#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১৪ #খুনসুটি
#নবনী_নীলা
“আরে আরে আস্তে! আপনি দেখছি আমার পা ভেঙ্গে ফেলবেন? আপনার এতো নিষ্ঠুর হৃদয় কেনো?”, ব্যাথায় কাদতেঁ কাদতেঁ বলল নওরীন।
” একদম চুপ করে থাকো। একটা কথাও বলবেনা। মই বেয়ে উপরে উঠার সময় এইসব মনে ছিল না?”, অভির ধমকে নওরীন মুখ ফুলিয়ে অভির দিকে তাকিয়ে আছে।
নওরীন মই বেয়ে গাছে উঠতে গেছিলো। অভির কাজিন তুলি আর নুহাশের সঙ্গে নওরীন নিজের গাছে উঠার নিজ্জা টেকনিক দেখাতে গিয়ে মই থেকেই পরে পা মচকে ফেলেছে।
পা বেশি মচকে নি কিন্তু নওরীনের চিৎকারে বাকিদের অবস্থা দেখার মতন ছিলো। নওরীনকে এখন রুমে এনে, অভি পা নাড়াচরা করে দেখছে serious কিছু কিনা? এতেও নওরীন যা করছে তাতে অভি চুপ করে নিজের রাগ কমাচ্ছে।
নুহাশ আর তুলি ভয় পেলেও প্রভাত অনেক মজা পেয়েছে। সে চুপ করে মামা মামীর পাশে বসে আছে। মামীর কান্ডকারখানায় সবচেয়ে বেশি আনন্দ পায় প্রভাত।
অভি নওরীনের দিকে তাকিয়ে বললো,
” ইনজেকশন লাগবে। এভাবে কিছু হবে না।”
নওরীন চোখ বড় বড় করে বলল,” একদম ফালতু কথা বলবেন না একটু পড়েছি কিসের ইনজেকশন। ভয় দেখাবেন না আমাকে।”
” তুমি যা শুরু করেছ প্রাথমিক চিকিৎসা বলে যেটা আছে সেটাতেই তুমি এমন চিৎকার করছো। ইনজেকশন মেরে অজ্ঞান না করে কিছুই করা যাবে না। বসো আমি ডক্টর আংকেল কে ফোন করছি।”,বলে অভি ফোন হাতে নিল। অভি ভালো করে জানে কিভাবে নওরীনকে সামলাতে হয়।
নওরীন অভির হাত থেকে ফোন কেরে নিয়ে ভয়ার্থ গলায় বলে,” আমি আর চিৎকার করবো না। ফোন দিয়েন না প্লীজ।”
” ফোন এই দিকে দেও। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না। তুমি চিৎকার করবে এতে আমার কোনো প্রকার সন্দেহ নেই।”,ফোন নিতে কাছে আসায় নওরীন ফোন লুকিয়ে বলে,” সত্যি চিৎকার করবো না। প্লিজ প্লিজ।”
প্রভাত পাশে বসে মুখ টিপে হাসছে।
অভি বললো,” মুখে হাত দেও।”নওরীন চুপচাপ কোনো প্রশ্ন না করে মুখে হাত দিল।অভি নওরীনের পায়ের কাছে হাঁটু গুঁজে বসলো। একবার নওরীন দিয়ে তাকিয়ে যেই দিকে মচকে গেছে উল্টো দিকে জোড়ে ঘোরালো। একটু শব্দ হলো।
নওরীন অভির কাধে হাত রেখেছিলো ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে বিছানার চাদর আর অভির শার্ট শক্ত করে ধরে চিৎকার থামলো। অভি একটা খামচি কাটার মতো অনুভব করলো।অভি নিজের কাধের দিকে তাকিয়ে একটা নিশ্বাস ফেলে নওরীনের দিকে তাকালো সে চিৎকার করেনি কিন্তু চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি পড়ছে।
প্রভাত বললো,”মামীর পা ঠিক হয়েগেছে?”
অভি হা সূচক মাথা নাড়ল। নওরীন পা নাড়াচারা করে দেখে সত্যি পা ঠিক হয়েছে । নওরীন খুশি হয়ে গেলো। অভি নিজের কাধে নওরীনের আঁচড়ে দেওয়া জায়গা ডলতে ডলতে উঠে দাড়ালো। নওরীন যে এই কাণ্ড করেছে তা সে নিজেও জানে না।
প্রভাত বললো,” চলো তাহলে আমাদের নিনজা টেকনিক দেখাও।”
অভি ভ্রু কুঁচকে বললো,” কিসের টেকনিক?”
প্রভাত এক গাল হাসি আর উচ্ছাস নিয়ে বললো,” গাছে উঠার নিনজা টেকনিক।’
অভি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নওরীনের দিকে তাকালো। নওরীন ইশারায় প্রভাতকে চুপ করতে বলে।
” যাও গিয়ে নিনজা টেকনিক দেখাও। আমি নিয়ে যাবো নাকি যেতে পারবে।”, রাগী গলায় বললো অভি।
আরো বললো,” যে নিজেই মই থেকে পড়ে পা ভেঙে বসে আছে সে কি শিখাবে? প্রভাত রুমে যাও তুমি। কিছু মানুষ এমনেই লাফায় তাদের কথা বিশ্বাস করতে হয় না।”
অভির কথায় প্রভাত হা সূচক মাথা নেড়ে মিট মিট হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। নওরীনের ইচ্ছে করছে এতো এত কথা শুনাতে কিন্তু কোনটা আগে বলবে সেটাই বুঝতে পারছেনা।
অভি রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,” আকাশে কিভাবে উড়ে সেটার নিনজা টেকনিক জানো?”
” একদম আমাকে খোটা মেরে কথা বলবেন না।আমি এমনেই বলিনি। আমি গাছে উঠতে পারি। অনেক ছোট বেলায় একবার উঠেছিলাম মই বেয়ে গাছে।”, প্রতিবাদী ভঙ্গিতে বলল নওরীন।
“চেয়ার দিয়ে ট্রাই করনি? করা উচিৎ ছিল তো। তুমি দড়ি দিয়ে করতে পারতে গাছের উচু ডালে দড়ি বেধে তারপর দড়ি বেয়ে বেয়ে উপরে উঠতে লাইক বাঁদরের মতন।”,কথা শেষ করে অভি ওয়াসরুমে চলে গেলো।
নওরীন এখন মনের সুখে রাগ ঝাড়ছে।নওরীন ওয়াশরুমের কাছে গিয়ে বলতে শুরু করে,” আমি তো তাও জীবনে একবার গাছে উঠেছি। আপনি কখনো উঠেছেন? আপনি কি করে জানবেন গাছে উঠার মহত্ব?
আপনার কি মনে হয় আমি বকা, বাচ্চা কিছু বুঝি না? আপনার না জ্বলে আমাকে দেখে। আমি মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াই আপনি তো এইগুলো করতে পারেন না। এইগুলো করলে আপনি যেই ভাব নিয়ে থাকেন তা তো থাকবেনা।
আপনি হলেন অভি আহমেদ একটা ভাব নিয়ে থাকতে হবে না? আমাকে পেয়েছেন অসহায় কিছু বলি না তাই আমাকে এভাবে অপমান করেন।আমার প্রতিভায় আপনার হিংসে হয়।”
নওরীন ওয়াশরুমের দরজায় হেলান দিয়ে আপন মনে কথা বলছে।নওরীন নিজে নিজে বলে আবার হাসছে মুচকি মুচকি।তারপর আবার বললো,” আমার আনন্দ তো আপনি দেখতে পারেন না। আমারও সময় আসবে আমিও তখন আপনাকে দেখাবো নওরীন কি জিনিস।”
তখনই নওরীন পিছনে হেলে পড়ে গেলো কারন অভি দরজা খুলে দিয়েছে। নওরীন পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নেয়। অভি গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে অভির গায়ে শার্ট নেই।
অভির রাগী মুখ দেখে নওরীনের গলা শুকিয়ে গেছে। সে হাসি দিয়ে ব্যাপারটা উড়িয়ে দিতে চেষ্টা করলো কিন্তু অভি বললো,” কি বলছিলে এতক্ষন?”
নওরীন একটু দূরে এসে বলে ,” কিছু না”
“তোমার প্রতিভায় নাকি আমার হিংসে হয়! seriously? তোমার এসব উল্টা পাল্টা প্রতিভা তুমি তোমার কাছে রাখো।”, অভি তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল।
নওরীন বুঝেছে এখন চুপ করে থাকা তার জন্যই ভালো। এতক্ষন আজে বাজে কি বলেছে সেটা তার নিজের ও জানা নেই। নওরীন পা টিপে টিপে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
নীচে নামতেই দেখা হলো তার শাশুড়ির সাথে তিনি বললেন,” তোমার পায়ের কি অবস্থায়?”
নওরীন বললো,” এখন ঠিক আছে।”
” ঠিক থাকলেও দৌড় দৌড়ি করো না। রেস্ট নেও, নীচে নেমেছ কেনো?”
নওরীন কিছু বলতে পারছেনা কারন কোন মিথ্যে কথাটা সত্যি বলে মনে হবে সেটাই সে বুঝতে পারছেনা।
এমন সময়ে নুহাশ এলো। নুহাশ কলেজে পড়ে ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র। অবশ্য এই পরিবারে ব্রিলিয়ান্ট মানুষের অভাব নেই। তারা জ্বীনগত ভাবে ব্রিলিয়ান্ট হওয়ার ট্রেনিং পেয়ে পৃথিবীতে আসে। নুহাশ ছেলেটা নওরীনকে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠে।
নুহাশ বলে,” একি তোমার না পায়ে অনেক ব্যাথা ছিলো। ব্যাথায় চিৎকার করছিলে এখন দাড়িয়ে আছো কিভাবে?”
” নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছে।”,বলেই হাসতে হাসতে নওরীনের শাশুড়ি নিজের রুমে যায়।
নওরীন বিরক্তি চোখে নুহাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ব্রিলিয়ান্ট মানুষরা আধ পাগল টাইপ হয় সেটা নওরীন নুহাশ আর অভিকে দেখে জেনেছে।
নওরীন রুমে এসে দেখে অভি নিজের কাধে ক্রিম জাতীয় কিছু লাগাবার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।
অভি শার্টের বোতাম খোলা আর এক পাশের কাধ দিয়ে একটু খোলা। নওরীন রুমে এসে অভির কাছে গেলো। অভি ঠিক কি করছে সেটা তার জানা দরকার। নওরীন কাছে গিয়ে খেয়াল করলো অভির কাধে আঁচড়কাটা দাগ।
নওরীন বেস্ত হয়ে বললো,” কি হয়েছে দেখি” বলে অভির কাধের শার্টটা একটু সরালো।
নওরীন অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,” আপনাকে কি বিড়াল খামচে দিয়েছে? দাগ হয়ে আছে।”
অভি একটু হেসে বললো,” বিড়াল না বাঁদর।”
” বাঁদর! কিন্তু এখানে আসার পর থেকে কোনো বাঁদর চোখে পড়লো না তো আমার!”, বিস্ময় নিয়ে বলল নওরীন।
” তোমার বুঝা লাগবে না। তুমি আমাকে এই ক্রিম লাগাতে হেল্প করো।”,বলে নওরীনের হাতে ক্রিমটা দিয়ে দিল।
” আচ্ছা,আপনি এসে বিছনায় বসুন।”
অভি গিয়ে বিছনায় বসলো নওরীন ক্রিম খুব সাবধানে, দেখে লাগাতে লাগলো। হটাৎ বানরের ব্যপারটা তার মাথায় এলো।
” আপনি কি কোনো ভাবে বাঁদর বলতে আমাকে বুঝিয়েছেন?”, বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করলো নওরীন।
তুমুল কান্ড লাগাবে সেটা নওরীনের চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে।
[চলবে]
#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১৫ #তোমার_কি_আমাকে_মনে_পড়বে?
#নবনী_নীলা
” আপনি কি কোনো ভাবে বাঁদর বলতে আমাকে বুঝিয়েছেন?”বিস্ময় নিয়ে আমি প্রশ্ন করলাম। অভি হাসছে, আমি কি মজার কিছু বললাম যে উনি এভাবে হাসছে।
বাঁদরতো আমাকেই বলে আমি আবার কবে এই কুকর্ম করলাম?সকালে শার্ট খামচে ধরেছিলাম তখন কোনো ভাবে কি নখ লেগে এমন হয়েছে? ব্যাপারটায় খারাপ লাগছে মাঝে মাঝে কি যে করি আমি নিজেও বুঝি না।
অভি হটাৎ আমার হাত ধরে আমাকে সামনে নিয়ে এলো। আমি অভির সামনে বসলাম। আমি দুঃখিত স্বরে বললাম,” আমি ইচ্ছে করে করিনি ভুল করে হয়েগেছে sorry।”
অভি অবাক হয়ে বলে,” বাহ্ এতো ভালো মেয়ে হয়ে গেলে কি করে? নিজে নিজেই sorry বলছো।” আমি চুপ করে রইলাম। অভি আমাকে সামনে ফিরিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আমার মাথা গিয়ে ঠেকেছে অভির বুকে।
আমি “আপনি….” বলতে গেলাম অভি আমার মুখের সামনে হাত দিয়ে আমাকে চুপ করিয়ে বলল,” চুপ করে থাকো, উল্টা পাল্টা কথা বলে আমার মুড নষ্ট করো না।”
আমি কিছু বলার আগে আমার ঘাড়ের উপর থেকে চুল সরিয়ে দিলো। অভির স্পর্শ এখন ভালো লাগতে শুরু হয়েছে।যদিও নিজেকে এখনও শ্বাসকষ্টের রোগী মনে হয়। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে জোরে জোরে শ্বাস নিতে হয়।
” কালকে সকালে আমরা চলে যাচ্ছি।”,বলে অভি আমার দিকে তাকালো।আমি ঘাড় কাত করে অভির মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললাম,”কেনো? হটাৎ করে কালকেই যেতে হবে কেনো? আমরা থাকি আরো কিছু দিন।” বলে তাকিয়ে রইলাম।
” আমার কিছুদিনের জন্য জাপানে যাওয়া লাগবে অফিসের কাজে, কালকে সন্ধায় আমার ফ্লাইট।”,বলেই শুকনো মুখ করে আমার দিকে তাকালো।
আমি কি বলবো কি বুঝলাম না। আমি কিছু না বলে ঘাড় সোজা করে সামনে তাকালাম। কালকে সন্ধায় ফ্লাইট আর উনি আমাকে এখন বলছে! আমাকে এর আগে জানানোর প্রয়োজনবোধ করেনি। আমাকে এখন বলতে এসেছে।
অভি আরো বললো,” I know আমার তোমাকে আগেই জানানো উচিৎ ছিলো। আমি আসলে তোমাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। তোমার পাসপোর্ট করার অনেক ট্রাই করেছি but কমপক্ষে ৫, ৬দিন লাগবে আর আমার হাতে সময় কম ছিল।”
আমি একটা নিশ্বাস ছেরে দিয়ে বললাম,”হুম বুঝেছি।”
আমি আমাকে ওর বুক থেকে সরিয়ে আমাকে ওর সামনে বসিয়ে দিল। হটাৎ আবার কি হলো? কি সুন্দর জড়িয়ে ধরে ছিলো হটাৎ করে কি হয় এর। আমি ভ্রু কুচকে অভির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
অভি বলল,” আমি কি তোমাকে বায়োলজি পড়াচ্ছি? হুম বুঝেছি এইটা কেমন কথা।”
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,” একদম বায়োলজির নাম নিবেন না অসহ্য একটা সাবজেক্ট। আমি এইটাকে দেখতেই পারি না।”
” তোমার আমার মধ্যে কেমিস্ট্রি বলতে কিছু নেই, ফিজিক্স এর কথা তো বাদ। বাকি আছে বায়োলজি এইটাও বাদ দিলে কিভাবে হবে।”
অভি সাবলীল ভাবে তাকিয়ে আছে। সত্যি বলতে অভির কথার কিছুই আমি বুঝিনি। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে রইলাম তারপর বললাম,
” কয়দিনের জন্য যাবেন?”
” ৬, ৭দিন লাগতে পারে অথবা তার বেশি।”বলে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি “ও আচ্ছা” ছাড়া কিছু বলতে পারলাম না। এতো দিন থাকবে সেটা আমি ভাবিনি। আমার চেহারায় যেন ঘন মেঘ বাসা করেছে। বৃষ্টি নামবে বলে। আমি করিডোরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
” তোমার কি মন খারাপ হয়েছে?”,অভি আদর মিশানো গলায় বলল।
নিজের অজান্তেই আমি হা সূচক মাথা নাড়লাম। অভী ডান হাত দিয়ে আমার মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলো,” কেনো? তোমার কেনো মন খারাপ হয়েছে? তোমার তো খুশি হবার কথা না? যা ইচ্ছে করতে পারবে।”
আসলেই তো আমার কেনো এতো খারাপ লাগছে। উনি না থাকলে আরো ভালো লাগার কথা। বকা, রাগ, ঝাড়ি শুনতে হবে না। কিন্তু আমার কান্না পাচ্ছে। কান্না আটকে রাখতে গিয়ে গলায় ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।
তাও অনেক কষ্টে বললাম,” আমি কি বলেছি আমার আপনার জন্য মন খারাপ হয়েছে? আমি জাপানে যেতে পারবো না এই জন্য মন খারাপ হয়েছে।”
আমার গলা দিয়ে আর কথা বের হচ্ছে না। যেকোনো সময়ে চোখ দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা পড়বে।আমি চাই না অভি সেটা দেখুক।আমি উঠে যেতেই অভি আমার হাত ধরে টেনে নিজের কোলে বসালো।
অনেক কিছু বলতে চাই কিন্তু গলায় চাপ পড়ায় কিছু বলতে পারছি না। অভি আমার কোমরের পাশে দুই হাত জড়িয়ে বললো,” তোমার কি আমার কথা মনে পড়বে ?”
এই কথাটা বলার কি খুব প্রয়োজন ছিল। এই কথা শুনে আমার চোখ থেকে টপ টপ পানি পড়তে শুরু হলো। আমি মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে না সূচক মাথা নেড়ে বললাম,” আমি জাপানে যেতে চাই।”
অভি আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,” হুম বুঝেছি তুমি জাপানে যেতে পারছো না তাই কান্না পাচ্ছে। আচ্ছা কান্না থামাও নেক্সট টাইম তোমাকে নিয়ে যাবো।”
_________________
সকাল সকাল গাড়ি করে ফ্ল্যাটে ফিরে আসলাম আমরা। সারা রাস্তায় আমি চুপ করেছিলাম। অভি বিভিন্নভাবে আমার সাথে কথা বলতে এসেছে আমি কথা বলিনি।
অভির ফ্লাইট সন্ধ্যায় অফিস থেকে গাড়ি তাকে এয়ারপোর্ট নিয়ে যাবে।অভি নিজের ব্যাগ গুছাতে বেস্ত।
আমি মুখ কালো করে বিছানায় বসে অভির সুটকেস গুছানো দেখছি। আমি সত্যি যেতে চাই। আমি একা একা এতো দিন কিভাবে থাকবো? এই লোকটাকে না জ্বালাতন করলে ভালো লাগে না।
” তোমার জাপানে যেতে না পারার শোক এখনও কাটেনি?”, নিজের সুট গুছাতে গুছাতে বললেন।
ওনার কি সত্যি মনে হচ্ছে আমি জাপানে যাওয়ার জন্য এমন মন খারাপ করে বসে আছি। কালকের কান্নাটা সেটাও কি জাপানে যাওয়ার জন্য কেঁদেছি? আমার জামাইটা এমন কেনো ? কিছুই দেখি বুঝে না। আচ্ছা মেনে নিলাম জামাইটা আনরোমান্টিক কিন্তু বুদ্ধি শুদ্ধি কিছুই নেই।
আমি আড় চোখে তাকালাম। অভী মিট মিট করে হাসছে।অভি আবার বললো,” তুমি জাপানে যেতে চাও কেনো?”
কান্ড দেখো লোকটার মনটা ভালো নেই অথচ উনি আমার মেজাজটাও খারাপ করছেন। উনি তো বেশ আনন্দেই আছে মনে হচ্ছে।
” হ্যা ছোটোবেলায় খুব ইচ্ছে ছিলো নবিতাকে বিয়ে করবো। তাই যেতে চাচ্ছি।”,আমি রেগে বললাম।
” নবিতা! তোমার ওই বলোদটাকে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো? বলদের তো বলোদকেই ভালো লাগবে। “, বলতে বলতে উঠে এলো।
” আপনি একেবারে খুব বুদ্ধিমান তাই না? পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান মানুষ হলো অভি আহমেদ।”,আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম।
অভি আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে বলে,” উঠো এবার নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নেও।”
[ চলবে ]