স্বপ্নীল ৫৮, ৫৯,৬০

0
1284

স্বপ্নীল
৫৮, ৫৯,৬০
রাত ১১ টার দিকে তৃণ বাসায় ফিরে।রুমে ডুকে দেখে রুমটা অন্ধকার।দেওয়ালে হাঁতড়িয়ে লাইট অন করে।বিছানার দিকে তাকিয়ে চমকে যায়।কেউ কিছুতে মেনে নিতে পারবে না তার ভালোবাসার মানুষ একজন পর পুরুষে সাথে একই বিছানা শুয়ে থাকবে ।তাও আবার জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।ঠিক এক-ই অবস্থা পড়ে আছে বিছানায় প্রাচ্য।
মাথা রক্ত উঠে যায়।চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। কপালে রগ গুলো ফুলে উঠেছে।দাঁতে দাঁত চেপে তৃণ চিৎকার দিয়ে বলল,
-” প্রাচ্য।”
তৃণর চিৎকারে যেন পুরো ঘর কেঁপে উঠল।প্রাচ্য ঘুম ঘুম চোখে চোখ মেলল।প্রাচ্য ঘুম কাতুরে কন্ঠে বলল,
-” এভাবে চিৎকার করছিস কেন? ”
এটা বলে প্রাচ্য খেয়াল করে, পেটের উপরে কারো হাত।তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।হুড়মুড় করে উঠে বসে।শাড়ি ঠিক মত গায়ে জড়িয়ে নেয়।
তাকিয়ে দেখে শিহাব।গায়ে শার্ট নেই।তার বিছানায় শিহাব কী করে এলো।সে একাই রুমে ছিল।শিহাব তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিল।তৃণ তা দেখেছে।ভাবতেই বুকের ভিতরে ভয় করছে।
প্রাচ্য তৃণর দিকে তাকিয়ে ভয়ে ঘামতে থাকে।এই মূহূর্তে তার মাথা কাজ করছে না।তোতলিয়ে বলল,
-” শিহাব এখানে কী করে এলো।”
হংকার ছেড়ে তৃণ বলল,
-” সেই প্রশ্ন আমার তোকে কথা উচিত। ”
বাসার সবাই ছুটে আসে তৃণ এই উচ্চ আওয়াজে কথা শুনে।সবাই অবাক হয় প্রাচ্যর রুমে অন্য একটা ছেলে কে দেখে।শিহাব এতক্ষণ ঘুমে ভান করে ছিল। তৃণ শিহাবের কলার চেপে ধরে উঠায়। শিহাব এমন হাব ভাব করছে। যেন সে কিছু করেনি।আর এখানে কী হচ্ছে বুঝতেই পাচ্ছে না।
-” তোর এত বড় সাহস তোর।তুই আমার বেডরুমে এসেছিস।তোকেই আমি মেরেই ফেলব।”
ঘুষি উঠায় তৃণ।শিহাব হাত ধরে ফেলে বলল,
-” তোমার স্ত্রী আমাকে এখানে ডেকেছে।তাতে আমার দোষ কী।নিজের স্ত্রীকে শারীরিক সুখ দিতে পারো না।তাই সে আমাকে ডেকে এনেছে।”
এটা বলে তৃণর হাত থেকে কলার ছেড়ে নিই।প্রাচ্যর দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হেসে দিয়ে বেরিয়ে যায়।প্রাচ্য এতক্ষণ সব বুঝতে পেরেছে।শিহাব তার আর তৃণ সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য এমন একটা বাজে চাল দিয়েছে।কিন্তু শিহাব এবাড়ি কীভাবে ঢুকল।
তৃণ রুম থেকে সবাইকে বের করে দিই।রুমের দরজা আওয়াজ করে আটকায়।হুস ফিরে প্রাচ্যর।তৃণ সেই ভয়ংকর চাহনি।এখনই যেন এখানে সব ধংস করে দিবে।প্রাচ্য মুখ খুলে কিছু বলবে বলেই তার আগেই তৃণ প্রাচ্যর চুলের মুটি ধরে।খাট থেকে হেঁচড়ে টেনে নামায়।প্রাচ্য ব্যথায় কুঁকড়িয়ে যায়।তৃণ বলল,
-” বাইরে প্রেমলীলা করিয়ে বেড়িয়েছিস কিছু বলেনি।লাস্ট পর্যন্ত প্রেমিকে আমার বেড রুমে এনেছিস।তোর সাহস দেখে অবাক হয়েছি।”
তৃণর হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে প্রাচ্য। বলল,
-” বিশ্বাস কর তৃণ। আমি জানি না শিহাব কী করে রুমে এসেছে।”
-” তোকে বিশ্বাস করলে তাহলে নিজেকে অবিশ্বাস করতে হবে আমাকে।”
ব্যথায় প্রাচ্যর চোখ দিয়ে পানি টপ টপ করে পড়তে থাকে।তৃণ সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।কী করে সে প্রাচ্যকে বিশ্বাস করবে।নিজের চোখে শিহাবের সাথে দেখা করা, কথা বলতে দেখেছে।এইগুলো মনে পড়তেই। রাগ যেন দ্বিগুন বেড়ে যায়।প্রাচ্যকে তুলে দেওয়ালে সাথে দাঁড় করিয়ে গলা টিপে ধরে।
-” ক্যান্টিনে শিহাব তোর হাত ধরে রাখা।প্রতিদিন নিয়ম করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা।রাতে ফোনে প্রেম আলাপ করা।স্ব-চক্ষে দেখেছি।তারপর তোকে বিশ্বাস করব।”
প্রাচ্য দম আটকে আসছিল।নিশ্বাস নিতে পাচ্ছিল না।তৃণকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়।তৃণ দিকে তাকিয়ে বলল,
-” তুই যা দেখিস তা একটা ও ভুল নয়।সেদিন ভার্সিটি হঠাৎ করেই শিহাব আসে।সৌজন্যর খাতির কথা বলি।সে আমায় বলে তার কাছে ফিরে যেতে। বিয়েতে তাকে স্বপ্ন আর ভাইয়া কিডন্যাপ করেছে, এগুলো বলে।আমি বিশ্বাস করিনি।তাই জোর করে আমার হাত ধরে।সব সময় আমায় ফোন করে জ্বালা তো।আর থ্রেট দিতো।আর তুই ভেবেছিস আমি তার সাথে প্রেমালাপ করেছি।এই বিশ্বাস ছিল তোর ভালোবাসার প্রতি।”
-” বিশ্বাস ছিল বলেই তো।তোকে কিছুই জিজ্ঞেস করিনি।যেদিন তোকে জিজ্ঞেস করিছি। তুই সেদিন মিথ্যে বলেছি।অফিস থেকে ফেরার সময় তোকে আমি শিহাবের সাথে দেখেছিস।বাড়ি আসার পর তোকে যখন জিজ্ঞেস করলাম।তুই তখন কী বলেছি।কী উত্তর দিয়েছি।মনে আছে তো। না কি ভুলে গেছিস।”
-” সেদিন তোকে রেগে যেতে দেখে। সত্যিটা বলার সাহস পায়নি।”
তৃণ দুহাত দিয়ে হাত তালি দিতে থাকে।
-” কয়েক মিনিটে ভালোই গল্প বানিয়েছি তুই।মিথ্যে বলার জন্য তোকে নোবেল দেওয়া যাবে।”
-” বিশ্বাস কর সেদিনের মিথ্যে ছাড়া আর কিছু মিথ্যে বলিনি। ও আমায় সেদিন বলেছে।লাস্ট বারে মত দেখার করার জন্য।আর কখনো রাস্তায়,ফোন করে আমায় জ্বালাবে না।তাই বাধ্য হয়ে সেদিন শিহাবের সাথে দেখা করেছি।তুই যখন আমায় জিজ্ঞেস করেছিস।হ্যাঁ মিথ্যে বলেছি।সেদিন তোর রাগ দেখে আমি খুব ভয় পেয়েছি।তাই মিথ্যে বলেছি। ভেবেছি পরে সত্যিটা বলে দিব তোকে।”
প্রাচ্যর কথা শুনে তৃণয় ঘর কাঁপিয়ে হাসতে থাকে।প্রাচ্য ভয় পেয়ে যায়।এই হাসিটা তার কাছে খুব হিংস্র মনে হচ্ছে।প্রাচ্যর হাত ধরে কাছে টেনে এনে তৃণ বলল,
-” তুই জানিস।তুই ভালো গল্প বানাতে পারিস।এসব কাহিনী তুই গল্প উপন্যাস লেখতে পারিস।অনেক পুরুষ্কার পেতি তুই।”
-” বিশ্বাস কর তৃণ।আমি মিথ্যে বল…!”
প্রাচ্য আর কিছু বলতে পারেনি।তৃণ তাকে ধাক্কা মারে।টাল সামলাতে না ফেরে দেওয়ালে ভারি খায়।মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।তা চোখে পড়ছে না তৃণর। তৃণ রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে।এতক্ষন ধরে রাগ কন্ট্রোল করে রেখেছে সে।প্রাচ্য’র মিথ্যে কথা গুলো হজম করতে পাচ্ছে না।হিংস্র হয়ে উঠে।প্রাচ্যকে টেনে দাঁড় করায়।
-“সব মানলাম।বিশ্বাস করলাম।কিন্তু আজকে কী করলি তুই।আমি তোকে শারীরিক সুখ দিতে পারি না।তাই তুই এই ছেলেকে ডেকে এনেছিস।এইটা ছিল তোর ভালোবাসার নমুনা।”
প্রাচ্য কান্না করতে করতে বলল,
-” শিহাব মিথ্যে কথা বলছে।আমি তাকে ডেকে আনি।”
-” তাহলে সে কীভাবে বাসায় ডুকল।”
-” জানি না আমি।”
-” তোর পাশে শুয়েছিল।তোকে জড়িয়ে ধরে।তুই জানিস না।তাহলে জানবে কে?আমি জানব।”
এটা বলে প্রাচ্যকে দুটো চড় মারে।প্রাচ্য হতভম্ব।সে বিস্মিত! অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।কোনো কথা বলছে না।শুধু চোখ দিয়ে নোনা জল বের হচ্ছে।তৃণ প্রাচ্যর চুলে মুঠি ধরে ফ্লোরে ধাক্কা মারে।তৃণ প্যান্টের বেল খুলে,প্রাচ্যকে মারতে থাকে।প্রাচ্য জোরে জোরে চিৎকার করছে।সেই আর্তনাদ তৃণ কানে পৌঁছায়নি।তৃন বলতে থাকে।
-” তোকে এত ভালোবাসার পর।তোর কাছ থেকে অপমান ছাড়া কিছুই পাইনি।তোকে সম্মান করে বলেই এত কিছু দেখেই কখনো কোনো বাজে কথা বলি নাই।আর তুই কী করলি এটা।আমার বেড রুমে পর পুরুষের সাথে। ছিঃ! সব সীমা ত আজকে লঙ্ঘন করে ফেলছিস তুই।”
মারতে মারতে হয়রান হয়ে যায়।বেল ছুড়ে মেরে ফেলে দেয়।দরজা খুলে বেড়িয়ে যায়।খাদিজা আর তনয়া এতক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কা দিয়েছিল।খুলল না তৃণ।এখন খাদিজা ছেলেকে দরজা খুলে বাইরে যেতে দেখেই।রুমে ঢুকে আতঁকে উঠে প্রাচ্যকে দেখে।রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে।ছেলেকে যখন রেগে যেয়ে তাদের কে বাইর করে দিয়েছে তখনই ভেবেছে খুব খারাপ কিছু হবে।কিন্তু এত খারাপ কিছু হবে ভাবতেই পারেনি।

মাথা পেটে রক্ত বের হচ্ছে প্রচুর। খাদিজা প্রাচ্যর নিশ্বাস চেক করে।বেঁচে আছে দেখে।স্বামীকে ফোন করে।তারা সবাই মিলে প্রাচ্যকে হসপিটালে ভর্তি করায়।

কাউছার স্বর্ণা।

গল্প ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।
স্বপ্নীল
৫৯
প্রাচ্যকে ICU তে নেওয়া হয়।।ডক্তর জানায় প্রাচ্যর অবস্থা।
প্রাচ্য’র ক্রিটিকাল অবস্থা দেখে তৃণ’র বাবা সমুদ্র কে ফোন দিই।তৃণকে অনেকবার ফোন দিয়েছে।কিন্তু তৃণ ফোন বন্ধ।সমুদ্র ছুটে আসে।প্রাচ্য এই অবস্থা দেখে তৃণর ফ্যামিলি সবাইক হুমকি দেয়।কে করেছে প্রাচ্য এই অবস্থা? তিন্নি বলে উঠে তৃণ মেরেছে প্রাচ্যকে।সমুদ্রকে এভাবে রেগে যেতে দেখে।রোদ স্বপ্নকে আর ধূসরকে ফোন করে।তারা কয়েক মিনিট পর হাসপাতালে আসে। তিন্নি কথা শুনে সমুদ্র হাসপাতালে হুংকার ছাড়ে।হুমকি দিতে থাকে।স্বপ্ন আর ধূসর সমুদকে আটকায়।স্বপ্ন সমুদ্রকে বলল,
-” এখন এসব করার সময় নয়।আগে প্রাচ্যকে সুস্থ করতে হবে।”
এর মধ্যে ডক্টর এসে জানায়।প্রচুর ব্লাড লস হয়।এই মুহূর্ত প্রাচ্যকে ব্লাড দিতে হবে।সমুদ্র আর প্রাচ্য’র ব্লাড গ্রুপ এক।সমুদ্র রক্ত দিতে যাওয়ার আগেইখাদিজা বেগম বলে,
-” আমার বোনের যদি কিছু হয়।আমি শুধু তৃণকে নয়।আপনার পুরো ফ্যামিলি শেষ করে দিব।”
চলে যায়।সবাই বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে।ধূসর এতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে হিসাবে মিলাতে থাকে।তৃণ আর প্রাচ্য’র মধ্যে কী এমন হয়েছে যার জন্য তৃণ প্রাচ্য এই বেহাল করেছে।কিছুতে মিলাতে পাচ্ছে না দেখেই।স্বপ্ন পাশে বসে।স্বপ্নকে জিজ্ঞেস করে।
-” তুই কী কিছু জানিস ওদের ব্যাপারে।”
-” কিছুদিন ধরে তৃণ সাথে কথা হয়না আমার।এর আগে তৃণ এই ব্যাপারে কিছু জানি না আমি।”
রোদ বলল,
-” মির্জা বাড়ির সবাই জানলে খুব কষ্ট পাবে।”
-” হুম।আমি শায়লা আন্টিকে কথা দিয়েছি।তৃণ সাথে প্রাচ্য সুখে থাকবে।তাদের বিয়ের সব কিছু আমি ফাইনাল করছি।আন্টি যখন প্রাচ্য’র এই অবস্থা দেখবে। তখনই কীভাবে আন্টিকে মুখ দেখাবো।”
ধূসর বলল,
-“গ্রামে এখন কিছু না জানালে ভালো হবে।”
রোদ একমত হয়ে বলল,
-” ঠিক বলেছি।”
স্বপ্ন বলল,
-” সমুদ্র কী না জানিয়ে থাকবে।”
-” সেটাও ভাবার বিষয়।সমুদ্র যেভাবে ক্ষেপেছে।আল্লাহই জানে তৃণকে ফেলে কী করবে?”
রোদ বলল,
-” তৃণ এখন কোথায়?”
স্বপ্ন বলল,
-” আন্টি বলেছে।এই কাণ্ড ঘটিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছে।ফোন দিয়েছি।বন্ধ বলছে।”
রোদ বলল,
-” এখন ফোন দেয়।”
স্বপ্ন ফোন দেয়।বন্ধ!মেসেজ করে জানায় প্রাচ্যর অবস্থা।
মধ্যরাতে বাড়ি ফেরে তৃণ।রুমে যায়নি সে।ছাদে শুয়েছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে বাসায় কেউ নেই।নিজের রুমে যায় ফ্লোর রক্ত দেখে আঁতকে উঠে।প্রাচ্যকে খুঁজতে থাকে। প্রাচ্য জন্য মনের ভিতরে ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।কিন্তু ফ্লোরে রক্ত দাগ দেখে।তৃণ মনে পড়ে যায়। প্রাচ্য সাথে কী জানোয়ারে মত ব্যবহার করেছে।কিছুতে কালকে রাতে রাগ কন্ট্রোল করতে পারেনি।পারবে কী করে।কালকে প্রাচ্যকে এই অবস্থা দেখে তার জায়গা যে কেউ থাকলে এমন করত।
প্রাচ্যকে পুরো বাড়িতে খুঁজে। কোথাও পায় না।বাড়িতে কেউ নেই।প্রাচ্য নেই? মনে ভিতরে অজানা একটা ভয় ঢুকে যায়।প্রাচ্য যাই করুক।কালকে রাতে সে একটু বেশি করে ফেলেছে।
চোখ যায় খাটের উপরে মোবাইল দিকে।মোবাইল হাতে নেয়।বন্ধ দেখে খুলে। মিস কল এলার্ড ছিল বলেই। সবার আসার ফোন গুলো দেখতে পায়।তখনই আসে স্বপ্ন দেওয়া মেসেজ।প্রাচ্য অবস্থা খারাপ।আর হাসপাতালে ঠিকানা দেওয়া ছিল।তৃণ আর এক মুহুর্ত দেরী করেনি।

সমুদ্র তার বাসায় কাউকে কিছু জানায় নি।সবাই এতটা নিয়ে টেনশন করবে।প্রাচ্য এখন জ্ঞান ফিরেনি।সবাই বাইরে বসে অপেক্ষা করছে।তখনই তৃণ প্রবেশ ঘটে।স্বপ্নকে দেখে তৃণ বলল,
-” প্রাচ্য কী হয়েছে?”
সমুদ্র রোদের কাঁধে মাথা দিয়ে বসা ছিল।তৃণ কণ্ঠ শুনে উঠে দাঁড়ায়।স্বপ্ন কিছু বলার আগেই সমুদ্র তৃণর শার্টের কলার চেপে ধরে তার কাছে এনে।নাক বরাবর ঘুষি দিই।।তৃণ ফ্লোরে পড়ে যায়।সমুদ্র তাকে উঠিয়ে দাঁড় করায়।নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।
সমুদ্র হুংকার ছেড়ে বলল,
-” তোদের এক করার জন্য শিহাব কে বিয়ের দিন কিডন্যাপ করেছি।আর তুই আমার বোন কে মেরে মৃত্যু দুয়ারে পাঠিয়ে দিয়েছিস।আজ তোকেই মেরেই ফেলব।”
এটা বলে সমুদ্র আবার ঘুষি দিতে নিলেই স্বপ্ন ধরে ফেলে।বাঁধা দিয়ে বলল,
-” কী করছি? পাগল হয়েছিস না কি।”
সমুদ্র স্বপ্নকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
-” স্বপ্ন তুই বাধা দিবি না আমায়।ওকে মেরেই ফেলব।”
আবার তেড়ে যায় সমুদ্র। ধূসর আর স্বপ্ন তাকে ধরে রাখে।স্বপ্ন বলল,
-” এটা একটা হাসপাতাল।কি শুরু করেছি।প্রাচ্য’র কিন্তু এখন জ্ঞান ফিরেনি।সেই চিন্তা না করে।মারামারি করছিস।”
সমুদ্র চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করছে।স্বপ্নকে সমুদ্র বলল,
-” স্বপ্ন, ওরে বল এক্ষুনি এই মুহূর্তে আমার চোখে সামনে থেকে যেতে।নয়তো খুব খারাপ কিছু হয়ে যাবে।
তৃণর বাবা যেয়ে তৃণ গালে চড় মারে।তিনি বললেন,-” এই শিক্ষা তোকে আমি দিয়েছি।তোর মায়ের গায়ে আমি কখনো হাত তুলেছি।দেখেছি তোরা।আমার ছেলে হয়ে কী করে পারলি এমন করতি।”
খাদিজা ফোঁস করে জ্বলে উঠল,
-” সবাই যেভাবে ইচ্ছা সেইভাবে মারবে আমার ছেলেকে।আমার ছেলে কী সাধে ওই মেয়ের গায়ে হাত তুলেছে।ওই মেয়ে অন্য একটা পূরুষ মানুষ নিজের স্বামী বেডরুমে আনবে।জড়াজড়ি করে শুয়ে থাকবে।যে কেউ এইভাবে দেখলে রাগ উঠবে।”
তৃণ নাকের পাশের রক্ত মুচে দিতে দিতে বলল খাদিজা কথাটা।কথাটা শেষ হওয়ার দেরী। সমুদ্র আগুন চোখে তাকিয়ে বলল,
-” মুখ সামলে কথা বলুন।নয়তো বড় ছোট কিছুই মানব না।”
তৃণ আর প্রাচ্য মধ্য কী জামেলা হয়েছে সমুদ্র তা জানে না।তনয়া কে যখন রোদ জিজ্ঞেস করেছে কী হয়েছে।তনয়া যতটুকু জানে ততটুকু বলে।রোদ পরে স্বপ্ন, ধূসরকে জানায়।
রোদ বাধা দিয়ে সমুদ্র বলল,
-” একজনের জ্ঞান এখন ফিরেনি।কোথায় সবাই মিলে দোয়া করবে তার জন্য। তা না করে এখানে মারামারি শুরু হয়েছে।প্লিজ বন্ধ করুন আপনি এসব।”
সমুদ্র খাদিজা আর তৃণ মুখোমুখি হয়ে বলল,
-” এক্ষুনি আপনারা সবাই হাসপাতাল ত্যাগ করবেন।আপনাদের ফ্যামিলি কাউকে যেন না দেখি।”
এটা বলে সমুদ্র ঘুরে দাঁড়ায়।কি মনে করে আবার উল্ট ঘুরে বলল,
-” আমার বোন আপনাদের বাড়ি চৌকাঠ কোনো দিন ফেরুবে না আর।আল্লাহ আমায় যথেষ্ট দিয়েছে।আমার বোনকে দেখার সার্মাথ্য আছে।দয়া করে এখন স্ব -সম্মানে যেতে পারেন।নয়তো ঘাড় ধরে বের করে দিব।”
খাদিজা আর একমুহূর্ত দাঁড়ায় নি।ছেলেকে টানতে টানতে নিয়ে বের হয়ে যায়।অবশই তৃণ যেতে চায় নি।সমুদ্র এমন একটা সিন্ধান্ত কেউ খুশি না হলে। একজন খুশি হয়েছে।তার পথ এখন ক্লিয়ার।

কাউছার স্বর্ণা।
গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।
স্বপ্নীল
৬০
প্রাচ্যর দু ঘন্টার পর জ্ঞান ফিরে।সাঁতদিন এভাবে হাসপাতালে থাকে।এই সাঁতদিন তৃণ অনেক বার এসেছে।কিন্তু সমুদ্র তাকে ঢুকতে দেয় নি।তৃণকে মারতে যায়।রোদ এসে বাঁধা দিই।আজকে প্রাচ্য রিলিজ করে দিই।সমুদ্র প্রাচ্যকে বাসায় নিয়ে আসে।রোদকে মানা করে দেই।কিছুতেই যেন তার অনুপস্থিত তৃণকে বাসায় ঢুকতে না দেই। এক প্রকার সমুদ্র হুমকি দিয়ে এসব কথা বলে।

তৃণ হাসপাতালে আসে প্রাচ্যকে দেখতে।নার্স বলে আজকে প্রাচ্যকে রিলিজ করে দিয়েছে।মন খারাপ করে ফিরে আসে।ধূসর আর স্বপ্ন প্রাচ্যকে দেখতে আসে।তাদের কে দেখে প্রাচ্য খাটের হেলান দিয়ে বসে।ধূসর বলল,
-” কেমন আছিস?”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রাচ্য বলল,
-” ভালো!তোরা কেমন আছিস?”
ধূসর বলল,
-” ভালো আছি বলেই তো দেখতে আসতে পেরেছি ,নয়তো তোর মত আমাদেরকে বিছানা পড়ে থাকতে হতো।”
প্রাচ্য স্লান হেসে বলল,
-” কে বলল? আমি বিছানা পড়ে থাকি।”
“কেউ বলতে হয় না? দেখতেই পাচ্ছি নমুনা।”
তখনই রোদ রুমে আসে।সবার উদ্দেশ্যই বলল,
-” নাস্তা বানানো শেষ।তোরা সবাই নাস্তা করতে আয়।”
প্রাচ্য বলল,
-” খাবো না এখন!”
স্বপ্ন বলল,
-” এমনি অসুস্থ।এখন তোর বেশি বেশি করে খাওয়া উচিত।”
এটা বলে হাত ধরে টেনে বিছানা থেকে প্রাচ্যকে নামায়।এক প্রকার জোর করে প্রাচ্যকে টেবিলে নিয়ে আসে।সমুদ্র আগে থেকেই বসা ছিল।সবাই নানান কথা বলছে আর খাচ্ছে।তখনই সমুদ্র প্রাচ্যকে বলল,
-” তোর আর তৃণ ডিভোর্স ব্যবস্থা করতেছি।”
সবাই খাওয়া ছেড়ে সমুদ্র দিকে তাকায়।প্রাচ্য কিছু না বলে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে যায়।স্বপ্ন বলল,
-” এসবে মানে কী? ”
-” মানে খুব সিম্পল। তৃণ কাছে প্রাচ্য আর পাঠাবো না।”
-“;তুই বললেই হল।ওরা একজন আরেক জন ভালোবাসে।কোথায় ভাই হয়ে ওদের ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে দিবি।তা না করে ওদের ডিভোর্স ব্যবস্থা করছিস।”
-” ভুল আমার প্রথম হয়েছে ওদের বিয়ে দেওয়া,নয়তো আজকে প্রাচ্য এই হাল হত না।”
-” ডিভোর্স হয়ে গেলে কী সব সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।তোর ফ্যামিলির লোক জানলে এতে কষ্ট পাবে।”
-” সেটা আমি হ্যান্ডেল করে নিব।”
এবার ধূসর বলল,
-” তৃণ এমন করার ছেলেই নয়।কেন এমন করেছে তা না জেনেই।এত বড় ভুল করার ঠিক হবে না।”
কোনো কথা বলল না সমুদ্র।ধূসর আবার বলল,
-” সব চেয়ে বড় কথা।প্রাচ্য কী চায়? ”
-” প্রাচ্য চাওয়া না চাওয়া কিছু যায় আসে না। আমি যা বলছি তাই হবে। ওই জানোয়ার ফ্যামিলিতে আমার বোনকে আর যেতে দিব না।”

★★★
প্রাচ্য সবাইকে সব টা খুলে বলল।ধূসর বলল,
-” শিহাব যখন তোকে থ্রেড দিয়েছিল।তখনই তৃণকে জানানো উচিত ছিল।তাহলে আজকে এত বড় সমস্যা হত না।”
-” সেটাই বড় ভুল ছিল।আমি কী ভেবেছি শিহাব এরকম বাজে একটা কাজ করবে?”
স্বপ্ন বলল,

-” তোর রুমে যখন ওই ছেলে ঢুকেছে তুই টের ফেলি না কেন? ওই ছেলেই বা কী করেই বাড়িতে ঢুকছে।”
– ” আমি টের পাবো কী করে।সন্ধ্যায় সবার জন্য চা করেছি।আমি নিজে খেয়েছি।চা টা খাওয়ার পর।প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছিল।চোখ মেলে তাকানো দুষ্কর হয়ে উঠেছিল।অনেক কষ্টেই বিছানা চেয়ে শুয়েছি।তারপর যখন ঘুম থেকে উঠি। তৃণকে আর শিহাব কে দেখি।”
রোদ বলে উঠল,
-” চা গেলে ঘুম পায় না কী কারো।”
-” বিশ্বাস কর তোরা।প্রচুর ঘুম পাচ্ছিল। ”
ধূসর বলল,
-” কেউ তোর চায়ে আবার ঘুমের ওষুধ মিশায় নি তো।”
রোদ বলল,
-” হতে পারে।”
স্বপ্ন বলল,
-” কেউ কেন প্রাচ্য চায়ে ঘুমের ওষুধ মিশাবে।তার কী লাভ হবে।”
রোদ বলল,
-” হবে হবে।কারণ প্রাচ্য শ্বাশুড়ি।মানে তৃণ মা।প্রাচ্যকে একদম সহ্য করতে পারে না।তিনি চেয়েছিলেন।তৃণের সাথে তার বোনের মেয়ে তিন্নি বিয়ে দিতে।আমারর মনে হচ্ছে প্রাচ্যর শাশুড়ি এমন করছে।”
-” তাহলে আমার মনে হয় তাদের শিহাবের সাথে হাত ছিল।ঘুমের ওষুধ খাইয়ে প্রাচ্যকে ঘুম পাড়িয়ে দেই।সেই সুযোগে শিহাবকে তারাই রুমে ঢুকিয়েছে!”
রোদ বলল,
-” হতে পারে!”
বন্ধুদের এত ভাবনা দেখে।প্রাচ্য’র মাথা যন্ত্রনা করছে।সে মাথা হাত দিয়ে বলল,
-” প্লিজ চুপ কর।এসব আমার ভালো লাগছে না।”
কেউ আর কোনো কথা বাড়ানি।সমুদ্র ডিভোর্স কথা বলেছে সেটা জানায় নি।তারা আরো কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়।

সমুদ্র বাসায় আসলে রোদ শিহাবে ব্যপারে সব বলে।থ্রেড , রাস্তা দাঁড়িয়ে থাকা,ফোন করা সব কিছুই বলল।সমুদ্র এসব শুনে তার মাথা একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে কী ভাবে শিহাব রুমে ঢুকেছে।

মুষল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে।বৃষ্টির জন্য চার পাশ সব কিছুই ধোঁয়াশা লাগছে।প্রাচ্য বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি বিলাশ করছে।তখনই চোখ যায় রাস্তায়।কেউ তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির জন্য সে মানবের চেহারা বুঝা যাচ্ছে না।কিন্তু প্রাচ্য মন বলছে। বৃষ্টির দাঁড়ানো মানব টা,তৃণ।কেন দাঁড়িয়ে আছে তৃণ? তাকে দেখার জন্য।প্রাচ্য অবচেতন মন তাই বলছে।প্রাচ্য সেদিনে তৃণর হিংস্রতার কথা মনে পড়ে যায়।সে এক মূহূর্ত দেরী না করে রুমে চলে আসে।বিছানা উবু হয়ে শুয়ে বালিশ জড়িয়ে ধরে ঢুকরে কেঁদে উঠে।প্রতিদিন এভাবে লুকিয়ে প্রাচ্যকে দেখে যায় তৃণ।আজকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল।সব কিছুতে ঝাপসা দেখা যায় বলেই।আজকে আড়াল যেয়ে দাঁড়ায় নি।মনে করেছে বৃষ্টির ঝাপসা কারণ প্রাচ্য হয়তো তাকে দেখবে না।কিন্তু প্রাচ্য এভাবে চলে যেতে দেখেই টনক নড়ে।প্রাচ্য কী তাকে দেখতে পেয়েছে?

-” আমার না বৃষ্টি ভিজতে ইচ্ছা করছে।”এক হাতে ফোন কানে দিয়ে।অন্য হ
হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা নেয়।স্বপ্নকে উদ্দেশ্য করে বলল কথাটা।স্বপ্ন বলল,
-” পাগল না কী।রাত কত তুমি জানো এখন।”
-” মাত্র রাত দুটো।”
-” তোমার কাছেই মাত্রই মনে হচ্ছে।”
-” হুম।এই মাঝ রাতে বৃষ্টিতে ভিজায় মজাই আলাদা।”
-” হুম।”
নীল বলল,
-” এই শোনো।”
-” বলো!”
-“বিয়ের পর মাঝরাতে যদি বৃষ্টি হয়।তুমি আমি দুজনে বৃষ্টিবিলাশশ করবো।তখন কিন্তু আপত্তি করতে পারবে না।”
-” তখনই তুমি থাকবে।আপত্তি করার কোনো মানে আছে।”
-“ইশ!”
এভাবে তাদের ফোনে কথা চলতেই থাকে।

কাউছার স্বর্ণা

( ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।কেমন হয়েছে বলবেন।ভালো খারাপ মন্তব্য করবেন)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে