#হঠাৎ_পাওয়া
#রাবেয়া_সুলতানা
২তথা শেষ পার্ট
প্রাপ্তি রুমে এসে ইচ্ছে করছে একটা লুঙ্গি ড্যান্স দিতে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস তার কোনো লুঙ্গি নেই। নাহ আব্বু এসে মাথা ছোটকানোর আগেই একটা ড্যান্স দিয়েই ফেলি।প্রাপ্তি হিপহপ একটা গান ছেড়ে দিয়ে নাচতে যাবে এমন সময় তার আব্বু এসে,থাক মা! কষ্ট করে নেচে আর কোমর ব্যাথা করতে হবেনা।আপনার এমন সহনশীল ব্যবহার দেখেও তারা এই বিয়েতে রাজি হয়েছে।আপনার উদারতা দেখেতো তারা পুরোই মুগ্ধ।এর ছেয়ে ভালো বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নেন।শুধু শুধু কোমর ব্যাথার দরকার কি।কথাটা শুনে প্রাপ্তি তার আব্বুর পা জড়িয়ে, আব্বুউউউউ! (ন্যাকামি কান্না করে)তোমার এই বাচ্চা মেয়েটাকে এই যাত্রা মাপ করে দাও।আচ্ছা তুমিই বলো আমার মতো এমন মাছুম বাচ্চাটাকে তুমি বিয়ে দিয়ে দিবে এইটা কি হয়?কথা গুলো বলতে বলতে প্রাপ্তি তার আব্বুকে পা টান দিতেই নিজেকে সামলাতে না পেরে চিৎ হয়ে নিচে পড়ে গেলো ।
(চিৎকার দিয়ে)ও মা! এইবার মনে হয়ে আমার কোমরটা গেলো।
প্রাপ্তির মা রুমে এসে দেখে প্রাপ্তি আব্বু নিচে পড়ে আছে।একি তুমি নিচে এইভাবে বসে আছো কেনো?
-সব তোমার এই গুনধর মেয়ের জন্য। প্রাপ্তির মা! শেষ বারের মতো বলে দিচ্ছি মেয়েকে বুজাও।বিয়ের নাম শুনলেই এলার্জি হয়। আর এই এলার্জি কিভাবে দূর করতে হবে তা আমার ভালো করেই জানা আছে। দরকার প্রয়োজনে এমবিবিএস ডাক্তার দেখিয়ে সব রোগ সারিয়ে নিবো।কথা গুলো বলতে বলতে প্রাপ্তির আব্বু রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
প্রাপ্তির মা মেয়ের কাছে এসে বসে, আচ্ছা তুই কি কখনো সিরিয়াস হবি না?এখনো কি তুই ছোটো আছিস নাকি?
-ইন্না-লিল্লাহ! তুমি মা না ডাইনি আমি তো সেটাই বুজতে পারছিনা।
-আমি আবার কি করলাম?
-এইযে তুমি আমায় সিরিয়ায় যেতে বলছো।তুমি জানো সিরিয়ায় কতো মুসলমান মারা যাচ্ছে।তুমি কি করে বলতে পারলে এই কথা ভাবলেই তো আমার বুকের ভেতর হাতুড়ি পিটা শুরু করে।
-(ধমক দিয়ে)এই শুন তোর এইসব ফাইজলামি দেখার জন্য আমি এইখানে আসিনি।এসেছি ছেলের নাম্বার দিতে।ফের যদি উল্টাপাল্টা কিছু করেছিস তাহলে তোকে জিন্দা কবর দিবো।
-আমার কষ্ট হবে তো এইভাবে করব দিলে।দিলেও সব ধরনের খাবার দাবার পাঠিয়ে দিও।
প্রাপ্তির মা মেয়েকে কিছু না বলে চলে গেলো।
প্রাপ্তি বুজে গেছে এদেরকে বলে কোনো লাভ হবেনা।এরছেয়ে ভালো রিয়াকে ফোন দিই।
-হ্যালো ওই শালী তুই কই।
-চিন্তা করিসনা তোর বরের কাছে নেই। এখন বল কি বলবি?
-শালী নিজের বাবার খেয়ে তোর চিন্তা করতে যাবো কোন দুঃখে?তুই জাহান্নামের আগুনে পুড়ে মর আমার কি। তুই শুধু এখন আমার বাসায় আয়।এইবার মনে হয় আর নিজেকে বাঁচাতে পারবোনা।প্লিজ তুই তাড়াতাড়ি আয় আমি তোকে সব বলছি।
প্রাপ্তির সব কথা শুনে বিয়ে ভাঙার জন্য সব রকমের আপ্রাণ চেষ্টা করছে তারা।কিন্তু শেষমেষ বিয়েটা হচ্ছেই।এই কয়েকদিন প্রাপ্তির মনে থাকা ছেলেটাকেও অনেক খুঁজেছে কিন্তু পায়নি।
সব চেষ্টা বিফলে গিয়ে আজ তার গাঁয়ে হলুদ।অন্যমনষ্ক হয়ে মন খারাপ করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে সে।রিয়া এসে পাশে দাঁড়িয়ে, প্রাপ্তি অনেক তো চেষ্টা করলাম আমাদের সব প্লান এইবার বিফলেই গেলো।এখন শুধু একটা উপায় বাকি আছে সেটা হলো চল ছেলেটাকে নিয়ে আমরা পেপারে বিজ্ঞাপন দিই ।
-নারে আন্দাজে কি বিজ্ঞাপন দিবো যার নাম ঠিকানা কিছুই জানিনা।আর হয়তো সে আমার কপালেই নেই বুজলি।কথা গুলো বলতেই প্রাপ্তির মা এসে কিরে তোরা এখনো এইখানে দাঁড়িয়ে আছিস? পার্লারে যাবি কখন। যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়েনে।
প্রাপ্তি পার্লার থেকে এসে নিজের রুমে গিয়ে দাঁড়াতেই হঠাৎ সেইদিন তার মায়ের দেওয়া নাম্বারের কথা মনে পড়লো, সারা রুম খুঁজে শেষে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে পেলো।
প্রাপ্তি ফোন দিতেই,
-হ্যালো!
ওপাশ থেকে মেয়েলী কন্ঠ শুনে,
আসসালামু আলাইকুম,
আচ্ছা বজ্জাত, বানর, পঁচা পেয়াজ লোকটা কোথায়? কথাটা বলে প্রাপ্তি জিহ্বায় কামড় দিয়ে, স্যরি! আয়ান সাহেব কোথায়?
-ভাইয়া!(ওইপাশে থাকা মেয়েটার বুজতে বাকি নাই এইটা প্রাপ্তি)ভাইয়াতো বাহিরে গেছে। অবশ্য এখুনি চলে আসবে।তুমি কি কিছু বলবে? বললে আমাকে বলো আমি বলে দিবো।
প্রাপ্তি রাগে যেনো কটমট করে ফোনটাই কেটে দিলো ।
ভাইয়া তুই কি করে জানলি এইটা ভাবীর নাম্বার?
আয়ান মুচকি হেঁসে, যাকে এতো ভালোবাসি তার নাম্বার জানবোনা তো কে জানবে?
-তাহলে কথা না বলে আমাকে দিলি কেনো।
-ওকে তুই চিনিস না।ও নিশ্চিত বিয়েটা ভাঙার জন্যই ফোন দিয়েছে।তাই তোকে ধরিয়ে দিলাম।
সব কিছু মিটিয়ে প্রাপ্তি বসে আছে আয়ানের রুমে মানে বাসর ঘরে ।আর এইদিকে মনে মনে ভাবছে কিভাবে আয়ানকে জব্দ করা যায়। শালা বজ্জাত, পঁচা পেয়াজ, আমাকে বিয়ে করা আজ টের পাবি প্রাপ্তি কি জিনিস। আয়ানের রুমে বসেই তাকেই জব্দ করার কথা ভাবছে প্রাপ্তি। কেউ আসার শব্দ শুনে দরজার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো, আয়ান দরজা খুলে ভিতরে আসতেই প্রাপ্তি লেং দিতেই আয়ান পড়ে যাওয়ার আগেই প্রাপ্তির হাত টেনে তাকে নিয়েই পড়লো।আয়ানকে দেখে প্রাপ্তি চমকে উঠে
আ আ আপনি? (ভয়ংকর ভাবে চমকালে যা অবস্থা হয়)
-বাসর রাত কি এইখানে ফ্লোরে করার চিন্তা হলো নাকি?
এতো সুন্দর ফুল দিয়ে সাজানো খাট তোমার পছন্দ হয়নি সোনা?
প্রাপ্তি কান্না সুরে কাঁদে আমার বর কইইইইইই?
-কি হলো সোনা তোমার বরকে যে তুমি কবরে পাঠানোর টিকেট কেটে এসেছো তা দেখেই বুজা যাচ্ছে।
-মানেএএএ?
-আমার শরীরের উপর থেকে উঠো তারপর বলছি।
প্রাপ্তি তাকিয়ে দেখে সত্যি সত্যিই সে আয়ানের শরীরে উপর পড়ে আছে। তড়িঘড়ি উঠে, আবার ন্যাকা কান্না করে, এতো দিন আপনি কই ছিলেন বলেন তো? কতো খুঁজে খুঁজে শরীরের কতো শক্তি লস হয়েছে জানেন।
-জানি সোনা।তবে এইছাড়া আমার যে উপায় ছিলো না।
-কিন্তু আপনি এইখানে এইবাড়িতে কি করছেন?
-তোমার সাথে বাসর করবো বলেই এসেছি। কারণ এইটা আমার বাড়ি।
-মানে কি?আপনার বাড়ি মানে? এইটা তো আমার বরের বাড়ি।
-ম্যাডাম না দেখে বিয়ে করলে কি হয় জানেন? কেউ ঠকে আবার কেউ নিজের অজান্তেই জিতে যায়। কিন্তু আপনার চিন্তা নেই আপনি জিতেছেন।কারণ বিয়েটা আমার সাথেই হয়েছে।
কথাটা শুনে সুস্থির নিশ্বাস ফেলে, আপনি আগে থেকে সব জানতেন?
-হুম।তোমার সাথে ফাস্ট ধাক্কা খাওয়া,রেস্টুরেন্টে দেখা,অবশ্য তোমাকে আমি প্রতিদিনই দেখতাম।
-তারমানে আপনি ইচ্ছে করে আমায় ধাক্কা দিয়েছিলেন সেদিন? কিন্তু কেনো? আপনি জানেন আমি যে এতো দিন ধাক্কায় আটকে ছিলাম।
-কেনো করেছি জানতে হলে চলো দুই বছর আগেই ঘুরে আসি, তোমার মনে আছে একটা ছেলে তোমাকে তোমার বার্থডে উইশ করে তার মনের ভালোবাসা তোমার কাছে প্রকাশ করেছিলো।কিন্তু সেই দিন তুমি আমাকে যা অপমান করেছিলে আমার এখনো মনে হলে হাঁসবো না কাঁদবো বুজতে পারছিনা।
সেইদিন বুজলাম তোমাকে এইভাবে বললে কাজ হবেনা।কারণ তোমার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জেনেছি তুমি কোনো ছেলেকেই পাত্তা দেওনা।তাই নিজের টেকনিক হিসাবে সেই দিনের ধাক্কায় তোমাকে আমার উপর আকর্ষণ করলাম।
প্রতিদিন লুকিয়ে তোমায় দেখতাম।আসলে ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকা যায়না।
-বুজলাম! কিন্তু বিয়ে ঠিক হওয়ার পর তো দেখা করতে পারতেন।তখন করেননি কেনো?
– সারপ্রাইজ ম্যাডাম। অনেক ছেলেকে তো নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছেন।আমি না হয় আপনাকে একটু ঘুরালাম।
এইবার উঠো।
আয়ান উঠে দাঁড়িয়ে, প্রাপ্তিকেও দাঁড় করিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
-(আয়ান কে খেপানোর জন্য) কিন্তু আমার বর? আমি বরের কাছে যাবো।
প্রাপ্তির কথা শুনে আয়ান রাগী ভাব নিয়ে চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দুজনেই হাঁসতে শুরু করলো।আয়ান প্রাপ্তির হাত টেনে এনে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বুকের সাথে শক্ত করে ধরে রাখলো।
সমাপ্ত