স্বপ্নীল
৪৫
প্রাচ্য রুমের দরজা আটকিয়ে এসে তৃণ বুকের উপরে বসে। বলে,
-” সোজাসুজি উত্তর দে,কি চাস তুই?
তৃণ হতভম্ব! বিস্মিত! চোখ যেন তার কোটর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে।প্রাচ্য আবার বলল,
-” আজকে তোর কথা উপরে নির্ভর করবে আমাদের সম্পর্ক? কি চাস বল!”
রাগী সুরে বলল তৃণ,
-” সর বলছিস।”
-” আগে আমার কথার আন্সার দেয়।”
তৃণ প্রাচ্যকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
-” রাত বি রাতে ডং করছিস?”
এভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়াতে প্রাচ্য’র রাগ উঠে যায়।কান্না করতে করতে ফুল গুলো ছিঁড়ে ফেলে।চাদরের উপরে ফুলের পাঁপড়ি গুলো নিচে ফেলে দেয়।চাদর, বালিশ ছুঁড়ে ফেলে।তারপর প্রাচ্য’র রাগ কমছে না।তৃণ বারান্দা দাঁড়িয়ে এসব দেখছে।কিছু বলছে না।এত কিছু ফেলে প্রাচ্য খ্যান্ত হয়নি। খোঁপা থেকে বেলিফুলের গাজরা ছুড়ে মারে ফ্লোরে।দু হাত দিয়ে নিজের চুল খামচে ধরে রাগ কমাতে থাকে।তৃণ দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
-” ডিভোর্স চাই আমার? কালকের মধ্যে ডিভোর্স দিতে হবে।”
তৃণ কল্পনার বাহিরে ছিল এই কথাটা।বার বার কথাটা তার কানে যেন বাজছে ” ডিভোর্স চাই আমার!”
কান দুটো যেন তার ঝনঝন করছে।তার মনে হচ্ছে সে ভুল শুনেছে।তাই জিজ্ঞেস করে,
-” কি বলছিস তুই।”
-” কানে কালা নাকি তুই, শুনিস নি আমার কথা।না শুনলে আবার বলছি।কান খুলে শোনে রাখ।আমার ডিভোর্স চাই।”
এটা বলে গদগদ করে হেঁটে রোদের কাছে যায়।রোদকে ধরে ঢুকরে কেঁদে উঠে।রোদ প্রাচাকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।কেন তাদের সাথে এমন হয়েছে।তাদের ভালোবাসার মানুষ কেন তাদের কে বুঝে না।সব সময় কষ্ট দেয়।
বাসর ঘর সাজিয়ে দিয়েছে যাতে তাদের দুজনে মধ্যে মনোমালিন্য দূর হয়ে যায়।এক জন আরেক জনের কাছে আসতে পারে যেন।কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়ে গেছে।
সকালে প্রাচ্য ব্যাগ প্যাক করে বেড়িয়ে যেতে নিলে তৃণ বাধা দেয়।
-” কোথাও যাবি না তুই!”
-” আমি তো যাবো। এবং তোকে ডিভোর্স দিয়ে ছাড়ব।”
-” এক পা যদি এই বাড়ির বাইরে দেস তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
প্রাচ্য কিছু বলল না। রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।রোদ তৃণ কে বলল,
-” তোর থেকে কালকে রাতে এরকম কিছু আশাই করিনি।ভালো বাসি তো প্রাচ্যকে।তাহলে বার বার কেন এত কষ্ট দেস।”
রোদ বেরিয়ে আসার পরের তৃণ ও বেড়িয়ে আসে।প্রাচ্য’র হাত ধরে বলল,
-” আমি আবার ও বলছি কোথাও যাবি না তুই।”
খাদিজা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দোয়া করছে আপদ যেন বিদায় হয়।এই আপদ বিদায় হলে তিন্নিকে ছেলে বউ করে আনবে।ছেলের উপরে তার মেজাজ গরম হচ্ছে আপদ যখন নিজে থেকে চলে যাচ্ছে।ছেলে কেন আটকাচ্ছে।
প্রাচ্য চোয়াল শক্ত করে বলল,
-” হাত ছাড়, না হলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
-” ছাড়ব না।”
-” আমি কিন্তু এখন নিজেকে শেষ করে দিব।হাত না ছাড়লে
হাত ছেড়ে দিয়ে তৃণ বলল,
-” তুই নিজেকে শেষ করা লাগবে না।আমি নিজেই নিজেকে শেষ করে দিব।”
এটা বলে ডায়নিং দিকে এগোয় তৃণ।ফল কাটা ছুরি হাতে নেয়।হাতের মধ্যে টান মারে। ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ে।খাদিজা ছেলে কান্ড দেখে আহাজারি করে কান্না করতে থাকে।
-” আমার ছেলেটা কে এই মেয়ে শেষ করে ফেলবে।কত রক্ত পড়ছে?এই তিন্নি, তনয়া ব্যান্ডেজ আন।”
তৃণ মায়ের হাত থেকে হাত সরিয়ে ফেলে।রোদ দৌড়িয়ে যায়।তৃণ হাত নিজের হাত নিয়ে নেয়।শাড়ি আঁচল দিয়ে রক্ত আটকানোর চেষ্টা করে।তনয়াকে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে আসতে দেখে দৌড়ে গিয়ে তার হাত নিয়ে আসে।ব্যান্ডেজ করতে নিলে তৃণ হাত সরিয়ে ফেলে।রোদ চোয়াল শক্ত করে বলল,
-” হাত সরালে মেরে ফেলব তোকে।ব্যান্ডেজ করতে দেয়।”
তৃণ আর হাত সরায় নি।প্রাচ্য সেখানে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে।সে তৃণকে ভয় দেখানোর জন্য বলছে।আর তৃণ সত্যি সত্যি হাত কেটে ফেলেছে।
রোদ ব্যান্ডেজ করতে করতে বলল,
-” বাচ্চাদের মত এসব পাগলীমির মানে কি? ”
তৃণ কোনো কথা বলল না।রোদ ব্যান্ডেজ করে দিয়ে উঠে এসে প্রাচ্যকে বলল,
-” চলে গেলে সব সমস্যা দূর হয় না।কিছু সমস্যা সামনা সামনি থেকেই ফেস করতে হয়।ভালো থাকিস! ”
তৃণ দিকে তাকিয়ে বলল,
-” আসি! ”
রোদ চলে যায়।খাদিজা এসে বলল,
-” কাল নাগিনী নজর পড়েছে আমার সংসারে।”
রোদ যতই মনে মনে পণ করুক সে আর সমুদ্র কাছে যাবে না।কিন্তু তার মন যে মানছে না।বার বার মন বলছে সমুদ্র কাছে ছুটে যাওয়ার জন্য।বাড়ি তে থাকলে শরীরে দুনিয়ার সব অশান্তি নেমে আসে।।সমুদ্র ছাড়া তার কিছু ভালো লাগছে না।তাই সমুদ্রকে দেখার জন্য অফিসে আছে।অফিসের দারোয়ান কিছুতেই রোদকে ঢুকতে দিচ্ছে না।অবশেষে রোদ বলল,
-” আমি আপনার সমুদ্র স্যার স্ত্রী।এবার তো আমাকে ঢুকতে দিবেন?”
স্যার স্ত্রী শুনে দারোয়ান ভয়ে কাঁপতে থাকে।আগের ব্যবহার জন ক্ষমা চায়।স্ব-সম্মানে দারোয়ান গেইট খুলে দেয়।রোদ অফিসে ঢুকে সমুদ্র কেবিন সামনে দাঁড়ায়।কেবিনে সামনে সমুদ্র নেইম প্লেট হাত দিয়ে নাড়িয়ে দেয়।নক না করে ঢুকে যায়।
সমুদ্র অফিসে একজন মেয়ে স্টাফের সাথে জরুরী কথা বলছিল।তখনই রোদকে দেখে বলল,
-” তুমি!”
তারপর সেই মেয়েটা বলল,
-” তুমি এখন যাও এনা।পরে কথা বলছি।”
এনা বের হয়ে গেলে।সমুদ্র চোয়াল শক্ত করে রাগী সুরে বলল,
-” তুই কেন অফিসে।”
রোদ এগোতে এগোতে বলল,
-” বাড়িতে যাওয়া মানা আছে? অফিসে আসতে মানা নেই?”
সমুদ্র চিল্লিয়ে বলল,
-” গেট আউট!”
-” যাবো না আমি! ”
কেবিন থেকে বের হয়ে এসে রোদের হাত ধরে বলল,
-” এক্ষুনি বের হবি।”
রোদ নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সমুদ্রকে ধাক্কা দিয়ে সোফায় ফেলে ঝাঁপটে ধরে।স্পাইক করা চুল গুলো এলোমেলো করে দেয়।শার্টের ইন নষ্ট করে দেয়।টাই লুস করে দেয়।
রাগে সমুদ্র শিরা উপশিরা টগবগ করছে।দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলল,
-” ইউ…!
বাকি টুকু বলার আগেই রোদ সমুদ্র ঠোঁট আকঁড়ে ধরে।ইচ্ছা করে কামড়িয়ে দেয়।সমুদ্র ঠোঁটে হাত দিয়ে দেখে রক্ত বের হচ্ছে।রোদ কৌতুক করে আদুরি গলায় বলল,
-” ওলে বাবু!ব্যথা পেয়েছো! আমি ও খুব ব্যথা পেয়েছিলাম।যখন আপনি আমাকে কামড়িয়েছেন?
শেষ কথাটা কঠোরতা ছিল।ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,
-” এই এনা তোর কেবিনে এত বার আসে কেন? কি চলছে তোর এনার সাথে?”
-” তুই আমার কাছে কৈফিয়ত চাইছিস।তোর সাহস দেখে আমি অবাক হই।”
রোদ ঠোঁট কামড়িয়ে বলল,
-” আমায় খারাপ বলছিস।তুই কি সাধু পুরুষ? অফিসে স্টাফ সাথে লটর পটর করছিস।তুই কি ভেবেছিস আমি কোনো খোঁজ রাখি না আমি।”
সমুদ্র ধমকিয়ে উঠে বলল,
-” রোদ!”
রোদ সে সব কিছু তোয়াক্কা না করেই সমুদ্র গালে আবার কামড় বসায়।উঠে দাঁড়িয়ে সে বলল,
-” লাভ বাইট একেঁ দিলাম।বায়।”
রোদ চলে যায়।সমুদ্র সেন্টার টেবিলের ফুলদানী ছুঁড়ে মেরে রাগে ফুঁসতে থাকে।
রাতে রোদ তার বাবা মা, চাচা চাচির, কাজিন রেহানের সাথে খেতে বসেছে।সবাই খেয়ে উঠে যায়।রোদ বসে বসে হাড্ডি চাবাচ্ছে।তখনই সে খেয়াল করে টেবিলের নিচে দিয়ে কেউ তার পা চেপে ধরেছে।হাড্ডি চাবানো বন্ধ করে তাকায় তার সামনে বসা মানু্ষটার দিকে।রেহান ছাড়া আর কেউ নেই।তার মানে রেহান!বিরক্তি নিয়ে বলল,
-” পা সরা!”
রেহান এবার দু পা দিয়ে রোদের পা দুটো চেপে ধরে।বলল,
-” গেলি বিয়ের দাওয়ার খেতে একবারে বিয়ে, বাসর করে ফিরেছিস! তো বাসর ঘরে কি ভাবে কিভাবে আদর সোহাগ করছে তোর সোয়ামী। ”
রোদ তিরিক্ষি মেজাজ দেখিয়ে উঠে চলে যায়।এই রেহান কে তার একদমই সহ্য হয় না।কেমন একটা গায়ে পড়া। আর এর চাহনি একটা অসভ্যের মত।দিন দিন এর অসভ্যতামি বেড়েই যাচ্ছে।আগে তো এমন ছিল না।এখন দিন কে দিন লুচ্চা হয়ে যাচ্ছে।
সোহা যতবার তামিমের সাথে কথা বলতে গেছে ততবার তামিম এড়িয়ে যাচ্ছে।কোনো ভাবে তার সাথে কথা বলছে না। তার খুব কান্না পাচ্ছে।সে চেষ্টা করেছে আসার জন্য।কিন্তু কখন যে পরে ঘুমিয়ে গেছে টের ও পায়নি।রুমে গিয়ে মুখে ওড়না দিয়ে ঢুকরে কেঁদে উঠে।ভালোবাসায় কেন এত যন্ত্রণা, গোলাপ যেমন ছিঁড়তে গেলে কাঁটার আঘাত খেতে হয়।তেমনি ভালোবাসলে কষ্টে পেতে হয়।কষ্ট ছাড়া ভালোবাসা মিষ্টি হয় না।
নীল ঢাকায় যাওয়ার জন্য বাড়িতে কান্না কাটি করে।প্রাচ্যকে দেখতে যাবে।প্রথমে কেউ রাজি হয়নি।নীলের এই কান্না দেখে দাদু বলছে তামিমকে,নীল কে যেন ঢাকায় দিয়ে আসে।বিকেলেই তাড়া বের হবে।নীল খুশিতে ব্যাগ প্যাক করতে থাকে।খুশি যেন তার উঁছলে পড়ছে।সুর ওয়ালা দেখতে পারবে ভাবতে তার খুশি খুশি লাগছে।
যথারীতিতে তামিম বিকালে নীলকে নিয়ে চলে যায়।রাতে সোহা চুপি চুপি তামিমের ঘরে যায়।তামিম যে জায়গা দিয়ে শোয়।সেই জায়গা টা হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেয়।ক্লজেট থেকে তামিমের শার্ট বের করে নিজের জামা উপর দিয়ে পড়ে।তার মনে হচ্ছে তামিমের শাট নয় তামিম তাকে জড়িয়ে আছে।চোখ বন্ধ করে ফিল করতে থাকে।
নীল প্রাচ্যদের বাসায় এসেছে দুইদিন হয়েছে।তনয়া নীলের সম বয়সী! তার সাথে নীলের খুব ভালো সম্পর্ক হয়।খাদিজা নীলকে কিছু বললে। নীল তার প্রতিত্তুরে জবাব দেয়।খাদিজা নীলের মত ঠোঁটকাটা মেয়ে দুটো দেখেনি।তার কথা বিনিময় নীল তাকে অপদস্থ করে।সেই ভয়ে খাদিজা এখন আর প্রাচ্য পিছনে লাগে না। নীল তিন্নি মেয়েটাকে দেখতে পারে না।সারা দিন তৃণ পিছনে আটার মত লেগে থাকে তাই।কেন তার বোন আর দুলাভাইর মধ্যে কাব্ব মে হাড্ডি হতে যায়।নীলের ইচ্ছা করছে তিন্নি মেয়েটার সব চুল ছিঁড়ে ফেলতে।এ বাড়ির মেহমান বলে তাই এই কাজ করছে না সে।না হলে এই মেয়েকে দেখে ছাড়ত।
ওইদিনে পর প্রাচ্য তৃণ কে এড়িয়ে চলে।তৃণ কিছু বললে তার উত্তর দেয় না।যা দেয় তা সব বাঁকা বাঁকা কথা।তাই দরকার ছাড়া প্রাচ্য’র সাথে কথা বলে না।এতে যেন প্রাচ্যই খুব খুশি হয়।
কাউছার স্বর্ণা।
একদিনে দুই পর্ব দেওয়ায় কি রেসপন্স কমে গেছে।
এই গল্পে কার কোন জুটি ভালো লাগে। বলবেন প্লিজ।