স্বপ্নীল ৩৯
তৃণ কালকে রাতে খাদিজা বেগমকে ফোন করে বলে সে বিয়ে করছে।তার ছেলে তাকে না জানিয়ে বিয়ে করেছে শুনে জ্ঞান হারায়। তিনি কিছুতেই মানতে পাচ্ছে না প্রাচ্যকে বিয়ে করেছে তৃণ।ছেলের দুই মেয়ে বন্ধুকে তার কোনো কালেই ভালো লাগত না।মেয়ে মানুষ হয়ে ছেলের সাথে ডলাডলি করত।ছেলেদের সাথে কিসের এত ভাব!
বার বার মানা করেছে এই মেয়ে দু’টো থেকেই দূরে থাকার জন্য।আর এখন সেই মেয়েদের মধ্যে একজনকে বিয়ে করেছে।প্রাচ্যকে তো মোটে ও পছন্দ করে না তিনি।পাঠ কাঠির মত শরীর, ব্রয়লার মুরগির মত সাদা,পোষাক-আষাকের কী ছিরি। আর অতি বড় লোকের মেয়ে মানে অহংকারী। এদের মধ্যে অহংকার বেশি থাকে।এই জন্য তৃণকে খাদিজা বেগম মানা করে তার বন্ধুদের যেন সে এই বাড়িতে না নিয়ে আসে।আর সব চেয়ে বড় কথা তিনি তার বোনের মেয়ের সাথে তৃণ বিয়ে ঠিক করেছে।তৃণ জানত তাহলে কেন তৃণ বিয়ে করেছে?আর তৃণ তো এই মেয়ের বিয়েতে গেছে তাহলে কেন সে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে?
পরে ফোন করে জানায় এই মেয়েকে তিনি মানবেন না। তার সাথে যেন এই বাড়িতে নিয়ে না আসে।তারপর বাড়ির দরজা খুলে এই মেয়েকে দেখতে ভাবে তিনি কল্পনাও করিনি।
-“তোকে ফোনে আমি বলেছিলাম না।তোর সঙ্গে করে এই মেয়েকে যেন না আনিস।তারপর কেন এনেছিস?”
শ্বশুর বাড়ির দরজা সামনে দাঁড়িয়ে ছিল প্রাচ্য।তৃণ’র মায়ের কথা শুনে প্রাচ্য অবাক হয়।অবাক চোখে তাকায় তৃণর দিকে।প্রাচ্য খুব ভালো করে জানতো তৃণ মা একটু খিটখিটে মেজাজের।তিনি কেন জানি তৃণ’র বন্ধু বান্ধব কে দেখতে পারেন না।খাদিজা বেগম বলল,
-” এই মেয়ে তোমার বিয়ে তো অন্য কারো সাথে হওয়ার কথা ছিল।তাহলে তুমি আমার ছেলেকে বিয়ে করলে কেন?”
শ্বাশুড়ির ঝাঁঝানো কথা শুনে প্রাচ্য একটু ভড়কে যায়।কি উত্তর দিবে সে?তৃণ এগিয়ে যায় মায়ের কাছে। সে বলল,
-” মা তুমি আগে আমার কথা শোনো।”
-” তোর কোনো কথা আমি শুনতে চাই না।তুই কেন এই মেয়েকে বিয়ে করতে গেলি।তুই জানিস না তোর বিয়ে আমি তিন্নির সাথে ঠিক করে পেলেছি।তারপর,,,,!”
এটুকু বলে তিনি থেমে যায়।শ্বাশুড়ি কথা শুনে প্রাচ্য তৃণের দিকে তাকায়। তৃণর বিয়ে ঠিক করা ছিল। তাহলে সে কেন কাউকে বলেনি?এই প্রশ্ন তার মনে জাগল।তৃণ তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-” মা আমি বিয়ে করতে চাইনি।প্রাচ্য’র যার সাথে বিয়ে হওয়ার ছিল সে আসে নি।তাই,,,!”
-” তাই তুই বিয়ে করেছিস।তুই কেন করবি।এই মেয়ের ফ্যামিলি বা কেমন? বিয়ে দেওয়ার আগে খোঁজ খবর নিবে না।আসলে বড়লোকদের এসব ব্যাপার স্যাপার বোঝা বড় দ্বায়।আমার মনে হচ্ছে এই মেয়ে কোনো সমস্যা আছে তাই ছেলেটি বিয়ে করেতে আসেনি।তাই মেয়েটির ফ্যামিলি তোর কাঁধে এই মেয়েকে চাপিয়ে দিয়েছে।”
প্রাচ্য নিচের দিকে তাকিয়ে চোখে জল মুছে।তিনি আবার বললেন,
“তুই যখন এই মেয়েকে বিয়ে করতে চাস নি তাহলে এই মেয়েকে তুই ডিভোর্স দিয়ে তিন্নি কে বিয়ে করবি।”
ডিভোর্স শব্দটা শুনে প্রাচ্য মনে মনে কয়েকবার আওড়াতে থাকে।বিয়ে না হতে হতে তার ডিভোর্স হয়ে যাবে।মায়ের কথা কী তৃণ তাকে সত্যি ডিভোর্স দিয়ে দেবে।তার খুব কান্না পাচ্ছে।তৃণ খাদিজা কে বুঝানো জন্য প্রাচ্যর বিয়ের পরিস্থিতি কথা বলেছে।এখন দেখে সে বলে আরো বিপদে পড়েছে।প্রাচ্যকে ডিভোর্স দিয়ে দিলে স্বপ্ন’র সামনে দাঁড়াবে কী ভাবে।আর সমুদ্র…না সে আর ভাবতে পাচ্ছে না।
-” মা তুমি এসব কি বলছো! ”
-” যা বলছি শুনতে পেয়েছিস।এক্ষুনি এই মেয়েকে বিদায় কর আমার বাড়ি থেকে।”
এটা বলে তিনি প্রাচ্য’র হাত ধরে বাইরে বের করে দিবে তখনই নিয়াজ সাহেব এসে খাদিজা বেগমের হাত ধরে ফেলে।
-” তুমি আমার হাত ধরেছো কেন?”
-” তোমার কাজে বাঁধা দেওয়ার জন্য?কি করতে যাচ্ছো তুমি।”
-” দেখতে যখন পাচ্ছো, জিজ্ঞেস করছো কেন?
-” খাদিজা! এদিকে আসো।
নিয়াজ সাহেব স্ত্রীকে টেনে এককোণ এনে বলল,
-” এই মেয়েকে বের করে কী তুমি, তোমার ছেলের ক্ষতি করতে চাও।”
খাদিজা ভ্র কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
-” আবল তাবল কি বলছো? মাথা ঠিক আছে তোমার! ”
-” আমার মাথা ঠিক আছে।তুমি জানো এই মেয়ে কে?”
-” এত টুকু জানি ধনী ফ্যামিলির নষ্ট হয়ে যাওয়া মেয়ে।”
-” এখন যদি এই মেয়েকে তুমি বাড়ি থেকে বের করে দাও।এই মেয়েটার ফ্যামিলি মেম্বাররা কি তোমায় ছেলেকে ছেড়ে দিবে?”
-” আমার ছেলে বিয়ে করতে চাইনি।তারা তাদের মেয়েকে ঘাঁড়ে চাপিয়ে দিয়েছে!”
-” তোমার ছেলে ছোটখোকা নয়। তাকে ধরে বিয়ে পড়িয়ে দিবে তারা।রাজি ছিল বলেই সে বিয়ে করেছে।সে যদি বিয়ে না করত তাহলে মেয়েটার ফ্যামিলি কেউ তোমার ছেলে সাথে বিয়ে দিত না।এখন নিচে যেয়ে তুমি বলবে প্রাচ্যকে মেনে নিয়েছো।”
-” কিন্তু তিন্নি সাথে,,,
-” ছেলের ক্ষতি না চাইলে এখন মেনে নাও।পরে ওসব ভাবা যাবে।”
খাদিজা বেগম কিছুক্ষন ভেবে বলল,
-” ঠিক আছে। ”
এটা বলে চলে যায়।নিয়াজ সাহেব মুচকি হাসে স্ত্রী কান্ড।তার স্ত্রী নিজেকে সব চেয়ে বুদ্ধিমান মনে করে।কিন্তু তার কাছে আসলে বোকা একটা নারী।এখন যেমন গোলখাইয়ে প্রাচ্যকে মেনে নিতে বলেছে। সেভাবে রাজি হয়েছে গেছে।
প্রাচ্যকে বরণ করে ঘরে তুলে। প্রাচ্য তৃণ রুমের ভিতরে ঢুকে চার পাশে চোখ ভুলায়।বছর খানেক হয়েছে এই বাসায় সে এসেছে।পুরো পরিপাটি এই রুমটা।রুমটা এতটা বড় নয়।রুমের মধ্য আলমারি, ড্রেসিং, এক সেট সোফা, আছে।
-” আগে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।তারপর আলমারিতেতে জামাকাপড় গুছিয়ে রাখিস।”
-” একটা কথা বলার ছিল! ”
তৃণ সোফায় বসে মোবাইল টিপতে টিপতে বলল,
-” বলে ফেল।”
প্রাচা আমতা আমতা করে বলল,
-” তোর বিয়ে ঠিক ছিল আমাদের কে বললি না কেন? ”
মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে প্রাচ্য’র দিকে তাকায়।তৃণকে এভাবে তাকাতে দেখে ভঁড়কে যায় সে।তৃণ দাঁড়িয়ে যায়।সে বলল,
-” মসজিদের মাইক এনে সবাইকে বলব আমার বিয়ে ঠিক।”
-” এভাবে কথা বলছিস কেন? ”
-” আমি এভাবে কথা বলি? ”
প্রাচ্য নিজেই বুঝতে পাচ্ছে না এখন কেন জানি তৃণকে দেখলে ভয়ে তার শরীরে
লোমগুলো শিহরণ দেয়।আগে এরকম হতো না। নাকি সম্পর্ক বদলে গেছে বলেই।না তাকে স্বাভাবিক হতে হবে।কেন শুধু শুধু সে তৃণকে ভয় পাবে।আগের মত যেভাবে ব্যবহার করত সেভাবেই করবে।একটু কেশে গলাটা পরিষ্কার করে আগে ফর্মে চলে যায়।
-” আগে খুঁটি নাটি সব কিছু আমাদের কে বলতি।তাহলে এত বড় একটা খবর তুই আমাদের জানাস নি কেন? ”
-” জানানোর প্রয়োজন মনে করিনি।”
প্রাচ্য মেজাজ গরম হয়ে যায়। সে বলল
-” তাই! কেন প্রয়োজন মনে করবি।চুপি চুপি ওই তিন্নি কে বিয়ে করে ঘরে তুলতে চেয়েছিস। যাতে ঘরেটা ঠিক থাকে আর বাইরে ওই হারামি গিরি করতে পারিস। ”
এটুকু বলে জিভে কামড় দেয়।বিয়ে আগে এই ভাবে তৃণকে সে বলত।কিন্তু এখন সে জানে তৃণ তাকে ভালো বাসে।তাহলে কি করে এই সব বলছে?না জানি তৃণ এখন কি ভাবে রিয়েক্ট করবে?তৃণ দিকে তাকিয়ে বলল,
-” আসলে সরি আমি এভা,,,,!”
তার আগেই তৃণ তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।তারপর চিৎকার করে সে বলল,
-” তাতে তোর কি যায় আসে। তুই ঠিকি ধরেছিস। এই জন্য কাউকে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা বলিনি।যদি পাঁচ কান হয়ে যায় কথাটা।তাহলে মেয়েদের সাথে হারামি গিরি করতে পারব না।”
তৃণ চলে যায়। প্রাচ্য কান্না করতে থাকে।ধাক্কা খেয়ে রুমের ড্রেসিং টেবিলে বাড়ি খায়।রক্ত বের না হলে ব্যথা পেয়েছে।ফুলে যাবে মনে হচ্ছে।
নীলের মোবাইলে আবার সেই অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে।সেই বিরক্ত নিয়ে ফোন ধরে বলল,
-” কি সমস্যা? ফোন দিচ্ছেন কেন? মানা করেছিলাম না! ”
-” মেজাজ বুঝি আজকে হট আছে। ”
-” ফালতু কথা রাখেন! আর ফোন করবেন না।”
এটা বলে খট করে ফোন কেটে দেয়। স্বপ্ন হাসতে থাকে। নীলকে ছাদে দেখে ইচ্ছা করে স্বপ্ন ফোন দিয়েছে আড়ালে যেয়ে। নীলের পাশে গিয়ে সে বলল,
-” যাকে এত মেজাজ দেখালে সে হয়তো ভয় পেয়েছে আর তোমাকে ফোনেই দেবে না।”
নীল স্বপ্নকে দেখে ভ্রু কুঁচকায়।এক আপদকে ঝারি দিয়ে শেষ না করতেই আরেক আপদ এসে পৌঁছেছে।চরম বিরক্ত সে।কোনো কথা না বলে চলে যেতে নিলে স্বপ্ন হাত ধরে ফেলে।
-” হাত ছাড়ুন!”
হাত আরো শক্ত করে ধরে নীলকে টান দিয়ে তার বুকের উপরে ফেলে।চুল দিয়ে পুরো মুখ ডেকে যায় নীলের।স্বপ্ন তার ডান হাত দিয়ে নীলের কোমড় জড়িয়ে ধরেছে, বাম হাত দিয়ে নীলের মুখে আসা চুল গুলো সরিয়ে কানে পিছনে গুঁজে দিতে নিলে, নীল তিরিক্ষি মেজাজে স্বপ্ন হাত সরিয়ে ফেলে।আবার চুল গুলো এলোমেলো হয়ে মুখে পড়ে।
-” গুঁজে দিব না।এমনিতে তোমাকে দেখতে দারুণ লাগে।”
-” আমার কোমড় ছাড়ুন।না হলে ভালো হবে না।”
নীল আর কিছু না বলে স্বপ্ন বুকে এলোপাথাড়ি ভাবে মারতে থাকে।স্বপ্ন দুইহাত দিয়ে নীলের।কোমর চেপে ধরে। নীলের মার খেতে রাজি সে।মারতে গেলে নীলের স্পর্শ পায় বুকে সে।নীল এবার বুদ্ধিখাটিয়ে স্বপ্নর পায়ে জোরে পাড়া দেয়।স্বপ্ন ব্যথা পেয়ে ‘ আহ’ করে চিৎকার দেয়।নীল ছাড়া পেয়ে চলে যেতে যেতে বলল,
-” লুলা বানিয়ে ফেলব দ্বিতীয় বার যদি এই কাজ করেন! ” তার কথার বিনিময় স্বপ্ন শুধু হেসেছে।স্বপ্ন এই হাসিটা যেন নীলের বুকে এসে লাগে।কেন এত এই ছেলের হাসি তার ভালো লাগে? সে তো সুরওয়ালাকে ভালোবাসে।
রাতে খেতে যাওয়ার সময় তৃণর মা খাদিজা বেগম তাকে অনেক কথা শোনা।বাজে মেয়ে বলে তাকে সম্মোধন করে। বাজে মেয়ে বলেই বর বিয়ে করতে আসবে বলে আসে নি।তৃণ কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছিল।প্রাচ্য খুব করে চেয়েছিল তৃণ কিছু বলুক? কিন্তু সে নিরব ছিল।
খাওয়া দাওয়া শেষ হওয়ার পর খাদিজা বেগম নিজের বোনকে ফোন করে।যাতে কাল সকালেই তিন্নিকে এই বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
কাউছার স্বর্ণা
ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।তাতে লেখার উৎসাহ পাই