#হঠাৎ_বৃষ্টি
জান্নাতুল নাঈমা
সূচনা পর্ব
মাঝরাস্তায় একটা মেয়েকে বিয়ের বেনারসি গায়ে ভিজতে দেখে খুব অবাক হয় মেঘ। নিজের রুমের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে লাল টুকটুকে বেনারসি পড়ে ঝুম বৃষ্টিতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। মেঘ মনে মনে বলে,,’কি দিনকাল আসলো রে বাবা। মেয়েরা বুঝি এবার ছাদ ছেড়ে রাস্তার মাঝখানে বৃষ্টিতে ভিজে। তাও আবার বেনারসি গায়ে! এটা কি নতুন ট্রেন্ড নাকি।’ নিজের মনে মনে কথাগুলো আওড়িয়ে হাতে থাকা ফোনে ডুব দেয়।
বেশকিছুক্ষণ পর বৃষ্টির বেগ এখনও খুব একটা কমে নি। মেঘ আবারও বাইরে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা এখনও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। বিষয়টা মেঘকে বেশ ভাবিয়ে তুললো। ভ্রু গুলো আপনা আপনি কুঁচকে এলো। জানালা থেকে উচ্চস্বরে হাঁক ডাকে,,,’এই যে শুনছেন?’
কিন্ত আওয়াজ মেয়েটা অবধি পৌঁছায় না। মেঘ আবারও ‘শুনছেন!’ বলে ডাকে। কিন্ত ফলাফল শূন্য। এবার মেঘ বিছানা ছেড়ে একটা ছাতা নিয়ে নিচে নেমে পড়ে। মেয়েটার কাছাকাছি এসে নম্রস্বরে বলে,,,’এই যে শুনছেন?’
মেঘের কথায় উল্টো দিকে ফিরে থাকা রমণী পেছন ফিরে তাকায়। মেঘের দৃষ্টিতে মেয়েটার চোখেই আটকে যায়। কি গভীর ওই চোখ দুটো। বৃষ্টিতে ভেজার কারণে লাল হয়ে আছে তাও মেঘের কাছে ভালো লাগছে। মাথায় থাকা পাতলা ওড়নার ভেতর দিয়ে চুল গুলো লেপ্টে আছে। সাজ খানিকটা এলোমেলো। মেঘের শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। বার কয়েক জোরে শ্বাস নেয়।
‘কিছু বলবেন?’ মেয়েটার মিষ্টি কন্ঠস্বর মেঘকে আরো একটা নাড়িয়ে দেয়। মেঘ নিজেকে সামলে নম্র কন্ঠে বলে,,’আসলে আমি অনেকক্ষণ আগ থেকে আপনাকে ভিজতে দেখছি।’ মেয়েটা এবার ভ্রু উঁচু করে বলে,,’তো?’
মেঘ হালকা নিজের মাথা দুলিয়ে বলে,,’আসলে আপনার গায়ে বিয়ের বেনারসি থাকায় আমার একটু কৌতুহল জন্মায় আরকি। আর আপনার মাঝে বৃষ্টিতে ভেজার কোনো উচ্ছ্বাস দেখছি না। কোনো সমস্যা?’
মেঘের প্রশ্নে সামনে থাকা মেয়েটি খানিকটা নরম হলো। কোমল কন্ঠে বলে,,’আসলে আমার ব্যাগ,ফোন চুরি হয়ে গিয়েছে। আর এই বৃষ্টিতে কোনো গাড়িও পাচ্ছি নাহ যে বাসায় যাবো। হাটতে হাটতে এই হাউজিং অবধি এসেছি।’
মেঘের মাথায় অনেক প্রশ্ন আসলেও আপাদর তা পাত্তা দিলো নাহ। মেঘ বলে,,’বৃষ্টি থামবার লক্ষণ দেখছি নাহ। আপনি অনেক ভিজে গিয়েছেন। আপনি বরং আমার সাথে আমার ফ্ল্যাটে আসুন। বৃষ্টি থামলে একটা ব্যবস্থা করা যাবে। এইভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলে বিপদ হতে পারে।’
‘আপনার সাথে গেলে যে কোনো বিপদ হবে না তার কি গ্যারান্টি আছে!’ মেয়েটার কথায় মেঘ হাসলো।
‘আপনি অনেক স্ট্রিট ফরওয়ার্ড। বাট বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়েও আমাকে বিশ্বাস করা উচিৎ নয় কি? বাইরের সিচুয়েশন কি খুব ভালো?’ মেঘের যুক্তিতে মেয়েটি হার মানলো। ‘চলুন।’ বলে মেঘ আগে আগে গেলো মেয়েটা পেছন পেছন আসলো।
_______________
‘আমার এখানে তো মেয়েদের জামা নেই। চেঞ্জ করবেন কিভাবে? তার চেয়ে বরং আপনি আমার একটা জামা পড়ে নিন।’ মেঘের কথায় মেয়েটি শায় জানালো। এটা ছাড়া আর রাস্তা নেই। এমনি তার বেশ শীত করছে।
চেঞ্জ করে বেরিয়ে আসতে মেঘ দুকাপ কফি নিয়ে হাজির বলো। মেয়েটার দিকে এককাপ এগিয়ে দিয়ে নিজে আরেক কাপ নেয়।
‘আপনার নামটা জানতে পারি?’ মেঘ কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে।
‘নাওয়িজ জান্নাত শুভ্রতা!’ মেয়েটা বলে। মেঘ ‘শুভ্রতা’ নামটা কয়েকবার আওড়ে মনে মনে বলে,,’শুভ্রতা থেকে শুভ্র বেশ ভালো।’
‘আপনার নাম?’ শুভ্রতার কথায় মেঘের ধ্যান ভাঙ্গে। মিষ্টি হেসে বলে,,’আবরার আওসিফ মেঘ!’
‘আপনি কি এখানে একাই থাকেন?’
‘হুম। আমি একাই। আমার পরিবার চট্রগ্রাম থাকে। আমি পড়ার সূত্রে এখানে আরকি।’
‘ওহ আচ্ছে।’
‘আপনার বাসায় কোথায়?’
‘আমার বাসা গ্রামে। পড়ার জন্য ঢাকায় থাকা হয়।’
‘আচ্ছা।’
দুজনের মাঝে আর কোনো কথা হয় নাহ। মেঘ শুভ্রতাকে স্পেচ দেওয়ার জন্য পাশের রুমে চলে যায়। মেঘের বাসাটা দুরুমের সাথে রান্নাঘর আর ওয়াশরুম।রাত হয়ে আসছে দেখে মেঘ রান্নাঘরে যায়। একজন বুয়া এসে রান্না করে দিয়ে যায়। কিন্ত সেটাতো একজনের। তাই মেঘ বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে নেয়। রুমে গিয়ে দেখে শুভ্রতা ঘুমিয়ে আছে। মেঘ আর ডিস্টার্ব করে নাহ।
_____________________
‘আপনাকে বিরক্ত করার জন্য আই এম এক্সট্রিমলি সরি মেঘ।’ শুভ্রতা খেতে খেতে বলে।
‘ইটস ওকে। বাট আমি একটা প্রশ্ন করতে পারি?’
‘আমি জানি আপনি কি প্রশ্ন করবেন।’
‘মানে?’
‘আপনি এটাই তো করবেন আমি বেনারসি গায়ে এখানে কি করছি?’ শুভ্রতার কথায় মেঘ চুপ করে যায়। মনে মনে যে তার কৌতুহলের শেষ নেই। কিন্ত এইভাবে মেয়েটা ধরে ফেললো ভাবতেও লজ্জা লাগছে। মেঘের ভাবনার মাঝেই শুভ্রতা বলে উঠে,,
‘আমার সেমিস্টার এক্সামের পর কয়েকদিনের ছুটি পাই। তাই গ্রামে গিয়েছিলাম। কিন্ত আমাদের গ্রামের চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলের নজর আমার উপর পড়ে। জোর করে বিয়ে করতে চায়। তাই বিয়ের আসর থেকে আম্মু আর আব্বু আমাকে পালিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। কিন্ত বাস স্টেশন থেকে নেমে কিছু দূর আসার পর আমার ব্যাগ ফোন ছিনতাই হয়ে যায়। যার কারণে নিজের মেচে ফিরতে পারি নি। মাঝরাস্তায় আটকে যাই।’ শুভ্রতার কথায় মেঘ তার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায়। কিছু না বলে দুজনে খেয়ে নেয় তারপর আলাদা রুমে ঘুমিয়ে পড়ে।
__________________
এবারের জুলাই মাসে হুটহাট করে বৃষ্টি চলে আসে। কিন্ত ঢাকা শহরের বৃষ্টি আনন্দ উল্লাস নিয়ে আসে না। ড্রেনে পানি জমা,রাস্তা ডুবে যাওয়া নিয়ে আসে। যেটাতে মেঘ বেজায় বিরক্ত। আজ প্রায় সপ্তাহ খানিক হলো শুভ্রতা চলে গিয়েছে। ওইদিন সকালেই শুভ্রতা মেঘের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফিরে যায়। আর মেঘ এক বুক হতাশা নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। মেঘের যে শুভ্রতাকে ভালো লেগেছে এটা সে পুরোপুরি সিউর। আপাদত সে রিক্সা করে ভার্সিটিতে যাচ্ছে। কিন্ত পথিমধ্যে বৃষ্টি এসে আবারও শুভ্রতাকে মনে করিয়ে দিলো। এইরকমই বৃষ্টির মাঝে সে তার শুভ্রর সন্ধান পেয়েছে। মেঘ উদাস চোখে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রইলো। বিড়বিড়িয়ে বলে,,’#হঠ্যাৎ বৃষ্টিতে এসেছিলে তুমি আমার জীবনে। আবার একটা হঠ্যাৎ বৃষ্টিতে হারিয়ে গেছো। সাথে নিয়ে গিয়েছো আমার শান্তি দিয়ে গেছো শুধুই অপেক্ষা। কবে পাবো দেখা তোমার বৃষ্টি বিলাসিনী। কবে হবে আমার প্রতিক্ষার অবসান।
‘Itti si hansi
Itti si khusi
Itta sa tukda chand ka
Khwabon ke tinkon se
Chal banayein aashiyan…
সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গানটা শুনে দাঁড়িয়ে যায়। চেনা পরিচিত কারো গলার আওয়াজ মনে হচ্ছে। মেঘ জানালা দিয়ে হালকা তাকাতেই ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। টানা এক সপ্তাহ পর তার কাঙ্খিত মানুষের দেখা পেয়ে মনের ভেতরে খুশির জোয়ার বয়ে যায়। মেঘ যেহেতু মাষ্টার্স এ পড়ে তাই তাদের আলাদা বিল্ডিং। এইখানে আসা পড়ে নাহ তার। আজ একটা প্রয়োজনে এসেছে। কিন্ত এসে যে শুভ্রতাকে পাবে সেটা জানলে আরো আগেই চলে আসতো। কিন্ত এখন কথা কিভাবে বলবে সেটাই ভাবতে লাগলো। শুভ্রতা তার বন্ধুদের সাথে বসে হালকা গান গাইছে। যা শুনেই মেঘ দাঁড়িয়ে যায়। মেঘ দঁাত নিয়ে নিজের নখ কাটতে কাটতে ভাবতে লাগলো। শুভ্রতাকে হঠ্যাৎ করে বেরিয়ে আসতে দেখে মেঘ দিকবেদিক শূন্য হয়ে দৌড়ে যেতে ধরে। কিন্ত সে সফল হওয়ার আগেই ঘটে গেলো অঘটন।
#চলবে?
(কেমন লাগলো জানাবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ)