হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার
৫৯.
মোজাম্মেল সাহেবের কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেছে তাহির। সাড়ে চার বছরের বাচ্চা মেয়ের মাথায় বিশ্রী কথাটা ঢোকাতে সামান্য বাধে নি মহিলার? ওনার একটা কথায় হিমির মনে কি প্রভাব ফেলেছে তাও কি তিনি দেখেন নি? অবাক হয় তাহির। এদের সাথেই কি এতোগুলো বছর কাটিয়েছে হিমি। কি করে পারলো? দমবন্ধ লাগে নি?
“আচ্ছা তুমি সত্যিই বুঝো নি হিমির ভালোবাসা?”
মোজাম্মেল সাহেবের প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলো তাহির। কি বলবে ভাবতে লাগলো সে। কিছুক্ষন থম মেরে থেকে পরে বললো,
“কিছুটা হয়তো বুঝেছি।”
শব্দ করে হেসে উঠলেন মোজাম্মেল সাহেব। ওনার হাসির শব্দে চমকালো তাহির। ভয়ও পেলো বেশ। মোজাম্মেল সাহেব হাসি থামিয়ে গলা ক্ষীণ করলেন। বললেন,
“মনের ডাক্তার হয়ে মনের কথা বুঝো না তা তো হতে পারে না। তোমার কাজই হলো মানুষের মন বুঝা। প্যাশেন্টের চোখ দেখে তার ভেতরে কি চলছে সেটা ঠাহর করা। অথচ একই ছাদের নিচে থাকা মানুষের মন বুঝতে পারলে না? অবিশ্বাস্য! তাহলে আমি ধরে নিচ্ছি তুমি ইচ্ছে করে বুঝতে চাও নি। এড়িয়ে গেছো।”
“আপনি যা ভাবছেন তা নয়। আমি এড়িয়ে যাই নি কিছুই। যতোটা দেখেছি উপলব্ধি করেছি তাতে বুঝতে পেরেছি হিমির মনে আমার জন্য একটা জায়গা আছে। হিমি আমার কাছে অনেক কিছু আশা করেন। তবে যেহেতু নিজ থেকে বলেন নি সেহেতু আমিও না বুঝার ভান করি। ভুল করি?”
মৃদু হাসলেন মোজাম্মেল সাহেব।
“না। ভালোই করো। কিন্তু এসবের মধ্যে নিজের মন বুঝার সময় পাও না? সময় পেলে একবার বুঝার চেষ্টা করো। আশা করি বুঝবে। যে কথাটা হিমি বলে নি সে কথা তুমি বলতে পারবে না তেমন কোনো নিয়ম নেই। চাইলে তুমিই বলতে পারো।”
“বুঝলাম না।”
“আমি জানি তোমার মন বুঝার ক্ষমতা অন্যের থেকে বেশি। এরপরও যখন বুঝছো না তখন সহজ করে বলি। যার সাথে তোমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো সেই মেয়েটা পালিয়ে যাওয়ার পর তোমার রেগে থাকার কথা ছিলো, অপমানিত বোধ করার কথা ছিলো। কিন্তু তুমি খুশি হয়েছিলে। আবার যখন হিমির সাথে তোমার বিয়ের কথা হচ্ছিলো তখন হিমি যতোটা মানা করছিলো তুমি ততোটাই সায় দিচ্ছিলে। আমি তখনই বুঝে গেছি। উইকেট পরে গেছে। তুমি ভালো অভিনয় জানো মনের ডাক্তার। এমন একটা ভাব করলে যেনো বেয়ানের কথা ভেবে বিয়েটা করেছো। সত্যিটা তো হলো তুমি অনেক আগে থেকেই হিমিকে ভালোবাসতে। হয়তো প্রথম আলাপ থেকেই!”
নিঃশব্দে হাসলো তাহির। হাসিটা লজ্জার। আকাশের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে রেখে বললো,
“আপনি সাইকোলোজি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন?”
“চুরি ধরেছি তবে?”
“ঠিক তা নয়। উইকেট কখন পরেছে তা বলতে পারছি না। তবে বিয়ের কয়েকদিন আগেই উপলব্ধি করতে পারছিলাম হিমি ছাড়া চলবে না। হয়তো কথা বলার তাগিদেই ওনাকে চেয়েছিলাম।”
“কক্ষনো না। কথা বলা তো বাহানা ছিলো। মূখ্য তো ছিলো একে অপরের কাছে থাকা।”
“উহুম ব্যাপারটা ভিন্ন। আপনি গোলমাল করে ফেলছেন।”
“তোমরা যে তালগোল করেছো তারমধ্যে এসব কিছুই না।”
আবারও হাসলো তাহির। প্যান্টের পকেটে হাত পুরে ব্যালকনির দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। ভেতরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“হিমি ঘুমাচ্ছেন। আর বেশি কথা বলা যাবে না। ঘুম ভেঙে যাবে নাহলে।”
“আই লাইট ইট! দিছ ইজ কল কেয়ার ফর ওয়াইফ। ঠিক আছে রাখছি আমি। আর বিরক্ত করবো না।”
তাহির ফোন কেটে দিতে নিলে বলে উঠলেন মোজাম্মেল সাহেব,
“ওহ হ্যা! আরেকটা কথা। আমি সাইকোলোজি নিয়ে পড়াশোনা করি নি। প্রেম নিয়ে পড়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুরা আমাকে প্রেম বিশেষজ্ঞ বলে সম্বোধন করতো। সবার প্রেমের সমস্যার সমাধান দিতাম আমি। তোমার এই বিষয়ে কোনো হেল্প চাইলে আমায় জানাতে পারো। আই অ্যাম অলোয়েজ দেয়ার ফর লাভ বার্ডস!”
কথাটা বলেই হাসলেন তিনি। আমিনা বেগম খাটে আধশোয়া হয়ে গরম চোখে তাকালেন। খ্যাট খ্যাটে গলায় বললেন,
“এই লোকটার জন্য মাঝরাতেও শান্তি নেই। খালি খ্যাক খ্যাক করে হাসছে। এই তোমার ঘুম না পেলে বাইরে যাও তো। এভাবে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়ে আমার ঘুম নষ্ট করছো কেনো?”
মোজাম্মেল সাহেব গলা পরিষ্কার করে বললেন,
“আমার প্রেমিকা ক্ষেপে গেছে বুঝলে! এখন রাখি।”
তাহির ফোন কেটে আপন মনেই হাসলো। ঘরে যেতে গিয়েও ফিরে এসে রেলিংএ ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো। ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকে মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়লো। বুক ধরফর করছে তার। তলপেটে শির শির অনুভব হচ্ছে। নির্জনে কিছুসময় পার করে নিজেকে স্বাভাবিক করে তারপর ঘরে ঢোকলো সে। নিজের জায়গায় শুয়ে পাশ ফিরে হিমির দিকে তাকালো। ঘুমন্ত হিমির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে চোখ লেগেছে সে খেয়াল ছিলো না তার। ধীরে ধীরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হতে থাকা তাহিরের স্বপ্নে হিমির বিচরণ তার ঠোঁটে হাসি ফুটাচ্ছে। সকালের মিহি রোদ যখন ব্যালকনি পেরিয়ে শোবার ঘরের খাটে হামাগুড়ি দিচ্ছে তখন চোখ খোলে হিমিকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভড়কে যায় তাহির। ঝটপট করে উঠে বসতেই দেখলো হিমি নিজেও বেশ লজ্জায় পরে গেছে। এবং সেই লজ্জা থেকে বাঁচতে ফ্রেশ না হয়েই দৌড়ে ঘরের বাইরে চলে গেলো।
___________________
দুপুরের রান্না শেষ করে সবে গোসলে ঢোকেছে মিশ্মি। এর মধ্যেই বাড়ি ফিরেছে নিহান। এসেই শুরু করেছে মিশ্মিকে ডাকাডাকি। রাদিবা হাতের কাজ ফেলে ছুটে এসেছেন ছেলের ঘরে। আলমারি থেকে কাপড় বের করে দিয়ে কঠোর দৃষ্টিতে ছেলেকে দেখলেন। বিয়ে হয়েছে দু মাস, এর মধ্যেই বউয়ের আঁচল ধরা শিখে গেছে। দিন নেই রাত নেই খালি বউ আর বউ। নতুন কাজে জয়ন হয়েও দুপুরে ছুটি নিয়ে বাড়ি আসে কি করে নিহান? ভেবে পান না তিনি। বিশেষ কিছু বলাও যায় না। একবার বলেছিলেন, ‘দুপুর বেলা কাজ ফেলে বাড়ি ফিরিস কেনো তুই? তোর বউ কি পালিয়ে যাচ্ছে?’ জবাবে নিহান বলেছিলো, ‘পালাবে কেনো? ও আমার বউ। আমার কাছে থাকবে। আমি ওর সাথে সময় কাটাতে আসি। বাবা আর তোমার বিয়ের পর বাবা এমন করে নি? জ্যাঠুমনি তো বলেছিলো বাবা না কি কাজেই যেতে চাইতো না।’ ছেলের এমন বেফাঁস কথা শুনে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিলো রাদিবার। কিছু বলার জো ছিলো না। ছোট হলে বলতেন। মারতেনও হয়তো। কিন্তু এখন তো আর সে ছোট নয়। বড় হয়েছে। বিয়ে করেছে। এখন তাকে মারা যাচ্ছে না। মিশ্মি ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই মুখ ঝামটা দিলেন রাদিবা। বললেন,
“স্বামীর কাজের ক্ষতি হচ্ছে কি না সেটা ভাবার দরকার নেই? ও এলেই আদিখ্যেতা করতে লেগে পরো কেনো তুমি? বলতে পারো না যেনো অসময়ে বাড়ি না আসে? চক্ষুলজ্জা বলতেও তো একটা ব্যাপার আছে!”
মিশ্মি প্রত্যুত্তরে মাথা নিচু করলো। নিহান কিছু বলতে নিলে ঘর থেকে প্রস্থান করলেন রাদিবা। মিশ্মি কিছুটা শক্ত গলায় বললো,
“এই সময়ে কেনো বাড়ি আসেন বলুন তো আপনি? নাইন টু ফাইভ জব আপনার। হুটহাট ছুটি নিয়ে বাড়ি আসবেন না। আমার এসব ভালো লাগে না। আপনার জন্য আমারও কথা শুনতে হয়।”
নিহান এগিয়ে এলো। মুখ ছোট করে বললো,
“রোজ তো আসি না মিশ! মাঝে মাঝে,,,”
“সেটাই বা কেনো করবেন? আপনার বস কিছু বলে না? তাহলে বস হয়েছে কেনো ওই লোক? এম্প্লোয়ি যখন তখন কাজ রেখে বাড়ি চলে যায় আর লোকটা আটকায় অব্দি না!”
“কাজ থাকে না বলেই তো আসি। নাহলে কি বস আসতে দিতো বলো? আর কাজ থাকলে তো আমি তোমার ফোনটাও রিসিভ করি না। দেখো না?”
“খুব দেখি! আমি শেষবারের মতো বলছি কাল থেকে অফিস আওয়ারে আপনি বাড়ি আসবেন না। যদি আসেন তাহলে আমি বাপের চলে যাবো। আর কক্ষনো ফিরবো না।”
নিহান মিশ্মির হাত মুঠোয় পুরে কাছে টানলো। মিশ্মি হাত মুচড়ে ছুটানোর চেষ্টা করছে। তাতে ঘোর বিরোধীতা করে বুকের মধ্যে মিশ্মির হাত পিষ্ট করে কোমর জড়িয়ে ধরলো নিহান। বাঁকা হেসে বললো,
“গিয়ে দেখাও একবার। তোমার কি হাল করি দেখবে তখন!”
“এ্যাহ, আপনি আমার কি হাল করবেন? মারবেন? হাহ,,,আমিও পুলিশ কম্প্লেইন করবো। বধূ নির্যাতনের কেইস করবো।”
হাসলো নিহান। বললো,
“ধূর বোকা। আমি তোমায় মারবো কেনো? ভালোবাসবো। আমার ভালোবাসাতেই তোমার হাল বেহাল করবো। বাপের বাড়ি তো দূরের কথা প্রতি সেকেন্ডে চোখে হারাবে আমায়!”
মিশ্মি সরু চোখে তাকালো। সাথে সাথেই টুপ করে কপালে চুমু খেলো নিহান। দুষ্টু হেসে বললো,
“আমার চরিত্র খারাপ হয়ে যাচ্ছে মিশ। দরজা খোলা রেখে বউয়ের সাথে রোমান্স করছি। কেউ দেখে ফেললে,,,, ছিহ,,,,,!”
মিশ্মি হেসে ফেললো। নিহানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বললো,
“এসেই যখন পরেছেন যান ফ্রেশ হয়ে নিন। লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে।”
নিহান মাথা নেড়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে গিয়ে আবারও চুমু খেলো মিশ্মির গালে। মিশ্মি আলতো হাতে নিহানের বাহুতে চড় লাগালো। সরে এসে অগোছালো বিছানা ঠিক করতে করতে দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। নিহানকে এখনো ভালোবাসতে পারে নি মিশ্মি। তবে শ্রদ্ধা করে, সম্মান করে। স্বামী হিসেবে নিহানকে ভালোবাসতে চায়। তার মনে ইয়াসিরের জন্য যে জায়গা ছিলো তা ফাঁকা হয়েছে তাদের হলুদের সন্ধ্যায়। যখন ইয়াসির মিশ্মিকে হলুদ লাগাতে গিয়ে কয়েকটা কথা বলেছিলো। সেই কথাগুলোই মিশ্মি ইয়াসিরকে চিরকুটে লিখেছিলো। ইয়াসিরের হাসি, কথা বলার ধরন, ভাবভঙ্গী আর মিশ্মির লিখা কয়েকটা লাইন শুনেই মিশ্মি বুঝে গেছিলো ইয়াসিরের নিষ্ঠুরতা।
ইয়াসির জানতো মিশ্মিই সেই মেয়ে যে তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। রোদ বৃষ্টির মধ্যে যে মেয়ে তাকে ফলো করে। লুকিয়ে ছবি তুলে। চিরকুট লিখে ভালোবাসা জানায়। তবুও সে অবজ্ঞা করে গেছে মিশ্মিকে। সব জেনে শুনে মিশ্মির বোনকেই বিয়ে করেছে সে। শুধুই কি মিশ্মির ভালোবাসার অপমান করতে? হয়তো! মিশ্মি সেদিন থমকে গেছিলো। ভেতর কেঁপে কেঁপে উঠছিলো। প্রবল অপমানে চোখে নোনা জল জমেছিলো। সে শক্ত হয়েছে। নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। কারো অনুভুতির অপমান করার মতো বিশ্রী অপরাধ পৃথিবীতে আর কিছু হতে পারে না (নৌশিন আহমেদ রোদেলা)। ইয়াসির এই অপরাধ জেনে বুঝে করেছে। মিশ্মির মন ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। যার ব্যক্তিত্বের মায়ায় আটকে গেছিলো, সে মানুষটা যে কতোটা নিকৃষ্ট তা বুঝতে পেরেই মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো মিশ্মির। কখনো আবার ইয়াসিরকে খুন করে ফেলতে মন চাইছিলো। শেষমেষ নিহানকে আপন করে জীবনে এগিয়ে যাওয়াটাকে গ্রহণ করে নিয়েছে মিশ্মি। নিহানের সাথে সুখে থেকে ইয়াসিরকে ভুলতে পারার মতো প্রতিশোধ আর হতে পারে না ইয়াসিরের অপমানের। মিশ্মি চোখ বোজে ঠোঁটে হাসি ফুটায়। বন্ধ চোখ জোড়া খোলে নিহানকে দেখে সে। ভেজা চুলে হাত ডুবিয়ে ভ্রু নাচায় নিহান। মিশ্মি হঠাৎই কি ভেবে কাছে আসে নিহানে। নিজ হাতে নিহানের চুল মুছে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। নিহান অবাক হয়। এই দুই মাসে মিশ্মি কখনোই নিজ থেকে কাছে আসে নি তার। জড়িয়ে ধরার প্রশ্নই উঠে না। নিহানকে অবাক হওয়ার আরো একটা সুযোগ করে দেয় মিশ্মি। নিহানকে ছেড়ে তার ঠোঁটের কাছে ছোট্ট চুমু দিয়ে মিষ্টি করে হাসে মিশ্মি। কোনো প্রকার তাড়াহুড়া না করে ধীর পা ফেলে ঘরের বাইরে পা রাখে। নিহানের বিস্ময় এখনো কাটে নি। যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে। ভাবলো মিশ্মির ভেতর কোনো আত্মার প্রবেশ হয় নি তো!
চলবে,,,,,,,,
হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার
৬০.
আকাশ অস্বাভাবিক ভাবে থমথমে হয়ে আছে। পরিবেশ অত্যন্ত শান্ত। যেনো ঝড় হওয়ার পূর্ব লক্ষণ! দিনের অবস্থা দেখে বুঝার উপায় নেই কয়টা বাজছে। সকাল নাকি বিকাল তাও বুঝা যাচ্ছে না। অথৈ এর মধ্যেই বাড়ির পোশাক না পাল্টে হাতে পার্স নিয়ে বেরিয়ে পরেছে। রিক্সা পাওয়া ভার। কিছুপথ পায়ে হেঁটে তারপর সিএনজি তে করে আসতে হয়েছে তাকে। অথৈ যখন হিমির শ্বশুরবাড়ি এসে পৌঁছায় তখন দূরের মসজিদে আছরের আজান হচ্ছে। মায়মুনা অথৈকে দেখে প্রথমেই চিনে ফেলেন নি। মিশ্মি নিহানের বিয়েতে হিমির সাথে দেখেছিলেন বলেই মনে হচ্ছে ওনার। তবে কে সেটা জানা হয় নি। হিমিকে ডেকে পাঠানোর পর জেনেছেন ও হিমির বড় মামার মেয়ে। মায়মুনা মুখ কালো করলেন। এভাবে না জানিয়ে হুট করে বোনের শ্বশুরবাড়ি আসবে কেনো এই মেয়ে? স্বামীর সাথে ঝগড়াঝাটি হয়েছে? মুখ দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।
হিমি বোনকে নিয়ে উপর তলায় শোবার ঘরে ঢোকলো। ফুলকে ডেকে চা নাস্তা দিতে বলে অথৈর কাছে বসলো। জানতে চাইলো হঠাৎ আসার কারন। অথৈ কিছু বললো না। বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে বসে রইলো। হিমি কৌতুহলী গলায় বললো,
‘অথৈ? কি হয়েছে? বাড়িতে কোনো সমস্যা হয়েছে?’
অথৈ মাথা নেড়ে অসম্মতি জানালো। হিমি আবারও বললো,
‘বরের সাথে ঝগড়া হয়েছে?’
চোখ তোলে তাকালো অথৈ। হিমির চোখের দিকে তাকিয়ে ডুকরে উঠলো। হিমি ভড়কে গেলো অথৈর কান্নায়। অথৈর কাঁধে হাত রেখে বললো,
‘কাঁদছিস কেনো? কি রে? বলবি তো, কি হয়েছে!’
অথৈ মুখে হাত চেপে ধরে কান্না থামালো। বললো,
‘অনেক কিছু হয়েছে আপু। আমি কখনো ভাবিও নি এমন কিছু হতে পারে। আগেই বুঝা উচিত ছিলো আমার।’
হিমি কিছু না বুঝে বললো,
‘কি বুঝা উচিত ছিলো অথৈ? ক্লিয়ার করে বল না!’
অথৈ নিজেকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করে পার্স খোলে তার মধ্যে থেকে হলদে রঙের একটা কাগজ বের করলো। কাগজটার রঙ ময়লা হয়েছে। হিমি কাগজটা হাতে নিলো। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অথৈর দিকে তাকাতেই অথৈ চোখ সরালো। হিমি বুঝলো কাগজের ভাজ খুলতে হবে। ভেতরের লিখা পড়তে হবে। নাহলে কিছুই বুঝা সম্ভব নয়। হিমি তাই করলো। ভাজ খুলে চোখের সামনে মেলে ধরলো কালো কালির শব্দগুচ্ছো। হাতের লিখা খুব সুন্দর। ছোট্ট ছোট্ট অক্ষরে গুছিয়ে লিখা আছে,
“আপনি এখনো আবেগ ভাবছেন? আমি তো স্বপ্নে আমাদের বিয়েটাও সেরে ফেলেছি। হলুদ সন্ধ্যায় আমি সবার প্রথমে হলুদ লাগাবো আপনার থেকে। নাহলে সবার শেষে। আমার বরের লাগানো হলুদের গুণে আমার রুপ বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। চাঁদের আলো বাদ, দিনের আলোও কম পরবে আমার রুপের কাছে। সবাই হা করে শুধু আমাকে দেখবে। আপনিও দেখতেই থাকবেন। বিশ্বাস হচ্ছে না? ঠিক আছে, হলুদের দিন নিজ হাতে হলুদ মেখেই দেখে নিবেন। আমি কিন্তু সত্যি বলছি। বিয়ে তো আপনাকেও করবো মিস্টার ইয়াসির। ভুলেও ভুলবেন না যেনো, আমি আপনাকে ভালোবাসি। খুউব ভালোবাসি।
পরের চিঠির অপেক্ষা করবেন। আমি এত সহজে হার ছাড়ছি না। আপনি চিঠির জবাব দিন বা না দিন আমি তো রোজ চিঠি লিখবো। আপনি অব্দি পৌঁছাবোও। খুঁজেই দেখুন না, পেলেও পেতে পারেন আমায়।”
হিমি বার কয়েক চিঠি টা পরলো। এই চিঠি হিমিকে দেখানোর কোনো মানে সে খুঁজে পেলো না। তবে মিনিট পাঁচেক পর খেয়াল হলো চিঠিটা ইয়াসিরের জন্য। অথৈর বর ইয়াসির। ইয়াসিরকে কেউ চিঠি লিখেছে? মিশ্মি? কিন্তু ওর তো বিয়ে হয়ে গেছে। এখন তো ইয়াসিরকে চিঠি দেয়ার কথা নয়। তবে? এটা পুরনো চিঠি নয়তো? হিমি আবারও চিঠিটায় চোখ বুলালো। হ্যা, লেখাগুলো দেখে পুরনোই মনে হচ্ছে। কিন্তু অথৈ পেলো কি করে এই চিঠি? হিমি অথৈকে প্রশ্ন করবে তার আগেই ফুল ট্রে হাতে দরজায় এসে দাঁড়ালো। অথৈ চোখ মুছে মুখ অন্যদিকে ঘুরালো। হিমি ইশারা দিতেই ঘরে ঢোকলো ফুল। ট্রে খাটে রেখে পত্রপাঠ বিদায় নিলো। হিমি অথৈর দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে বললো,
‘এই চিঠির মানে কি? কোথায় পেলি তুই?’
‘ওনার ড্রয়ারে একটা বইয়ের ভেতর ছিলো। আমি বইটা পড়ছিলাম গতকাল। তখনই চোখে পরে। কৌতুহল বসত চিঠিটা পড়েই থমকে গেছি আমি।’
হিমি শীতল গলায় বললো,
‘তোর বরকে বলেছিস তুই যে চিঠিটা পড়েছিস?’
‘না।’
‘তাকে জানানো উচিত ছিলো। জিজ্ঞেস করতে পারতি কে দিয়েছে এটা।’
অথৈ তাচ্ছিল্য করে বললো,
‘কি দরকার জানা কথা জানার? ওনাকে লজ্জা দিয়ে কিই বা পেতাম?’
হিমির কপালে চিন্তার ভাজ পরলো। বললো,
‘জানা কথা মানে? তুই জানিস কে লিখেছে এটা?’
‘মিশ্মি।’
হিমি আঁতকে উঠলো। গলা শুকিয়ে গেলো তার। আমতা আমতা করে বললো,
‘মিশ্মি! তোকে কে বললো একথা? এটা হতে পারে না অথৈ। ভুল ভাবছিস তুই।’
অথৈ আত্মবিশ্বাসী গলায় বললো,
‘আমি মিশুর লিখা চিনি আপু।’
‘হতে পারে একই রকম লিখা অন্য কারো হাতের। হতে পারে না?’
‘পারে। তবে এটা মিশুই লিখেছে।’
‘কি করে এতোটা শিওর হচ্ছিস?’
অথৈ ভরাট গলায় বললো,
‘ওর হলুদের দিন আমরা যখন ওকে হলুদ দিতে যাই তখন উনি একটা কথা বলেছিলেন। চিঠিটা পড়ার পর ওনার বলা কথা কানে বাজতে থাকে আমার। উনি বলেছিলেন, আমার দেয়া হলুদের গুণ দেখবে। চাঁদের আলো বাদ দিনের আলোও কম পরবে তোমার রুপের কাছে। সবাই শুধু তোমাকেই দেখবে।’
‘তো?’
‘চিঠিতেও একই কথা লিখা আছে। দেখো।’
হিমি চিঠি পড়লো না। ও জানে এই কথাগুলোই লিখা আছে। তবুও অথৈকে থামাতে বলেছিলো। কথা ঘুরাতে চেষ্টা করছিলো। পারে নি। অথৈ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
‘তখন বুঝিনি ওনার এসব বলার কারন। এখন বুঝলাম। মিশ্মির কথাটা রাখলেন। অন্য ভাবে রাখলেন।’
হিমি অথৈর মন থেকে এসব কথা সরানোর পাঁয়তারা করছে। এমন সময় উঠে দাঁড়ালো অথৈ। কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
‘আপু? উনি যখন মিশ্মিকে হলুদ দিয়েছিলেন আমি দেখছিলাম মিশ্মি কেমন করে যেনো ওনার দিকে তাকাচ্ছে। আমি বুঝি নি। আমার বিয়েতেও দেখছিলাম ওকে মনমরা হয়ে থাকতে। ছন্নছাড়ার মতো আচরণ করতে। তখনও বুঝি নি। একবার মনে হয়েছিলো ও বুঝি আমাদের বিয়েতে খুশি নয়। কারনটা তো এখন জানলাম। গত কাল থেকে আমার মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরছে, মিশ্মি আর ইয়াসির একে অপরকে ভালোবাসতো। তাহলে মাঝখানে আমি কি করে ঢোকে পরলাম?’
হিমি এবার থামালো অথৈকে। ওর ভুলটা ধরিয়ে দিয়ে বললো,
‘ইয়াসির নয় অথৈ। মিশু ভালোবাসতো।’
‘তুমি জানতে?’
হিমি মুখটা ছোট করে ফেলে। পায়ের নিচ থেকে জমিন সরে যায় অথৈর। কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকে তার শরীর। হিমি ব্যস্ত গলায় বলে,
‘তুই যা ভাবছিস তা নয়। আগে পুরোটা শোন।’
অথৈ জবাব দেয় না। নিস্তেজ হয়ে বসে পরে মেঝেতে। হিমি হাটু গেড়ে অথৈর সামনে বসে নিজ থেকে বলতে থাকে,
‘মিশু অনেক আগে থেকেই ভালোবাসতো ইয়াসিরকে। কিন্তু কখনোই সামনে যায় নি। তোরা সবাই যেসব চিঠি ছবির কথা জানিস সেসব নিহানের নয় ইয়াসিরের। মিশু ইয়াসিরকে ফলো করতো, চিঠি লিখতো। ইয়াসির জানতো না চিঠি প্রেরক কে। তাই কখনোই তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠে নি। আমি এসব জেনেছি তোদের এঙ্গেইজমেন্টের রাতে। মিশু বলেছিলো আমায়। ও চায় নি ওর জন্য তোদের নতুন সম্পর্ক ভেঙে যাক। তাই এড়িয়ে গেছে। নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে ইয়াসিরের থেকে। হলুদের রাত থেকেই ও সম্পূর্ণ রুপে ইয়াসিরকে ভুলে গেছে। নিহানের সাথে সংসার করতে পুরো পুরি ভাবে প্রস্তুত করেছে নিজেকে। বিশ্বাস কর অথৈ, মিশু বা ইয়াসির কারো কোনো দোষ নেই।’
অথৈ হিমির বলা কথা গুলো মনে মনে ভাবলো। অস্থির চোখ এদিক ওদিক বুলিয়ে বললো,
‘উনি সব জানতেন। উনি জানতেন মিশু ওনাকে ভালোবাসে। চিঠি প্রেরক মিশু এটা উনি জানতেন আপু। তারপরও না চেনার নাটক করেছেন।’
হিমি অবাক হয়ে বললো,
‘কি বলছিস অথৈ! শান্ত হো, উপরে উঠ। আমি বলছি তো,,,,’
‘না আপু। আমি ঠিক বলছি। উনি যদি মিশুকে নাই চিনবেন তবে চিঠিতে লিখা কথাগুলো হুবহু কি করে বললেন মিশুকে? এর মানে তো এটাই দাঁড়ায় উনি জানতেন কে ওনাকে চিঠি দিচ্ছে। আগে থেকেই জানতেন। তাহলে এমনটা কেনো করলেন? আমি আমার বোনের সাথে চোখ মিলাবো কি করে? ওর দিকে তাকাতেই তো বাধবে আমার! আমি ওর থেকে ওর ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছি আপু। আমি,,,,আমি ভুল করেছি। অপরাধ করেছি। উনি আমার বোনকে ধোঁকা দিয়েছেন। আমাকে ধোঁকা দিয়েছেন। জেনে শুনে খেলা করেছেন ওর মন নিয়ে। কি করে পারলেন? আপু! মিশু এখনো ওনাকে ভালোবাসে, না? ওর মনে আমার স্বামী,,,, ছিহ! কি করলাম এটা? আমার উচিত ছিলো আগেই সব বুঝা। কেনো বুঝলাম না? আপু? আপু শোনো না! উনি নিশ্চয় আমাদের দুবোনের বোকামো দেখে খুব হাসছেন? মিশুকে কাঁদিয়ে আমাকে নিজের করতে পেরে গর্ব করছেন? কেনো? কেনো?’
অথৈ পাগলামো করে কথাগুলো বলছে আর কাঁদছে। হিমি বুঝতে পারছে না কি করে সামলাবে ওকে। অথৈ হাত পা ছুড়ছে। হেঁচকি তুলতে তুলতে কাঁদছে। হিমি কোনো উপায় না পেয়ে জড়িয়ে ধরলো অথৈকে। বুকের সাথে চেপে ধরে বললো,
‘শান্ত হো অথৈ। শান্ত হো। ইয়াসির কেনো এমনটা করেছেন আমি জানি না। তবে যদি উনি মিশুর অনুভুতির অপমান করার জন্য এমনটা করে থাকেন তবে খুব বড় ভুল করেছেন। আমি তাকে ছেড়ে কথা বলবো না। আচ্ছা, অথৈ? উনি তোর সাথে কেমন ব্যবহার করেন?’
‘ওটাকে ব্যবহার বলে না। নাটক বলে। অভিনয় বলে। যে মানুষ নিজের প্রতি অন্যের ভালোবাসার ঠাট্টা করে, হাসি মুখে কারো ভালোবাসা মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারে সে ভালো মানুষ নয়। হতে পারে না। আমার কি মনে হয় জানো, উনি আমায় ভালোবাসেন না। সব অভিনয়। নোংরা লাগছে আপু। অস্বস্তি হচ্ছে। উনি আমার স্বামী ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। আমি মিশুর সামনে দাঁড়াতে পারবো না তো। ও জেনে গেছে নিশ্চয় উনি ওকে চিনতেন। আর চেনার পরও ওকে রিজেক্ট করে আমায় আপন করেছেন। ওকে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছেন। আপু আমি কি করবো? ওনাকে জিজ্ঞেস করবো?’
‘না অথৈ। তুই কিছু করবি না। স্বাভাবিক থাকবি। তোর বরকে জানতে দিবি না যে তুই সব জেনে গেছিস। চিঠিটা আগের জায়গায় রেখে দিস। আমি দেখা করবো তোর বরের সাথে। দেখি কি বলে সে! তারপর যা করার করবি।’
অথৈ কিছুটা শান্ত হলো। হিমি তাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। অথৈকেও দাঁড় করালো। খাটে বসে ফুপাতে লাগলো অথৈ। হিমি পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো। এক চুমুকেই সব টুকু পানি খেয়ে গ্লাস খালি করলো অথৈ। বুক ভরে শ্বাস টেনে আবারও কেঁদে উঠলো। বললো,
‘আমি ওনার সামনে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারবো না। ঘেন্না লাগছে আমার। কি করে এতোটা নিষ্ঠুর হয় কেউ?’
‘উনি হয়তো তোকে আগে থেকেই ভালোবাসতেন। তাই মিশুর দিকে সেভাবে খেয়াল করেন নি।’
‘মানলাম। কিন্তু তা হলেও তো ওর ফিলিংস নিয়ে খেলার কারন দেখছি না! সামনা সামনি দাঁড়িয়ে বলে দিলেই হতো। আর তা যখন করেনই নি তখন কেনো ওর হলুদের দিন ও কথা বললেন? না বললেও হতো। মিশু তো ভেবেই নিয়েছিলো উনি তাকে চিনতে পারেন নি, খুঁজেন নি। কেনো ওর অপমান করলেন এভাবে? তুমি যাই বলো আপু, আমি বুঝতে পারছি উনি সব ইচ্ছাকৃত ভাবে করেছেন। কিছুতেই আর উনাকে বিশ্বাস, ভরসা, শ্রদ্ধা করতে পারবো না আমি। কক্ষনো না।’
_________________
“হ্যালো? আমি ইমন।”
সূর্য থমকালো। অবিশ্বাসী গলায় বললো,
“ইমন?”
“হ্যা দোস্ত। খুব বিপদে পরেছি। একটা হেল্প করতে হবে তোকে।”
সূর্য খেঁকিয়ে উঠলো,
“শালা। কই আছিস তুই? এইদিকে কি হইতাছে সেই খবর রাখোস? হারামী, প্রেমিকা নিয়া পালাইছোত ভালা কথা বাপ মার কি অবস্থা হয় সেটা খেয়াল রাখবি না? কুত্তা!”
“ইয়ার তুই গালি পরে দিস। আগে আমারে হেল্প কর।”
“আগে ক আছোস কোন হানে তুই?”
“চাঁদপুর।”
“ওইহানে কই আছিস? কেন গেছিস? সুপ্তি কই? বিয়া কইরা লাইছোত?”
বিরক্ত বোধ করলো ইমন। বললো,
“হ্যা রে বাবা। বিয়ে না করলে কেউ ঘর দেবে? শোন, আমার কাছে যা টাকা ছিলো সব তো শেষই সুপ্তি সাথে যা এনেছে তাও শেষ। এখন থাকা খাওয়ার ভয়ঙ্কর সমস্যা হচ্ছে মামা। কাজ পাই নি। একটা টাকাও হাতে নেই। খুব টাকার দরকার দোস্ত। প্লিজ কিছু টাকা পাঠা।”
“কতো লাগবো? আর পাঠামু কেমনে?”
“যতো পারিস। খুব বড় এমাউন্ট না। মানে, হাজার দশেক হলে হবে। এই নাম্বারে বিকাশ করে দে। আজকেই।”
এটুকু বলেই ফোন রাখলো ইমন। সূর্য দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ইমনের এক্সেক্ট লোকেশন জানলে নিজে গিয়ে টাকা দিয়ে আসতো। ইমনরা এখন কোন পরিস্থিতিতে আছে তাও সঠিক জানে না সূর্য। তবে তার কথা শুনে মনে হলো টাকার খুব বেশিই প্রয়োজন। নাহলে এভাবে কখনো বলতো না। ইমন তার বাবা মায়ের খবরও নিলো না! ওকি তার বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগ রাখছে? রাখছে হয়তো। অন্য কোনো ভাবে। তারা বোধ হয় সুপ্তিকে ঘরে তুলতে চাইছে না। আর তাই এভাবে টাকার আর্জি করছে ইমন। এতগুলো মাস পর সূর্যের সাথে যোগাযোগ করলো অথচ বন্ধুদের ব্যাপারে কিছু জানতে চাইলো না। বদলে গেছে ইমন। বন্ধুত্বে দুরত্ব এসেছে ফাটল না ধরে শুধু!
চলবে,,,,,,,,