স্বপ্নীল
৬৭
কারো পায়ের আওয়াজ শুনে নীল ঘুরে তাকায়।স্বপ্ন দাঁড়িয়ে আছে।স্বপ্নকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।কেমন যেন একটা উষ্কখুষ্ক লাগছে। চেহার কী বেহাল করেছে? স্বপ্ন নীলের পাশে বসে।নীলের হাত দুটো নিজের হাতের বন্দি করে বলল,
-” আমি জানি ওই গুলো তোমার মনে কথা ছিল না। তোমাকে সবাই বাধ্য করেছে?”
নীল চোখ বন্ধ করে।গড়িয়ে পড়ছে চোখের পানি।হঠাৎ করে স্বপ্নকে ঝাপটে ধরে।কান্না করে দেই। স্বপ্ন নিরবে কান্না করছে।স্বপ্নের চোখের পানি নীলের ঘাড়ে পড়ছে।নীল বুঝতে পাচ্ছে স্বপ্ন কান্না করছে।তার স্বপ্ন কান্না করছে।মানতেই পারছে না।কেন এমন হলো? কী দোষ করেছে তাঁরা।তাঁরা শুধু ভালো বেসেছিল।কেন তাঁদের ভালোবাসায় সবাই এত বাঁধা দিচ্ছে।আগের পুরানো কথা ভুলে যেয়ে নতুন করে সম্পর্ক করলেই হয়।কিন্তু তাঁরা সেটা করবে না।তাঁরা উঠে পড়ে লেগেছে তাঁদেরকে আলাদা করার জন্য।তাদের কে আলাদা করে কী সুখ পাবে?
নীল স্বপ্নকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
-” চলে যাও স্বপ্ন।”
-” চলে যাওয়ার জন্য আসিনি।যেতে হলে তোমাকে নিয়েই যাবো।”
-” দাদু যদি জানতে পারে তুমি আমায় রুমে।তোমায় মেরেই ফেলবে।”
-” তোমার সামনে মরতে ও রাজি আছি।”
-” সেটা সহ্য করার ক্ষমা নেই আমার।তুমি চলে যাও।দু’দিন পর আমার বিয়ে।”
দুহাতের আঁজলা দিয়ে নীলের মুখটা তুলে স্বপ্ন বলল,
-” তুমি না বলেছো। তুমি লালবেনারসি পড়ে আমার বউ হয়ে আমার ঘরে আসবে।তাহলে এখন কেন এমন করছো।”
-” সময় এখন আমাদের সাথে নেই।”
-” সময় আমাদের সাথে আছে।তুমি চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমাকে এক্ষুনি আমি নিয়ে চলে যাবো।”
এটা বলে হাত ধরে টান দিয়ে দাঁড়ায় করায় নীলকে।নীল হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
-” স্বপ্ন পাগলামি করো না।তুমি চলে যাও এখন।”
-” পাগলামি না, নীল।আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।তুমি বউ হয়ে অন্যের ঘরে যাবে মানতে পারব না আমি।শেষ হয়ে যাবো আমি।”
-” একদিন দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।”
স্বপ্ন নীলের পায়ের কাছে বসে পড়ে।নীল আঁতকে উঠে। সরে যায়।স্বপ্ন বলল,
-” আমি তোমার পায়ে পড়ি, নীল।তুমি চলো আমার সাথে।আমরা পালিয়ে যাবো অনেক দূরে। কেউ আমাদের খুজে পাবে না।”
নীল স্বপ্নের সামনে মেজেতে বসে পড়ে।স্বপ্ন হাত ধরে বলল,
-” স্বপ্ন তুমি যদি একটু হলে ও আমায় ভালোবেসে থাকো।তাহলে তুমি কখনো আমার সামনে আসবে না।”
-” এই নীল। তুমি এসব কী বলছো।তুমি জানো না তোমার সুর ওয়ালা তোমাকে কত ভালোবাসে।”
-” জানি না আমি।জানতে চাই না।তুমি যদি এখন না বের হও।তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দিব।”
স্বপ্ন আঁতকে উঠে বলল,
-” এসব বলো না নীল। এসব শুনলে আমি সইতে পারব না।আমি চলে যাচ্ছি।কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি নীল।আমি আবার আসব নীল।”
এটা বলে স্বপ্ন বারান্দা দিয়ে নেমে চলে যায়।নীল মেজেতে পড়ে কান্না করতে থাকে।স্বপ্ন সাথে এভাবে কথা বলতে তার খুব কষ্ট হয়েছে।
স্বপ্ন কিছুতে গ্রাম ছেড়ে যাবে না। গাড়ি রাস্তার পাশে রেখে।গাড়ির ডিকিতে উঠে শুয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।রোজ নিয়ম করে নীলের সাথে কথা বলা।একদিন লেট করে ফোন করলে। বকা-ঝকা করা।ঠিকমত খাওয়া দাওয়া না করলে বউয়ের মত ঝারি মারত
নীলের বিয়ে হয়ে গেলে কে তাকে আদর করে বকা দিবে।কে তাকে বলবে নিয়ম করে খেতে।চোখের কার্নিশ বেয়ে গাড়ির ডিকিতে স্বপ্নর চোখে জল পড়ছে।কেউ রুমের মধ্যে কান্না করছে।কেউ রাতে কালো আকাশকে স্বাক্ষীরে প্রেয়সী জন্য কান্না করছে।
-” আমি সহ্য করতে পাচ্ছিনা নীলের কষ্ট।ওর কষ্ট যেন আমার বুকের ভিতরে এসে লাগে!” সোহা চোখের জল বির্সজন দিয়ে বলল।তামিম সোহার কাছে এসে বলল,
-” এই সময় তোমায় এসব নিয়ে চাপ নেওয়া উচিত হবে না।তুমি শুধু শুধু টেনশন করো না।আমরা কিছু একটা করব।”
-” প্লিজ তুমি কিছু একটা করো।আমি জানি নীল স্বপ্নকে কতটা ভালোবাসে।স্বপ্নকে ছাড়া অন্যকাউকে বিয়ে করলে নীল জীবন্তলাশ হয়ে যাবে। বেঁচে থেকে ধূকে ধুকে মরণ যন্ত্রনা ভোগ করবে।”
তামিম সোহাকে জড়িয়ে ধরে।সে বলল,” চিন্তা করো না।আমাদের নীলের সাথে খারাপ কিছু হবে না।আল্লাহ রহমতে।সব ঠিক হয়ে যাবে।”
এটা বলে সে কিছুক্ষন চুপ হয়ে যায়।দাদা, বড় আব্বু কেন এমন করছে? তাঁরা কী দেখতে পাচ্ছে না তাদের আদুরে মেয়ের কষ্টে। নাকি রাগে, জেদে সেই বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছে।অন্যায়ের খারাপ করতে গেলে নিজের বেশি খারাপ হয়।তাদের এই জেদের কারণে না তাদের কে পস্তাতে হয়।তামিমের মন বলছে খুব খারাপ কিছু হবে।
★★★
-” ভাই কিছু একটা কর।স্বপ্ন এই কষ্ট আমার সহ্য হচ্ছে না।” তৃণ সমুদ্র কাঁধে হাত দিয়ে বলল।সমুদ্র মাথা কিছু আসছে না। কী করবে সে? নীল যদি এই বিয়েতে রাজি না থাকত কিছু একটা করা যেত।আর বাড়ির সবাইকে তে মানানো চেষ্টা করেছে,দাদা, চাচাদের জেদে কাছে তাকে হার মানতে হয়েছে।তৃণ আবার বলল,
-” স্বপ্ন সব সময় আমাদের উপকার করে এসেছে।আজ তার এই দুর্দিনে আমরা কিছুই করতে পাচ্ছি না।”
প্রাচ্য রোদের কোলে মাথা রেখে কান্না করছে।একদিকে তার বোন, আরেকদিকে তার প্রান প্রিয় বন্ধু।তার প্রিয় দুটো মানুষ আজকে খুব কষ্টে আছে।তাদের কষ্টে যেন প্রাচ্যর বুক ফেঁটে যাচ্ছে।ইচ্ছা করছে সব কিছু উর্ধেই রেখে নীল আর স্বপ্নকে এক করে দিতে।তৃণ কথা শুনে প্রাচ্য উঠে সমুদ্র কাছে এসে বলল,
-” ভাইয়া আমি আর সহ্য করতে পাচ্ছি না।তুমি কিছু করো।”
এটা বলে সমুদ্র বুকে হামড়ে পড়ে কান্না করতে থাকে।সমুদ্র জড়িয়ে নেয় প্রাচ্যকে।উপরে দিকে তাকিয়ে চোখের জল আটকানোর বৃথা চেষ্টা করছে। রোদ ও কান্না করছে।কেন তাদের প্রিয় বন্ধুর সাথে এমন হচ্ছে।তাদের বন্ধুমহল প্রিয় হলো স্বপ্ন।আজ সেই স্বপ্নর কষ্ট।সব বন্ধুরা উপলব্ধি করছে।কষ্ট আর চোখের পানি ফেলা ছাড়া কিছুই করার নেই কারো।
সমুদ্র স্বপ্নকে ফোন দিয়ে বলল,
-” তুই কোথায় স্বপ্ন।”
-” তোদের বাড়ির সামনে।”
-” তুই ওখানে থাক। আমরা আসছি।”
কিছুক্ষণ আগে শাহেদ সমুদ্রকে ফোন করেছে।এই দুইদিন স্বপ্ন কিছু খায়নি।সমুদ্র কে বলেছে জোর করে হলে কিছু খাওয়াতে। রোদ একটা হটপট করে স্বপ্ন’র জন্য রান্না করার ভাত,মাংস নিয়ে নেয়।বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় শামিম পিছু ডাকে তাঁদের কে? তিনি বললেন,
-” কোথায় যাচ্ছো তোমরা।”
সবাই চুপ হয়ে যায়।শামিম বলল,
-” আমার বাড়ি ছেলেমেয়ে হয়ে তোমরা ওই খুনি ছেলের জন্য ভাত নিয়ে যাচ্ছো।তোমাদের সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি।”
সবাই মুখকাচু মাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু সমুদ্র পারল না।সে বলল,
-” বড় আব্বু।সব কিছু একটা সীমা আছে। সেই সীমা লঙ্ঘন করা ঠিক না।”
শামিম হংকার ছেড়ে বলল,
-” বেয়াদব ছেলে।আমার মুখে মুখে তর্ক করো।”
-” আমি কোথায় তর্ক করলাম।আমি তোমাকে জাস্ট চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছি।”
শামিমের উচ্চবাক্যের কথা শুনে বাড়িরর সবাই বেরিয়ে আসে।শামিম এবার দ্বিগুন হুংকার ছেড়ে বলল,
-” তোমার স্পর্ধা দেখে আমি অবাক হচ্ছি।”
-” অবাক আমরা হচ্ছি।২০ বছর পুরানো একটা কাহিনি টেনে এনে সবার জীবন দুর্বিষহ করতে উঠে বসে লেগেছো।”
সোলোমান মির্জা ধমকের সুরে বললেন,
-” সমুদ্র।”
-” এভাবে ধমকিয়ে কয়জনকে চুপ করে রাখবে।একবার ভেবে দেখেছো।তোমাদের জেদে বসে নেওয়া এই সিন্ধান্ত ভবিষ্যৎ নীলের জীবন হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।”
শামিম এসে বলল,
-” তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না।আমার মেয়ে জীবন নিয়ে ভাবার জন্য আমি আছি।”
-” নীল যদি তোমার মেয়ে হয়ে থাকে।তাহলে সে আমার বোন।আমার বোনের লাইফ নিয়ে ভালোখারাপ বলার অধিকার আছে।”
এটা বলে সে একটু নরম গলায় দাদুকে বলল,
-” তোমার কাছে যখন স্বপ্ন’র বদনাম আমি করেছি।তখন কিন্তু তুমি আমাকে বুঝিয়েছো। স্বপ্ন খুব ভালো ছেলে। স্বপ্ন সাথে নীলের বিয়ে হলে খুব সুখি হবে নীল।তাহলে এখন কেন এমন করছো।দুটো জিবন। তোমাদের প্রতিহিংসা আগুন জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।”
-” তখন জানতাম না স্বপ্ন কার ছিল?”
-” বাবার পরিচয় জানার পর স্বপ্ন খারাপ হয়ে গেছে।এখন তো দেখছি তুমি দুমুখো সাপ।”
এটা বলার সাথে সাথে শামিম সমুদ্র গালে চড় মারে।উপস্থিত সবাই হকচকিয়ে যায়।শামিম চিৎকার করে বলল,
-” অসভ্য ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করে নষ্ট হয়ে গেছিস।বড়দের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় তা বোধহয় দিন কে দিন ভুলে যাচ্ছো।”
-” ভুলতে তোমরা বাধ্য করছো।”
এটা বলে বেরিয়ে যায়।তার পিছন পিছন সবাই যায়।স্বপ্ন কাছে সবাই পৌঁছায়।
প্রাচ্য আর রোদ জোর করে স্বপ্ন কে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়।
সমুদ্র বলল,
-” কী করবি এখন?”
-” নীল আমায় বলছে তাকে যেন ভুলে যাই।এত করে বুঝিয়েছি আমার সাথে চলে আসতে।কিন্তু নীল আমায় বলছে।আমি যদি তাকে ভালোবেসে থাকি।তাহলে যেন তার সামনে আর না যাই।”
তৃণ বলল,
-” হঠাৎ করে নীল কেন বদলে গেল? সকালে দেখেছি নীলকে।নীল বিয়ে করবে না বলেই চিল্লাচিল্লি করছে।আর সন্ধ্যায় তোর মুখের উপরে তোকে অনেক কথা বলেছে। এভাবে বদলে গেল কেন?”
প্রাচ্য বলল,
-” নিশ্চয়ই দাদু , বড় আব্বু নীলকে ব্লাকমেইল করেছে। তাই হয়তো বাধ্য হয়েছে।”
সবার মনে ধরেছে প্রাচ্য কথায়।স্বপ্ন আবার যায় নীলের রুমে।নীল স্বপ্নকে যা নয় তা বলে অপমান করে।পরে নিজের হাতে ছুরি চালিয়ে দিয়ে বলল,
-” তুমি এখন এখান থেকে না যাও।তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দিব।” এটা বলে নীল হাতে মধ্যে চালিয়ে দেই।তখন স্বপ্ন নীলের হাত থেকে চুরি ফেলে দিয়ে বলে।সে কখন আর আসবে না।
সবাই মিলে নীলের কাছে জানতে যায় আসলে তাকে কোনো ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে কী না।নীল তাদের সবাইকে যা নয় তা বলে অপমান করে।সবাই হেরে যায়।যেখানে নীল নিজেই চায় বিয়ে হোক। তাহলে অন্যরা কীভাবে সেটা আটকাবে।★★★
গায়ে হলুদের দিন রাতে নীল আবার তার বাবা, দাদুর কাছে যায় বাবার পায়ের কাছে ধরে বলল,
-” একদিন নিজেকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি।কিন্তু আমার মন স্বপ্নকে ছাড়া কিছুই মানছে না।আব্বু স্বপ্নকে ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করতে পারব না। তোমরা এই বিয়ে ভেঙে দাও।”
শামিম মেয়েকে টেনে দাঁড় করিয়ে চড় মারে।কোনোদিন এই ফ্যামিল কেউ তার গায়ে হাত তুলেনি।আজ সবাই তার গায়ে হাত তুলছে।শামিম চিৎকার করে বলল,
-” নিলর্জ্জ মেয়ে।বাবা সামনে এসব বলতে লজ্জা করছে না তোমার।”
-” না, আমার লজ্জা করছে না।একবার কেন একশো বার বলতে পারব। আমি এই বিয়ে করব না।দরকার হলে পালিয়ে যাবো।”
এটা বলে চলে যেতে নিলেই শামিম ডাকে দাঁড়িয়ে যায় নীল।তিনি বললেন,
-” তুই যদি এই বিয়ে না করিস। পালিয়ে যাস।তোর পালিয়ে যাওয়ার কথা যখন শুনব।তখন এই বিষ খেয়ে আমি মরে যাবো।” বিষের শিশি দেখিয়ে বলল।নীল বিষের শিশির দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়।বোতলের গায়ে লেখা আছে ‘ বিষ’ সেদিন তার বাবা তাকে এইটা বলে ব্ল্যাক মেইল করেছে।তাই বাধ্য হয়ে সবার সামনে স্বপ্নকে অপমান করেছে। তিনি আবার বললেন,
-” এবার তোর হাতে আমার জীবন। বাবার জীবন বাঁচাতে চাস না কি পালিয়ে যেয়ে স্বপ্নকে বিয়ে করবি।”
কি করবে নীল বুঝতে পাচ্ছে না। আবার সে বিষের বোতলের দিকে তাকায়।সে বলল,
-” যাবো না আমি পালিয়ে।বিয়ে করব আমি।কিন্তু তোমরা পরে খুব আফসোস করবে।খুব আফসোস করবে।”
এটা বলে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ায়নি।শামিমের মুখে হাসি ফুটে উঠে।এটা বিষের শিশি হলে।ভিতরে সব পানি ছিল।ভালোবাসা না পেয়ে তার বোন যেমন আত্নহত্যা করেছে।তেমনি এভাবে শাহেদ ছেলে কাছ থেকে ভালোবাসা কেড়ে নিবে।তার বোনের মর করুণ নিয়তি যেন স্বপ্ন হোক।তিনি স্বপ্ন চোখে দেখে নীলের প্রতি অপূরন্ত ভালোবাসা।নীলকে না ফেলে স্বপ্ন জীবন দুর্বিষহ হবে। এটা তিনি নিশ্চিত জানেন।
শামিম কড়া গার্ড ব্যবস্থা করে।স্বপ্ন যেন কিছুতেই এই বাড়িতে ঢুকতে না পারে। গায়ে হলুদের অনুষ্টান শেষ হয়ে যায়।সবাই ফ্যাকাশে মুখ করে নীলের গায়ে হলুদ ছোঁয়া।নীল চোখের পানি টপটপ করে পড়তে থাকে।
অনুষ্টান শেষ হয়ে যাওয়ার পর।বারান্দা বসে নীল কাঁদছে।এই হলুদ স্বপ্ন নামে তার কপালে, গালে উঠার কথা।কিন্তু আজকে অন্য কারো নামে তার গায়ে হলুদ উঠেছে।বেশি স্বপ্ন দেখে ফেলেছে বলেই কিছুতে পূরণ হচ্ছে না।কথা আছে কোনো কিছু নিয়ে বাড়তি আশা করতে নেই।যখন সেই বাড়তি আশা,স্বপ্ন পুরণ হয়না।তখন খুব কষ্ট হয়।সে কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা থাকে না।
নীলের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে স্বপ্ন।খুব কষ্ট সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে এসেছে। স্বপ্ন ডাকে,
-” কদম ফুল।”
একটু আগে সোহার ফোন থেকে স্বপ্নকে ফোন করে। যাতে তার রুমে একটি বারে জন্য আসে।কদম ফুল নাম শুনে নীলের বুকের ভিতরে উথালপাতাল শুরু করে।এই ডাক সে আর শুনতে পাবে না।আজকের পর থেকে স্বপ্ন মুখে এই আদুরে ডাক শুনতে পাবে না।ভাবতে বুকের ভিতরে মোচড় দিচ্ছে নীলের।উঠে দাঁড়ায়। ঝাপটে ধরে কান্না করে দেয়।
-বিয়ে করবে আমায় স্বপ্ন।”
-” আমি তোমার মুখ থেকে এই কথাটা শুনতে চেয়েছি। চলো।”
-” আমরা নিজেরা নিজেরা বিয়ে করব।এই আকাশ, এই রাত,এই চাঁদকে সাক্ষী রেখে।”
বারান্দা দিয়ে আকাশ,আর চাঁদকে দেখিয়ে স্বপ্নকে বলল, নীল। নীল বলল,” বিয়ে করবে আমায়।”
স্বপ্ন বুঝতে পাচ্ছে না নীল কী করতে চাচ্ছে।স্বপ্ন বলল,
-” এভাবে বিয়ে পরে করব।আগে আমার সাথে চলো।”
-” তোমার সাথে যেতে পারব না। কালকে আমার বিয়ে।”
-” তাহলে কেন বলছো বিয়ে করতে।”
-” আমরা এই আকাশ, চাঁদকে স্বাক্ষী রেখে বিয়ে করব।”
-” এখন এসব পাগলামি করার সময় নয়, নীল।”
নীল বলল,
-“১০১ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করিয়া আপনি শাহেদ চৌধুরী পুত্র স্বপ্ন চৌধুরী, শামিম মির্জার কন্যা নীলাদ্রী নীলকে বিয়ে করতে রাজি থাকিলে বলুন ‘ কবুল’। ”
স্বপ্ন বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল,
-” এসব কেমন পাগলামি নীল।”
-” এসব কোনো পাগলামী না স্বপ্ন।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।যাতে আমার থেকে তোমাকে কেউ আলাদা করতে না পারে।”
-“কিন্তু তুমি তো বিয়ে করে আলাদা হয়ে যাবে।”
নীল কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-” আমি বিয়ে করছি তার একটা কারণ আছে।কিন্তু তুমি আমায় ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবে না।তুমি শুধু এই নীলের।অন্য কারোর নয়।তাই তো যাওয়ার আগে তোমাকে বিয়ে করতে চাই।”
স্বপ্ন হয়তো বুঝতে পাচ্ছে না নীল কোণ যাওয়ার কথা বলছে।স্বপ্ন বলল,
-” কালকে তোমার বিয়ে। তুমি কালকে অন্য কারো বউ হয়ে যাবে।আজকে বলছো তুমি আমায় বিয়ে করবে।তা এভাবে।”
-” এ বিয়ের কথা তুমি আর আমি ছাড়া কেউ জানবে না।”
-” এই হয়না নীল।আমি তোমাকে বিয়ে করবে।আর কালকে আমার সামনে তুমি অন্য কাউকে কবুল বলে আবার বিয়ে করবে।আমি তা সহ্য করতে পারব না।”
নীল স্বপ্ন পায়ে কাছে বসে বলল,
-” আমার এই শেষ ইচ্ছা তুমি পূরন করো স্বপ্ন।আর কখনো কোনো ইচ্ছা নিয়ে দাঁড়াবো না তোমার সামনে।”
স্বপ্ন নীল উঠে দাঁড় করায়।নীলের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” কবুল, কবুল, কবুল!”
নীলের চোখ পানি।মুখে হাসি। জড়িয়ে ধরে সে স্বপ্নকে।সে বলল,-” এবার আমি যেভাবে বলেছি তুমি সেভাবে আমায় বলো? ”
-” কেন? ”
-” বাহরে।আমায় কবুল বলতে হবে না।”
-” ১০১ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করিয়া আপনি শামিম মির্জার কন্যা নীলাদ্রী নীল, শাহেদ চৌধুরী পুত্র স্বপ্ন চৌধুরী সাথে বিবাহ রাজি থাকিলে বলুন,কবুল
-” কবুল, কবুল,কবুল।
চলবে
কাউছার স্বর্ণা
?