স্মৃতিচারন পর্ব-০১

0
1565

#স্মৃতিচারন
#সূচনা_পর্ব
#লেখনীঃরূপন্তি রাহমান (ছদ্মনাম)

রাত ১২ টায় বিবাহিত জীবনের ১০ বছরে পদার্পণ করবো। আমার আড়াই বছর বয়সী মেয়েটা বিছানায়। ঘুমোচ্ছে সে। আমি অপেক্ষা করছি মেয়ের বাপের জন্য। কিছু কিছু সময় অপেক্ষা করতেও ভালো লাগে। বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে আমার তেনাকে একটা সারপ্রাইজ দিবো। যদিও সে আমার উপর রেগে যাবে। তার সাথে সাড়ে ১২ বছরের পথচলা। বিয়ের পর ১০ বছর আর বিয়ের আগে প্রেম ২ বছর আর ৬ মাস ধরে সে পটিয়েছিল। আমার রিলেশন টা ছিলো লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপ। এক জেলা থেকে অন্য জেলা না।এটা ছিলো এক দেশ থেকে অন্য দেশ। আমি বাংলাদেশ আর সে সুদূর ইতালি।

তখন ইন্টারে পড়ি। ফেসবুকিং করছিলাম হঠাৎ একটা মেসেজ রিকুয়েষ্ট আসলো লিখা,
– হাই।

আমি ছিলাম দুষ্টুর শিরোমণি মজা করে একটা ভাঙ্গানির ছবি দিয়ে বলেছিলাম,
-এ্যাহ আইছে হাই কইতে।

তারপর তাকে ব্লক করে দিছিলাম।তার দুই দিন পর আবার নতুন একটা আইডি থেকে মেসেজ আসে। ইয়া লম্বা। প্রতিটা লাইনে আমাকে জ্ঞান দেওয়া। আমিও তাকে হাজারটা কথা শুনিয়ে ছিলাম। এরপর টুকটাক কথা হতো।সেই বেশি মেসেজ করতো আমি রিপ্লাই করতাম না। হঠাৎ করে মাস খানিক তার সাথে আর যোগাযোগ হলো না। এরপর একদিন গভীর রাতে শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করছিলাম তার আইডি থেকে মেসেজ আসলো,

-কি ব্যপার অনলাইনে তো ঠিকই থাকেন আমার মেসেজের রিপ্লাই দেন না কেন?

সেই মেসেজের রিপ্লাই দিলাম। মেসেজিং করতে করতে এক পর্যায়ে সে বললো,
-জানেন আমি ওই তারিখ খুব খুশি ছিলাম।

রিপ্লাই দিলাম কেন? সে বলে,

-কারন ওই তারিখ আপনি নিজে থেকে আমাকে নক দিছেন।আমি সেদিন কি পরিমাণ খুশি ছিলাম বলে বোঝাতে পারবো না।

এভাবে রোজ তার সাথে হালকা পাতলা কথা হতো।ফ্রেন্ডদের সাথে গ্রুপ কলে কথা বলছিলাম তিনি মেসেজ দিলেন,
-আপনার বিয়ে নিয়ে কথা হয়? উত্তর দিলাম,
-মেয়ে যেহেতু হয়েছি বিয়ে নিয়ে কথা তো বলবেই।

-বিয়ে করবেন আমাকে?

বলা রাখা ভালো সে দেখতে ছিলো সুদর্শন প্রথম দেখায় কারো নজরে পড়ার মতো। আর আমি ছিলাম শ্যামবর্ন। আর আমার প্রোফাইলে আমার চোখের ছবি দেওয়া ছিলো। তার সেই প্রশ্নের জবাবে বলেছিলাম,

-আমি প্রেম করবো না আর আব্বু প্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে দিবেন না। আপনি যথেষ্ট স্নার্ট আমার থেকেও ভালো মেয়ে পাবেন।
এংরি রিয়েক্ট দিয়ে সে জবাব দিয়েছিল,

-ভালো মেয়ে না আমার আপনাকেই লাগবে।

-আমাকে বিয়ে করে আপনার লাভ কি?

-আপনার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে। একমাস যে কথা বলেন নাই আমার অসহ্য যন্ত্রণা হতো। আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।

তাকে রিজেক্ট করেছিলাম আমি। মাস ছয়েক পর অনেক কষ্ট করে আমাকে রাজি করায়।

আমাদের সম্পর্ক শুরু হয়। সে রোজ একটা কথা বলতো,
-আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না তো? আমি কিন্তু শেষ হয়ে যাবো।

আমি যখন কোথাও যেতাম গাড়ি করে সে সবসময় কলে থাকতো। কারণ একটাই যদি আমার কোনো বিপদ হয়। আমাকে যদি কেউ টিজ করে। হাসতে হাসতে তাকে বলেছিলাম,
-তুমি কোথায় আর আমি কোথায় তো তুমি আমাকে সাহায্য কিভাবে করবা?

– নিজে সাহায্য করতে না পারি অন্তত কাউকে কল করে সাহায্য করতে বলতে তো পারবো। তুমি কোথাও গেলে আমার বড্ড টেনশন হয়।

তার সাথে আমার প্রেমটা ছিলো মেসেজিং, অডিও কলে কথা বলা, ভিডিও কলে কথা বলা। তার জন্য কখনো আমি নেট অফ করতে পারতাম না। মাঝে সে সারারাত ভিডিও কলে থাকতো আর আমি ঘুমিয়ে থাকতাম৷ কারণ টা হলো সে মাঝে মধ্যে আমাকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখতো। একবার সকালে ঘুম থেকে উঠে নেট অন করে দেখি ৫০+ মেসেজ আর কল। তাড়াতাড়ি কল ব্যাক করি। রিসিভ করে কেঁদে দিয়েছিল। সে স্বপ্নে দেখেছে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমাদের সম্পর্কেও মান অভিমান ছিলো। কিন্তু সে আমার সাথে কথা বন্ধ করতো না। আর নেট অফ করতে দিতো না।

আমাদের বিয়েটা এতো সোজা ছিলোনা। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। সম্পর্কের ২ বছর চলে। আমিও কলেজ শেষ করে ভার্সিটি ভর্তি হই৷ বাবা একদিন হুট করে বলে আমাকে নাকি পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। তাকে কল দিলাম বললাম,

-তুমি কবে দেশে আসবা?

-৩ বছরের আগে না। কাঁদতে কাঁদতে বললাম,

-আমাকে আজ দেখতে আসবে। সে মৃদু হেসে বললো,
-আরে বোকা দেখতে আসলেই বিয়ে হয় না। তুমি তো তোমার বাবার অবাধ্য হবে না। কোনো না কোনো ভাবে বিয়ে ভেস্তে যাবে।

যথারীতি তারা আসলো পছন্দ করলো এবং আংটি পড়িয়ে চলে গেলো৷ রুমে এসে দরজা আটকে তাকে আংটির ছবি পাঠিয়ে বললাম,

-তুই বলেছিলি না দেখতে আসলে বিয়ে হয়ে যায় না? দেখ বিয়ে হয় কি না। আসল কথা তুই কখনো আমাকে ভালোই বাসস নাই টাইম পাস করতে আসছিলি। না হলে দেখতে আসবে শুনে তোর ভয় পাওয়ার কথা ছিলো। তুই খুশি ছিলি। যা তোরে মুক্ত করে দিলাম। আমাদের পথচলা এতটুকুই ছিলো। আল্লাহ্ হাফেজ। ব্লক করে দিছিলাম আবার তাকে।

৩ দিন পর একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। মেয়ে কান্না কাটি করে বলে আপনি রূপন্তি তো? বললাম, জ্বি আমিই রূপন্তি। কিন্তু আপনি কে? সে কোনো রকম কান্না থামিয়ে বলে, সে রাফাতের বোন। যার সাথে আমার দীর্ঘ ২ বছরের সম্পর্ক। তাকে ৩ দিন যাবৎ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ইতালি থেকে তার রুমমেট বলেছে লাস্ট সে আমার সাথে কথা বলেছে। তারপর একটা মেসেজ পড়ে পাগলামি শুরু করে ব্যাগ গুছিয়ে কোথাও একটা চলে গেছে আর আসে নাই । ওনার কাছে আগেই আমার নাম্বার ছিলো। তাই সুবিধা হয়েছে। সে আবার বলে, আপনার কথা ভাইয়া অনেক বার বলেছে। আমি জানি না আপনাদের মাঝে কি ঝামেলা হয়েছে। আমার ভাইটা খুব নরম মনের খুব আবেগী।আপনি প্লিজ একটা কল করেন না। না হলে সে কিছু একটা করে বসবে। আমার মাকেও এসব বলতে সাহস হচ্ছে না। তাকে সামলাতে পারবো না।

একে তো বিয়ের টেনশন। তার ওপর প্রিয় মানুষটার নিখোঁজ হওয়ার খবর নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছিলো। এমনিতেই ৩ দিনের নাওয়া খাওয়া নেই। হোয়াটসঅ্যাপে আনব্লক করে দেখি তার অজস্র মেসেজ। মেসেজ গুলো কি তা আর নাই বা বলি। মেসেজ দেখে কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠল। তড়িঘড়ি করে তাকে ফোন লাগালাম ফলাফল শূন্য। তার নেট অফ। আর নাম্বার বন্ধ। রাতে চোখের পানিতে বালিশ ভিজানো ছাড়া উপায় ছিলো না। ঠিক ৪ দিন পর সে বিধ্বস্ত অবস্থায় আমার বাড়িতে হাজির হয়। আমাকে দেখা মাত্র শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কাঁদতে কাঁদতে তার হেঁচকি উঠে। ধরা গলায় বলে,

-আমাকে একা করে দিও না। আমি মরে যাবো।

আমাদের বাড়ি যেহেতু গ্রামে আশেপাশের সব মানুষ চলে আসে। আর অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। বাবা কোথা থেকে খবর পেয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি আসে। সব শুনে রাগে আমাকে চড় লাগায়। সে বাবার পা জড়িয়ে বলে,

-মারার হলে আমাকে মারুন ওকে মারবেন না। আপনার মেয়েকে আমায় ভিক্ষা দিন। ওকে না পেলে আমি শেষ হয়ে যাবো।

একে তো বিয়ে ঠিক তার ওপর আবার প্রেম বাবা পছন্দ করে না। আবার সে প্রবাসী। তাকে বাবা বাড়ি থেকে চলে যেতো বলল। আমি শুধু তাকে বলেছি,
-তুমি বাড়ি যাও তোমার জন্য তোমার পরিবার টেনশন করছে। সে হিংস্র হয়ে বলে,

-তুই যদি আমি বাদে অন্য কাউকে বিয়ে করিস আমি সু-ই-সা-ই-ড করবো। সে চলে যায় আর আমি হই গৃহবন্দী। আমার থেকে মোবাইলও কেড়ে নেওয়া হয়। এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি করতে করতে আমার সাথে একটা ছেলে দেখা করতে আসছে আবার আমাকে জড়িয়ে ধরছে একথা পৌঁছে যায় যে বাড়িতে আমার বিয়ে ঠিক হয় সেই বাড়িতে। পরদিন এসে তারা বিয়ে ভেঙে দিয়ে আংটি ফেরত নেন। আর যাওয়ার আগে আমাকে চরিত্রহীনা উপাধি দিয়ে যায়।

#চলবে ইনশাআল্লাহ

ভুলত্রুটি মার্জনীয়। কিছু কিছু কথা বাস্তব হলেও সম্পূর্ণ গল্প কাল্পনিক।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে