হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার
১২.
উৎসব মুখর হয়ে উঠেছে অথৈদের বাড়ি। সন্ধ্যে থেকে লোক সমাগম বাড়ছে। এঙ্গেইজমেন্টের তোরজোর দুদিন আগে থেকেই চলছিলো আজও খানিকটা আছে। বাঙালী পরিবারের যেকোনো অনুষ্ঠানে শেষ মুহুর্ত অব্দি কাজ করতে হয়। কিছু না কিছু থেকেই যায় করার জন্য। কনে অথৈ নীল রঙের পাথরের কাজ করা ধবধবে সাদা গাউন পরে তৈরি। কানে ম্যাচিং এয়ারিং। গলায় কোনো গয়না নেই তার। গাউনের সাথে গলার গয়না মানায় না ঠিক। হাতে চুড়িও নেই। বাম হাতে ছোট্ট একটা ব্রেইসলেইট আছে। ডান হাতের মধ্যমা আঙুলে মোটা পাথরের আঙটি। পেন্সিল হিল পায়ে। চুলগুলো ওয়েভি করে খোলে রাখা পিঠে। মুখে পর্যাপ্ত মেক আপ। না ভারি না হালকা। একদম পারফেক্ট দেখতে লাগছে তাকে। দরজায় দাঁড়িয়ে মিশ্মি হাতের ইশারায় বুঝালো অথৈকে। অথৈ লাজুক হাসলো। মিশ্মি খেয়াল করলো অথৈ লজ্জা পেলে খুব সুন্দর দেখায় তাকে। অথৈ অধৈর্য গলায় তৃতীয় বারের মতো বললো,
‘মিশু? রেডি হ না যা! একটু পরই আমায় নিচে যেতে হবে। তুই শুধু শুধু দেরি করছিস!’
মিশ্মির মাও জোড় গলায় বললেন,
‘কখন থেকে বলছে মেয়েটা শুনিস না কেনো তুই? ও তো তৈরি হয়েই গেছে এখন তুইও যা। আর দাঁড়িয়ে থাকিস না পরে যখন তোর মামনি বলবে, নিচে যেতে তখন এইভাবে যাবি? যা না মিশু!’
মিশ্মি অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজের ঘরে ঢোকলো। দরজা আটকে খাটে রাখা হালকা গোলাপী রঙের গাউনের দিকে তাকালো। এগিয়ে এসে গাউনটা হাতে নিলো মিশ্মি। ভালো করে দেখে নিয়ে তাচ্ছিল্য হাসলো সে। আলমারিতে অতীব সুন্দর নতুন গাউনটা তোলে রাখলো। খুঁজে খুঁজে পুরনো কিন্তু সুন্দর দেখতে রাউন্ড ড্রেস পরার জন্য নিলো। ড্রেসটা গায়ে জড়িয়ে আয়নায় দেখলো না মোটে, নিজের মনে মনেই ঠিক করে নিলো এই জামাটা সুন্দর। তাকে বেশ মানাবে। না মানালেও কিছু যায় আসে না। আজ তো অথৈর দিন। তাকেও ভালো দেখানো চাই। আর কাউকে না।
ঘরের ভেতরে হাঁসফাঁস করছে হিমি। গতরাত থেকে ডেকোরেশনের কাজ সামলাতে সামলাতে দুপুর গড়িয়েছে। বিকেলের দিকে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় গা এলিয়েছিলো মাত্র। সাথে সাথে ঘুম হানা দিলো দু চোখে। হিমি ভেবেছিলো জিরিয়ে নিবে কিছুক্ষন। মেহমান আসার আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু তার সেই ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যের পর। যখন বসার ঘরে অতিথিদের কথাবার্তা চলাচল বুঝা যাচ্ছিলো তখন। হিমির ঘরটা নিচেই। বসার ঘরের ডান দিকে। ঘর থেকে বেরোনোর রাস্তাটাও বসার ঘরের দিকে। এখন কি করে বেরোবে সে? মাথা কাজ করছে না কিছুতেই। অস্বস্তি হচ্ছে ভীষন। মাথাটা ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে। ক্ষুধায় পেট চো চো করছে। হিমি লম্বা শ্বাস নিলো। অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে দরজার ছিটকিনি খুললো। হালকা দরজা ভেজাতেই চোখে পরলো অগণিত মানুষজন, বড় স্টেইজ, বরপক্ষ। হিমি ঝট করে ভেতরে দরজা এঁটে দিলো আবারও। মাথা ধরে বসে রইলো ডিভানে। রাগে দুঃখে চিৎকার করতে মন চাইছে তার।
.
চেম্বারে বসে ব্যস্ত সময় পার করছিলো তাহির। অসময়ে বেজে উঠা মেসেজ টোন তাহিরের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। মেসেজ একবার নয় কয়েকবারই এসেছে। তাহির দু একবার ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়েছে। ধীরে সুস্থে হাতের কাজ শেষ করে তবেই ফোন হাতে নিলো সে। যে নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে সেটা পরিচিত নয় তার। বার কয়েক এগারো ডিজিটের নাম্বার মুখে উচ্চারণ করেও মনে করতে পারলো না ব্যক্তি কে হতে পারে। প্রতিটা মেসেজেই একটা শব্দ লিখা। তা হলো, “হ্যালো”। তাহির বিরক্ত বোধ করলো। কিছু বলার থাকলে বলে দিতে পারতো। বার বার হ্যালো বলে কি লাভ হলো বার্তা দেয়া ব্যক্তির? একবার সেন্ড করলেও পারতো। তাহির তো দেখতোই! ভাবনার মাঝে আবারও মেসেজ এলো, “হ্যালো”! তাহির ভ্রু কুঁচকালো। কি সমস্যা এই মানুষটির? এই একটা শব্দ পড়তেই বিরক্ত লাগছে তাহিরের যিনি পাঠাচ্ছেন তার লাগছে না। কি অবলীলায় একজনকে বিরক্ত করে চলেছে তার আইডিয়া আছে ওপাশের অজানা কারোর? তাহির নিজেকে শান্ত রেখে ক্ষুদে বার্তা পাঠালো,
-হ্যালো। আমি কি আপনাকে চিনি?
ওপাশ থেকে সাথে সাথেই জবাব,
-হ্যা। আপনি চেনেন নি আমায়?
-দুঃখিত, নাম্বারটা অচেনা ঠেকছে আমার কাছে।
ওপাশে নিরবতা। প্রায় দু মিনিট পর সেই নাম্বার থেকে কল এলো। তাহির মেসেজের অপেক্ষা ছিলো। কল আসবে ভাবে নি সে। কল রিসিভ করে নম্র গলায় বললো,
-কে বলছেন?
মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে এক তরুণীর গলা শোনা গেলো,
-ডক্টর তাহির। আমি সামিয়া। চিনেছেন?
তাহির মনে করার চেষ্টা করলো কে সামিয়া? এই মেয়েটা তার নাম কি করে জানে? চেষ্টায় সফলও হলো সে। মাথা উপর নিচ করতে করতে বললো,
-চিনলাম। কিন্তু আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?
-হৃদির থেকে নিয়েছিলাম। কিছু কথা বলার ছিলো।
তাহির শান্ত গলায় বললো,
-বলুন।
মেয়েটি আবারও নিশ্চুপ হয়ে গেলো। কয়েক সেকেন্ড পর বললো,
-দেখা করে বলি?
তাহির সম্মতি জানালো। খুব শিঘ্রই সামিয়াকে বিয়ে করছে তাহির। হবু স্ত্রীর সাথে কথা বলা প্রয়োজন। তার নিজের কোনো কথা নেই তবে সামিয়ার আছে। সামিয়ার কথাগুলো শোনার জন্য হলেও যাওয়া উচিত। ঠিক হলো পরদিন লাঞ্চ করবে তারা। এ ব্যাপারে মাকে জানাতে হবে। এবং তা এক্ষুনি। নিজের জীবনের ছোট বড় সব কথাই মাকে জানানো বঞ্চনীয় বলে মনে করে তাহির।
.
.
সিড়ির কাছটায় সাদামাটা জামা গায়ে ফ্যাকাশে মুখে এক চিলতে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে আছে মিশ্মি। মিশ্মির মা ছাড়াও অনাহিতা আর অথৈ চমকেছে মিশ্মিকে দেখে। রোশন আরা বেশ শখ করেই মেয়ের জন্য গাউন কিনেছিলেন। অথৈর বিয়ে নিয়ে মিশ্মিরও ইচ্ছে ছিলো, আনন্দ ছিলো। কিন্তু বিয়ের দিন ঠিক হওয়ার পর থেকেই কেমন উদ্ভট লাগছে তাকে। মিশ্মির বক্তব্য ছোটবেলার খেলার সাথি তথা অথৈর চলে যাওয়ার কথা ভেবেই কষ্ট লাগছে তার। ভীষন কষ্ট। সেই কষ্টের ছাপ চেহারায় ফুটে ওঠে বারংবার। এতে তার কোনো হাত নেই। রোশন আরা অতিথিদের সাথে কুশলাদি বিনিময় করে মেয়ের কাছ ঘেষে দাঁড়ান। চাপা স্বরে বলেন,
‘এই জামা পরেছিস কেনো?’
মিশ্মি শান্ত গলায় বললো,
‘গাউন ফিট হচ্ছিলো না। গায়ের দিকে বড় লাগছিলো। তাই!’
‘তাহলে ঈদে কেনা কালো জামাটা পরে নিতি!’
‘ওটাতে আমি কম্ফরটেবল না আম্মু। এই জামাটা খুব সফ্ট। তুমি ছুঁয়ে দেখো!’
‘তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো তবে?’
মায়ের প্রশ্নের জবাবে শুকনো হাসে মিশ্মি। বিনুনি গাঁথা চুল ঠিক করে নিয়ে বললো,
‘কোথায় কেমন দেখাচ্ছে?’
‘তুই অথৈর বিয়েতে খুশিতে নস?’
অনেকটা বিব্রত হয়েই প্রশ্ন করেন রোশন আরা। মিশ্মি চমকে উঠে। গলা কেশে বলে,
‘আম্মু প্লীজ! যা নয় তাই বলো না। পড়াশোনার টেনশন, বোনের বিয়ে, স্ট্রেস এসবের জন্যই এমন লাগছে। আর তাছাড়া আমি সাজতে পারি না জানোই তো। একা একা যা পেরেছি করেছি তাই এমন লাগছে।’
অথৈর দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখে বললো,
‘অথৈকে দেখো। কি মিষ্টি দেখাচ্ছে না? একদম পরীদের মতো। আমায় কেমন দেখাচ্ছে না দেখাচ্ছে সেটা জরুরী নয়। জরুরী হলো অথৈ। ও ছোটবেলায় খুব বলতো একদিন পরী সাজবে সে। সাদা বড় গাউন পরবে, পিঠে দুটো ডানা থাকবে, হাতে পরীদের ম্যাজিক কাঠি থাকবে। ডানা আর ম্যাজিক কাঠি ছাড়াও অথৈ আজ পরী। না?’
রোশন আরা ঠোঁট প্রসারিত করলেন ঠিক তবে হাসলেন না। অজানা ভয় মনে বাসা বাঁধছে তার।
রিং সিরেমনি শুরু হয়েছে। দু পক্ষের সবাইই স্টেজের কাছে জড়ো হয়েছে। পাশাপাশি দুটো সোফায় বসে আছে অথৈ ইয়াসির। অথৈর আউটফিটের সাথে ম্যাচ করেই পোশাক পরেছে ইয়াসির। সাদা শার্টের উপর নীল কোট, নীল জিন্স, শু, হাতের চকচকে সাদা ঘড়ি। বুকের উপরে ব্রোচ! চুলগুলো স্যাট করা তার। ইয়াসির হাত বাড়িয়ে দিতেই অথৈ ডালা থেকে আঙটি নিয়ে পরিয়ে দিলো তাকে। ইয়াসির হাত বাড়ালো এবার। অথৈ কাঁপা কাঁপা হাত তুললো। ইয়াসির বাম হাতে অথৈর ডান হাত পুরলো। শিহরণ বয়ে গেলো অথৈর শরীর জুড়ে। ধীরে ধীরে অথৈর অনামিকা আঙুলের মাপের আঙটিটা আঙুলে এসে ঠেকালো ইয়াসির। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মানবী চোখ বন্ধ করে নিলো সাথে সাথে। চারদিকের করতালি জানান দিচ্ছে এঙ্গেইজমেন্ট হয়ে গেছে তাদের। বুক ফেঁটে কান্না আসছে মিশ্মির। চোখের জ্বল লুকোনোর তাগিদে সবার আড়ালেই সরে গেলো সেখান থেকে। বুকে ঢিপঢিপ আওয়াজ হচ্ছে। চোখদুটো জ্বলছে। হাত পা কাঁপছে তার। গলা শুকিয়ে আসছে। বিয়েটা তো অর্ধেক হয়েই গেলো। রয়ে গেলো অসম্পূর্ণ ভালোবাসা। পিলারের আড়ালে লুকিয়ে ক্রন্দন রত মেয়েটি নজর এড়ালো না হিমির।
মাইক্রফোনে রিং এক্সচেঞ্জের ঘোষনা শুনেই হিমি আঁচ করেছিলো সবাই স্টেইজের দিকে তাকিয়ে থাকবে। তাই রিস্ক নিয়েই বেরিয়ে এলো ঘরের বাইরে। সাবধানী পায়ে সদর দরজার কাছে গিয়েও পেছন ফিরে তাকালো সে। অথৈর লাজুক চেহারায় খুশির ঝিলিক পরিবার, অতিথিদের করতালি এসবের মাঝেও চোখে পরলো দরজার কাছেই পিলারের আড়ালে মিশ্মিকে। মুখ চেপে ধরে কাঁদছে সে। হিমি ভড়কে যায়। এগিয়ে গিয়ে মিশ্মির মুখোমুখি দাঁড়ায়। মিশ্মি চমকে উঠে। ওড়নার আঁচলে চোখ মুখ মুছে হালকা হাসার চেষ্টা করলো সে। নিজে থেকেই বলে উঠলো,
‘অথৈর এঙ্গেইজমেন্ট হয়ে গেছে। আর কদিন পরেই চলে যাবে ও। আমার ওকে খুব মনে পরবে আপু। অথৈ আমাদের পর হয়ে যাবে, না?’
হিমি জবাব দিলো না। চোখে মুখে চিন্তিত ভাব এনে মিশ্মিকে পর্যবেক্ষন করলো। মিশ্মি এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,
‘কোথায় ছিলে এতক্ষন? তোমায় দেখলাম না।’
হিমি ঘাড় উচিয়ে দেখলো স্টেইজের দিকে। গান নাচ হবে এখন। একজন অলরেডি স্টেইজে মাইক্রোফোন হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আরেকজন গিটার হাতে উঠছে। হিমি মিশ্মির এক হাত টেনে ধরে বাইরে চলে গেলো। মিশ্মি অবুঝের মতো হিমির সাথে পা মেলালো। বাড়ির পেছনের দিকে খোলা জায়গায় এনে হাত ছাড়লো হিমি। শক্ত গলায় বললো,
‘কাঁদছিলি কেনো মিশু?’
মিশ্মি ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে নিয়ে বললো,
‘বললাম তো। অথৈর জন্য!’
হিমি কোমরে হাত রেখে বললো,
‘মিথ্যে বলবি না একদম। অথৈ আজ চলে যাচ্ছে না। আর গেলেও এভাবে লুকিয়ে কাঁদার কিছু দেখছি না আমি।’
মিশ্মি চোখ সরিয়ে মাটির দিকে তাকালো। বললো,
‘লুকিয়ে কোথায় কাঁদছিলাম? সবার সামনে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদলে অথৈর খুশিটাই মাটি হয়ে যেতো। তাই আড়ালে ছিলাম।’
‘এসব কি পরেছিস তুই?’
মিশ্মি অবাক হওয়া কন্ঠে বললো,
‘আমার জামা। তোমার মনে নেই? আসলে, আজকের জন্য বরাদ্য করা জামাটা গায়ে ফিট হচ্ছিলো না। তাই বাধ্য হয়েই এটা পরেছি।’
হিমি হাসলো। ভার্সিটি যাওয়ার সময়ও যে মেয়ে জামা বাছাই করে সে এতোটা সাদামাটা ড্রেস অনুষ্ঠানে কি করে পরে? হিমির কাছে মিশ্মিকে উদ্ভ্রান্তের মতো লাগলো। সোজা সাপ্টা বললো,
‘ঠিক তোর মতোই সোহিনীকে কাঁদতে দেখেছিলাম আমি। যখন সোহিনীর বয়ফ্রেন্ড অন্য কাউকে বিয়ে করছিলো আর তার কিছুই করার ছিলো না তখন কাঁদছিলো সে। ঠিক এমনই। মুখ চেপে ধরে কাঁদছিলো। আমাদের ভয় পাচ্ছিলো কি না! ভেবেছিলো ওর কান্নাকাটি দেখে বকাঝকা করবো তাই নিজের কষ্ট লুকাচ্ছিলো। তোর বয়ফ্রেন্ডও অন্য কাউকে বিয়ে করছে?’
মিশ্মি ঢোক গিললো। হিমি তীক্ষ্ণ গলায় বললো,
‘অথৈকে না তো?’
মিশ্মি হকচকালো। দাঁতে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিলো সে। হিমি অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো। রাগান্বিত গলায় বললো,
‘ইয়াসিরকে ভালোবাসিস?’
মিশ্মি জবাব দিলো না। ছলছল চোখে তাকালো শুধু। হিমি আবারও বললো,
‘ভেতরে যার সাথে অথৈর এঙ্গেইজমেন্ট হচ্ছে সেই লোকটাকে ভালোবাসিস তুই? আন্সার মি?’ (দাঁতে দাঁত চেপে)
মিশ্মি ফুঁপিয়ে উঠলো এবার। আর সহ্য করতে পারলো না। হিমি নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে বললো,
‘তার মানে লোকটা তোকে ধোকা দিয়ে,,,,,?’
হিমির কথার মাঝেই কান্নায় ভেঙে পরলো মিশ্মি। হাটু গেড়ে মাটিতে বসে পরে দুহাতে মুখ ঢাকলো। কাঁদতে কাঁদতে মাথা নেড়ে বললো,
‘না! ওনার কোনো দোষ নেই এতে। উনি আমায় ভালোবাসেন না আপু। আমাকে কখনোই ভালোবাসেন নি। আমি ব্যর্থ! ওনার ভালোবাসা পাওয়া আমার ভাগ্যেই নেই।’
চলবে,,,,,,,,,
হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার
১৩.
হিমি এগিয়ে গিয়ে মিশ্মিকে তোলার চেষ্টা করলো। হিমির হাতের উপর ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালো মিশ্মি। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে তার। চোখের জ্বল সারা মুখে ল্যাপ্টে আছে। হেঁচকি তুলতে তুলতে মিশ্মি বলে উঠলো,
‘আপু প্লীজ তুমি কাউকে এসব বলো না। কাউকে না।’
হিমি স্তম্ভিত চোখে তাকালো। বললো,
‘তুই কি বলতে চাইছিস বলতো! অথৈর বিয়ে হয়ে যাক ওই লোকের সাথে? আর তুই? তুই,,,,,’
হিমির কথার মাঝপথেই চোখ তোলে তাকালো মিশ্মি। জোড়ালো শ্বাস টেনে নিয়ে বললো,
‘আমার কিছুই না। ইয়াসির স্যার অথৈকে ভালোবাসেন। অথৈও ইয়াসির স্যারকে বিয়ে করতে চায়। মাঝখান থেকে আমার ভালোবাসার কথা শুনলে হব নষ্ট হয়ে যাবে।’
হিমির দৃঢ় গলায় জবাব,
‘আমি তোর কথা বলছি মিশু!’
‘আমি ওদের কথা বলছি আপু।’
হিমি ধাতস্থ হলো। মিশ্মি দু হাতে মুখ মোছে স্বাভাবিক গলায় বললো,
‘ইয়াসির স্যার আমাকে কেনো কোনো মেয়ের দিকেও ভালো করে তাকান নি। ভীষন রাগি শিক্ষক। তিনি জানেন কলেজের অনেক মেয়েই ওনার প্রেমে পরেছে, ওনার ব্যক্তিত্বের প্রেমে পরেছে। কিন্তু কাউকেই পাত্তা দেন নি কখনো। তিনি এও জানেন এদের মধ্যে কেউ একজন তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। কিন্তু আফসোস, সেই মেয়েটা যে আমিই সেটা তিনি জানেন না। আর জানেন না বলেই বিষয়টা নিয়ে ঘাটাঘাটি করেন নি। ওনার বোন সেদিন বললো, অথৈকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছিলেন। আর তাই এই বিয়ের প্রস্তাব!’
হিমি আশ্চর্যান্বিত হয়ে প্রশ্ন করলো,
‘উনি জানেন না তোর ফিলিংসের কথা?’
মিশ্মি ডানে বামে মাথা নাড়লো। হিমি সন্দিহান গলায় বললো,
‘তবে যে তুই বললি ওনার ভালোবাসা পেতে তুই ব্যর্থ!’
‘আসলে আমি এতোটাই পাগল হয়ে গেছিলাম যে যা তা করেছি। এমন এমন উদ্ভট কান্ড করেছি তা বলে শেষ করা যাবে না। ওই মানুষটাকে বুঝাতে চেয়েছিলাম তাকে ভালোবেসে একটা মেয়ে ক্লান্ত হয়ে পরেছে। উনি বুঝেছিলেন। কিন্তু বুঝেন নি সেই পাগল, উদ্ভ্রান্ত মেয়ে কে? আমায় খুঁজেন নি খুব একটা। ধরা দিই নি বলে নিজ থেকে আর চেষ্টাও করেন নি তাই।’
‘কি এমন করেছিলিস মিশু?’
মিশ্মি তাচ্ছিল্য হাসে। দু ফুটা জ্বল গাল বেয়ে গড়ায়। আবারও মোছে মিশ্মি। হাসি মুখেই বলে,
‘ছারো না আপু। যা করার করে ফেলেছি, এখন আর সেসব শুনে লাভ নেই। এখন যা হচ্ছে হতে দাও।’
হিমি অনুরোধ করে বলে,
‘এট লিস্ট ইয়াসিরকে জানা তুই উনাকে ভালোবাসিস!’
‘কি লাভ হবে? বরং ক্ষতি হবে।’
হিমি ভ্রু কুঁচকায়। মিশ্মি আকুলতা ভরা গলায় বলে,
‘অথৈ আর আমার বয়সের পার্থক্য বেশি নাহলেও আছে। তবুও সেই ছোট্ট বেলা থেকে বড় বোন না ভেবে বন্ধু ভেবে গেছি তাকে। সেও মানা করে নি আমায়। ছোট্টবেলা থেকেই সৈ পাকিয়ে ছিলাম দুজনে। আজ ওর সুখটুকু কেড়ে নেবো? যে মেয়ে তোমার পর সব সময় আমার সুখের কথা ভেবেছে, আমার আবদারও মিটিয়েছে তাকে দুঃখ দিই কি করে?’
কয়েক সেকেন্ড থেমে হিমির হাত ধরে বলে উঠে,
‘অথৈ যেনো কিছুতেই এসব না জানে আপু। ও মেনে নিতে পারবে না। সারাজীবন বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন দেখা মেয়েটার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে। ইয়াসির স্যারও যেনো কিছুই না জানতে পারেন। যা ওনার এতোদিন জানা হয় নি তা বাকি জীবনে না জানলেও ক্ষতি হবে না। ওদের ভালো থাকতে দেয়া উচিত।’
‘তা বলে অনুভুতিগুলো ভেতরে দাবিয়ে রাখবি?’
হিমির প্রশ্নের উত্তরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিশ্মি। উদ্দেশ্যহীন তাকিয়ে বলে,
‘যে অনুভুতির কারো কোনো পরোয়াই নেই সে অনুভুতি দাবিয়ে রাখতে হয়। কিছু ভালোবাসা প্রকাশ করার প্রয়োজন পরে না। বরং লুকিয়ে রাখতে হয়। লোকচক্ষুর আড়ালে। কিছু ভালোবাসার বদলে এক ঝাঁক দীর্ঘশ্বাস পাওয়াও জরুরী।’
ঢোক গিললো হিমি। শুকনো গলায় বললো,
‘বাড়ি যা তুই।’
মিশ্মি কোনো প্রশ্ন করলো না আর। রাস্তার পাশের কল ছেড়ে দুহাতে পানির ঝাপটা মারলো চোখে মুখে। হাত দিয়ে অতিরিক্ত পানি ঝেড়ে ফেলে মৃদু হাসি ফুটালো ঠোঁটে। বার কয়েক লম্বা শ্বাস টেনে এগিয়ে গেলো বাড়ির দিকে। হিমি মাথার চুল খামচে ধরে গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়লো। বড় রাস্তার দিকে একপলক দেখে দৌড়তে লাগলো হিমি। ছুটতে ছুটতে হাঁপিয়ে উঠলো একপর্যায়ে। ল্যাম্পপোস্টে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে শ্বাস নিলো। দম নিয়ে আবারও দৌড় লাগালো। কিছুক্ষন আগে অব্দি হিমির গন্তব্য জানা ছিলো। এখন নেই। কোথায় যাচ্ছে বা যেতে হবে সেটা ভাবছে না হিমি। শুধু দৌড়াচ্ছে।
__________________
দুপুর একটা বাজে। শহরের সনামধন্য এক রেস্টুরেন্টে বসে আছে সামিয়া আর তাহির। পেস্ট কালার থ্রি পিস পরনে সামিয়ার। তাহিরের ব্লেজারের রঙটাও পেস্ট। তাহির ভেবে পাচ্ছে না দুজনের পোশাকের কালার ম্যাচ করলো কিভাবে। এটা কি শুধুই কাকতালীয়? দীর্ঘসময়ের নিরবতা ভেঙে সামিয়া বললো,
‘আপনার এই সময় আসতে কোনো অসুবিধা হয় নি? না মানে, প্যাশেন্ট!’
‘আমি সকাল নটা থেকে বারোটা আর বিকেল তিনটে থেকে রাত আটটা অব্দি চেম্বারে প্যাশেন্ট দেখি। বাকি সময় হাসপাতালের প্যাশেন্টদের এটেন্ড করি। আমার কাজ অন্য একজনকে হস্তান্তর করে এসেছি তাই অসুবিধা হয় নি।’
সামিয়া মৃদু হাসলো। তাহির গলা কেশে বললো,
‘কিছু বলতে চেয়েছিলেন বোধ হয়!’
সামিয়া চমকায়। এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে গ্লাসের পানি টুকু এক চুমুকে শেষ করে। হাসার চেষ্টা করে বলে,
‘হ্যা, আসলে আপনাকেই বলতে চাইছি। অন্য কারো সাথে কথা বলার ভরসা পাচ্ছি না। আই হোপ আপনি বুঝবেন!’
তাহির ভ্রু কুঁচকালো। কি বলবে এই মেয়ে? বিয়ে ভাঙার আবদার নিয়ে আসে নি তো? আসতেও পারে। নিশ্চয় প্রেমিক আছে তার। মান অভিমান হয়েছিলো হয়তো তাই বিয়েতে সায় দিয়েছিলো। অথবা পরিবারের জোরাজোরিতে অমত করে নি। এখন প্রেমিকের কথা মনে পরেছে বিধায় বিয়ে থেকে মুক্তি চাইছে। কিন্তু তাহির কি করবে? ওর কি করা উচিত? মেয়েটা বিয়ে না করতে চাইলে সবাইকে বলে দিক। তা না করে তাহিরের সময় নষ্ট করছে কেনো? রাগ লাগে তাহিরের। অপমানিত বোধ হয় তার। এয়েটার টেবিলে অর্ডারকৃত খাবার দিয়ে যায়। সামিয়া অস্ফুট স্বরে বলে,
‘বিয়েটা পিছিয়ে দিন!’
তাহির বুঝে নি সামিয়ার কথা। টেবিলের দিকে ঝুঁকে স্মিত গলায় বলে,
‘সরি?’
‘আমি এক্ষুনি বিয়ে করতে চাইছি না। প্লিজ বিয়েটা পিছিয়ে দিন!’
কাতর সুরে বলে উঠে সামিয়া। তাহির মেরুদন্ড সোজা করে বসে। এদিক ওদিক তাকায়। সামিয়ার প্রেমিককে খোঁজার চেষ্টা করে। সামিয়া সন্দিহান গলায় বলে,
‘কাকে খুঁজছেন?’
‘আপনি বিয়েটা পিছিয়ে নিতে বলছেন কেনো?’
তাহিরের প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় সামিয়া। এমন প্রশ্নের কথা তো সে ভাবে নি। ভেবেছিলো সামিয়ার কথা শুনে তাহির আশ্বাস দিবে তাকে। মেনে নেবে তার কথা। সামিয়া তো উত্তর তৈরি করে আনেনি। শুধু আবদারটাই তৈরি ছিলো তার। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলে,
‘একটু প্রবলেম আছে।’
‘কি প্রবলেম?’
তাহিরের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে সামিয়া। কিছুক্ষন ভেবে নিয়ে বলে,
‘প্রবলেম টা বিয়ের পর বলবো। কিন্তু প্লিজ বিয়েটা পিছিয়ে দিন। আমার কথা কেউ শুনবে না। আপনি বললে শুনবে অবশ্যই।’
তাহির স্বস্তি পায়। যাক মেয়েটা তবে বিয়ে করবে। শুধু কয়েকদিন পিছাতে চাচ্ছে। এতে দোষের কিছু নেই। ব্যক্তিগত প্রবলেম থাকতেই পারে সেসব বিয়ের পর জানা যাবে। তাহির প্লেইটে খাবার নিয়ে এগিয়ে দেয় সামিয়ার দিকে। সামিয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাহিরের দিকে। তাহির ধীর স্থিরে এক চামচ খাবার মুখে নিয়ে বললো,
‘কতোদিন পর বিয়ে করতে ইচ্ছুক।’
‘দু মাস।’
‘দু মাস?’
অবাক হয়ে বললো তাহির। সামিয়া জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো,
‘দু মাস সময় আমার খুব প্রয়োজন। আমি আর কাউকে বলতে পারছি না এ বিষয়ে। তাই আপনাকেই বলছি। প্লিজ রিকুয়েস্ট ফেলবেন না!’
তাহির ছোট্ট নিঃশ্বাস টেনে মাথা দুলিয়ে সায় জানায়। চশমা চোখে ঠেলে দিয়ে বলে,
‘খেয়ে নিন।’
সামিয়া খাওয়ায় মনোযোগী হয়। বাকি সময়টুকু কেউ কোনো কথা বলে নি আর। খাওয়া শেষে বিল পে করে বিদায় নিয়ে যার যার গন্তব্যেও চলে গেলো তারা। সামিয়াকে ড্রপ করে দিতে চাইলেও সে রাজি হয় নি। রিকশায় উঠে একাই চলে গেলো। তাহির নিজ গাড়িতে করেই হাসপাতালে চললো আবার। পথিমধ্যে মায়ের ফোন পেয়ে হতাশ হলো তাহির। মাকে ফোনের মধ্যে এসব বলা যাবে না। তিনি বুঝবেন না। তাহিরও বুঝাতে পারবে না। তাই ফোন উঠিয়ে বলে দিলো,
‘লাঞ্চ করেছি মা। বাড়ি এসে বলছি সব।’
মায়মুনা জামান মৃদু গলায় বললেন,
‘ঠিক আছে।’
___________________
রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে মুখোমুখি দুটো বেঞ্চে বসে আছে হিমি, দোহা, ইমন, সূর্য, সোহিনী আর মেঘ। সবার চেহারায় বিষন্নতা। হাতে ধোয়া উঠা চায়ের কাপ। ঘর্মাক্ত শরীরে ল্যাপ্টে আছে গায়ের পোশাক। দৃষ্টি তাদের অস্থির। সূর্য চায়ের কাপে কালচে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,
‘এই প্রেম ভালোবাসা বহুত প্যারা। এর লাইগ্গাই আমি এসবে জড়াই না বুঝছোত?’
ইমন ঠোঁটে হাসি চেপে বললো,
‘তোর সাথে কেউ প্রেম করতে চাইলে তো করবি। একটা মেয়েও তো ফিরে তাকায় না।’
‘হেগো চোখ খারাপ। নইলে আমার মতো সুদর্শন পোলার দিকে না তাকাইয়া রোজ রোজ এই এলাকা দিয়া যাওয়া আসা করে? আমি বাজি ধইরা বলতে পারি আমারে ঠিক মতো দেখলে কোনো মাইয়াই আর চোউখ ফিরাইতে পারবো না।’
মেঘ বিরক্তি প্রকাশ করলো। বললো,
‘শালা চুপ কর। যে কথায় আছি সেটা শেষ করি পরে তোর ফাউল প্যাচাল পারিস। হিমি? কি করবি এখন?’
হিমি চায়ে চুমুক বসালো। ঠোঁট উল্টে বললো,
‘আমার তো কিছু করার নেই। করার থাকলে ঠিক করতাম। মিশ্মি নিজেই সব বন্ধ করে দিয়েছে।’
সবাই দীর্ঘশ্বাস ফেললো। দোহা হাতের ব্যাগটা ছুড়ে ফেললো সূর্যের উপর। সূর্য কাপ এক হাতে সরিয়ে নিয়ে ব্যাগটা লুফে নিলো। সন্দিহান গলায় বললো,
‘তোর কি হইছে হারামী? যখন তখন যা তা ছুড়াছুড়ি করিস কেনো?’
‘আহাম্মক একটা। তোকে হিমি কি করতে বলেছিলো? ওই ইয়াসিরের ঠিকুজি গোষ্ঠী বের করতে বলেছিলো না? তাইলে মিশ্মির কথাটা জানলি না কেমনে তুই?’
সূর্য গর্জে উঠে বললো,
‘হিমি কইছিলো ওই ব্যাটা কারো লগে ইটিশ পিটিশ করে কি না সেইটা জানতে। তার জিন্দেগীতে কোনো মাইয়া আছিলো কিনা সেইটার খবরও জানতে চাইছিলো। কইছিলো নি, কোন কোন মাইয়ার বুকের ভেতর ব্যাটার চিত্র আঁকা সেটা খোঁজ করতে? জাতীয় পর্যায়ের বেক্কল তুই!’
দোহা চোখ মুখ ফুলালো। সোহিনী কাপ ভর্তি চা বেঞ্চে রেখে দিয়ে উদাসী গলায় বললো,
‘মিশ্মি নিজেকে সামলাতে পারবে তো?’
হিমি বেঞ্চ থেকে উঠে পকেটে দু হাত গুজে রেখে বললো,
‘পারবে। ওর কথায় মনে হলো নিজেকে সামলানোর যথা সম্ভব চেষ্টা করবে সে।’
সবাই মাথা ঝাঁকালো। রোদের তাপ বাড়ছে। ছায়ায় বসা উচিত তাদের। সূর্য, ইমন, মেঘ নিজেদের চা শেষ করে উঠলো। দোহা অর্ধেক খাওয়া চাই রেখে দিলো। ছয়জন একসাথে ফুটপাত ধরে এগুতে লাগলো। হিমি তার জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো কথাই লুকায় না এদের থেকে। লুকোতে পারে না সে। আর কেউ জানুক বা না জানুক এই পাঁচটি প্রাণকে জানাতেই হয় তার। অতি ক্ষুদ্র বিষয়ও ভীষন প্রয়োজনীয় আলোচনা হয়ে উঠে তাদের আড্ডায়।
চলবে,,,,,,,,,,,