স্বপ্নীল
৩৬
রোদের মা বাবা মির্জা বাড়িতে আসে।তারা প্রথমে রাজি না হলে পরে রাজি হয় মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে।একমাত্র মেয়ে রোদ তাদের! কোনোদিন কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেনি।যেখানে মেয়ে নিজের কোনো আপত্তি নাই।সেখানে উনার আর কি আপত্তি করবে!কিন্তু এভাবে বিয়ে হচ্ছে দেখে কিছুটা তাদের মন খারাপ।
সবাই মিলে প্রাচ্যকে সাজাচ্ছে। লাল লেহেঙ্গা দারুণ লাগছে তাকে।নাকে নোলক, মাথায় টিকলি,গলায় জড়োয়ার ভারী ভারী গয়না।সব কিছু কমপ্লিট করে নীল বলল,
-” বাহ! খুব সুন্দর লাগছে আমার আপু টাকে।শিহাব ভাইয়া বাসর ঘরে ঢুকে আপু দেখে চোখ সরাতে পারবে না।”
প্রাচ্য আয়নার নিজের খুটিখুটি দেখছে।এই সাজে সাজতে চেয়েছে তৃণ জন্য।কিন্তু সেটা আর হয়ে ঊঠল না।ভাগ্য যদি সহায় না হয় তাহলে আর কি করার আছে।শিহাব সাথে কিছুক্ষণ পর সারাজীবনের জন্য বাঁধা পড়ে যাবে।শিহাবই হবে তার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ। তৃণ তার অতীত হয়ে যাবে।আজকে থেকে সে অতীত ভুলে বর্তমান নিয়ে বাঁচবে।তৃণকে ভুলে যাবে।মনে করবে না সে আর তৃণ নামে কাউকে ভালোবাসত একসময়।
সোহা আর নীল মিলে রোদ কে সাজাতে যায়।বিয়েটা হুট করে ঠিক হয়ে বলেই লেহেঙ্গা কিনতে পারেনি।রোকেয়া বেগম লাল কাতান শাড়ি এনে দিয়ে রোদকে। এটা যেন পড়ে নেয়।এই কাতান শাড়িতে রোদকে কম লাগছে না।অপূর্ব লাগছে।সাজানো শেষ হয়ে গেলে দুজন নিচে নেমে যায়।
বিয়ের বাড়ির গ্রামের লোকদের মেহমানদারী করছে ধূসর আর স্বপ্ন।এত দৌড়াদৌড়িতে হাফিয়ে যায় সে। এক গ্লাস লেবুর শরবত নেয় সে।তখনই নীল সেখানে আসে।গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে আর নীল কে দেখছে। মেরুন কালারে লেহেঙ্গা ততটা খারাপ লাগছে না।গলায় সিম্পল একটা চেইন, হাতে, ডজন খানা চুড়ি,চোখের কাজল যেন তার সৌন্দর্য দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। লাল লিপস্টিকটা যেন ঠোঁটটাকে আর ও ফুটিয়ে তুলে রেখেছে।চুল গুলোর এক পাশে ৪টা গোলাপ দিয়ে খোপা করেছে।খোপাটা বেশ লাগছে।স্বপ্ন আজকে নীলের পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।
নীল তার বান্ধবীদের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।তাদের খেতে যেতে বলে।তারা চলে যায়। নীল পিছন ঘুরে স্বপ্নকে দেখে তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে সে। স্বপ্ন আজকে সোনালি সুতোয় কাজ করা কালো পাঞ্জাবী পড়েছে। হাতা গুলো কনুই পর্যন্ত গুটানো। সিল্কি চুল গুলো কপালে পড়ে আছে।হাতে সবসময় মত ব্যান্ডেড ঘড়ি আর ব্রেসলেট। ফর্সা শরীরে কি মারাত্মক লাগছে এই কালো রঙটা। ঠোঁটে কোণে ঝুলে আছে সেই হাসিটা।নীল আজ সত্যি বুঝতে পাচ্ছে না সে কেন স্বপ্নকে এভাবে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। তারেই বা কেন ভালো লাগছে এভাবে স্বপ্নকে দেখতে।
-” এভাবে কি দেখছ!”
-” আপনাকে! ”
নীল বিড়বিড় করে বলল।
-” আমাকে দেখছ মানে? ”
নীল আবার স্বপ্ন দিকে তাকায়।এই ছেলে তার সামনে আবার কতক্ষণে এসেছে।আর সেই আবল তাবল কি বকছে।
-” কিছু না! ”
-” কিছু না বললেই হলো।আমি স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি তুমি কি বলেছ।”
-” ক- কি ব- বলেছি আমি!
স্বপ্ন নীলের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
-” আমাকে দেখছিলে।”
নীল চোখ বড় বড় করে তাকায়। স্বপ্ন আবার বলল,
-” আমাকে কেন দেখছ তুমি! তোমার তো তাকে দেখার কথা যাকে তুমি ভালোবাসো।তার মানে কি আমি ধরে নিব তুমি আমার প্রেমে পড়েছ তাই আমাকে এভাবে গিলে খাচ্ছিলে।”
নীলের কপাল সুক্ষ্ম ভাজ পড়ে।তার বিরক্তি হয়ে বলল,
-” নিজে আয়না দেখেছেন কখন।এরকম একটা বিচ্ছিরী চেহারা দিকে এই নীল মির্জা তাকাবে। ”
-” একটু আগেই আয়না দেখে এসেছি।এখন আর আয়নার দেখতে ইচ্ছা করছে না। এই বিচ্ছিরি চেহারা দেখে দিনে কত মেয়ে আমার প্রেমে পড়ে তুমি জানো।”
-” জানি আমি।এখন চাপা মারবেন।কত মেয়ে আপনার পিছনে লাইন দিয়ে থাকে।স্বপ্ন বলতে তারা অজ্ঞান। ”
-” রাইট নীল।তার প্রমান আমি তোমাকে দেখাচ্ছি।লুক!”
নীল দেখছে তার বন্ধুরা সবাই স্বপ্ন দিকে তাকিয়ে আছে।তাকে নিয়ে কথা বলছে সে বুঝতে পাচ্ছে।স্বপ্ন বলল,
-” কিছু বুঝতে পারলে নাকি! ”
নীল কিছু না বলে চলে যায়।স্বপ্ন হাসতে থাকে।বিয়ে পড়ানো সময় হয়ে গেছে।প্রাচ্য আর রোদকে নেওয়া হয় স্টেজের দিকে।রোদকে সমুদ্র পাশে বসায়।আর প্রাচ্য বসে অন্য পাশে! তার পাশে জায়গাটা খালি দেখে সে তার মানে শিহাব এখন আসেনি।রোদ আড় চোখে সমুদ্রকে দেখছে।সোনালী আর খয়েরী মধ্যে শেরওয়ানী। সোনালি রঙের চুড়িদার। বেশ সুন্দর লাগছে।কিন্তু সমুদ্র তার দিকে একবার তাকায় নি।অন্য পাশে তাকিয়ে আছে।তার পাশে কেউ আছে সেটা সমুদ্রকে দেখে বুঝায় যাচ্ছে না। তা দেখে খুব কষ্ট পায় সে।আজ তাদের বিয়ে তারপর একবারের জন্য সমুদ্র তার দিকে ফিরে তাকালো না।তৃণ আর ধূসর এসে অনেকগুলো সেলফি তুলল সমুদ্র সাথে।ধূসর বলল,
-” সমুদ্র রোদের কাঁধে হাত দেয়। তাহলে না তোদের কাপল পিক সুন্দর হবে।”
রোদ সমুদ্র দিকে তাকায় তার রিকেশন দেখার জন্য।সমুদ্র চোখ গরম করে ধূসর দিকে তাকায়।তৃণ যেয়ে সমুদ্র একহাত টেনে নিয়ে রোদের কাঁদে রাখে।রোদের সবাঙ্গর কেঁপে উঠে।শাড়ি মুট করে ধরে।সমুদ্র আর কিছু বলে না।
-” স্মাইল প্লিজ!
নীল এসে বলল।।সে কয়েকটা ছবি তুলে নেয়।তার প্রাচ্য’র পাশে গিয়ে ছবি তুলে।প্রাচ্য এতক্ষণ বসে তৃণ দেখছিল। কি হাসি খুশি।মুখের সে দুষ্টুমি ভরা হাসিটা
লেগে আছে। চোখে সরিয়ে ফেলে সে।মনে মনে একটা দীঘশ্বাস ফেলে।সবার এসে তাদের সাথে ছবি তুলে।।কিন্তু তৃণ তুলল না প্রাচ্য’র সাথে।
স্বপ্ন অনেক্ষণ ধরে নীলের পিছন পিছন হাঁটছে নীল তা খেয়াল করল।তাই এবার সে থেমে যায়।স্বপ্ন ও দাঁড়িয়ে যায়।নীল পিছন ঘুরে। তখনই আবার স্বপ্ন নীলের পিছনে যেয়ে দাঁড়ায়।নীল আবার স্বপ্ন’র মুখামুখি হওয়ার জন্য তার দিকে তাকায়। স্বপ্ন আবার সেই একই কাজ করে।নীল বুঝতে পাচ্ছে না স্বপ্ন এমন করছে কেন? তার পিছনে কেন যে দাঁড়ায়।খারাপ কোনো মতলব নেই তো।নীল আর পিছন না ঘুরে সামনে তাকিয়ে বলল,
-” এসব ডং করা মানে কি? আমার পিছন না দাঁড়িয়ে সামনে আসেন।”
-” সামনে যেতে পারবো না।পিছনে দাঁড়িয়ে আছি যা বলার বলো! আমি শুনছি।”
নীল মেজাজ চটে যায়।
-” পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন কোন মতলবে।লুচ্চামি করার জন্য আর কোনো মতলব খুজে পাননি।তাই এভাবে,,,,,”
-” তোমার পিঠের ব্লাউজের হুক খুলে গেছে।”
স্বপ্ন কাট কাট জবাব দেয়। স্বপ্ন মুখে এই কথা শুনে নীল পিঠে হাত দেয়।পুরো পিঠে খালি।হায়! আল্লাহ।এভাবে সে সারা দুনিয়ার হেঁটে বেড়াইছে।সবাই কি ভাবছে তাকে।সব দোষ এই স্বপ্ন’র সে কেন তাকে আরো আগে বলেনি।
-” আর আগে বলতে পারেন নি।আর বলবেন কেন? আরো আগে বললে কি আমার পিঠে দেখতে পারতেন।মন মতো দেখে গিলে খেয়েছেন লুচ্চা কোথায় কার।”
-” উপকারে নামে থাপ্পড়। উপকার করেছি সেটা শিকার না করে আমার নামে লুচ্চা বদনাম দিচ্ছো ।বাহ! তোমার তারিফ না করে পাচ্ছি না। ”
-” যেটা বলেছি সেটাই ঠিক।”
-” ভালো! এখন দোয়া করে হুক লাগালে ভালো হবে! ”
-” আপনি যান এখান থেকে আমি লাগিয়ে নিব।”
স্বপ্ন চলে যায়।নীল হাত দিয়ে লাগাতে যেয়ে দেখে হুক খুলে পড়ে গেছে।এখন কি করবে সে।এখন আবার ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে। দূর ভালো লাগছে না।
-” কি হয়েছে? ”
-” আপনি আবার এখানে! ”
-” দেখতে পাচ্ছো তো আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে।”
নীল ফানসে গলায় বলল,
-” ধ্যাত! ভালো লাগে না!এখন আবার ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে।”
-” কেন?
-” হুক খুলে পড়ে গেছে।”
-” এতে ড্রেস চেঞ্জ করার কি আছে।পিন দিয়ে লাগিয়ে নিলে হয়।”
সত্যি তো। সেফটিপিন দিয়ে লাগিয়ে নিলে আর ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে না।এই কথা কেন তার মাথা আসল না? এই স্বপ্ন’র মাথায় আসত গেলো কেন? নীল এখন কার হাতে সেফটিপিন লাগাবে। কাউকে খুজে পাচ্ছে না সে। সবাই কাজে ব্যস্ত।অন্য কেউ ছাড়া তো লাগাতে পারবে না ।কাউকে তো প্রয়োজন। স্বপ্ন তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। নীল বলল,
-” হেল্প করতে পারবেন?
-” বলো!
-” সেফটিপিন দিয়ে একটি লাগিয়ে দিবেন ব্লাউজ টা।”
স্বপ্ন কিছুটা সময় নিয়ে হ্যাঁ বলল।নীল তাকে তার রুমে আসতে বলল।ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে বক্স ভিতরে থেকে একটা সেফটিপিন নিয়ে স্বপ্ন’র দিকে বাড়িয়ে বলল
-” নিন ধরুন! ”
এটা বলে পিছন ফিরে যায়।স্বপ্ন নীলের পিঠে হাত দেওয়ার সাথে নীল কেঁপে উঠে।নীল বুঝতে পাচ্ছে না তার এই অদ্ভুত শিহরণ হচ্ছে কেন? এই ছেলের ছোঁয়ার তার হাতের লোম গুলো দাঁড়িয়ে যায়।হাতের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্ট করছে কি ঘটছে তার সাথে।নীলের নাড়াচাড়া তে সেফটিপিনটা মাথা নীলের পিঠে লেগে যায় নীল ‘আহ’ করে উঠে।
-” সরি!
-” কিসে সরি।আমার পিঠটা ফুটো করে দিলেন।”
স্বপ্ন দেখছে হালকা একটু রক্ত জমেছে।হাতের তর্জনী আঙুল দিয়ে মুচে জায়গটায় হাত ভুলিয়ে দেয়।নীল আর পাচ্ছে না সহ্য করছে।তার ভিতরে উম্মাদনা সৃষ্টি হচ্ছে।ঠোঁট কামড়িয়ে নিজের শান্ত করার চেষ্টা করছে।
-” আর কতক্ষণ!”
-” এই তো হয়ে গেছে!”
স্বপ্ন সেফটিপিন লাগানো হলে নীলের কানে কাছে এসে বলল,
-” এরকম শর্ট লেহেঙ্গার ব্রাউজ পড়লে কেন?কারিনা কাপুরের মত পেট আর নাভি দেখানোর জন্য।”
নীল চোখে খুলে তাকায়।স্বপ্নকে তার এত কাছে দেখে দূরে সরে যায়।নিজের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” কারিনা, ক্যাটরিনা, দীপিকা, সবার মত । তাতে আপনার সমস্যা কি?
-” আমার সামনে এসব পড়লে সমস্যা নেই।বাইরে লোক তোমার এসব দেখবে তাতে আমার সমস্যা। আমার জিনিস কেন অন্য কেউ দেখবে।”
-” একশোবার যাবো এসব পড়ে তাতে আপনার কি।আমার বারণ করার আপনি কে?
স্বপ্ন আর কিছু না বলে নীলের কোমর ধরে ফেলে।নীলের খোপা খুলে ফেলে। কানের পিছন থেকে গোলাপ ছুড়ে ফেলে।তা দেখে নীল
-” ইউ,,,,
তার আগে নীলকে থেমে যায় স্বপ্ন দিকে তাকিয়ে।তারপর নীলকে
দেওয়ালে সাথে লাগিয়ে ধরল স্বপ্ন।তারপর নীলের দু’হাত দু’দিকে প্রসারিত করে চেপে ধরল।এতোই জোরে চেপে ধরেছে যে নীল খুব ব্যথা পাচ্ছে।কিন্তু কিছুই বলতে পাচ্ছে না।নীলের শরীরের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে আছে স্বপ্ন। একদম নীলের চোখ,মুখ,ঠোঁটে গিয়ে স্বপ্নর উত্তপ্ত নিশ্বাস গুলো বাড়ি খাচ্ছে।স্বপ্নর চোখে দিকে তাকাতেই আরেকদফা বুক কেঁপে উঠল নীলের।চোখে যেন আগুন ঝরছে স্বপ্নর।নীল হঠাৎ করে এটা দেখে ভয় লাগছে।কেন লাগছে সে জানে না? কিন্তু সে কিছুই তে ভয় পায় না।তাহলে আজকে কেন স্বপ্ন’র এই ভয়ংকর চাহনি দেখে ভয় পাচ্ছে?
-” এটাই যেন শেষ হয়।এমন কথা যেন তোমার মুখে আর না শুনি।তোমার সৌন্দর্য দেখার অধিকার শুধুমাত্র আমার।আর কারোর না।”
এটা বলে চলে যায় স্বপ্ন।এতক্ষন যেন নীলের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল।আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে হয়ত দম আঁটকে মরে যেত।মনে মনে স্বপ্নকে ভয়ংকর একটা গালি দেয়।
কাউছার স্বর্ণা
কেমন হয়েছে জানাবেন।গঠনমূলক মন্তব্য করবেন আশা করি