Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"স্বপ্ন হলেও সত্যিস্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-১৩

স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-১৩

স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-১৩
আফসানা মিমি

সচকিত হয়ে উক্ত ব্যক্তির চোখের আড়ালে নোনাপানির রেখাটা আলগোছে মুছে নিলাম। আমার কাছে হঠাৎ কে এলো? পিছনে ফিরে আপুকে দেখে অনেকটা চমকে উঠলাম। আমার পাশে এসে বসে আমার ডান হাতটা আপুর দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে কোন ভূমিকা ছাড়াই স্তিমিত গলায় বলতে লাগলো
—মানুষ আর কিছু সহ্য করতে পারলেও ভালবাসার মানুষটার অবহেলা কেউই সহ্য করতে পারে না। পারলেও খুব কম মানুষই পারে তা মুখ বুজে সহ্য করতে। হয়তো মহান আল্লাহ্ তা’আলা এমন করেই সৃষ্টি করেছেন তাঁর সৃষ্টিকুলকে। মানুষের মাঝে যেমন তিঁনি ভালবাসার অথৈ সাগর দিয়েছেন, তেমনি দিয়েছেন সেই সাগরে সাঁতার কাটার মতো অভিজ্ঞতা। নাহলে যে মানুষ ভালবাসার সাগরে ডুবে ডুবে মরতো!

একটা মানুষকে ভালবাসা যত সহজ, তা প্রকাশ করা তার চেয়েও বেশি কঠিন। তুমি সারাজীবন তাকে ভালবেসে যেতে পারবে কিন্তু না বলা পর্যন্ত তোমার ভেতরটা গুমরে গুমরে মরবে। সে এক অসহ্য অনুভূতি! ভালবাসার মানুষটা কাছে থাকলে যতটা সুখ সুখ লাগে, দূরে চলে গেলে ততটাই কষ্ট লাগে। না বলা যায় না সহ্য করা যায়। কাছে থাকলে মনে হবে সারাটাক্ষণ তার মুখটাই দেখতে থাকি এক পলকে। এর চেয়ে প্রিয় কাজ আর কিছু হতেই পারে না। তখনকার শিরশিরানি অনুভূতিটাও কেমন আপন আপন লাগে। তার চোখে চোখ পড়ার পর লজ্জায় মিইয়ে যেতেও যে সুখ সুখ অনুভূতিটা হয়ে থাকে তা অনুভব করতেও আনন্দ লাগে। তখন মনে হয় ইশ! জন্মটা বোধহয় স্বার্থক হলো তবে!

আপুর কথা যত শুনছিলাম ততই অবাকের শেষ সীমান্তরেখায় আরোহণ করছিলাম প্রত্যেকটা মুহূর্তে। কিন্তু সেই কারণটাও খুঁজছিলাম আপু হঠাৎ আমাকে এসব বলছে কেন? কি চলছে আপুর মনে?

দ্যাখো সানা, তুমি যাকে ভালবাসো তাকে যদি তোমার অনুভূতিগুলো বুঝাতে সক্ষমই না হও তাহলে ভালবেসে লাভটা হলো কি বলো তো? শুনো এমন ভালবাসা ভালো না যা তুমি নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করেও প্রকাশ করতে পারবে না। প্রকাশ না করতে পেরে মুহূর্তে মুহূর্তে একবার করে ভেতরে ভেতরে মরবে। কিছু কিছু সময় অপরপক্ষের মানুষটার আশা ছেড়ে দিয়ে নিজেই লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে সাহস করে গিয়ে বলে দিয়ে বুকটা হালকা করা উচিৎ। নয়তো বুকের ভেতর যে শত শত মণের পাথরটা রয়েছে তার ভারে আস্তে আস্তে তুমি মরতে থাকবে। তার চেয়ে ভালো হয় একটু বেহায়া হয়ে নিজের মন থেকে পাথরটা সরিয়ে হালকা হওয়ার রিস্ক নেওয়া। একটু বেহায়া হলে ক্ষতি কি?

আপুর কথাগুলো আমার মাথার ওপর দিয়ে কয়েক কিলোমিটার বেগে শো শো শব্দ করে চলে যাচ্ছে। তা যেন আমার চোখে মুখেও স্পষ্ট ভেসে উঠেছে। যা কিনা আপু লক্ষ্য করেছে। আমার অবাক হবার পালা বোধহয় তখনও শেষ হয়নি। তারপর আমার গালে হাত রেখে একটু মুচকি হেসে বললো
—সাহস করে যেহেতু ভাইয়াকে এতো ভালবাসতে পেরেছো আরেকটু সাহস করে তাকে তা বলে দিতে পারলে না বোকা মেয়ে?

বিস্ময়ে আমার মুখ হা হয়ে গেল। এতো শকড আমি জীবনেও হইনি। এমনকি শ্রাবণের ডায়েরি পড়েও না। আপু কিভাবে এটা টের পেল? এখন কি উত্তর দিব? থতমত খেয়ে বললাম
—কেক্…কে বব্…বলেছে আমি উন্…উনাকে ভাব্…ভাল…ভালবাসি?
আপু রহস্যময়ী হাসি হেসে আমার গাল থেকে এক বিন্দু পানি নিয়ে বললো
—এই চোখের পানির প্রত্যেকটা ফোঁটা বলে দিচ্ছে তুমি ভাইয়াকে ঠিক কতটা ভালবাসো!

আমার মুখে আর কোন কথা জোগালো না। বাকরুদ্ধ হয়ে বসে চোখের পানি বিসর্জন দিচ্ছি। আপুই নীরবতা ভাঙলো
—ভালবাসা কারো জীবনে আসে আশীর্বাদস্বরূপ হয়ে। আবার কারো জীবনে আসে অভিশাপ হয়ে। মহামূল্যবান ভালবাসাটা যে ধরে রাখতে পারে না তার পুরো লাইফটাই অভিশাপে ছেয়ে যায়। তার মতো অভাগা/অভাগী দুনিয়াতে আর একটিও নেই।

শেষ কথাগুলো বলার সময় খেয়াল করলাম আপুর গলাটা কেমন একটু কেঁপে কেঁপে উঠলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম
—আপু তোমার জীবনে ভালবাসা কি হয়ে এসেছে? আশীর্বাদস্বরূপ নাকি অভিশাপ।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


আপু আমার কথার কোন প্রতিউত্তর করলো না। চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইলো। চারপাশটা নীরব নিস্তব্ধ হওয়ায় আপুর লুকিয়ে চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলাটা কেবল টের পেলাম। আপুর প্রতি আগে কিছুটা ক্ষোভ ছিল ভাইয়ার কারণে। আস্তে আস্তে সেটা ফিকে হয়ে এসেছে। ভুল তো মানুষই করে তাই না? কিন্তু এখন কেন যেন আপুর কষ্টটা মেনে নিতে পারছি না। নিজের ভালবাসা না পেলেও মন চায়ছে আপুর ভালবাসার মানুষটাকে তার সাথে মিলিয়ে দিতে। কিন্তু আপু সব ভুলে মেনে নিতে পারবে তো? একবার চেষ্টা করলে ক্ষতি কোথায়?

—আপু এখনও ভাইয়াকে অনেক ভালবাসো তাই না?
আমার হঠাৎ এমন কথায় আপু বেশ চমকে গেল। সেটা তার চোখেমুখেই ভেসে উঠেছে।
—মা…মানে? কোন ভাইয়া?
—না আসলে বলছিলাম যে তুমি যাকে একসময় ভালবাসতে তাকে এখনও অনেক ভালবাসো কিনা জানতে চাইছি আর কি?
মুহূর্তেই আপুর চোখে নোনাপানির উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেল। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে আমার চোখের আড়ালে পানিটা মুছে নিল। আপু মনে করেছে আমি তা টের পাইনি। আপু আমি এতোটাও বোকা না।
—জীবনে যতবারই ভালবাসা আসুক না কেন প্রথম ভালবাসার কথা কখনও ভুলা যায় না। প্রত্যেকটা কদমে কদমে মনে পড়বে তার কথা। মনে পড়বে কোথায়, কখন পায়ে পা মিলিয়ে তার সাথে হেঁটেছিলে! মনে পড়বে প্রথম হাত ধরার কথা। মনে পড়বে কতরাত জেগে হাজারও স্বপ্ন বুনতে মানুষটাকে নিয়ে। কিভাবে মনের প্রত্যেকটা অলিগলিতে বিচরণ করতো তা মনে পড়লে বুকে সূক্ষ্ম চিনচিনে ব্যথা টের পাবে।

বলতে বলতেই আপু কেঁদে দিল। আমি আপুর হাঁটুর সামনে ফ্লোরে বসে মিনতিস্বরে বললাম
—প্লিজ আপু তোমার কষ্ট মেনে নিতে পারছি না আমি। তুমি একটাবার উনার সাথে কথা বলে দেখো! শেষবারের মতো একটা চেষ্টা তো করতেই পারো তাই না?
আপু আমাকে জোর করে ফ্লোর থেকে উঠিয়ে তার পাশে বসিয়ে বললো
—আমার কথা বাদ দাও। আমার জন্য চিন্তার কোন কারণ নেই। আমি ঠিক আছি সানা। শুনো তোমাকে একটা কথা বলি ভাল যেহেতু বেসেছো তা প্রকাশ করে দাও। নয়তো কিছুতেই শান্তি পাবে না তুমি। মনে হবে ভেতরে ভালবাসা নামক একটা ছোট্ট পাখি ডানা ঝাপটে সারাক্ষণ মুক্ত হবার আশায় ছটফট করতে থাকবে। মনের দরজা বন্ধ বলে পাখিটা বাইরে বেরুতে পারছে না। তাকে আঁটকে না রেখে মুক্ত করে দাও। ছটফটানি থেকে বাঁচার এই একটাই উপায়।

আপুর কথা শুনে আবারও শ্রাবণের কথা মনে পড়ে গেল। মানুষটা কেমন পাষাণ! যাওয়ার আগে না একটা টু শব্দ করেছে আমার সাথে, না এক পলকের জন্য একটু তাকিয়েছে! মন বলে কি আল্লাহ্ তাকে কিছু দেননি? কেমন পাষণ্ডর মতো আচরণ করেছে সবসময়!

—আঙ্কেল, আন্টি কালকে আমার ভাইয়া আসবে।
ডিনারের টেবিলে বসে কথাটা সবার উদ্দেশ্যে বলে আপুর দিকে তাকালাম। দেখলাম মুখে লোকমা তুলার ডান হাতটা মুখের সামনেই থেমে গেছে। আমার চোখে চোখ পড়ার আগেই চোখ সরিয়ে নিলাম। আঙ্কেল বললেন
—ঠিক আছে আসতে বলো। কতদিন হলো দেখি না!
—আসলে আঙ্কেল আপনাদের একটা কথা জানানো হয়নি।
আপু জিজ্ঞাসা করলো
—কি কথা?
—কালকে ভাইয়া আমাকে নিতে আসবে। একবার বলেছিলাম না ভাইয়ার কোম্পানি থেকে ভাইয়াকে একটা ফ্ল্যাটবাড়ি দেওয়ার কথা! সেটা মাসখানেক আগে দিয়েছে। এতোদিন ভাইয়া বাসা গোছাতে সময় নিয়েছে। এখন গোছানো কমপ্লিট বিধায় ভাইয়া আমাকে তার কাছে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। তাছাড়া ভাইয়ার খাওয়া দাওয়ারও সমস্যা। নিজে রান্না করে খেতে পারবে না। কেনা খাবার খেলে ভাইয়ার প্রবলেম হয়। তাই আমি চাচ্ছি যত দ্রুত সম্ভব সেখানে চলে যেতে।
আন্টি বললেন
—তাই বলে কালকেই? এতো তাড়াহুড়োর কি আছে মামনি? ধীরে সুস্থে যাওয়া যাবে না? মাত্রই শ্রাবণ চলে গেল। বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। তুমিও চলে গেলে একেবারে খালি হয়ে যাবে ঘরটা।

আন্টি আপনাকে আমি কি করে বুঝাই যে আমি এতো তাড়াহুড়ো কিসের জন্য করছি! এখানে থাকলেই আমার বারবার শ্রাবণের কথা মনে পড়বে। ওর সাথে করা দুষ্টুমিগুলো মনে পড়বে। খেতে বসলে মনে পড়বে আমার সামনের চেয়ারটায় বসে কিভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতো আমার দিকে। ব্যালকনিতে গেলে মনে পড়বে তার ঘরের বারান্দা থেকে কিভাবে কফি খেতে খেতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো আর দুষ্টুমিভরা হাসি হাসতো। তার সেই হাসির কারণও আমার অজানা নয়। এ বাড়ির প্রত্যেকটা জিনিস আমাকে মনে করিয়ে দেবে শ্রাবণের কথা। শ্রাবণের এতো এতো স্মৃতির ভীরে আমি থাকতে পারবো না। কারণ আমার সহ্যশক্তি খুবই কম আন্টি, খুবই কম।

অন্যমনস্ক হয়ে এসব ভাবতে ভাবতে চোখের কার্নিশে পানি জমা হলো। একটু নিচু হয়ে সবার আড়ালে মুছতে মুছতে আপুর দিকে নজর গেল। দেখলাম আমার দিকেই কেমন একটা দৃষ্টি হেনে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি স্বাভাবিক হয়ে খেতে খেতে বললাম
—মন খারাপ করবেন না আন্টি। আমি কয়েকদিন পর পর এসেই আপনাদের সাথে দেখা করে যাব। আর তাছাড়া আপনারাও তো যাবেন ঐ বাসায়। কারণ এ শহরে আপনারা ছাড়া আর কে আছে আমার আপন বলেন আন্টি! আমারও খুব খারাপ লাগছে আপনাদের ছেড়ে চলে যাব বিধায়। না পারতে যেতে হচ্ছে আমার। যদি পারতাম তাহলে যেতাম না সত্যি। আমার ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ বাড়িতে..
আপুর দিকে তাকিয়ে থেমে গেলাম। আপু বোধহয় বুঝতে পেরেছে আমি কি বলতে চেয়েছি এবং কেন বলতে চেয়েছি! কোনমতে খাওয়া শেষ করেই রুমে চলে আসলাম।

কষ্ট করে আজ রাতটা পার করতে পারলেই হলো। শ্রাবণের স্মৃতি আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বুকের ভেতরটাও কেমন ফাঁকা লাগছে। কালকে এ বাড়ি থেকে চলে যাওয়া মানেই শ্রাবণের স্মৃতি থেকে নিজেকে মুক্তি দেওয়া। যেদিকেই তাকাচ্ছি সেদিকেই যেন শুধু শ্রাবণকেই দেখতে পাচ্ছি। এই দেখছি শ্রাবণ মুচকি হাসছে আবার এই দেখছি আমার দিকে কেমন রাগ রাগ হয়ে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। যা দেখে আমার ভেতরের দহনটা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে।

“প্রাণ কাঁদে হায় আজ জানাতে বিদায়।”
সাথী ভুলো না আমায় ভুলো না
থাকবো আশায়…আমি তোমারই আশায়
সাথী ভুলো না আমায় ভুলো না
মনের মাঝে তুমি…এই মনের মাঝে তুমি।”

দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে সচকিত হয়ে সেদিকে তাকিয়ে দেখি আপু ঠোঁটের কোণে একটা হাসি ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুই মগ কফি হাতে। আপুর এই হাসিটা আমার অনেক প্রিয়। এভাবে যখন হাসে তখন ঠিক নয়নতারার মতো দেখতে লাগে আপুকে।

—বাইরে দাঁড়িয়ে কেন আপু? ভেতরে আসো!
—কি করছিলে?
—তেমন কিছু না। এই রাতের বেলা কফি!
—হ্যাঁ। কেন খাবে না?
—রাতে চা, কফি পান করলে আমার ঘুমের বারোটা বাজে।
—তাহলে কি ফেরত নিয়ে যাব? মন খারাপ করে
—একদিন খেলে কোন সমস্যা হবে না। আর যেহেতু কালকে আমি চলে যাব শেষবারের মতো তোমার এই আবদারটা রাখতেই পারি, কি বলো!
—হ্যাঁ, তবে আরো একটা আবদার রাখতে হবে তোমাকে।
—সেটা আবার কি?
—ব্যালকনিতে বসি?
—হ্যাঁ চলো!

কফিতে চুমুক দিতে দিতে শ্রাবণের ঘরটার দিকে তাকালাম। ঘরের ভেতর বাহির পুরোটাই অন্ধকার। আচ্ছা শ্রাবণ কি আমাকে মনে রাখবে? হঠাৎই আপুর দিকে চোখ যাওয়ায় দেখি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। থতমত খেয়ে এদিক সেদিক চোখ ঘোরাচ্ছি। আপু মুচকি হেসে বললো
—ভাইয়ার কথা মনে পড়ছে, তাই না?

কি বলবো আমি? আসলেই যে শ্রাবণের কথা মনে পড়ছে! নিশ্চুপ বসে থাকায় আবারও বললো
—কতদিন যাবৎ ভালবাসো ভাইয়াকে?
কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বললাম
—ভালবাসা দিনক্ষণ ঠিক করে হয় না। হুট করেই হয়ে যায় ব্যাপারটা। কাউকে বছরের পর বছর চোখের সামনে দেখলেও তার প্রতি ভালবাসা জন্মায় না। আবার কখনওবা কাউকে এক পলক দেখলেই সে অজ্ঞাত ব্যক্তিটা মনের পুরোটা দখল করে নেয় অজান্তেই।
—এতোই যেহেতু ভালবাসো তাহলে বলোনি কেন?
—সব কথাই কি মুখে বলে দিতে হয় আপু? এইপক্ষের মানুষটার কর্মকাণ্ডে কি সেই অপরপক্ষের মানুষটা বুঝে না তার প্রতি কতটা কনসার্ন সে? চোখের ভাষায়ও কি বুঝে না ঠিক কতটা ভালবাসে বিপরীতপক্ষের মানুষটা? আর কতটা ভালবাসলে সে বুঝতে পারতো যে আমি তাকে কতটা ভালবেসে ফেলেছি? আল্লাহ্ কি তাকে সেই বুঝ ক্ষমতা দেননি? কিভাবে ছেড়ে যেতে পারলো একটি শব্দ উচ্চারন না করে, একটিবার দৃষ্টি বিনিময় না করে? অন্তত চোখের ভাষায় হলেও বুঝিয়ে দিতাম কতটা ভালবাসি? এ অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে কিভাবে থাকবো আমি বলতে পারো?
—শুনো সানা, আল্লাহ্ তাঁর প্রত্যেকটা প্রাণীকে আলাদা আলাদা রূপ, দোষ, গুণ, বৈশিষ্ট্য ও বুদ্ধিমত্তার সমন্বয়ে সৃষ্টি করেছেন। কাউকে প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই দিয়েছেন। আবার কাউকে যতটুকুই দিয়েছে সেটুকুই সে কাজে লাগাতে ব্যর্থ, বুঝতে ব্যর্থ। তাকে দোষী করে কি ফায়দা বলো! হয়তো প্রকৃতি চায়নি এমন কিছু হোক! এরচেয়ে ভালো কিছু হয়তোবা অপেক্ষা করে আছে তোমার জন্য।
—আমার জন্য এরচেয়ে খারাপ কিছুও তো অপেক্ষায় থাকতে পারে, তাই না আপু? প্রকৃতি কি সবসময়ই মানুষকে ভালো কিছুই উপহার দেয়? আমি দেখেছি যে খাস দিলে কিছু চায় তার সাথেই প্রকৃতি সবসময় উল্টাপাল্টা কিছু করে।
—আল্লাহ্ যা করেন তা তাঁর বান্দার মঙ্গলের জন্যই করেন। হয়তো প্রকৃতির মাধ্যমেই তিঁনি মানুষকে বুঝিয়ে দেন কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক! আল্লাহর লীলাখেলা বুঝা বড়ই দায়। আর তাছাড়া সবসময় মনে এমন নিগেটিভ চিন্তাভাবনা নিয়ে ঘোরাঘুরি করো না তো! সবসময় সবকিছু পজিটিভ ভাববা। দেখবা যা হবে সব পজিটিভই হবে।

আমার হঠাৎ মনে পড়লো আপু তখন বলছিল কি একটা আবদার রাখতে যেন! তাই জিজ্ঞাসা করলাম
—আপু তখন না আরো কি একটা আবদার রাখতে বলছিলে?
—হ্যাঁ বলছি।
কফির মগটা সোফার হাতলে রেখে আমার দিকে ফিরে বেশ সিরিয়াস মুড নিয়ে বললো
—শুনো, মনোযোগ সহকারে শুনবে এবং আমার এই আবদারটা তোমায় রাখতেই হবে।
—আগে বলো কি আবদার?
—তোমার মনে যা চলছে… আই মীন ভাইয়ার প্রতি তোমার যা ফিলিংস, কতটা ভালবাসো ওকে, ওকে ছাড়া থাকতে কেমন লাগছে তোমার সব বলে দাও ভাইয়াকে। দেখবে মনের ওপর থেকে ভারী পাথরটা সরে গিয়ে সেখানে হালকা লাগবে। আশা করি ভাইয়াকে বুঝিয়ে সব বুঝতে পারবে। নয়তো এভাবে যত দিন গড়াবে ততই কষ্ট পাবে তুমি।
—আমি সেধে সেধে কেন বলতে যাব আপু? ওর আত্মসম্মান আছে আমার কি আত্মসম্মান নেই। ও যদি কিছু না বলে দূরদেশে চলে গিয়ে থাকতে পারে আমায় ছাড়া। তবে আমি কেন পারবো না তা? আমিও পারবো। তাকে দেখিয়ে দেব আমিও পারি। শুধু সে নিজেই পারে না।
—এই যে জেদ ধরছো সেটা কিন্তু ভালো না। এই ইগো নামক অপ্রয়োজনীয় ব্যাপারটার জন্য হাজারো সম্পর্কে ফাটল ধরে।
—তাহলে তুমিও একবার শেষ চেষ্টা করে দেখো না আপু! প্লিজ আর গোঁ ধরে বসে না থেকে নিজের ভালবাসার মানুষটাকে নিজের আঁচলে বেঁধে নাও কেউ এসে ভাগ বসাবার আগেই। নয়তো পরে আফসোসের অন্ত থাকবে না।

আমার কথাগুলো শুনে যেন আপু বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। কয়েকটা মুহুর্ত আপু নিশ্চুপই বসে রইলো নতমুখে।

চলবে…….

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ