স্বপ্ন সারথি পর্ব: ০২

0
1312

#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০

স্বপ্ন সারথি পর্ব: ০২
টি এ অনন্যা

“তুই আজ আবার কোথায় বের হচ্ছিস? আমাদের সাথে তুই কি যাবি না?”
“আরে কী বলছো! যাবে না মানে? ও কাল রাতেও আমাকে কথা দিয়েছে যাবে।”
” তোমার একগুঁয়ে ছেলের আর কথা! দেখছো না সে দিব্যি সেজেগুজে এসেছে কোথাও বের হওয়ার ফন্দি তার।”
“এই খবরদার একদম খোটা দেবে না। ছেলেকে আমি পেটে ধরলেও সন্তান আমাদের দুজনের। তুমি বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারো না। তবে এটা অন্তত স্বীকার করো স্বভাব কিন্তু তোমার মতো হয়েছে আমার মতো নয়।”
“ব্যাস, ঘরেও শুরু হয়ে গেলো তোমার নারীবাদী আন্দোলন। আর কী বললে আমার স্বভাব হাসালে প্রিয়নের মা!”
“শোনো, নারী আন্দোলন শুধুমাত্র বাইরের জন্য নয়, আমাদের আন্দোলন নারী-পুরুষ বৈষম্য দূরীকরণের আন্দোলন। তাই এই আন্দোলন ঘর থেকেই শুরু করতে হবে।”

প্রিয়নের বাবা অনিক হায়দার স্ত্রী শাহনাজের দিকে করজোড় করে বললেন, “মাফ চাই গিন্নী। তোমার আন্দোলন করতে হবে না। মেনে নিলাম আমাদের দু’জনের ছেলে প্রিয়ন। আর আন্দোলন করো না। এবার বলো তোমার ছেলে না মানে আমাদের ছেলে আমার স্বভাব কী করে পেল?”
শাহনাজ রাগী ভাব নিয়ে বললেন, “হয়েছে আর ঢং করতে হবে না। তোমার ছেলে কীভাবে তোমার স্বভাব পেল সেটা কী এখন আমাকে বুঝিয়ে বলতে হবে?”
অনিক হায়দার বললেন, “না থাক বাপু আমায় কিছু বলতে হবে না। কিন্তু দেখো তোমার ছেলে কী সুন্দর খেয়ে নিচ্ছে! এদিকে যে তার মা আমাকে এভাবে ধুয়ে দিচ্ছে তার কোনো হুশ নেই। বাপ একটু তো প্রতিবাদ করতে পারিস বাবার জন্য।”
শাহনাজ আবার চেচিয়ে বললেন, “কী বললে তুমি? আমার নামে ছেলের কাছে নালিশ করছো?”
প্রিয়ন এতক্ষণে মুখ খুলল, “প্লিজ মামনি, বাবাই অন্তত খাওয়ার টেবিলে তোমাদের এই ঝগড়াগুলো অফ রাখো। তোমাদের ঝগড়া, আন্দোলন যা আছে সব ঘরের ভিতরে রেখো। এখন আমাকে খেতে দাও শান্তি মতো। জানো না আমার প্রিয় প্রবাদ- সবার উপরে খাবার সত্য তাহার উপরে নাই।”
শাহনাজ অভিমানী ভঙ্গিতে আহ্লাদী স্বরে বললেন, “তুইও তোর বাবার মতো বললি আমি আন্দোলন করি!”
“মামনি, প্লিজ এবার অন্তত এই ব্যাপারটা ক্লোজ করো। বলেছি তো আগে আমি খেয়ে নেই। আর তোমরাও খেয়ে নাও।
” আচ্ছা ঠিক আছে এইতো আমি খাচ্ছি। আর আমি কথা না বললে তোর মামনিও চুপ হয়ে যাবে। কিন্তু এখন আগে বল তুই যাচ্ছিস কোথায় সেজেগুজে। কাল না বললি তুই আমাদের সাথে তোর খালামণির বাসায় যাচ্ছিস!”
“হ্যাঁ যাবো তো। আমি কি একবারও না করেছি তোমাদের যাবো না?”
প্রিয়নের মা বললেন, “আমরা তো যাচ্ছি রাতের ট্রেনে। তোর জন্যই তো তোর বাবা ট্রেনের টিকিট কাটলো। কিন্তু তুই এখনই তৈরি হয়েছিস কেন?
” আরে ধুর আমি তৈরি হলাম কোথায়? একটা জরুরি কাজে বের হব একটু। তাই তৈরি হয়েছি।”
অনিক হায়দার অবাক ভঙ্গিতে জিজ্ঞাসা করলেন, “মানে কী এখন তুই বের হচ্ছিস? ফিরবি কখন? তুই একবার বের হলে তো আর আসার নাম নিবি না।”
“আমি বিকেলের আগেই ফিরব। তোমরা তৈরি থেকো।”

“কী হলো কিছু বলছো না কেন? কতক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসা করছি। এমন চুপ করে আছো কেন?”
রিয়ানার কথায় বিরক্ত হয়ে পূর্ণতা বলল, “রিয়ানা প্লিজ, এবার চুপ থাকো তো। বললাম তো আমার কিছু হয়নি। আমাকে নিয়ে এত ভাবতে হবে না।”
“দেখো পূর্ণতা, তোমাকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। প্রায়শই তোমার বিমর্ষতা আমাকে ভাবায়। প্লিজ আমার সাথে শেয়ার করো। একটা কথা আমার চেয়ে হয়তো তুমি ভালো জানো আকাশের মেঘ যত গুমোট হয় আকাশ তত বিমর্ষ থাকে, কিন্তু যখন মেঘ বৃষ্টি কনা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে প্রকৃতির মাঝে তখন আকাশের গুমোট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, ফিরে আসে তার নির্মলতা। তাই নিজের মনের আকাশে জমানো কষ্টগুলো নিজের মাঝে আবদ্ধ না রেখে শেয়ার করো ভালো লাগবে।”
পূর্ণতা কিছুক্ষণ নির্বাক থেকে পরিমিত বাক্যে উত্তরে বলল, “হুম।”
রিয়ানা বুঝতে পারলো এভাবে কিছুই করা যাবে না পূর্ণতার জন্য। সে মনে মনে বলল, ” তুমি আমায় কী ভাবো আমি জানি না তবে আমি যে তোমায় আমার হৃদয়ে বড় বোনের জায়গায় বসিয়েছি৷ তোমার বিমর্ষতা আমায়ও কষ্ট দেয়। আমি বুঝতে পারি তোমার কিছু একটা লুকানো অতীত আছে। কিন্তু তুমি তা বলতে চাচ্ছো না। আমি যে করেই হোক তোমার দুর্বিষহ অতীত থেকে বের করে আনতে চেষ্টা করব। কিন্তু তার আগে জানতে হবে কী আছে তোমার অতীতে।”

সকালে পূর্ণতা রাগ করে না খেয়ে বেরিয়েছে। সেই থেকে রেহানা বেগমের মনটা বড় আনচান করছিল মেয়ের কথা ভেবে। তাই ঘরের কাজ সেরে দুপুরের মেয়ের প্রিয় খাবার গুলো রান্না করছিলেন। সেই সময় হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজে প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে ছুটলেন সদর দরজার দিকে।
“ভাবি সরি এই সময়ে আপনাকে বিরক্ত করতে হলো। কিছু দরকারী কথা ছিল তাই আসলাম।”
ভর দুপুরে কারও বাসায় যাওয়ার আগে ভাবা উচিত সে হয়তো কিছু না কিছু কাজে ব্যস্ত। যতই জরুরি প্রয়োজন থাক সেটা বুঝার মতো ন্যূনতম জ্ঞান থাকা উচিত । কিন্তু পূর্ণতাদের পাশের ফ্ল্যাটের আন্টির সেই জ্ঞানটুকু আদৌ নেই। সে সময়ে অসময়ে কারণে অকারণে যখন খুশি এসেই ফিক করে হেসে দিয়ে বিলেতিদের শেখানো অতিপ্রচলিত সরি শব্দটি বলে দিবেন। এই সরি শব্দের মাঝে যেন শ খুনও মাফ!
রেহানা ভদ্রতার খাতিরে সৌহার্দ্যপূর্ণ হাসি দিয়ে তাকে ভিতরে নিয়ে বসিয়ে বললেন, “আপা একটু বসুন।আমি চুলোটা কমিয়ে আসতেছি।”
“আচ্ছা ভাবি যান আপনি। কোনো সমস্যা নেই আমি বসছি। আমি সময় নিয়েই এসেছি।”
রেহানা রান্নাঘর থেকে ফিরে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, “তা আপা এই ভর দুপুরে কী মনে করে? ”
“কাল যে আপনাকে বলে গেলাম ভাবি ভুলে গেলেন? কিছু বললেন না তো আমাকে। আপনি না বললেন আজ সকালে আমায় জানাবেন। আপনার আশায় বসে থেকে আমি নিজেই এলাম।
রেহানা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে উত্তরে বললেন, ” আসলে আপা বলছিলাম কী। মানে পূর্ণতা.. ”
রেহানার কথা শেষ হওয়ার আগেই তিনি বলতে শুরু করেন, “আরে ভাবি আপনি কী বলুন তো? আপনার মেয়ে আপনি সিদ্ধান্ত নিবেন। তাতে আবার পূর্ণতার মতামতের কী আছে!”
“হ্যাঁ আপা মেয়ে আমার কিন্তু জীবনটা ওর। তাই ওর জীবনের কোনো সিদ্ধান্ত আমি একা নিতে পারি না।”
“আপনি মা হয়ে যা সিদ্ধান্ত নিবেন তাই তো ঠিক। ও কী-ইবা বুঝে জীবনের। ”
“আপা, আমি আমার মেয়েকে জীবনের সব শিক্ষা দিয়েই গড়ে তুলেছি যাতে সে নিজে তার জীবন সম্পর্কে বুঝে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমি আর কয়দিন।”
“মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন এই ঢের। ছেলে তো নয় যে তার মন মতো আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাছাড়া এখন কী তার উপর আপনার কোনো অধিকার নেই না-কি?”
“হুম অবশ্যই অধিকার আছে। তবে ওই যে বললেন না উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছি। কেন করেছি জানেন? মেয়েকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য এবং যাতে জীবনে চলার পথে ভালো মন্দ নিজের মতামতকে কাজে লাগাতে পারে সেজন্যই করেছি। আমি কখনো ছেলে পার্থক্য করি না। মেয়ে হয়েছে বলে কী হয়েছে? ছেলের মতামতকে প্রাধান্য দিতে পারলে মেয়ের মতামতকে কেন দিতে পারবো না? আপা এখন দিন বদলেছে তাই এসব ছেলে-মেয়ে ধ্যান ধারণাও বদলেছে। যাহোক আপনি বলেছিলেন বিধায় আমি ওকে জানিয়েছিলাম এবং আমিও কিছুটা আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু দুঃখিত এখন আর এসব নিয়ে ভাবছি না।”
“ভাবি শুনুন……..

চলবে………
ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আপনার গঠনমূলক মন্তব্য লেখার অনুফপ্রেরণা।
আগের পর্বের লিংক

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share