছি।”
আমিনা বেগম জোর করলেন না আর। শুধু বলেদিলেন দিনে যেনো একবার হলেও বাড়ি যায়। কোনো এক অতি দরকারি কাজ পরেছে। হিমি ছাড়া সে কাজের কথা কাউকে বলতে ভরসা পারছেন না তিনি। হিমি আসবে বলে ফোন রেখে দিলো। কয়েক মিনিট পার হতেই আবারও বড় মাকে ফোন লাগালো হিমি।
“হ্যালো? কিছু বলবি?”
“বাবা খেয়েছে রাতে?”
আমিনা বেগম ছোট্ট শ্বাস টেনে নিয়ে বললেন,
“না। চা খেতে চাইলো। তনিমা দিয়েছে করে।”
হিমি শান্ত গলায় প্রশ্ন করলো,
“শুধু চা?”
মুঠোফোনের অপর প্রান্ত থেকে জবাব এলো, ‘হ্যাঁ, শুধু চা’! হিমি দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বললো,
“মাঝরাতে ঘুম ভাঙতে পারে। তুমি বরং খাবার টেবিলে কিছু শুকনো খাবার রেখো দিও। খিদে পেলে খুঁজাখুঁজি করতে হবে না।”
আমিনা বেগম সময় নিয়ে বললেন,
“তোর বাবা কিন্তু তোকে ভালোবাসে হিমি।”
হিমি নিঃশব্দে হাসলো। চোখে পানি চিকচিক করছে তার। ছোট্ট করে বললো,
“জানি।”
.
নীল দেয়ালে ডিমলাইটের আলো পরে আরো উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। তাহির এপাশ ওপাশ করছে। ঘুম আসছে না তার। অস্বস্তি হচ্ছে। কেনো হচ্ছে তা সে জানে না। বিরক্তি লাগছে নিজের উপর। দুপুরে হিমি মেয়েটা ফোন দিয়েছিলো তাকে। তখন ব্যক্তিগত কাজে ঘরেই ছিলো তাহির। মায়মুনা জামান ছেলের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দিয়েছেন তাকে। সেদিনের ঘটনা মাকে জানিয়েছিলো বলেই হয়তো হিমির উপর এক আলাদা রাগ জমেছে মায়মুনার। সাথে সুইসাইড করতে চাওয়া মেয়েটার প্রতি বিদ্বেষ জন্মেছে। কড়া গলায় বলে দিলেন,
‘এই মেয়ের ফোন রিসিভ করবে না তুমি’!
হিমির ফোন আসেনি আর। তাহির নিজে থেকে ফোন করতে চেয়েছিলো। পারে নি। মা সেই নাম্বারখানা মোবাইল থেকেই ডিলিট করে দিয়েছেন। অনেক খুঁজেও নাম্বারের হদিশ পেলো না তাহির। ডাক্তার হিসাবে পেশেন্টের খবরাখবর নেয়া উচিত। তাহির সেটাই বুঝাচ্ছিলো মাকে। তিনি বুঝলেন না। উল্টে চোখ গরম করলেন। উনত্রিশ বছরের ছেলে মায়ের চোখ দেখে ভয়ে মুখ খোলে নি ব্যাপারটা হাস্যকর হলেও সত্যি। মা কষ্ট পাবেন ভেবে মায়ের ভুলটাও ধরিয়ে দেয় নি সে। কিন্তু তাহির অনুতপ্ত ভীষন। তার ক্ষমা চাওয়া উচিত। মায়ের তরফ থেকেও ক্ষমা চাওয়া উচিত। তবে মাকে জানানো যাবে না। মায়ের অজান্তেই মায়ের করা ভুল শোধরাতে হবে। যা উচিত তা করতেই হবে। উচিত কাজগুলো ফেলে রাখতে নেই। সময় সুযোগ বুঝে করে নিতে হয়। তাহিরও তাই করবে। মেয়েটার খুঁজে ওই ব্রীজে যাওয়া যেতে পারে। যেখানে প্রথম দেখা তাদের।
চলবে,,,,,,,,,,,,,
হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার
০৭.
হানিফ শরিফ খবরের কাগজের পাতা উল্টাচ্ছেন। টেবিলে রাখা চা ঠান্ডা হচ্ছে। সেদিকে খেয়াল নেই ওনার। স্ত্রী অনাহিতা নাহার পাউরুটিতে জেলি লাগিয়ে অথৈর হাতে দিলেন। সরু চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘চা যদি খাবেই না তবে বললেই পারতে। শুধু শুধু দুধ চিনি নষ্ট হলো!’
হানিফ শরিফ কপাল কুঁচকালেন। কাগজে চোখ রেখেই স্মিত গলায় বললেন,
‘খাবো।’
‘কখন খাবে? আমি কিন্তু আর চা গরম করতে পারবো না।’
‘প্রয়োজন নেই। ঠান্ডা চাই খাবো। বেশি গরম খেলে জিব জ্বলে!’
স্বামীর এমন খাপছাড়া ভাবে রাগ লাগে অনাহিতার। অথৈ পাউরুটিতে কামড় বসিয়ে হিমির শোবার ঘরের দরজার দিকে তাকালো। দরজা ভেজানো। ঘর অন্ধকার। অনাহিতা মেয়ের মাথায় গাট্টা মেরে বলে উঠেন,
‘এদিক ওদিক না দেখে খেয়ে উঠ। কাজে হাত লাগা এসে। আজ বাদে কাল বিয়ে এখনো ঘরের কাজ পারিস না। শ্বশুরবাড়িতে কি করবি?’
অথৈ ঠোঁট উল্টায়। মিশ্মি ফ্যাকাশে চেহারায় খাবার টেবিলে এসে বসে। অনাহিতা ভাইঝির প্লেটেও জেলি মাখানো পাউরুটি দেন। এগিয়ে দেন কফির পেয়ালা। রোশন আরা রান্নাঘর থেকে চা নিয়ে এসে মেয়ের পাশের চেয়ার টেনে বসেন। জা য়ের উদ্দেশ্যে বলেন,
‘আপা বসে পরো।’
অনাহিতা মাথা নাড়ান। স্বামীর দিকে একপলক দেখে রোশন আরার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করেন। রোশন আরা চায়ে চুমুক বসিয়ে বলেন,
‘মিশুর বাবা সকালেই বেরিয়ে গেছেন। অফিসে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে কি না!’
অনাহিতা থমথমে গলায় স্বামীকে প্রশ্ন করেন,
‘তোমার মিটিং নেই?’
হানিফ শরিফ পেপার পরা থামান। কাগজ ভাজ করে পাশে রেখে ঠান্ডা বিস্বাদ চায়ে ঠোঁট ছুঁয়ান। গলা কেশে বলেন,
‘আছে তবে হাশিম সামলে নেবে। ছোট ভাই থাকতে বড় ভাইকে সব কাজ করতে হয় না।’
অনাহিতা বিরক্তির নিশ্বাস টানেন। হিমির ঘরে লাইট জ্বলে উঠে। ঘরের দরজা খোলে বেরিয়ে আসে ছেলেদের পোষাক ধারি হিমি। অনাহিতা মুখ গুম করে চেয়ারে বসেন। হানিফ শরিফ উজ্জ্বল চেহারায় ডেকে উঠেন ভাগ্নিকে।
‘হিমি মা? ব্রেক ফাস্ট করে নে।’
হিমি টেবিলের দিকে দৃষ্টি দেয়। টেবিল জুড়ে কফি, চা, দুধ, ডিম, পাউরুটি, জেলি, বাটার। এসব খেতে মোটেও ভালো লাগে না হিমির। কিন্তু মামুকে কি করে মানা করে? হিমি চোখ ঘুরিয়ে অনাহিতার দিকে তাকালো। একমনে পাউরুটি চিবুচ্ছেন তিনি। হিমি দাঁড়িয়ে থেকেই এক টুকরো পাউরুটি হাতে তুলে নেয়। চামচে জেলি নিয়ে হালকা প্রলেপ লাগিয়ে চটপট খেয়ে নিয়ে পানিতে চুমুক বসায়। তাড়াহুড়া করে বলে,
‘হয়ে গেছে। আমি আসি মামু!’
অথৈ ব্যথিত মনে প্রশ্ন করে,
‘এখন কোথায় যাবে আপু?’
‘কাজ আছে।’
‘কি কাজ করিস তুই? দিন নেই রাত নেই খালি ঘোরার মতো ছুটছিস! সেদিনও এক্সিডেন্ট করলি। পরে বড়সড় কিছু হয়েগেছে দায় কে উঠাবে?’
অনাহিতার কথায় তটস্থ হয় হিমি। ছোট্ট শ্বাস টানে। চোখ ঘুরিয়ে মামুর দিকে তাকায়। তিনি নির্লিপ্ত হাসেন। হাসি মুখে বলেন,
‘হিমির কাজের শেষ আছে না কি? দু দুটো পরিবার তার। পরিবারের কতো কাজ। তুমি নিজেও তো কাজের বেলায় খালি হিমিকে ডাকো। আবার বলো কিসের কাজ? ও ঘোরার মতো না ছুটলে বাইকে তো জং ধরে যাবে। হিমি মা ছুটে বলেই সব ঠিক ঠাক। যা মা, কি কাজ আছে করে নে। কিন্তু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরিস! একটা কাজ আছে বুঝলি। পরে আলাপ করবো।’
হিমি মাথা দুলিয়ে মৃদু হেসে বেরিয়ে যায়। অথৈ মুখ গোমরা করে উঠে দাঁড়ায়। তার যে কিছু বলার ছিলো হিমিকে। দুদিন ধরে চেয়েও বলতে পারছে না। হিমিকে পাওয়াই দুষ্কর।
.
আমিনা বেগম সাবধানী গলায় বললেন,
‘তোর ছোট মামার মেয়ের কি যেনো নাম?’
হিমি ভ্রু কুঁচকে বলে,
‘মিশ্মি। কেনো?’
আমিনা বেগম বালিশের কভার বদলাতে বদলাতে বলেন,
‘ওর বিয়ের কথা বার্তা চলছে?’
হিমি পায়ের উপর পা তুলে বসে। ফেইসবুক স্ক্রল করতে করতে বলে,
‘না। অথৈর বিয়ে হোক আগে। তারপর ওসব নিয়ে ভাববেন হয়তো। কেনো বলোতো?’
আমিনা এবারও জবাব দিলেন না। হাতের কাজ শেষ করে বেরিয়ে গেলেন। হিমি মোবাইল হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসে। ঘাড়ে হাত রেখে টেনে আনে কাধ অব্দি। অলস ভঙ্গীতে বলে,
‘কাল বলেছিলে দরকারি কথা আছে। কি কথা সেটা তো বললে না।’
‘মিশ্মি অনার্স পরছে না রে?’
‘হ্যাঁ।’
হিমি সন্দিহান হয়ে তাকালো আমিনা বেগমের দিকে। কপালে চিন্তার রেখা টেনে বললো,
‘মিশ্মি সম্পর্কে এতো জানতে চাইছো কেনো বড়মা?’
আমিনা বেগম ঠোঁট টিপে হাসলেন। উকি দিয়ে ছোট জাকে দেখলেন। রাদিবা আপন মনে টিভি সিরিয়াল দেখছেন। আমিনা গলার স্বর খাদে নামিয়ে বললেন,
‘আমাদের নিহান মিশ্মিকে পছন্দ করে।’
হিমি না বুঝে বললো,
‘তো?’
‘তো আবার কি? বোকা মেয়ে বুঝিস না? নিহান মিশ্মিকে পছন্দ করে!’
হিমির মাথায় এবারও কিছু ঢুকলো না। চাচাতো ভাই মামাতো বোনকে পছন্দ করে। এতে বুঝাবুঝির কি আছে? একজন মানুষ অন্য একজন মানুষকে পছন্দ করতেই পারে। এতে এতো উত্তেজিত হওয়ার কি আছে? আর তাছাড়া হিমির জানার মতে নিহান আর মিশ্মি কখনোই একে অপরকে অপছন্দ করে নি। দেখা সাক্ষাত খুব কম হলেও অপছন্দ করার কোনো কারন নেই। তবে বড়মা এতো খুশি কেনো? আমিনা বেগম দ্বিগুন উত্তেজনা নিয়ে বললেন,
‘নিহান মিশ্মিকে বিয়ে করতে চায়!’
হিমি বোকার মতো প্রশ্ন করলো,
‘কেনো?’
আমিনা বেগম কটমট করে তাকালেন। শক্ত গলায় বললেন,
‘এতো বড় মেয়েকে খোলাখোলি এসব বলতে হয়? উফ। শোন, প্রাপ্ত বয়স্ক একটা ছেলে প্রাপ্তবয়স্ক একটা মেয়েকে পছন্দ করে বিয়ে করতে চায়। মানে বুঝতে পারছিস?’
হিমি বড়মার কথাগুলো মনে মনে ভাবতে থাকে। চোখ দুটো রসগোল্লার ন্যায় বড় হয়ে যায় তার। আমতা আমতা করে বলে উঠে,
‘ইউ মিন, ওরা একে অপরকে ভালোবাসে? বাট হাও?’
‘তোর হাওমাও ছার। বাসে তো বাসে। এখানে কি কেনোর কোনো জায়গা নেই।’
হিমি আগ্রহ নিয়ে বললো,
‘তুমি কি করে জানলে?’
আমিনা বেগম লাজুক হাসলেন। মুখে হাত রেখে বললেন,
‘ওর বইয়ের ভাজে মিশ্মির ছবি দেখেছি। পরে যখন জিজ্ঞেস করলাম ছবি দেখিয়ে ছেলে দেখি মিটিমিটি হাসে। কিছু বলে নি। মাথা চুলকে চোখ সরিয়ে নিয়েছে।’
হিমির মুখভঙ্গী পালটে যায়। এসবের মধ্যে নিহান মিশ্মিকে ভালোবাসে এ কথাটা কি করে জানলেন আমিনা। উনি কি মন বিশেষজ্ঞ? কার মনে কি চলছে দুম করে বুঝে যান? কই হিমির মনের কথা তো বুঝেন নি। কতো কথাই তো হিমি বলে না তাকে। তাহলে নিহানের না বলা কথা কি করে বুঝে গেলেন? খটকা লাগে হিমির। মন বলে, ‘বড়মা, ভুল বুঝেছে নিশ্চয়। মিশ্মিকে তো সেই কবে দেখেছে বড়মা। এখনো চেহারা স্পষ্ট মনে আছে কি নেই কে জানে? হয়তো অন্য কারো ছবি দেখে গুলিয়ে ফেলছে’। আমিনা বেগম হিমিকে হালকা ঝাকুনি দেন। ভ্রু নাচিয়ে বললেন,
‘কথা বলিস না কেনো? ওদের ব্যাপারটা বিয়ে অব্দি গড়াতে হবে বুঝলি। দুবাড়ির সম্পর্কটাও ঠিক হয়ে যাবে।’
হিমি জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বেরিয়ে পরে। যেতে যেতে ছোটমার উদ্দেশ্যে বলে,
‘নিহান কই ছোটমা?’
টিভি সিরিয়ালে মগ্ন রাদিবা বেখেয়ালি হয়ে বলে বসেন,
‘খাটের তলায় লুকিয়ে আছে হারামজাদা। আর এরা বোকার মতো বাগানে খুঁজতে গেছে।’
আমিনা বেগম হেসে উঠেন তার কথার পরিবর্তে। হিমি গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়ে।
________________
‘তুই মিশ্মিকে ভালোবাসিস?’
নিহান চমকে উঠে। বন্ধুদের সাথে ক্যাফেতে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো নিহান। হিমি হুট করে এসেই কথাটা বলে। নিহানের বন্ধুরা চোখের পলক ঝাপটে তার দিকে তাকায়। হিমি আবারও একই প্রশ্ন করায় উঠে দাঁড়ায় নিহান। হাসার চেষ্টা করে বললো,
‘তোকে কে বললো?’
‘বড় মা! বইয়ের ভেতর মিশ্মির ছবি দেখে তোকে জিজ্ঞেসও করেছিলেন। জবাব দিস নি শুনলাম। এখন বল, ভালোবাসিস?’
বন্ধুরা উচ্চস্বরে বলে উঠে,
‘ওই মেয়েটা? বাচ্চা মতোন দেখতে আমাদের ভার্সিটির? দোস্ত তুই না বলছিলি তোর আত্মীয়া তাই আলাপ টালাপ হয়। কাহিনী কি?’
হিমি রোদের তেজে চোখ মুখ কুঁচকে উত্তর দেয়,
‘আমার মামাতো বোন হয় ও। কিরে বল!’
নিহান এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে বলে,
‘বাড়ি ফিরে কথা বলি?’
‘বাড়িতে যাবো না আমি যা বলার এখানে বল। ভালোবাসিস ওকে?’
নিহান ঢোক গিলে মাথা নুয়ায়। হিমি ডান হাতের তর্জনীতে চাবি ঘুরানোয় ব্যস্ত। ধমকে উঠে বলে,
‘বলিস না কেনো?’
‘বাইরে চল!’
‘কেনো? এরা তো তোরই বন্ধু। এদের সামনে কথা বললে কি সমস্যা?’
নিহানের বন্ধুদের মধ্যে একজন জোর দিয়ে বলে,
‘ঠিকই তো। জবাব দে হিমির কথার!’
নিহান আমতা আমতা করে বলে,
‘ভালো লাগে ওকে!’
‘ভালোবাসিস কি না সে প্রশ্ন করেছি আমি। আজাইরা কথা বলে সময় নষ্ট করিস না। বিয়ে করতে চাস ওকে?’
‘হিমি প্লিজ ওকে কিছু বলিস না।’
হিমি গর্জে উঠে। বলে,
‘আমি নিজেই এখনো জানি না আবার বলে ওকে কিছু বলিস না। আগে আমাকে তো বল।’
‘হুম বাসি।’
হিমি চাবি ঘুরানো বন্ধ করে। চোখে সানগ্লাস পরে নিয়ে পকেটে দু হাত গুজে দাঁড়ায়। শান্ত গলায় বলে,
‘কেউ মেনে নেবে না জানিস তো?’
নিহান আত্মবিশ্বাসী গলায় বলে,
‘চাচ্চু মানবে।’
হিমি মৃদু হাসে। সে জানে একমাত্র তার বাবাই মানবে। প্রেমিক প্রেমিকাকে আলাদা করবেন না তিনি। দরকার পরলে সবার বিরুদ্ধে লড়বেন। কিন্তু সমস্যা তো অন্য জায়গায়। দাদু, ছোটমা, চাচামনি মানবেন না। কখনোই না। মিশ্মির কথা ভেবে নাহয় তার বাবা মা মেনে নেবে। পরোক্ষনেই খেয়াল হলো নিহান তাকে মিশ্মিকে এসব বলতে মানা করেছে। তার মানে কি মিশ্মি এসবের কিছু জানে না? মিশ্মির মনে নিহানের জন্য জায়গা আছে কি নেই? হিমি অকুল পাথারে পরে। বড়মা যদি কথায় কথায় কাউকে বলে দেয় ব্যাপারটা? তবে? কি করে সব সামলাবে? দাদু তো জানেই মেরে দেবে! কিন্তু কাকে মারবে? ভালোবাসার দায়ে নিহানকে নাকি দুবাড়ির মধ্যে কমন সদস্য হওয়ায় হিমিকে? নিহান আবেদনের সুর তুলে বলে,
‘বল না। বলবি না তো মিশ্মিকে?’
হিমি বিরক্তি নিয়ে তাকায়। তারপর বলে,
‘এখন বলবো না। রাতে বলবো।’
নিহান ভড়কে উঠে। হিমিকে আটকাতে পেছন ছুটলেও নাগাল পেলো না। বাইক নিয়ে চলে যায় হিমি। নিহান ফিরে আসে বন্ধুদের আড্ডায়। বন্ধুরা খোঁচা মারতে থাকে তাকে। একজন বলে,
‘কবে থেকে চলে এসব মামা? আমরা দেখি জানিই না।’
অন্যজন বলে,
‘মামা তো ডুবে ডুবে জ্বল খায়। জানাইবো কেমনে?’
আরেকজন বলে উঠে,
‘জানানোর হইলে ডুইবা ডুইবাই জানানো সম্ভব দোস্ত! হেতে আমাগো কইতে চায় নাই তাই বলে নাই। বাদ দে।’
নিহান বিরোধীতা করে বলে,
‘ভুল বুঝছিস ইয়ার। কি জানাইতাম বল? খালি ভালোবাসি, বলি নাই ওরে। যেখানে তোদের ভাবিই কিছু জানে না সেখানে তোরা জেনে করবি টা কি?’
পাশেরজন বিকৃত মুখভঙ্গী করে হাসে। নিহানকে কপি করে বলে,
‘ভাবি!’
প্রথম ছেলেটা কোকের বোতলে চুমুক বসায়। দ্বিতীয় জন্য এক ঢোকে অনেক খানি কোক গিলে নিয়ে বলে,
‘চিন্তা নাই মামা, হিমি আছে না! কইলো তো আইজই কইবো হেরে থুক্কু ভাবিরে। মামলা ডিসমিস।’
নিহান ভয়ার্ত গলায় বললো,
‘কিসের কি দোস্ত? ভয়ে আমার বুক কাঁপতেছে। কি জানি কি বলে গিয়ে! যদি মানা করে দেয়?’
বন্ধুরা হেসে উঠে নিহানের কথায়। একজন তার কাধে হাত রেখে বলে,
‘মানা করবো ক্যান? তুই কি খারাপ দেখতে নাকি? এমনে কালা তয় সুন্দর। মাইয়াদের মতো ঠোঁট চিকন।’
নিহান ধাক্কা মারে তাকে। শার্টের কলার ঝেড়ে বলে,
‘খবরদার কালা বলবি না। আমি মোটেও কালা নই। আর কি মাইয়াদের মতো ঠোঁট চিকন কস! শালা।’
‘আমারে শালা কস ক্যান মামা আমার বইনরে তোর কাছে বিয়া দিলে তো!’
নিহান বিরক্তি নিয়ে কোকের বোতলের ছিপি খোলে। এক ঢোক খেয়ে আবারও ছিপি বন্ধ করে দেয়। শরীর ঘামছে তার। হিমির কথা শুনে মিশ্মি কেমন রিয়েক্ট করবে সেটা ভাবতেই অস্বস্তি হচ্ছে নিহানের। ভয় হচ্ছে। অনেক প্রচেষ্টার পর মিশ্মির সাথে ফেইসবুকে কথা বলার সুযোগ হয়েছে তার। এখন যদি মেয়েটা তাকে ব্লক করে দেয়! কি করে কথা হবে তাদের? ভার্সিটিতে দেখা হলেও যে কথা বলে না মিশ্মি। ঠিকমতো তাকে দেখে না অব্দি।
চলবে,,,,,,,,