স্যার পর্ব-০৩

0
1882

#স্যার
#পর্ব_৩
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

আজ স্যার এখনো আসছে না। রুশা অপেক্ষায় আছে তার স্যারের। ফোন দিবে কিনা ভাবছে রুশা। সাত পাঁচ না ভেবে রুশা তার স্যারকে ফোন করে।
ফোন বেজে যাচ্ছে। কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। রুশা লাগাতার ফোন করে যাচ্ছে। কিন্তু অপর মানুষটা রিসিভ করছে না। সপ্তম বারের মতো আবারও ফোন করলো রুশা। এবার ফোন রিসিভ হয়েছে।
ফায়াজ ফোন রিসিভ করে।
“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?”
রুশা তার স্যারের ভয়েস শুনে যেনো অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। ফোনে খুব সুন্দর শোনাচ্ছে তার স্যারের কন্ঠটা। রুশাও জবাব দেয়,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম স্যার। আসসালামু আলাইকুম।”
“হ্যাঁ কে?”
“স্যার আমি, রুশা বলছি।”
“কী ব্যাপার? তুমি হঠাৎ ফোন করেছো কেন? কী প্রয়োজন?”
“আপনি যে এখনো আসলেন না? কোনো সমস্যা হয়েছে কি-না?”
“আমার সমস্যা হয়েছে কি হয় নি তা দিয়ে তোমার কী কাজ? আর এইভাবে হুটহাট আমায় ফোন দিবে না। চুপচাপ পড়াগুলো শেষ করো। আমি আমার সময়ানুযায়ী আসবো।”
“আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন স্যার?”
“ফোন রাখলাম। পড়ো।”
ফায়াজ ফোন রেখে দিলো। রুশার ভীষণ রাগ হচ্ছে। সে ভাবছে, এমন আচরণ করলো তার সাথে তার স্যার। কাজটা কী ঠিক হলো? এতো এটিটিউট কেন তার? স্যার বলে? আজকে আসুক। এতো পরিমাণ ত্যাড়ামি করবো যে সে বিরক্ত হবে কিন্তু কিছু বলতে পারবে না।
রুশা পড়তে বসেছে কিন্তু পড়াশোনায় তার মন নেই। সে ভাবছে তার স্যারের কথা। এমন আচরণ কেন করলো তার সাথে। সে কী এমন বলেছে?
আট টা বেজে পাঁচ মিনিট। কলিংবেল পড়েছে। ঘাড় ত্যাড়া করে রুশা টেবিলেই বসে আছে। ফায়াজ একটু ক্লান্ত চেহারা নিয়েই পাশের চেয়ারে বসে। রুশার দিকে তাকিয়ে দেখে রুশার মুখটা কালো হয়ে আছে। মুখের ভঙ্গি একটু পরিবর্তন করে বলে,
“এনিথিং রং রুশা?”
রুশাও জবাব দেয়,
“অল গুড।”
“গ্রেইট। বই নাও।”
“সামনেই তো রাখা আছে।”
ফায়াজ মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“পেইজ নাম্বার ২৩৮ খুলো। একটা অংক আছে সেখানে। অংকটায় হাত দাও।”
রুশা মনে মনে ভাবছে, ইনি কি পুরো বইটা গিলেছিলেন নাকি। না দেখে এতো শিওরলি বললেন কীভাবে?
রুশাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফায়াজ বলে, “বই খুলতে বলেছি রুশা। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে বলিনি।”
“খুলতেছি।”
রুশার কড়া গলায় খুলতেছি শব্দটা শুনে ফায়াজ মুচকি হাসে। মাথাটা বেশ ধরে আছে তার। অন্যদিকে রুশার নিজের কাছেও মনে হচ্ছে তার স্যার আজ ক্লান্ত। তাই নিজ থেকেই প্রশ্ন করে,
“স্যার, একটা প্রশ্ন করি?”
“করো।”
“আপনাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। আপনি ঠিক আছেন তো?”
“হ্যাঁ, মোটামুটি ক্লান্ত। আর মাথাটাও বেশ ধরেছে।”
“আমি ম্যাসাজ করে দেই।” (অস্পষ্ট স্বরে)
“বুঝি নি, জোরে বলো।”
“নাহ মানে আসলে আপনার জন্য ঠান্ডা লেবু পানি নিয়ে আসি স্যার।”
“হ্যাঁ, তা আনতে পারো।”
“আচ্ছা, বসেন তাহলে। আমি এক্ষুনি বানিয়ে আনছি।”
“তুমি বানাবে?”
“হ্যাঁ। আমি সব কাজ করতে পারি। অনেকটা জুতো সেলাই থেকে শুরু করে চন্ডি পাঠ এর মতো।”
“তাই তো রেজাল্টের এই অবস্থা।” (অস্পষ্ট স্বরে)
“স্যার কিছু বললেন?”
“নাহ, যাও নিয়ে এসো।”
রুশা এক দৌড়ে তার ঘর থেকে বের হয়ে যায়। রুশা চলে গেলে ফায়াজ হালকা হেসে বলে, পাগলি একটা।

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে